পরজন্মে

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য
কবিতা
Bengali
পরজন্মে

পরজন্মে

মহাসিন্ধুর পেলব বুকে আমি জল হয়ে জন্মাতে প্রস্তুত –
এপাড়ে কৃষকের গ্রাম – ওপাড়ে শ্রমজীবী নগর,
কর্মচঞ্চল পোষাকে আমি ভরে দেবো শীতল বাতাস,
ওরা মেঘের ছবি দেখতে পাবে বুকে –
আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলবে –
ডুব সাঁতারে পার করবে আমার চিবুক,

ঘাটলায় প্রেমিক যুগল –
ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা ছুঁড়ে দেবে নুড়ি পেটে,
শিরায় ভরে নেবো জোয়ার – ভাঁটা,

মাথার উপর দিয়ে ছুটে যাবে ব্রিজ –
পুঁতে দেবে পিলার আমার বিশ্বাসে,

দুপাড়ে কর্মব্যস্ত জীবন –
হালকা ঢেউ দিয়ে চিনিয়ে দেবো মাঝিদের ,মাছ –
দুলবে নৌকা পিঠে – ভেসে যাবে স্টিমার –

কর্তব্যরত শরীরে জ্যোৎস্না হয়ে আসবে প্রেম –
নির্জন রাতে – একাকী বিছানায়,

পরজন্মে শীতল হয়ে জন্মাতে প্রস্তুত।
করুণা করে হলেও মেখে নিও –
প্রয়োজন হলে বলো ভালোবাসি।

 

ভালো থেকো

মুহুর্তে মুঠো খুলে যায় – আমি বাগানের পাশে বসি,
ধর্মতলার যানজটে বাসের সিটে তোমার ইশারা,
কথাদের পাহাড়ের উপরে নিয়ে যাই –
মানুষের মতো বেড়ে উঠি –
গাছেদের মতো হেলে যাই আলো পেলে ।

বস্তুত ধাতব দিনে পকেটে টাকা বোঝাই ছুট –
টিকিটের গায়ে দুটো আঙুল রাখি –
হেডফোনের বিষন্ন গান নতুন করে বুঝিয়ে চলে,
লগ্নি বিদ্ধস্ত বালুকা বেলায় ইংরেজি মাধ্যমের হাতুড়ি,
খরচ হয়ে ওঠো সাবলীল এবং মুনসিয়ানায় –
কবরে প্রলেপ দিয়ে মিছিলে হাঁটি।

লুটেপুটে সভ্যতার ঘাম – ক্লান্তি বিলাসী চেয়ার,
মেঝেতে ভাগাভাগি ষড়যন্ত্র , বিপনন –

তবু বিন্দাস আছি –
এভাবেই চলাচল ঝড়ের গায়ক – আঁধারি চিঠি,
স্নিগ্ধ গোধূলির লাল দ্বীপপুঞ্জ –

আসবে কবে ফিরে নীলাকাশ –
মেঘের দুঃখ থাকবেনা দূষিত জীবনে –
আঁচলে মুছে মানুষের দাম –

 

আমি বেঁচে আছি

প্রবল গানের খেয়া পাশ ফিরে চাও –
আমি বেঁচে আছি।
চিনতে পেরেছো আমার হতাশা গুলো,
জাদুতে রয়েছে নতুন মুখ স্টেজে হাতছানি,
আমি বেঁচে আছি জানি।

লড়াকু নাম ,কেবল জ্যোৎস্নাদের বুকে লেখা ,
আড়ালে নদীর নির্ঝর স্বপ্ন ভিজিয়ে যায়,
মৃত্যুর ধোঁয়া – ব্যক্তিত্বের আচমনে গড়ে নেয় মন ,
কার্লভার্টে – নর্দমায় স্রোতে ভেসেছে চিঠি অভিমানী –
আমি চুপ – এবং বেঁচে আছি জানি।

কোথাও কোন শব্দ হয়না আর,
শহীদ বেদীর সৌন্দর্য সাদা ফুলে ঢাকা,
কুরুক্ষেত্রের বিষাদে ভরে দাও কাল,
একগুচ্ছ কবিতা বরাদ্দ খাতায় –
ভাল্লাগে না মানুষের হয়ে রয়েগেছি চিরকাল –
আসলে স্মৃতিকথা বলতে জীবনের হয়রানি –
তবু আমি বেঁচে আছি জানি।

 

আমি কবিতা পড়ে যাই

এভাবে আবৃত্তি শুরু করি,
ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে কর্কশ জিভ,
ফালাফালা সাদা – হলুদে দাঁত,
বারেবারে আঘাত করে শব্দ জড়িয়ে বুকে,
কণ্ঠনালীয় উদ্যম, নির্ভেজাল স্বর –
আর জীবন্ত দুটো চোখ আঁকড়ে ধরে ভিটেমাটির মতো পাতা!

এভাবে কবিতা বয়ে যায় –
ঠোঁটের বিশ্রাম নেই – বিশ্বকোষহীন মাথা ,
নির্বিকারে পড়ে চলে যায় যতটুকু বলা আছে কিংবা লেখা ।

পৃথিবীর চিরহরিৎ কোলে আঁচল পাতা রোদ্দুর জানেনা ভিড় কতো –
প্রেক্ষাগৃহে বসার হিড়িক কানেদের,
কারো চিবুকে হাত, কারো ভারসাম্যহীন হাতলে ঠাঁই –
আমি কবিতা পড়ে যাই।

আসলে আমি পড়েই যাই,
ফিসফিসে কথারা ভেসে আসে,
কেউ কেউ উঠে চলে যায়,
আচমকা বেজে ওঠে পকেটে ফোন –
আমি পড়ে যাই।

একরোখা বৃত্তান্ত ঠেলে জীবন,
ঘড়ির কাঁটারা একলা অসহায়,
ভ্রুক্ষেপ নেই একদফা স্মৃতির ইতিহাসে,
বিভিন্ন গতিপ্রকৃতির রোশনাই –
আমি পাঠ করে যাই।

একসময় শেষ হলে,
নিভেছে ফ্ল্যাশের সব আলো,
বুঝেছি শেষ হয়ে গ্যাছে সব –
কারা যেনো আবারও এগিয়ে এলো –
দুহাতে বহমান খাতা, মাথা নীচু করে চলে যাই স্টেজের ধারে –
সময় হেসে বলে ভাই –
এটা তোমার কবিতা নয়,
তোমার কবিতা অপেক্ষা করছে জ্বরে।
এটা তোমার কবিতা নয় –

শ্মশানঘাটে জীবন হাতড়াই –
আমি কবিতা পড়ে যাই।

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। কবি। সম্পাদক ও সভাপতি বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..