সন্ত জোয়ান অফ আর্ক আর বিচারের বাণী
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..
বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম ফিলিপনগর। এই গ্রামেই জন্ম বন্ধন এর।পুরো গ্রাম জুড়ে অসংখ্য খাল বিল। বর্ষায় থৈ থৈ করে পানি।ভীষণ দুরন্তপনায় কেটেছে বন্ধনের ছেলেবেলা। গ্রামের বিদ্যালয়টি ছিল পাশের গ্রামে।সরু পথ,ধান ক্ষেতের আল ভেঙে কখনও কখনও হাঁটুভাঙা পানি পার হয়ে যেতে হত বিদ্যালয়ের মাঠে। ততক্ষণে কাপড় চোপড় ভিজে সারা।বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে বন্ধুদের সাথে খালে বিলে মাছ ধরে ভর সন্ধ্যায় এক খালৈ মাছ নিয়ে ঘরে ফেরা।তারপর মায়ের বকুনি।অতঃপর উঠোনে বসে মা সেই মাছ কুটে ধুয়ে উঠোনে পাতা চুলোয় পেঁয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে মাখা মাখা ঝোল রেঁধে দিতেন। সেই ঝোলে ভাত মেখে মুখে দিতেই মনে হত অমৃত। আহা!! কি দুরন্তপনার সেই দিন। বড় সংসার, বাবার একার রোজগার,বোনদের বিয়ে দেওয়া সব মিলিয়ে বাবার মাথায় অনেক দ্বায়িত্ব।
তাই খুব অল্প বয়সে চাকরিতে প্রবেশ করতে হয়েছিল বন্ধনকে। গতানুগতিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে মহাবিদ্যালয়ের পাঠ আর চুকোয়নি। বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সেই কোটায় চাকরি ও হয়ে যায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। দুরন্তপনার দিন শেষ। শৃঙ্খলিত জীবন যাপন। প্রথম যেদিন ঘর গ্রাম ছেড়েছিল সেদিন মা খুব কেঁদেছিলেন, প্রকাশ্যে এবং লুকিয়ে।
তারপর এগিয়ে যাওয়ার পালা।অর্ডিন্যারি সী ম্যান থেকে পেটি অফিসার। তারপর নৌবাহিনীতে ইস্তফা দিয়ে এক ভ্যাকেন্সি থেকে জাহাজে চাকরি নিয়ে নীল সাগরের তীরে।
অন্যদিকে সেতুর জন্ম চট্টগ্রাম হলে ও বেড়ে উঠেছে ঢাকায়। বিদ্যালয় ছেড়ে মহাবিদ্যালয় তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। লেখাপড়া শেষ না হতেই কর্মজীবন শুরু হয়। চাকুরির পাশাপাশি স্নাতকোত্তর করে আবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ। কাজের সুবাদে দেশ থেকে দেশান্তরে। তবে শৈশব কেটেছে খুব নিঃসঙ্গতা কে সঙ্গী করে। দু ভাই বোন। যে বয়সে ওদের খেলাধুলা করে কাটানোর কথা সেই বয়সে ওদের কেটেছে ঘরের ভেতর ঘরের মানুষদের সাথে। ওদের বাবা ছিলেন খুব কড়া মেজাজের। সবার সঙ্গে মিশতে দিতে চাইতেন না। তবে বেড়াতে নিয়ে যেতেন খুব কিন্তু নিজের সঙ্গে।
তাই আর সবার মতো অনেকের সাথে মিলেমিশে বড় হয়ে ওঠা হয়নি সেতুর। একাকিত্ব ঘোঁচাতে সেতু এক সময় আবিষ্কার করে, ওর ও কোথাও কারো সাথে খেলতে কিংবা মিশতে ভালো লাগেনা। ভালো লাগে পড়তে, ভালো লাগে লিখতে। মাত্র তের চৌদ্দ বছর বয়সেই সেতু পড়ে ফেলেছিল প্রায় হাজার খানেক বই।
বিদ্যালয়ের বন্ধুরা ডাকতো বইপোকা বলে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে যেদিন প্রথম পা দিয়েছে মনে হয়েছে এতদিন কি পড়েছি? এত এত বই এতদিন কোথায় ছিলো? তারপর ছুটে চলা শুধুই।
কর্মজীবনে প্রবেশের পর লেখাপড়া ও শেষ হলো। তারপর পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের আসরে আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে চলে এলো অন্য এক জগতে। তারপর মা হল।অসুস্থ হয়ে চাকরি ছাড়ল। লেখালেখি ও ছেড়ে দিল। বেশ কয়েক বছর পর আবার পুরোনো কর্মস্থলে নতুন করে নতুন রূপে ফিরল। সাথে চলল লেখালেখি, এবং নিয়ম করে সংসারে সার দিয়ে চালিয়ে যাওয়ার যাপিত ছোট গল্প।
সংসারে সার দিতে দিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সেতুর শিল্পের স্বত্ত্বা। তারপর এলো বিশ্বব্যাপী নতুন এক ঝড়।যার নাম নাকি “করোনা”। এক এক করে মৃতদের তালিকা বড় হল, বন্ধ হল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ, ঘরবন্দি হল কোটি কোটি মানুষ। ঘরবন্দি এই সময়ে
সেতু জাগালো ঘুমন্ত স্বত্ত্বা। একটু একটু করে তুলির আঁচড়ে রঙিন করল কবিতার খাতা গল্পের পাতা।যোগ হল এই পাতায় আরেকটি নাম। ভার্চুয়াল পাতা।সেখানেই পরিচয় হলো দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা
“সেতু ও বন্ধন “।
ভার্চুয়াল এর পাতায় পরিচয় হলে ও আলাপ হল মেসেঞ্জারের খাতায়।
Hi
-Hi, I am Shetu.
-Nice to meet you.
-I am Bondhon.
-Nice to meet you too.
-Thank you.Where do live in?
-Chittagong.R you?
-I am always in the water.I am in the Navy.
তারপর ফোনে কথা বিনিময়। বন্ধন জিজ্ঞেস করেছিল সেতুকে, আমরা কি এফ বি বন্ধু হব না কি সত্যিকার বন্ধু ?উত্তরে সেতু বলেছিল,আমরা কাছের বন্ধু হব। তারপর তারা হয়ে উঠল একে অন্যের প্রিয়জন কিংবা প্রয়োজন।
কথা হত প্রতিদিন। প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনে।
তারপর সময় গড়ালে মন ও জোড়ালো হল বুঝি অজানা ধকধক কাননে। বন্ধন বলত,সেতু তুমি আমার পৃথিবী। তুমি আমার জীবন।তুমি আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। আর ও বলত, আমায় বিয়ে করবে সেতু?আমার পাসপোর্ট এর অধীনে তোমাকে দশ বছরের ভিসা দেবে এখন যে দেশে আছি সে দেশের সরকার। বলত আমাকে বিয়ে করে চলে আসো না এ দেশে। তিনবেলা বাইরে খাব,বিকেল সন্ধ্যা ঘুরে বেড়াব, রাত ভর সমুদ্র স্নান করব।আমরা অনেক ভালো থাকব। আমি তোমাকে সুখি করব।
এসব শুনে সেতু অস্থির হত, বলত, কি বলছ?আমি তো বিবাহিত। তাছাড়া আমরা তো বন্ধু হব, কাছের জন হব বলে একে অপরকে কথা দিয়েছি। তুমি তো সব জানো। বন্ধন বলত,আমি সব জানি। কিন্তু এরকম হয়। হতেই পারে। সেতু বলত কখনও না।এক সংসার ছেড়ে আরেক সংসার, সেই একই জীবন একই অনুভূতি। তাছাড়া আমি তোমাকে সেরকম কিছু ভাবিনি। আমরা তো বন্ধু। কাছের জন।শুনে বন্ধন নিজেকে সামলে বলেছিল ঠিক আছে আমরা মন জোনাকির আলো মেখে বাঁচব এক ছাদের নীচে নয় এক আকাশের নীচে। কিন্তু আমি কখনও বিয়ে করবনা। সারাজীবন তোমাকে মনের ভেতর মায়ায় বেঁধে বাঁচব। শুনে অবশ্য ভালোও লাগত সেতুর। ভাবত এই পৃথিবীতে কেউ আছে যে আমার জন্য একা থাকবে।
ভাবনার করিডোরে হেঁটে হেঁটে সেতু চলে যেত অচেনা কোন ভুবনে।
রোজ বিকেলে ভিডিওকলে খোলা চুলে সেতুকে না দেখলে বন্ধনের দিনটাই বৃথা যেত।রাতে ঘুমোবার আগে ফোন দিয়ে বলত, সেতু তোমার সাথে কথা না বলে শুতে গেলে আমার ঘুম হয়না। তুমি আমার ঘুম পাড়ানি ডাক্তার, তুমি আমার জীবন বাজির মহাঔষধ। সেতুর সব মনে আছে। কিছু ভোলেনি। বন্ধনের বলা প্রত্যেকটি শব্দ, বাক্য ওর মুখস্থ। সেতু সব হৃদয়ঙ্গম করে রেখেছে।
তারপর কেটে গেল সাত মাস। দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে উঠল। কাছে না থেকে ও পাশে থাকা। বিবাহিত জীবনের বাইরে ও জীবন থাকে, কিংবা জীবনের বাইরে ও জীবন থাকে এটা আবিষ্কার করা।
কিন্তু দুজন দুই ভুবনের বাসিন্দা। দুজনের মত আলাদা, পথও যে আলাদা।
তারপর সেই সত্যির মুখোমুখি সেতু। কাকতালীয়ভাবে জানতে পারে বন্ধনের পরিচয়, বন্ধনের অতীত, বর্তমান। জানতে পারে বন্ধন বিবাহিত। যে সংসার নিয়ে এত পাগলামি করত সেতুর সাথে সেরকম একটা আস্ত সংসার নিয়ে সে দিনাতিপাত করে। মেলাতে পারেনা সেতু।
আগে জানলে ও ক্ষতি তো ছিলোনা। সেতু তো বন্ধন কে বন্ধুই ভেবেছে। আর বলেছে নিজের সব সত্যি। তাহলে বন্ধন কেন মিথ্যা পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে সেতুর সাথে? এ প্রশ্ন কুঁড়ে খায় সেতুকে। বন্ধনকে জিজ্ঞেস করতেই অস্বীকার করল। সেতু বলল বন্ধন কে,
তোমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভরা সংসার।আহা কি বোকা আমি, এই গলদটা সেই ধরতে পারলাম কিন্তু এত দেরিতে, এটা আমি আশা করিনি তোমার থেকে। আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছি খুব। বলেছি নিজের সব। ভাগ করেছি নিজের দুঃখ সুখের আলাপন। কেন করলে এমন? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার? আমি তো যাইনি তোমার কাছে, তুমি এসেছিলে তোমার সব নিয়ে। না সব নিয়ে নয়, সবটাই যে ফাঁকা ছিল, ফাঁপা ছিল।
বন্ধন কিন্তু কিছুই স্বীকার করলনা। বলল, সেতু যা জেনেছ সব মিথ্যা। ভালোবাসা টুকু সত্য ।এখন ও এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকে যতটা ভালোবাসি এতটা আমি কাউকে ভালোবাসিনি,আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি,শ্রদ্ধা করি।
কিন্তু সেতুর মন আর ভরে না, মন আর শান্ত হয়না, মন আর নীড় খুঁজে পায়না।ভাবে এত বড় পৃথিবীতে কাউকে পাওয়া হলো না যে ওর সবটা নিতে পারে।যে তার সবটা ওকে দিতে পারে।
কিন্তু তারপর ও যেন রয়ে গেল কত কিছু। এরপর বন্ধন সেতুর সাথে হঠাৎ খারাপ আচরণ শুরু করল,সেতু বুঝল ছেড়ে
যাওয়ার চিঠি এসেছে।
বন্ধন ভীষণ ক্ষ্যাপাটে মারমুখী হয়ে
অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করল।কেন সেতু সব জানল?কি আশ্চর্য অযুহাত?
এই বন্ধনকে সেতু চেনেনা।এ কে??যে ভালোবাসি বলেছিল সে কি করে ঘেন্না করি বলতে পারে?শুধু তাই নয় খানকি বেশ্যা ফালতু বাল বাটপার এই সব পর্যন্ত বলেছে।অথচ সে নিজেই একজন মিথ্যাবাদী,প্রবঞ্চক।।সেতু বুঝতে পারে বন্ধনের ইগোতে খুব লেগেছে সেতুর কাছে সবটা খোলাশা হয়েছে বলে।কিন্তু তাই বলে এরকম আচরণ!
আগে ভাবত সেতু, জীবন এত ছোট কেন?কেন এক জীবনে সব পাওয়া হয়না?ভাবত যদি আবার জনম পেতাম
অজস্র বছর জোৎস্নায় চোখ সাজাতাম। সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে
নতুন দেশ,মহাদেশ গড়তাম।এখন ভাবে পোড়া প্রাণটা এখনও কেন এ দেহে?এই পৃথিবীতে সেতু আর থাকতে পারছেনা।ওর নিঃশ্বাস দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।সেতু কি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে?না মরে বাঁচছে।জানেনা সেতু!!
কোথায় ওর নিপাট বন্ধু? কোথায় নিটোল বন্ধুত্ব? ভালোবাসার সাগর?মহাসাগর?ভালোবাসার দেশ?মহাদেশ?ওর পৃথিবী আজ বড্ড উত্তপ্ত ধূলিধূসরিত মরুভূমি।কেউ নেই যেন , কিচ্ছু নেই।খুব একা।
চারিদিকে এত এত মিথ্যার ভিড়ে ওর সত্যি টুকু হারিয়ে গেছে।সেতু তলিয়ে গেছে অনন্ত আঁধারে!!
কোথায় গেলে আলোয় আলোয় ভরে যাবে ওর মন, প্রাণ?বন্ধন বলেছিল কখন ও, সেতু আমি তোমার যোগ্য নই।
ঠিকই বলেছিল,সত্যিই বন্ধন সেতুর বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়। ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় ।কিন্তু বন্ধু হওয়ার জন্য,ভালোবাসার জন্য তো যোগ্যতার প্রয়োজন হয়না ,তাই সব অপমান সহ্য করে ও সেতু এখনও বন্ধন কে বন্ধুই মনে করে। ভালোবাসে।
কিন্তু গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে। যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বন্ধনের সাথে।
আর বন্ধন? সেতুর সাথে অশ্রাব্য অশালীন আচরণ করে কি ভালো ছিলো?
আসলে বন্ধন এতটা ও খারাপ মানুষ নয়।সেতুর সাথে পরিচয়টাকে মজা হিসেবেই নিয়েছিল।কিন্তু সেতুর ব্যক্তিত্ব,মননশীলতা বন্ধন কে মুগ্ধ হতে বাধ্য করেছিল।ক্রমাগত কথপকথনে সেতুর জগত সম্পর্কে যা জেনেছিল বন্ধন সে জগতে বন্ধন কোনদিন বিচরণই করেনি।বন্ধন এক উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধানো মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিল।তৈরি হয়েছিল সেতুর জন্য মায়া,মায়া থেকে ভালোবাসা। সাথে এ ও ভেবেছিল ,সে বিবাহিত এই সত্যি জানার পর সেতু হয়তো দুরে চলে যাবে।আর বন্ধন সেতু কে হারাতে চায়নি বলেই সত্যিটা বলতে পারেনি।তাছাড়া এক মিথ্যা ঢাকতে হাজার গন্ডা মিথ্যা বলেছে সেতুর সাথে সেসব খন্ডাবে কি করে?সে সব ও ভেবেছে।কিন্তু বন্ধন নিজের কাছে ও সৎ থাকতে পারেনি।নিজের মিথ্যা গুলোকে সত্যি প্রমাণ করতে চেয়ে সেতুর সাথে যা করেছে তার জন্য এখন হৃদয় পোড়ে।অনুশোচনা হয়।আত্মগ্লানিতে ভোগে ঠিকই কিন্তু সব সত্যি নিয়ে সেতুর সামনে আসার মত এতটা সবল সাহসী ও সে নয়।এটা ও ভেবেছে যে সেতু জীবনের সব সত্যটুকু নিংড়ে উজাড় করে বন্ধন কে প্রিয় বন্ধুর জায়গা দিয়ে,নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছিল নিজের জগতে তাকে কি করে বলবে আমি তোমাকে আমার সত্যি পরিচয় দিইনি।কল্পনায় দেখেছে সেতুর মুখের আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি। সেখানে পেয়েছে শুধুই লজ্জা। এই সেতু যে বন্ধনকে দেখিয়েছিল জীবনের রঙ, যাপিত সুখের দুঃখ মালা।
বুঝিয়ে ছিল জীবনের বাইরে ও জীবন থাকে।মানতে বাধ্য করেছিল কাছে না থেকে ও পাশে থাকা যায়।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে ও অন্য প্রান্তে অসুস্থ দেহের কাছে জীবন বাঁচানোর মহাঔষধ হয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেতু শিখিয়েছে বন্ধনকে, যোগ্যতা দিয়ে বন্ধু খোঁজা যায় না। সেতু দেখিয়েছে পথ দিক ভ্রান্ত বন্ধনকে পথের দিশা।
বন্ধন কথা দিয়েছিলো আজন্ম কিংবা আমৃত্যু তোমার থাকব,তোমাকেই ভালোবেসে এক ছাদের নীচে নয় এক আকাশের নীচে বাঁচব তোমার জন্য। সব ছাড়লে ও তোমাকে ছাড়ব না কোনদিন। গেয়েছিল গান
বুক ভরা ভালবাসা রেখেছি তোমারই জন্য…। বলেছিল এই গানটি কলিজার ভেতর থেকে দিলাম তোমাকে।আমি সব সময় তোমার সাথে আছি। সারাজীবন থাকব।
কিন্তু দুর্ভাগ্য ধরে রাখতে পারেনি সে গানের আবাহন ।সেতুকেই ছেড়েছে খুব আগে।
বন্ধন সেতু কে দেখিয়েছিল সাগরের নীল ঢেউ, সবুজ নিয়ন আলো,তুলো মেঘের আকাশ,ধবল চিতল হরিণ,প্লে গ্রাউন্ড,আগুন ঝড়া বিকেল,নিশ্চুপ নাবিকের সন্ধ্যা।
দেখিয়েছিল কই মাছের ঝোল,ঢেঁড়শ ভর্তা,বলেছিল এসো খায়।বড্ড ধোঁয়া টানত বন্ধন,লাল নীল শরাবের নেশা ও ছিল খুব। কথা দিয়েছিল সেতুকে,তোমার কাছে এলে সব ছেড়ে দেব।
আসবে বলে ও কথা দিয়েছিল।অনেক দুরে থাকত যে।ইচ্ছে করলেই আসা যায় না। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে সেতুর কাছে আসবে বন্ধন,
তার জন্য কত পরিকল্পনা!! বন্ধনকে পাশে বসিয়ে সেতু গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবে মনঝিরি নদীর পাশে। কত কি উপহারের সমাহার সাজালো।সাজালো সময়ের ঘর।
সুংমিং পুলের পাশে বসে বিকেলে কফি বিলাস করবে।সন্ধ্যায় ছাদে বসে রাতের খাবার খাবে আর টুকরো টুকরো খুনসুটি।মাঝরাতে তারা গুনে হাঁপিয়ে যাবে।ভোরের আলোয় স্নান করে শ্রান্ত হবে।শেষ।ধরে রাখা গেলো না সময়। ধরে রাখা গেলোনা সম্পর্কের আলাপন ।মিছে হল বন্ধু,ভিজে গেল বন্ধুত্ব।ভালোবাসা দিয়ে সব ধরে রাখা যায় না।স্বপ্নের যবনিকা হয়,মনের যবনিকা হয়,জনের যবনিকা হয়।জীবনের যবনিকা হয়।
ঘুমের ঘোরে তলিয়ে তলিয়ে ভালোবাসা চলে গেল লাশকাটা ঘরে।
সেখানেই বুঝি প্রাণ জুড়োলো।কোনদিন জাগবেনা আর প্রগাঢ় ভালবাসায় সিক্ত চার চোখের সুখ ।সেখানে এখন মাছির ভন ভন আওয়াজ শোনা যায়। ফেরা হলোনা কেউ কারো কাছে।সব উপহার পরে রইল।পরে রইল কত দেয়া না দেয়ার খেলা।পরে রইল যাপিত জীবনের
অল্প অল্প গল্প।
রাত জেগে ঝগড়া ও আর নেই ।দুজনেই এখন নিশ্চুপ না ফেরার দেশে।অরণ্য আর বুনো ফুল ফোঁটাবেনা।
বুকের ভেতর আর লাভ টুপ টুপ স্পন্দন শোনা যাবেনা।কেউ আর কিছু পাবেনা।চারিদিকে না ভাঙতে পারা পাহাড়।মানহীন,মর্যাদাহীন শক্ত নিরেট দেয়াল।কে কি করে ভাঙবে?না ফেরার দেশে এসব ভাঙা যায় না।
সেতু বন্ধন হেসেছে, কেঁদেছে।একদিন ভালোবেসে গেছে।এখন সব ফুরিয়েছে!।এভাবেই দুজনে দুজন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল বুঝি! আজ শ্রাবণ নেই,বর্ষণ নেই,নেই সূর্যালোক।নেই তারার আলো।তারা ও আজ নিরালোক।
দুজনের পৃথিবী এখন মৃত।মৃত রা কথা বলেনা।
কোন লেনাদেনা থাকে না তাদের।শুধুই অনন্তলোকে অনন্তলোক।
যে গান খালি গলায় বন্ধন দিয়েছিলে সেতুকে উপহার।
সেই গান বন্ধনের জন্য উপহার করে সাজিয়ে রেখেছিল সেতু।সাজিয়ে রেখেছে আজ ও।গান সুর দুজনের নয়।কিন্তু স্মৃতি গুলো ওদের।বড্ড যত্ন করে রাখা স্মৃতি।স্মৃতির মিছিলে সেতু আজ ও শ্লোগান দেয় বন্ধন তুমি বন্ধু আমার।
তুমি ফিরিয়েছ আমার আকাশের নিজস্ব রঙ।
তোমার জন্যই এখন ও কবিতা হাসে গল্পেরা কাঁদে।
তোমার জন্যই মৃতের চোখে ও জল চিকচিক করে। বন্ধন নাইবা পারল সেতুকে সম্মান করতে?বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে? ভালোবাসতে? বিশ্ব পরিস্থিতি বদলানোর সাথে সাথে বদলে গেল দুটো মন,দুই জন?একজন ভালোবেসে অন্যজন ক্লায়ক্লেশে। এখন তারা আর কথা বলে না।সাগরের ঢেউ গুণে বন্ধন শোনায় না গান”বুক ভরা ভালবাসা রেখেছি তোমারই জন্য।
এখন আর একথালা খাবার সামনে নিয়ে বন্ধন ছবি তুলে সেতুকে পাঠিয়ে বলে না “এসো খায়”।
আর সেতু?সে ও এখন রোজ সকালে বন্ধন কে লিখে জানায় না শুভ সকাল, সাবধানে থেকো। কিন্তু সেতু আজ ও কবিতা লিখে।আজ ও চিঠি লিখে সাগরের ঠিকানায়।কিন্তু
কখন ও যদি দুজনের দেখা হয় ভুল করে সেদিন কি তারা পড়তে পারবে দুজনের অদেখা চেনা সেই চোখের ভাষা? সেদিন কি তারা অপেক্ষাহীন পাওয়াকে সম্মান জানিয়ে বলবে হাসিমুখে এসো বসি পাশাপাশি? কিংবা ফেরার ছলে ফেরার পথে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে বলবে ফোন দিও?তারপর অপেক্ষা করবে আবার ও একজন আরেকজনের ফোন কলের?নাকি সবটাই হবে অন্য এক যাপিত জীবনের ছোট গল্প ?নাকি নোঙর ফেলে তুলে নেয়া হয়েছে অনেক আগেই?
তাই বা বলি কি করে,নোঙরের দাগ ও তো রয়ে যায়!!নাকি ক্ষয়ে ও যায় সে দাগ?
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..
গুলশান এক থেকে দুইয়ের দিকে যাওয়ার পথে চৌরাস্তার পঞ্চাশ গজ দক্ষিণে পঁচিশতলা আর্কেডিয়া টাওয়ারের তেরতলায়…..
রবি স্কুলে এসে প্রথমে সই করতে যায় হেডমাস্টারমশাই এর ঘরে।হেডমাস্টারমশাই বললেন,রবি আমি আজ একটু কাজে…..
কাঁটায় কাঁটায় বিকেল চারটা পঞ্চান্নতে ডাইনিং রুমের উত্তরের দেয়ালে কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করা ফুলদানিতে বর্ণিল…..