নির্ঘুম শহরনামা ও অন্যান্য

টিপু সুলতান
কবিতা
Bengali
নির্ঘুম শহরনামা ও অন্যান্য

আমাদের স্বাধীনতা

আজও দেখি শব্দের ভিড়ে স্বচোখ ভরা
আমাদের স্বাধীনতার আসাযাওয়া-

শোরগোল পেরুনো অক্লান্ত ইতিহাস
তের’শ নদ-নদী,উর্বর মাটি
কোমর, মস্তক বাংলা গাঁথা মুক্তির গান
সবুজের গালিচায় শিশিরবিন্দু,
রূপালী আকাশে ধানশালিক
গায়ে মাখা কাওয়ালি বাতাস,
রোদওঠা একজোট সোনালি ধান।

চারদিক বৃক্ষ দেওয়াল, পাখির ডানায় আকাশ
গ্রামগঞ্জ শহর বন্দর শেকড়ে বাঁধা জম্ম সুখ
মানুষেরা গায় গান শোভিত কণ্ঠে, আদিগন্তর সুর
প্রাণে ছেপে যায় বর্ণমালার দুহাত, শ্যামলে শিহরণ
আজও দেখি নিঃসন্দেহে-লাল সবুজ মুক্তির বিবরণ।

 

নাগরিক উচ্চারণ

প্রাচীন দেয়ালে কমলা রোদ, জীর্ণ পোস্টারে উঁকি দেয়
সুবোধের আলপথ, কেবল অক্ষত অক্ষরে
শস্যঋতুর বিজয় উৎসবঃ উর্বর হাড়ে আগুন ধ্বনি-
স্বাগতম জানায় দ্বীপ উঁচু নাগরিক উচ্চারণ
নির্ভীক স্বাধীনতা; বেপরোয়া বাতাসে আওড়ায়
আদর সাঁটানো প্রভারুণ সংগীত; বটগাছের তরুণ পাতা-
চারদিক বিলুপ্তহীন চোখ, পতাকার সুগন্ধি উত্থাপন
ছবিগুলোর ষড়ঋতু, গণ এভিনিউ, আমাদের পঠিত গ্রন্থলয়!

 

ক্রোড়পত্র

হাটুর গ্রীবা ছড়াচ্ছে একপাল সড়ক।
উত্তাপমাখা ছবিগুলোর চোখ, কমলা রঙের তরঙ্গ
ঠোঁটযুক্ত গুপ্তবিদ্যার দেয়াল,ক্রোড়পত্র;
স্বপ্ন হাসে, অবেলা সন্ধ্যার মর্গে। টোকা দেয়
তড়িঘড়ি মেইলের শব্দ, গাঢ়রূপ বাক্য প্রথাগত প্রাণ!

তোশকের নিচে, এক টাকার হরিণ গুলো দৌড়োয়-
পরিষ্কার দেখা যায়, কখনো ধূলোর স্তুপে জুবুথুবু শুয়ে
বনফুল বাতাসে ছড়ায় গৃহতল ঋতুর সহৃদয়-
উন্মুখ আদরে আঁচড় দেয় গুঁড়ো অভ্যর্থনা,
গুপ্ত শ্বাসকষ্ট জড়িয়ে ধরে দেহ, হাড়গোড় হাত!

 

অর্ধনমিত সকাল

একদিন সাইবেরিয়ার মত পাখি উড়ে আসবে
সীমাহীন ডানা বিছিয়ে অতিথি নগরীর ভেতর;
তারপর! পা কাঁপিয়ে শৈত্যজলের কচুরিপানা-
জলশামুক, মাছ-কাঁকড়া, বুনো কলমিডগা শেকড়ের
গহীন অরণ্যে নৃত্য দোলাবে। অবাধে নিশ্চিন্তঃ

চারদিক ঘোরলাগা ধাতুবিষের ঠোঁট উড়বে
তবু বাতাসে কুয়াশার গীত বিতান শোনাবে
মুঞ্জরিত প্রাণে দাঁড়ানো একতাল মেরুদণ্ড, কঙ্কাল-
ঘাসের শিশিরধৌত মুখ, অর্ধনমিত সকাল
মৃত্যু নিশানা মুছে নৈশব্দ্যের পা টিপে ওড়াবে
দু’ডানার নিচে আকাশ, বিশ্ব। আর বুক থেঁতলানো
রক্তমোক্ষণ আলিঙ্গনে ডেকে তুলবে-সমস্ত গণকবর!

 

নির্ঘুম শহরনামা

নির্ঘুম শহরনামা, ওপাশে শালবনের অরণ্য
জ্যোৎস্নার আলো খসে পড়ে পাতার পলেস্তরায়-
নির্জন উপত্যকা- মৃদু স্রোতে বিউগল বাজে
ব্যাঙ ও মাছ শোনে গান; কালকীট শেয়াল দাঁড়ানো
ঝরাপাতার বুক চেপে কুয়াশা রাত পোহায়-
বুঁদ হয় অন্তঃপুরের বিবর্ণ ব্যস্ত দেয়াল।

ধূলোর প্রাসাদে অধর পথ, বন্দরে নাভিমূল বাড়ি
তাঁর পাশে ষষ্ঠ ঋতুর অঙ্গন, আংটি বাঁকা মাঠ-
ফুলের গুঞ্জন-বৃদ্ধ মৌমাছি-পাখাহীন পোস্টার!

 

সুশীল শস্যখেত

বনের উপশহরে দালানের গলি, অদ্ভুত হোঁচটের শব্দ
গাঢ় দীর্ঘ চতুর্দিকে প্রশান্ত কোলাহল; নখ পুতে দাঁড়ায়
উন্মগ্ন বনাচর গাছ। চালাকি চোখ তাঁর খয়েরি হৃদয়ে
উচ্চ প্রদেবী মেতে ওঠে: গ্রাম আর শহরের দুরন্ত পাতায়-
বুকে বাঁধে মায়ামুগ্ধম দেশ। হিমালয়ের মত রাজসিংহের শক্তি;
মাইলের পর মাইল বিবর্ণ আলো ঝরানো সুশীল শস্যখেত,
কুয়াশার ফাঁকে মৌমাছি ওড়ে, বক্রশূলে মধুর ঘ্রাণ
অথচ দূষিত ধূলোর নগ্ন স্লোগানে মৃত হাড়,ঘোর গ্রাস
নির্বাস মন্ত্রে কথা বলে, এবার একটা হারজিত খেলা চাই!

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..