প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
প্রতিটি যাত্রাই শেষ অব্দি শরীরের দিকে যাওয়া। যেহেতু আমাদের শরীরই আমরা।
কারওয়ান বাজার পার হতে হতে ভাবি। গাড়ির দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তিনজন। তৃতীয় লিঙ্গ।
– ওই সুন্দরী টাকা দে।
উত্তর দিই না। খুব বিরক্তি নিয়ে বই খুলে মেলে ধরি।
– ওমা সুন্দরী এত পড়ে কী করবি?
সহ্য করাই কঠিন। তার উপরে পিএমএস এর ধকলে আছি। আজ নিয়ে পাঁচদিন।
– শোনো তোমার সাথে দেখা করার একদম সময় নাই। ইচ্ছা নাই। কিছুই নাই। তোমাকে দেখলেই রাগ হচ্ছে। তোমার চুল দাড়ি দাঁত চোখ নাক- উফ- তোমার নাকটা এত বড় কেন?
রাজীব দুঃখিত মুখে চুপ করে থাকে।
হে ঈশ্বর তুমি এই মেয়েকে সব দিলা, শুধু ওই তেকোন হৃদয়খানা বাদে।
রোদ যেন চোখ খায়। উফ, ট্রাফিক পুলিশের পরনে কী ভারি পোশাক। দরদর করে ঘামছে। আইল্যান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে আছে তিনটা বাচ্চা। বয়স আট দশ হবে। দুইটা ছেলে, মেয়ে একটা। মেয়েটার হাতে চারপাঁচটা গোলাপ, শুকনো ঝিম ধরা। ছেলেগুলো একটা চিপসের প্যাকেট থেকে ভাগাভাগি করে খাচ্ছে।
চিরচির করে জ্বলছে চৈত্রমাস। কদিন বাদে পয়লা বৈশাখ। হে নুতন দেখা দিও বারবার। দেখা দিও দেখা দিও।
রাজীব কোথায়? ও যদি দেখে ফেলে আমাকে? ও যদি এই পথ দিয়েই যায়?
গাড়ির ভিতরে উসখুস করি। খুসখুস করে কাশি দেই। ড্রাইভারকে বলি, রফিক ভাই গান ছাড়ো।
‘…Yesterday all my troubles seemed so far away.
Now it looks as though they’re here to stay.
Oh, I believe in yesterday…’
তুমি আমাকে আর বিরক্ত কর না তো। যাও চলে যাও। মনে মনে যা বলি, ঠিক তার উল্টো কেন করি? ইহার নাম প্রেম?
প্রেম? প্রেম! চৈত্র মাসে প্রেম তুমি শকুনের ডানায় ফাল পাড়ো?
শকুনের ডানায়! আহা!
রফিক এসি অফ কর। বিরক্ত রফিক এসি অফ করে গ্লাস নামায়।
ফোসস! বারুদ জ্বলে ওঠে। ঠিক যেন একটা চৈত্রমাসের ফুলকি। আমি একখানা বিড়ি ধরাই।
বিড়ি তুমি কার?
মাধবীলতার।
– তোমার মাথা খারাপ
– কেন?
– এই ভরদুপুরে কেউ আসে?
– একবার ভেবেছিলাম আসবো না। কিন্তু অস্থিরতাটা এমন পর্যায়ে পৌছে গেল, মনে হল আমি যদি না আসি তবে পৃথিবীতে একটা যুদ্ধ বেধে যাবে ঠিক।
– এখনো একটা যুদ্ধই তো বাধাবে তুমি।
পরের দেড় ঘণ্টা যুদ্ধই হল মোটামুটি।
ভালবাসা ভালবাসা যুদ্ধ।
– এখন কোথায় যাবে?
– ক্যাম্পাসে
– সেই বাউন্ডুলেটার সাথে দেখা করতে?
– বাউন্ডুলে চাকরি করছে
– দু’সপ্তা বাদে তুমি ওকে বিয়ে করবে?
– না , তোমাকে করব। করবে?
– আমি বিবাহিত
এই শহরে শকুন ওড়ে?
কৃষ্ণচূড়ায় লাল পথ। চন্দ্রিমার সামনে বসে জলে ছায়া দেখছিলাম। ওই ওই ওই ছায়াটা আমার। পুরো ছায়ার মালিকানা আমার। ছাইরঙ কামিজ আর স্কাইব্লু জিনস। হাতে লাল রুলি। নাকে একখানা গোলাপি পাথরবান্ধা নোলক।
দিপীকাকে কেউ পাবে না। তারা ওই ছাইরঙ ছায়াটা পাবে। দিপীকা হেঁটে চলে যাবে রোদ বরাবর। ফোস করে ফের বারুদ জ্বলে উঠবে। পাশের লোকটা বেদম তাকাবে।
– বেয়াদপ মাইয়া
– মাগী
– ছিনাল
– বাড়িত বসে খা
– গাঞ্জা টানা বেটি
দিপীকাকে কেউ পায় না। রোদ বাড়ে। তুমি এত ভাল চুমু খাও? ক্যামনে খাও? যেন চুমুটাই দীপিকা।
আমি ভাবতাম চুমু মানে ঠোঁট কামড়ে ধরা। বুক আঁকড়ে ধরা। চুমু মানে কামড়াতে কামড়াতে রক্ত শুষে নেয়া।
এ ক্যামন চুমু?
এ ক্যামন চুমু?
রোদ রোদ রোদ রোদ।
দুপুর হচ্ছে।
দুপুর বাড়ছে।
– রফিক ভাই, তুমি কই?
– গাড়িত বইসা আছি। আমু?
– আমি তো চলে এসেছি।
– আপনে কই আফা?
রফিক মিয়া আসছে আসুক। আপাতত দীপিকা একটু হাঁটবে। শরীরে তোমার ঘাম প্রেম লালা জমে আছে। ওই লেকের জলে নেমে পড়া যায় না?
– আজ আমাদের দেখা হতে পারে না?
– না রাজীব
– তুমি পাইসোটা কি? তুমি কই?
– আমি ইউনিভার্সিটিতে
– মোটেই না। আমি সবখানে খুঁজসি
আজ তোমার সিগারেটের একটু ছ্যাঁক লেগেছে আমার উরুতে। ঘুম ঘুম কাটাতে পরস্পরকে জড়িয়ে আমরা ধুমপান করছিলাম। তখন। তারপর একখানা বরফ। সেই বরফ থেকে আবার শুরু। পথিবী আবার বরফযুগে ফিরে যাচ্ছিল। আমিই হুট করে নেমে এসেছি পনেরোতলা থেকে। বাইরে চৈত্র মাস। ওই তো জারুল।
রাজীবের খালা পাপিয়া আসবে বিকেলে। শাড়ির দোকানের নাম শালিমার। শালিমার থেকে একখানা ম্যাজেন্টা লেহেঙ্গা কেনা হচ্ছে। একখানা সীতাহার কাল মা বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো চাচীকে। বেশ তো!
এখানে বেশ একখানা বেঞ্চ পেতেছে। বসা যায়? যায় বোধহয়। ফের ফুরফুর হাওয়া দিচ্ছে তো?
আর কখনো দেখাই হবে না। ঠিক যেরকম আজ সকালেও আমি জানতাম। গতকাল বিকেলে। মাঝরাতে। তারপর পনেরোতলার উপড়ে কে উঠে গেল ফুরফুর? পাখির মত ডানা মেলে? কে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে চড়ে বসলো বুকে? কামড়ে ধরলো ঠোঁট? আমি?
দীপিকা, তুমি এত খারাপ? এত প্রতারক? এত নীচ? এত হীন? এত তোমার খিদে?
মাথার উপড়ে যে পাখি উড়ছে তার নাম কি? শকুন নাকি? কী পচা কণ্ঠ এর! বাজখাই! এই কি বাজ? এই শহরে বাজ আছে?
দীপিকা তুমি এত খারাপ?
তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নবীন জলপাইয়ের মত
তাজা হয়ে ওঠে আমার শরীর
বিষাদে শুদ্ধ হয়ে যায় হাত পা মুখ বুক
পিঠের তিল, উরুসন্ধির গোপন বিহঙ্গ
উড়ু উড়ু…
আজকের পর আর কোনদিন দেখা হবে না।
বেশ
বেশ
বেশ
বেশ
আকাশ কি নীল! বাতাস কি ফুরফুরে!
এই ঘরটা আমার। এই শরীরটা আমার। সেই ছায়াটাও সঙ্গে এসেছে। সেই লেকের পাড় থেকে, ছাই রঙ… দীপিকা এখন ঘুমাবে। শালিমারে আজ আর যাওয়া হবে না। সীতাহার আর ঝুরা চুড়ি ডজন খানেক নিয়ে আম্মা বেরুলো, পালিশ হবে।
ফ্যানটা ঘুরছে। ঘটর ঘটর শব্দ বেরুচ্ছে। দু’সপ্তা মানে চৌদ্দ দিন। সাত দুগুনে চৌদ্দ।
আমি আর রাজীব এক বিছানায় ঘুমোবো। স্বামী স্ত্রী এক বিছানায় ঘুমায়। ঘুমাবার আগে ঠোঁট কামড়ে ধরা চুমু হবে। বেশ বেশ।
এই ঘরটা আমার। আমি একে ছেড়ে যাচ্ছি। ছেড়ে কই যাচ্ছি? রাজিবের ঘরে? রাজিব তুমি কে? প্রেমিক নাকি? প্রেমিক কাকে বলে? প্রেম কারে কয়? প্রতিশ্রুতিকে?
ফোস করে বারুদ জ্বলে ওঠে। ভুসভুসে ধোয়ায় ঘর গুমোট হয়।
একদিন একখানা লেকের ধারে
গোলাপি পাতার ছাউনির নিচে
তুমি আমি
আমাদের চোখ বরাবর নরম আলো
আর কী কামুক আমি
ধবধবে দিনের প্রকাশ্যে
তোমারে
সর্বাঙ্গে স্পর্শ করে
বারবার ঘাই মেরে উঠি
আহা কি দীর্ঘ তোমার দেহ, কী সুঠাম!
হে আমার গোপন পাপ
তুমি আরো পাপ হয়ে ওঠো
আমার শরীরে!
– শরীর শরীর! এতো শরীর কেন চাও?
– শরীর আছে বলে। শরীর তো আছেই। তোমার শরীরের কারুকার্য স্পর্শ করতে চাই। ভাবনায় রাখতে চাই।
– মেয়েরা এমন করে? এসব কী বল?
বিকেল হয়ে এলো।
– রাজিব তুমি কাল এসো। সংসারের টুকিটাকি খুঁটিনাটি কিনে নেব। শুরুতেই যেসব লাগে আর কি!
আর দেখা হবে না। আর দেখা হবে না। তোমার ভিতরে একটা বুনো গন্ধ আছে। ঘন মেদুর পাতার মত ঝাঁঝালো- অস্পষ্ট, কখনো তীব্র। আমার ভিতরে একখানা ঝিমঝরা ঔষধি লতার ঝাঁঝ আছে। আমরা পরস্পরকে তাই খুঁজেছিলাম? প্রকৃতি এভাবেই জোর খুঁজে নেয়? সেইসব জোর মিলিয়ে যুদ্ধ হয়? শান্তি নামে? নতুন চারাগাছ জন্মায়? সফল বৃক্ষ? সেই সব বৃক্ষের বীজ বুকে নিয়ে আমাদের অস্থির ছুটোছুটির অন্য নাম কি মোহ? পাপ?
ফোস করে বারুদ জ্বলে ওঠে। বুকের ভিতরে ধুকধুক শব্দে পাপ ডাকে।
আমাদের ফের দেখা হয়ে যাবে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..