পুতুল

উমাপদ কর
কবিতা
Bengali
পুতুল

আসি আসি করে একটা পুতুলও এল না
বর্ষাও এল না—
যাই যাই করে একটা পুতুলও উঠে দাঁড়ালো না
বসন্ত চলে গেল—
কোথাও পুতুল পাগলদের সভা বসেছে
প্রতিপ্রভ চন্দ্রগোলকে
আজ না হোক তো কাল বৃষ্টি হবে
পাগলেরা ঠান্ডা হবে
যদিও পাগলামিতে ভরে থাকবে বীজতলা ধানের
ছোট্ট চৌহদ্দিটুকু—
আর একটা হালকা বাতাস খেলে যাবে ওদের গালে…

দুই.

গম্বুজ থেকে বেরিয়ে আসছে কয়েক’শ কা-কা…
আজ সকালটা কিছু আগেই দৌড়তে চাইলো
ক্ষতি নেই,
ছুটুক শেষ পর্যন্ত,
যদিও দৌড়ের নামতা মুখস্ত নয়…

টান রাখা তারে ঝুলে দোল খাচ্ছে পুতুলের এক্স-রে প্লেট
হাজার হাজার
পুতুল ডাক্তার একটা করে দেখে আর রেখে দেয়
হাড় ভাঙা আর না-ভাঙার মধ্যে
সে কি আজও কোনো পার্থক্য খুঁজে পেল না
ভাঙা হৃদয় নিয়ে!
পুতুলের কি হাড় ভাঙতে পারে না!
পাগল… পাগল বলে যাকে…

তিন.

যেদিকেই ফুল ফুটছে ফুটছে
সেদিকেই পুতুল চাষ, যেন জাফরাণ
এত পুতুল নিয়ে কী করবে সকাল!
রান্নাবাটি খেলবে, কড়ি খেলবে, স্কিপিংও…
কখন যে বড় হয়ে উঠবে এমনই
বিয়ে দিতে হবে
সানাই বাজবে—
একটা পুতুলকে বিদায় দিতে
রিনি যে এতটা কাঁদবে জানা ছিল না…

 

চার.

ঘন মেঘে স্তম্ভগুলো ঢেকে গেলে
গভীর শুয়ে থাকে পুতুলের খোলে
বৃষ্টি এলে প্রাণ পাবে
হাসবে খেলবে টা-টা করবে স্কুলবাসের বন্ধুকে
যেটুকু আনন্দ চেটেপুটে খাবে
আর প্রাণ চুইয়ে চুইয়ে যাবে
যত মৃতমানুষের দেহে
মানুষগুলো ভাবতেই পারেনি পুনর্জন্ম পাবে
আরেকটা জীবন – প্রায় প্রথম থেকে…

পাঁচ.

আলো জ্বেলে সাজাতে চাইছিলাম পুতুলগুলোকে
এ-সময় দেখেছি ওরা প্রাণ পেয়ে যায়
আলমারি থেকে উথলে নামে কার্পেটে
একটু বেশিই হাসিখুশি
আমি ওদের খেলার নিয়ম জানি না
তবু খেলতে নামি, আর হেরে যাই…
শুধু একটা পুতুল ইচ্ছে করেই আমার কাছে হারে
আর খিলখিল হাসে
আমার করুণ মুখের দিকে চেয়ে…
আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে গেলে
সে আরও দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়ে
সবাইকে আলমারিতে ফেরৎ পাঠালেও তাকে পাশে নিয়ে শুই
দুজনেই হাসতে থাকি…
জেতা-হারার হাসি…

ছয়.

যেমন ইচ্ছে খোলা যায় পুতুলগুলোকে
মহুল কিছুতেই আমাকে দিতে চায় না
আচমকা খুলে ফেলি কিনা…
সে-ও খোলে, ধীরে, যত্ন করে
আলাদা আলাদা রাখে
আর বার বার আমার দিকে তাকায়
আমি দেখি কী অগাধ ভালোবাসায় সে জুড়ছে
হাত-পা-মাথা
সত্যি মনে হলো পুতুলটা প্রাণ পেয়ে গেল
মহুল আমাকে কৌশলটা শেখাতে চায়, আর আমি কিছুতেই
নিমগ্ন হতে পারি না…

 

সাত.

পুতুলসাজে শুরু হওয়া এই দিনের পায়ে
লতা জড়িয়ে দিলে
জ়ড়বৎ বসে থাকা তাই ভবিতব্য হয়ে ওঠে

না সরালে যে সরতে জানে না, না নাড়ালে নড়তে
তার জন্য এই লতা কী যে প্রয়োজন!

লতার আলস্যে পুতুলেরা মহাভোজে যেতে অপারগ
অথচ বিবাহবাসর পূর্ণ পুতুলে
এমনকি খাবার টেবিলও,
এত প্রক্সি মোটেও ভালো লাগছে না…

উমাপদ কর। জন্ম ১৯৫৫, স্থান বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ। বর্তমানে কলকাতাবাসী। পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারী ছিলেন। যৌথ সম্পাদনা: ‘শ্রাবস্তী’, কর্মী: ‘রৌরব’ ইত্যাদি লিটিল ম্যাগাজিন। অল্পদিনের জন্য হলেও একসময় পারফর্মিং আর্টের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। নাটক, থিয়েটার, আবৃত্তি, ভাবনাট্য, নৃত্যনাট্য। অংশগ্রহণ করতেন বিতর্ক,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..