পুনরুত্থান

সুদীপ্ত বিশ্বাস
কবিতা
Bengali
পুনরুত্থান

ভালবাসা যদি ফিরে পাই

ভালবাসা যদি ফিরে পাই
তবে তো নাচবো ভাই
তাধিন তাধিন…

পোড়া বিড়ি দেব ছুঁড়ে ফেলে।
ফেলে দেব তামাকের শিশি
ছেড়ে দেব সব ছাইপাঁশ
তেতো জল, বিলিতি বা দিশি।

ভালবাসা যদি ফিরে পাই
তবে তো গাইবো ভাই
গলা ছেড়ে যা আসবে মনে

বাতাসকে বলে দেব আমি কত সুখি
আকাশকে বলে দেব আমি কত সুখি
পাহাড়কে বলে দেব আমি কত সুখি
তারাদের বলে দেব আমি কত সুখি।

ভালবাসা যদি ফিরে পাই
তাহলে তো ভাই
হয়ে যাব ফুল, পাখি, নদী।
ভালবাসা ফিরে পাই যদি –
নরম পালক নিয়ে
রামধনু রঙ মেখে এসে
বয়ে যাব তির-তির,
পাহাড়ের দেশে।

ভালবাসা যদি ফিরে পাই
তবে তো বাঁচবো ভাই
সমস্ত জীবন।

প্রতিটা মুহূর্ত বেঁচে বেঁচে
প্রতিটা শরৎ বেঁচে বেঁচে
প্রতিটা বছর বেঁচে বেঁচে
প্রতিটা দশক বেঁচে বেঁচে
তবুও তো ভরবে না মন।
বলে যাব, ‘বড় ছোট এ জীবন।’

ভালবাসা যদি ফিরে পাই,
তাহলে কিচ্ছু না–
স্রেফ বাঁচতে চাই।

 

নদী ও প্রেমিক

পাহাড়ের বুক চিরে ঝর্ণাটা নামে
অনেক না বলা কথা আছে নীল খামে।

ঝর্ণারা মিলেমিশে হয়ে যায় নদী
শুনবে নদীর গান, কান পাতো যদি।

ও নদী কোথায় যাও? ছল ছল তানে?
দাও নদী দাও বলে জীবনের মানে।

ঘন্টার ঠুন ঠুন, আজানের সুর
নদী জলে মিশে যায় সোনা রোদ্দুর।

ছোট ছোট ঢেউ তুলে নেচে নেচে যায়
সব মেয়ে তাই বুঝি নদী হতে চায়?

ও নদী চলেছ বয়ে, নদী তুমি কার?
প্রেমিকটা প্রাণপণ কাটছে সাঁতার।

সাঁতরে সাঁতরে আরো কতদূর যাবে?
কতটা গভীরে গেলে তবে তল পাবে?

নদীটা যেই না গিয়ে সাগরেতে মেশে,
প্রেমিক ঘুমিয়ে পড়ে সঙ্গম শেষে…

বাঁচার মজা

আমি তো বেশ ভালই বেঁচে আছি
তোমায় ছেড়ে দিব্যি একা একা,
অনেকটা রাত চাঁদের সঙ্গে জাগি
সকালে পাই টুনটুনিটার দ্যাখা।

ল্যাপটপ বা স্ক্রিন টাচ মোবাইলে
ফেসবুকে রোজ নতুন কিছু লাইক;
দেশটাও বেশ গড়গড়িয়ে চলে
ইনফ্লেশান, দ্রব্য মূল্য হাইক-

সব কিছু বেশ সয়ে গ্যাছে আজ কাল
ভালবাসাও পদ্ম পাতার জল,
এক জীবনে ও মেয়ে তুই এসে
কতটা আর দুঃখ দিবি বল?

মন খারাপের মেঘেরা ভেসে গ্যাছে
অনেক দূরে, দূর পাহাড়ের গায়ে,
নদীর তীরে একলা হাঁটি আমি
ছলাৎ-ছলাৎ ঢেউ এর রাশি পায়ে।

মরুভূমির উট হারিয়ে গেলে
হেঁটেই চলে একলা বেদুইন,
মরীচিকার মিথ্যে জলের খোঁজে
ঘুরে বেড়ায় প্যারিস, জাপান, চীন।

আমিও যাই ছোট্ট নদীর তীরে
রোজই করি টুনটুনিটার খোঁজ,
বাতাস মেখে তাধিন তাধিন বাঁচি
বাঁচার মজায় বেঁচেই থাকি রোজ…

 

পুনরুত্থান

নিভু নিভু আকাশে যেই ঘনিয়ে এল মেঘ
তোমার চোখের তারায় তারায় দেখেছি উদ্বেগ।
অনেক চেনা কেমন করে খুব অচেনা হয়
জীবন খাতা গোলকধাঁধা সরলরেখা নয়।

শান্ত জলে হঠাৎ হঠাৎ ছলকে ওঠে ঢেউ
ঘুমের মাঝে চমকে দেখি পাশেতে নেই কেউ।
নেই তাতে কি, একলা বাঁচি, একাই টানি দাঁড়
স্বপ্ন দেখি আকাশ ছোঁব, সমুদ্দুরের পার…

সুদীপ্ত বিশ্বাস। কবি। জন্ম ১৯৭৮, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের নদিয়া জেলার রানাঘাট। পেশাগতজীবনে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। কবিতা লিখছেন ১৯৯২ সাল থেকে। প্রকাশিত বই: ঝিনুক জীবন, মেঘের মেয়ে, ছড়ার দেশে, পানকৌড়ির ডুব, হৃদি ছুঁয়ে যায়, Oyster Life ইত্যাদি। লেখালিখি ও সরকারি চাকরির...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..