করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কে একটি সুতো কারখানার নারী শ্রমিকেরা মজুরি-বৈষম্য বিলোপ, দৈনিক কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ (তখন কর্মঘণ্টা ছিল ১২, দাবি উঠেছিল ৮ ঘণ্টা করার জন্য), ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ও মানবিক পরিবেশের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে শিকাগোর হে মার্কেটের ঘটনারও ২৭ বছর আগের ঘটনা ছিল সেটা। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় অনেক নারী শ্রমিককে। সেই সাথে চলে আন্দোলনকর্মীদের ওপর লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। এর বিপরীতে নারী-শ্রমিকদের সাংগঠনিক তৎপরতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেভাগে আয়োজিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে ভোটাধিকার সহ সর্বক্ষেত্রে নারীদের জন্য পুরুষের সমানাধিকার দাবি করা হয় এবং ক্লারা জেটকিন প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। এরপর বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর উদ্যোগে ১৯১৪ সালের ৮ মার্চ থেকে প্রতি বছর এই দিবস পালিত হতে শুরু করে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে নারী দিবসের স্বীকৃতি প্রদান করে। নারী দিবসের স্বীকৃতির বিষয়টি লৈঙ্গিক পরিসরে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রাপ্তির লড়াইয়ের স্মারক হলেও এর অর্জন মূলত কায়িক শ্রমজীবী শ্রেণীর অন্তর্গত নারী সদস্যদের।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই এখানে সীমিত পরিসরে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এখন অবশ্য অনেক বড় আকারে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। পত্রপত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সুশীল সমাজ, কর্পোরেট হাউস থেকে শুরু করে সরকারি মহলে নারী দিবস নিয়ে প্রচারণার অন্ত নেই। এর নেতৃত্বে আছে এনজিও, এনজিও-পরিচালিত নারী সংগঠন এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো। বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোচ্চারে এই দিবস পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। যেসব মহল সারা বছর নারী-শরীরের পণ্যায়ন করে ব্যবসা চালাচ্ছে তারাই নারী দিবসের প্রচারক-পুরোহিত এখন। নারীদেহের সাথে সাথে নারী দিবসও আজ পণ্যায়িত বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত। অনেকেই দেখা যায় এর বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করে, নীতিবাগিশী বাক্যবুলি ঝাড়েন। আসলে সমাজে বিদ্যমান পুঁজিবাদী সম্পর্কের প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে লাভ নেই। পুঁজিবাদী সমাজের বাস্তবতাকে যেভাবে মেনে নেয়া হয়েছে তার অধীনে থেকে এর যে অনিবার্য বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ মৌলিক অধিকার, মানবিক সম্পর্ক, প্রতিরোধ চেতনা সব কিছুর পণ্যায়ন- এর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করা গাছের গোড়াকে বাদ দিয়ে ডালপালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
বৈষম্য ও শোষণ-জর্জরিত সমাজে নারী দ্বিতীয় দফা শোষণ-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার। শোষিত মানুষের সমাজে সে দ্বিতীয় দফা শোষিত। কেননা একদিকে সে যেমন সমাজে বৈষম্যের অধীন তেমনি যে সমাজ-ব্যবস্থা বিদ্যমান নারী-পুরুষ সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখেছে সেই সমাজ-ব্যবস্থারও অধীন। এক্ষেত্রে অর্ধেক আকাশের মালিক হওয়ার জন্য নারীর লড়াইটা পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, এই লড়াই পুরুষের সাথে সমগ্র আকাশ সমভাবে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য, এই লড়াই পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যে ব্যবস্থা এই পিতৃতান্ত্রিকতাকে জিঁইয়ে রাখছে তার বিরুদ্ধেও। এই সমাজই কিন্তু বিবিধ বিধিব্যবস্থা জারি করে নারীকে আবদ্ধ করছে অন্তঃপুরে, আবার এই সমাজই তাকে বঞ্চিত করছে সম্পত্তির অধিকার থেকে, তার জগৎকে সব দিক থেকে করে তুলেছে সীমাবদ্ধ।
নারী-পুরুষের বৈষম্যমূলক সম্পর্কের প্রধান কারণ ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্ব। এই সমাজ তাই দাবি করে নারীর কাছ থেকে ‘সতিত্বে’র প্রশ্নে অবিমিশ্র যৌন আনুগত্য এবং একই সাথে পুরুষের জন্য নিঃশব্দে অনুমোদন করে বহুগামিতা ও নিষিদ্ধপল্লীতে গমনের ‘অধিকার’। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্বকে তার বিভিন্ন রূপসহ টিকিয়ে রাখার জন্য এর উত্তরাধিকারের নিশ্চিতির প্রয়োজন, যেহেতু ভবিষ্যত প্রজন্মের মানুষের সৃষ্টি হয় কোনো না কোনো নারীর গর্ভে। আবার সেই নারীকেই এই ব্যবস্থা পণ্যায়িত করে উপস্থাপন করে পুঁজির স্বার্থে, তার পুনরুৎপাদন ও স্ফীতির অপ্রতিহত তাগিদে। ফলে পুঁজির এই পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া বিদ্যমান নারী-পুরুষ সম্পর্কেরও পুনরুৎপাদন ঘটায়।
বহুগামিতা, পতিতাবৃত্তি কিংবা পর্নোগ্রাফি- শুধু পুরুষের কাম-লালসাকেই চিত্রায়িত করে না, যেমনটি প্রথাগত নারীবাদীরা বলে থাকেন। একই সাথে তা বিদ্যমান ব্যবস্থার শর্তের অধীনে নারী-পুরুষ অসমতামূলক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটায়। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সে কারণে প্রশ্নবিদ্ধ না করে সমাজের বৈষম্যের গোড়া আর সহস্র ডালপালাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায় না। বর্তমান অসম লৈঙ্গিক সম্পর্ককে অতিক্রম করতে তাই প্রথাগত নারীবাদীগণ দাওয়াই দেন- কখনো চেতনতার অভাবে, কখনোবা সচেতনতার সাথে পুঁজিবাদী সম্পর্ককে রক্ষার এজেন্সি নিয়ে- নারী কর্তৃক পিতৃতান্ত্রিক আচরণ অবলম্বনের। তারা বাসনা করেন নারীর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত পনোর্গ্রাফি, নারীর যৌনতৃপ্তির জন্য পুরুষ-বেশ্যার। অথচ সুস্থ সমাজ-সম্পর্কের স্বার্থে নারী-পুরুষ পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা ও মানবিক অনুভূতি-আশ্রয়ী স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠাই জরুরি; বেশ্যাবৃত্তি, পুরুষ- কিংবা নারী-, সেই শর্ত পূরণ করতে পারে না; তা দ্বন্দ্বকে তীব্রতরই করে তোলে কেবল।
ব্যক্তি-সম্পত্তির স্বার্থ বাঁচিয়ে চলা পুরুষের বিরুদ্ধে অহর্নিশ জেহাদ-ঘোষণাকারী প্রথাগত নারীবাদীগণ তাই মোল্লাপুরুত অথবা লোলুপ পিতৃতান্ত্রিকতার তুল্যগুণসম্পন্ন বিপ্রতীপ প্রতিবিম্ব মাত্র।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..