ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
হৃদিতা এসেছে এক বিয়ে বাড়িতে। একটা ম্যাজেন্টা শাড়ি পরে এক কোনায় একা একা বসে আছে সে। আগের মতো দলের সাথে মিশে হৈ হল্লা করতে তার ইচ্ছা করছে না।
যদিও তার জীবনের সমস্যাগুলির প্রকটতা কমে এসেছে। বাবা সেরে উঠছেন, মিতা খালামনির বাসাতেও সে নিজেকে সেট করে নিয়েছে।
এছাড়া সাদাবের কথা ভেবেও আজকাল আর কান্না পায় না। সাদাবও যোগাযোগ করার একপক্ষীয় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন অন্য একটি মেয়ের দিকে মনোযোগী হয়েছে। মেয়েটাকে সাদাবের সাথে একদিন একসাথে দেখলোও হৃদিতা। কিছুটা মন খারাপ হয়েছিলো কিন্তু সিজার সেই মন খারাপ এক ফুঁ এ উড়িয়ে দিলো যখন হৃদিতা ওকে ফোন করে ব্যাপারটা জানালো। সিজারকে ম্যাজিক ম্যান বলে মনে হয় হৃদিতার। এরকম একজন মানুষ পাশে থাকলে কখনও কারও মন খারাপ হতে পারেনা। আহা! মিতা খালামনি কতো সুখি ! কথাটা ভেবে নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পায় হৃদিতা। আজকাল মিতাকে কি একটু ঈর্ষা করতে শুরু করেছে ও?
আজ সন্ধ্যায় মিতা খালামনি এই বিয়েতে আসবে বলে খুব সুন্দর করে সাজছিলো। তার বান্ধবীর বোনের বিয়ে। সাদা শাড়ি সাথে সোনালী গহনা, কি অপূর্ব যে লাগছিলো খালামনিকে! হৃদিতা বলেছিলো,
-তোমাকে দেখে আমারও শাড়ি পড়তে ইচ্ছা করছে।
মিতা বললো,
-সেকি! তুই তো রেডি হয়ে গেছিস! আবার চেঞ্জ করবি ? দেরি হয়ে যাবে সোনা!
-দেরি হবে না । তুমি আমায় জাস্ট একটা শাড়ি কোনভাবে পরিয়ে দাও।
মিতা যত্ন করে শাড়ি-গহনা সবই হৃদিতাকে পরিয়ে দিয়েছিলো। নিজেকে দেখে হৃদিতার বেশ লাগলো। কিন্তু সে ভাবছিলো, এখন যদি সিজারের সাথে দেখা হতো! সিজারের কাছে কাকে বেশি সুন্দর লাগতো? হৃদিতাকে, না মিতাকে? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই নিজেকে বেহায়া লেগেছে ওর। মিতা ওর খালা আর সিজার তার হাজবেন্ড। এদের নিয়ে সে এরকম ভাবতে পারে না। কিন্তু তার মন যে আরও বেহায়াপনা করবে ওর সাথে সেটা টের পেলো এই বিয়ে বাড়িতে এসে।
বিয়ে বাড়ির এতো মানুষের মধ্যে ওর মন সিজারকে খুঁজে চলেছে। হৃদিতা জানে সিজার সিলেটে। এই বিয়ে বাড়িতে তার থাকার কথা নয়। তবু ওর মন সিজারকে খুঁজছে । চারদিকে তাকাচ্ছে হৃদিতা । না পেয়ে মন খারাপ করছে। হৃদিতা সিজারকে ফোন করতে গিয়েও করে না। বরং কল্পনায় সিজারের চাহিদা মেটানোর একটা চেষ্টা করে। এই কল্পনার ব্যাপারটা সিজারই তাকে শিখিয়েছে। হৃদিতা মনে মনে কল্পনা করলো, সে এই বিয়ে বাড়ির এতো মানুষের ভিরে একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ সিজারের সাথে দেখা! হৃদিতা ছুটে গেলো,
-তুমি এখানে কেনো? তোমার তো নরসিংদীতে থাকার কথা?
সিজার কোন কথা না বলে বুকে হাত দিয়ে পশের চেয়ারে বসে পড়লো। আর হৃদিতা তখন আকুল হয়ে জানতে চাইছে,
-তোমার কি হলো? এমন বসে পড়লে কেনো? বুকে ব্যথা?
সিজার হাসতে হাসতে তখন বলছে,
-তোকে এতো সুন্দর লাগছে যে আমার বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
উপরের কল্পনাটা খুব মিথ্যে নয়। বাস্তবে সিজার এরকম হৃদিতার সাথে করেছে। হৃদিতা শাড়ি পরলেই সিজার বুকে হাত দিয়ে অজ্ঞান হবার একটা ভঙ্গী করে।
হঠাৎ সিজারের মেয়ে তনুর ধাক্কায় হৃদিতা সম্বিৎ ফিরে পায়! তনু বলে,
-এই হৃদিতা! এখানে একা একা বসে হাসছিস কেনো? চল মিষ্টি পান খেয়ে আসি। কি সুন্দর করে যে পানের ডালা সাজিয়েছে। তুই দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবি।
-আমি পান খাবো না, তুই যা।
তনু চলে গেলে হৃদিতার মনে হয়, ও যদি জানতো ওর বাবাকে নিয়ে কি ভাবছে হৃদিতা, তাহলে কি বলতো হৃদিতাকে? নিজের ওপর নিজের বিরক্ত লাগে এবার ওর। কিন্তু তার পর -পরই নিজের জন্য মায়াও লাগে। জীবনের নিয়মের কাছে মানুষ কতো অসহায়! সিজার যদি তনুর বাবা না হয়ে সামনে দাঁড়ানো ঐ ছেলেটা হতো! কতো ভালো হতো। ছেলেটা শুরু থেকেই ওকে ফলো করছে। টের পেয়েছে হৃদিতা। যদিও টের না পাওয়ার ভান করছে। হৃদিতা যে সুন্দরী, সেটা ও জানে। মানুষের মুগ্ধ দৃষ্টি, অনুসরণকারী দৃষ্টির সাথে ও সবসময়ই পরিচিত হয়।
সামনের ছেলেটা হ্যান্ডসাম। তাকানোর ভঙ্গীটাও সুন্দর। কিন্তু সিজারের মতো নয়। হৃদিতা একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে, আজকাল তার সেইসব নায়ক বা পুরুষদের ভালো লাগছে যাদের সাথে সিজারের কোন রকম মিল আছে। বাংলা গান শোনে না ও। কিন্তু আজকাল শ্রীকান্ত আচার্যের গান শুনছে। কারণ সেদিন সে হঠাৎ আবিষ্কার করেছে যে সিজারের গানের গলা শ্রীকান্ত আচার্যের মতো । হৃদিতার নিজের ওপর আবার রাগ লাগতে শুরু করেছে, কেন সে সারাক্ষণ সিজারের কথা ভাবছে!
এই মানসিক চাপ হৃদিতা আর নিতে পারছে না। সিজারকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে ওর, আবার অপরাধবোধে মন ভরে উঠছে। এই অদ্ভুত মানসিক টানাপোড়েনের সাথে এর আগে হৃদিতার কোন পরিচয় ছিলো না। এই ব্যাপারটা ঘটতে শুরু করেছে সেদিন থেকে। যেদিন তারা চোখ বন্ধ করে কল্পনার খেলা শুরু করে। সিজার আর সে কখনও সমবয়সী দুইটা বাচ্চা ছেলে হয়েছে, কখনও দুই বোন।
সিজার হৃদিতার কতো আপন হতে পারতো, কতো রকমের কেমেস্ট্রি তৈরি হতে পারতো ওর আর সিজারের মধ্যে, এইসব খেলায় সিজার খুব চমৎকার করে হৃদিতাকে সেটা অনুভব করতে শিখিয়েছে। সিজার ওর প্রিয় মানুষ। এই খেলা খেলার পর ওর কাছের মানুষ হয়ে গেছে। যে ওর মনের অনেকটা জায়গা প্রবলভাবে দখল করে নিয়েছে। হয়তো সিজার সত্যিই ওর টুইন। সিজারের বাবা যা বলেছেন তা সত্য। হৃদিতাকে তো কতো প্রমাণই দিলো সিজার!
হৃদিতার মন প্রবলভাবে আলোড়িত হয়েছিল সেই সন্ধ্যায়। যে সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল একই সাথে নরসিংদীতে, ঢাকাতেও। সিজার প্রথমে ফোনে মা আর ছেলে হওয়ার কল্পনাটা করলো। হৃদিতা মা, সিজার ছেলে। খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলো সিজার ওর মৃত মায়ের জায়গায় হৃদিতাকে বসিয়ে। সিজারের মন ভালো করার জন্য হৃদিতা বলেছিলো,
-চলো এবার অন্য একটা সম্পর্কের খেলা খেলি। যেটাতে ফান আছে।
সিজার একটু ভেবে বলেছিলো,
– প্রেমিক –প্রেমিকা হবি? জাস্ট ফর ফান?
-ঠিক আছে।
-চোখ বন্ধ কর। ধরা যাক আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা।
হৃদিতা উচ্ছ্বাস নিয়ে বললো,
-করলাম। তোমার, আমার সাথে দেখা করতে আসার কথা একটা রেস্টুরেন্টে। আমি বসে আছি। তুমি অনেক দেরি করে আসলে। তোমাকে দেখে আমি রাগ করে খুব বকা দিলাম ।
-বাহ্! ভেরি গুড! এইতো তোর কল্পনা শক্তি বাড়ছে। সুন্দর একটা সিচুয়েশন তৈরি করে ফেললি। তারপর? কি কি বকা দিলি আমায়?
-বললাম, তুমি জিরাফের মতো লম্বা, ইঁদুরের মতো ছোট। তুমি কয়লার মতো কালো। তোমার মূলার মতো দাঁত। আমায় এতোক্ষণ ধরে বসিয়ে রেখেছো কেনো?
-হা হা হা! সো সুইট! তোকে কি আমি সাধে সুইট সুইট বলি! আচ্ছা! আমারা যে রেস্টুরেন্টে বসে আছি সেখানে আমাদের টেবিলটা কি ওপেন না কোন পার্টিশানের আড়ালে?
-ওপেন।
-উহু, ওপেন না। মানুষজন হা করে তাকিয়ে আমার প্রেমিকাকে দেখবে এটা আমার পছন্দ না। আমি প্রেমিকার ব্যাপারে একটু পজেসিভ। আমি তাই তোকে নিয়ে একটা পার্টিশানের আড়ালে যে টেবিলটা আছে , সেখানে চলে এলাম।
-আচ্ছা।
– এখন তবে আমার রাগ ভাঙ্গানোর পালা। দ্যাখ, একটা ছেলে ছেলের মতো করেই রাগ ভাঙ্গাবে, তাইনা? আমি যা বলবো বা করবো তারজন্য কিন্তু লজ্জা পেতে পারবি না। এটা একটা খেলা। ওকে ?
হৃদিতা সম্মতি দিয়েছিলো। কিন্তু তারপর সিজার যা বললো ও করলো তাতে হৃদিতা আর খেলার নিয়ম মানতে পারলো না। তার একই সাথে প্রচণ্ড লজ্জা লাগছিলো সেইসাথে অপরাধবোধে জড়ানো একটা প্রবল ভালো লাগাও টের পাচ্ছিল। সিজারের কথার মাঝখানেই ফোন কেটে দিয়েছিল ও। এসব কথা বলার জন্য সিজারকে কি তার ঘৃণা করা উচিত? কিন্তু ঘৃণা তো আসছে না! বরং একটু মন খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, এটা কেনো খেলা হলো? কেনো সত্যি হলো না! সেদিনের পর থেকে ফোন করছে না সে সিজারকে। আর কি আশ্চর্য! সিজারও করছে না!
হৃদিতা তার মানসিক অস্থিরতা কমাতে সিজারের কাছে করা প্রমিজ ভাঙ্গলো। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পরদিন এক বান্ধবীকে সিজারের কথা বলে ফেললো।
কোচিং শেষে বান্ধবী লাইজুকে নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্টে কফি খেতে বসেছিলো হৃদিতা। সিজারের কথা ভাবতে ভাবতে কফি খাচ্ছিল ও। ভাবলো লাইজুকে বলেই দেখি, ও কি বলে সিজার সম্পর্কে। তবে সব কথা বললো না হৃদিতা। শুধু টুইনের অংশটুকু বললো।
লাইজু কোন প্রশ্ন না করে চুপচাপ শুনলো সিরিয়াস মুখে। তারপর বললো,
-শোন, এই সিজার ব্যাটা একটা লুচ্চা। তোকে খেয়ে ছেড়ে দেবে।
-এরকম বিশ্রী ভাষায় কথা বলছিস কেনো?
-তো কি, শান্তিনিকেতনি ভাষায় কথা বলবো? তুই যেররকম সুন্দরী! আমি ছেলে হলে আমিও একটা চান্স নিতাম। টুইনের গাঁজাখুরি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। ব্যাটার বয়স কতো?
-ফরটি প্লাস।
-আচ্ছা মিডলাইফ ক্রাইসিস। এই বয়সের বুইড়াগুলির কুড়কুড়ানি বেশি থাকে।
-এসব ভাষা তুই শিখিস কোথা থেকে বলতো?
-তোর খারাপ লাগছে কেনো? তুই কি ব্যাটার প্রেমে-ফ্রেমে পড়েছিস নাকি? মালটার ছবি আছে মোবাইলে? দেখি থোবড়াটা।
-মালের ছবি নেই। তোকে থোবড়া দেখতে হবে না। আর তুই যা ভাবছিস তা নয়। উনি অত্যন্ত ভদ্রলোক। ফ্যমেলির সবাই উনাকে খুব পছন্দ করে। উনার নামে কখনও কোন খারাপ কথা শোনা যায় না। আমার বাবাকে কি পরিমাণ সাহায্য করেছেন তুই চিন্তাও করতে পারবি না। বাবা বলেন, সিজার তার বন্ধু নন, তার বাবা। যে তাকে নতুন জন্ম দিয়েছে। এতো ভালো একটা মানুষ কেনো আমাকে খামাখা মিথ্যা কথা বলতে যাবেন, তুই বল?
-তবে তো ব্যাপারটা যা ভাবছিলাম, তার চেয়েও জটিল।এতোক্ষণ ভাবছিলাম খালু, ভাগ্নির সাথে প্রেম করতে চাইছে। কিন্তু উনি যদি তোর বাবার বাবা হন, তারমানে তোর দাদা। অর্থাৎ দাদা, নাতনির সাথে প্রেম করতে চাইছে।
হৃদিতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে কফি শেষ না করেই উঠে পড়ে। লাইজু এভাবে কথা বলবে ও চিন্তাও করেনি। লাইজুকে ওর খুব বুদ্ধিমতী বলে মনে হয়েছে সবসময়। মেয়েটা প্রচুর বই পড়ে, অনেক জানে-টানে। কিন্তু ও যেভাবে রিএ্যাক্ট করলো তাতে এখন হৃদিতার মনে হচ্ছে ও লাইজুকে বলে চরম বোকামি করেছে।
লাইজু হাত ধরে হৃদিতাকে টেনে আবার চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তারপর বলে,
-শোনো কন্যা! এতো আহ্লাদি হলে তোমার জীবনে অনেক ভোগান্তি আছে। সৃষ্টিকর্তা সুন্দরীদের মাথায় ঘিলু দেয় না কেনো বুঝিনা।
-তুই আবার শুরু করলি?
-আচ্ছা আর বলবো না। বরং তুই আমার জীবনের একটা ঘটনা শোন। আমি তো ছোটবেলা থেকেই কালা, পেঁচি। এই আমাকেই আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা একা পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।আমি কি মনে করে ওর গায়ে হিসু করে দিলাম। সে চট করে সরে যেতেই পালালাম। বাড়িতে এসে বলে দিয়েছিলাম। মা আর নানি বললেন, কাউকে একথা বলিস না। শুধু ঐ লোকের সামনে আর যাবি না। ঐ ব্যাটা এরপরও ভালো মানুষের মতো মুখ করে আমাদের বাড়ি আসতো। একদি ওর গায়ে অনেকগুলি বিষ পিঁপড়া ছেড়ে দিয়েছিলাম।
হৃদিতা খিলখিল করে হাসছে। লাইজুর ওপর তার আর রাগ লাগছে না।
লাইজু বললো,
-সিজার ব্যাটা যদি এমন জড়িয়ে ধরতে আসে তবে আমার টেকনিকটা এপ্লাই করতে পারিস। ঐ ব্যাটার ঘেন্না টেন্না কেমন? ঘেন্না কম থাকলে আবার সমস্যা। তখন অন্য টেকনিক। অন্য টেকনিকটা শুনবি?
লাইজু আবার সিজারকে নিয়ে কি বলতে কি বলে বসবে তাই তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো হৃদিতা,বললো,
-উঠি রে। আজ বাবাকে দেখতে যাবো।
-আচ্ছা যা, আর ঐ সিজার ব্যাটার সব খবর তুই আমাকে দিবি। আমি তোকে বুদ্ধি দিয়ে দেবো। লুচ্চাটা বাপ- বাপ করে পালাবে। আর পারলে এই খালুর বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও উঠে যা। তোর মতো সরল আর রোমান্টিক মেয়ের এই পিশাচটার আশে পাশে থাকা ঠিক হবে না।
বাড়িতে এসে হৃদিতার মন ভালো হয়ে গেলো। তার বাবা আগের চেয়ে অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ব্যাবসা আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। সিজার বেশ কিছু কাজ পাইয়ে দিয়েছে হাসানের কোম্পানিকে। বাবা আর মায়ের মুখে সিজারের প্রশংসা শুনে হৃদিতার ভালো লাগলো খুব। লাইজুর কথাগুলি ওকে খুব জ্বালাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কি জানি, হতেও পারে সিজার খারাপ মানুষ। সেদিন ড্রইং রুমে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো, সেটা ওর কাছে তেমন স্বাভাবিক লাগেনি। কিন্তু এখন বাবা-মায়ের মুখে সিজারের প্রশংসা শুনে হৃদিতা ভাবলো, লাইজু সিজারের মতো মানুষ কোনদিন দেখেনি, তাই সিজার সম্পর্কে কোন ধারনা করতে পারছে না। লাইজু ওর অভিজ্ঞতায় দেখা পুরুষদের দিয়ে সিজারকে মাপছে। সিজার কিছুতেই লাইজুর চাচার মতো হতে পারেনা। কিছুতেই না।
সেদিনটা বাবা-মায়ের সাথে কাটিয়ে পরদিন সিজারের বাড়িতে ফিরে এলো হৃদিতা । আর সন্ধ্যায় ফোনও করলো নরসিংদীতে থাকা সিজারকে।
সিজার বললো,
-আমি ভেবেছিলাম তুই আর আমাকে কোনদিন ফোন করবি না।
-কেনো এমন ভেবেছিলে?
-সেদিন তুই ওমন করে ফোন রেখে দিলি। আমি তো খেলাটাকে যতোটুকু বাস্তবসম্মত করা যায় তাই করার চেষ্টা করছিলাম। সেটা করতে গিয়ে হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। হঠাৎ হয়ে গেছে রে, আমায় মাফ কর। আমি আর কোনদিন তোর সাথে এমন করবো না। তোর খারাপ লাগে এমন কিছু আমি আর কোনদিন করবো না। প্রমিজ।
কথাগুলি শুনে হৃদিতার বুক থেকে যেন এক পাষাণভার নেমে গেলো। তার ধারনাই ঠিক। লাইজু ভুল বলেছে। সিজার কখনও খারাপ মানুষ নয়। হৃদিতা মুগ্ধ গলায় বলে,
-তুমি কি জানো, তুমি পৃথিবীর একজন খুব সুন্দর মানুষ? যার ভিতর- বাহির দুইটাই সুন্দর, এমন একজন মানুষ?
সিজার হাসে। বলে,
-কি জানি হতেও পারি। কারণ, যে অপরূপ সুন্দরী মেয়েটি আমার টুইন, সেও একজন ভিতর বাহির সুন্দর মানুষ।
(চলবে…)
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..