ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>>Welcome to the Pataquerical Night Show
নাটক: প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনা: মিডরাশিক[1] নীতিশাস্ত্রবিরোধিতা ও আনমিতলজির[2] প্রতিশ্রুতি
প্রযোজক: রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
পরিচালক ও নাট্যকার: চার্লস বার্ন্সটাইন
কাহিনি সূত্র:
প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি চার্লস বার্ন্সটাইন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতিসদনে আবদ্ধ কবিতার দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য “কর্তব্যনির্ভর কবিতার ভাইরাল নীতিশিক্ষা্মূলক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে”[3] এক কোভেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপনা করছেন। এ নাটক প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার সাহিত্যিক আবিষ্কারের ১৪০টি বিস্ফোরণে নির্মিত এক ফ্যান্টাসি, যার মূলে আছে “প্লেটোর ফার্মাসি”-তে আবিষ্কৃত ভাষার নভেল ফার্মাকন[4], যা একাধারে বিষ ও ওষুধ। এটাই প্রকৃত সময় যখন প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবিদের উচিত তাদের “দৃষ্টিভঙ্গির শোভাযাত্রা, লক্ষ্যগুলোর প্যরেড, প্রবণতাগুলোর প্যারডি রচনা করে আর হুশহাশ শব্দ তুলে, হযবরল শব্দমাত্রায় আর হে-হো-হাহ্ ধ্বনিতে” আত্মতৃপ্ত কবিতা জগতের স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। এ নাটকের আরো এক উদ্দেশ্য হল “আনমিতলজির সেইসব দিকগুলোর পরীক্ষা করা যা পরীক্ষামূলক কবিতার গণ্ডি পেরিয়ে অ্যাঁভা-গাদের একক সমাধানভিত্তিক ঔপনিবেশিক মনোভাবের বিরুদ্ধে কাব্যশৈলীর অপরীক্ষিত, অস্থায়ী, নবনির্মীয়মাণ উদ্ভাবনগুলোর খোঁজ করে”।
নাটকের কুশীলব:
এডগার অ্যালান পো
এমিলি ডিকিনসন
উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস
উইলিয়াম ব্লেক
হার্ট ক্রেন
ওয়াল্ট হুইটম্যান
স্টিফেন মালার্মে
রালফ ওয়াল্ডো এমারসন
লুডভিগ উইটগেনস্টাইন
ফ্যানি ব্রাইস
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফেনজা এবং গ্রেয়াই[5]
দেশবাসী, সামরিক শিক্ষানবিশ, সৈনিক, বাঁদর, এক ফরাসি ডাক্তার, কুলিগুলো, এক বৃদ্ধা, ভূত, ডাইনি, অধ্যাপক, কবি, মনিব, ভদ্রলোক, মহিলা, কর্মকর্তা, খুনি, পরিচারক এবং বার্তাবাহক।
সুরকার | : | প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবিগণ |
পরিবেশক | : | অংশুমালী |
মুক্তি | : | কোভিডিত সাল |
দেশ | : | আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত |
ভাষা | : | ইংরাজি ও বাংলা |
নির্মাণব্যয় | : |
ঋণাত্মক, কারণ নাট্যকার বলছেন, “কবিতার অর্থনীতি লাভের প্রতি বিতৃষ্ণ… কবিতার ঋণাত্মক অর্থনীতিতে ক্ষতি তীব্রতাকে দীর্ঘায়িত করে।” |
আয় | : |
প্রিয় দর্শক, আপনিই এটা ঠিক করবেন, কারণ প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনা দর্শকের অনুভবকে, চেতনার গতিময় ডার্ক এনার্জিকে সক্রিয় করে তুলবে; ফলত দর্শক নিষ্ক্রিয় গলাদ্ধকরণের পরিবর্তে শব্দবাহিত ধ্বনিবাহিত বিমূর্ত দৃশ্যাবলী থেকে নিজের কাল্পনিক অভিজ্ঞতার স্পর্শে বেজে উঠবেন, কবির কম্পাঙ্কে অনুরণিত হবেন। |
বি.দ্র.- আসল নাটকের আগে আর এক নাটক! শুরুর আগে শুরু। কোভিডিয়েট প্রযোজক রুণা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু জিনিস বলতে চান তবে সেটা কোনও জিনিস নয় কারণ একটা জিনিস বিক্রি করা যায় কিন্তু আমি কোনও জিনিস বিক্রি করছি না; হয়তো ভূমিকা হয়তো নয়; হয়তো নাটকের আগের নাটক হয়তো নয়; অথবা nothing কারণ “I have nothing to say and I am saying it….nothing more than nothing can be said.”[6] প্রিয় দর্শক, আসুন আমরা একটা প্যাটাফিজিক্যাল ‘হা হা’ দিয়ে তাঁকে অনুমতি দিই।
————-Cock-a-doodle-de-dooooooh———————
প্রথম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য:– এডগার অ্যালান পো এর সমাধিস্থল, প্যাটাক্যুয়রিক্সের জন্মস্থান। নেপথ্যসংগীতে বাজছে “শুধু এই আর কিছু না”[7], অনাবৃত করছে ভাষার সেই ইউটোপিয়া যেখানে “শব্দেরা গান গায় আর গায়ক শোনে”।
> কুশীলব:- এডগার অ্যালান পো
> বিস্ফোরণ:– কাব্যিক সূত্র
এডগার অ্যালান পো মার্কিন সাহিত্যের প্রতীকচিহ্ন রূপে অভিনয় করছেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ “The Poetic Principle” নিয়ে, যেখানে মার্কিন সাহিত্যের ইতিহাসের কট্টর নৈতিক ও শিক্ষামূলক সূত্রগুলোর বিরুদ্ধে কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন “সৌন্দর্যের রিদমিক সৃজন” হিসেবে। নৈতিকতা নান্দনিক সৃজনকে শ্বাসরুদ্ধ করে; ভালো ও মন্দ, নৈতিক ও অনৈতিক, সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে দ্বৈততার বিশ্বাস; “কী” আর “কী হওয়া উচিত” এর মধ্যে তুলনা; প্রকৃত তথ্য থেকে, বাস্তবতা থেকে পলায়ন পন্থা। কিন্তু কবিতা হল বর্তমান মুহূর্তের সেই বাস্তবতার সংগীত যেখানে আমরা বসত করি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ভাষা, ভালোবাসা ও হারানোর ব্যথা নিয়ে, যেমন বার্ন্সটাইন বলেন, “কবিতা কোনো নৈতিক কম্পাস নয় বরং এক নান্দনিক অনুসন্ধান।”
এই ‘মুহুর্ত’ উত্তেজনার সেই ক্ষণস্থায়ী অবস্থা, আর দীর্ঘ কবিতা এই ‘মুহুর্তের’ ধারাবাহিক, যেমন বলেছিলেন পো “a poem deserves its title only inasmuch as it excites, by elevating the soul. The value of the poem is in the ratio of this elevating excitement. But all excitements are, through a psychal necessity, transient,”[8] যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় জেনোর প্যারাডক্স- what is in motion moves neither in the place it is nor in one in which it is not- শুরুতে নেই, মাঝে নেই, শেষেও নেই; যার অন্তরমহলে বাজছে প্রাচ্যের দর্শন- ব্রহ্মা, সেই অন্তরতম সত্ত্বা, সেই অনির্বচনীয় সমগ্র, বসত করে তার অংশগুলোতে “উত্তেজনার তীব্র মুহুর্তগুলোতে”- বার্ন্সটাইনের ভাষায়, “এমন এক কাব্যশৈলী যা সময় বহির্ভূত knowledge-এর পরিবর্তে সময়গত nowledge.” সময় নিমেষের সমাবেশ- মুহূর্তের জোড়- ‘now’-এর সমাবেশ- আর কিছুই নয়। বস্তুগত জগতের সমস্ত ঘটনাই স্পেস-টাইম জুড়ে পাতা সুপারস্ট্রিং এর ক্ষণস্থায়ী স্পন্দনের প্যাটার্ন মাত্র- অবিরাম সীমাহীন রিদ্মে রত। এই রিদ্ম আমরা শুনি অথচ ঘটনার সময়গত অবস্থান অনিশ্চিত; প্রতিধ্বনিত করে ডিকিনসনকে, “when”—not where—“the meanings are.”
প্রথম দৃশ্য:-
কবিতার নাট্যমহলে বাজেট অধিবেশন। এমিলি ডিকিনসন দর্শকদের সামনে পেশ করার জন্য বাজেটের বিবৃতি তৈরি করছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিন ডিকিনসনের কবিতার হলোগ্রাফিক সংস্করণ ঠাহর করতে চাইছে।
> কুশীলব:- এমিলি ডিকিনসন
> বিস্ফোরণ:- কে জানে কোথায় কখন?
ডিকিনসন এখন বাজেট অধিবেশন শুরু করলেন তাঁর সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তি দিয়ে, “Nothing is the force/That renovates the World.” বিশ্বব্যাপী মহামারীর প্রকোপে ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি দর্শক ডিকিনসনের কবিতার ঋণাত্মক অর্থনীতির বিবৃতিতে হতবাক হয়ে পড়লেন। এবার দর্শকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন পরিচালক বার্ন্সটাইন, কবিতার গহন ধ্বনিতে বেজে উঠল তাঁর যুক্তি অতিক্রান্ত এক জলযুক্তি- “বাজারে কবিতার দাম ঋণাত্মক হলেও সে এক ঋণাত্মক মান তৈরি করে, যাকে “এক্সচেঞ্জ ইকোনমি” বলা যায়, যেখানে প্রত্যক্ষ মুনাফা লক্ষ্য নয়, পুনরুৎপাদনের ব্যয় থেকে প্রাপ্ত ক্ষতি (ফটোকপি, পানশালায় কবিতাপাঠ, ওয়েবসাইট বা MP3 ফাইল) হ্রাস করার চেষ্টা করা হয় বিনিময় মূল্য বাড়িয়ে।” জন কেজের “nothing” প্রতিধ্বনিত হয়ে উল্টো প্রতিফলন হল বার্ন্সটাইনের Pitch of Poetry -তে, “আমার কিছু বলার নেই আর আমি সেটা বলছি না। আমার না বলার কিছু নেই আর আমি সেটা বলছি। আমার না বলার কিছু নেই আর আমি সেটা বলছি না”।
বৈষয়িক জগতের প্রতি উদাসীন ভারতীয় প্রযোজক কিন্তু মজে আছেন নীতিশাস্ত্রবিরোধী ডিকিনসনের গানে, যেখানে ‘Nothing’ অনুরণিত হচ্ছে বৃহদারণ্যক উপনিষদের সাথে- “এ নয়, এ নয়, স্থূল নয়, সূক্ষ্ম নয়,”[9]– নেতি নেতি এই বিচার করেই সেই পূর্ণ ব্রহ্মের পূর্ণ সত্যের খোঁজ পাওয়ার পথ, যেখানে অনন্ত সম্ভাবনার ইতিবাচক অনুপ্রেরণা, যা “বিশ্বকে পুনর্নির্মাণ করে।”
ডিকিনসনের কবিতা প্রকাশের কোনো ইতিহাস নেই। হলোগ্রাফিক সংস্করণের মাধ্যমে তাঁর কবিতা উদ্ধার করতে গিয়ে সরকারী সংস্করণগুলোতে “কখন/কোথায়” এসবের তারতম্য ঘটে যায়। কবি সুসান হোয়ে এগুলোকে “অসংলগ্নতার চিহ্ন” বলে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল শব্দের স্বীকৃতি দিয়েছেন; এ সেই ডিকিনসনের “অভ্যন্তরীণ পার্থক্য”, যা কবিতার একটাই মাত্র নির্দিষ্ট অর্থ উদ্ধারের পরিবর্তে পাঠকের উপলব্ধি অনুযায়ী ওভারল্যাপিং অর্থগুলোয় সাড়া দিয়ে কবিতার অসীম সম্ভাবনার পথ খুলে দেয়; প্রচলিত প্রবণতার বিরুদ্ধে তৈরি করে সেই টানাপোড়েনের চিহ্ন; এক সময়গত স্পন্দন যা প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার মাধ্যমে শব্দকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য:-
উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস দর্শকদের ওপর অদৃশ্য ডার্ক ম্যাটারের প্রভাব দিয়ে তাকে বৈজ্ঞানিক উপলব্ধিযোগ্য পরিসরে ঠাহর করতে চাইছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিন “COMME SI” -এর ভিজ্যুয়াল বিমূর্তিকরণের প্রয়াস করছে যেমন মালার্মে করেছিলেন তাঁর “Un coup de Dés” কবিতায়। নেপথ্যসংগীত “Nothing but the blank” অনুরণিত হচ্ছে “JAMAIS” এর সঙ্গে আর “nevermore”এর রিদ্ম প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নাটমহলের দেয়ালে দেয়ালে।
> কুশীলব:- উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস্ ও সহঅভিনেতা স্টিফেন মালার্মে
> বিস্ফোরণ:– শুধু এই আর কিছু না
উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামসের “প্যাটারসন” কবিতা: “শুধুই শূন্যতা আর কিছুই নয়” প্রতিধ্বনিত করছে ভারতীয় উপনিষদ, “প্রাণো ব্রহ্ম কং ব্রহ্ম খং ব্রহ্মেতি/ যদ্বাব কং তদেব খং, যদেব খং তদেব কমিতি”[10]– প্রাণ ব্রহ্ম, আনন্দ ব্রহ্ম, শূন্য ব্রহ্ম/ আনন্দই শূন্য, শূন্যই আনন্দ। উইলিয়ামসের সেই লৌকিক শূন্যতা, যেখানে প্রাণব্রহ্মের বাস; হৃদয়াকাশের ডার্ক এনার্জি; বার্ন্সটাইনের ভাষায়, “shadow of an absent source”; এই সেই শূন্য যেখানে অনুপস্থিতির ভেতর এক সম্ভাব্য উপস্থিতি, অনস্তিত্বের ভেতর অস্তিত্বের টংকার; এক প্যাটাক্যুয়রিক্যাল উদ্ভাস। ব্রহ্মার সেই ওঁ, শব্দের ধ্বনি, কবিতার নগ্ন অক্ষর বসত করে এই শূন্যতার কেন্দ্রে, স্বাধীনতার সেই সম্ভাব্য কেন্দ্র, ‘nothing’এর অতল গহ্বর, সেই শূন্যতা যেখানে “সমস্ত বাস্তবতা বিলীন হয়ে যায়… – COMME SI– যেন- নীরব ইঙ্গিত” করছে যেমন মালার্মে বলেছিলেন “no more nor less” যার ভেতর শোনা যায় পো-এর সূত্র “এই কবিতা যা শুধুই একটা কবিতা আর কিছু নয়”: “শুধু এই আর কিছু না” যার অনুরণন বার্ন্সটাইনের সংগীতে, “সমস্ত কিছুর এক প্রতিধ্বনিত অস্বীকার, তবু ধ্বনি ও ছন্দের ঘটনা সূক্ষ্মতায় ও শূন্যতায়, পূর্ণ ও শূন্য, এখানে/এখানে নয়”।
প্রথম দৃশ্য:
কবিতার প্যাটাক্যুয়রিক্যাল জোনের কি-ওয়ার্কারগণের অন্যতম উইলিয়াম ব্লেক ২০২০ সালের বিশ্বব্যাপী মহামারীতে উদ্বেগমেট্রিক্সে আক্রান্ত মানবজাতির জন্য তাঁর আবিষ্কৃত অনুকম্পার ফার্মাকন বিলি করছেন। নেপথ্যসংগীতে রাল্ফ ওয়াল্ডো এমার্সনের “Self-Reliance” এর গুঞ্জন। তারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী মন্দার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারত সরকারের জীবদ্দশায় একক এবং একমাত্র কাব্যিক উচ্চারণ- “vocal for local” বার্ন্সটাইনের সেই প্রস্তাবনা “A President should campaign in prose and govern in poetry” কিন্তু সন্দেহপ্রবণ প্রযোজক যুক্তি দেখালেন যে সরকারের ছড়াটি স্রেফ মুখেন মারিতং জগৎ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ষোলোআনা। জনপ্রিয় প্রবাদ- “Behind every successful aphorism (man), there is a cultural mark (woman)” প্রতিধ্বনি করে প্রযোজক বলছেন স্ব-নির্ভরতার সরকারী কৌশলটি কুম্ভীলক বৃত্তির চরম উদাহরণ কারণ এই আইডিয়া ভারতের বর্তমান গৃহবধূগণের, যাঁরা তাঁদের পরিচারিকাহীন ও WFH[11]-অনভস্ত স্বামী পরিবৃত কোয়ারেন্টাইন্ড জীবনে এই পন্থার সঙ্গে প্রায়-অভ্যস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন।
> কুশীলব:- উইলিয়াম ব্লেক ও সহঅভিনেতা রাল্ফ ওয়াল্ডো এমার্সন
> বিস্ফোরণ:- মানবীয় বাস্তবায়ন
উইলিয়াম ব্লেক তাঁর বিখ্যাত কবিতা “দ্য হিউম্যান অ্যাবস্ট্রাক্ট” এর নাট্যকারের রচিত সংস্করণটির ভাষ্য শুনছেন, যেখানে বার্ন্সটাইনের এই মনুষ্য বাস্তবায়ন মানুষের এক সংস্কারসাধন, তার কংক্রিট রূপের বিপরীতে তাকে এক বিশেষ বা স্বতন্ত্র রূপের ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অদ্ভুতানন্দ প্রযোজক মাঝপথে বাধা দিয়ে একজন সমসাময়িক আমেরিকান কবি এলিজাবেথ উইলিসের দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুললেন, যাঁর ওই একই শিরোনামে একটি বই আছে-The human abstract [12]-দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ হল মূর্ত বা শারীরিক। অথচ অ্যাবস্ট্রাক্ট বলতে বুঝি বিমূর্ত, শরীরী বন্ধনে যে বাঁধা পড়ে না। দুই পরস্পরবিরোধী শব্দের এই সংযোজন একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় কবি উইলিসের চেতনার দরবারে। আর সেই চ্যালেঞ্জটাকেই মূর্ত হতে দেখি উইলিসের কবিতায়। একই সঙ্গে দুই বিপরীত বস্তুর অবস্থান নয়, বরং দুই ভিন্নপথে ভিন্ন উপায়ে দেখা। উইলিস “দ্য হিউম্যান অ্যাবস্ট্রাক্ট” কে দেখেছেন এক মানবীয় টেমপ্লেট হিসেবে। ভাষালঙ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে উইলিসের “দ্য হিউম্যান অ্যাবস্ট্রাক্ট” কবিতার শরীরী ভাবনার বীজ বুনে দেয় যেখানে কবিতার শরীরী ভাষার ভেতর আত্মগোপন করে থাকে কবির অনুভবের বা বোধের অণুরেণুগুলো, রূপকের আড়ালে, নিরাকারের ভঙ্গিমায়। কবিতা নিরাকার। রূপদর্শী কবি তার কল্পনার জগতে মূর্ত অভিজ্ঞতার এক বিমূর্ত রূপরেখা তৈরি করে আর সেই শব্দবাহিত বিমূর্ত দৃশ্যের লিপি থেকেই কবিতা, যেখানে শব্দেরা সিম্বল নয়, বরং চিহ্ন, ধ্বনি, যেখানে অনন্ত সম্ভাবনায় মানুষ শুরু করতে পারে ব্লেক কথিত সেই mental fight, যেখানে নিজেরই তৈরি মনস্তাত্ত্বিক শত্রুর বিরুদ্ধে তার লড়াই। প্রসারণশীল মহাবিশ্বের মতো কবিতার অনন্ত প্রসারণ, নিজেরই অবিরাম রূপান্তর শোনা যায় নাট্যকার বার্ন্সটাইনের Pitch of Poetry -বইটিতে, “abstraction is never more than extension of figuration, just as figuration is never more than extension of abstraction. But also abstraction is never more than figuration of extension.”: “কবিতার এই শরীর “বস্তুগত” শরীর নয় বরং ব্লেক যেমন বলেন, “এক আধ্যাত্মিক শরীর”। কবিতা এক প্রতীকী স্থান, এক কাল্পনিক স্থান যার মূল্য বিশ্বকে “প্রতিনিধিত্ব” করার মধ্যে নেই বরং অন্বেষণ করে এক “বাস্তব”কে এবং ভাষা হিসেবে”।[13]
ব্লেক করুণাকে ব্যবহার করেছিলেন মানুষের অ্যানিম্যালাডির[14] ফার্মাকন হিসাবে, যেখানে জ্যাক দেরিদার ফার্মাকন (ড্রাগ) শব্দটি তাঁর “প্লেটোর ফার্মাসি”তে দ্ব্যর্থবোধক, বিষ ও ওষুধ উভয় হিসাবেই; বার্নস্টাইনের ভাষায় অ্যানিম্যালাডি হ’ল প্রাণী হয়ে প্রাণী হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার এক মনুষ্যব্যাধি। নিজের মৌলিক প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্যই নিরাপত্তার বেড়াজাল হিসেবে তৈরি করেছে এই বিমূর্ত রূপ, এক সর্বজনীন মানবিক ভাবপ্রবণতার মুখোশের আড়ালে, বার্নস্টাইনের ভাষায় “দরিদ্রকে অনুকম্পা দেখানো মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এক বিষাক্ত নিষ্ঠুরতা” যেমন নীট্শে বলেছিলেন, “কেন করুণাব্যঞ্জক কর্মকাণ্ডগুলো প্রশংসিত হবে?…একজন মহানুভব দুর্ভাগ্যবানকে সাহায্য করে কিন্তু তা কোনোমতেই তারা করুণার বশবর্তী হয়ে করে না, বরং ক্ষমতার বাহুল্য থেকে সৃষ্ট আকাঙ্ক্ষাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য করে”।[15] একজন কবি যখন তাঁর স্বাধীনতার এই অভাবকে আবিষ্কার করেন, তখন এই সীমাবদ্ধতায় তাঁর দ্বন্দ্ব তাঁর লড়াই শুরু হয়। নিজস্ব ভাবনার চলন সম্পর্কে সচেতন কবি আবিষ্কার করেন চিন্তা ও চিন্তকের মধ্যে, পর্যবেক্ষিত ও পর্যবেক্ষকের মধ্যে, জ্ঞাত ও জ্ঞানীর মধ্যে এক দুরূহ বিভাজন আর এই বিভাজনের মায়া থেকে বেরিয়ে আসতে নেপোহিউম্যান সমাজের অনড়তা পেরিয়ে ঝাঁপ দেয় নিশ্চিত থেকে অনিশ্চিত, স্যানিটি থেকে ইনস্যানিটিতে এবং একঘরে হয়ে ওঠেন প্যাটাক্যুয়রিক্যাল জগতে।
প্রথম দৃশ্য:
নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রুকলিন ব্রিজ। হার্ট ক্রেন “The Bridge”-এর ওপর অপেক্ষায় আছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে লাল ও সবুজ আলো “অত্যুজ্জ্বল ব্যর্থতা” ও “অনুজ্জ্বল সাফল্য” এর মধ্যে প্রতিশব্দের ছদ্মবেশে জ্বলছে নিভছে। নেপথ্যসংগীতে এডগার অ্যালান পো গাইছেন “never more”
> কুশীলব:- হার্ট ক্রেন
> বিস্ফোরণ:- প্রতিকারহীনতা [প্রতিলিপি]
হার্ট ক্রেন অপেক্ষায় আছেন তাঁর কবিতা “The Bridge” এর ব্যর্থতা বা সাফল্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নীতিবাগিশ অথবা প্যাটাক্যুয়রিক্যাল সমালোচকের “pick-up” এর জন্য। এডগার অ্যালান পো নিঃশব্দে “The Bridge” এর ওপর তাঁর “ফ্ল্যাশপয়েন্ট নন্দনতত্ব” নিয়ে উপস্থিত: “সংক্ষিপ্ত এবং অনির্দিষ্ট ঝলক” এর কাব্যিক সূত্র নীতিবাগিশদের সমাজচ্যুত করে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এই সত্য যে, “The Bridge” কবিতার নান্দনিক শক্তি শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক সংবেদনার বিস্ফোরণ সত্ত্বেও নয় বরং তারই সংযোগে ঘটে, (নৈতিকতাবাদীরা একে বিকৃত বলতে পারে); সেতুর ওপর ক্ষণস্থায়ী যৌনতা বিনিময়ের অনুরূপ”। প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি বার্ন্সটাইন “দ্য ব্রিজের” এর “অত্যুজ্জ্বল ব্যর্থতা” কে বার্ন্সটাইনের কয়েনেজ করা শব্দ ‘প্রতিকারহীনতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, যা আনমিতলজির অন্তর্ভুক্ত, প্রতিধ্বনি করে পো-এর তত্ত্ব; “এর বেশি কিছু নয়” যা ক্রেনের দীর্ঘকবিতাকে উপহার দেয় ঋণাত্মক অর্থনীতি যার ক্ষতি তীব্রতাকে দীর্ঘায়িত করে।
এইসময় অভিনেতাদের মধ্যে এক দেশবাসী প্রশ্ন তুলছেন এই বিস্ফোরণকে “প্রতিলিপি” বলার অর্থ কী? পরিচালক বার্ন্সটাইন মঞ্চে এসে উপস্থিত হয়েছেন এবং বলছেন, প্রতিলিপি হল এক সত্তাতত্ত্বীয় কৌতুক। এ প্রতিলিপির কোনো আসল লিপি নেই। সেটাই সাহিত্যরচনা, তার পুনরুৎপাদনের সম্ভাবনায়। যার প্রতিধ্বনি শুনি তাঁর কবিতায়, “বাস্তবতা সাধারণত নকলের এক দুর্বল অনুলিপি। আসল এক অনাগতের প্রতিধ্বনি। সময় একরৈখিক নয়, বৃত্তাকার নয়; সময় ঝরে যায়। সৌন্দর্য সেই ঝরে যাওয়া সময়ের স্মৃতি। স্মৃতি ঝরে যাওয়া সৌন্দর্যের প্রতিফলন।…যখন ভাষার কাছে যাই আমি শুনতে পাই তার প্রতিধ্বনি আর বিপরীতগুলো। সেটাই আমার চেতনার ক্ষেত্র। যখন আমরা অর্থ তৈরি, উৎপাদন আর আরোপ করা বন্ধ করি তখনই তার সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা।”[16]
প্রথম দৃশ্য:
ওয়াল্ট হুইটম্যান তাঁর সর্বাপেক্ষা ডিস্টোপিয়ান কবিতা আবৃত্তি করছেন, “Let that which stood in front go behind! and let that which was behind advance to the front and speak.”[17] ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিন কল্পনা করছে দক্ষিণ ফ্রান্সের পাগলাগারদ -এডগার অ্যালান পোয়ের “The System of Doctor Tarr and Professor Fether”, যদিও “Maison de Santé” এর আক্ষরিক অনুবাদ পাগলাগারদ নয় বরং বিপরীত, স্বাস্থ্যনিবাস। নেপথ্যসংগীতে “Cock-a-doodle-de-dooooooh”: ঘোষনা করছে প্রাতিষ্ঠানিক নাপাগলের উল্টোমুখে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল পাগলের সদা বিদ্যমানতা।
> কুশীলব:- ওয়াল্ট হুইটম্যান ও সহভিনেতা এডগার অ্যালান পো
> বিস্ফোরণ:- Tarr & Fether
এডগার অ্যালান পো সভাপতিত্ব করছেন The Society for the Devolution of Midrashic Antinomian. বক্তৃতা দেবেন আনমিতলজির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রচনা “The System of Doctor Tarr and Professor Fether” নিয়ে। বার্ন্সটাইনের কয়েনেজ করা শব্দ মিডরাশিক অ্যান্টিনোমিয়ানিজম হল আনমিতলজির এক নতুন পথ- “কবিতা একমুখি নয়, বরং বহুমুখি অর্থ ও ধ্বনির সম্ভাবনায় শেষ হয়… কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে শিল্পকলা সবসময় তার বস্তুগত নির্মাণকে যেমন পেরিয়ে যায় তেমনি পেরোয় তার আদর্শবাদীতা; শারীরিক বা ডিজিটাল দৃষ্টান্ত ও অভিজ্ঞতাগুলো, অগ্রবর্তী কোড বা অ্যালগরিদ্মিক পারমুটেশানগুলো তখন সে তার পর্যবেক্ষণ বা পাঠের মাননির্মাণ স্টেশন হয়ে দাঁড়ায়; আর যে কোনও সংখ্যার ব্যাখ্যা, প্রকাশনার প্রাসঙ্গিক বিষয়, ঐতিহাসিক সংযোগগুলো এক মনোমুগ্ধকর আকর্ষণ নিয়ে এক শূন্যতার কেন্দ্রের চারপাশে জড় হয়”[18]।
“Maison de Santé” পাগলাগারদ মৌলিক প্রগতিশীল যা “প্রশমিতকরণ” প্রক্রিয়া অনুশিলন করছে, যেমন পরিচালক বার্ন্সটাইন বলেন, “যদি আমি অসন্তুষ্ট হই তবে আমার ক্ষতকে প্রশমিত করতে আমি ভাষার খোঁজ করি আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করি”। এই হল প্যাটাক্যুয়রয়েড ইউটোপিয়ার ভিত, যেখানে স্বাভাবিকতার কোনও মানদণ্ড প্রয়োগ করা হয় না; প্রাতিষ্ঠানিক কবিতার কন্টেইনমেন্ট জোনের বাইরে এক “pirate utopia” বা “Temporary Autonomous Zone”[19] যেমন বিদ্রোহী মার্কিন কবি হাকিম বে বলেছিলেন। পাগলাগারদের বাসিন্দারা প্যাটাক্যুয়রিক্যাল পাগল আর তাদের বাস্তবতা উদ্ভট ও রহস্যময়। বাস্তবতা বস্তু ও মনের আগে আসে আর বস্তু ও মনের জন্ম দেয় ও তার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। তবু বাস্তবকে বস্তুর সীমানায় ধরা যায় না, যুক্তির বন্ধনে বাঁধা যায় না; কেবল তার প্রকৃত সত্যের বিপরীতমুখি বহুমাত্রিক প্রতিচ্ছবিগুলো চেতনার গভীরে অনুভূত হয়। আর এর বাইরের সমস্তকিছুই অবাস্তব। যারা এই অবাস্তবতায় মন্ত্রমুগ্ধ তারাই সমাজের প্রচলিত স্বাভাবিকতার মানদণ্ডে নাপাগল। পোয়ের গল্পের রহস্যময় সত্যটি উন্মোচিত হ’ল বার্ন্সটাইনের Pitch of Poetry -বইটিতে: “তুমি যদি নাপাগল শ্রেণীর দর বাড়াতে চাও তবে পাগল শ্রেণীটাকে বলির পাঁঠা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এই পরজীবী সম্পর্ক নিঃসন্দেহে আনমিতলজির ভিত্তিস্বরূপ”।
প্রথম দৃশ্য:
উইটগেনস্টাইনের The Philosophical Investigation এর ক্ষেত্রভূমি। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিন টগ্ল করছে তাঁর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল শব্দ “queer” এর সেক্সুয়াল ও টেক্সুয়াল অর্থ নিয়ে। Wordsworth’s Philosophic Song[20]-এর নেপথ্যসংগীত জাক্সটাপোজ করছে কবিতার আবেগাক্রান্ত অভিব্যক্তি ও দার্শনিক সত্যের দাবির মধ্যে।
> কুশীলব:- লুডভিগ উইটগেনস্টাইন
> বিস্ফোরণ:- Com(op)positionality
অস্ট্রিয়ান-ব্রিটিশ দার্শনিক লুডভিগ উইটগেনস্টাইন প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবিতা জোনের কি-ওয়ার্কারদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যবহৃত ভাষা কীভাবে তথাকথিত বাস্তব জগৎকে উপলব্ধি করার প্রসেস গড়ে তোলে তার যে দার্শনিক তদন্ত করেছিলেন, তা যেমন L=A=N=G=U=A=G=E-এর মূল ভিত্তি তেমনি প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি বার্ন্সটাইনেরও। দর্শকরা “queer” শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, যে শব্দ প্যাটাক্যুয়রিক্যালিজ্মের তিনটি শব্দের অন্তর্গত, (PATAphysics + QUE(e)R + querY = PATAQUERY)। ভাবছেন যৌন অভিমুখিতার প্রচলিত সংজ্ঞার সাথে এর সম্পর্ক নাকি অন্য কিছু। এই সময় মঞ্চে হাজির হলেন পরিচালক বার্ন্সটাইন আর তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন যৌনতা বিষয়ক সম্পর্ক: “উইটগেনস্টাইনের সময়ে “queer” শব্দটি গে সমকামীকেই হয়তো বোঝাত, কিন্তু এখানে অবশ্যই তাঁর সেই সুপরিচিত সমকামিতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য এই শব্দের উল্লেখ করেননি। এ হল এক ধরণের নান্দনিক শক ট্রিটমেন্ট বা নেশাগ্রস্ততার পদ্ধতি, শব্দের উদ্ভট দৃষ্টান্তকে ব্যাধি থেকে সংগীতে রূপান্তরিত করার পদ্ধতি”।
দর্শক কবিতার দর্শন ও সংগীত একই স্রোতে গা ভাসাতে পারে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্ত। তা দেখে পরিচালক বলছেন, “দর্শন ও কবিতার মধ্যে পার্থক্য হল শিল্পের প্রকার ও অলংকারের ক্ষেত্রে, যুক্তি, জ্ঞান, সত্য বা নিরপেক্ষতার (বা মিথ্যাচার, সংশয়বাদ, অনিশ্চয়তা, প্রভাব) দাবি করে। অন্য কথায় বললে কবিতার ক্ষেত্রে আবেগাক্রান্ত অভিব্যক্তি ও দর্শনের ক্ষেত্রে সত্যের দাবির মধ্যে কোনো পার্থক্য আমি দেখতে পাই না। বিপথগামীর ভাষায় বলা যায় আমি দর্শনে আবেগাক্রান্ত অভিব্যক্তি আর কবিতায় সত্যের দাবিতে আগ্রহী”[21], কারণ, “Every apple has a core, every horizon a philosophic song”
পরিচালক বার্ন্সটাইন বিশ্বাস করেন যে, “উপবৃত্তাকার ও সংকর কবিতাশৈলীর সাম্প্রতিক উত্থানগুলো কোনো আন্দোলন নয় বরং একটা কৌশল যা “বিঘ্নকারী ও অবাধ্য ভাবাদর্শগত নান্দনিক চ্যালেঞ্জগুলোকে দমন করে। কিন্তু আসল সত্য হল নান্দনিক আদর্শ থেকে রেহাই নেই, OVC[22]–র বাহুল্য, মতানৈক্য ও বিরোধিতা অস্বীকার করার শপথ নেওয়া নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও- অর্থাৎ তিন ‘q’-র বিরোধিতা– queered(কিম্ভূত), quixotic(কল্পনাবিলাসী), querulous(কলহপ্রিয়)”। এই তিন ‘q’ হ’ল প্যাটাক্যুয়রিক্যালিজ্মের মৌলিক উপাদান যা সর্বদা দ্বন্দ্বকে তাদের নান্দনিক তূণ হিসাবে ধরে রাখে আর ক্রমাগত প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির শাসিত ও আধিপত্যবাদী পরিবেশের ভিতরে বসত করা সমস্ত ধরণের ফর্মের অস্তিত্বের খোঁজ করে। আসলে “আদর্শগত আধিপত্য বা দূষণমুক্ত” নিরপেক্ষ স্থানের ভাবনাকে “ইতিবাচক” ভাবাটাই হল একটি “আদর্শগত স্ব-প্রতারণামূলক” ভাবনা, কারণ “it cannot open up to contradiction, difference, or dialectic, that is, to com(op)positionality.”
প্রথম দৃশ্য:
জিগফেল্ড[23] রেডিও শো, নিউইয়র্ক সিটির মিডটাউন ম্যানহাটন। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে ফ্যানি ব্রাইস[24] একটি ইহুদিমুখ ভিজ্যুয়ালাইজ করার জন্য তাঁর অবাঞ্ছিত প্রবেশকারীর নাক নিয়ে ইহুদি উচ্চারণে “বেবি স্নুক্স” পরিবেশন করছেন। নেপথ্যসংগীতে ফ্যানি ব্রাইসের প্যাটাক্যুয়রিক্যাল রেডিও ভয়েস- “I’m an Indian” (“O look at me I’m an Indian, that’s something that I never was before”)
> কুশীলব:- ফ্যানি ব্রাইস
> বিস্ফোরণ:- Passing
প্রথমে পরিচালক বার্ন্সটাইন “Passing” নামক বিস্ফোরণটির ব্যাখ্যা দিচ্ছেন- “উপেক্ষা করা এবং অতিক্রম করাকে প্রতিরোধ করা- এই দুধরণের আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ মার্কিন সংস্কৃতি অর্থাৎ প্রভাবশালী সংস্কৃতি দ্বারা শোষিত হওয়া বা সেই সংস্কৃতিটির পুনর্নির্মাণ করার আকাঙ্ক্ষা। আত্তীকরণ যতটা ভয়ে ততটাই এই আকাঙ্ক্ষার তাড়নায়”। পরিচালক তাঁর এই বিস্ফোরণের অভিনেত্রী হিসেবে জিগফেল্ড তারকা ফ্যানি ব্রাইসকে বেছে নিয়েছেন, যিনি তাঁর জাতিগত পারফরম্যান্স দিয়ে দেখিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় মার্কিন বিনোদন সংগীত কীভাবে প্রভাবশালী সংস্কৃতির দ্বারা চিহ্নায়িত হয়েছিল; যেখানে তিনি তাঁর “I’m an Indian” গানে মার্কিন প্রবাসীর রূপায়ণে নিদারুণ বেমানান কমিক এফেক্ট তৈরি করার জন্য ইহুদি উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন আর সর্বজনীন সমাজতান্ত্রিক মূল্যে রচিত হয়েছিল তাঁর গান- “The Song of the Sewing Machine” : “There is no song, there is no birds/ And God is just another word/ If you listen to the song of the sewing machine”
প্রথম দৃশ্য:
OVC-র কনভেনশন হলের মঞ্চ, যাকে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবিগণ কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কারণ তাঁরা ভাষার মরাল ভাইরাসে আক্রান্ত। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে “duck/rabbit” চিত্রটি উইটগেনস্টাইনের পরামর্শে “aspect blindness” ভিজ্যুয়ালাইজ করার চেষ্টা করছে। দার্শনিক তদন্তের জন্য উইটগেনস্টাইনের কণ্ঠে “seeing as”-এর নেপথ্যসংগীত অনুরণিত হচ্ছে হলের ভেতর।
> কুশীলব:
é সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফেনজা Associate Writing Programs এর নির্বাহী পরিচালক ডি ডব্লু ফেনজার ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
é গ্রেয়াই তিন প্রতিক্রিয়াশীল কবিতা সমালোচক হেলেন ভেন্ডলার, চার্লস সিমিক ও ওয়াল্টার বেন মাইকেল্সের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
> বিস্ফোরণ:- প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির জেলখানা
মঞ্চে প্রবেশ করছেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফেনজা। বক্তৃতার বিষয় “Advice for Graduating MFA Students in Writing: The Words and the Bees.”[25] হলের সংরক্ষিত আসন অলংকৃত করে আছেন তিন গ্রেয়াই, তাঁদের হাতে একটা চোখ নিয়ে, যা তিনজনে ভাগ করে পৃথিবীকে দেখেন। প্যাটাক্যুয়রিক্যাল ক্রিয়াকলাপের প্রতিক্রিয়াশীল সমালোচনার জন্য এই চোখটি তাঁরা পেয়েছেন সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছ থেকে। কিন্তু প্যাটাক্যুয়রিক্যাল পরিচালক মনে করেন যে, একটা চোখ ভাগ করে নেওয়ার পরিবর্তে প্রতিটা চোখের মধ্যে তিনটে চোখ থাকা উচিত, বিশেষত তৃতীয় নয়নের উপস্থিতি জরুরি, যা প্রতিধ্বনিত করে ভারতীয় দর্শন। অন্য ভাষায় বলতে গেলে প্যাটাক্যুয়রিক্যালিজ্মের অবাঙ্মমনসগোচর আত্মাকে উপলব্ধি করার জন্য সেই অ্যালফ্রেড জ্যারির প্যাটাফিজিক্যাল চোখ থাকা প্রয়োজন। সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও গ্রেয়াই সকলেই নেপোহিউম্যানিস্ট জোটের অংশ; বার্ন্সটাইনের ভাষায়, “তাঁরা ‘বৈচিত্র্যতা’ বা ‘অপর’ কে বর্বর বলে চিহ্নিত করেন কারণ ‘অপর’ তাৎক্ষণিক বোধগম্য নয়”। নীট্শে্কে প্রতিধ্বনিত করে বলা যায়, নেপোহিউম্যানিস্ট হ’ল এক ধরণের প্রজাতি “যাঁরা চান তাঁদের প্রজাতিটি প্রকাশিত হোক, কারণ তাঁদের প্রকাশিত হতে হবে, নাহলে বিলুপ্ত হবার ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নিতে হয়। এই সুবিধেজনক অবস্থানে ‘অপর’ এর প্রতি আবেগ দেখানোর মতো সুরক্ষার অভাব আছে; এই প্রজাতির নিজেকেই প্রজাতি রূপে দেখা প্রয়োজন….. এরা বিদ্রোহী ও অবদমিতদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির কাব্যজগত জুড়েই নেপোহিউম্যানিস্টদের অস্তিত্ব; তবু সতত পরিবর্তনশীল রহস্যময় এই মহাবিশ্ব ‘অপর’ প্রজাতিরও জন্ম দেয়, যাঁরা আনমিতলজির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন প্রচলিত কাব্যিক নৈতিকতা এখন ‘পুরোনো’ হয়ে গেছে, এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন তাঁদের “নিজস্ব আইনের কাছে; আত্ম-সংরক্ষণ, আত্ম-উন্নতি আর আত্ম-মুক্তির জন্য নিজস্ব শিল্প ও শিল্পশৈলী্র কাছে”; নান্দনিক অনুসন্ধান করেন অন্য কিছু্র জন্য নয় শুধু নতুন “কেন” আর নতুন “কীভাবে” খোঁজ করার জন্য।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফেনজা তাঁর বক্তৃতায় যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, সাহিত্য পুরষ্কার পদ্ধতির গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা “নৈতিকভাবে বেমানান”। ফেনজার নৈতিক ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি বলছেন, ঠাণ্ডা যুদ্ধের যোদ্ধাদের জন্য ‘অনৈতিক’ হল গতানুগতিক; ‘বেমানান’ শব্দটি প্যাটাক্যুয়রিক্যাল সদিচ্ছারই প্রকাশ। এইসময় “seeing as”–এর নেপথ্যসংগীত বিস্ফোরণ ঘটাল দর্শকদের মধ্যে- উইটগেনস্টাইনের দার্শনিক তদন্তে ধরা পড়ল যে, বিস্ফোরকটির নাম “দৃষ্টিকোণের অন্ধত্ব” যার ফলে duck/rabbit ইমেজটি অধরায় রয়ে যায়। গ্রেয়াইদের মতো যাঁরা একটিমাত্র চোখ ভাগ করে ব্যবহার করেন তাঁরা ইমেজের উপলব্ধিতে দ্ব্যর্থকতা ধারণ করতে ব্যর্থ হন, যা “seeing as”-এর জন্য অপরিহার্য। এ হল উপলব্ধির দৃষ্টিকোণ যেখানে অর্থের বিভিন্নতা অনুভূত হয়, যা অসীম সম্ভাবনার স্বীকৃতি ও সম্ভাব্য ‘অপর’-কে স্বীকার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই গ্রেয়াইরা প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির কাছে উৎসর্গীকৃতপ্রাণ সুপারিন্টেন্ডেন্টের দেওয়া চোখ দিয়ে “বৈধ উদ্ভাবনকে অগ্রাহ্য করেন এবং সাংস্কৃতিক ধারার (অনেকের মধ্যে একটি) প্রচার করেন: এ হ’ল পার্থক্যের মধ্যে দিয়ে প্রতিরোধ নয় বরং শোষণের মাধ্যমে আত্তীকরণ”।
প্রথম দৃশ্য:
ফরাসি ডাক্তার তাঁর স্ব-নির্মিত ও চিরশুষ্ক ‘skiff’ বা ছোট নৌকোয় বসে আছেন, যা জলে ও স্থলে একইভাবে চলতে পারে। ফরাসি ভাষায় ‘skiff’ হল তাসের টেক্কা অর্থাৎ কৌতুকপ্রিয় ডাক্তারের নৌকোটি উচ্চমানের বা মহত্তম। একটা বাঁদর ও এক আইনজীবীকে নিয়ে ডাক্তার চলেছেন তাঁর অভিযানে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের ফরাসি প্রোটোমর্ডানিস্ট অ্যালফ্রেড জ্যারি তাঁর সাইকেলে বসে আছেন, যে সাইকেলের দাম তাঁর ৩৪ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবদ্দশায় পরিশোধ করে উঠতে পারেননি। সাইকেলে বসেই তিনি ’pataphysics–এর ব্যাকরণ ব্যাখ্যা করছেন- “সাধারণ শব্দকৌতুক এড়াবার জন্য এই শব্দের আগে ঊর্ধকমা জরুরি”।[26] এখানে শব্দকৌতুক বলতে ফরাসি ভাষার patte à physique (থাবা), যেমন বলেছিলেন অ্যালফ্রেড জ্যারির নব্য-বৈজ্ঞানিক উপন্যাস Exploits and Opinions of Doctor Faustroll, Pataphysician বইটির অনুবাদক সাইমন ওয়াটসন টেলার। নেপথ্যসংগীতে একটি বাঁদরকণ্ঠের “হা হা” সুর।
> কুশীলব:
’ ফরাসি ডাক্তারটি জ্যারির উপন্যাসের নায়ক ড: ফাউস্ট্রোলের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।
’ বাঁদরটি বস-দ্য-ন্যাগি নামে কুকুর-মুখী ও একস্বরা এক বেবুনের ভূমিকায় অভিনয় করছে। তার গণ্ডদেশের যুগ্ম স্ফীতির জন্যই এই নামকরণ। বাঁদরটি ডাঃ ফাউস্ট্রোলের অন্যতম পরিচারক ও পথপদর্শক হিসাবে তাঁর অভিযানের সওয়ারি। কৌতুকপ্রিয় জ্যারি বাঁদরটির নামকরণে ফরাসি ন্যাগি শব্দে নিতম্বের আভাস দিচ্ছেন।
’ পরিচারকটি প্যানমাফ্লের চরিত্রে অভিনয় করছেন, যিনি প্যারিসের সিভিল কোর্টের আইনজীবী এবং বাড়িভাড়া না দিতে পারার দরুন ড: ফাউস্ট্রোলের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ড: ফাউস্ট্রোলের অনুসরণকারী ও বন্দী। তাঁর আসনে চেন দিয়ে বেঁধে সুরায় মজিয়ে তাঁকে আয়ত্ত করা হয়েছে। তিনি নৌকোর মাঝি ও উপন্যাসের কথক।
> বিস্ফোরণ:- অ্যান্টি ব্যাচেলার মেশিন
প্যাটাফিজিশিয়ান ডঃ ফাউস্ট্রোল বাড়িভাড়া দেওয়ার ব্যর্থতার কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং নতুনের হাত ধরে অনির্দিষ্টকালের এক অভিযান শুরু করেছেন কাল্পনিক জগতে, যা বসত করে বাস্তব ও অবাস্তবের মাঝখানে; যেমন উপন্যাসটির ভূমিকায় রজার শট্টাক বলছেন, “তাঁদের এই সফর ১৪টি দেশ ও দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যায় এবং সেই স্থানের ও বাসিন্দাদের বর্ণনায় প্রতিফলিত হয় শিল্পজগতে জ্যারির ১৪ জন বন্ধু (বা শত্রু) সম্পর্কে জ্যারির মন্তব্য;” তারই ইশারা ড: ফাউস্ট্রোলের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিভিন্ন লেখকের ২৭টি বই, যাঁরা অ্যালফ্রেড জ্যারির ফ্যান্টাসির ভিত রচনা করেছিলেন, যেমন প্রতীকবাদী বোদলেয়ার, কোলেরিজ, র্যামবো, ম্যালার্মে, ভারহারেন, আর্তুদ, কিউবিজম ও পরাবাস্তববাদের প্রাণপুরুষ অ্যাপোলিনেয়ার, কল্পবৈজ্ঞানিক ঔপন্যাসিক জুলে ভার্ন, অ্যালফ্রেড জ্যারির নাটক ইউবিউ রোই ইত্যাদি; যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় জ্যারির রচনাকৌশলের শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ এবং অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক লজিকের শেকড়; যা এই কাব্যিক অভিযানের ভিত্তিরচনা করে; এই অভিযান এক অনিশ্চিত, বিপজ্জনক, বিরোধী অনুসন্ধান করে নাটকের সেইসব কুশীলবগণের রচনায়, যাঁরা মঞ্চে অভিনয় করছেন এই প্যাটাক্যুয়রিক্যাল ফ্যান্টাসি।
এই হাইপোথেটিক্যাল উপন্যাসের প্যাটাফিজিশিয়ান ডঃ ফাউস্ট্রোল সমস্যা সমাধান করছেন প্যাটাফিজিক্স দিয়ে, যার কয়েনেজ করেছেন অ্যালফ্রেড জ্যারি এবং সংজ্ঞায়িত করেছেন, “এ হল কাল্পনিক সমাধানের বিজ্ঞান, যা প্রতীকীভাবে বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে, যারা তাদের গুণাবলী দিয়ে বর্ণিত হয়েছে তাদের অঙ্গরেখায়।” রজার শট্টাক একে শব্দের “syzygy” বলে উল্লেখ করেছেন, যা রচনা করে অর্থের এক সংযোগরেখা, বার্ন্সটাইনের ভাষায় বললে, “শব্দের এক বেমানান বা উদ্ভট বাঁক, যা এক অন্য জীবনযাত্রার ধারণা দিতে পারে।” এ হল অ্যারিস্টটলের মেটাফিজিক্সের paronym বা শব্দকৌতুক। এই নাটকের দর্শকদের জন্য জ্যারির সতর্কবার্তা হল, “প্যাটাফিজিক্স স্বতন্ত্রতার বিজ্ঞান, যদিও সাধারণ মতামত হল বিজ্ঞান সবসময়েই সর্বজনীন। প্যাটাফিজিক্স ব্যতিক্রম নিয়ন্ত্রণকারী আইনগুলো পরীক্ষা করবে এবং মহাবিশ্বকে তার পরিপূরক হিসাবে ব্যাখ্যা করবে”। যার প্রতিধ্বনি শুনি বার্ন্সটাইনের কাব্যশৈলীতে, “এ হল সাধারণের মধ্যে বিশেষ, যেখানে সাধারণ কোনো একটা জিনিস বা একটা ধারণা নয় বরং এক যৌথ স্পেস, যেখানে আমাদের স্বতন্ত্র পার্থক্যগুলো অদৃশ্য না হয়ে সমকেন্দ্রিক।” এখানে ‘বিশেষ’ বলতে জ্যারির সেই অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা, সেই কল্পনা, সেই স্বপ্নগুলো, যার প্রতিধ্বনি শুনি রজার শট্টাকের ভাষায়, “গণিত যদি বিজ্ঞানের স্বপ্ন হয়, সর্বব্যাপিতা যদি নৈতিকতার স্বপ্ন হয়, আর কবিতা যদি কথার স্বপ্ন হয়, তাহলে প্যাটাফিজিক্স এই সমস্ত কিছুকে ড: ফাউস্ট্রোলের “সাধারণ জ্ঞানের” মধ্যে একীভূত করে; আর ড: ফাউস্ট্রোল সমস্ত স্বপ্নকে প্রাণ দেন এককে” এই প্যাটাফিজিক্সই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রচনা করে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার, যা এক স্বপ্ন, জ্ঞাতর সীমানা পেরিয়ে এক অজ্ঞাতের খোঁজ, যা ইটারনিটি নয় বরং “ইথারনিটি”-র অজানা মাত্রায় খোঁজ করে বাস্তবের রহস্য। এইসময় অভিনেতাদের মধ্যে এক মহিলা “ইথারনিটি”-র অর্থ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে ড: ফাউস্ট্রোল মঞ্চে এসে উপস্থিত হলেন এবং বলছেন, “ইটারনিটি আমার কাছে এক স্থায়ী ইথারের প্রতিচ্ছবি মাত্র, আর তাই তা আলোকবাহী নয়। আমি সেই আলোকবাহী ইথারের বর্ণনা দেব যার চলন বৃত্তাকার এবং বিনাশশীল। অ্যারিস্টটলের Treatise on the heavens থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে একে “ইথারনিটি” বলাই উপযুক্ত”।
মেটাফিজিক্স যদি ফিজিক্স পেরোনো বিজ্ঞান হয় তবে প্যাটাফিজিক্স হল মেটাফিজিক্স পেরোনো বিজ্ঞান। বিমূর্ততার বিজ্ঞান মেটাফিজিক্স আর ব্যতিক্রমের বিজ্ঞান প্যাটাফিজিক্স, যা সাধারণের নয় বরং বিশেষের বা স্বতন্ত্রের, আর তাদের মধ্যে গতিময় পারস্পরিক ক্রিয়া ও বিক্রিয়ায় অবাঙ্মমনসগোচর বৈজ্ঞানিক ব্যতিক্রমগুলোর উপলদ্ধি বিমূর্ততায়। “ডঃ ফাউস্ট্রোলের অনেক কর্মকাণ্ডকেই মহাবিশ্বের চলন সম্পর্কিত ঐশ্বরিক জ্ঞানের সাথে এবং জীবনের বুদ্বুদিত ভূতুড়ে আনন্দের সঙ্গে সমানভাবে বিশেষিত করা যায়…. যদি কেউ প্রশ্ন করেন আপনি কি খ্রিস্টান? তবে ফাউস্ট্রোলের উত্তর হল আমিই ঈশ্বর”। অথবা ড: ফাউস্ট্রোলের বাড়ির বিবরণ দিচ্ছেন প্যানমাফ্লে, যেখানে বাড়ির সেলারটি কোনো ব্যারেল বা বোতলের উপস্থিতি ছাড়াই সুরা ও স্পিরিটের মধ্যে নিমজ্জিত – কৌতুকময় ইঙ্গিত ডঃ ফাউস্ট্রোলের বৈজ্ঞানিক যুক্তির দুর্বোধ্যতা ও আয়াসসাধ্য বোধ্যতার দিকে; বিজ্ঞান এবং দর্শনের মধ্যে এক দোলাচল, যা বসত করে সেই যুক্তির জগতে যা অতিক্রম করে যায় বিচারবুদ্ধির জগৎ অথচ সে যুক্তিহীন নয়। জ্যারির এই বাঁক-নেওয়া বিজ্ঞানের অযৌক্তিকতা, দুর্বোধ্যতা, অবাঙ্মমনসগোচরতা এই প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
নাটকের এই অংশে ডঃ ফাউস্ট্রোলের যাত্রাপথের জন্য পরিচালক বার্নস্টাইন যে বিস্ফোরণটিকে আবিষ্কার করেছেন তার নাম অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিন; একটি যন্ত্র, যা পাটাক্যুয়রিক্সের নির্মাণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়, যার কয়েনেজ করেছেন শব্দকৌতুক-প্রিয় পরিচালক, যা হ’ল দৃশ্য-কৌতুক থেকে শব্দ-কৌতুকে রূপান্তরের প্রয়াস: কারণ অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিনের বৈজ্ঞানিক ভিত রচনা করেছিল ফরাসি-মার্কিন চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর মার্সেল ডুশাঁপের সেই বিমূর্ত শিল্পকলার ফিজিক্স, যা দিয়ে নির্মিত হয়েছিল তাঁর “The Large Glass” ভাস্কর্য যার নাম “Bride Stripped Bare by Her Bachelors, Even” অ্যান্টি-ব্যাচেলর মেশিনের দার্শনিক ভিত রচিত হয়েছে ফরাসি লেখক জাঁ-জ্যাক লেসার্কলের শব্দদর্শন দিয়ে, যার মূলে আছে তাঁর délire (প্রলাপ)শব্দটি যা তাঁর Philosophy through the Looking Glass: Language, Nonsense, Desire বইটির অন্তর্গত, যেখানে সেন্স জন্ম নেয় ননসেন্স থেকে অথবা উল্টোমুখে; যেখানে ভাষার ক্ষেত্রে “an expression of possession, of loss of control by the subject, reverses the relation to mastery”[27]; যা দেয় “অস্বচ্ছ সমস্যার অবাঙ্মমনসগোচর সমাধান”। প্যাটাক্যুয়রিক্যাল দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য প্যাটাফিজিক্সের যুক্তির আলোয় অদ্ভুতের খোঁজ করে সিস্টেমের মধ্যে, বাস্তবতার মধ্যে, এই সমাজ সংসার আর নিজের মধ্যে; ইঙ ও ইয়াঙের রিদ্মিক স্পন্দনে, সতত পরিবর্তনশীল মহাবিশ্বের স্পেস-টাইমের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার ভেতর এক সক্রিয় অভিযান; যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় বস-দ্য-ন্যাগির প্যাটাফিজিক্যাল “হা হা”-র দ্রুত উচ্চারণ, যতক্ষণ না বাক্যটি বিভ্রান্তিকর, এলোমেলো, উদ্ভট হয়ে ওঠে, যতক্ষণ না আমাদের এই জীবনের বহুমাত্রিক বাস্তবতার যৌক্তিকতা থেকে বিচ্যুতি ঘটে; বস্তু ও মনের, ভালো ও মন্দের, শরীর ও আত্মার দ্বৈততার বিরুদ্ধে এ এক অভিযান, যেখানে আমাদের উত্তরণ হয় প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনার কোয়ান্টাম কোহেরেন্সে।
বি.দ্র. এখানে উল্লিখিত কুশীলবগণের বাইরেও আছেন আরো পারফর্মার, যেমন পল্লীবাসী, অধ্যাপক, কবি, ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা, অফিসার, সৈনিক, খুনি ইত্যাদি, যাঁরা এই নাটকে সক্রিয়ভাবে কিন্তু নীরবে অভিনয় করছেন স্ববিরোধী বাস্তবতার সঙ্গে চলমান বিক্রিয়ায়, বিশ্বের সাথে সতত পরিবর্তনশীল সম্পর্ক নিয়ে, বাস্তবতার কোয়ার্ক ও অ্যান্টিকোয়ার্কের দোলাচলে, ভাষার অবিরাম সম্মেলনে।
————-Cock-a-doodle-de-dooooooh———————
@@@ অতঃপর শুরু হ’ল চার্লস বার্ন্সটাইনের আসল নাটক @@@
প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনা (The Pataquerical Imagination)
মিডরাশিক নীতিশাস্ত্রবিরোধিতা এবং আনমিতলজির প্রতিশ্রুতি (Midrashic Antinomianism[28] and the Promise of Bent Studies)
১৪০টি বিস্ফোরণের এক ফ্যান্টাসি
নাটকের কুশীলব
এডগার অ্যালান পো
এমিলি ডিকিনসন
উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস
উইলিয়াম ব্লেক
হার্ট ক্রেন
ওয়াল্ট হুইটম্যান
স্টিফেন মালার্মে
রালফ ওয়াল্ডো এমারসন
লুডভিগ উইটগেনস্টাইন
ফ্যানি ব্রাইস
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ফেনজা এবং গ্রায়েই[29]
দেশবাসী, সামরিক শিক্ষানবিশ, সৈনিক, বাঁদর, এক ফরাসি ডাক্তার, কুলিগুলো, এক বৃদ্ধা, ভূত, ডাইনি, অধ্যাপক, কবি, মনিব, ভদ্রলোক, মহিলা, কর্মকর্তা, খুনি, পরিচারক এবং বার্তাবাহকগণ।
ভাষার সবচেয়ে সুন্দর শব্দ অপরিচিত
বর্বর বা বারবারা
সমস্ত মানুষই মরণশীল, ধাক্কামারা ঋণদাতাও
মাতৃভাষার সবচেয়ে সুন্দর ধারণা
অন্তর্ঘাত?
আমরা ধার দিতাম
আমি আপনাকে বলছি, তাঁদেরকে নয়
“একটা নতুনের খোঁজ করুন কারণ পুরোনোটা অপ সূচক?”
-হোরহে স্যান্টিয়াগো পেরেডনিকের The Shock of the Lenders, অনুবাদক মলি ওয়েগেল।
আউশউট্জের পরে কবিতা অবশ্যই বর্বরোচিত হওয়া উচিত; সংস্কৃতিতে এটা বিদেশী হতেই হবে যা নৃশংসতার জন্ম দেয়। ফলত কবিকে অবশ্যই এক বর্বরের অবস্থান গ্রহণ করতে হবে; সৃজনশীল, বিশ্লেষক আর প্রায়শই বিরোধী ভঙ্গিতে, অপরিচিত বর্বরতা দিয়ে দখল করে (আর দখলিত হয়ে)।
-লিন হেজিনিয়ানের The Language of Inquiry – এর “Barbarism”
বাতাসে দাগানো কলঙ্কচিহ্নের
ছায়ার ভেতর দাঁড়াতে
-পল সিলান, অনুবাদক পেইরি জরিস
বৃষ্টি ও ঠাণ্ডায় পঙ্গু, দ্বিধাগ্রস্ত ও অন্ধদের ভেতর
আমার গানগুলো নির্মিত হোক, আমার গল্পগুলো বলা হোক।
-জন মেজফিল্ডের “A Consecration”
I প্রতিলিপি [Facsimile]
এক অপচ্ছায়া প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতিতে হানা দিচ্ছে – প্যাটাক্যুয়রিক্যালিজম্-এর অপচ্ছায়া। সমস্ত বাহিনী নেপোহিউম্যানিস্ট[30] জোটের মধ্যে প্রবেশ করেছে ভূতঝাড়ানোর জন্য : অ্যাসোসিয়েটেড রাইটিং প্রোগ্রামস্ আর পুলিৎজার, নিউ ইয়র্কার আর নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুক্স, উপবৃত্তাকার গীতিকবিগণ এবং বর্ণসংকর মধ্যপন্থীরা। গত দু দশক ধরে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের নাটুকে কবিতার শ্বাসরোধী দমন আলগা হয়ে এসেছে L=A=N=G=U=A=G=E -এর সাহিত্যিক আবিষ্কার ও হস্তক্ষেপের চাপে আর সেই গোষ্ঠির ছিটেফোঁটা ফুলকে ফুটতে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির গ্রীনহাউসে। কয়েক দশক আগে যে গঠনগুলো দানবীয় ছিল, সেগুলোই আজ নতুন অন্তর্ভুক্তির চিহ্ন হিসেবে গৃহিত; এ হল কাব্যশৈলীর প্রতি এক সমদর্শী ও সুষম ব্যবস্থা, যা কোনো কাব্যিক আদর্শের বিনাশ নয় বরং চিহ্নিত করে অনির্দিষ্টকালের বিরাম।
এটাই প্রকৃত সময় যখন প্যাটাক্যুয়রিক্যালিস্টদের উচিত খোলাখুলিভাবে সমস্ত কবিতাজগতের মুখের ওপর তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রদর্শন, লক্ষ্যগুলোর শোভাযাত্রা, প্রবণতাগুলোর প্যারডি রচনা করা আর আনমিতলজির প্রকৃত সত্যটার মুখোমুখি হওয়া হুশহাশ শব্দ তুলে, হযবরল শব্দমাত্রায় আর হে-হো-হাহ্ ধ্বনিতে।
এযাবৎ বিদ্যমান কবিতার ইতিহাস প্যাটাক্যুয়রিক্যাল সংগ্রামের ইতিহাস। নিয়মগামী ও বিপথগামী, অভিজাত ও দেশজ, মাপসই ও মাপবর্জিত, বিশারদ ও বিমুখ, জাতিগত ও বর্বরোচিত, মার্জিত ও অমার্জিত, সঠিক ও বেঠিক, মনুষ্যোচিত ও অমনুষ্যোচিত, কালো ও সাদা, ইহুদি ও গয়[31], পায়রা ও চড়ুই, শৌখিন ও কল্পনা, ভিন্নজাতিমিশ্রিত ও বিশুদ্ধ, অঙ্গীভূত ও ব্যক্তিভাষা, শাসিত ও স্ত্রী-শাসিত– একে অপরের প্রতি অবিরাম বিরোধিতা নিয়ে বয়ে যাচ্ছিল নিরবচ্ছিন্নভাবে; এখন গোপন, এখন খোলা যুদ্ধ, একটা যুদ্ধ যা সবসময় শেষ হোত মোটামুটিভাবে কবিতার বিপ্লবী পুনর্গঠনে অথবা মধ্যমানের জয়জয়কারে। কবিতা যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে বেড়ে ওঠা এই মডার্ন নেক্রোহিউমেন সমাজ এইসব প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূর করেনি। বরং স্থাপন করেছে এক নতুন বর্ণসংকর, স্বাভাবিকতার নতুন পরিবেশ, পুরোনোর পরিবর্তে নতুন ধরণের সংশোধন।
II
আমার স্ত্রীকে বললাম, জল বড্ড অগভীর। তিনি বললেন, অপেক্ষা করো যতক্ষণ না তুমি একে আরো ভালোভাবে জানতে পারছো।
III Com(op)positionality
Wordsworth’s Philosophic Song বইটিতে সাইমন জার্ভিস মতাদর্শগত সমালোচনার ক্ষয়িষ্ণু ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন। জার্ভিস আমাদের মনে করিয়ে দে্ন যে, জার্মান মতাদর্শে মার্ক্স ইয়াঙ হেগেলীয়দের মতো আদর্শবাদীদের বর্জন করেছিলেন তাদের কালাপাহাড়ি ঔদ্ধত্যের জন্য : ধারণা ছিল যে, মিথ্যা চেতনাকে হতমান ক’রে, মূর্তি ধ্বংস ক’রে তাঁরা চিরতরে মুক্ত হবেন। ইয়াঙ হেগেলীয়দের যেটা ভুল হয়েছিল তা হ’ল হতমান করাকে সমালোচনার দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখার পরিবর্তে তাকেই শেষ বলে ভাবা; মার্ক্সীয় পথের পরিবর্তে এমার্সনীয়ান[32] পথপরিবর্তন জরুরি, যা এমন এক প্রক্রিয়া যার কোনো শেষবিন্দু নেই বরং ক্লেইনের বোতলের মতো নিজেই দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে। (পুরোনো ক্লেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সোয়েটারের মতো, যা সবসময়ই সেলে মেলে ভালো দামে)।
রোমান্টিকতার উত্তরাধিকার সমসাময়িক কবিতার কল্পনাতে হানা দেয়। জেরম ম্যাকগানের মতে রোমান্টিক মতাদর্শই যুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন কাব্যশৈলীর কর্তৃত্ববাদী মতাদর্শের অবলম্বন – সেই কবিতা বিশুদ্ধ লিরিক (নীতিবাগীশ লিরিক) ও মার্জিত শিল্পশৈলীর (অভিজাত) প্রতি দায়বদ্ধতার মধ্যে দিয়ে মানবিক অনুভূতির সর্বজনীন অভিব্যক্তি হতে পারে।[33] কবিতা, তার সর্বোচ্চ মাত্রায় এবং প্রায়শই নীরসতম গঠনে অতিক্রম করতে পারে দলীয় বিবাদ ও বিভেদমূলক অবস্থান গ্রহণ। এ হ’ল কট্টর জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ আর পল-পট-স্ট্যালিন-মাও-সে-তুঙ চিন্তাধারার অমানবিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার এক উপায় : এ এক সর্বগ্রাসী হিংস্রতার আমল যা মানবিকতার প্রকাশ্য অপমান। তাছাড়া এই দানবীয় বিস্ফোরণগুলো সম্পূর্ণ মানবীয় এবং নৈতিক অনুভূতি ও নীতিগত আচরণ দিয়ে আমাদের সংজ্ঞায়িত করে।
আমাদের সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংকৃতির প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্যকে সংজ্ঞায়িত করা হোত স্বতন্ত্র স্বার্থের লড়াই, দপদপানো আন্দোলন ও গোষ্ঠির বাইরে থাকাই শ্রেয় এমন অনুমান দিয়ে। উপবৃত্তাকার ও বর্ণসংকর কাব্যশৈলীর সাম্প্রতিক উত্থান বিষয়ে বলার হল এই যে, এটা কোনো আন্দোলন নয় বরং এক কৌশল, যা ভাঙনপ্রবণ ও অবাধ্য মতাদর্শগত ও ঐতিহাসিক সেই নান্দনিক চ্যালেঞ্জগুলোকে দমন করে[34]– এ হল আত্তীকরণ ও সমঝোতার কাব্যশৈলী, আর এটা বেশিরভাগ মার্কিন কবিতা ও ঠাণ্ডা লড়াইয়ের কাব্য সমালোচনার ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সমদর্শী ও সুষম আদর্শবাদীদের বাহুল্যবর্জন, মতপার্থক্য ও বিরোধিতার একান্ত জিদ থাকা সত্ত্বেও নান্দনিক মতাদর্শ থেকে মুক্তি নেই- সেটাই হল তিন ‘q’–এর বিরোধিতা- কিম্ভূত(queered), কল্পনাবিলাসী(quixotic), কলহপ্রিয়(querulous)। প্রচলিত রীতি, সহজগম্যতা, আপোষ, সংশোধন, মানবতাবাদী সাহিত্যিক মূল্যবোধের ব্যানারের নীচে নান্দনিক মতাদর্শের নিপীড়নে আছে আদর্শবাদীদের অস্বীকৃত অবস্থান ও গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্তির স্বাভাবিকরণের প্রভাব। এই মহীয়ান করার প্রবণতা আত্মসমর্পণ ও আপোষের কবিতা প্রতিপালন করে, যাদের স্পষ্ট সংকেত প্রায়শই শৈলীগত সংবরণ ও গীতিধর্মীতার স্বনিয়ন্ত্রণ, যা একটি নান্দনিক অবস্থান হিসেবে আশাপ্রদ হতে পারে কিন্তু মানবতাবাদী শূন্যতায় তা এক নিছক আদিম-পেশাদারী। এই হ’ল শিল্প ও পদ্ধতির মধ্যে, ইতিবাচকতা ও কথোপকথনিকের মধ্যে, খ্রিস্টীয় বিশ্বজনীনতা ও সূক্ষ্ম স্বতন্ত্রতার মধ্যে, একীকরণ ও মতবাদ সমন্বয়ের মধ্যে পার্থক্য।
আদর্শগত আধিপত্যহীন বা দূষণমুক্ত কাব্যশৈলীর নিরপেক্ষ স্পেসের কথা কল্পনা করা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কবিতা সংস্কৃতিতে এটাই আদর্শগত স্বপ্রতারণার সবচেয়ে ক্ষতিকর রূপ, কারণ এটা পরস্পরবিরোধিতা, পার্থক্য ও দ্বন্দ্বমূলক বিচারে নিজেকে মেলতে পারে না। সেটাই Com(op)positionality.
মতাদর্শকে অতিক্রম করতে হলে নান্দনিক পক্ষাবলম্বন, আন্দোলন, গোষ্ঠী ও অবস্থানগুলোর প্রতি অন্ধভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে হয়।
কবিতাশৈলী ততক্ষণ পর্যন্তই একটা মূল্যবান বিষয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে পরিপূরক ও বিরোধী দুরকম প্রতিক্রিয়ার অন্য অবস্থানগুলোর জন্ম দিতে পারে। যুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন কবিতায় উত্তরদলীয় দলবাজির এই চক্রাকার জয়োল্লাস যুক্তিতক্ককে উসকে দেবার পরিবর্তে সমাপ্তি টানার প্রচেষ্টা, যা অবস্থান অধিগ্রহণের সর্বোত্তম কুটিল রূপ।
এই জয়োল্লাস অ্যাঁভা-গার্দীয় ফর্মালিস্ট অগ্রগতিকে বিরোধিতা করার পরিবর্তে প্রতিফলিত করে, যা পূর্ববর্তী ও অপরদের নির্মূল করার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকেও নির্মূল করে।
এখনো পর্যন্ত উত্তরদলীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আরো মৌলিক ও আরো প্রচলিত এই দুধরণের কাব্যশৈলী অনুশীলনের প্রভাবশালী ফর্মের সঙ্গে যেমন নিজেদের একই শ্রেণীভুক্ত করে, তেমনি একইসঙ্গে অদূর অতীতের বিদ্রোহী কর্তৃত্ববিরোধী প্রবাহগুলোর ভাঁজে শোষিত হয়ে উপভোগ করে কর্তৃত্বের অস্থির দপদপানিগুলো। প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির এই পোস্টমর্ডান বাঁক সফল হবে সেই পর্যন্ত যতক্ষণ তারা উচ্চারণ না করে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও গতিশীল কাব্যশৈলীর সেই সব উদ্ভাবনগুলো, যারা সদ্য আবির্ভূত বা এখনও স্থায়ী হয়নি (যারা বিভ্রম, ঘৃণা, শত্রুতা ও রীতি সচেতনতার প্ররোচনা দেয় তারা সমেত)। প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির এই পোস্টমর্ডান বাঁক অদূর অতীতের মৌলিক উদ্ভাবনগুলো ততদূর পর্যন্ত মেনে নেয় ও ধারণ করে যতদূর পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতি সতত বাস্তবায়নের পথে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বর্তমানের অদম্য আবিষ্কারগুলোকে স্বীকার করতে অক্ষম থাকে।
আনমিতলজির কাজ হল “পরীক্ষামূলক” অতিক্রম করে অপরীক্ষিত, প্রয়োজনীয়, নবনির্মীয়মাণ, অস্থায়ী, উদ্ভাবনীশক্তিসম্পন্নের দিকে অগ্রসর হওয়া। উদ্ভাবন বাধা দেয় ম্যাপকে। আমি একটা কাব্যশৈলী চাই যা একক সর্বোৎকৃষ্ট সমাধানের ঐতিহাসিক অ্যাঁভা-গার্দীয় ঔপনিবেশিক উঁচুতলকে যেমন বর্জন করে, তেমনি বর্জন করে এর অন্ধকার যমজটিকেও, যা হ’ল কাব্যিক আবিষ্কারের অগ্রমস্তিষ্ক অপসারণজনিত দুর্ভাগ্য নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কবিতা সংস্কৃতির ফায়দালোটা মনোভাব।
দ্বন্দ্ব হল শিল্পের তূণ।
দ্বন্দ্ব, চ্যালেঞ্জ, বিরোধিতা অতিক্রমের ছদ্মরোমান্টিক আইডিয়াই দলাদলির সর্বোচ্চ প্ররোচনা। বাস্তবিকপক্ষে কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের সর্বাধিক আগ্রাসী ও একাগ্র ভঙ্গি হ’ল তত্ত্বগত সংঘাত হুকুম করে হারিয়ে দেবার প্রচেষ্টা।
অপর কাব্যশৈলী দমন করার প্রচেষ্টাই আরো কবিতা লেখা এবং অন্যরকম লেখার চূড়ান্ত প্ররোচনা।
IV
সেই কবিতাই সর্বোৎকৃষ্ট যা স্থায়ী হয় (খুশি করে, সহজ করে) সবচেয়ে কম। [মিথ্যা]।
V কাব্যিক অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য (Varieties of poetic experience)
কবিতার দ্বান্দ্বিক সম্ভাবনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে একাধিক ওভারল্যাপিং ও কার্যকলাপের স্বতন্ত্র নির্মাণভূমি :
এইগুলোর সঙ্গে “আনমিত কাব্যতত্ত্ব”-এর বিস্তৃত অঞ্চলে সদ্য জেগে ওঠা নতুন উদ্ভাবনগুলো :
VI
আমার কবিতা ভালোবাসি যেমন ভালোবাসি আমার ফ্রুটকেক : বাদামভরা
VII কাব্যিক সূত্র (The Poetic Principle)
এডগার অ্যালান পো-র সমাধিস্থল প্যাটাক্যুয়রিক্সের জন্মস্থল।
আমি ভালোবাসি এই দ্ব্যর্থকতা- পো মার্কিন সাহিত্যের প্রতীকসরূপ হলেও (“The Poetic Principle” প্রবন্ধে তাঁর ব্যবহৃত শব্দ) তাঁর বেশিরভাগ কাব্যতত্ত্বই অপঠিত রয়ে গেছে এবং তার নন্দনতত্ত্ব স্পষ্টভাবে বর্জিত হয়েছে (“শুধু এই আর কিছু না”)। “The Poetic Principle” (১৮৪৮) মার্কিন কাব্যশৈলীর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল ভাবনার ভিত্তিসরূপ দলিল।
আমি সংক্ষেপে বলতে পারি শব্দের কবিতা সৌন্দর্যের রিদমিক সৃজন। এর একমাত্র বিচারক হল স্বাদ। বুদ্ধি বা বিবেকের সঙ্গে এর শুধুমাত্র পাশাপাশি সম্পর্ক আছে। ঘটনাক্রমে যদি না কর্তব্য বা সত্যের সঙ্গে এর কোনো সংস্রব না থাকে।[35]
পো গোড়াতেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, মার্কিন সাহিত্যের ইতিহাসে কঠোর নৈতিক ও শিক্ষামূলক সূত্রগুলো নান্দনিক সৃজনকে এমন শ্বাসরুদ্ধ করে যেন জীবন্ত কবর দেওয়া, এমনকি যদি কফিন তৈরি হয় সূক্ষ্ম ব্রাজিলীয় মেহগিনিতে আর তা লংফেলোর পৃষ্ঠাগুলোর সাথে একই সারিতে থাকে, তবুও ধীরে ও বেদনাদায়কভাবে চেতনা হারায়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল অস্থায়ী ও অনুৎপাদক অনুভূতির বিরাগ পঙ্গু করে ফেলেছে নৈতিক রায়কে, যেমন বাসি খাদ্যের নিয়মিত জোগান যে শুধুমাত্র তাজা খাবারের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করে তাই নয়, নীরস ঘৃণ্য স্বাদে অভ্যস্তও করে তোলে।
পো ‘স্বাদের’ পরিবর্তে আইডিয়ার ওপর নির্ভরশীল কবিতার আমদানিকে বিদ্রূপ করেছিলেন; তার ওপর স্বাদ ও অনুভূতিকে সন্দেহের সুরে দেখেছিলেন এবং ৭৫ বছর পরে প্রতিধ্বনি করেছিলেন উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম্সের বক্তব্যকে “বলো, কোনো আইডিয়া নয় বরং বস্তুতে”।[36] উইলিয়াম্স দীর্ঘ কবিতার প্রয়াসে তাঁর ‘প্যাটারসন’ কবিতায় অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত বহু অংশযুক্ত কবিতার সমাবেশ করেছিলেন এবং এখানেই তাঁর এই উক্তিটি প্রথম আবির্ভূত হয়; প্রকৃতপক্ষে এই উক্তিটি তিনি এতই পচ্ছন্দ করেছিলেন যে এখানে তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন; এ কবিতা পো-এর প্রতিধ্বনি করে এইভাবে যে, মহাকাব্যের চেয়ে একে ছোট কবিতার সিরিজ হিসেবে পড়াই ভালো।
দীর্ঘ কবিতার কোনো অস্তিত্ব নেই এই মতবাদে পো এর একান্ত দৃঢ়তা নির্ভরশীল ছিল জেনোর প্যারাডক্সের ওপর, যেমন “The Confidence Man” উপন্যাসে পাওয়া যায়। অনবদ্য যুক্তি : দীর্ঘকবিতা যত চেষ্টাই করুক না কেন তার অংশের তুলনায় সমগ্রকে ধরতে, তবু অংশগুলোই “উত্তেজনার” “তীব্র” “মুহূর্তের”, যেমন তিনি দেখিয়েছেন তাঁর “The Poetic Principle” প্রবন্ধে; ডিকিনসনকে উদ্ধৃত করে বলা যায়, তা হল “কখন” – কোথায় নয় – “অর্থগুলো থাকে”।[37] এ এমন এক কাব্যশৈলী যা সময় বহির্ভূত knowledge -এর পরিবর্তে সময়গত nowledge.
VIII
তাঁরা বলেন আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাহলে এই এক্সট্রা ভারজিন ব্যাপারটা কী?
IX শুধু এই আর কিছু না (Only this and nothing more)
বলো, কোনো আইডিয়া নয় বরং বস্তুতে-
কিছুই নয় শুধুই শূন্যতা মুখ ঘরগুলোর
আর নলাকৃতি গাছগুলোর
আনমিত, পূর্বকল্পিত ধারণা ও দুর্ঘটনায় কণ্টকিত
বিভাজিত, কর্ষিত, কুঞ্চিত, বর্ণময়, কলঙ্কিত
গোপন – আলোর শরীরে –[38]–
“কিছুই নয় শুধুই শূন্যতা”: উইলিয়াম্স যখন শীতের শূন্যতার উল্লেখ করছেন, “কিছুই নয় শুধুই শূন্যতা” – ওয়ালেস স্টিভেন্সের বিখ্যাত সূত্রানুযায়ী এ হ’ল “তার উপলক্ষের উচ্চারণ/তার নিজেরই বিচিত্রতার অংশ অথচ তার সম্পর্কে নয়”।[39] “কিছুই নয় শুধুই শূন্যতা”- এ হ’ল প্যাটাক্যুয়রিক্যাল উদ্ভাস, যেমন উইলিয়াম্স বরাবর বলে গেছেন : আনমিত, বিভাজিত, কর্ষিত, কুঞ্চিত, বর্ণময়, কলঙ্কিত। শব্দগুলো নিজেদের উল্লেখ করে, কবিতায় তার স্থান চিহ্নিত করে, প্রকাশ করে তার নগ্ন উচ্চারণটুকু, তার বেশিও নয়, কমও নয়। “If I Told Him: A Completed Portrait of Picasso,”–কবিতায় গাট্রুড স্টেইন যে ধারাবাহিক শূন্যতাগুলোকে উসকে দিয়েছিলেন তা হ’ল “Now./ Not now./ And now./ Now.”[40] এই “এখন ও না”-গুলো উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিকে এমন টগল্ করতে থাকে যেন কোনো প্রেমিক ডেইজি ফুলের গাছ টানাটানি করছে, যা অর্জন করে এক ধারাবাহিকতা, যাকে পো তাঁর “The Poetic Principle” প্রবন্ধে বলেছিলেন “ক্ষণস্থায়ী ও অনির্দিষ্ট ঝলক”, যেন কোনো স্ট্রোবলাইট স্পন্দনশীল দৃশ্য বুনে তোলে মাদক প্রাবল্যের ক্ষণিক মুহূর্তে, যাকে এমিলি ডিকিনসন বলেছিলেন এক “শিল্প” যা নিজেকেই বেঁধে রাখে “সুরের বাঁধনে”। পো কর্তব্যনির্ভর কবিতার ভাইরাল নীতিশিক্ষা্মূলক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। এই উদ্ধৃতি এখনো আমাদের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক দেখাটা কি কোনো বন্য উল্লম্ফন, নাকি কোনো ইতিহাসের চেতনাহীন চারণকবির ত্রুটিমাত্র?
অব্যক্ত ও অকপটে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এটাই অনুমান করা হয়েছে যে, সমস্ত কবিতার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল সত্য। এটাই বলা হয়েছে যে, প্রতিটা কবিতা তার অভ্যন্তরে এক নৈতিক উপদেশ বহন করে; এবং এই উপদেশটাই রচনার কাব্যিক মেধা নির্ধারণ করে। আমরা মার্কিনিরা বিশেষভাবে এই সুখী আইডিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা করেছি; এবং বিশেষত আমরা বোস্টনবাসীরা এটা সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করেছি। আমরা মাথার ভেতর এটা ঢুকিয়ে নিয়েছি যে নিছক কবিতা লেখার জন্যই কবিতা লেখা এবং তাকেই আমাদের ডিজাইন বলে মেনে নেওয়াটা কবিতার প্রকৃত কাব্যিক মর্যাদা ও শক্তির কাছে আমাদের এক স্বীকারোক্তি হয়ে উঠবে: — অথচ সাধারণ সত্যটা হ’ল, আমরা যদি নিজেদেরকে অনুমতি দিই নিজেদের আত্মার দিকে তাকাতে, তবে আবিষ্কার করতে পারব এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ, আরো অদ্বিতীয় অভিজাত কোনো কবিতার অস্তিত্ব নেই, থাকতে পারে না এই কবিতার থেকে, এ-ই কবিতা, স্বয়ং এই- এই কবিতা যা শুধুই একটা কবিতা আর কিছু নয়- এই কবিতা যা লেখা হয়েছে শুধুই কবিতার জন্য।
“এই কবিতা যা শুধুই একটা কবিতা আর কিছু নয়”: “শুধু এই আর কিছু না” যা পো-এর সেই সুবিখ্যাত উচ্চারণ, একটা কবিতা যা জড়িয়ে থাকে আঘাত করে, শ্লেষোক্তিতে নিজেকেই টুকরো করে এক অনপনেয় নান্দনিক উচ্চারণে।[41] “শুধু এই আর কিছু না” তার সময়ের শব্দ চিহ্নিত করে, তার উপস্থিতির মান নির্ধারণ করে, আশু প্রয়োজনীয় ও শালীন স্বকীয় উচ্চারণ (বাণী নয়)। এটা পো-এর সেই সূত্র, যেখানে জোর দিয়ে বলেছিলেন, শিল্পের জন্যই শিল্প, প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্যরহিত শিল্প, যেমন তার উপস্থিতি ধ্বনিতে, তাৎক্ষণিক রিদ্মের উপহারে আর “কখনও বেশি নয়”-এর প্রতিধ্বনিতে। কিছুই না/ কখনও না : সমস্ত কিছুর এক প্রতিধ্বনিত অস্বীকার, তবু ধ্বনি ও ছন্দের ঘটনা সূক্ষ্মতায় ও শূন্যতায়, পূর্ণ ও শূন্য, এখানে/এখানে নয়। বস্তু নিজেই: “নামহীন চিরতরে”? এক উপস্থিতির ভেতর অনুপস্থিতি, এখন/এখন নয়, “শিহরন” (পো-র শব্দ) হারানোকে স্পর্শগ্রাহ্য করে তোলে।
আমি কি তাঁর নাম নিতে পারি? Lenore. ভাষালঙ্কার, সেটাই সব।
(ক্রেগ দ্বোয়ার্কিন বিংশ শতাব্দীর উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেমন জন কেজের “4′33″’’ No Medium -বইটিতে)।
“কাক বলে: আবার কখনও নয়”[42], যেমন তারা ফ্রান্সে বলে, অন্ততপক্ষে বোদলেয়ার ও মালার্মের ইশারানুবাদে। “শুধু এই আর কিছু না” –বোদলেয়ারের অনুবাদে “ce n’est que cela, et rien de plus,”, অথচ মালার্মের অনুবাদে তা হয়ে উঠল কেবল “cela seul et rien de plus.”। মালার্মে “Un coup de Dés” কবিতায় নীরব বক্রোক্তিতে পো-এর পরিচয়চিহ্ন এঁকেছেন নিজস্ব সংস্করণে – “cela seul et rien de plus” : ষষ্ঠ বিস্তারে, ওপরের বামদিকে, নীচের ডানদিকে, প্রতিবিম্বে, তির্যকে “COMME SI” – যেন- এইরকম আর এইরকমই, তার বেশি কিছু নয়, এ হ’ল কবিতায় স্ব-প্রতিফলিত “শিহরিত আনন্দ”-এর চিহ্নিতকরণ, প্রতিধ্বনি তুলে বলতেই পারি mise en abyme[43] হ’ল সঠিক সাদৃশ্য। চতুর্থ বিস্তারের পর ওপরের বামে নিজের থেকেই সে হল “RIEN”, তার পাশে ঘটনার সংকট নিয়ে এক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা (“de la mémorable crise / ou se fût / l’événement”)। সর্বোপরি প্রথম শব্দ যা হতে পারে বলে মনে হয় “Coup de Dés,” কবিতায় তৃতীয় বিস্তারের ওপর, তা হল পো-এর “The Raven” কবিতার প্রতিধ্বনি:
কখনও নয় (JAMAIS)
সুসান হোয়ের মতো নীতিশাস্ত্রবিরোধী ডিকিনসনের স্বর যেনবা : “শূন্যতা এক শক্তি যা বিশ্বকে আবার নতুন করে”[44]।
X
Farai un vers de dreytnien.
(বিশুদ্ধ শূন্যতা দিয়ে একটা কবিতা তৈরি হবে)
Guillaume of Aquataine (এগারো শতক), অনুবাদ পেইরি জরিস[45]
XI
কবিতা এক দুর্বল বস্তু আর সেটাই তার শক্তি।
ক্রমশ…
=========
অনুবাদের এই অংশ প্রথম প্রকাশিত হয় ইন্টার্যাক্শন-২০১৮ পত্রিকায়, সম্পাদক প্রণব চক্রবর্তী
এখানে “The Pataquerical Imagination: Midrashic Antinomianism and Promise of Bent Studies.” প্রবন্ধটির অনুসৃজন প্রকল্প। এই প্রবন্ধের এগারোটি পরিচ্ছেদ অনুসৃজন করা হ’ল এখানে। পরবর্তী অংশগুলো আসবে ধারাবাহিকভাবে। প্রবন্ধটির ইংরাজি সংস্করণ অংশুমালীর ইংরাজি সেকশানে। এই প্রবন্ধটি ২০১৬ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বার্ন্সটাইনের কাব্যতত্ত্বের বই Pitch of Poetry গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়। এই প্রবন্ধের ইতিহাস সম্পর্কে বার্ন্সটাইন বলছেন, “এই প্রবন্ধটির প্রাথমিক স্কেচ উপস্থাপনা করা হয়েছিল ২০১০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী ট্রেস পিটারসনের আমন্ত্রণে সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্ক গ্র্যাজুয়েট সেন্টারে “Tendencies: Poetics and Practice,” এবং ২০১০ সালের ১১ই জুন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের “Rethinking Poetics” অনুষ্ঠানে। প্রবন্ধটির পরবর্তী সংস্করণগুলি উপস্থাপিত হয়েছিল যথাক্রমে ২৫শে অক্টোবর ২০১২ সালে কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (মন্ট্রিয়ল) লাহে লেকচারে; ২৭শে ফেব্রুয়ারী ইয়েলে ইংরাজি বিভাগের বক্তৃতায়; ২০১৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর EPC-র অষ্টাদশ বার্ষিকী সম্মেলনে; এবং ২০১৫ সালের ২২শে মে boundary2-র আমন্ত্রণে ডার্টমাউথে অনুষ্ঠিত “The Social Life of Poetic Language” অনুষ্ঠানে”। Pitch of Poetry বইয়ের নামকরণের ভূমিকায় আছে স্ট্যানলে ক্যাভেলের The Pitch of Philosophy গ্রন্থটি, যেখান থেকে শুরু হয় কবিতা ও দর্শনের পিচের মধ্যে পার্থক্যের পর্যবেক্ষণ। কবিতার এই পীচ্ কী? বইটির ভূমিকায় তারই আভাস দিয়েছেন বার্ন্সটাইন- “পীচ্ হ’ল কবিতার ধ্বনি, আবার পীচ্ এক আক্রমণ বা অভিগমন। পীচ্ স্বরের ভিন্নতা অর্থে। দুর্গন্ধময় আঠালো দাগ। আমি সেই কবিতা চাই যার দাগ আপনি মুছতে পারবেন না”।
কবি পরিচিতি:
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন কবি চার্লস বার্ন্সটাইন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, কাব্যিক তত্ত্ববিদ ও গবেষক। শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত তাঁর Near/Miss কবিতার বইটি ২০১৯ সালে Bollingen পুরস্কার লাভ করেছে। তাছাড়া ২০১৫ সালে Janus Pannonius Grand Prize for Poetry এবং the Muenster International Poetry পুরস্কার লাভ করেন। চার্লস বার্ন্সটাইন ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন আমেরিকার ম্যানহ্যাটন শহরে ধর্মনিরপেক্ষ এক ইহুদি পরিবারে। ভিসুয়াল শিল্পী সুসান বী [লাউফার] তাঁর ঘরনি এবং দুই সন্তান, এমা (১৯৮৫-২০০৮) আর ফেলিক্স। হার্ভাড কলেজে শিক্ষাপ্রাপ্ত বার্ন্সটাইন বাফেলো স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের সানি ডিস্টিংগুয়িস্ট প্রফেসার, পেনিসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যে ডোনাল্ড টি রেগান প্রফেসার এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস এন্ড সায়েন্সের ফেলো। তিনি Loss Pequeño Glazier এর সঙ্গে যুগ্মভাবে ইলেকট্রনিক পোয়েট্রি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা, পেনে অল ফিলরেইসের সঙ্গে পেনসাউন্ড এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। এইসব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি বিখ্যাত তাঁর L=A=N=G=U=A=G=E পত্রিকার সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। ১৯৭৮ সালে ব্রুস অ্যান্ড্রুসের সঙ্গে প্রথম প্রকাশ করেন এই পত্রিকা, যা প্রথাগত মার্কিন সাহিত্যপরম্পরায় এনেছিল যুগান্তর। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ চল্লিশটি, বিখ্যাত বইগুলো- কবিতা: Controlling Interests (১৯৮০), The Sophist (১৯৮৭), Republics of Reality (২০০০), Girly Man (২০০৬), All the Whiskey in Heaven (২০১১), Recalculating (২০১৩), প্রবন্ধ: My Way: Speeches and Poems ( ১৯৯৯), Attack of the Difficult Poems (২০১১), Pitch of Poetry (২০১৬)।চার্লস বার্ন্সটাইন সম্পর্কে আরো তথ্য এই সাইটে writing.upenn.edu/authors/bernstein.
—————
ইংরেজি ভার্সান এখানে>>> Welcome to the Pataquerical Night Show
[1] Midrashic- OED: Origin: A borrowing from Hebrew. Etymon: Hebrew miḏrāš. Etymology: < post-biblical Hebrew miḏrāš homiletic commentary on Scripture (in biblical Hebrew ‘study, exposition’) < Hebrew dāraš to seek, study, expound.
[2] আনমিতলজি – আনমিত+লজি- Bent Studies
[3] Pitch of Poetry by Charles Bernstein. All quotation marks used here are from this book unless otherwise stated.
[4] Pharmakon from “Plato’s Pharmacy” by Jacques Derrida.
[5] Graeae – https://en.wikipedia.org/wiki/Graeae
[6] Lecture on Nothing by John Cage
[7] From the poem “The Raven” by Edger Allen Poe
[8] “The Poetic Principle” by Edger Allen Poe
[9] The Brihadaranyaka Upanishad with the commentary of Sankaracharya and translated by Swami Madhavananda.
[10]Chandogya Upanishad-4-10-4
[11] WFH – Work From Home
[12] The Human Abstract by Elizabeth Willis, published by Penguin in 1995 and selected for American Poetry Series.
[13] Bridgeable Lines: An Anthology of Borderless World Poetry in Bengali – An anthology with Interviews & transcreation of poems of 12 American poets, coedited & transcreated by Runa Bandyopadhyay and Aritra Sanyal, published by Aihik (Earthly) in 43rd Kolkata International Bookfair in 2019.
[14] Animalady might be defined, provisionally, as the human malady of being and resisting being animal. The word is coined by Charles Bernstein, “Close Listening” in My Way: Speeches and Poems by Charles Bernstein.
[15] Beyond Good and Evil by Friedrich Nietzsche.
[16] Near/Miss by Charles Bernstein
[17] Whitman, “Respondez!”: 1867 version of “Poem of the Propositions of Nakedness” in the 1856 Leaves of Grass, www.whitmanarchive.org/published/LG/1867/poems/126. See Vaclav Paris’s essay on this poem in Arizona Quarterly Review 69, no. 3 (Autumn 2013).
[18] Attack of the Difficult Poems: Essays and Inventions by Charles Bernstein
[19] TAZ: The Temporary Autonomous Zone, Ontological Anarchy, Poetic Terrorism by Hakim Bay.
[20] Simon Jarvis, Wordsworth’s Philosophic Song (Cambridge: Cambridge University Press, 2009).
[21] “Too Philosophical for a Poet”: A Conversation with Charles Bernstein by Andrew David King. https://read.dukeupress.edu/boundary-2/article/44/3/17/129292/Too-Philosophical-for-a-Poet-A-Conversation-with
[22] OVC- Official Verse Culture, coined by Charles Bernstein
[23] Ziegfeld Follies, started by Florenz Edward Ziegfeld Jr., an American Broadway impresario, inspired by the Folies Bergère, an opera house in Paris.
[24] Fania Borach (1891–1951), known professionally as Fanny Brice , was an American illustrated song model, comedienne, singer, and theater and film actress who made many stage, radio, and film appearances. She was a posthumous recipient of a Grammy Hall of Fame Award for her 1921 recording of “My Man”.
[25] D.W. Fenza, “Advice for Graduating MFA Students in Writing: The Words and the Bees,” Writer’s Chronicle 38, no. 6 (May/Summer 2006). I quote from pp. 3, 4, and 8. I have spoken at AWP’s convention just once, where I presented a parodic recapitulation of “Recantorium” with reference to Fenza’s commencement address: jacket2.org/commentary/recantorium-adapted-2013-awp-convention.
[26] Exploits and Opinions of Doctor Faustroll, Pataphysician by Alfred Jarry
[27] Philosophy through the Looking Glass: Language, Nonsense, Desire by Jean-Jacques Lecercle’s
[28] Antinomianism- Etymology < Greek ἀντί against + νόμος law, an ism to believe that they are not bound by moral law, instead they require to break a moral (or religious or Biblical)law.
[29] In this production played by Helen Vendler, Charles Simic, and Walter Benn Michaels.
[30] Nepohumanist – Nepohumanism (also called necrohumanism and hypohumanism) universalizes one’s immediate preferences while stigmatizing as barbaric those that are not immediately intelligible.
[31] গয় – না-ইহুদির ইহুদি নাম
[32] Emersonian – Style of Ralph Waldo Emerson (1803 -1882), American essayist, philosopher, and poet,
[33] Jerome McGann, Romantic Ideology (Chicago: University of Chicago Press, 1983). See “McGann Agonist” in Attack of the Difficult Poems: Essays and Inventions.
[34] See American Hybrid: A Norton Anthology of New Poetry, ed. David St. John and Cole Swensen (New York: W. W. Norton, 2009) and Stephen Burt, review of Susan Wheeler’s Smokes, Boston Review 23, no. 3 (September 1998); American Letters & Commentary, no. 11, “The Elliptical Poets” feature (2007). See also Craig Dworkin, “Hypermnesia,” and Brian Reed, “Grammar Trouble,” in “American Poetry after 1975,” a special issue of boundary 2 that I edited (36, no. 3 [Fall 2009]).
[35] Edgar A. Poe, “The Poetic Principle,” www.eapoe.org/works/essays/poetprnb.htm. See Jerome McGann’s The Poet Edgar Allan Poe: Alien Angel (Cambridge, MA: Harvard University Press, 2014), which restores Poe to his foundational role for American, and nineteenth-century, poetics; McGann’s breathtaking scholarship makes Poe’s work thrillingly present and hauntingly prescient.
[36] William Carlos Williams, “Paterson,” in Collected Poems, vol. 1, ed. A. Walton Litz and Christopher MacGowan (New York: New Directions, 1986), 263–66.
[37] The Poems of Emily Dickinson, ed. T. H. Johnson (Cambridge, MA: Belknap Press of Harvard University Press, 1955), no. 258, 1:185. I discuss a variant reading of this poem below.
[38] Williams, “Paterson,” 263, 265; p. 266 (the final lines) quoted below.
[39] Wallace Stevens, “An Ordinary Evening in New Haven,” XII: “The poem is the cry of its occasion, / Part of the res itself and not about it.”
[40] Gertrude Stein, “If I Told Him: A Completed Portrait of Picasso” (1923), EPC Digital Library, writing.upenn.edu/library/Stein-Gertrude_If-I-Told-Him_1923.html.
[41] See Robin Seguy’s digital edition of “The Raven” interwoven with the translations of Baudelaire and Mallarmé athwww.text -works.org/Texts/Poe/Raven_data/ RavenEdNote.xhtml.
[42] “Le Corbeaudit: Jamais plus,”
[43] This is Charles Bernstein’s son Felix’s current favorite term. Once you start to see them, they multiply like rabbits.
[44]“Nothing is the force / That renovates the World.” – The Poems of Emily Dickinson, no. 1563, 3:1077. I discuss this poem in “The Wolf Interview” with Stephen Ross, in this collection.
[45] Pierre Joris, “The Work of Al-Ishhk,” in Poasis: Poems 1986–1999 (Middletown, CT: Wesleyan University press, 2001), 27.
ইংরেজি ভার্সান এখানে>>> Welcome to the Pataquerical Night Show
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..