আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
মাগো !
কান খুললেই পাপী আমি ,
আমি খেঁদি, ভাতারখাঁগী
প্যাঁচামুখী-ছোট জাতি ,
বেজম্মা এক হারামজাদি।
চক্ষু খুলে তাকাই আবার ,
নিঝুম জলে চেয়ে দেখি …
সুদর্শনা … নিখুঁত আমি ।
বন্ধ চোখে তাকাই যেবার ,
ভালবাসার নেই হাহাকার ।
বন্ধু বলে জাপটে ধরে …
থাইয়ের উপর আঁচড় মারে ।
নরম গলায় , পরম সুরে
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ,
কামড়ে ধরে কানের লতি ।
এ কি জীবন ?
এ কী জীবন !
চাইনা এ মন
ধ্বংস করো …
মাগো ! আমায় তুমি বরণ করো ।
যতবার মায়ের ব্যক্তিগত ড্রয়ারে হাত দিয়েছি !
ততবার উঠে এসেছে স্নো , চিরুনী , সেপটিপিন …
যতবার আমার ব্যক্তিগত পার্সে হাত দিয়েছি !
ততোবার উঠে এসেছে আইব্রু , লিপিস্টিক , ব্রুজ …
যতবার আমার মেয়ে তার ব্যক্তিগত সেলফ এ হাত রাখবে !
আর কিছু না হলেও থাকবে হয়তো ওড়না আটকে রাখার একটি সুঁজ ।
হয়তো অনাদিকাল সবুজ বাতি জ্বলবে সেপটিপিন কারখানার উন্নয়নে,
হয়তো পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসবে না , সভ্যতার দ্বৈববাণী ভাসবেনা এখানে ।
হয়তো …
হয়তো আমিও ক্ষয় হয়ে যাবো , সেপটিপিনে ঝুলতে ঝুলতে …
অথবা বিদ্ধ হওয়া সেপটিপিন বেয়ে গড়িয়ে পরা রক্ত ফোঁটা লিখবে জেগে ওঠার গান ।
হয়তো আমার মেয়েই হবে অস্ত্র …
অথবা … !
অথবা উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ ভগ্নস্তুপ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে ওর কলম ;
ধারাল কালির মহাপ্রলয় ঘটিয়ে নিয়ে আসবে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশ প্রথম ।
পৌরুষ স্বরে খুঁজে পাই সত্যটি ,
ভাগাড়ের দাসী , বলদি ;
দৈনিকে চোখ পড়লেই ! হতভম্ব হয়ে যই ,
লিঙ্গ সামনে হাঁটতে দেয়না বলে , কাঁদি ।
পুঞ্জীভূত অগ্নি স্লোগান তোলে রক্তে ,
প্রশ্ন ও প্রশ্নের খাবি ,
আশ্চর্য ! মায়ের স্তন বোটা মুখে নিয়েই …
সন্তানের গৃহযুদ্ধের দাবি ?
সির্তে ‘ র ভাঙ্গা ক্লান্ত শরীর চোখে ভেসে ওঠে ,
আত্কে উঠি , মূর্ছা যাই ;
প্রেমিকের কাঁধ টেনে হঠাৎ বলে উঠি , চলো !
চোখ মুছে উঠে দাঁড়াই !
আমি মধ্যরাতে যখন লিঙ্গ যুক্ত কবিতায় অগ্নি সংযোগ করতে যাই !
তখনই , বাণিজ্য গলা উঁচিয়ে তেড়ে আসে এদিকে ,
মসলার জাহাজ ডেকে ওঠে , জাগো নগরী ……!
সেই মধ্যরাতে জেগে ওঠে আমার প্রেমিক পুরুষ ,
স্বামী হয়ে ওঠে শক্ত পেশীর মানুষটি ,কবিতাটি গরম নিশ্বাসে ধর্ষক হয় মুহুর্তে …
অতঃপর ওদের নিয়মে এগিয়ে যায় জাহাজের দিকে, পয়সা কুড়িয়ে যাপন গড়তে ।
দুপুরে ঘরে ফেরার আগেই ছত্রাক পরা পয়সায় দু’টো অন্ন জুটে যায় ,
খেয়ে কবিতা লিখতে বসে , একই নিয়মে চলছে দুই যুগ ,
সুযোগ হয়নি ভালোবেসে ভালোবাসা বানাতে ।
অগ্নি বয়ে নারী রূপে থাকি সংসারে ,
বীর্যপাতের অহংকারে অটল বিধাতা পুরুষ ;
নষ্ট কবিতা পড়ি , পোড়াতে পারিনা আমি , বড় সংসারী ।
দৃষ্টি ! তুমি অসংযমী, উচ্ছৃঙ্খল হও ;
নাভি ভেদ করে পাকস্থলীতে পৌঁছে যাও …
পৌঁছে যাও নারীর স্তন ভেদ করে মনের মনিকোঠায় ;
প্রশস্ত হও তুমি ….
মুহূর্তেই মেপে দাও হাতুড়ি হাঙ্গরের উৎপাদন ভূমি ।
দৃষ্টি ! তুমি অনিয়ত , অদমিত , অশাসিত রও ;
আবিশ্ব ঘুরে ছুঁয়ে আসো মেরু …
ছুঁয়ে আসো আঁধার ভেদ করে ছায়াপথ , নক্ষত্ররাজি ;
তুমি অবাধ হও ….
অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ ছেঁটে ছুঁটে তৃণমূল থেকে নগরী এক আঙ্গিনা বানাও ।
দৃষ্টি ! তুমি ধর্মের বেদীতলে সংযত, সংকীর্ণ হইওনা ;
যাতার পেষোণে চূর্ণ কোরোনা বৈভব !
দাঁড়াও ……..! দাঁড়াও ,
দুর্দমনীয় … উদ্দাম হও,
মায়ের কোলে সন্তান হত্যা থামাও ।
এইমাত্র যে লাইনটি লিখে কাটাকুটি করে মুছে ফেললাম ;
সেখানে এক জোড়া হারিয়ে যাওয়া সোনার নূপুর ছিলো ,
সেখানে একটি শৃঙ্খলিত পায়ের শেকল ছিলো ।
আমার লুপ্ত হওয়া ডানার খোঁজ ছিলো , কিছু কড়া নালিশ ছিলো ।
তবু্ও মুছে ফেললাম ….
লম্বা ও উপযুক্ত প্রামাণ্যচিত্র যুক্ত ছিলো সেখানে ,
অসংখ্য আর্তনাদ ছিলো , একটি কাটা মুণ্ড ছিলো ,
রক্তের নহরে হল্লা করে ছুটে চলা ময়ূরপঙ্ক্ষী নৌকা ছিলো ,
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচু করা মিছিল ছিলো , একটি ময়না ছটফট করছিলো মৃত্যুযন্ত্রণায় সেখানে ।
তবু মুছে ফেললাম ….
একটা দীর্ঘ কালো রাত্রির গল্প ছিলো , একজন ধর্ষিতার চিৎকার ছিলো ;
বাজার দখলকারী বেশ্যার ক্ষমতা লেখা ছিলো সেখানে ,
একটি যুবকের তর্জনী ছিলো , এলো মেলো কিছু ঘাস ছিলো , কিছু ফুল ছিলো ।
তবুও লাইনটি মুছে ফেললাম ….
আমার প্রতিটি মৃত্যুর কারন লেখা ছিলো সেখানে ,
বিবাদীর নাম লেখা ছিলো ঈশ্বর ।
তবু মুছে ফেললাম ….
তবু্ও মুছে ফেললাম ….
ঈশ্বর ! তোমায় ক্ষমা করে দিলাম ।
যে পশু সাত পল্লা বস্ত্রের উপর দিয়ে মাংস খায় ,
সে মানুষ হোক ,
চলন্ত বাসে আমার স্তনে হাত রাখে যে পুরুষ ,
সে ভালো থাকুক ;
জনসম্মুখে যে আমায় বিবস্ত্র করে টেনে হেঁচড়ে খেতে চায় ,
সেও ভালো থাকুক ।
আড়ালে যে আমায় ভোগ করতে ইচ্ছুক ,
সেও বাঁধা পরুক আমারই মতো কোনো নারীর প্রেমে ।
বিয়ের পিঁড়িতে বসুক ওরা ,
সন্তান জন্ম হতে দেখে আবার জন্ম নিক ;
সুমতি হোক সুবাসিত নারী মাংসে ,
প্রত্যেকের ঘরে অন্তত একটি করে কন্যা সন্তান জন্ম নিক ,
এ আমার আশীর্বাদ ;
দিব্যি দিয়ে বলছি , এ আমার আশীর্বাদ।
দাঁতের চিপায় গুল দিয়ে তুমি হাসছো?
এক নারীর প্রেমে গলে পরে আছো তুমি ?
দ্যাখো , দ্যাখো !
সোনা ফলা উপত্যকা পুড়ে খাক হয়ে যায় ,
ঠায় দাঁড়িয়ে কিছু অগ্নিবাহক ;
আমি ছাই হয়ে উড়ছি …ধোঁয়ায় ।
দ্যাখো ধর্ম উড়ায় নিশান মানুষের গোশতে,
কিছু কুকুর পোড়া হাড় খায় ;
বৃদ্ধ ঈগল পায়ের ছাপে লেখে মানচিত্র
শান্ত মাছটিও প্রাণের মায়ায় খাবি খায় ।
কমরেড ! কমরেড ! চুপ কেনো ?
ভেসে যায় সব, দ্যাখো ! ভেসে যায় …
মা !
আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদো না ।
খুঁজছো আমার মতো তুমিও স্বাধীনতা, আমি জানি ।
তবু …, তবুও নিয়মের বেড়ি কেনো বাধ্য হয়ে মেয়ের পায়ে পরাতে চাও ?
কেনো দাসী বানাতে বানাতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছো তুমি ?
ছেলেদের শিস মারা পথ এড়িয়ে হাঁটতে বলেছো ,
নোংরা কথা অ্যাভয়েড করতে কানে গুঁজে দিয়েছো তুলো ,
চোখে বেঁধে দিয়েছো কালো কাপড় ।
কেনো? কেনো মা ! কেনো আমাকেই শুধু ….! ! !
কেনো মেয়েদের রাগ করতে নেই ?
রাগ যদি খারাপ হবে , তবে তা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই খারাপ।
আর কতো পথ বদলাবো মা !
নোংরা কথা গুলো এতো ভারী যে তা কানে গুঁজে দেয়া তুলোয় বাঁধ মানেনা।
কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা বলে বার বার ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছি , এখানে সেখানে…।
আর পারছি না মা ! ক্ষমা করো আমায় ।
খুলে ফেললাম চোখে বাঁধা কালো কাপড় , পায়ে পরানো নিয়মের বেড়ি।
“ছুটবো এবার , মানুষ হবো” ।
আর দাসত্ব নয় , আর থেকে থেকে মৃত্যু নয়
তোমাকে এনে দেবো মানুষের হাট , জনপদ।
অতঃপর আমার কন্যা ! পদাঘাতে চূর্ণ করে গড়বে নতুন পৃথিবী , হবে বিশ্ব মাতা।
অথবা ….! অথবা , মুক্তি নেবো অদৃশ্য স্বাধীনতায় ।
ইতি
— বৈভবি বৈরাগী।
শব্দ !
আমার ভাঙ্গা কলমের জরায়ুমুখ বেয়ে বেরিয়ে আসা অক্ষর ;
কখনো কথা হয় , কখনো কবিতা …
বেশিটাই প্রশ্ন হয়ে পরে ,
শস্তা সমালোচনায় বিকিয়ে দি তা ।
শব্দ !
আমার নৈসর্গিক ভালোবাসাকে বুকে জড়িয়ে ধরে করে আদর ;
কখনো ছুড়ে ফেলে , দ্যায় মাটিচাপা
অসহায় হয়ে যাই …
লিখি ভারী নিখুঁত নিষ্ঠুরতা ।
শব্দ !
এই বিবাগী বৈরাগীর ভাঙ্গাচোরা মনে উথলে ওঠা সপ্নের বাসর ;
ভালোবাসি খুব , জড়িয়ে ধরে বলি , আহা !
বাঁচি তাকে নিয়ে বুকের মাঝে …
ভুলি সব , পাইনি যা ।
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..