নিত্য বোঝাপড়া

প্রিয়াঙ্কা কর্মকার
কবিতা
Bengali
নিত্য বোঝাপড়া

ধর্ষিতার প্রশ্ন

তার চোখের অন্ধকারের গভীর স্তব্ধতা
দুটো ঠোঁটের তীব্র শুষ্কতা
ঘনকালো চুলের সর্পিল অবয়বে শান্ত
মুঠো মধ্যে পূজিত পরম দেশমৃত্তিকা চিহ্ন
অসহয়তার মধ্যে অন্তিম চেষ্টার তীব্রতা
যোনির মধ্য দিয়ে জাতি ধর্মের সেই প্রতীকী
রূপের তীব্র প্রহসন বয়ে যাচ্ছে।
মাতৃত্বের অহংকারের ছিন্নাবস্থা সূচিত হচ্ছে।

 

দুই.

তুমি লজ্জা পাচ্ছ!
লজ্জা কি তোমাকে দেখচ্ছেনা?
সমাজের সেই বিদ্বজনের কফি মাগের
পাশে তোমার লজ্জা অ্যাশট্রেতে
ঝরছে বারংবার।
এ লজ্জা তোমার নয়
কেন নিজেকে কলুষিত করছ?
এ লজ্জা আমার, আমাদের
তুমি কেন মুখ ঢাকছ!
মুখ তুলো, উঠে দাড়াঁও
লজ্জাকে বল-
লজ্জা পাওয়ার সময় তোমার
তুমি দাড়াঁও,
আমি আসছি, আমি আসছি-

 

তিন.

আজ প্রশ্ন রাখ-
চোখ আজ ধর্ষক
মন আজ ধর্ষিত
দেহ হল কারাগার
আত্মা হল বন্দীপাখি-
সমাজ আজ যাত্রার স্টেজ
বুদ্ধিজীবিরা মোমবাতির মিছিলে
নিজস্বী নিতে আজ ব্যস্ত
আজ সেই বাসুদেবের হলনা আর্বিভাব
চারিদিকে শুধুই যে দুঃশাসনের
লোলুপতার বাড়ছে প্রভাব
বুঝতেই দিলনা এই সুন্দর মমতাময়ী, পৃথিবীর মাতৃসমা রূপকে।

আঙুলের বেড়াজালের অন্তরঙ্গতা

বন্দী সুবিশাল কারাগারে
পথ সেখানে ভেঙে গেছে-
চরাই উৎরাই মাঝে
শরীর চায় ঘুমের স্বাদ
কিন্তু আঙুলের সাথে আঙুল যে
প্রযুক্তির জালে বিমোহিত!
কখনো সেখানে শক্তির হুংকার
কখনো আবার বন্দুকের ক্লান্ত নীল মুখের ছবি
এসবের মাঝে পরাধীন আমাদের চেতনা
ছিন্ন আমাদের বিবেক।
আর আঙুলের সাথে আঙুলের আক্ষেপে জরিত আমি।

অন্তরঙ্গতা মগ্নতা আর ভালোবাসার
প্রগাঢ় বহিঃপ্রকাশ
তোমার ছোঁয়ায়
আঙুলের আঙুল স্পর্শে জানান দেয়!
তোমার আদিম চিরায়িত অনুভবকে
জানান দেয়
আমার তোমার হৃদয়ের বাধনকে
তোমার আলতো আঙুলের ছোঁয়া
আমার ভালোবাসার বর্তমানকে বাধে,
আর গড়ে তোলে ভবিষ্যতের নিবিড়তাকে।

 

নিত্য বোঝাপড়া

(সূচনা)

আমি অবিরত জেরবার
তোমার কন্টকময় বাণী আমায় করছে নির্বিকার
আমার শরীর যেন বরফ চাপা।
তোমার তুচ্ছত্চ্ছিল্যতায় আছে মাপা
শত বিষাক্ত বিষের মত।
তোমার প্রতিটি অপমান হৃদিতে আছে, শায়িত ক্ষত।

(মধ্যন্ত)

মানুষের জীবনটা রেলগাড়ির মত,
আর জীবনের স্মৃতি গুলো এক একটা- স্টেশন এর মত।

( অন্তিম)

হে পুরুষ, তোমরা সৃষ্টি কর
আমরা করি ধারণ
তুমি আর আমি বলে যে কিছুই নেই
আমার “এক”
এটাই হল অবিনশ্বর সত্য।

জীবনযুদ্ধের ধাপ

অসহয়তার পরিচয় কখনো দিতে চাইনা।
হাসি মুখে সবসময় বলি “ভালো আছি”
কিন্তু আজ বড্ড অসহায় লাগল নিজেকে।
চোখের কোণের জলটা এসেও আসতে, দিলামনা ওদের।
এতটাই নিষ্ঠুর আমি।
কারণ আমাকে যে বলতে হবে –
“ভালো আছি”

দুই.

চারিদিকে আনন্দ ছড়িয়ে আছে।
হরেক রকমের আনন্দ আছে।
নিজের ভাগের আনন্দটা চিহ্নিত করে, আনন্দে থাকো।
আর বাকিদের ও আনন্দে থাকতে দাও –

তিন.

আমার নিন্দুকদের আমি বড্ড ভালোবাসি। কারণ,
ওরাই আমার অন্তিম ধৈর্যের সম্বল।
ওদের জন্যই আমার মরচে পড়া সিন্দুকের; রাখা সেই প্রবল ইচ্ছের সম্মুখীন হতে পারি, আর বলি –
“পথ তো সবে শুরু
এবার হাঁটতে শুরু করব।”

প্রিয়াঙ্কা কর্মকার। কবি ও বাচিক শিল্পী। জন্ম ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতায়। লেখাপড়া বাংলায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে বি,এড করছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ