নির্বাসন

পল্লববরন পাল
কবিতা
Bengali
নির্বাসন

নির্বাসন

নির্বাসন শাস্তি আমি নিজহাতে দিয়েছি নিজেকে
প্রতি দু’টি সম্পর্কের মধ্যিখানে থাক কিছু জমি
বিশ্বাসও সরে যাচ্ছে চূড়ান্ত নগ্নতার থেকে
নাহলে ভালোবাসাও ক্রমে ক্রমে মিশরীয় ম্যমি
জমি মানে অন্ধকার, জমি মানে কিছুটা আড়াল
তাই কি নগ্নতা আজও অন্ধকারে শুধু স্পর্শবোধি
থাকায় স্বস্তি পায় – আলোকিত প্রকাশ বিরোধী
অন্ধকার মানে ভয় সন্দেহ মাকড়শা জাল
আমি তো ইহজীবনে কোনোদিন করিনি স্বীকার
দু’টো শরীরের মধ্যে থাকতে পারে জমি অন্ধকার
অন্ধকারে নগ্নতা যে পরিপূর্ণ নগ্নতা নয়
সেখানেও কিছু কিছু আপোষ অথবা অভিনয়
বরং পাথরের মতো ঘর্ষণে আলোআবিষ্কার
প্রপাতের জল ভাঙে মালভূমি ত্রিভুজের পলি
প্রত্যেক মানুষের এমন একটা জায়গা দরকার
যেখানে সে নগ্ন হবে – যাকে আমরা ভালোবাসা বলি
সেই ভ্রমে পরিক্রমা করে দেখি – কী কেলেংকারি
অমানুষ যন্ত্রনায় অসম্ভব কাতরাচ্ছে নারী
আত্মপীড়ার চেষ্টা – মুড়ি মুড়কি অ্যালজোলামের
বীভত্‍স সে দৃশ্য দেখে আমি নদী অসহ্য ঘামের
এখনো বুঁজলে চোখ কাঁপন শরীর আসবাবে
এখন অন্ধকার দিয়ে কি সে ছবি মোছা যাবে?
ভালোবেসে এতোটাই যন্ত্রনায় ফেলেছি যখন
নিজেকে দিয়েছি শাস্তি অগত্যা – যাই নির্বাসনে

ষাট-ষাট

আমি ঊনষাটতলার টেরেস-ছাদ থেকে পড়তে পড়তে
তোমাকে দু’হাতে আঁকড়ে বেঁচে গিয়েছি কবিতা
মাটি থেকে ঠিক কতোটা উঁচুতে – মনে নেই
কিন্তু ঠিক আগের মুহূর্তে নিচে
আমার বাবা মা কাকা কাকি ঠাকুমা
অসংখ্য উৎকন্ঠিত দৃষ্টি আর আর্তনাদ
অর্থাৎ সেই হাট্টিমাটিম শৈশব
কতো নম্বর তলা জানিনা
ঝুলবারান্দার চেয়ারে আমাকে বসিয়েছো
আমি তখনও ধুকপুক বুকে
দুটো বাতাসা আর পিতলের গ্লাসে জল
পাশের টেবিলে উপুড় শোয়া
সিগনেটের টুনটুনির বই – উলটে দেখি
কাস্তের জ্বর, জোলা খুব কাঁদছে
পড়তে পড়তে জোলা রাজত্ব পেতেই দেখি
ওমা, এ তো ষাটতলার বসার ঘর।
পাটভাঙা ধুতিপাঞ্জাবি শঙ্খ ঘোষ
ঈশ্বরের মতো বসে আছেন সোফায়
আমার দিকে চোখ তুলে বললেন –
স্বাগত দ্বিতীয়জন্ম,
ও সৃষ্টি, পেরিয়ে এসো ভয়

বারুদগান

তুমি চেয়েছিলে অগম্য এক অন্তরাল
এই দাবিসনদ পেশ করতে
তুমি বেরিয়ে এসেছিলে
অন্তরাল থেকে আলোয়
আমার দৃষ্টির চৌহদ্দির মধ্যে
আমি তোমাকে ও তোমার দাবিকে কুর্ণিশ করে
তোমাকে হাত ধরে নিয়ে গেছি
সহস্র চুম্বনে ঘেরা
আর এক অন্তরালে
যেখানে কলম তুলির জায়গায়
হাতে হাতে ঘুরছে একে সাতচল্লিশ
আর কুচকাওয়াজের তালে
বিশ্ব জুড়ে বাজছে বারুদবাতাসের প্রার্থনা গান –
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে

পল্লববরন পাল। কবি। জন্ম ১৯শে এপ্রিল ১৯৫৮। হাওড়া শিবপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। পেশায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট, নেশায় আপাদমস্তক কবি, গদ্যকার, চিত্রশিল্পী - সঙ্গীত নাটকে নিবেদিত। তিনি দীর্ঘদিন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রকাশিত বই: এ পর্যন্ত লেখকের ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে। যথা:...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..