পাবলো নেরুদার ‘দ্যা বুক অব কোয়েশ্চেনস’-এর নির্বাচিত অনুবাদ

কৌশিক মিত্র
অনুবাদ, কবিতা, শিল্প ও সাহিত্য
Bengali
পাবলো নেরুদার ‘দ্যা বুক অব কোয়েশ্চেনস’-এর নির্বাচিত অনুবাদ

১৯৭১ এর ২১শে অক্টোবর। লাতিন আমেরিকার তৃতীয় সাহিত্যিক হিসেবে আজীবন সাহিত্যকর্মের জন্য নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হলেন নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো (জন্ম-১২ই জুলাই,১৯০৪ এবং মৃত্যু-২৩শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩)। আমরা তাঁকে পাবলো নেরুদা নামে চিনি। যদিও এ তাঁর প্রিয় ছদ্মনাম, কিন্তু ১৯৪৬ সাল থেকে আইনত এ নামটিই ব্যবহার করতে থাকেন কবি। আজীবন সাম্যবাদের পূজারী নেরুদার কাছে এ বড় সুখের সময়। দেশে (চিলি) তখন গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট শাসন। রাষ্ট্রপতি পদে প্রিয় বন্ধু সালভাদর আলেন্দে। কিন্তু এ সুখের পর্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৭৩ এর ১১ই সেপ্টেম্বর চিলিতে সামরিক নেতা অগ্যস্তো পীনোশের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান, আলেন্দের হত্যা আর তার ঠিক বার দিন পরেই হাসপাতাল থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া কর্কটরোগাক্রান্ত নেরুদার করুণ মৃত্যু।

সেনাবাহিনীর হাতে তাঁর ইস্লা নেগ্রার বড় আদরের বাসভবনটির অবস্থা হয়েছিল আরও মর্মান্তিক। নেরুদার জীবন এবং সমগ্র সাহিত্য কর্ম যেহেতু এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়, তবুও বলতে হয় তাঁর আত্মজীবনী ‘অণুস্মৃতি’র এক বিস্তীর্ণ অংশ রচিত হয় জীবনের এই অধ্যায়ে যেখানে উঠে আসে সানতিয়াগোয় কাটানো তাঁর ঘটনা বহুল ছাত্রজীবন, রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন বুয়েনস এয়ার্সে কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার সঙ্গে বন্ধুত্ব,  ফ্যাসিস্টদের হাতে লোরকার মৃত্যু, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বীভৎসতা, একাধিকবার ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, চীন রাশিয়া, মেক্সিকো ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং লোকায়ত জীবন। বস্তুত, শেষের এ দুবছরে নেরুদা বারংবার ফিরে গেছেন ফেলে আসা জীবনে, ডুব দিয়েছেন ঘটনাবহুল অতীতে, সমগ্র সত্ত্বা উজাড় করে দিয়েছেন আত্ম অনুসন্ধানে, প্রকৃতির সঙ্গে স্বীয় আত্মার যে নিবিড় সম্পর্ক তাঁর গড়ে ওঠে (মনে রাখতে হবে তেমুকোয় কাটানো শৈশব, প্রথম যৌবনের পাঁচটি বছর রেঙ্গুন, সিংহল অথবা জাভায় দূতাবাসে চাকরিসূত্রে নিঃসঙ্গ প্রবাসজীবন কিম্বা প্রেসিডেন্ট গঞ্জালেস বিদালোর গ্রেপ্তারির আদেশ এড়াতে মধ্যবয়সে প্রিয় দেশ ছেড়ে গোপনে আন্দিজ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা প্রমুখ কারণে, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অচ্ছেদ্য বন্ধনের যে শিকড় তাঁর চেতনায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল) তার পুনর্বীক্ষণে, এবং এই পুনর্বীক্ষণেরই পরিণাম চুয়াত্তরটি কবিতা সম্বলিত ‘প্রশ্নের বই‘ বা ‘দ্যা বুক অব কোয়েশ্চেনস‘। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিচেতনার গভীরে অবস্থানকারী উৎকেন্দ্রিকতা অথবা সতঃত কাজ করে চলা অযৌক্তিকতা যা সত্য এবং শাশ্বত, যা এই পরিবর্তনশীল বস্তুজগৎকে অন্যভাবে দেখতে চায় কিম্বা সত্তার কাছে রাখতে চায় এতদসংক্রান্ত কিছু জ্বলন্ত প্রশ্ন, যদিও সাধারণভাবে সে প্রশ্নাবলীকে উড়িয়ে দেওয়া চলতে পারে হিমালয়সম উপেক্ষায় কিম্বা বালখিল্য বিবেচনায়, তবুও সে প্রশ্নের বীজ ছাড়িয়ে যায় স্মৃতি সত্তা ও ভবিষ্যতে। এখানেই ‘দ্যা বুক অব কোয়েশ্চেনস‘ এর কবিতাবলী পাঠকসত্তাকে বিমূঢ় করে দেয়। যারা নেরুদার ‘দ্যা হাইটস অব মাঞ্চুপিচু‘, ‘ক্যান্টো জেনারেল‘, ‘হান্ড্রেড লাভ সনেটস‘ বা ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েমস অ্যান্ড অ্যা সঙ অব ডিসপেয়ার‘ পড়েছেন তারা হয়ত এ কাব্যগ্রন্থে প্রেমিক বা বিপ্লবী নেরুদাকে পাবেন না, কিন্তু অচিরেই আবিষ্কার করবেন পিপাসিত মানবহৃদয়ের শাশ্বত প্রশ্নগুলিকে, যা দীর্ঘ অবহেলায় অবদমিত হয়ে থাকে। ‘দ্যা বুক অব কোয়েশ্চেনস‘ কাব্য সংকলনখানা নেরুদার মৃত্যুর পরবর্তী বছরে প্রকাশিত আর এর প্রথম ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ করেন উইলিয়াম ও’ডালি ১৯৯১ সালে। যতদূর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এ বইখানার বাঙলা অনুবাদ এখনো করা হয়নি।  নির্বাচিত কিছু কবিতার অনুবাদ পাঠক বন্ধুদের কাছে রাখা হল। বলে রাখা ভাল অনুবাদের ক্ষেত্রে মূলকে অবিকৃত রেখে ভাবানুবাদ করার চেষ্টাই করা হয়েছে এবং ইংরাজি অনুবাদটি থেকেই বাঙলা করা হয়েছে।

১) ৩য়

বলে দাও আমায়, গোলাপ কি নগ্ন নাকি সেই তার আভরণ?
বনস্পতি কেন গোপন করে রাখে তার শিকড়ের চারিয়ে যাওয়ার সৌকর্ষ
অপহৃত আটোমোবাইলের আর্তনাদ শুনেছে কি কেউ?
তুমুল ধারাপাতে স্নান করছে থেমে যাওয়া একটি ট্রেন, বল এর চেয়ে দুঃখের আর কি আছে?

২) ৬ষ্ঠ

রাত্রির উড্ডীয়মান উষ্ণীষে এত ছিদ্র কেন?
আগুনের পাশ দিয়ে বয়ে যাবার সময় ছাই কি যেন বলে যায়?
সুখী, আরও সুখী হয়ে ওঠার মুহুর্তেই মেঘ কেন অশ্রুবর্ষণ করে?
একই দিনে কতগুলি মধুকরের গুঞ্জন শুনতে পাওয়া যায়?

৩) ৭ম

শান্তি কি শুধুই পাখির কিচিরমিচির?
হায়না কি যুদ্ধঘোষণায় সক্ষম?
অধ্যাপক কেন মৃত্যুর ভূগোল পড়াতে থাকেন?
কি ঘটে সেই সোয়ালো পাখিদের, উড়ান যাদের বিলম্বিত আজ?
সত্যিই কি স্বচ্ছ অক্ষরের মত তারা চারিয়ে যায় আকাশের বুকে?

৪) ১৩তম

এটা কি সত্যি, লাস্যময়ী মকরের দেখা কেবল অষ্ট্রেলিয়াতেই মেলে?
কমলালেবু কেমন করে গাছের উপর আপতিত সূর্যরশ্মিকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়?
তিক্ত মুখগহ্বর থেকেই কি উদগত হয় বিষাক্ত দাঁত?
গভীর নিশীথে আমার দেশের উপর দিয়ে উড়ে যায় কৃষ্ণশকুন, এটা কি সত্যি?

৫) ১৮তম

আঙুর কি করে জেনে নেয় সংশ্লিষ্ট গুচ্ছের পার্টি লাইন কি?
কোনটে বেশী পরিশ্রমসাধ্য? বীজবপন নাকি শস্য আরোহণ?
নরকবিহীন জীবন বড় কষ্টের, আমরা কি পুননির্মাণ করে নিতে পারিনা?
জ্বলন্ত অঙ্গারময় পাত্রের উপর দুঃখী নিক্সনের নিতম্বগুলি একটু সুস্থির সাম্যে স্থাপনা করা চলেনা?
তারপর নর্থ আমেরিকান নাপামের নিভু আঁচে অল্প অল্প করে সেঁকে নেওয়া?

৬) ২১তম

যে মুহুর্তে আলোর জন্ম হল, ভেনেজুয়েলা! সেও কি পেয়েছিল ঐ আলোর স্পর্শ?
সমুদ্রের কেন্দ্র কোথায়? তা কেন উর্মিসংকুল নয়?
হারিয়ে যাওয়া নীলকান্ত বনকপোত ফিরে আসে উল্কার বেশে, এটাই কি সত্যি বলে ধরে নেব?
আমার বইখানাকে জিজ্ঞাসা করতে পারব ত, যা লিখেছি তা সত্যি কিনা?

৭) ২৫তম

শুধুমাত্র তুষারপাতের অপেক্ষাতেই কেন বনস্পতি নিরাভরণ হয়?
কে আমায় বলে দেবে কলকাতার অগণিত বিগ্রহের মধ্যে কোনজন প্রকৃত ঈশ্বর?
সমস্ত রেশম গুটিই কেন এত জীর্ণ জীবন কাটিয়ে যায়?
চেরির হৃদয়ের সুমিষ্টতা এত কঠোর কেন?
সে মৃত্যুর সাধনায় লীন অথবা গেয়ে যায় জীবনের গান! এমত কারণে?

৮) ৩১তম

কে আমায় বলে দেবে এই পৃথিবীতে আমার অবতীর্ণ হওয়ার কারণ?
স্থবিরতা ত্যাগ করে কেন আমাকে হতে হবে সঞ্চরমান?
কেন আমাকে স্থির উপবেশন থেকে বঞ্চিত হতে হবে?
চাকা ছাড়াই আমি গড়াব কেন?
ডানা বা পালক কিছুই ত আমার নেই! তাহলে কেন আমি উড়ব?
কেন আমাকে অবলম্বন করতে হবে মাধুকরী, যখন আমার অস্থি গুলি থেকে যাবে চিলিতে?

৯) ৩২তম

পাবলো নেরুদা নামে অভিহিত হওয়ার মত হাস্যকর ব্যাপার আর কি আছে?
আছে কি কোন মেঘ সংগ্রাহক কলম্বিয়ার আকাশে?
আচ্ছা বলুন ত, লন্ডনেই কেন ছাতাদের সম্মেলন ঘটে?
সেবার রাণীর রক্তের রঙ কি আমারেত্তোরর সঙ্গে তুলনীয়?
বঁদলেয়ার যখন রোরুদ্যমান হতেন, তাঁর সে অশ্রু কি ছিল কৃষ্ণবর্ণের?

১০) ৩৫তম

আমাদের জীবন কি দুটি অসার নির্মলতার মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনা?
অথবা সে কি প্রকাশিত হবে দুটি ঘোর তমিস্রাবৃত ত্রিভুজের মধ্যবর্তী নির্মলতার চিহ্ন হিসেবে?
জীবন হয়ে উঠবে কোন মাছ, যা মুহুর্তে কপোত হয়ে ডানা মিলবে আকাশে?
না ঘটা কোন ঘটনা অথবা বিপজ্জনক কোন বস্তু কি নির্মাণ করবে অনাগত মৃত্যুর?

১১) ৩৯তম

সমুদ্রের অট্টহাসির মধ্যে আপনি কি আঘ্রাণ পান না অনাগত বিপদের?
আফিমের রক্তাভ রেশমে আপনি কোন হুমকি প্রত্যক্ষ করেন না?
আপেলফুলগুলির মৃত্যু হয় আপেলের জন্মের মধ্যে দিয়েই, এ দৃশ্য কি আপনার চোখ এড়িয়ে যায়?
ঘিরে থাকা বিস্মৃতির অট্টহাসির মধ্যে আপনি কি রোরুদ্যমান হন না?

১২) ৪০তম

একটি জরাজীর্ণ শকুনি মিশন শেষ করার পর কার কাছে দাখিল করে প্রতিবেদন?
একটি নিসঙ্গ জাহাজের বিষণ্বতা!কি ভাবে আখ্যায়িত করা যাবে তাকে?
কপোত যদি কখনো গাইতে শেখে গান! আহা! কি ঘটবে তার নীড়ে?
মক্ষিকা যদি সক্ষম হয় মধু উৎপাদনে, তারা কি হটিয়ে দেবে মধুকরকে?

১৩) ৪১তম

সমবেদনা পাবার অধিকারী হয়ে উঠেছে যে গণ্ডার, বল আর কতক্ষণ সে বেঁচে থাকবে?
বসন্তের কিশলয়ের কাছে নূতন আর কি আছে?
প্রখর শীতের মধ্যে পাতারা কি শিকড়ের কাছে শিখে নেয় লুকিয়ে থাকার প্রকৌশল?
আকাশের সঙ্গে আলাপচারিতা চালানোর পদ্ধতি কি বনস্পতি রপ্ত করে মৃত্তিকার কাছে?

১৪) ৪৪তম

আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশব! বলে দাও সে কি আমার হৃদয়ের শিকড়ে নাকি লুপ্ত?
সে কি জানে আমরা পরস্পর কখনো ভালবাসিনি?
বেড়ে ওঠার জন্য এত যে সময়ের ব্যয় সে কি শুধুই বিচ্ছেদের জন্য?
কেন আমরা একসঙ্গে মরে যাইনা যখন আমার শৈশব টুকু নিঃশেষিত?
কেন আমার কঙ্কাল সর্বদা খুঁচিয়ে চলে একথা নিশ্চিত করতে, আমার আত্মা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে কিনা?

১৫) ৪৫তম

গভীর অরণ্যের সোনালি হলুদ কি প্রজ্জ্বল আজও, বিগত বছরগুলির মতই?
সমুদ্রকপোতের কৃষ্ণউড়ান কি পুনরাবৃত্ত হয়?
মহাকাশ যেখানে বিলীন হয়, মৃত্যু কি সেখানে অপেক্ষারত নাকি অসীমের আহ্বান তা?
একটি বন্ধনীর দুদিকে অবস্থানরত স্মৃতি এবং দুঃখের সারি, কোনটি বেশি ভারাক্রান্ত?

১৬) ৪৬তম

মধ্য হেমন্তে শুনেছেন কি হলুদ বিস্ফোরণের শব্দ?
কি সেই কারণ অথবা অবিচার যা হ্লাদিনী বর্ষা ধুইয়ে নিয়ে যায়?
কোন সে বিহঙ্গের দল নির্দিষ্ট করে দেয় অনাগত পথের রূপরেখা যখন প্রবজনের ঢল নামে?
চোখধাঁধানো প্রতিসাম্যে কিভাবে ঝুলে থাকে একটি ফুলঝুরি (হামিংবাড)?

১৭) ৫০তম

নারী শরীর এবং প্রসাবের গন্ধযুক্ত শহরগুলিকে কেন আমি ঘৃণা করতে থাকি?
নগর! সে কি শুধুই কম্পায়মান জাজিমের বৃহত্তম জলাশয়?
বাতাসের মহাসাগর! তোমার বুকে নেই কি তালগাছে ঘেরা কোন মহাদ্বীপ?
কেন আমাকে ফিরে যেতে হয় সেই অপরিসীম ঔদাসীন্যের বাড়বে?

১৮) ৫৪তম

সত্যিসত্যিই হাঁসেরা চাঁদে পাকাপাকিভাবে বসতি গড়তে গিয়েছে?
কার্ণিশ থেকে ঝরে পড়া অশ্রু দিয়ে তৈরী বসন্ত! তারা নিয়ে যেতে পারবে ত?
হেমন্তের সেই উড়ান চলে যাবে শশীগ্রাসে?
আকাশের বুক খুঁটে তারা কি বিসমাথের খোঁজ করবে?
ছাই ঢাকা বারান্দায় তারা কি আবার ফিরে আসবে?

১৯) ৬০তম

বিস্মৃতির মায়ামঘরে আমার গুরুত্ব কতখানি?
ভবিষ্যতের গতিবিধির সত্যিকার চিত্র কোনখানা?
সোনালি শস্যের স্তূপের মধ্যেই কি পাওয়া যাবে শস্যের বীজ?
এই কি সেই পীড়িত হৃদয় যা কেবল পিচের প্রতিনিধিত্ব করে?

২০) ৬১তম

পারদের জীবন্ত ফোঁটা কি চিরকালের জন্যই অধোঃগামী?
আমার বিষণ্ন কবিতাবলী কি শনাক্ত করবে আমার অশ্রুকে?
থেকে যাবে কি সেই আঘ্রাণ কিম্বা যন্ত্রণা, যখন আমি শেষ হয়ে যাব
কিম্বা বিলীন হব নিদ্রায়?

২১) ৬২তম

মৃত্যুর করাল ছায়ার সামনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের কি কোন অর্থ হয়?
লবণাক্ত মরুভূমিতে পুস্পোদগম! এও কি সম্ভব?
সেই যে ঘটনাবিহীন সমুদ্র,
সেখানে মিলবে কি মৃত্যুর পরিধান?
ধরে নেওয়া যাক, অস্থি ভস্মীভূত! অন্তিম ভস্মে বেঁচে থাকে কারা?

২২) ৬৭তম

হে শব্দাবলী!তোমরা কি আমায় ভালবাসতে পার?
দিতে পার আমায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ চুম্বন?
অভিধান কি কোন দূরবিস্তৃত সমাধিক্ষেত্র নাকি মধুভান্ডার?
কোন সে বাতায়ন যা দিয়ে প্রত্যক্ষ করব সমাধিস্থ মহাকাল?
অথবা বহুদূর থেকে দেখতে থাকব জীবন,যা কোনদিন আমার ছিল না?

২৩) ৬৮তম

ভালবাসার উদ্বেগ ঝরে পড়ে অবলুপ্ত উল্কার মাঝে?
জ্বালামুখ কোন প্রতিহিংসার চিহ্ন নাকি পৃথিবীর শাস্তি?
যে নদী সমুদ্রে মেশেইনি কখনো, কোন নক্ষত্রের সঙ্গে আলাপচারিতার মাঝে তার এগিয়ে যাওয়া?

২৪) ৭০তম

অন্ধতামিশ্রে বন্দী হিটলার ঠিক কোন নিকৃষ্টতম কার্য সম্পাদনে রত?
কোন বিশীর্ণ দেওয়ালে রঙ করে চলে সে?
মৃতদেহের অস্থি-চর্বি-মাংস পোড়ার গন্ধে ভরে ওঠে তার সর্বাঙ্গ?
পুড়ে যাওয়া শিশুদেহের ভস্মই কি তার আহার?
মৃত্যুর অনতিকাল পর থেকেই তার একমাত্র পানীয় কি নল দিয়ে টেনে নেওয়া রক্ত?
তার মুখমণ্ডলে হাতুড়ি দিয়ে গেঁথে দেওয়া হয় কি স্বর্ণখোদিত নিষ্কাশিত সেই দাঁতগুলি?

২৫) ৭৩তম

এই ধরিত্রীর বুকে কে অধিকতর পরিশ্রমী?
একটি মানুষ অথবা শস্য উৎপাদনকারী সূর্য?
কাকে বেশী ভালবাসে পৃথিবী?
ফার গাছ না আফিম?
কাকে সে বেশি পছন্দ করে?
অর্কিড না গম?
ফুলের এত প্রাচুর্য! আর গম? সে শুধুই সোনালী দুঃখ?
হেমন্তের ফিরে আশা বৈধ ত?
না এ কোন সঙ্গোপনে বিচরণকারী ঋতু?

কৌশিক মিত্র।   পেশা চাকরী। ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা এবং সেই সূত্রে লেখালিখি। আগ্রহের জায়গা ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পরীক্ষামূলক উপন্যাস, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ। লেখা প্রকাশিত হয়েছে আরেক রকম, মনন, বানভাসি, সপ্তডিঙা পত্রিকায়।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

তর্জমা

তর্জমা

তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..