করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে নারীবাদ শব্দটা অনেকটা নেগেটিভ অর্থে নেওয়া হয়। অবশ্য নারী শব্দ যুক্ত থাকলেই সেখানে সোজা দৃষ্টি আসবে এমনটা ভাবাও ভুল। তবুও কেন যেন মনে হয় ইদানীং একটু বেশীই যেন তীব্র ঋণাত্নক মনোভাব কাজ করে। সকল ধরণের নারীবাদীরা আসলে কী চায়? তাদের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে কি ব্যবধান আছে? সবার মুল চাহিদা কি একই না?
নারীবাদ বলতে আসলে কী বুঝায়? আমি আমার ধারনা মতেই বলি যে নারীবাদ আসলে নারীর সাথে হওয়া বৈষম্য অত্যাচার নিপীড়ন দূর করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা লাভ করা।
বুঝ হওয়ার পর থেকে জীবনের প্রতি পদে পদে কত শত ত্যাগ আর মেনে নেওয়ার পর্ব পার করতে হয় মেয়েদের তার হিসেব নারী নিজেরাও রাখেনা বোধ হয়। যখন সে একটু বড় হয় শিখতে শুরু করে মেয়েদের “এই করতে নেই, সেই করতে নেই”। রপ্ত করতে হয় কীভাবে নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়। পথে ঘাটে বখাটের দ্বারা অথবা ঘরের ভেতর কোন স্বজন দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হলে বাবা মা’ই নির্দোষ মেয়ের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, “চুপ থাকো কাউকে বোলো না, নইলে মানুষ মন্দ বলবে”। চুপ থাকাও একটা শিক্ষা, বেশি কথা বললে মেয়েদেরই ক্ষতি!
কেন করতে নেই? যা মেয়ের ভাই করতে পারে অনায়াসে তা সে নিজে কেন করতে পারে না? মেয়ে এখন বড় হচ্ছে তাই তার আর বাইরে খেলা নিষেধ। সন্ধ্যার পর বাইরে আড্ডা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তার ভাইটি কিন্তু পারে। কেনো দেওয়া হয় না জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তার নিরাপত্তার জন্য। অথচ সমাজে মানুষ হিসেবে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার ছেলে মেয়ে উভয়ই সমান। নারীবাদ এই বৈষম্যের কথা বলে।
ধর্ষণে শিকার নারী যদি বিচার চায় তবে কতভাবেই না তার এই চাওয়ার পায়ে শিকল পরায়। ধর্ষকদের পক্ষ থেকে হুমকি তো আছে পাশাপাশি পরিবারও চায় ঘটনা যেন ধামাচাপা পড়ে। ধর্ষিত হয় মেয়ে, আর মানও যায় মেয়ের।
নারীবাদ নারীর সাথে হওয়া এই চরম অত্যাচার বন্ধের কথা বলে। ধর্ষণের পেছনে নারীর পোশাক নয় শুধুমাত্র পুরুষ এবং পুরুষের কৃতিত্ব ফলানোর মানসিকতাই একমাত্র কারণ। পোশাকের স্বাধীনতা যেমন ছেলেদের আছে নারীদেরও আছে। প্যান্টের ওপর জাঙ্গিয়া দেখা গেলে যেমন মেয়েদের বলার কিছু নেই তেমনি নারীদের পোশাক দেখে পুরুষদের কোনো অধিকার নেই ঝাঁপিয়ে পড়ার। পোশাক নির্বাচন নারী পুরুষ সবার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার কথা বলে নারীবাদ। সমাজের মগজে যেটা ঢুকে আছে জন্মান্তর ধরে যে ছোট এবং উত্তেজক পোশাক পরলেই নারী ধর্ষিত হয় কথাটাকে মিথ্যা প্রমাণিত করা।
বেগম রোকেয়া আন্দোলন করে গেছেন নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য। যে যুগে মেয়েরা ছিল সর্বোচ্চরূপে বন্দি, সমাজ আঁতকে উঠত নারী শিক্ষার কথা শুনলে সে যুগে তিনি মশাল হাতে নেমেছিলেন নারীদের অন্ধকার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। নারী শিক্ষার জন্য তিনি প্রথম ৫ জন ছাত্রী নিয়ে শুরু করে্ন মেয়েদের স্কুল। তিনিই প্রথম বুঝান বাঙালি সমাজকে নারীদের শিক্ষার অভাবে পুরুষরাও এগিয়ে যেতে পারবে না বেশিদূর। কারণ দুই চাকার বাহনে এক চাকা যদি হয় বড় ভারী কর্মঠ আর অন্য চাকা যদি হয় দূর্বল তবে বাহন বেশি দূর যেতে পারে না।
রোকেয়ার একটাই লক্ষ্য ছিল। নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে শিক্ষার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া। সেখানে তিনি সফল। তাঁর নারী আন্দোলন নারীকে শিক্ষার দৌড়গোড়ায় নিয়ে গিয়েছে। নারীরা এখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যায়। নেয় উচ্চতর ডিগ্রি। কাজও করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে। এখন প্রতিবছর পত্রিকায় মেয়েদের ছবি ছাপে যারা উল্লাসের সাথে পাশ করে।
ঠিক তখনই প্রশ্ন জাগে এই যে এত এত মুখ দেখা যায় পত্রিকায়, এই মুখগুলো অফিস আদালতে এত কম দেখা যায় কেন। পাশ করে এরা কি গায়েব হয়ে যায়?
অধিকাংশ নারী পড়ালেখা করে ঘরে বসে থাকছে, বা স্বামীর রান্নাঘরে উনুন ঠেলছে কিন্তু বাইরে বের হয়ে কাজ করছে না। কারণ বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকরতম পরিস্থিতি। সে যে কাজ শেষে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যেকোনো সময় তার উপর হামলে পড়তে পারে পুরুষ নামক নরখাদক। সমাজ উদ্দমের সাথে বলবে নারী যদি স্বাধীনতা চায়, কাজ করতে চায়, তাকে কাজ করতে দাও। কিন্তু দিন শেষে কয়জনই বা এসব বিপদের সাথে পেরে উঠতে পারবে। বাইরে যে অসংখ্য বিপদ তৈরি হয়ে আছে নারীর জন্য সেই বিপদের কোন সুরাহা সমাজ করে না। কারণ সমাজ জানে, এই বিপদের ভয়ে নারী অন্দরমহলে ঢুকতে বাধ্য হবে।
সেখানে নারীবাদ প্রশ্ন করে। প্রশ্ন করে উত্তর পায় যে শিক্ষা লাভ করে কিন্তু আদৌ স্বাধীনতা কি পায়?
অফিস করবে, ব্যবসা করবে, স্বাবলম্বী হবে, নিজের নাম বানাবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা অধিকাংশ মেয়েদের এখনো নেই। তারা নির্ভর করে তাদের পিতা এবং পরে স্বামীর ওপর। তাদের অনুমতি পেলে তারা শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মজীবনে ঢোকে। বলছি না সবাই যারা কাজ করে তারা অন্যের থেকে অনুমতি নিয়ে আসে। তবে খেয়াল করে দেখলেই জানতে পারবেন তাদের মধ্যে কতজনের নিজের সিদ্ধান্তই শেষ কথা আর কত জনের অনুমতি নেওয়াটা আবশ্যক।
অথচ সেই উনিশ শতকে রোকেয়া বলেছিলেন,
“পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডীকেরাণী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডী-মাজিস্ট্রেট, লেডী-ব্যারিস্টার, লেডী-জজ — সবই হইব!… উপার্জন করিব না কেন?… যে পরিশ্রম আমরা “স্বামী”র গৃহকার্য্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসায় করিতে পারিব না?”
ন্তান ধারণ করা নাকি নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রাণিজগতের সকল স্ত্রীলিঙ্গ যে কাজ প্রাকৃতিক ভাবে করে আসছে সে কাজ নারীর বেলায় জীবনের সেরা কাজ হয়ে যায়। এই স্বার্থক কাজ করতে গিয়ে যদি তাকে তার ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয় তবুও কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। সন্তানের চেয়ে যে নারী তার ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দেয়, সে মা নয়; ডাইনী! তাহলে উপায়? চাকরি ছাড়ো। নারী হয়েছ যেহেতু, সেহেতু ত্যাগ আর বিসর্জনই তোমার জন্মগত অধিকার। আবার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নারীরা স্বামীর অনেক শারীরিক মানসিক শোষণ মেনে নেয়। হায়! মাতৃত্বের কাছে যে নারীসত্বা খুন হয়! অবশ্য নারীরও কান জুড়ায় এমন বিশেষণে, এমন সম্মানে। নারী মহান, নারী উদার, নারী ধৈর্যশীল নারী সংযমী নারী আত্মত্যাগী! “আমি যা পারি পুরুষ তা পারে না, পুরুষের এত সহ্য ক্ষমতা নেই”
এখানে নারীবাদ জোর গলায় বলে সন্তান ধারণ নারীর সিদ্ধান্তে হতে হয়। শরীর নারীর, জন্মদান প্রক্রিয়া নারীর, সন্তান জন্মদানের আগের পরের হিসেব করার দায়িত্বও নারীর। শুধুমাত্র নারী হয়ে জন্মেছে বলেই তাকে মা হতে হবে এমনটা নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। সে মা হবে কী হবে না সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র নারীর। একজন মানুষ হিসেবে নারী আগে নিজেকে গড়বে এরপর যদি সে চায় সন্তান নিবে। নারীকে শুধুমাত্র মাতৃত্বে বেধে রেখে তার বাদবাকি সকল দক্ষতা যোগ্যতা অবিকশিত রেখে দেওয়া পিতৃতন্ত্রের অন্যতম অস্ত্র।
নারীকে মহান বলার পেছনেও রয়েছে পুরুষদের স্বার্থ। ধর্ষণের বিচার না চাইলে পুরুষের সুযোগ হয় আরেকটা ধর্ষণের। অন্যায় মেনে নিলে স্বামীর সুযোগ হয় বাইরে আরো ফূর্তি করার, ঘরে যা খুশি করার। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইভ টিজিঙের প্রতিবাদ না করলে বখাটেদের সুযোগ হয় আরও উত্যক্ত করার। সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব পুরোটা মায়ের ওপর ছেড়ে দিলে বাবাদের সুবিধা হয় গায়ে হাওয়া লাগানোর।
পুরুষকে যদি বলো চাকরি ছেড়ে সন্তান দেখাশুনা করো। সে পারবে না। কারণ শুধু এই কাজ করে সে সন্তুষ্ট হবে না। সে জানে সন্তান জন্মদান, দেখাশুনা করা তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পিতৃত্ব পুরুষরা একমাত্র অর্জন মনে করে না। সে শুধুই পিতা, এটা বরং তাদের জন্য অপমানকরই ধারণা করা হয়।
দান করা স্বাধীনতা বলে একটা টার্ম আছে। যখন কেউ গর্ব করে বলে আমার স্বামী আমাকে কাজ করতে দেয়। অথচ সে বুঝে না এই “কাজ করতে দেয়” বাক্যটির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার আভাস ফুটে উঠে। স্বামী যখন বাইরে কাজ করে তখন কি সে স্ত্রীর কাছ থেকে কোন রকম অনুমতি নেয়? নেয় না, কারণ সমাজ পুরুষতান্ত্রিক, এখানে পুরুষের কাজের জন্য নারীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু নারীর যেকোনো কাজের জন্য তাকে পুরুষ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নেওয়ার ব্যাপার যেখানে জড়িত সেখানে স্বাধীনতা সম্পূর্ণতা পায় না।
নারীবাদ এই তিক্ত সত্য নারীদের কানে ঢেলে দেয়। যখনই তোমাকে কারো থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় তখনই বুঝতে হবে তুমি যা করছো তা করা নির্ভর করছে অন্যের উপর। অন্যের অনুমতি নেই মানে তোমার কাজও করা বন্ধ।
আর কত ত্যাগ, আর কত বিসর্জন আর কত ধৈর্য ধরা। আর কত বোকা হয়ে থাকা? এসবই পুরুষের চালাকি, শোষণ করার, দমিয়ে রাখার, ওপরে উঠতে না দেওয়ার, মহান বানিয়ে যা খুশি করার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার। নিজের সুখের জন্য শক্ত হও, নিজের অস্তিত্বের জন্য একটা পরিচয় খুঁজো। সহ্য না করে প্রতিবাদ করো, চিৎকার করো, বিচার চাও। এমনকিছু করো যেখানে তোমার মেধা বুদ্ধি শ্রমের বিকাশ ঘটবে। সেখানেই আসল অহংকার। মেয়ে বোন স্ত্রী মা এগুলো সম্পর্ক, অর্জন নয়। এসব উপাধি দিয়ে নারীকে মহান বানাচ্ছে বিনিময়ে নিজস্বতা আর সাহস কেড়ে নিচ্ছে। সম্পর্কের বাইরেও একটা সত্ত্বা আছে। সেটাই আসল পরিচয়। সেই পরিচয় খুঁজে পাওয়াই অর্জন।
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। জন্ম থেকে যে স্বাধীনতা একজন পুরুষ ভোগ করে সেই স্বাধীনতা একজন নারীও ভোগ করবে, কিন্তু সমাজ তার থেকে এই স্বাধীনতা জোর করে কেড়ে নিয়েছে এক রাশ রীতিনীতি প্রথা আর সংস্কার চাপিয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মত ধুরন্ধর সমাজ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। কোন নারী যদি সমাজের সকল বাধাকে অতিক্রম করে উন্মুক্ত স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায় তবে আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে আসে নানা অপবাদ গঞ্জনা অসম্মান। যে নারী চাকরির ক্ষেত্রে উচ্চ পদে আসীন হয় তাকে নিয়ে অত্যন্ত মুখরোচক গল্পের অবতারণা হয়। আড়ালে বলতে থাকে নিশ্চয়ই বসকে খুশি করতে পেরেছে। খুশি অবশ্যই করতে পেরেছে কিন্তু সেটি তার কাজ যোগ্যতা পরিশ্রম দিয়ে, শরীর দিয়ে নয়। কিন্তু সমাজ এই সোজা কথা বিশ্বাস করতে চায় না। কোন নারী যদি লেখালিখির মাধ্যমে নারী জীবনে সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরতে চায়, হিংসুক পুরুষ বলে বেড়ায় সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য এমন রসালো কাহিনী লিখছে।
নারীবাদ আন্দোলনে বা নারীদের নিয়ে যেকোনো মাধ্যমে কথা বললেই সেখানে আঙ্গুল তোলার জন্য বহুজন দাঁড়িয়ে যাবে। নারীবাদের প্রথম দিকের আন্দোলন যেখানে দাবী ছিল ভোটাধিকার অর্জন করা, সন্তানের কাস্টিডি নিজের কাছে রাখতে পারার অধিকার, অফিস আদালতে সমান কাজ করার অধিকার, সম্পত্তিতে সমান অধিকার লাভ। সেই আন্দোলনেও হাজার বাধা এসেছিল। সমালোচনার ঝড়ও এসেছিল। কিন্তু আন্দোলন কি থেমে ছিল? থামে নি। থামে নি বলেই কিন্তু আজ আমরা উপরোক্ত অধিকারগুলো লাভ করেছি।
নারীবাদকে কেউ এখন এসে খারাপ বা নোংরা বা অতিরঞ্জিত ভাবলেও ভাবতে পারে। ভাবতে পারে যে এসব টাইমলাইনে আসার জন্য করা। ভাবুক। তাদের ভাবা দিয়ে যদি ভালো মন্দ বিচার করা হতো তবে হয়ত নারীবাদের এত বৃহৎ আন্দোলন হতো না।
নারীবাদের বক্তাদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। হতে পারে কারো পন্থা, কারো বক্তব্য, কারো মতামত অন্য কারো পছন্দ হলো না। সেটার যদি যৌক্তিক সমালোচনা থাকে সেটা করাই যায়। কিন্তু আমাদের বাঙালিদের মধ্যে যৌক্তিক সমালোচনা করার প্রবণতা কিছুটা ক্ষীণ। যাদের সাথে আমাদের মতের মিল হয় না তাদের সাথে আমাদের যেন আজন্ম শত্রুতা সৃষ্টি হয়ে যায়। যেটা প্রকারান্তরে মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে। নারীবাদ কোন স্থির কোন মতবাদ নয় যে একটা ধারা অনুযায়ী চলবে। নারীবাদের শাখা প্রশাখা অনেক। ঠিক তেমনি প্রতিটা মানুষের চিন্তাধারাও একই নয়। একেক মানুষের কাছে স্বাধীনতা, অধিকার, চাওয়ার পাওয়ার সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে। যে যেভাবে স্বাধীনতা অধিকার ভোগ করতে চায়, সেভাবেই লড়বে। কারো সংজ্ঞা পছন্দ না হওয়া মানেই এই নয় যে তাকে আমি বাতিল করতে পারবো। আমাদের মধ্যে বাতিল করার প্রবণতা বেশী। এই প্রবণতার জন্য নারীদের স্বাধীনতা এবং উন্নতি সত্যিই যারা চায় না তারাই লাভবান হচ্ছে। নিজের অজান্তে তাদেরই জয়ী করছি।
অথচ যারাই নারীবাদের কথা বলে, নারীর স্বাধীনতার কথা বলে, বৈষম্য থেকে মুক্তির কথা বলে তাদের মূল চাওয়া কিন্তু এক। যেটা নারীবাদেরই মূল। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। যেকোনো অধিকার অর্জনের জন্য আগে নিজের পায়ের নিচে মাটি শক্ত হতে হবে। নিজেকে চালানোর জন্য নিজের পরিবারকে সমর্থন দেওয়ার মত অর্থনৈতিক ভীত না থাকলে মানুষের কানে নিজের কথাগুলো পৌঁছানো যায় না। যদি জীবনধারণের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর হতে হয় তবে সেখানে নির্ভরতা অর্জন হয় স্বাধীনতা নয়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ওপরই নির্ভর করে নিজের পছন্দমত কোনরকম আপোষ ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অর্জন করা। যেখানে আমি রুটি কাপড়ের জন্য অন্যের দিকে চেয়ে থাকব সেখানে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও অর্জন হয় না। এই একজায়গায় পৃথিবীর সকল ধরনের নারীবাদীরা আশা করি এক হবেন। প্রকাশে ভিন্ন হতে পারে, বচনেও ভিন্ন হতে পারে, মাধ্যমেও ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু মননে ভিন্নতার প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা না থাকলে আন্দোলন বেশি দিন স্থায়ী হবে না। বরং পুরুষতন্ত্রের হাসির খোঁড়াকে পরিণত হতে হবে দিনকে দিন।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..