প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
রাত কত, কতটা গভীর জানে না কবিতা। ফেইসবুকে নিমজ্জিত সে দীর্ঘক্ষণ। ছেলে পড়া তৈরী করে ঘুমিয়ে গেছে বহুক্ষণ আগেই। স্বামী ঘুমিয়েছ কীনা, আদৌ বাড়ি ফিরেছে কীনা জানে না কবিতা। ভীষণরকম ব্যস্ত সে ফেইসবুক ইনবক্সে। একসাথে বেশ কয়েকটি চ্যাট উইন্ডো ওপেন করে রাখা স্বভাব কবিতার, প্রয়োজনও। নানান নামী মানুষ, লেখক, সাংবাদিক তার সাথে একটু কথা বলতে মুখিয়ে থাকে। রাত যতো গভীর হয়, কথাও ততো মধুর হয়। একাধিক পুরুষের সাথে কথা চালাচালি করলেও কবিতা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে এদের একজনকে।
জানে, লোকটাকে আরেকটু বেশি উত্তেজিত করতে পারলেই কেল্লাফতে। একটা শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক তিনি। কবিতার নানান লেখা তো বটেই রূপেরও ভক্ত। এভাবে লিখে লিখে, যারে কয় সেক্সচ্যাট, তাতে লোকটাকে উত্তেজিত করতে পারলে জানে সে ফোন করবে। তখন আরো আরো আরো ইরোটিক কথা বলবে কবিতা। আরো আরো দাও প্রাণের মতোই আরো আরো আরো কথা হবে বিনিময়। কবিতা জানে তার কণ্ঠ অদ্ভুত মাদকতা জানে!
জৈবিক নিয়মে একসময় ফোন আসে কবিতার সেলফোনে, অপরপ্রান্তে সেই নামী সাংবাদিক। যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার। মানব মানবীর চূড়ান্ত মিলন সম্ভব হয় না বটে, কিন্তু যা চলে তারে বলাই যায় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। ফোনসেক্স কথাটা বাংলাদেশের মতো দেশেও এখন ডালভাত। কবিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কবিবর ফোনেই রচনা করেন এক সুখশ্রাব্য পোস্ট মর্ডান পোস্ট -মর্ডান কবিতার। যে শব্দাবলী, কবিতার যেসব পঙ্ক্তি রচিত হয়ে চলে তা লেখ্য রূপ পেলে হলে হতে পারতো এক দারুণ উত্তেজনাকর সাহিত্য। আমরা পেতাম মারজুক রাসেল, ব্রাত্য রাইসু বা সাঈয়েদ জামিলের মতো আরো একজন কবিকে। হায় তা আর হলো কই! এই কাব্য প্রতিভাধর কবি কেবলমাত্র রাতের গভীরে এক মধ্যবয়সী নারীর মুঠোফোনের কল রেকর্ডারেই তার অসামান্য সৃষ্টি রেখে চললেন। প্রতিভার কী ভীষণরকম নিষ্ঠুরতম অপচয়!
কবিতা সেই পুরুষকে বলে, তুমি একটু গরম গরম কথা বলো প্লিজ। আমার ভীষণ অস্থির লাগছে।
পু: কী করবো বলো, আমি তো তোমাকে কাছে পেতেই চাই। তুমি একটু মুখ ছোটাও না।
ক: জানো তো রোজ রাতে ব্যাটা লাগে আমার
পু: কী করবা ব্যাটা দিয়ে
ক: উফ উফ, গরম কথা বলো
আমি ফিঙ্গারিং করবো
একসময়ে এই তাণ্ডব থামে, কিন্তু কবিতার শরীর নিস্তেজ হয় না। সে যেনো আরো দ্বিগুণ তেজে জ্বলে উঠে। ফেসবুক ঘেঁটে সেই সম্পাদকের প্রফাইল বের করে, যে আবার কবিও বটে। ভারত বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে নানান অনুষ্ঠান করেন, বক্তব্য রাখেন৷ টাইমলাইন জুড়ে সেইসব আয়োজনের ছবি, নানান নারী লেখক, সংগঠকদের সাথে ছবি তো আছেই। নানানরকম ভঙ্গিমায় কবি ও তার স্ত্রীও আছেন। কবিপত্নী সুন্দরী, বিদুষী, শিক্ষিতাও। কবি ও তার পত্নীর যুগল ছবি যেনো কবিতার চোখে মরিচ বাটা ঘসে দেবার মতো জ্বালা ধরায়। সহ্য করতে পারে না জন্য আরেকজনের সাথে চ্যাটিং করতে থাকে। আরো আরো উত্তেজনা, আরো আরো স্খলনে সিক্ত হতে হতে সময় গড়ায়।
কথা বলতে বলতেই ফেইসবুকে স্ট্যাটাস পোস্ট করে কবিতা…
সানন্দা পত্রিকার মেয়েদের গায়ের যে রঙ, ওইরকম হুইট কালার বেসিনে আঁজলা ভরে জল মুখে দিই। ব্রনের ছোঁয়া লাগে আঙ্গুলে। বিষণ্ণ হই। ব্রন ভরা মুখ কার ভাল্লাগে! বেসিনের আয়নায় মুখ দেখি। শিশির মাখানো আয়না। ঝাপসা। কিছুই দেখা যায় না। আমি তাতে আঙ্গুল বুলিয়ে লিখি ‘কবিতা’। ‘কবিতা’র ভিতরকার চিকন স্বচ্ছতা দিয়ে এবার আমি ব্রন দেখতে পাই। আরও বেশি বিষণ্ণ হই…..
আরো কিছু হেঁয়ালি ভরা বাক্য লিখে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিল কবিতা। একটু পরপর দেখে কয়টা লাইক, কে দিলো কমেন্ট, কার কার নাম দেখা যায় রিঅ্যাক্টে। কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দিতে ইনবক্সের টুংটুং শোনে, সেখানেও হাজির হয়। বাদ যায় না আদারবক্স, সেখানেও উদ্বেগ আর কাতরতা কবিতার ব্রন নিয়ে।
এইসব দিল্লাগি করতে করতে ফাঁকতালে আয়না দেখে কবিতা, ফরসা কিন্তু অনুজ্জ্বল একেবারে জৌলুষহীন ম্যাড়ম্যাড়ে ত্বক। কপালে পরপর অনেকগুলো ভাঁজ, দুই ভ্রুর মাঝে গভীর ভাঁজ। নাকের দুপাশ, চোখের নীচে কাকের পা, সারাটা মুখে ব্রনের ক্ষত! কিন্তু ফেইসবুকে কবিতার যে ছবি তাতে হাজার হাজার লাইকের বন্যা। সেই ছবির চোখ মরা মাছের মতো অপ্রতীভ বটে, ঠোঁটের প্রকৃত রঙ ঢেকে দিয়েছে শাইনার। ক্ষতবিক্ষত চাঁদের ছবির মতো মুখমণ্ডলের হাজারো দাগ ছোপ ক্ষত সব সব ঢেকে গেছে ক্যামেরার জাদুতে!
বেশ অনেকদিন যাবৎ কবিতা ফেইসবুকিং করছে এবং তার প্রায় লক্ষের কাছাকাছি ফলোয়ার, পাঁচ হাজার বন্ধু। কেবলমাত্র একেকটা আইডিতেই। এখানে সে যা লেখে তা ছাপা হয় নানান পত্রপত্রিকায়। এভাবেই কবিতার বই হয়েছে কয়েকটা। কবিতা, মুক্তগদ্য, নিবন্ধ, প্রবন্ধ নামে সেইসব বইয়ের কাটতি তা বেচাবিক্রি সে যতোটা ফলাও করে প্রচার করে বা লেখক প্রাবন্ধিক হিসেবে নিজেকে যতোটা জাহির করে ততোটা মারাত্মক নয়। কিন্তু ফেবুতে জানান দিলে শুভকামনা, অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যায় সময়রেখা।
বইমেলার সময়ে নানানজনের সাথে পরিচয়, ছবি তুলতে ভালো লাগে তার। জুটে যায় কতো ভক্ত, অনুরক্ত স্তাবক। বাইরে বেরুতে কড়া মেকাপ করতে অবশ্য ভোলে না কবিতা, তবে এদেশের মানুষের কাছে ফরসা রঙটাই অনেককিছু বলে বাকী সব ঢাকা পড়ে যায় মেকাপের দৌলতে। এখানে সেখানে নানান গ্রুপের নানানরকম প্রোগ্রাম, কবি সম্মেলন, সাহিত্য সমাবেশে যোগ দিতে হয় কবিতাকে। পরিচয় হয় সংবাদ মাধ্যমের বহু হর্তাকর্তার সাথে, দেশের বহু উদ্যোক্তা এখন এসব প্রোগ্রামের স্পন্সর। এদের সাথে সখ্য গড়তে পারলে আখেরে লাভ কবিতারই। লেখালেখি তো গৌণ, কবিতার মূল লক্ষ্য পুরুষ। নানানরকম নানানজাতের পুরুষ দেখা, পুরুষ শিকার করা কবিতার শখ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবগুলো ক্ষেত্রেই কবিতার অবাধ যাতায়াত। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক তো আছেই; মায় লিঙ্কইনডিন আইডিও সচল। একসাথে নানান নামে নানানরকম পরিচয়ে কবিতা চালায় প্রায় অর্ধশত ফেসবুক আইডি। এরমধ্যে কেবল তিনটি তার নিজের নাম, পরিচয়, ছবি দিয়ে। একটিতে তার সব বাল্য কৈশোর গ্রামের বন্ধু, বাপেরবাড়ি শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় পরিজন যুক্ত। আর দুইটি ফেইসবুক আইডিতে তার তাবড় ভক্তকূল তাকে অনুসরণ করে, তার ছবিতে হামলে পড়ে। এই ছবির জোরে চলে তার লেখাও।
ফের নিজেরই আটচল্লিশ খানা ফেবু আইডি, সমর্থক গোষ্ঠী। নিজের লেখাই নানান আইডি থেকে শেয়ার করে, যেনো কতো বড় লেখক সে। ফেবু পোস্টে কমেন্ট করে সে আরেকজন সেজে, বিরুদ্ধ মত দেখলেই চ্যালেঞ্জ করে বসে। চলতে থাকে তর্কের পর তর্ক। চলতে থাকে সেই বিরোধিতা করা মানুষকে পাবলিক শেইমিঙ। দিনরাত কাটিয়ে দেয় কবিতা ফেসবুকিং করে করে, বন্ধনহীন। সমাজের চোখে তার একটা গ্রহণযোগ্য পরিচয় আছে, বলা চলে সাইনবোর্ড। সে একজন বড় ব্যবসায়ীর স্ত্রী, এক সন্তানের মা। যার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় এক নারী, যার যৌনক্ষুধা মেটাতে অক্ষম তাবড় তাবড় পুরুষেরা।
কোন পুরুষকেই কবিতার বেশিদিন ভালো লাগে না, বড়জোর মাস ছয়েক। ফেবু থেকে কোন পুরুষকে বেছে নেয়া, তারে একটু খেলানো চলে কিছুদিন। ফের চ্যাটিং, এক আধটু ইন্টুমিন্টু ইলিবিলি থেকে ফোনসেক্স। অনেকসময় এরপর আর আগ্রহ নাইইই হয়ে যায়। আর যদি শরীর টগবগায় তো তারপরে কোন তারকাখচিত আবাসিক হোটেল বা শহরের বাইরে কোন রিসোর্টে অভিসার। ব্যস শরীর মনের সব প্রেম সব উত্তেজনা খতম এক্কেবারে সেই পুরুষটির প্রতি।
ম্যাড়ম্যাড়ে, উত্তাপহীন এক জীবন বয়ে বেড়ানো মধ্যবয়সী নারীর জীবনে উত্তাপ ছড়াতে আসে নানান বয়সের নানান রঙের পুরুষ।
কখনো সাহিত্যসভা, কবিতা পাঠের আসর, লেখক সাহিত্যিক আড্ডার নামে একটা দারুণ চক্রের আয়োজন করে কবিতা। দুইজন সম্ভাবনাময় তরুণ তুর্কী আছে এই গ্রুপে। যারা আন্তর্জালের বিশাল জগত ঢুঁড়ে বের করে আনে চকচকে চেহারার চাইতে ঝকঝকে শরীরের নারীদের। যারা কেউ কবি হতে ইচ্ছুক, কেউবা নিজেরে কবিই মানে এবং জানে। এরকম আধাফোটা, ডিমকবিদের সঙ্গে সঙ্গে জুটে যায় কতোশত দেড়েল গেঁজেল কবি জুটে কতো রকমের বিকৃত মানসিকতার দামড়া, লেখক যতোটা না তার চাইতে বেশি করে নারীমাংসলোভী। প্রচারের এই যুগে কারো কারো ভিতরে প্রতিভার নামে ভাড়ে মা ভবানী হলেও হাঁকডাক বড় কম না।
কবিতার আরো কম বয়সে এর তার ঘরে কিটিপার্টির বড় চল হয়েছিল, এখন তা অবশ্য পড়তির দিকেই বলা চলে। তবে সেই পুরানো মদ নতুন বোতলের মতো কিটি পার্টির পোস্ট-মডার্ন সংস্করণ এসেছে ফিরে। ইতিহাস যেমন নিজেকে বারবার ফিরিয়ে আনে, কবিতাও তেমনি করে নিজের সেই সময় ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়, উত্তরাধুনিকদের ভাবনাচিন্তা আয়ত্ত করে। আয়ত্তে আনতে হয় পোস্ট-মডার্ন কবিতা, এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই কবিদেরও যারা নিজেদের এই সময়ের দাবীদার বলে মানেন।
কবিতার যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রবল বললে কম বলা হয়, বলতে হবে সে সবসময়ই কামোত্তেজনায় শিহরিত হয়ে থাকে। বহু রকমের পুরুষ তার দেখা, নানান রূপে। তার মতো সমমনা কবি সাহিত্যের সমঝদারদের বিরাট দলের দুই তরুণ তুর্কী কবিতার সঙ্গে বহুবার বহুভাবে মিলিত হয়ে চরম পুলক দেবার চেষ্টা করে করে ক্লান্ত। হঠাৎই তারা তাদের এক সহকর্মীকে দলে টানতে চায় বলে জানায় কবিতাকে। এই পুরুষটি সুদর্শন বটে, এবং পদাধিকার বলে দুই তরুণের চাইতে কিঞ্চিৎ উপরে আসীন। ফের কবিতার প্রাণের সখি এবং সমস্ত রকম অঘটনঘটন পটিয়সী কবি রাশুর শ্যেণদৃষ্টিতে এই যুবাটি ধরা পড়েন। রাশুর সঙ্গে এই সুদর্শন যুবকের পরিচয় ঘটে এক জমায়েতে এবং ফেইসবুকে যুক্ত করে।
কবিতার সাথে তার স্বামী ওয়াহিদের দাম্পত্য জীবন নেই বরাবর। তার মানে দাঁড়ালো তারা বিয়ে করেছে, বাচ্চা জন্ম দিয়েছে, সমাজ তাদের দম্পতি বলে জানে কিন্তু তারা এক বাড়িতে আলাদা দুটি ঘরে বসবাস করে। তাদের জীবনযাত্রার তাল সুর লয় ভিন্ন। তাই দ্রোহের জীবন এক সুর হয়ে একই সুরে গান করেনা। কবিতা তাই একার জন্য রাঁধেনা, বাড়েনা, খায়ও না। সে নিজেকে আর সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে নিজের জীবনের আনন্দ ষোলআনার ওপরে আঠারো আনা করে পেতে চায়। যা তাকে ওয়াহিদ দেয় না, দেবে না দিতে পারবেনা, তাই সে অপর পুরুষ দিয়ে পুষিয়ে নিতে চায়। হোক সে আরেক নারীর স্বামী, হোক সে নারী তারই বোন বা বান্ধবী।
কবিতা নানানরকম ছক কষে, একে তাকে আয়ত্ব করে। কিন্তু এরকম সবদিক ভেবে আঁটঘাট বেঁধে প্ল্যান করা তার এই প্রথম। রাশু বোঝায় কবিতারে, ‘শোন সৌমিক কিন্তু একা মানুষ তার কোন বন্ধন নাই। আমি ফেইসবুকে দেখেছি বুঝলি, তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস হলো তোর ডিভোর্সি। আর সে সেদিন নিজে আমারে বলসে, রাশুপা দেখেন আমার জন্য একটা বান্ধবী জোগাড় করে দেন প্লিজ। আপনার কতো কতো বান্ধবী, একটারে আমার জন্য ফিট করে দ্যান না। আমি হলাম একা মানুষ, একা একা কী সব কাজ করা যায় বলেন!’ হাহাহা, কবিতা আর রাশু দুই নারী একসাথে ঘর কাঁপিয়ে হাসে। এরকম মজার কথা কে কবে শুনেছে।
ফের রাশু বলে, শোন কবিতা; তোর তো সংসার বলতে কিছু নাই বলা চলে। ওয়াহিদ তোরে সময় দেয় নাই কোনদিন, ভালোও সে বাসে না। আর দেখ লোকটা একা একদম। কোন ঝামেলা নেই আবার ভালো কামায় আবার লেখালেখিও করে। এর সাথে একটু প্রেম প্রেম খেল না, দেখিস আবার প্রেমে পড়িস না হারামি। কেবলই খেলাবি, খেলিয়ে খেলিয়ে যতো রকম করে সেক্স চ্যাট করাবি। তখন লোকটা পিয়া মাছের মতো মোচড়াবে আর মোচড়াবে কেবলই। তখন ছিপে তুলে আনবি, বিয়ে করার জন্য চাপ দিবি। তোর হাতে তো প্রমাণ হিসেবে রইলোই সব সেক্স চ্যাটের স্ক্রিনশট আর ফোনসেক্সের রেকর্ড। ফের ইনবক্সে নিজের কিছু ছবি দিবি, তারটাও চাইবি। এরপরে দেখ কেমন মজা জমে।
কবিতার কথা কবিতাই জানে, সেই জানে সব কথা সবখানে সবাইকে সবসময় বলা চলে না, আর তা উচিতও না। কবিতা বলেনা আর রাশুও জানে না ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কবিতার বিয়ে করা স্বামী যারে বলে তা না। তাদের দু’জনের কখনো ধর্ম মতে কিংবা আইনি মতে বিয়ে হয় নাই। না তারা কোন মসজিদ বা পীরের মাজারে গিয়ে একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছে৷ কিন্তু সমাজের চোখে কবিতা স্ত্রী, ওয়াহিদ তার স্বামী। এমনকী এই দম্পত্তির বাচ্চাটিও তাদের না, ওয়াহিদ তার বায়োলজিকালি বাবা না৷ কবিতার সত্যিকারে যে স্বামী ছিল, ষোল বছর বয়সে যাকে বিয়ে করেছিল যার সাথে সংসার করবে বলে ঘরে ছেড়েছিল কবিতা তারও না। বারবার একাধিক পুরুষের সাথে শারিরীক সংসর্গ করা কবিতা জানে না তার সন্তানের জনক কে! স্বামীর সংসার ছেড়ে ভাসতে ভাসতে এর তার হাত ধরে চলতে চলতে একসময় ফের কবিতার নৌকা ভেরে ওয়াহিদের ঘাটে। সেই থেকে আছে একসাথে, এবং লোকে তাদের স্বামী স্ত্রী বলে জানে। এবং তাদের একটা সন্তান আছে বলে সমাজ জানে, পাড়া মহল্লা জানে, বাচ্চার স্কুল খেলার মাঠ মোড়ের মুদির দোকানও জানে।
বাপের নাম জানতে হয়, জানাতে হয় আর থাকতে হয় বলে লোকে জানে ওয়াহিদের বাচ্চা আছে। মানে ওয়াহিদ একজন সক্ষম পুরুষ, একজন দায়িত্বশীল পুরুষ যার একটা সন্তান আছে। মানে সে নপুংসক না, মানে সে যৌন অক্ষম না, মানে সে সঙ্গমে অপটু হলেও হতে পারে কিন্তু নিবীর্য নাহ। তাই সে সমাজে বুক ফুলিয়ে চলে, পরিচয় দিতে গিয়ে আগবাড়িয়ে বলে আমার ছেলেটা আমার বড় আদরের। সে আমার কলিজার টুকরা জানের টুকরা একটা গুটুগুটু। সঙ্গে সঙ্গে জুড়ে দেয় আমার বউ কবিতা, ওকে আমি গুডি বলি ও আমাকে গুডু বলে আমরা আমাদের বাচ্চাকে গুলটু বলি।
তো গুলটুর মা গুডি, ওরফে ওয়াহিদের তথাকথিত বিয়ে না করা বউ ওরফে কবিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। কবিতা সেই সুদর্শন লোকটাকে ফেবুতে যুক্ত করে নিলো, ইনবক্সে হাই হেলো শুভ সকাল, শুভ বিকাল, শুভ রাত বলতে লাগলো আর লোকটা আইসক্রিমের মতো গলতে লাগলো গলতে লাগলো আর গলতে লাগলো। ফের কবিতা তাকে তাতাতে লাগলো আর লোকটা তেতে উঠে ফের কবিতাকে তাতাতে লাগলো। জগতজুড়ে কী মায়ার ফাঁদ পাতা আছে বাপস। কেউ কাউরে দেখলো না চিনলো না জানলো না, কিন্তু এ তারে সে ওরে এতো গরম গরম গরম কথা বলে গরম খাওয়াতে লাগলো। কবিতা লোকটারে বলে, রোজ রাতে তার পুরুষ লাগে। লোকটা বলে, কয়টা পুরুষ লাগে?
ফের কবিতা বলে, আদর করো!
লোকটা বলে, বড় মুশকিল আদর কোথায় পাবো! ফের কথায় কথায় রাতের সাথে বাড়ে উত্তেজনা। সেলফোনের ব্যালেন্স শেষ হলে লোকটা নীল আলো জ্বলা আবছক অন্ধকার ঘরটাতে ফেরে।
আর কবিতা সব সব সব কথার স্ক্রিনশট নিয়ে পাঠাতে থাকে রাশু আর দুই তরুণ প্রতিদ্বন্দ্বী তুর্কীদের।
আর লোকটা ঘুম থেকে ডেকে তুলে উপগত হতে চায় এক নারীর শরীরে। তেড়েফুঁড়ে শিশ্ন ধরে প্রবিষ্ট করাতে চায় আমূল এক নারীর যোনিতে। মধ্যবয়স্কা নারী না, উদ্ভিন্নযৌবনা অনিন্দিতা এক নারীর সুপুষ্ট স্তন হাতে নিয়ে মন্থন করে চলে আবলুশ পুরুষ। নারীর শরীর জাগলো কীনা ভাবেনা, ভাবার সময় যে নাই। তারে আদর করে করে জাগাবে, সেই সময় তো নাই। নারীর সুডৌল স্তন, মৃগণাভি সদৃশ জঙ্ঘা দেখার প্রয়োজন নাই। কেবলই চিন্তা শিশ্ন কখন কতোটা জাগে, পুরুষ সে তো পরস্ত্রীর কথায় মজে উত্থিত লিঙ্গ নিয়ে নারীর কাছে এলো। এখন তবে দ্বিধা কেন, হে নারী তুমি কেবল গ্রহণ করবে লিঙ্গ ব্যস। কী যেন একটা শব্দ ছিল না? কী যেন কী যেন, ওহ অর্গ্যাজম। নারীর অর্গ্যাজম জরুরী কিন্তু পুরুষটা তা ভাবে না। ভাববে কীকরে সে তো পারে না। পারে না মানে পারে না, পুরুষটা নারীর যোনিতে লিঙ্গ প্রবিষ্ট করাতে পারেনা।
কবিতা জানেনা, যে পুরুষটিকে ভেবে ভেবে সে শিহরিত হচ্ছে প্রতিদিন। ভাবছে এর সাথে সঙ্গম যদি সেই ঈপ্সিত উন্মাদনা দিতে পারে তবে সে ওয়াহিদের সঙ্গে আর থাকবে না। সমাজে কিছুদিন একটু হৈচৈ হবে হয়তো, তা হোক। লোকে জানবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে, এমননতো কতো হয়। কবিতা জানে না সঙ্গমের তৃপ্তি, উন্মাদনা দূর কি বাত। এই সুদর্শন যুবক আদতে সঙ্গমের যোগ্য না। কবিতা জানে না, যুবকের একজন স্ত্রী আছে। সেই স্ত্রীটির জরায়ু বহু বহুদিন ধরে অপেক্ষায় আছে। অপেক্ষায় আছে একটা সক্ষম শুক্রাণুর, যা তার ডিম্বের সাথে মিলনের ফলে বাচ্চা তৈরী করবে৷ কিন্তু স্ত্রীটি রোজ রোজ রোজ রাতে সঙ্গমে অতৃপ্ত, হতে হতে না হওয়া সঙ্গমে ক্লান্ত।
বছর পঁয়ত্রিশের এই সুবেশ সুদর্শন যুবক, নিজের যৌন অতৃপ্তি অক্ষমতা থেকে নিস্তার পেতে কবিতার মতো মধ্য বয়সের নারীদের সঙ্গে ফেইসবুকে যুক্ত হয়। সে ভাবে বা ধরে নেয় নানানরকম নারীর সঙ্গে যৌনালাপ করলে তার দাম্পত্য জীবনে ফাগুন আসবে। সে যে তার সঙ্গীকে শারীরিক সুখ দিতে পারছে না, সেটা থেকে পরিত্রাণ পাবে। লিঙ্গ উত্থানের তার যে সমস্যা যাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলে তা ঠিক হয়ে যাবে। সে ভাবে না কেবলমাত্র সঙ্গমে সুখ আসে না। সঙ্গীকে সময় দিতে হয় তার সাথে নিজের কথা ছোটছোট সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে হয়। যুবক কেবলই ভাবে পুরুষ কেবলই সঙ্গমে লিপ্ত হবে তার স্ত্রীর সাথে, এটাই বিশ্বস্থতা। সারাদিন এরকম চড়ুইপাখির মতো এর তার সাথে মেসেঞ্জারে টুনটুন করাটা দোষের না। সে তো আর পরস্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে যাচ্ছে না। এইসব কথা তার মাথা জুড়ে আছে আর সে কবিতার সাথে প্রেম প্রেম খেলায় প্রেমের প্রক্সি দিচ্ছে।
সাহায্য করে রাশু নামের কবিতারই বন্ধু, তাদের প্ল্যান থাকে একরকম। কবিতার সাগরেদ সেই দুই তরুণ তুর্কীও সংগ্রহ করতে থাকে কবিতার সাথে যুবকের যৌন সুড়সুড়ি দেয়া কথোপকথন। তারা জানে তারা কী করবে, তাদের বুদ্ধির কাছে কবিতা নাম্নী নারী কোন ছাড়! প্ল্যানমতোই এগোতে থাকে সবকিছু, কবিতার প্রেমে মাতোয়ারা যুবক। তরুণ তুর্কীদের হাতে জমে মোক্ষম সব অস্ত্র, কেবলই মিসাইল ছুড়বার অপেক্ষা! ঠিক তখনই বিধাতা পুরুষ সদয় হোন, তীর ছুড়েন কবিতার স্বামী নামক সেই প্রাণিটির হৃৎপিণ্ড লক্ষ্য করে।
ওয়াহিদের মৃত্যু কবিতার জীবনে কেমন আর কতো বড় পরিবর্তন আনলো তা সময় বলবে। তবে কিছুদিন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরে আবার যখন কবিতা ফেইসবুকে ফিরে এলো সে দেখতে পেলো সেই যুবকটি তাকে ব্লক করে দিয়েছে। বারবার কয়েকবার ফোন করে দেখলো রিসিভ করা হয়না। হপ্তাখানেক পরে এক ছুটির দিনে দুপুরবেলায় প্রবল কামকাতর কবিতা ফের ফোন দিলো ফোন রিসিভ করে এক নারী কণ্ঠ সুরেলা গলায় বলছে, উনি তো ঘুমাচ্ছে আন্টি। পরে ফোন দিয়েন প্লিজ। আরো দিনকয়েক পরে কবিতা আবারো ফোন করে এবং শুনতে হয় একটি রেকর্ডেড কণ্ঠ, আপনি যে নম্বরে কল করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে। বারবার প্রতিবার যতোবারই ফোন করে, এই কথাটিই শুনতে হয় কবিতাকে৷ অবশেষে সে একসময় এই নম্বরে ফোন করা থেকে নিজেকে মুক্তি দেয় বা বলা চলে নিজেকে আর আরো সেবায় নিয়োজিত করে৷ সেটা কে বা কী তার সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় কী তার আর্থিক আমদানি সেটা এখনো জানা যায় নাই।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..