প্রেমিক
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
নিজার কাব্বানি আরবি সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য নাম। তার প্রেমের কবিতা মানুষের কাছে বিশেষ সমাদৃত। তার লেখা কবিতা কেবলমাত্র ছাপা হয়ে পঠনপাঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে, এমন নয়; তার লেখা কবিতায় সুরারোপ করে বিভিন্ন সময়ে লেবানন এবং সিরিয়ার প্রখ্যাত গায়করা গান গেয়েছেন।
কাব্বানির সমস্ত লেখার মধ্যে নারীর একটি বিশেষ স্থান আছে। বেশ কিছু কবিতাকে ‘নারীবাদী’ বলা চলে। অনেক কবিতাই যেন একজন নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা বলে মনে হয়। অত্যন্ত মরমী কলম হলে এমনটি সম্ভব। তার কলম সর্বদা সমাজে নারীর সাম্য এবং মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছে। ১৯২৩ সালে সিরিয়ার দামাস্কাসে জন্ম হয়েছিল তার। তার লেখালেখির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট আরবি জাতীয়তাবাদী চরিত্র প্রতিফলিত হত। পরিণত বয়সের লেখাগুলির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয় তার জীবনবোধ, উঠে আসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা; তখন তিনি আর গোপন করছেন না নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে জীবনের শেষদিন অবধি লন্ডনে কাটালেও তার কবিতার ভাষা সবসময় যেন জারিত ছিল সিরিয়ার দামাস্কাসের যূথিকাগুচ্ছের সৌরভে।
আঁকা শেখা
আমার ছেলে আমার সামনে
ওর রঙের বাক্সটা রাখে,
আমাকে একটা পাখি এঁকে দিতে বলে।
আমি ধূসর রঙে তুলি ডোবাই।
একটা চৌকোনা আয়তক্ষেত্রের মধ্যে
লম্বালম্বি দাগ টানি অনেকগুলো,
তারপর ওগুলোর উপরে
একটা তালা এঁকে দিই।
-‘কিন্তু এটা কী? বাবা, তুমি জেলখানা এঁকেছ।
বাবা, তুমি কি জানোনা কীভাবে পাখি আঁকতে হয়?’
আমি তাকে বলি, ‘আমায় ক্ষমা কর, বাছা,
আমি ভুলে গেছি পাখি কেমন দেখতে হয়!’
তারপর আবার একদিন আমার ছেলে
আমার সামনে খুলে ধরে তার ড্রয়িং খাতা,
বায়না ধরে একগোছা গমের শিস এঁকে দেবার জন্য।
আমি কলমটা শক্ত করে ধরি,
তারপর আঁকতে থাকি,
হ্যাঁ, একটা বন্দুক এঁকে ফেলি।
আমার ছেলে অবাক হয়ে আমাকে বলে,
‘একী কাণ্ড বাবা! তুমি কি গমের শিষ
আর বন্দুকের মধ্যে কি পার্থক্য সেটা জানোনা?’
আমি তাকে বলি, ‘বাছা, একসময়ে আমি জানতাম,
জানতাম গমের গুচ্ছের আকৃতি,
রুটির গড়ন,
গোলাপফুলের অবয়ব,
হ্যাঁ, এগুলো সব জানতাম।
কিন্তু যেদিন থেকে জঙ্গলের অজস্র গাছগুলো অবধি
মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়েছে,
আমি সব ভুলে গেছি।
গোলাপের গায়ে এসে পড়েছে বিষণ্ণ ধূসর ছায়া,
মনে হয় গমের গুচ্ছগুলো সশস্ত্র,
পাখিগুলো সশস্ত্র,
সংস্কৃতি সশস্ত্র,
এবং ধর্মও সশস্ত্র,
এখন সঙ্গে বন্দুক না থাকলে,
তুমি একটুকরো রুটিও কিনতে পারবেনা।
কাঁটায় নিজের হাত রক্তাক্ত না করে
তুলতে পারবেনা গোলাপ।
একটা বইও কিনে পড়তে পারবেনা তুমি,
যেটা তোমার আঙুলের ফাঁকে
প্রচণ্ড শব্দ করে একটা বিস্ফোরণে ফেটে পড়বে না।
আমার ছেলে আমার খাটের কিনারায় এসে বসে,
আমাকে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বলে।
আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে বালিশে।
আমার ছেলে আমারই অশ্রুর বিন্দু লেহন করে,
তারপর বিস্ময়ের সুরে বলে,
-‘বাবা, এগুলো তো চোখের জল, কবিতা নয়!’
আমি বলি,
-‘বাছা, তুমি যেদিন বড় হবে,
যেদিন আরবি কবিতার মোটা মোটা বই পড়বে,
সেদিন বুঝতে পারবে যে
আরবিভাষায় শব্দ আর অশ্রুবিন্দু যমজ ভাই।
এখন আরবি কবিতার শব্দগুলিও
কবির আঙুলের থেকে বেরিয়ে আসা পঙক্তি নয়,
কান্নার ফোঁটা!
আমার ছেলে আমার সামনে
আবার কলম, রং, তুলি, ড্রয়িং খাতা…
সব সাজিয়ে দেয়,
বায়না করে আবার,
বায়না করে জন্মভূমি এঁকে দেওয়ার জন্য,
হ্যাঁ, ওর জন্য জন্মভূমি এঁকে দিতে হবে আমাকে।
আমি তুলিটা হাতে নিই,
হাত কাঁপে আমার,
আমি ফুঁপিয়ে উঠি,
ডুবতে থাকি…
ডুবতে থাকি।
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..
স্মৃতি চাঁদের আজ দুঃখ পাবার কিছু নেই ! সবুজ পৃথিবীতে আজকের এই বিকেলে আকাশে উড়ে…..
দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..