পাগলার হুক্কা

আলমগীর জয়
ছোটগল্প
Bengali
পাগলার হুক্কা

জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রচন্ড খরা। যেমন গরম-তেমনি রোদ। গাছের পাতা নড়চড়ের খবর নাই। পল্লী গাঁ। শহর থেকে কেউ আসলে বা ঘুরে আসলে; দু’চারজন বিদ্যুতের গল্প শুনে। এমনও গরমে, বাহির বাড়িতে, প্রচন্ড রোদে, গরম মাটিতে, এক চিলতে পাটির উপর, বালিশ ছাড়া ঘুমিয়ে খোকন [ছদ্মনাম]। খোকন পাগলা বলেই গাঁয়ের লোক জানে। ডাকলাম চাচা উঠ, ছায়ায় যেয়ে ঘুমাও। কোন সাড়া শব্দ নাই।

মাথা পুড়ে যাচ্ছে কড়া রোদে, ঘেমে যাচ্ছি গরমে। কে কাকে ডাকে…..। এগুলাম সামনের রাস্তায়; দেখি ‘আলভোলা’। দেখে হকচকিয়ে উঠল; কিছু একটা আড়ালের চেষ্টা আচরনে। ঠাহরে বুঝলাম রহস্য আছে। সোনালী বিড়ি – ম্যাচ যোগে সূত্রের প্রয়োগ। মুখ খুললো; কইলো ‘ফাঁকে’ ‘নও’। কথা আছে।

‘পাগলারে গাজা খাওয়াইছে, দুর্বল শরীর, দ্যেহনা পইড়্যে আছে মরার মতন।’

-ক্যামাই কি?

‘কইয়ো না, গ্রামের হগলি এত ভাল কয়, তার ছাওয়ালডা যে এ্যামাই গাঁজাখোর অয়ে গেল …….। ওই গাঁজাখোরডা আগে থ্যে বিড়ির মদ্দি গাঁজা ভইরা রাখছিল। পাগলার সামনে এ্যাক প্যাগেট বিড়ি বাইর করলি পাগলা কয় এত বিড়ি দ্যে কি করস…. তহন গাঁজাখোর কইছে খাব্যে নাকি এ্যাটা… পাগলা কয় দে। তহন পাগলারে গাঁজা ভরাডা দিছে। পাগলা ঠিক পায় নাই, খাইয়্যে পাগলা ঘুমাইছে।’

-পাগলার সাথে গাঁজাখোরের কিসের ‘খটকা’?

‘পাগলা ছোট বেলা থ্যে ‘হুক্কা’ খায়। বাপ-দাদা থ্যে শিখছে। হুক্কা ছাড়াও পাগলা রাস্তা দিয়ে যখন হেটে যায়, রাস্তায় পড়ে থাকা বিড়ি সিগারেটের ‘ছুগা’ কুড়িয়ে সেটাও আগুন দিয়ে খায়।  এসব খেয়ে শরীরের ক্ষতি হয় কিনা জানি না।  তবে কফ কাশি আছে-এটা পরিচিতজনরা জানে।’

‘নল লাগানো’ হুক্কা সহজে যে কেউ খেতে পারলেও ‘নারকেলের খোল’ দিয়ে বানানো কালো কুচকুচে রঙ্গের এই হুক্কা সহজে কেউ খেতে পারে না। এতে কোন নল নাই, সরাসরি খোলে মুখ লাগিয়ে খেতে হয়। নতুন কেউ খেতে গেলে হুক্কার পানিই শুধু পেটে ঢুকে; ধোয়া আর ঠোটে উঠে না। বিশেষ করে এ প্রজন্মের।’

গাঁজাখোরটা একদিন পাগলার কাছে হুক্কা খেতে চায়। পাগলাও দেয়। গাঁজাখোর মুখ লাগায় হুক্কোর নাগকেলের খোলের ফুটোয়। টান দেয়। ‍কিন্তু  গরগর শব্দও হয় না, ধোয়াও আসে না। এবার আবার ভাল করে মুখ লাগিয়ে জোরে টান দেয়। টান দিলে ধোয়া তো আসেই নি বরং হুক্কার পানিসহ আরো কি যেন একেবারে পেটে চলে যায়, আর কিছু গালের ভিতরে রয়ে যায়। গাঁজাখোর অনুভব করে গালের ভিতর পানিই শুধু নয় আরো কিছু আছে, থু করে পানি বাইরে ফেলে, দেখে একদলা কফ পানির সাথে। যে পানিটা গিলে ফেলেছে তার সাথে কফও ছিল, নিশ্চিত ধারণা করে বমি আসে গাঁজাখোরের। ওয়াক করে; হঠাৎ একহাতে থাকা হুক্কার মুখ লাগানোর ফুটোতে তাকিয়ে দেখে কিছু কফ ফুটোর বাইরে আর কিছু অংশ ভিতরে লেগে আছে।’

মূলতঃ খোকন পাগলা যখন হুক্কা খেত, কাশি-কফ আসলে হেক্কাতে ঠোট লাগানো অবস্থায়ই কাশি দিত, তখন মুখের কফ হুক্কোর খোলের ভিতরে যেয়ে জমা হত। এভাবে কয়েকদিনের কফ ওখানে জমা ছিল, যেটা গাঁজাখোর হুক্কাতে টান দিলে তার পেটে-মুখে চলে যায়।

এরপরে বেশ কয়েকদিন পথে ঘাটে ওয়াক-ওয়াক করতে দেখা গেছে গাঁজাখোরকে। অতঃপর পাগলাকে গাঁজা খাওয়ানোর পরিকল্পনা করে।

কখনো কখনো এই ঘটনাটি মনে পড়ে

আর মনের অজান্তেই হুক্কোর প্রতি একটা ঘেন্না ঘেন্না ভাব চলে আসে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ