ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
খেলা শেষ হবার আর ঠিক বাইশ সেকেন্ড বাকি। সুভাষনগরের লেফট ফ্রন্ট তখন মাঝমাঠ অতিক্রম করে চলে এসেছে। এমনটা নয় যে অবীন শোনেনি চারু ভৌমিকের নাম। বরং কোচ মৃদুলদা খেলার শুরু আগেই বলে দিয়েছিল যে সুভাষনগরের চারু ভৌমিক থেকে সাবধান। লেফট ফ্রন্টে দূর্দান্ত খেলোয়াড় এই চারু ভৌমিক। এই সব ভাবতে ভাবতেই ততক্ষণে মাঝমাঠ থেকে সব মিলিয়ে পাঁচজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে অবীনের সামনে চারু। চকিতে সতর্ক হল অবীন। নিমেষে সে চোখ ঘুড়িয়ে নিল মাঠে উপস্থিত দর্শকদের ওপর। আছে। যদিও সে জানত থাকবেই, তবুও। নীল, হলুদ চুড়ি পরিহিতা একটা ফর্সা হাত। উঁচু হয়ে আছে। অবীন খুশী হয়ে চোখ নামিয়ে নিল। যারা ফুটবল, ক্রিকেট খেলে তারা নানা রকম কুসংস্কারে ভোগে। অবীন শুনেছিল কে একজন, যত পুরোনই হয়ে যাক, সেই এক জার্সি পরে মাঠে নামত। আরেকজন নাকি প্রতিবারই মাঠে নামার আগে ডান পা আগে ফেলত। অবীনের আগে কোন সংস্কার ছিল না। মাস ছয়েক হল সেটার আমদানি হয়েছে। সে গোলকিপার। বিপক্ষদলের কোন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কোন আসন্ন বিপদের গন্ধ পেলেই মাঠের সেই নির্দিষ্ট কোনের দিকে তাকায়। নীল, হলুদ চুড়ি পরিহিতা ফর্সা হাতখানি একবার দেখতে পেলেই নিশ্চিন্ত। আজও তার ব্যত্যয় হল না। চারু ভৌমিক একটা চালাকি করল। পেনাল্টি বক্সে ঢুকেই ব্যাকপাশে বল বাড়াল সুবোধ মাহাতোর দিকে। সেন্টার ফরোয়ার্ড সুবোধের নিমেষে সেই বলে লাথি। বাপরে লাথি তো নয় যেন একেবারে নেপোলিয়নের ফ্লিন্ট লক বন্দুকের গুলি। অবীনও বাতাসে ভর করে লাফাল বল তাক করে। আঙুল ছুঁয়ে বল রাইট পোস্টের পাস ঘেঁষে মাঠের বাইরে।
কর্নার কিক ব্যর্থ হল। পরক্ষনেই রেফারির লম্বা বাঁশি আর অবীন সব সতীর্থদের ঘাড়ে। দূর্দান্ত একটা সেভ করেছে সে। তার জন্যই বরদাপল্লী এবার প্রথমবারের জন্য সেমিফাইনালে। অবীনের চোখ আঁতিপাঁতি করে মাঠের চারপাশ। নাঃ। আর তার দেখা নেই। প্রতিবারই এমন হয়। কতদিন ইচ্ছে হয়েছে খেলার শেষে একবার দেখা করে। কোথায় থাকে মেয়েটা? নামই বা কি? মেয়েটা তার জন্য একটা লাকি লাক। গোটা হৃদয়গড়ে অবীনের ম্যাচ থাকলে, সে যে মাঠেই হোক, সে জানে সেই চারগাছা নীল, হলুদ চুড়ির সমাবেশ ঘটবেই। একদিন খুব মন দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে সে তিনকাঠির নিচে দাঁড়িয়েই। কিন্তু ছোট্ট কপাল, সামান্য কোঁকড়ানো চুল ছাড়া আর বিশেষ কিছুই নজরে আনতে পারেনি। আবার খেলা শুরুর আগেই মাঠের বর্ডারলাইন দিয়ে ওয়ার্মআপ করার অছিলায় ঘুরে এসেছে কয়েকবার। নাঃ। কোথাও সেই প্রার্থিত চিত্রকল্প ধরা পড়েনি। অবীনের ভারি মন খারাপ হয়ে যায়। তবে এ সব কথা তো আর বাকি পাঁচজনকে মন খুলে বলা যায় না। অবীন ইদানিং প্র্যাকটিসেও অমনোযোগী হয়ে মৃদুলদার রামধমক খেয়েছে। তার দোষটা কি, সে কি আর জানে না? আজকাল শুধু খেলা কেন, পড়াশুনোতেও তার মন বসে না। সামনেই জয়েন্টের খাঁড়া। হায়ার সেকেন্ডারিতে সায়েন্সে সে নাইন্টি পার্সেন্টের ঘরের ছেলে। পড়াশুনো আর ফুটবল – এই দুই মিলে শুধু পরিবার কেন, পুরো হৃদয়গড়ে তার একটা ডাকখোঁজ আছে। কিন্তু এখন যা হাল, এরকম চললে জয়েন্টে সে প্রথম তিনশ’র মধ্যেও আসতে পারবে কি না সন্দেহ।
একদিন সাহসে ভর করে রাখালকে কথাটা খুলেই বলল সে। রাখাল পড়াশুনোয় লবডঙ্কা আর কুশডঙ্কা দুটোই, কিন্তু ডিফেন্সে যেন বার্লিনের দেওয়াল। সবটা বলতেই সে হো হো করে হেসে উঠে বলল, ‘আরে আগে বলবি তো, ও তো মহুয়া। দাঁড়া একদিন আলাপ করিয়ে দিচ্ছি। চিত্তকে বলে দেব আজ’।
প্রমাদ গুনল অবীন। এর মধ্যে আবার চিত্ত কেন? সে আবার ভারি পেটপাতলা ছেলে। হৃদয়গড় বয়েজ ক্লাবের রাইট ফ্রন্ট। খাইছে! চিত্তকে বলা মানেই তো একদিনেই রাষ্ট্র হয়ে যাওয়া। কি আপদ! কেন যে মরতে রাখালকে বলতে গেল। অবীন বুঝল কখন যেন সে নীল, হলুদ চুড়িকে ভালোবেসে ফেলেছে। একবার, শুধু একবার সে কথা বলতে চায়।
পরের রবিবার সেমিফাইনাল। এবার অপোনেন্ট বালুরগ্রাম স্পোর্টিং। আজ শুধু তিনটে অবিশ্বাস্য গোল সেভই নয়, নিজে অনেকটা ডিপফিল্ডে নেমে লম্বা শট মেরে মৈনুদ্দিনের পায়ে বল পৌঁছে দিতে পেরেছে। এর মধ্যে বারে বারে চোখ ঠেরে দেখে নিয়েছে নীল, হলুদ চুড়ি। খেলার ফলাফল ৪-১। খুশী মনে ড্রেসিংরুমে পা রাখতেই অবীন নিথরপাথর। চিত্ততোষ হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বলল, ‘তুই নাকি মহুয়ার সাথে দেখা করতে চেয়েছিস? একদম খেলাপাগল মেয়ে। খেলা শেষ হলেই ওলাইচণ্ডীর মাঠে হাওয়া। আজ জোর করে নিয়ে এলাম। মিট মহুয়া প্রামানিক। জানিস তো ও আমার লাকি লাক। আমার সব খেলাতেই ও থাকে। আমার সবক’টা গোল ওকেই ডেডিকেট করি। দাঁড়া, আমি ফ্রেস হয়ে আসি, তুই ততক্ষণ আমার ফিঁয়াসের সাথে আলাপটা সেরে নে’।
একটা অলৌকিক শট! কী করে বাঁচাবে ভাবতে লাগল অবীন।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..