করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
আজ আট মার্চ। আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে বিশ্বের নানা প্রান্তে আয়োজিত হচ্ছে নানান আয়োজন, নানান অনুষ্ঠান। সারা বিশ্বব্যাপী নারীদের একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকে। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারী দিবস উদযাপনের লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কোথাও নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা, কখনও বা নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কারণ আমরা জানি, এ সমাজ সহজেই নারীকে প্রতিষ্ঠা দেয় না। নারীর কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসানের জন্য প্রতিবাদ করেন লক্ষ মানুষ কিন্তু আমরা নারীর প্রকৃত সম্মান দিতে কার্পন্য করি যথা নিয়মেই।
ইতিহাসে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি বাহিনীর দমনপীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োাজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হল। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের এক জন। এর পর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় রাষ্ট্রসংঘ। এর পর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে।
নারী দিবসকে নিয়ে মুখে যত সহজে যত সাবলীলভাবে নারী কেন্দ্রিক কথাবার্তা, তাদের জীবনাচার, তাদের অধিকার, দায়িত্ব কর্তব্য, সীমারেখার কথা বলি না কেন, বাস্তবে তার বাস্তবায়ন কিন্তু মোটেও সহজ নয়। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, অনেক যন্ত্রণা সয়ে, অনৈতিক নির্যাতন মেনে নিয়ে তাদেরকে বন্ধুর পথ চলতে হয় সারাক্ষণ। সে পথ খুব কম সময়েই মসৃণ ও সাবলীল হয়। এই বন্ধুর ক্ষত বিক্ষত পথ পাড়ি দিতে যেয়ে অনেক সময় নারী রক্তাক্ত হন। আহত হন। কিন্তু সেটা গোপন করেন সযতনে। বাইরের খোলসটা তার ঝকঝকে রোদেলা আকাশের মতো। কাউকে দেখান না, কাউকে বুঝতে দেন না। তাঁর ব্যক্তিত্বই তাকে বর্ম পড়িয়ে রাখে সর্বদা। কাল নাগিনীর হিশহিশ বিষ শুষে নেন দক্ষ ওঝার ভূমিকায়। কিন্তু সাপের বিষ দাঁত কেন যে তারা সব সময় ভাঙতে চান না, ভেঙে দেন না! কেন যে তারা সেই বিষধর অজগরগুলোকে সমাজের কালো চোখে ফোকাস ফেলা থেকে বিরত থাকেন? তা বুঝিনা। আসলে যদি বলি বুঝিনা, সেটা কিন্তু সঠিক হয় না। আমরা বুঝি। আমরা অনুভব করি। আমরা নির্ভূলভাবে জানি। কিন্তু তারপরও তাদেরকে ক্ষমা করি কঠিন মমতায়। ভালোবেসে। সমাজের চোখে তাদের মুখোশ খুলি না। এটাই সম্ভবত সমাজের চোখে মূলত নারীর বড় দূর্বলতা। এ সমাজ নারীর অন্তর বোঝে না। তারা নারীর মেধাকে সহ্য করতে পারে না। এ সমাজ চায় নারীর রূপ। গুণ নয়। অর্থাৎ মেধাহীন রূপবতী নারী। এ সমাজ নারীর মেধাকে সহ্য করতে চায় না, তারা চায় মেধাহীন রুপবতী।
কখনো সখনো যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, অর্থাৎ মেধার সাথে যুক্ত হয় রুপ, তাহলে সেই নারীর বিড়ম্বনার শেষ নেই। যে কেহ তাকে রূপের মোহে অন্ধ হয়ে ছুঁতে চায়, কিন্ত যখনই সেই কঠিন মুহূর্তে নানীর মেধার বিষ দংশনে জর্জরিত হয়, তখন সেই সমাজ ওই নারীকে যেন তেন হেনস্তা করতে ছাড়েন না। যে কোনো ভাবেই তাকে পরাস্ত করতে চান সমূহ প্রচেষ্টায় এবং হেরে যাওয়ার পথে ঘি এর আগুন ঢালতে থাকেন অনবরত। একবারও বোঝেন না, একবারও ভাবেন না তাদের ছুঁড়ে দেওয়া অনৈতিক ঢিল অসহায় কুয়োর ব্যঙের মতো কিভাবে ক্ষত বিক্ষত করে নারীকে, তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে অহর্নিশ। কিন্তু এ সমাজও বোকা, এটা তারা বুঝতে চায় না, তাদের দেয়া ওই আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় মেধাবী নারীরা সমভাবে বিক্রিয়ায় ফেটে পড়ে ন্যায্যতায়। সেই ফেটে পড়া পিচ্ছিল পথে তারা হেঁটে যায় অটল বজ্র কঠিন পায়ে। কে তারে রোধে, কে তার গতি আটকায়?
অথচ তাদের পথচলার কাহিনী হতে পারতো অন্যরকম অনুভবে, ভালোবাসায়, দরদে, মসৃন মাখনে। তারাই তো তোমাদের সন্তান, তোমাদের প্রেমিকা, জায়া, মমতাময়ী মাতা এবং আজন্ম জন্মদানকারী এক নতুন সভ্যতা। যেই সভ্যতার ঘুর্ণায়নে পৃথিবী ঘুরছে ক্রমবর্ধমান সৃষ্টিশীলতায়। দোহাই তোমাদের! তোমরা তাদেরকে অনৈতিক নির্যাতন করো না। অবহেলা, অসম্মান, অশ্রদ্ধায় পিষে ফেলো না। কি লাভ তাতে? যিনি সেই কঠিন নাগপাশ থেকে বেরিয়ে যাবার যোগ্যতা রাখেন, তিনি ঠিকই সদর্পে বেরিয়ে আসবেন প্রাজ্ঞতায়। তাকে কে বেঁধে রাখে বেড়ি পরা বন্ধনে তোমাদের? তবে কেন এত নিস্পেষণ, কেন এত অত্যাচার, অহেতুক আস্ফালন? দিনশেষে তাদের কাছেই তো ফিরে যাও আনন্দ আয়েশে, নির্ভরতায়। হে পুরুষ, হে সমাজ শুনুন, শুদ্ধ হোন, মানবিক হোন। নারীর নরম হাতটি ধরুন মমতায়। তাহলেই এই সভ্যতা অন্য এক উচ্চাতায় পৌছে যাবে নির্বিঘ্নে, তারাই পৌঁছে দিবে ভালোবাসায়। সে চূড়ায় জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে বিজয় কেতন।
তোমরা আর কোন শিশুকে অত্যাচার করো না, আর কোন কিশোরীকে পাশবিক অত্যাচারে জর্জরিত করো না। তাদেরকে অসময়ে এই পৃথিবীর আলো হাওয়া থেকে বিদায় নিতে বাধ্য করো না। তোমরা আর কোনো নারীকে ঘরে বাইরে তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে কার্পন্য করো না। তাঁরা ঠিকই তাদের অধিকার কেড়ে নেবে প্রাজ্ঞতায়। হয়তো তাদের কষ্ট হবে, রক্ত ঝরবে, তাতে কি এসে যায় তার? ঠিকই সে তার ন্যায্য পাওনা বুঝে নেবে কড়ায় গ-ায়। কারণ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। তিনি অত্যন্ত দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করে তার দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন বিশ্বময়।
আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরে গর্ব করার মতো অনেক অর্জন থাকলেও বৈষম্যহীন ও সবার জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। আমরা জানি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল দেশের মানুষের মুক্তি, সবার জন্য বাসযোগ্য, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তোলা। সমাজে সবচেয়ে বড় অবহেলিত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ অন্যতম। তবে এবারের আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বৈশাখী টেলিভিশন দেশে প্রথমবারের মতো কোনো ট্রান্সজে-ার বা তৃতীয় লিঙ্গের সংবাদ পাঠক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাসনুভা আনান শিশির নামের সংবাদ পাঠককে। যারা জন্মগতভাবে শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমাদের সমাজে আমাদেরই পরিবারে ভুমিষ্ট হন তাদের সেই চিরচেনা অবহেলা, ব নার স্বীকার হবার অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা আমাদের সকলেরই জানা। তাদের সেই ব না থেকে উদ্ধার করবার জন্য আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই অবহেলিত নাগরিকদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানান উদ্যোগ নিয়েছেন। নারী বা পুরুষ হিসাবে নয়, বরং সরাসরি তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়েই নিজেদের নাম নিবন্ধন করবার অধিকার পেয়েছেন। বিপুল সংখ্যক তৃতীয় লিঙ্গদেরকে সরকার ভাতাও দিচ্ছেন। তবে আমাদের ট্্রান্সজেন্ডারদের ধারাবাহিক ও স্থায়ী উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। তারই প্রথম উদ্যোগের সহযাত্রী হবেন সংবাদ বুলেটিনের সংবাদে তাসনুভা আনান শিশির এবং নাটক “চাপাবাজ” এর অভিনেতা নুসরাত মৌ এর সংযোজন। এ বছর আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ৮ মার্চে দেশের মানুষ এই প্রথম কোন পেশাদার সংবাদ বুলেটিনে তৃতীয় লিঙ্গের খবর পাঠ করতে দেখবেন। শুধু শ্রেণীবিশেষ নয়, বরং নানান পেশায় নানান যোগ্যতায় নারী এগিয়ে যাবেন দৃঢ়তায়, দেশকে এগিয়ে নেবেন সগর্বে। নারীর সাথে সাথে দেশও এগিয়ে যাবে সমানতালে। এই প্রত্যাশা নারী দিবসে। আমাদের।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..