পরিত্রাণ চাই নি কখনও

শ্রীপর্ণা চট্টোপাধ্যায়
কবিতা
Bengali
পরিত্রাণ চাই নি কখনও

ফিরে তাকাও নি

কেবল বিলাপের জন্য
একটা জীবন উপহার দিয়েছ
প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘতরই হয়
যন্ত্রণা যখন উগরে দেয় আগুন
আলোর উৎসবে আর দরকার নেই

অগোছালো হাতের সাজানো বাগানে
অন্ধকারে ভেসে থাকে তোমার ঐশ্বর্য
ঘামে ভেজা করতলে গোপন সুগন্ধ
স্পর্শ করেছি আগ্নেয় পাথর
ফিরে তাকাও নি, তাই এখনও বেঁচে আছি

এমন ভেবো না

আবাহন ছিল না কোথাও
তাই বিসর্জনেও এমন উদাসীন থাকা
মর্মে কোথাও ছিল না সোহাগ-কাঁটা
ছিল না পায়ের নীচে নক্ষত্র- ঘুম
এমন ভেবো না
তুমি চলে গেছ বলেই এসব

রাতের গভীরে রাত ছিল
রাতজাগা বারান্দা ছিল বুকের উঠোনে
ঝরে আছে কয়েকটি বাতাবীফুল
দীর্ঘনিঃশ্বাসে, শিশির সম্বল করে
এমন ভেবো না
তুমি চলে গেছ বলেই এসব

একটা দিনও এমন তো যায়নি
মৃত্যুভয় ছুঁয়ে যায়নি যেদিন আমায়
ভালোবাসার তীব্র শীতে কুঁকড়ে গেছে
আমার অনপনেয় কোজাগর রাত
ক্লান্ত বালিশে থমকে গেছে ভোরের কুয়াশা

এমন ভেবো না
তুমি চলে গেছ বলেই এসব

একা

সবারই একা হতে হয়
অনেকের মধ্যে থেকে
একা হয়ে যায় কেউ,
গর্ভসায়রে তমসায়, জলফুল,
আত্মস্থ নড়াচড়া একাই
মহাপ্রস্থানের পথে ভাঙা ঘট
হাতে চিতা কাঠ
একলাই যেতে হয়,
হেমন্তে আমনের গন্ধ মেখে
একা পথ ভাঙে বলিষ্ঠ পাগল
মাথায় মহেঞ্জাদড়োর জট
প্রস্তর যুগের শ্যাওলা ধরা
সুঠাম গোড়ালি, অনেকের
মধ্যে থেকে একা হয়
কুশল প্রণয়ী, যমজ শয্যার মাঝে
জমাট থাকে একাকিত্ব,কবন্ধ
অন্ধকারে সাথী খোঁজে, বৈরাগী
রসকলি ছাপ, প্রায়ান্ধকার
তলাতল জুড়ে জেগে থাকে মগ্ন ফণা
একাই।

তোমার নীলবর্ণ ছুঁয়ে

তুমি কাছে থাকলে মরে যায় হিমেল বাতাস
মায়াবী সিঁড়ির পাশে থমকে থাকে রাত
জয়, পরাজয় তোমার নীলবর্ণ ছুঁয়ে
অন্ধ হয়ে যায় শীতের কুয়াশা

নদীর মোহনার মতো ফুরিয়ে যায় বিকেল
লহরীহীন উৎসমুখে নোঙর ফেলেছি
পুরনো শৌখিন গন্ধে রাতের হাওয়া
ফিরে যাবার কথা কখনও ভাবিনি

ঘর বেঁধেছি চোখের পাতায়
তোমার কোন গোপন দুঃখ নেই,বলেছিলে
অনেক চেষ্টা করেও একটা বসন্ত আনতে পারিনি
চোখের সামনে দাউ দাউ জ্বলে গেছে উল্কি বাগান

 

পরিত্রাণ চাই না

পথ ভেঙেছে অন্ধকারের পাড়
হৃৎপিণ্ডে দাউ দাউ চিতা
জ্বলে যায় বুকের বাঁ ধারে
শীতল রক্তে খোলা নর্দমার জল

মন্দিরের বেদি থেকে
উঠে আসে পাপ
আয়ুর সীমানা কেউ জানে না, তাই
সময়ের অঙ্গুরীয়ে প্রিয় নাম লিখি

পরিত্রাণ চাই নি কখনও
আমার সকল সত্তা জুড়ে
অবনত বারুদ, দগ্ধ কার্তুজের পোড়া ঘ্রাণ
একলা আর কতদূর যাওয়া যায়?

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ