নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত’র কবিতা

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত
কবিতা
Bengali
নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত’র কবিতা

আমাদের দেশ ও আমরা

আমাদের সব আছে… দেশ-দশ-গণতন্ত্র সব
বাঘ আছে,খাঁচা আছে,সুঠাম সাজানো ঘরদোর
ময়ূরেরা ঘোরেফেরে,বাদুরেরা ঝুলে থাকে ডালে
হোকাস-ফোকাস জাদু ;জল আছে চোখের ভেতর।

আমাদের সব আছে।মন্দির-মসজিদ- গির্জায়
পৃথক ঈশ্বর আছে, আছে তার আচার বিচার
রোগ শোক তাপ আছে—এ সবের নিদানও আছে
আর আছে দীর্ঘ গোলামির অভ্যস্ত অহংকার।

বক্ষে রেখেছি পুষে মধ্যযুগীয় আস্ত অন্ধকার
প্রদীপ জ্বালাবো বলে স্বাধীনতাদিবসের দিন,
বিশ্বকে দেখিয়ে দেব আমরাও আলোর দিশারি
সর্বদা সামনের সারিতে আছি–“নহি মোরা হীন”।

আমাদের সব আছে—ময়ূর, বাঘ,বাদুর,হরিণ
দিকে দিকে প্রবীণ বালিয়াড়ি ছুঁয়ে যাওয়া নদী
কান্নাভেজা চোখ আর তিতিক্ষার দীর্ঘ ইতিহাস
সব সয়ে যাই কাঁধে কায়াহীন হাত রাখো যদি।

আমরা অন্ত্রহীন পেটে অন্ন জোগাই পরিপাটি
এখানে গঙ্গা নিয়ত গিলে খায় গৃহস্থের মাটি।

 

কবিতা আমার এক রক্তাক্ত প্রান্তর

চৈত্র অবসান প্রায়।
মৃন্ময়ী বাসন্তীমূর্তি বিসর্জিত কুলিকের জলে
গলে গেছে নাক-মুখ-চোখ-দুই বাহু -নাভিমূলসহ
যাবতীয় অঙ্গের বৈভব।

সেই সঙ্গে যদি গলে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যেতো
অতিক্রান্ত বৎসরে ঘটে যাওয়া নানাবিধ হিংসা-ঘৃণা-ভয়,
প্রতারক শাসকের প্রবঞ্চনা,দুর্নীতি পাহাড় প্রমাণ ;
নির্ঝঞ্ঝাট হতো যদি আসন্ন বৈশাখের আগমন পথ
বিদ্বেষের মুখে যদি পরানো যেতো জন্মনিয়ন্ত্রণ ঠুলি
আমার কাব্যরচনা সার্থক হতো মনে হয়।

তার বদলে
চৈতালী বুকের শেকড়ে শেকড়ে ঝড়ের পূর্বাভাস
নদীতে অনিলের অসংযমে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়
জ্যোৎস্নার নির্মল স্রোতে ভেসে যাওয়া পূর্ণিমার চাঁদ।

স্মৃতির নৌকোয় পা ঝুলিয়ে বসে আছি বিভেদের স্রোতে
আমি মোটেই নই সম্পূর্ণ নির্ভয়
কিয়োস্কে ঢোকানো ব্যাঙ্কের পাশবই মুহূর্তেই আপডেটেড হয়…

কবিতা আমার এক রক্তাক্ত প্রান্তর।

গঙ্গায় নেমো না

নেমো না,নেমো না গঙ্গায় স্নানের মানসে
এ গঙ্গায় পবিত্র গঙ্গাজল নেই।
যাকিছু তরল,বহমান,নিম্নগামী—সবই জল নয়।
জল মানে পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা, স্নিগ্ধতা, তৃষ্ণানিবারণ;
গঙ্গায় সে জল নেই।যা আছে সকলই গরল।

জানো? তবু নামছো যে বড়ো!
কী পাবে তুমি ওই বিষময় জলের গভীরে?
যৌবনের মালা?কৈশোরের স্বপ্ন? শৈশবের রথ?
বেদনানাশক কোনো অব্যর্থ মলম? মুক্তির পথ?
নাকি স্নিগ্ধ শীতলতা যা অঙ্গ জুড়োয়,
জল ঢালে জ্বলন্ত অনুভবে।

ভুল, ভুল। এ তো হেরে যাওয়া! চূড়ান্ত পরাজয়!
তার চেয়ে গঙ্গার কাছে চেয়ে নাও গতি
মন নয়, তীর ভাঙো,ভাঙো সীমানা প্রাচীর
প্লাবিত করো দুঃখ-বালিয়াড়ি
পৌঁছে যাও সমুদ্র যেখানে,সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে
আকাশ-গঙ্গায় মিশেছে।

 

রক্তদান শিবিরে একজন

রক্ত দিতে চাই।নেবে?
প্রত্যহ প্রাণপাত পরিশ্রমে ঘেমে, রক্ত করি জল
তবু পাইনে যথাযথ শ্রমের ফসল
কিন্তু আমি নেই থেমে।রক্তদান শ্রেষ্ঠদান ভেবে
আমিও রক্ত দিতে চাই।নেবে?

আমার এ জোলো রক্তে হবে কোনো ফল!
জীবনসংকট থেকে কোনো রোগী পাবে কি উদ্ধার?
যদি পায় –হাসি মুখে রক্ত দিতে চাই।
আমারও আছে পুণ্যার্জনের পূর্ণ অধিকার।

শুনুন,শিবির উদ্বোধনে সমাগত সমস্ত মহামহিম,
রাজনৈতিক সন্ত্রাসে আমাদের রক্ত জমে হিম
হৃদয়ের উত্তাপে তা যদি গলে হয় জল
সেই জোলো রক্তেও পীড়িতের হবে কোনো ফল?
যদি হয়, আমিও নিশ্চয় একবোতল রক্ত দেবো। নেবেন?

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত। কবি ও গল্পকার। পেশাগতভাবে অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষক। এম.এ.বি.টি। হেমতাবাদ সাংস্কৃতিক মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। প্রকাশিত বই: 'পতঙ্গবাসনা', 'ভেতরের মানুষ', 'হয়তো গল্প'।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..