প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
সাতবাড়িয়া শ্মশানঘাট থেকে পিদিম আদিবাসীর আত্মাটা হিসনার জল পান করেও যখন আর্তনাদ করে, তখন ভরা সন্ধ্যায় শুভারাণী আসে মৃত স্বামীর হবিষ্যির আতপচালের ভাত কয়টা জলে ভাসাতে। আহারে, জীবনে না হোক অন্তত মরণে একটু শান্তি পাক। শুদ্ধ বস্ত্র সরালে নতুন লাল ঢোকসাটা সন্ধ্যার আলোতেও জ্বলজ্বল করে। মেয়ে শিবারাণী দাঁড়িয়েছিল দূরে, এ সময় কথা বলা মহাপাতকের কাজ, তবে মায়ের ছায়া না মাড়িয়ে কাছেপিঠে দাঁড়াতে দোষ নাই, ভাসানো শেষ হলেই কথা বলা যাবে। শুভারাণী জলের গায়ে, শিবা জল থেকে দূরে, দূরেই সে আছে গত তিনদিন। আলগা একটা দোষ বহুদিনই শিবার পিছ নিয়ে আছে, তো নতুন ঘটনায় তেমন কেউ মায়া দেখায় না। বছর ধরে আলগা দোষ থাকলে কে আর মায়া দেখায়! না দেখাক, জলের ব্যাপারটা সে মিটিয়ে ফেলবে কাল-পরশু যে কোনো দিন, একশ’ চিনি আর পোয়াটাক দুধ হিসনার জলে ফেলে দিলেই মিটে যাবে, তারপর জলে চানে নামবে মনস্থির- নড়চড় হবার লাই গো, জ্বউরা শরীলে এ জলটুকু লিয়েই তো বেঁইচে রইয়েছি!
মা শুভারাণী আলগোছে জলে ভাসায় আতপ সিদ্ধ আর শিবা কথা বলে দূরে তাকিয়ে একা একা – বাপুই মরলো, আমার শরীল খারাপ, প্রথম দিন হবিষ্যি কইরে জলে যাইচি সাঁঝবেলা আতপসিদ্ধ দিতি, তখনই টের পালাম কে যেন্ পিছ্ নিলো, মন কলো ফিরে যাই, কিন্তুক কি করবো বোশেখ মাসের রোদের চোদন, সারাদিন হবিষ্যির জন্যি জলপান লাই, শরীল শুকায় খটখটা, নামলাম জলে, কে যেন পরথম কথা কয়ে উঠলো, তাকায় দেখি ওপাড়ে সাঁই বাবলার ঐ পিঠে সূর্য অস্ত যাইচি, নীচে ভূঁই ভুট্টাক্ষেত, ছাওয়াল কডা চুরি কইরে ভুট্টা ভাঙ্গবার নাগছে, একটু সাহস পালাম কিন্তু জলে যেই নামলাম ওমনি কাপড় পেচায় ধরলো, টানে লিয়ে যাবে মন কয়, আমার রা শব্দ হারায় গেলো…মা গো জলও শত্রু হয়, কিন্তুক কেউ বিশ্বাস যায় না!
শুভা এক আজলা জল মুখে ছোঁয়ালো, কপালে ঠেকালো তারপর তাকায় দেখলো শিবা ঘটি হাতে একা কথা কয়।
– জল লিবি তো শিবু? আয় লেবে আয়।
শিবা ঘটি বাড়িয়ে দেয়, নিজে নামবে না।
– এখুনো ভয় যাইচি না!
– দুধ দিয়ে জলে নামবো মা।
ফিরতি পথে মনে মনে জিগির গাছ খোঁজে শুভারাণী। দু’চারটা ডাল জুগিয়ে রাখা দরকার। কাল আতপ ফুটাতে লাগবে। হবিষ্যি চলছে শুভারাণীর, চলবে টানা দশদিন। নইলে পিদিমের আত্মা জ্বলেপুড়ে তো মরবেই, জ্বালিয়ে মারবে শুভাকেও। হবিষ্যির দশদিন একবেলা আতপ ফুটাবে ঘরের ভিতর কাঁচা জিগির গাছের তৈরি উনানে। তিনটা জিগিরের ডাল মাটিতে পুঁতে তার মাথায় বসাবে নতুন খোলা হাড়িতে আতপ, না মাছ না মাংস। রান্নার সময় কেউ দেখতে পাবে না, খাবার সময়ও না। খাওয়ার আগে বাড়তে হবে পিদিমের আতপও, শুদ্ধ বস্ত্রে সেই আতপ ঢেকে নিয়ে আসতে হবে মরা হিসনার জলে, ঐ তো ওদের গঙ্গা, পদ্মার কন্যা। আতপ সিদ্ধ আর ফলফলাদি এই দশদিন আহার্য, আলাদা করে জলও না। জীবনে যা খরচ করে খাওয়াতে পারলো না পিদিম, মরণে তাই খায় শুভারাণী। পূর্বপুরুষ নাকি ঘি আতপ খেত, সবই শোনা, শুভা খায় নুন আতপ। হবিষ্যির প্রথম দিন মনে হয় পঁয়তাল্লিশ ঘর আদিবাসী ভুলেই গিয়েছিল শুভার কথা। আতপ সিদ্ধ জল ছাড়া গিলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল ঘরে মনে হচ্ছিল পিদিম যেন ওর জটাগুলো কেটে নিচ্ছে আর তখনি বিশাল একটা থালা, হয়তো দ্রৌপদীর থালা তার সামনে এসে পড়ে, খাও শুভারাণী আদিবাসী কিংবা শুভারাণী বুইনো কিংবা শুভারাণী মালাকার… এই সেই থালা যত খাতি চাও মনখুশি খায়ে লাও, শেষ হবার লাই। জ্ঞান ফিরলে সত্যি সত্যি শুভা দ্যাখে এক ঝুড়ি তরমুজ শশা কাকড় নিয়ে ঘরের দরজায় কে একজন, যেন ঠিক দ্রৌপদীর থালি। খাও শুভারাণী যত পারো খাও, শেষ হলি পঁয়াল্লিশ ঘর আরো দিবে তবু কষ্ট করে হবিষ্যি শেষ করো, এর সঙ্গে শুধু শুভা কি শিবা নয়, পুরো বুনো পাড়ার ভবিষ্যত জড়িত। প্রথম দিন মনে হয় একটু বেশিই ফলফলাদি খেয়ে থাকবে, হেগে হেগে মরে আর কি। এমনকি পিদিমের মত সেও একই সিস্টেমে দেহরক্ষা হতে যাচ্ছে বলে অনেকে মন্তব্য কি প্রচার হয়ে যায়। কিন্তু মোহন্ত বাদাড় ঘুরে থানকুনি তুলে ছেঁচে রস এনে দেয়, বলে, তুই ফিইরে না চাইলে কি হবি আমি রইলাম তোর পথ চেয়ে। থানকুনির রস গলায় ঢেলে শুভা বলে, মিয়া আমার মরে মরে করচেন, সেলাই করাতে তিন হাজার ট্যাকা নাগবে, তিনি আইসেছেন বিয়া করতে, আগে ট্যাকা খরচ কইরে মিয়াক সারা, তার আগে বিয়ার নাম মুখে লয়!
দু’খানা মাত্র কাপড় হাগা লেগে অশুচি যাচ্ছে। শুদ্ধ কাপড় যোগাড় করে হবিষ্যি ভাসাতে প্রাণান্ত অবস্থা। কাপড়ের আর কি দোষ, পঁয়তাল্লিশ ঘরের জন্য দু’খানা মাত্র টাট্টি, ভোটের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতির চার খানার দু’খানা। তাও হাজার অনুরোধেও চাক বসালো তিনটে করে, – বাবুসাব অন্তত ছ’খান করে চাক না দিলি রোজ ভরি উঠবি, ধাঙ্গরদের ডেকে ডেকে পয়সা দিতি জান বেরয়ে যাবে। স্যানিটারি বাবু চোখ মটকায়, বটে, তবে যে বলিস খাতি পাস না? অত গু পেটে তৈরি হয় কোনথে? আর টাট্টি নিজেরা পরিষ্কার করবি।
– কি কন বাবু হামরা ও কাম করি নাকো।
– করি না আবার কিরে? এখন থেকে করবি।
সত্যি সত্যি মাস না গড়াতেই টাট্টি উপচে গুমুত ভেসে ওঠে। বড়লোকদের বাড়ি চটজলদি বালতি ঢুকিয়ে পায়খানার মল তুললেও বুনোদের টাট্টি পরিষ্কারে ধাঙ্গরদের কোনো গা নাই, কেন বাপু হামরা কি তোদের পয়সা কম দেই? না হামাদের গুয়ে ঘেন্না বেশি? জাতিতেই বা হামারা কম কিসের, ধোপা মেথর সুইপার মুচি রাইদাসদের উপরে বসত।
অশুচি কাপড় ধুতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় শুভাকে, পঁয়তাল্লিশ ঘর আদিবাসীর দুখানা মাত্র কল, সারাদিন ঠেঙ্গিয়ে ঠেঙ্গিয়ে একটায় যদিও জল ওঠে তো আরেকটা ওয়াশা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, চাপ দিলে হাঁপানি রোগীর মতো শ্বাস ওঠে কিন্তু দম ধরে রাখতে পারে না। ভোটের পর অবশ্য প্রাপ্তি তাদের মন্দ বলা যাবে না, পুজা ঘরটা পাকা হয়েছে, শিব আর মনসার প্রতিমা বসানোর বেদী হয়েছে আর সেই আনন্দে একদিন নিজেদের কাজ বন্ধ করে পুজা ঘরের সামনের এবড়োখেবড়ো উঠানটা মাটি তুলে উপযুক্ত করেছে। এখন নর্তনকুর্দনের কোনো অসুবিধা নাই, মনের আনন্দে হনুমান সাজো, বাঘ ভাল্লুক কুকুর সাজো, মেয়েছেলে সাজো তারপর শ্রী কৃষ্ণকান্ত গোসাইর গড়া শিবের মহিমায় ফুর্তি করো। ত্রিশূল কি শঙ্খ কি ধুপচি নিয়ে বয়স্করা এলেবেলে নেচে চলে গেলেই শুরু করো আসল ফুর্তি। ভাল্লুক সাজা মোহন্তর অবশ্য এই বয়সেও লক্ষ্য থাকে বুক না ওঠা কচি মেয়েগুলোর দিকে, চান্স পেলেই থাবা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, চোখে চোখ পড়লে দাঁত বের করে বলে, মনে রাখিস, আমার কল্যাণেই বড় হয়ে উঠলি।
হবিষ্যি ভাসিয়ে শুভারাণীর বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়ায়। শিবা বিনা কারণেই মার সঙ্গে গিয়েছিল নদীর পাড়, ফিরে এসেই কোঁকায়, ঘরের টিনগুলোর দিকে তাকায়, কয়দিন পর টিন কটা বিক্রি করে তার ছেঁড়া জরায়ু সেলাই হবে। জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে কাঁথা টানে, কে জানে বোশেখের এই গুমোট সন্ধ্যার জ্বরের গোপন ইচ্ছাটা কি। বাঁচতে দিবে, না মারবে? তার পরপরই শিবা প্রতিদিনের মতো জ্বরের ঘোরে চলে যায়, তুমি কি কিডনী বেইচে দিছো? তবে ট্যাকা লিয়ে আসছো না কেনে, কি কষ্ট লিয়ে বেইচি আছি বুঝতি পারতিছো? ভগবান যদি সন্তানটা বাঁচায় রাখতু!
নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে গনেশ প্রায়ই শিবাকে বলতো, বুজলি, একখেন কিডনী বেচতি পারলি ঘর সারাবো, কাকার টিউমার অস্ত্র করাবো আর লেডি ডাক্তার দিয়ার তোর উয়া সেলাই করায়ে আনবো, ভগবান চাইলে মোড়ে একটা হোটেলও। শিবা বলে, ক্যা, হোটেল দিবা ক্যা? লন্ড্রি দিবা, তোমার ইস্তারি কাপড়…, গনেশ হাসে, হোটেলই দিবে সে। মোড়ে আমারই একমাত্র লন্ড্রিঘর ছিল, ভালই চলছিল কিন্তু লন্ড্রিঘরটা ভাঙলো, কি-না রাস্তার মোড় চওড়া করবি, চার রাস্তার গোয়ার ভিতর আরেকটা চিকন রাস্তা গিয়ে উঠবি গোলাপনগর, রাস্তার কাজ উদ্বোধন করবেন মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব… ঘর দুটো ভাঙ্গবি, বৃহৎ কাজে ক্ষুদ্র ত্যাগ স্বীকার করতি পারবি না শালার বুইনো। কিন্তুক ঘর ভাঙ্গার পর রাস্তা বের হয় না, গোলাপনগরের লোকেরা সেই ঘুর পথেই বড় রাস্তায় ওঠে আর চৈতন্য মোড়ে লন্ড্রিঘর কামারঘরের জায়গা গ্রাস করে শান্তির আবাস হোটেল তোলে ছাত্রনেতা। আলহাজ্ব এমপি বিলকুল কিছুই জানেন নাকো!
হোটেল দারুণ চলে। ওঠে রাতদিন লুঙ্গি পরা স্মাগলার আর সন্ধ্যা রাতেই রঙমাখা দেহপসারিরা উঠে যায় পিছনের চিকন লোহার সিঁড়ি বেয়ে। গনেশ তখন উল্টো দিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগ্রেট ফোঁকে। কখনো বা চা হাতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে, টি-স্টলের বেঞ্চিতে বসতে না পারার দুঃখটা একবার হয়তো চাগিয়েও ওঠে তখন। সকালে এসে দাঁড়ালে চেনাজানা লোকগুলো বড় বিরক্ত করে, দামুকদিয়া রাইটা বাহাদুরপুর খরগোশ ধরতে যাওয়ার পথে অসীমরা বলে, দেইড়িয়ে থেকে কিছু ফিরে পাবার লয়, চলেক শিকার ঘুরে আসি। গনেশ মাথা নাড়ে, মানে সে যাবে না। ছোটখাট কাজে সে আর নাই, বাঁচতি হলি বুদ্ধি খেইলে বাঁচতি হবি রে!
এখন চোখ বুজলে শিবা একটা মস্ত কচ্ছপ প্রায়ই দ্যাখে, সারা বুনোপাড়া ঘুরে ঘুরে এসে শিবার কোলের উপর উপুর হয়ে পড়ে, শিবা চিৎকার করে বলতে চায়, উয়া সরায়ে লেও, উয়া শয়তান, উয়ার মাংস আমি খাইনা। নিরুদ্দেশ হওয়ার আগের দিন গনেশ হিসনা থেকে ধরে এসেছিল মস্ত কচ্ছপ, কুইচোও নাকি ধরেছিল, ধাঙ্গর পাড়ায় বেচে তেলঝাল কিনেছে। কচ্ছপের মাংসে ভাত খেয়ে পিদিম বলে উঠেছিল, বড়লোকেরা উয়ার মজা এখনো টের পায় নাই, তাই তো, নোলা ডুবোয়ে খাচ্ছিসরে পিদিম, তোর জামাইডার শিকারের হাতখানও খাসা! কচ্ছপের মাংস খেয়ে পরদিনই জামাইডা উধাও হলো আর পিদিমের ছুটলো পেট। প্রায়ই যা হয়। বিশ বছর আগে বাদশা মিয়ার লোকের ছেচায় ভাঙ্গামাজা, তার উপর বছর খানেক আগে পক্ষাঘাতে পড়ে যাওয়া একপাশ নিয়ে পিদিম তখন হোগলায় ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে কোনমতে ঘরের উত্তরকোণের গর্তে সারে হাগামোতার কাজ, বাম হাতটা অকেজো থাকায় ডানহাতে ছাই ঘষে, জল খরচের বালাই নাই গু গড়ানোর ভয়ে। শুভা ছাই দিয়ে গু ফেলে হিসনার কাদা থিকথিকে জলে যায় ¯œানে, সে রাতে কী দিনে যে কোনো সময়ই। পঙ্গু লোকটাকে এভাবে বাঁচিয়ে রাখতে রাখতে বড় আক্রোশে তাকায় বুনোপাড়ার গা ঘেঁষে উঁচু প্রাচীরের ভিতর তিনতলা বাড়ির জানালায়, যেনবা এমপি বাদশা মিয়া বিশ বছর আগের মতো সুঠাম দেহে জানালায় দাঁড়িয়ে বুনোদের দেখছে, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।
– আহা এমন হাসিখুশি লোকটাকে হামরা ভোট দিবো না, তা কি হয়!
– বিনে দোষে লোকটাকে মাইরে লুলা করলি, ভগবান কি কানা! তিনি বিচার ঠিক মতই করেছেন। ছেলের বউটা পালালো, মিয়াটা বিধবা হলো পেটে বাচ্চা লিয়ে, তুই এমপি মরলি পথের পরে, তিনতলা বাড়ির ছাদটাও তোর মরণ সইলো না। কব্বর বাঁধাই করতে রাজমিস্ত্রি আসে, বলে কোদাল চালালেই গর্ত ভেদ করে ফণা তোলে গোখরা, প্রতি বছরই একবার কইরে চেষ্টা চলে, শেষে কয় ও আশা ছাইড়ি দেন, বাঁধানো যাবিনানে। সেই বৈশাখেই পিদিমের মা মরলো পুত্রের মাজার শোকে, পিদিমের কপালটাই এমন, সব ঘটে এই ধর্মমাস বৈশাখে।
– ধর্মমাসে গাছেও টোকা দিতি নাই আর বিনে দোষে এন্দা কইরে মারলো বাদশা মিয়ার লোকগুনো!
উপোস চলছিলো শুভারাণীর আর শাশুড়ি রাইদাসীর। শিবা তখন কেবল হাঁটতে শিখেছে। পুজা ঘরের সামনে পিদিম ত্রিশূল শঙ্খ নিয়ে কেবল এসেছে, ছনের জীর্ণ পুজাঘরের শিব মন্দিরে যুবক কৃষ্ণকান্ত গোসাই আজ মন্ত্র দিবে, ত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেলো পিদিমের মন্ত্র নেয়া হয়নি। পঁচিশ ঘর বুনো আদিবাসী জড় হবে, মন্ত্র পাবে অনেকেই। রাত এগার হলে হ্যাজাক জ্বালায়ে আয়োজন চলে মন্ত্র নেয়ার, ঠিক তখনই আসে বাদশা সাহেবের পাট গুদামের পাহাড়াদার দু’জন, পিদিম আর আংশুকে সাহেব ডাকছেন, জরুরি কথা আছে। – এত রাতে কিসির দরকার? কাজ করলি সকালে যাবানে। শুদ্ধ বস্ত্র পরা মন্ত্রগ্রহণইচ্ছু পিদিম গাঁইগুই করে, কাল যাবে, সক্কালে যাবে। আংশু বলে, আমি দেখে আসি, কাকা থাকেন। – না পিদিমকেও যাতি বলছে। এই যাবি আর আসবি। ঘাড় পর্যন্ত লতিয়ে পড়া চুল, সুঠামদেহী তন্দ্রালু চেহারার কৃষ্ণকান্ত গোসাই আরক্ত চোখে লোক দুটোকে পরখ করে চমকে ওঠে, যাসনে হতভাগা, বিপদ দেখতি পাচ্ছি! ঘণ্টা খানেক পর পিদিম আংশু ফিরে আসে, ভাঙ্গাচোরা দেহ টেনে টেনে। পিদিমের কোমরের হাড়ভেঙ্গে লড়লড় করে আর অংশুর গেছে কষানে চড়ের ঘায়ে মাড়ির দুটো দাঁত। একশ মন গম চুরির জন্য এই মার কিছুই না… পুলিশে দিব তেবে বুঝবি! ভোরে বুনোপাড়ার গা ঘেঁষে বাদশা সাহেবের লোকেরা তার দুই মানুষ সমান উঁচু প্রাচীর ভাঙ্গে খানেকটা, সে পথ দিয়ে সের পাঁচেক গম ছিটাতে ছিটাতে বুনোদের ঘর পর্যন্ত চলে আসে। তারপর আসে পুলিশ, ফের পিদিমের ভাঙ্গা কোমরে দড়ি পড়ে, আংশু অবশ্য পালায় তার আগেই।
– বাদশা সাহেবের এমন ধারামতি হলো ক্যা?
– ক্যা আবার কি, উডা ওনার ইচ্ছা…
তারপর পিদিমের এই দুর্গতির জন্য দায়ী করা হয় পিদিমের কৃতকর্মই, নাপিত দিয়ে শুভার জট কাটিয়ে আইনেছে পিদিম, সে কামডা কি ঠিক হয়েচে! এ জটের অভিশাপ, না লেগে যাবে কনে?
– মহাপাতকের কাম কইরেচে জট কেইটে, খেসারত তো দিতিই হবি!
পিদিম বলেছিল, ও হলো মনসাজট, কাটলি কিছু হবিনানে। শুভাবে শাসায়, কামের জটই যদি হবি, তো তুই ভিখ কইরে খাচ্ছিস ক্যা মাগি। তোর জটের গন্ধে কাছে যাতি পারি না। তারপর ধস্তাধস্তি। কাঠবিড়ালির লেজের মতো জট ধরে টেনে তোলে খোলা ভ্যানে। নাপিতের ক্যাচক্যাচ কাচি চালালে শুভারাণী এলিয়ে পড়ে, পিদিম জোর করে উঁচু করে রাখে মাথাটা। কয়েক মিনিটেই কম্ম শেষ করে আবার তোলে ভ্যানে। বাড়ির উঠানে অজ্ঞান শুভারাণীকে পঁচিশ ঘর বউঝি ব্যাটা ছাওয়াল ঘিরে ধরে- পিদিম বুঝলো নারে, পিদিমের ক্ষতি না হয়ে যাবে কুতি। সতীনাথ সর্দার দাঁড়িতে হাত বুলায়- জটা লাইরে লাইরে যে তুই বিল্ডিং পারসাদ বানাতে পারতিরে পিদিম, কামটা বেঠিক হইলু। জ্ঞান ফিরলে শুভার কয়েকটা দিন কাটে পাগলের মতো, তারপর চুল গজায় না, গজায় জটা। পিদিম এবার হাল ছাড়ে, কিন্তু দুর্ভাগ্য তাকে ছাড়ে না। এর কয়েকদিন পরই ধর্মমাসে শিবরাত্রিরে পিদিম কোমর হারায়, তারপর দীর্ঘ বিশ বছর সেও যায় বউর সাথে চৈতন্যমোড়ে ভিক্ষা মাগতে। শুভারাণীর জট কোমর ছাড়ায়ে পাছায় পড়ে, দুঃসহ গন্ধে কাছে ঘেঁষতে না পারলেও পিদিম এ নিয়ে আর কথা তোলে না। পথচারী বলে, এত ভারী জট নিয়া থাকো কেম্বা? শুভা তোবরানো গাল প্রসারিত করে। উত্তর দেয় পিদিম, আট আনা পয়সা দেন বাবা, উয়ার জটা ভারী নাতো! পাতলা, খই মুড়ি তুলার তুইল্য!
– তুমি কাজ করো না ক্যান, জোয়ান মানুষ!
অবলীলায় মিথ্যা বলে পিদিম- মৃগী রোগ, যেনেহেনে জ্ঞান হারায়া ফেলি বাবা।
শুভারাণী কি পিদিম, কেউ বলে না গম চুরির দায়ে কোমর হারানোর কথা? শুভার গলা চুলকায় বলার জন্য কিন্তু পিদিমের কড়া নির্দেশ না বলার।
– ক্যা, বুলবো না ক্যা?
– ভুল কইরে একটা কাম হয়া গেছে, সাহেব তো বইলেই পাঠায়েছেন- পিদিমরে একটা ভুল হয়া গেছে বাপ, এই ধর একশ’ টাকা।
– খাও, একশ’ ট্যাকা খাও, এহেনে আসছেন ক্যা?
পিদিমের মাথায় রক্ত ওঠে তবু কথা বলার সাহস পায় না। শুভা আজকাল তাকে এখানে রেখে দলবেঁধে লাছিমনে চড়ে চলে যায় ধান কাটতে বারমাইল কি বহলবাড়িয়া কি রানাখড়িয়া, পিদিমের সঙ্গে নটখট হলেই এটা বেশি করে। তারপর মাজা ভাঙ্গার বিশ বছর পর গত বছর মাথা ঘূর্ণিতে পড়ে গিয়ে বাম হাতপাসহ দেহের অর্ধেক গেলো অবশ হয়ে। একা শুভা যায় ভিক্ষা করতে আর ঘরে আসতে যেতে বছরের পর বছর বাদশা এমপিকে করে শাপ শাপান্তর… পথে মরলি, যার কোপে মেদেনী কাঁপে, তার পোঁদে এখন শিয়াল চাটে, মনসার দংশনে এখন জর্জরিত হ, আরে রাজমিস্ত্রী কয় ও কবর পাকা হবিনানে, খুঁড়লেই সর্প, এবার বোঝ, কি দংশন হতিছে! কখনো পিদিম ঘরের ভিতর থেকে চেঁচায়- ক্যান মরা মানুষটারে জাগায় তুলছিস মাগি, থাম কলাম।
ঘরের ভিতরে পড়ে পড়ে সময় যেন আর কাটে না পিদিমের। খালি খাই খাই স্বভাব, শুভারাণীর জীবন ওষ্ঠাগত, একবেলা ভিক্ষা একবেলা বড় বড় গাছ থেকে খড়ি ভেঙ্গে আনা অথবা বিলে শাক তুলতে যাওয়া। ওদিকে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে শিবার বাচ্চা তো মরলোই, অদক্ষ ধাত্রীর হাতে পরে পলি ক্লিনিকে জরাযু ছিঁড়ে ছত্রখান। তাকে নিয়ে চিন্তার কুলকিনারা নাই। কিছু বুঝতে চায় না পিদিম, খাতি না দিয়া কি মাইরে ফেলাত্ চাচ্চিস? বিকালে সীতারাণী আদিবাসীর তরমুজ খাওয়ার দৃশ্যটা ঘরের ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখে পিদিম, লাল টকটকে বুকে দাঁত বাগিয়ে কামড় দেয়, রস গড়ায় চিবুকে পড়ে, রসবতী সীতারাণী কাকে যেন বলে ওঠে – এই তুই কোথায় গিইছিলি? সাজ তো বেশ করেছিস?
– দুইটা মিয়ামহিলা আসেছিল, বইললো নদীর পাড়ে শান্তি শাক তুলবা, সূর্য ডুববো, ফটোক তুলবো। বিনা পয়সায় ফটোক, তুইলে আলাম। সীতারাণী তরমুজে ফের কামড় বসায় – ফটোক তুইলে কী লাভ?
– ওরা শহরে পাঠায়ে হামাদের সাহায্য লিয়ে আসবে।
– সীতারাণী তরমুজ ভেজা ঠোঁট উল্টায় – সিবার যে শীতে লম্বা কইরে লাইন করায়ে ফটোক তুইললো, একটা কইরে তলা ফাটা পাজামা দিল আর খবরের কাগজে উঠায়ে দিল উয়ারা হামাদের নতুন টাটকা কম্বল আর শীতবস্ত্র দেইছে। ইবার ফটোক তুলে খবরে কবে উয়ারা হামাদের দয়ায় বাঁচে রইছে, নাকি রে প্ররতিমা!
প্রতিমাকে পিদিম দেখতে পায় না, সীতারাণী তরমুজে আরেকটা কামড় দিয়ে ম্লান মুখে প্রতিমাকে আশ্বাস দেয়, দ্যাক উয়ারা সাহায্য দিতেও পারে!
কে কাকে সাহায্য দিবে সেদিকে খেয়াল নাই পিদিমের, তরমুজে চোখ পড়ে, বিচিসহ চিবায় পিদিম, লাল টুকটুকা গর্ভ চিপে চিপে নিংড়ে নেয় রস তারপর খানেক চোখ বুঁজে ডান হাতটা মুখের কাছে নিয়ে যত্ন করে মাছি তাড়ায় যেন তরমুজের রসে মাছিদের বড় উৎসব চলছে। ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁকে আর কেউ তরমুজ খায় না, কামতাড়িতের মতো অস্থির হয়ে ওঠে, চিৎকার কওে – শুইভ্যা তরমুজ খাওয়া, বছরকার ফল, আত্মায় কষ্ট পায় না খালি। শুভা মুখ ভেংচায়, ভাত পাবেন কি ঠিক লাই আর আপনে নাগচেন তরমুজ লিয়া! পিদিম পাঁচ বছরের বালকের মতো মাথা নাড়ে, কথা শুনবে না, তরমুজ তার চাই। শুভারাণী কি যেন বলতে চায় তারপর হতশ্বাস হয়ে তাকায় থাকে খানেক, বিড়বিড় করে- ভগবান কোমরডা ভাঙ্গিছেন, জিবটা কাইটে লিতে পারেন নাই!
সাঁঝবেলা পাইন্যার হাটের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, দিনে এখানে পানের বিশাল হাট বসে। এখন ফাঁকা। উল্টোদিকে মালক্ষ্মী জুয়েলারির দোকানে ধূপধুনোর গন্ধ ছড়ায়। শুভা আরেকটু হেঁটে সামনে যায়, ডানে নীলকুঠি, বায়ে ব্যাংক। নীলকুঠি পাটের গুদামে সে আর পিদিম যৌবনে কাজ করেছে, পিছল চকচকা শান। পিদিমের ঠাকুরদার ঠাকুরদা নীল ভূঁইয়ে কাজ করেছে। গোড়া সাহেব ইংরেজি বলতো, সেই ইংরেজি সে শিখে নিয়ে ছাওয়ালকে শিখালে সে বিদ্যায় রেলওয়ের ওজন মাপার কাজ পায়, কিন্তু দুর্ভাগ্য অল্প বয়সে সে ওজন মাপতে মাপতে এবং ইংরেজি আই ডেড আই ডেড বলতে বলতে হার্টফেল করে।
সন্ধ্যায় আলোয় ঠিক ঠিক মোহন্তকে খুঁজে বের করে শুভা। প্রথম কথাই শুভা বলে – পাঁচটা ট্যাকা দে, কাল দিয়ে দিব।
– শিবাকে আমার কাছে বিয়া দাও, ওর চিকিৎসা আমি করামু।
শুভা ওসব কানে তোলে না – আগে ট্যাকা দে।
তরমুজের ফালিগুলো এ্যালুমিনিয়ামের থালায় বুক চিতিয়ে থাকে, দানাদার লাল রোয়ার ফাঁকে কালচে খয়েরি বিচি। রিক্সার সিটে বসে জোয়ান রিক্সাওয়ালা তরমুজের রস টানে শ-শা-শ শব্দে। মোহন্তের দেয়া পাঁচ টাকা এগিয়ে বলে, দুইটো দাও দিকি।
– আরেক ট্যাকা। তিন ট্যাকা ফালি।
রাগে শরীল কাঁপে শুভার – আরেক ট্যাকা নাই, দিলে দাও।
অন্ধকারে পিদিম প্রথম এক ফালি গোগ্রাসে গিলে নেয়, দ্বিতীয় ফালি অর্ধেক খাওয়ার পর হঠাৎ কি মনে আসে, কেউ কি তার দিকে তাকিয়ে?
পিছন ফিরে দ্যাখে শিবা শীতে কুঁকড়ে কাঁথার নিচে, মানে জ্বরে অচেতন, শুভা বাইরের উনানের কাছের কড়াই ভাঙ্গা বালতি ঘরে তুলছে, মানে তরমুজে তার মোটেই আগ্রহ নাই।
তারপর শেষ রাতে পিদিম প্রথম তিনবার ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে গর্তে আসে, শেষে একটা সময় লুঙ্গি হোগলা ভাসিয়ে দিয়ে কোঁকায়, দুর্গন্ধে মেয়েটা অন্ধকারে উঠানে বসে থাকে কাঁথা জড়িয়ে। শেষরাতে একবার দম নিলেও সকালে আবার চলে। কবরেজ ডাকে হরিষ সর্দার, আসে ঝাড়ফুঁক করতে মহেষচন্দ্রও। দিন গিয়ে সন্ধ্যা, তারপর পিদিমের আড়াই কি তিন কুড়ি ছোঁয়া দেহটা শেষরাতে রক্ষা করেন ভগবান।
শুভা ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদে- তরমুজ, ওরে কি খাওয়া খাওয়াইলিরে তরমুজ, আমার মাতার সিঁদুর করিয়া নিলি… তরমুজ কুতি গেল আমার মাথার সিঁদুর! ভোরে পঁয়তাল্লিশ ঘর বুনো এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তরমুজখাকি মৃত পিদিমের ঘরের আনাচে কানাচে। চালার ভিতর উঁকি দিয়ে নাক টেনে আনে বাইরে, তবুও একে একে সবাই আবিষ্কার করে গত এক বছর চালা থেকে না বেরুনো পিদিমের মাথাভর্তি সাদা ধূসর জট। জটের কথা শুভারাণী এতকাল কাউকে বলেনি কেন? বলেনি মেয়ে শিবাও! তাদের বিস্ফোরিত চোখের দিকে তাকিয়ে নাকের ফ্যাত ঝাড়তে ঝাড়তে শুভা বলে, ও আর কি কবো, ও মনসা জট, কাজের জট হইল আমার। শিবার নিরুদ্দেশ স্বামীটার জন্য এক আধবার আহাজারি শোনা যায়, অসুস্থ মিয়াটার ইবার কি হবিগো! স্বামীর টানে শুভার বিদায় নিতি ক’দিন? মূলাডুলি গঙ্গাপুজা দেখতে শিবা আর বছরের আগের বছর কেমন সেজে নয়া শাড়ি পরে গনেশের হাত ধরে বেড়াতে গেছিল, তারও বর্ণনা চলে। পিদিমের শ্মশানে যাবার আয়োজনে সবাই সাহায্য করে, এটাই নিয়ম। পুরো পাড়ায় শোকের মহিমা, কেউ কাজে যায় না। মৃত্যুতেও যে কত খরচ করতি হয়, মরেও জ্বালা, এমন বাক্যও দু’পাঁচজন গেয়ে বেড়ায়। দুপুরের পর পিদিমকে খাটিয়ায় তুলতে সবাই হাজির হয়। শুভা তখন জটা এলিয়ে পড়ে থাকে মাটিতে, মাথায় তরমুজ আর বাপের কীর্তনের সুর, ঘুরে ঘুরে ঠোঁটে ওঠে, একবার তরমুজ একবার কীর্তন।
সাতবাড়িয়া হিসনা পাড়ে শ্মশানে মরা নামিয়ে কবর খোঁড়ে… আদিবাসী, সর্দার, মালাকার, খুপ খুপ ….। কোথায় ঘি, কোথায় চন্দন কাঠ, সারাজীবন জীবন্ত গাছের মরা ডাল ভেঙ্গে ভেঙ্গে সংসারের আগুন জ্বালালেও স্বামীর চিতার কাঠ কই? দূরে দাঁড়িয়ে শুভার লম্বা লগির আগার আঁকশি চন্দনগাছের মরা কাঠ মটমট করে ভেঙ্গে নামায়, এত চিকন কাঠে মরা পোড়ে নাগো, খুলি ফাটে না! মাটি চাপা দিতে দিতে জোড়া জোড়া চোখ পিদিমের মুখটা গেঁথে নেয় বুকে, জটাগুলো গুনে নেয় হাতের আঙুলে, এই জটাগুলোই আসল, বাঁচে থাকলে বড়লোক হতি পারতো রে….।
হবিষ্যির দশদিনের প্রথম তিনদিন বড় কষ্ট যায় শুভার, মাটির ঢোকসা ভাঙ্গে চড়চড় করে, কাঁচা জিগিরের ডালে আগুন লাগে, দরজায় বিরজার নাক কাটা ছেলেটা চেঁচায় – মাসিমা কীর্তন বল্। আতপ সিদ্ধ মেখে বসে আছে, তরমুজ মরণের ইশারা করে, তরমুজে পিদিমে রক্তমল লুকিয়ে টুকি খেলে।
এগার দিনের দিন সন্ন্যাসি আসে, কীর্তন গায় পাড়ার লোকেরা, কিরাকাষ্ট অনুষ্ঠানে পয়তাল্লিশ ঘর এক কেজি চাল আর দশটি করে টাকা দিয়ে ভোজে অংশ নেয় আর তারপর পিদিমের আত্মা মরা হিসনার তাবৎ নষ্ট জল শুষে নিয়ে শান্ত হয়।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..