অনেকদিন বাবার সাথে কথা হয় না,
পাঁচ বছর বয়সের অনেক স্মৃতি ভুলে গিয়েছি,
নিউরনে জমা আছে আমার কপালে বাবার চুম্বন,
হাফ প্যান্ট ছেড়ে দেবার পর থেকে বাবা আর চুম্বন খাননি আমার কপালে,
যদিও বাবার ঠোঁট খসে পড়েনি,
যদিও আমার কপাল উড়ে যায় নি।
বড় হতে-হতে আমি চুম্বন আর স্নেহ থেকে দূরে চলে এসেছি নিরবে,
বাবাও কি আক্ষেপ করেন?
বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য তিনিও কি মাঝে-মাঝে একটি আফসোসের বড় হওয়া দেখেন?
মায়ের সাথে কথা বোনদের বেশি,
বোনদের দেখলে মনে হয়- ওরা মায়ের বান্ধবী,
বাবাও তো আমার বন্ধু হতে পারতেন!
অথচ বড় হতে-হতে বাবা আর আমার মধ্যে একটা দেয়াল গড়ে উঠেছে,
মায়ের আঁচলে মুখ মুছতে পারি না ত্রিশবছর,
তিনিও কি একটা দেয়াল তুলে দিয়েছেন বাবার সাথে প্রাকৃতিক ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে?
মানুষ যখন তার স্মৃতি হারায়,
ছোটবেলার বুক পানিতে ডুব সাঁতার, ডাংগুলি,
বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা বা কানামাছিতে..
তখন সেসব ছাপিয়ে আমার সামনে ভেসে ওঠে বাবার আঙুল ধরে হাঁটাপথ পেরুনো,
“মুখে দুধভাত তুলে দিচ্ছেন মা”- এমন দৃশ্য সুখী করতে-করতে আমাকে অসহায় করে তুলে,
হয়তো দুঃখী করে তুলে
অথবা করে তুলে বিপন্ন!
বড় হয়ে গেলে প্রেম হয়,
অচেনা তরুনীর জন্য হৃদয় ছারখার হয়,
একশো একটি প্রেম সম্পর্কিত স্ট্যাটাসে অনেক গুলো লাভ রিয়্যাক্ট পেয়ে সুখী হয়ে উঠি,
হঠাৎ চেনা তরুনীর জন্য স্লিপিং পিল এবং আত্মহত্যা ব্রতি হয় হৃদয়।
ঐ ফাঁকে একটি শৈশব খোয়া যায়,
মায়ের সাথে জড়ানো স্মৃতির সিনেমা ঝিরঝির করে,
বহুদিন ধরে বড় হতে-হতে আমি মা এবং বাবাকে অভ্যাস মনে করি,
একটি প্রেমিকার জন্য সমস্ত জীবন তুলে দিই,
তুলে রাখি গোলাপের উপাখ্যান!
মাঝে-মাঝে মায়ের অসুখ হলে বড় বেশি চিন্তিত হই,
আজকাল মা অসুখে পড়লেই আমাকে তার কাছে অনেক সময় ধরে পান,
“মা, খেয়েছো?” বলা হয়ে ওঠে না,
অচেনা বা স্বল্প পরিচিত বা প্রেমিকাকে নিয়ম করে তার খাবার দাবারের রুটিন চেক করি,
প্রেমিকাটি অভিমান করে না-খেলে নির্ঘুম রাত পার করি,
এই ফাঁকে মা আমার গ্যাস্ট্রিকের কারণে কত রাত না-খেয়ে ঘুমালেন জানা হয়ে উঠে না।
অথচ মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি বড় হতে হতে আরও তার নিকটে যাবো,
ছোটবেলায় বুঝতাম না বলেই খেলার জন্য দৌঁড়ে চলে যেতাম উঠোনে।
অল্প ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদার সেই ছেলেবেলার মা জানেন না,
কত বড় বড় ব্যথা লুকিয়ে রেখেছি তার কাছে,
লুকানো নয়, হয়তো বলার মত নৈকট্য নেই মায়ের সাথে।
বড় হয়ে গেলে মা-বাবাও হারিয়ে ফেলেন তার ছোট্ট বেলার খোকা,
আমরা হারাই না মা’কে,
টের পাই, তার হৃৎপিন্ডের স্পন্দন আজও আমি,
অথচ আমি রোজ হঠাৎ পরিচয়ের মেয়েটিকে বলি- “তুমি-ই হৃৎপিন্ড হে আমার প্রেমিকা।”