প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
বউটির খোলা পিঠে খসখস করে সাবান ঘষছে আর একটি বউ। দু’জনে খোলাখুলি গল্প করছে খুব।
হাসছে। এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে। যেন মনে হচ্ছে হেসে হেসে জলের ভেতর বুঝি গড়িয়েই পড়বে।
এদিকে গঙ্গার জল বাড়ছে। সিঁড়ির ধাপে জল ধাক্কা মারছে। ওদের ভ্রুক্ষেপ নেই। ওরা জানে, ওরা তলিয়ে যাবে না।
কারণ যারা পারে বসে বা জলে নেমে স্নান করতে করতে ওদের দেখছে তারাই ঝাঁপিয়ে পড়বে উদ্ধারে।
তাদের কার্যকলাপ যে কেবল ছেলেরাই দেখছে তা নয়, দেখছে মেয়েরাও।
ওদের ছলাকলার বহরও বাড়ছে।
এই ঘাটে উপস্থিত ছেলেছোকরার দল ওদের প্রত্যক্ষভাবে চেনে।
নদীর ওদিকে একটা বেশ্যাপাড়া আছে।
কথিত আছে এই মেয়ে দুটি সেখানকার আর ওঁরা প্রতি পূর্ণিমায় নৌকা করে এপারে এসে স্নান সারে। কারণ এটাও কথিত আছে যে, গঙ্গার পশ্চিমকূল, বারাণসী সমতুল।
একটা নৌকা প্রায় ওদের গায়ের উপর দিয়ে চলে এসে ঘাট পেরিয়ে দাঁড়াল। নৌকার ঢেউ তাদের বুক ছুঁয়ে দিল। মেয়েগুলি অমনি গুনগুন করে গান শুরু করে দিল আর নৌকার ছোকরা মৃদুমন্দ বাতাসের মত হাসতে শুরু করে দিল।
ছেলেটার নাম রীতেশ তিওয়ারী। নৌকাটা ছেলেটার নয়। তার এক বন্ধুর নৌকা। বন্ধুর নাম নীলেশকুমার সাউ। আরও বিশদে বললে, নৌকাটা তার বন্ধুরও নয়। বন্ধুর বাপের। সেই বন্ধুর নৌকাজীবন ভাল লাগে না। তাই সে ঢেউয়ের উপর নৌকা রেখে স্থলবাণিজ্য করে। নৌকা বাঁধা থাকে জলের কিনারায়। জল নেমে গেকে নৌকা কিন্তু নামে না; নৌকা এখানে স্থির সেই কাদামাটির উপর। রীতেশ স্বপ্ন দেখে একদিন নৌকায় জলপরী নামবে।
দিনরাত সে নৌকায় থাকে। নৌকা নদীর ভেতর নিয়ে গিয়ে লম্বা এক ছিপ ফেলে বসে থাকে। কোনদিন মাছ পায়, কোনদিন পায় না। কেউ কেউ বলে, মাছের ব্যাপারটা স্রেফ ছুতো। আসলে সে ঘাটে স্নানে আসা মেয়েদের দেখে।
নীলেশ বলে, নৌকাটা তুই কিনবি? তাহলে আমি বেঁচে যাই।
রীতেশ কী বলবে? সে চুপ থাকে। একটা নৌকার দাম কত? সে জানে না। তারা বড় গরীব। নৌকা কিনবে কোত্থেকে? দিন চলে না চলে তার আর ঠিক নেই। তার বাপ কাজকর্ম করে না। চেয়েচিন্তে মদ খায়। রাস্তার ধারে পড়ে থাকে।
মোড় মাথায় তাদের এক চা দোকান আছে। দোকান নয়, গুমটি। তার মা চালায় সেটা আর তার তাকে ব্যাপক গালমন্দ করে। সে কেন দোকানে বসে না।
খুব ভাল দাঁড় বায় রীতেশ। অন্য মাঝিরা ওকে ডাকে। নৌকার কাজ যদি ভাল লাগে তবে আয় আমাদের সাথে। নদী থেকে নদীতে কিভাবে যেতে হয়, তা দেখাব। চিনবি গঙ্গার ভেতর কিভাবে গঙ্গা বাস করে। গঙ্গা আর গঙ্গা। অনেক সময় আমাদের গঙ্গার জল খেয়ে থাকতে হয়।
জলের ভেতর কী থাকে?
কী আবার—মাছ। আর কী?
রীতেশ চুপ করে যায়।
মেয়ে দুটি হাত নাড়ে। আমাদের পৌঁছে দেবে?
সে তখন নৌকার কাছি বাঁধছে পাড়ের বটগাছের এক মোটা শিকড়ের সাথে। লোহার শিকল জলে ফেলে দিয়ে বলল, কতদূর?
ওপার।
নদীর ওপার?
নয়তো কি জীবনের ওপার?
আহা!
ন্যাকা! যেন আমাদের চেনে না; যেন আমাদের কাছে কখনও যায়নি।
সত্যি যাইনি।
তবে আজ চলো। ছাড়াও হবে, দেখাও হবে। ঘাটের দেখাটা ফিরি ছিল।
কেন তোমাদের নৌকার কী হল?
আমাদের নৌকা কোন জন্মে ছিল যে নৌকা থাকবে? আমরা চলতি পানসি ভাড়া করে নিই।
কিন্তু আমি তো ভাড়া খাটি না।
আজ খাটবে।
নৌকা আমার নয়।
তবে যে ঢেউতে ঢেউ ছুঁইয়ে পারে এসে ভিড়লে?
ওটা ফিরি ছিল। গঙ্গার ভেতর যেমন আদিগঙ্গা বয়, আরও অনেক নদী বয়ে যায়; নক্ষত্রপুঞ্জ বয়, রাত্রিসকল; এটা ছিল তেমনি।
ওবাব্বা! মিনসে কথা জানে গো! আবার কাব্যি করছে।
আমি নৌকা বাই; কিন্তু কেবল এপারে। নৌকা নিয়ে ওপার ছোঁয়া আমার বারণ।
ও! এই বলে তারা গায়ের কাপড় পালটে উঠে যায়। বলে, তুমি তো দেখি তাহলে কোন কম্মের নয়। নিজের একটা নৌকা কিনে নাও না কেনে?
কিনব। আর এই নৌকাটাই কিনব।
তখন আমাদের চাপাবে?
তোমরাই না হয় বউনি কোরো।
এইবার মেয়েদুটি শুকনো কাপড় পরে নেমে আসে তার নৌকায়। এখানে লক্ষণীয়, সেই নৌকার অর্ধেক মাটিতে অর্ধেক জলে। নৌকা তাদের ভারে দুলে ওঠে। তারা নৌকায় বসে আকাশের তারাদের মতন মিটিমিটি হাসে। বলে, এই নাও, আমরাই কিনে নিলাম তোমার এই নৌকা।
কিন্তু তার আগে তো নৌকাকে আমার হতে হবে। সে আমার হল কখন?
যবে থেকে আমরা তোমার হলাম।
সেটাই বা কখন ঘটল?
ঘটল তো, শুনতে পেলে না?
না।
যখন নৌকার জল ছলাতছল করে উথল হল।
সে তো সব সময়ই করছে।
যখন তুমি ঢেউকে ঢেউ দিয়ে আদর করলে।
সেটা জল করেছে, আমি নই।
তবু সে করার মানে আলাদা ছিল।
তোমরা কী চাও?
তোমাকে।
কী করবে নিয়ে?
নৌকা করে রাখব।
কী বল! মানুষ কখনও নৌকা হয়?
কে বললে হয় না? তোমার মধ্যে নৌকা হবার পূর্ণ সুযোগ আছে।
কীরকম?
যখন রাত নামবে, নীলচাঁদের হলুদ আলোয় আমরা তোমাকে নিয়ে এই গঙ্গার বুকে ভেসে বেড়াব। আমরা জানি, এক নদীর ভেতর অনেক নদী বাস করে; যেমন এক মানুষের ভেতর অনেক মানুষ থাকে—এক জীবনে অনেক জীবন থাকে।
তারপর?
তুমি হবে আমাদের সেই আলাদা জীবনের নৌকা। আমরা তোমাকে অনেকদিন ধরেই দেখি। যখন রাতের নদীতে নক্ষত্রদলের সঙ্গে আমরা খেলতে বেরুই, তখন দেখি, নদীর বুকে নৌকা রেখে কুপি না জ্বালিয়ে তুমি বসে আছ।
তোমরা এও খেয়াল করেছ!
আবার কখনও তুমি কথা কও নদীর সাথে। আবার নদীর মাছ এসে কথা বলে গেল তোমার সঙ্গে—এমনও হয়। তাই তোমার মত এক নৌকা আমাদের দরকার; যাতে চেপে আমরা ভ্রমণে যেতে পারব। আমাদের নিজেদের কোন নৌকা নেই। জলভ্রমণে আর কতদূর সাঁতার দেওয়া যায়, বল।
এই বলে তারা ফাঁকা ঘাট দেখে জলে ঝাঁপ দিল।
সেই থেকে নদীতেই নৌকা বায় রীতেশ। নদীর পর নদী, গঙ্গার ভেতর গঙ্গা—, নক্ষত্র’র পর নক্ষত্র পেরিয়ে যায়। সে জানে, এইভাবেই নৌকা হওয়া যায়। আর তখনই দেখা যাবে সেই জলপরীদের।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..