প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
ভোর হতেই বারান্দায় পাখীর কিচির মিচির শোনা যায়। এখানে এলেই পাখীদের গল্প হতো তার সঙ্গে। একটা বাটিতে পাখীদের জন্য সকালের খাবার রাখা আছে। কিন্তু পাখীদের কাছে ক্ষুধার চেয়ে অনেক বড় সেই মানুষটির ভালোবাসা। তার অনুপস্থিতিতে পাখীরা উতকন্ঠায় ডানা ঝাপটায়। তারস্বরে চেঁচায়।
ভদ্রলোকের স্ত্রী ভাবেন হয়তো খাবার ফুরিয়ে গেছে বলেই চেঁচাচ্ছে তারা। আরেকটা বাটিতে করে খাবার এনে পুরো বারান্দায় ছড়িয়ে দেন। কিন্তু পাখীরা তাতে ঠোঁট দেয়না। তারা ভদ্রলোকের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ তার কাছে এসে কিচির মিচির করে।
ভদ্রলোকের স্ত্রী পাখীদের বলেন, তোমাদের বন্ধু এখন জেলে। তোমাদের মতো ওর ছাত্রদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ছিলো তার। তাই ছাত্রদের আন্দোলনে বন্ধু হিসেবে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো সে। সেটা সহ্য হয়নি ঈগল পাখীদের। ঈগল পাখীরা ছাত্রদের মধ্যে যে বাচ্চা-ঈগল রয়েছে তাদের লেলিয়ে দিয়ে মামলা করিয়ে জেলে পাঠিয়েছে তোমাদের বন্ধুকে।
পাখীরা অস্থির হয়ে ওঠে। একটা পাখী এসে ভদ্রলোকের স্ত্রীর পায়ের কাছে বসে। উনি আবার বলেন, এই যে তোমাদের মতো নিরীহ যে ছাত্ররা হলে থাকে; তাদের নামে মাত্র খেতে দেয় ঈগলেরা। ডালের গামলায় ডাল খুঁজে পাওয়া যায় না। থাকে কেবল পানি। তোমাদের বন্ধু সেই “ডাল নামের পানির গামলা”র ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এই হৃদয়হীনতার প্রতিবাদ করেছিলো। অমনি ঈগলদের ঈগল-অনুভূতিতে লেগে যায়। একটা খুনের মামলার “আসামি ঈগল” তার ঘনিষ্ট “বাচ্চা ঈগল” ছাত্রদের দিয়ে মামলা করায়; ক্যাম্পাসে তোমাদের বন্ধুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা বলেন, ভাবী আপনের মাথা খারাপ হইছে মনে হয়। দীনের পথে আসেন। তাবিজ-কবজ লন। বালা মুছিবত কাইটা যাইবো। একদিন গিয়া হুজুরের দোয়া নিয়া আসেন। হুজুরের কইলাম সাত-আসমানের ওপরে যোগাযোগ। উনি ইনফ্লুয়েঞ্জা না কী জানি কয়! আমগো ভিসি সাবও তার কাছ থিকা পা ধইরা দোয়া নিয়া আসছে।
ভদ্রলোকের স্ত্রী বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা না ইনফ্লুয়েনশিয়াল। মানে প্রভাবশালী।
বারান্দার সামনে দাঁড়ানো মহিলা বলেন, ঐ হইলো। বুঝাইতে পারছি কীনা ভাবি!
এমন সময় এক সেক্যুলার বড় ভাইয়ের ফোন আসে ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছে। উনি বুঝিয়ে বলেন, এতো মন খারাপ কোরোনা। আমরা তো চেষ্টা করছি উপর মহলে। আমরা জানিয়েছি, সেক্যুলারিজম নিয়ে ও যে বিস্তর গবেষণা করেছে। কিন্তু বোঝোই তো। এখন সেক্যুলারিজম মানে হচ্ছে, সহমত ভাই। ভিন্নমত প্রকাশ করলেই সে আর সেক্যুলার নয়। তোমার হাজব্যান্ডকে বোঝাও সহমত দর্শনে ভরসা রাখতে।
শিক্ষক দিবসের বৈঠকে কারাগারে থাকা শিক্ষকের প্রসঙ্গটি আসে। উপাচার্য বলেন, আপনারা এই বিষয়ে এতো কথা বলেন; অথচ এই যে আমি “নিপীড়িত”দের নিয়ে সমাজ গবেষণা করে পুষ্পমঞ্জুরী কমিশনের স্বর্ণ পদক পেলাম; কই আপনারা তো কেউ অভিনন্দন জানালেন না।
অভিনন্দন-এর মাতম শুরু হয়। একজন এসে উপাচার্যের হস্তমুবারক চুম্বন করে বলে, এই হাতে “হুজুরে”-র পবিত্র স্পর্শ আছে। আমিও একটু সওয়াব কামাইয়া নিই।
উপাচার্য হাসেন, এইভাবে হয়না মিয়ারা; ডাইরেক্ট গিয়া কদম মুবারক স্পর্শ কইরা দোয়া নিয়া আসার মাজেজা তোমরা বুঝবা ক্যামনে!
একজন শিক্ষক বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত কৃতী ছাত্র-শিক্ষক জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে কত উতকর্ষের কাজ করেছেন; অথচ আজ আমরা জ্ঞানকে কারাগারে নিক্ষেপে চুপচাপ-প্রতিবাদহীন। আমরাও কী দায়ী নই আমাদের নীরবতার সম্মতির অপরাধে।
উপাচার্য ও তদীয় পারিষদেরা বিব্রত বোধ করেন। এই বিব্রত বোধের হাওয়া গিয়ে আদালতে বাড়ি খায়। শিক্ষকের জামিন আবেদন শুনতে বিব্রত বোধ করেন মাননীয় আদালত। বিচারক-পুলিশের মন পুলকে থৈ থৈ করে। স্বগতোক্তির মত করে এক পুলিশ বলে, এই রকম লোকগুলিরে জেলে পচাইয়া মারতে পারলেই সমাজে “সুশীলতা”র বাতিক কইমা আসবে।
ছাত্ররা কেউ কেউ কারারুদ্ধ শিক্ষকের ক্লাস মিস করে। নিজেদের মধ্যে আলাপ করে, স্যারের ক্লাস মানেই নতুন কিছু জানার সুযোগ। ক্লাসের সময়টা কোনদিক দিয়ে পার হয়ে যায় বুঝতে পারিনা। তারে জেলে পাঠাইয়া বোরিং টিচার ক্লাসে আইসা কীসব বলে; আর নিজেই হেসে কুটি কুটি হয়। আবার ছাত্রদের ঘুম ঠেলে এলে ধমক দেয়, দেশের অর্জনের গল্পে হাততালি দেওনা কেন! তোমাগো দেখি দেশপ্রেম নাই!
কারাগারের বারান্দায় পাখীদের কিচির মিচির শুনে অবরুদ্ধ শিক্ষক গরাদের কাছে এসে দাঁড়ান। পাখীরা উড়ে এসে ঢুকে পড়ে কারাগারে। একটু স্নেহের জন্য গলা বাড়িয়ে দেয়। শিক্ষক পাখীদের ডানা স্পর্শ করে হেসে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা ভালো আছো তো!
পাখীরা অস্থিরভাবে ডানা ঝাপটায়। পাখীদের কন্ঠে সুর নেই; হয়তো কান্না আছে। শিক্ষক তার নিজের খাবারটুকু পাখীদের দেন। পাখীরা খায়না। ঘাড় গুঁজ করে বসে থাকে। কেউ খাবারে ঠোঁট দেয় না।
একজন পুলিশ কনস্টেবল বলেন, স্যার অরা তো আর মানুষের মতো অকৃতজ্ঞ জীব না। অরা ভালোবাসার প্রতিদানে কৃতজ্ঞ হইতে জানে। আমি তো কয়দিন ধইরা দেখতেছি। এরা কিছু খায় না। খালি আপনারে একনজর দেখার জন্য ঘুর ঘুর করে। অগো দেইখা আমার খুব মায়া হয়।
পুলিশ কনস্টেবল অশ্রু লুকায়। অশ্রু লুকায় অবরুদ্ধ শিক্ষক। দুজনে কান পেতে শোনে পাখীদের কান্না।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..