পাঁচালী ডট কম

রাখীবৃতা বিশ্বাস
কবিতা
Bengali
পাঁচালী ডট কম

পাঁচালী ডট্ কম

“দিন এখনো রঙিন” – সে তো পটে!
সত্যি মিথ্যা ছিল
মিথ্যা সত্যি হল
রোজ এমন কতকিছু ঘটে।

এ জগতে যা আসলে কালো
চোখ বুজে তাকে সাদা বলো,
এমন না যদি তুমি পার
ব্রাত্য হয়েই তবে মর!

“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর”
এসব তো গল্পে হয় বাস্তবে বেসুর!
এখন তো বন্ধুই অবিশ্বাসী হয়
তোমাতে আশ্রয় নিয়ে তোমারই করে ক্ষয়।

সম্পর্কে এখন আর মন কে বা খোঁজে,
সম্পর্ক যে বাসা বাঁধে শরীরের ভাঁজে,
মন এখানে অকেজো
থাকে বোকাদের কাছে।

উপকার যত তুমি
করবে যার যার,
তারাই আঘাত হেনে
দেবে মহার্ঘ প্রতিদান।

এ যুগেতে সততার
নেই কোনো দাম,
ঠকায় যে যত বেশী
সে হয় ততোই মহান।

পেতে হলে প্রকৃষ্ট
উন্নতির সোপান,
ধর্ম আর বিবেক ছেড়ে
তোষামোদের নাও জ্ঞান।

করতে স্বার্থসিদ্ধি
কেঁদেও ভাসায়,
কাঙালী জ্ঞানীর ছল
চেনা বড় দায়।

দলে যদি নাই মেশো
না শোন বারণ,
বেঁচে থাকা দায় করে
ছাড়বে অকারণ।

হও যদি অমলিন
নির্ভেজাল ভালো,
ঈর্ষার আগুনে
তোমায় জ্বলতে হবে জেনো।

কালিমা লিপ্ত হলে
ভয় পেয়ো না ভাই,
কলি কালের এই ধর্ম
একটু শান্তি নাই!

মনে রেখো সবখানে
একই গল্প তাই,
জীবনের রূপভেদে
পার্থক্য কিছুই নাই।

তবুও হাল ছেড়ে
দিও না কখনো,
ঈগল পাখীর মতোই
বাঁচার পথ চেনো।

জীবনের সবদিন
সমান হয় না তাই,
জেতার আস্বাদ পেতে
কখনো হারও মানতে হয়।

একদিন সবাইকেই
চলে যেতে হয়,
সময়ের আগে তা যেন
কক্ষনো না হয়!

লড়াই চালিয়ে যেতে
হবে যে নিয়ত,
হারব না তো কোনমতেই
আঘাত আসুক যত।

জীবন সতত সুন্দর
ভালো মন্দ নিয়ে,
‘চরৈবেতি’ জীবনযুদ্ধ
দেবেই যে জিতিয়ে।

 

ইচ্ছে

চলো, একটু পাপ করি…
অনেক তো ভালো থাকা হল
মহৎ সেজে,
রঙচঙে মিথ্যের মোড়কে,
মৃদু হেঁসে!

ঠিক যতটা নষ্ট হলে স্পষ্ট করে,
খারাপকে খারাপ আর
ভালো কে ভালো বলা যায় জোর গলায়,
চলো না এইবার কষ্ট করে
ঠিক ততটাই নষ্ট হই!

জন্ম ও মৃত্যুর আবর্তে
শ্যাওলা হয়ে অথবা
মিসিং লিঙ্কের মতো
দীর্ঘশ্বাসে আর না বেঁচে,
জীবনের যাপনে চলো একবার
তেতে পুড়ে সেঁকে নেই নিজেকে।

যতটা নষ্ট হলে মানুষ হওয়া যায়,
যতটা স্পষ্ট হলে সত্যি বলা যায়,
যতটা পাপী হলে
স্বার্থের ভারে নুঁইয়ে পড়া
অর্জিত পুণ্যের মরণ হয় চিরতরে,
চলো এইবার ঠিক ততখানি
পাপ করি হাসি মুখে প্রাণ ভরে।

আমরা তো প্রতিদিন
খুন হই, খুন করি নিজেরই হাতে!
আপোষে আঁতাত করি
ছদ্মবেশে ভালোবেসে
নিজেরই সাথে।

কতবার বঞ্চনা করেও
ভুলে যাই নানা অছিলায়,
নিজেই নিজেকে রাখি ঢেকে,
মিথ্যে সান্ত্বনায় আর
ঠুনকো তিতিক্ষায়,
নিজেকেই অস্বীকার করি
অস্তিত্বের আত্মরক্ষায়।

চলো এইবার খারাপ হই
প্রতিবাদী সত্তার আত্মপ্রত্যয়ে,
বোধের বোধন হোক,
কীট নয়, মানুষের পরিচয়ে।

নিষেধের সব বাঁধ ভেঙে
বিশুদ্ধ বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে,
ঝরে পরি চলো বারবার
পরার্থে এই পৃথিবীর বুকে।

চলো, একবার পাপ করি,
নতুন আমার আমিকে গড়ি।
সূর্যের সাত রঙ মেখে,
চলো একবার বেঁচে উঠি।

আরও একবার
আগুন পাখি হয়ে
অনেকটা রোদ ধরি
ইচ্ছে ডানায় ভেসে ভেসে।
ঠিক তো অনেক করা হল!
চলো, এইবার ভুলই করি
ভালোবেসে…

 

কাটাকুটি

স্মৃতি বিজড়িত নৈঃশব্দেরা
আজ শব্দে মুখর!
বড় বেশীই একপেশে,
পেপার ওয়েটের মতো
বেদনা বিধুর…

ভুলে যাওয়া কোন এক ব্যাথার ভারে,
অবনত বোগেনভেলিয়াকে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে
কিউমুলোনিম্বাসের বিষাদগীতি…

সেই কোন্ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে
বন্ধ ঘড়ির পেন্ডুলামের আনাচে কানাচে
আর ভাঙা কাঁচে জমে থাকা
ধূলোর পরতে পরতে,
মুখ আর মুখোশের সবটাই
যদিও সমান্তরাল হয়েই পড়ে আছে!

পুরাতনী সুর সব বাতিল করে
সময়ের ভগ্নপ্রায় স্লটগুলি এখন
সেজে উঠেছে নতুন ফুল, পাখি
আর পাতার মিথ্যে সম্ভারে।

জীবনের কাটাকুটি খেলায়
হারিয়ে যায় কতশত
কাছের মানুষ আর
চেনা হয়েও অচেনা যত মুখ,
অমূলক হয়ে যায়
অমূল্য ছিল যা কিছু
সাঁঝবাতির আলো আঁধারিতে।

ধূলো মাখা বই টার ছেঁড়া পাতায়
আজ বাতাস লেগেছে!
পত্ পত্ করে উড়তে থাকা
পাতাটাকে বশ করতেই পারছে না
কোনো থেরাপী, ওষুধ বা
গোধূলির করুণসুরের পূরবী!

কতকিছু উজার করে বলতে চাওয়া
প্রতিটি জলের ফোঁটাই
অনাহুতের মতো !
নির্লিপ্ত অথচ ভীষণ কাছের,
স্বচ্ছতোয়া, আদরের উপাধানে
রাত্রির আবেশে।

প্রতিটি শব্দ থেকেই
উপচে পড়ছে মিথ্যে,
পক্ষাঘাত আর
অপরিমেয় ক্ষতচিহ্ণগুলি।
আয়না চেনায় না মানুষ!
তাই তাকে ঘৃণাই করি…

ঝরে পরা বিষের ছোঁয়ায়,
নীলচে হয়ে গেছে
বিকেলের সোনালী নরম ঘাস…
আর কোনদিন মিলবে না তা জেনেও একটি হুইল চেয়ারের
অপ্রতুল বিলাসিতায়,
ওরা এখন কেবলই সাতটি ঘোড়ায় টানা
রথের অপেক্ষায় দন্ডায়মান।

আঁখরে আঁখরে অসম যুদ্ধ
আর পাতা ঝরার হিসেব নিকেশ,
বন্ধু ‘র নয়…
বড় বন্ধুর এই পথ!!

 

একটি অন্যরকম বন্ধুত্ব দিবসের উদ্দেশে

প্রবহমান এই জীবন নদীতে
না চাইতেও অনেক বাঁক আসে…
নির্ধারিত সময়ের পরে
অথবা অনেক আগেই
পলি জমাট বাঁধে ,
হয়ে যায় গতিপথ বদল!

সম্পর্কের ধরনধারন আর
মুখের আদলগুলোও
কেমন যেন উল্টে পাল্টে যায়!
এক্কেবারে ভোল বদল করে
আশ্রয় নেয় বিমূর্ত কোনো
এক ছায়ার পরিত্যক্ত নীরব পার্কিং জোনে…

প্রিয় মানুষকে ছেড়ে
না যাওয়ার প্রতিশ্রুতিরা,
এখন হয়তো কোনো অজানা
জ্যামিতিক উপপাদ্য আর সম্পাদ্যের
কাঁটা-কম্পাসে তির্যকভাবে আটকে আছে…

অচেনা অশ্লীলতার দায়ে
জীবন-মৃত্যু, বৈধ-অবৈধর
জটিল ভগ্নাংশ, দশমিক আর বর্গমূলের
চুল চেরা গাণিতিক বিশ্লেষণে
ছিঁড়ে গেছে
স্বীকারোক্তির আস্থা, বিশ্বাস!

হোয়াট্স অ্যাপ, মেসেঞ্জার, ফেস-বুক
কিম্বা হ্যাঙ আউট্স -এর
রঙীন মায়াজালে
বন্ধুতা এখন সুলভেই পাওয়া যায়…

ছকে বাঁধা পলিগ্যামি,
অনেকটা ঠিক অরিগ্যামির মতো…
দায়হীন বিকিকিনি,
একটা নিলে আরেকটা
ফ্রী ও পাওয়া যায় বোধ হয়…!

তবু উষ্ণ দুপুর,
ফুরিয়ে আসা হিমেল বিকেল,
ফেলে আসা রংরুটে
দুর্বার গতিতে ছুটে চলা বাস
আর বই মেলার ধুলোয়
এখনো লেগে আছে কত
শব্দহীন গহীন স্পর্শ।

পুরানো বই, রঙ পেন্সিল,
খুঁজে পাওয়া
পৃথিবীর ছবি আঁকা
লাল নীল পেন,
স্মৃতিচিহ্ণ একেঁ রাখে
এক, দুই, তিন গুণে গুণে।

চিলেকোঠা, ঝালমুড়ি
সার ধরে বেয়ে ওঠা
ভাঙা চোরা জঙ ধরা সিঁড়ি,
নীলচে সুতোয় মোড়া রাখী
এসবেই বেঁচে আছে বন্ধুরা
হারিয়ে যাওয়া কোনো খামে
হলদে অসুখে, বেনামে।

“অত্যাগসহন বন্ধু” এখন
ফুরিয়ে যাওয়া সময়ের একলা এপিটাফ
অথবা নিথর মেঘেদের এলিজি হয়ে
কফিনবন্দী…

তবু গুটি গুটি পায়ে
হৃদয়ের খুব কাছে এসে
দীর্ঘশ্বাসেরা জানিয়ে দিয়ে যায়,
“শুভ বন্ধুত্ব দিবস”
নিরুদ্দিষ্ট ও মৃত বন্ধুতার উদ্দেশে
প্রগাঢ় ভালোবেসে…
“চিরসখা হে, ছেড়ো না মোরে, ছেড়ো না”।।

রাখীবৃতা বিশ্বাস, পিএইচডি। কবি ও অধ্যাপক। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতায়। লেখাপড়া করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ্ বিদ্যা এবং শিক্ষাতত্ত্ব উভয় বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং পরবর্তীকালে এডুকেশনাল সাইকোলজি বিষয় নিয়ে করেছেন গবেষণা। অধ্যাপনা করছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল এডুকেশন সার্ভিসে। পেশাগত কাজের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..