সমপ্রেম ও বিবাহ
চমৎকার সামার এর বিকেল।জুন মাস। লালচে দীর্ঘ সোনালী বিকেলের আলো ছড়িয়ে পড়েছে হাডসনের জলে। নিউইয়র্ক…..
“শোনো এইভাবে তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমার বয়স চুয়াল্লিস। আমার দুটো মেয়ে আছে, সংসার আছে। প্লিজ।“ কথা কটা মেসেজ করল তনুশ্রী অর্ণবকে। অর্ণব ওর সহকর্মী। ওর থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোটোই। ওদের মধ্যে একটা অ্যাফেয়ার ছিলো, হয়তো এখনও আছে। কিন্তু ইদানীং অর্ণব কেমন একটা মরিয়া হয়ে উঠেছে শারীরিক ভাবে তনুশ্রীকে পাওয়ার জন্যে। এটা যে হবে তনুশ্রী স্বপ্নেও ভাবে নি।
অর্ণব বিবাহিত। কিন্তু বেশ একটা পারস্পরিক অবলম্বন বন্ধুত্ব তনুশ্রী অর্ণব দুজনেরই দুজনের প্রতি ছিলো সংসারের সীমার বাইরে। কিন্তু মাস ছয়েক হল অর্ণব এটা শুরু করেছে। পাবলিক প্লেসে, রেস্টুরেন্টে শপিংমলে অফিস ক্যাম্পাসে কোথাও আর গল্প করে ওর পোষাচ্ছে না। সেই ঘুরে ফিরে একটা কথাতে ফিরে আসে, ”তোমাকে কবে পাবো? মন্দারমনি চলো,,, একটু ম্যানেজ করো বাড়িতে।“ কান্না আসে তনুশ্রীর। মাঝে মাঝে অর্ণবের মুখের দিকে তাকালে কেমন মায়া হয়। মনে হয় আকুল ভাবে ক্ষুধার্ত কেউ যেন ওর কাছে খাবার চাইছে। পরম অসহায়তায় একদিন কোন এক রেস্টুরেন্টের নির্জন কোনে অর্ণবের মাথা থেকে গালে নিজের হাতের পাতাটা নামিয়ে এনে তনুশ্রী বলল,”ভালোবাসি তোমায় অর্ণব! কিন্তু তুমি যা চাও সেটাতে আমার একটুও সায় নেই, একটুও ইচ্ছে করে না, বিশ্বাস করো।“ তনুশ্রীর হাতের পাতাটা সেদিন চেপে ধরেছিলো অর্ণব নিজের গালে। আর তনুশ্রীর মনে হচ্ছিল ওর হাতের সমস্ত কোমলতা, সব পেলবতা শুষে নিচ্ছে অর্ণবের তপ্ত গাল। সারা শরীর কেঁপে উঠেছিলো তনুশ্রীর। আর সেই মুহূর্তেই মনে হয়েছিলো সব কিছু ওলোট পালট হয়ে যাবে যদি অর্ণবের আহ্বানে ও সাড়া দেয়।
কয়েকদিন এরপর দুজনে দুজনের সাথে কথা বলে নি অফিসে। তারপর আবার যেই কে সেই। এক এক সময় তনুশ্রী খুব কনফিউজড হয়ে যায়। বর আদিত্যর সাথে ও শারীরিক সম্পর্কে কোনোদিন কমফোর্ট বোধ করে নি।
অর্ণবের টুকরো টুকরো ছোঁয়া গুলো নিয়ে মনের ভেতরে শিহরিত হয়। তবু এগিয়ে আসতে পারে না।
কদিন ধরে ও অর্ণবের সাথে ফিরছিলো না। আজ হঠাৎ ফেরার সময় করিডোরে অর্ণবের মুখোমুখি হয়ে যায়। অর্ণব লিটারারি ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,”একদিন আসতে হবে আমার কাছে। দরকার আছে।“ ওর ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে তনুশ্রী ভেতরে ভেতরে ঘামতে শুরু করলো। কোনো রকমে বলল, “এখন বাড়ি যাই?” অর্ণব কিচ্ছু না বলে রাস্তাটা ছেড়ে দিলো। “আজ যাও। কিন্তু কবে আসবে বলো। আমি জোড়াপুকুরের ওখানের ফ্ল্যাটটা শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যে কিনেছি। বলো কবে আসবে? তুমি অন্য কোথাও যেতে চাও না। কোত্থাও যেতে হবে না। আমার ফ্ল্যাটে আসবে।“ স্তম্ভিত হয়ে গেল তনুশ্রী। “এতটা ? এত দূর? এইরকম পাগলের অবস্থা অর্ণবের? কি করেছে তনুশ্রী? এত আকর্ষণ তনুশ্রীর শরীরের? ভগবান! গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তনুশ্রীর। একটু সামলে নিয়ে বলল,”তুমি পাগল অর্ণব? আমি ওপেন পাবলিক প্লেসে তোমার সাথে শুধু গল্প করতে পারি, তার বেশি কিছুই পারবো না। আমার ভেতর থেকে আসছে না। আমি কোথাও যেতে পারবো না। কোনো ফ্ল্যাটেও না। পথ ছাড়ো। বাড়ি যাবো।“
বাড়ি এসেই ঐ মেসেজ টা পাঠালো অর্ণবকে। “শোনো এই ভাবে তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমার বয়স চুয়াল্লিশ। আমার দুটো মেয়ে আছে। আমার একটা সংসার আছে। প্লিজ।“
মেসেজটা পাঠিয়ে তনুশ্রী ফোনটাকে নিজের থেকে অনেক দূরে রেখে দিলো। ছোটো মেয়ে তিন্নি এসে গা ঘেঁসে বসে বলল,”পাঁচটা অঙ্ক আটকে গেছে।“ তনুশ্রী মেয়ের চুলে বিলি কেটে বলল,”খাতাটা নিয়ে আয়, দেখে দিই। অত গায়ের মধ্যে আসিস না তুনি! সব সময় গায়ে উঠে আসে।“ তিন্নি হি হি করে হেসে বলল,”তুমি যা নরম!” ফোন দূরে আছে। তবু তনুশ্রীর বড্ড মনে পড়ল অর্ণব কে।
পরেরদিন অফিসে একবারও মুখোমুখি হলো না অর্ণবের। একটু নিশ্চিন্ত লাগছে। কষ্ট লাগলেও নিশ্চিন্ত লাগছে। এইসব সম্পর্কের কোনো পরিণতি নেই। কোথাও একটা থামিয়ে দেওয়াই ভালো। তিন্নি মুন্নি বড়ো হচ্ছে। ছুটির পরেও কোথাও দেখলো না অর্ণবকে। বাসস্টপে এসে দাঁড়ালো। দৃষ্টি দূরের দিকে। ড্রাইভ করে গাড়ি নিয়ে সামনে অর্ণব। “উঠে এসো।“
ভগবান জানে কপালে কি আছে। অর্ণবের চোখের দৃষ্টি অসুস্থ অসহায়। আজ নিভৃতেই তবে ফয়সালা হয়ে যাক। গাড়িতে উঠে পড়ল তনুশ্রী। একটানে গাড়ি চালিয়ে সোজা অর্ণব চলে এলো ওর ফ্ল্যাটে। সন্ধ্যের পর। সিঁড়িতে কেউ নেই তেমন। ফার্স্ট ফ্লোর। লক খুলে ফ্ল্যাটের নিভৃত ঘরে অর্ণবের মুখোমুখি তনুশ্রী।
”জল খাবে?” প্রথমে এক গ্লাস জল। তারপর একটা ফ্রুট জুসের বোতল দিলো তনুশ্রীকে। তনুশ্রী হাসলো,”তুমি খাবে না? খারাপ লোকেরা জুসে অনেক কিছু মিশিয়ে দেয়।“
অর্ণবও হাসলো,”আমি ভালো লোক।“
ফ্রুট জুস খেয়ে ঠাণ্ডা হলো যেন শরীরটা। অর্ণব ওর সামনে বসে ওর দুচোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো খানিকক্ষণ। অর্ণবের চোখের দৃষ্টি এখন অনেক শান্ত। একটু করুণ। কিন্তু সেই রেস্ট লেস ভাবটা নেই। তনুশ্রীর মনটাই কেমন রিমঝিম করে উঠল। অর্ণব মৃদু স্বরে বলল, “একবার শুধু একটু জড়িয়ে ধরব। আর কিচ্ছু করবো না আমি তোমাকে।“
এত নিবিড় এত গভীর আলিঙ্গন তনুশ্রীর এযাবৎ জীবনে এই প্রথম। অনেকক্ষণ সেই আলিঙ্গনের মধ্যে কাটিয়ে তনুশ্রীর মনে হল, বহু দিনের একটা অবুঝ অশান্ত হৃদয় যেন শান্ত হলো। তনুশ্রীর শরীর থেকে হৃদয় থেকে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা গিয়ে অর্ণবের আকুলতাকে শান্ত করে দিল।
সত্যিই অর্ণব ওকে আর কিছু করল না। কোনো জোর, কোনো অনুরোধ কিচ্ছু না। বরং বেশ মমতা সহকারে পকেট থেকে রুমাল বের করে তনুশ্রীর ঘাম মুছিয়ে দিলো। তারপর নিজে ড্রাইভ করে ওকে এগিয়ে দিলো। নামার আগে তনুশ্রী জিজ্ঞেস করল,”আর পাগলামো করবে না তো কখনও?”
একটু হেসে অর্ণব বলল,”না।“
তনুশ্রীও হেসে জিজ্ঞেস করল,”কি করে ঠিক হয়ে গেল?”
অর্ণব গভীরভাবে তাকিয়ে বলল,”ঠিক জানি না। বোধহয় তোমার স্পর্শে। আমাকে বিশ্বাস করে দেওয়া ঐটুকু স্পর্শে।“
তনুশ্রীর হঠাৎ মনে হলো কোনো কোনো প্রেম পরকীয়ার গন্ডী পেরিয়ে যায়। পরকীয়া হয় না।
চমৎকার সামার এর বিকেল।জুন মাস। লালচে দীর্ঘ সোনালী বিকেলের আলো ছড়িয়ে পড়েছে হাডসনের জলে। নিউইয়র্ক…..
বিধবা রতিমন্জরী বুঝেছিল যে স্বামীবিয়োগজনিত দুর্নীতির পরিণাম পুরোটাই তার ওপর বর্তাবে। তার চাইতেও কঠিন হল,…..
গল্পের আবহ দিয়ে শুরু করা যাক। একটা নামকরা প্রতিষ্ঠানে দুজন কাজ করেন। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ…..
ধরুন লক্ষ লক্ষ বছর আগে গহীন পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা কোনো স্রোতস্বিনীতে পেটানো শরীরের এক…..