প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইটশোয়ে আপনাকে স্বাগতম (শেষ পর্ব )

রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুবাদ, ধারাবাহিক, প্রবন্ধ, রিভিউ
প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইটশোয়ে আপনাকে স্বাগতম (শেষ পর্ব )

ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode)

পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>

         আমাদের প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইট শোয়ের এটাই শেষ পর্ব। কিন্তু রবিগান উঠছে মনের কোণে, পথের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে! সম্মুখে ঘন আঁধার, পার আছে কোন্‌ দেশে? প্রশ্ন উঠেছে গোপন গুহায়, তবে কি সমস্তটাই মরীচিকা-অন্বেষণ? হাল-ভাঙা পাল-ছেঁড়া ব্যথা, হায়, চলেছে নিরুদ্দেশে। গান শুনে বিজ্ঞান আমার কানটি ধরে পুছ করে, ব্যথা কি চলতে পারে? চলা অর্থাৎ গ-এ গমন ক্রিয়া, যেখানে সমগ্র সত্তাটি এক বিন্দু থেকে আর এক বিন্দুতে যায়। ইহা সত্য বটে যে ‘ব্যথা’র ওই গ-জাত গমন হতে পারে না। সংস্কৃতের গম্‌ ক্রিয়া ইংরেজিতে go. জো নয়, গো বলতে হয়─ সবই ওই ক্রিয়ার ক্যারিশ্‌মা। ইংরেজির g-বর্ণ কখনও গ-বর্ণ কখনবা জ-বর্ণের রূপ নেয়। তবে কি ‘ব্যথা’র গ-জাত গমন না হয়ে জ-জাত জনন হয়? জ-জাত জননে সমগ্র সত্তা যায় না, বরং সত্তার ক্ষুদ্র প্রতিনিধি জিন(gene)কে পাঠিয়ে দেয়। কবি শব্দের মধ্যে পুরে রাখেন সেই জিন, যা তাঁর ব্যথার প্রতিভু। বাংলা ভাষার মহান দার্শনিক কলিম খান[1] বলছেন : জ-এর ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ হ’ল অস্তিত্ব থেকে তার যে আত্মস্বরূপ বহির্গত হয়। অর্থাৎ জননকারীর অবস্থানক্ষেত্রটি ক্রমশ আবৃত করে ফেলে তাঁর আত্মস্বরূপ, যা জলের মতো সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই বুঝি ব্যথাও সঞ্চারিত হয়ে যায় পাঠকের মধ্যে, পঠনের স্তরে স্তরে, দিকে দিকে, নিরুদ্দেশে।

        চার্লস বার্নস্টাইনের ১৪০ গাথার ফ্যান্টাসির এই শেষপর্বে মানুষ, মনুষ্যত্ব নিয়ে কথা উঠেছে। শব্দগুলো প্রায়ই আমাদের জিভে খেলা করে। আজ খেলা ফেলে একটু জলে নামতে চাইছি। মনে আছে তলাতলের খোঁজ। ভাবটা এমন, যেন পিছন ফিরে দেখা, একি শুধুই খেলা, হেলাফেলা সারাবেলা? মনের এই আকাঙ্ক্ষাই খুরপি হাতে মাটির কাছাকাছি। ওইখানে যে প্রকৃত মানুষের খবর মেলে।

           মানুষ হল মনুর সন্তান। ব্রহ্মার দেহ থেকে উদ্ভূত, তাই স্বায়ম্ভুব মনু, আমাদের চতুর্দশ মনুর ইনিই প্রথম মনু। যিনি ব্রহ্মার কাছে স্মৃতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, যা হল মানবধর্মশাস্ত্র। ব্রহ্মার হৃদয় থেকে নিঃসৃত ভৃগু (ঋষিবিশেষ) মনুর আদেশে এই ধর্মশাস্ত্র ঋষিদের কাছে ব্যাখ্যা করেন। তাই আমাদের ভৃগুপ্রোক্তসংহিতা বা মনুসংহিতা। তো সেই মনু থেকে জাত মনুজ। পরিপার্শ্বের প্রতিটি সত্তাকে পরিমাপ করে যে, সে হ’ল মন। মন অন (on) যাতে, তা হ’ল মনন─ ভাবনা, একাগ্রচিন্তা, বুদ্ধি, অভিরুচি, ইচ্ছা, সংকল্প, কল্পনা। মনু শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ হ’ল মন নবরূপে উত্তীর্ণ যাতে। তার মানে, মন আর পরিমিতকরণের কাজ করছে না, আর নতুন পরিমিত-মননফল সংগ্রহ করছে না, অন্যতর কিছু করছে। সে ইতিমধ্যে মনন করে যে পরিমিত-মননফল লাভ করেছিল, তাই নিয়ে কাজে নেমে পড়েছে। মননশীল সত্তার পক্ষে অনন্তকালের জন্য অনির্দিষ্ট থাকা চলে না, তার প্রাপ্ত ও অর্জিত জ্ঞানটুকু নিয়েই তাকে সুনির্দিষ্ট মন-সম্পন্ন হয়ে যেতে হয়। যখন সাময়িকভাবে সেই জ্ঞানগুলোকেই সম্পূর্ণ জ্ঞান ধরে নিয়ে কাজে নেমে পড়া ও কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় এবং অন্যদেরও চালিত করে নেওয়া যায়, তখন সেই মনকে বলে মনু। মনু বললে যেমন একজন আপাত-সম্পূর্ণ ও স্থির জ্ঞানের জ্ঞানীকে বোঝায়, তেমনি সমগ্র সত্তাটিকেও বোঝায়। অর্থাৎ মনু হ’ল এক সামাজিক সত্তা। একজন মানুষের মন যেমন তার আধার হতে পারে তেমনি বহু মানুষের মনও তার আধার রূপে সক্রিয় হতে পারে। স্বাভাবিক-প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত আদিম মানুষেরা যখন সচেতনভাবে নিজেদের পরিচালিত করতে শুরু করল, তখন তাকে বলা হ’ল স্বায়ম্ভুব মনু’র আবির্ভাব। ইনিই আমাদের চতুর্দশ মনুর প্রথম। এই মনুর কাল শেষ হ’লে নতুন স্বভাবের মানুষ, যারা নিজ নিজ রুচি অনুসারে চলতে শুরু করল; অর্থাৎ স্বারোচিষ মনুর কাল শুরু হল। কিন্তু যখন দেখা গেল, এই যার যার তার তার রুচি অনুসারে চলার ফল ভাল হল না, তখন উত্তম মনুর কাল শুরু হল। এনারা নতুন যা করলেন তাকে বলা যায় জ্ঞানবৃক্ষের ফলটি খেলেন, অর্থাৎ ইস্কুল-কলেজের পড়াশোনার ফলটি আত্মসাৎ করলেন। তবে কিনা জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেলে, বিদ্যাচার করলে তমোগুণের উদগমন ঘটে। ফলত, এই উত্তম মানুষেরা ক্রমশ তমসাগ্রস্ত হয়ে যায়, যার ফল স্বরূপ তামস মনুর আবির্ভাব। তারপর আসে দিশাগ্রস্ত রবকারী মানুষ, ‘রৈবত মনু’র কাল। কিন্তু রব করে পাঁচকথা বললেই তো হল না, শব্দার্থজ্ঞান, মানে তত্ত্বকথা চিনতে পারা, এবং পণ্যার্থজ্ঞান, মানে টাকা-পয়সা চিনতে শেখা অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক মানসিকতা অর্জন করা চাই। বাক্যবিনিময় ও পণ্যবিনিময় করতে শিখলে মানুষের চোখ খুলে যায়, আর তখন ‘চাক্ষুষ মনু’র জন্ম হয়। এই ফাঁকে বলে রাখি, এখনও এমন কিছু বন্য, আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছেন যাঁদের মধ্যে টাকা-পয়সার কোনো জ্ঞান নেই, মানে বলতে চাইছি সেই স্বপ্নময় সমাজের কথা যেখানে ‘চাক্ষুষ মনু’র আবির্ভাব এখনও ঘটেনি, ফলত, কবিদের বাজারদর মাপার প্রশ্ন ওঠে না! সে যাই হোক, এই চোখ-ফুটে যাওয়া মানুষদের মধ্যে স্বভাবতই বিরোধ অবধারিত। সেই বিরোধ পেরিয়ে মানুষকে সমাজবদ্ধ থাকতে গেলে কিছু সামাজিক আইন মানা জরুরি হয়ে পড়ে। ফলত, ‘বৈবস্বত মনু’র কাল শুরু হল। আর সেটাই হল মনুসংহিতার প্রয়োগকাল, যার ফলে আইনজানা মানুষ বা নাগরিক মানুষদের যুগের সূত্রপাত। এই বৈবস্বত মনু বিবস্বান অর্থাৎ সূর্যের পুত্র। আমাদের বর্তমান সময় এই বৈবস্বত মনুর কাল।

        প্রিয় পাঠক, অধৈর্য হয়েছেন নিশ্চিত। মনুর কথা বলতে গিয়ে কলিম খানের বলা ইতিহাস এসে গেল। যদিও বার্নস্টাইন তাঁর পিচ অফ পোয়েট্রি[2] বইতে বলছেন, ইতিহাস হল সেই “যা আমাদের গঠন করে এবং যা থেকে আমরা গঠিত হই”(১১১)। তাঁর সদ্য প্রকাশিত টপসি-টারভি[3] কাব্যগ্রন্থে বলছেন, “ইতিহাস নিখোঁজ হলে/ আমরা নিজেরাই থাকি/ বৈঠাবিহীন/ যেন মুড়োনো মাথা”(৪৬)।

        এবারে আসলে ফিরি। কথা হচ্ছিল মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, মানও থাকবে, হুঁশও থাকবে, তবেই মান-হুঁশ বা মানুষ। এই মন-জাত মান দুরকমের। মনের মননবৃত্তি দিয়ে মাপা অখণ্ডমূলক মান আর মনের বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে মাপা খণ্ডমূলক মান, যাকে বৈজ্ঞানিক মানও বলা যায়। এই মান নবরূপে উত্তীর্ণ হয়ে দিশাগ্রস্ত যাতে, সেই হল মানুষ। অর্থাৎ কিনা মান যখন স্থির রূপ নিয়ে নিয়েছে এবং আপাতত বদলাচ্ছে না, মান-এর সেই স্থির রূপ যে মানুষকে বা মানুষদের বিশেষ দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তাঁদের মানুষ বলা হয়। যাঁরা একান্তভাবে কোনো ধর্মে মতবাদে ধারণায় দর্শনে বিশ্বাসী, তা তাঁরা হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান বৌদ্ধ শিখ নাস্তিকতাবাদী আধুনিকতাবাদী বিজ্ঞানবাদী জাতীয়তাবাদী মার্কসবাদী ফ্যাসিবাদী মৌলবাদী অধুনান্তিকতাবাদী… যাই হোন, তাঁদের মানুষ বলা যেতে পারে। কেননা তাঁরা যে ‘মান’ বহন করেন তাকে তাঁরা অপরিবর্তনীয় ভাবেন এবং সেই অনুযায়ী যেদিকে চলা উচিত, সেদিকেই চলতে থাকেন। তাই তাঁদের মানুষ বলা হয়।

        ইংরেজিতে এই মানুষ human being. মনুঃ কথাটির মধ্যেই আছে ‘অনির্দিষ্ট মন থেকে সুনির্দিষ্ট মনে হয়ে ওঠা। এই ‘হয়ে ওঠা’ বোঝাতেই ইংরেজিতে being. আর মনুঃ─ মন্‌-উঃ (man-uh)─ উ বর্ণের অর্থ হল উল্লম্ফন করে যে, বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায় যে; তাই যে তার আমূল পরিবর্তনকারী মন’কে অস্তিত্বের পরিধির বাইরে লাফ দেওয়ার প্ররোচনা দেয়, সেই হল মানুষ। কিন্তু ইংরেজিতে তা উল্টে গিয়ে human. ব্যাকরণে এই উল্টে যাওয়ার নিয়ম সংস্কৃতের কিছু আদি শব্দসৃষ্টির নিয়ম মেনেই চলে, যা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছে ইংরেজি; যে নিয়ম মেনে মহ হয়েছে হম্‌ (হিন্দি), ইংরেজিতে homo, যার ব্যবহার দেখি homo-sapiens শব্দে। মহ একটা বোধ─ ‘আমরা-সবাই’। কথাটির নিহিতার্থ হল নিজের পরিধি বা সীমাকে হনন করে যে; কেন্দ্রিকরণ বিরোধী একটি প্রক্রিয়া, যা মানবসমাজকে ‘আমরা-সবাই’ এই সার্বিকতা বোধে উন্নীত করে।

          তো এই মনু জাত শব্দ সংস্কৃতে বা বাংলায় অজস্র হলেও ইংরেজিতে মানুষ বোঝাতে চারটি ‘man’ বাচক শব্দ পাওয়া যায়─ human being, individual, man(woman), person. প্রতিটি শব্দ man কে বোঝালেও একইভাবে বোঝায় না। মানুষ যতরকম কাজ করে ততরকমভাবেই তাকে দেখানো যায়। প্রাপ্ত মনু’কে উষ্‌(use)করেন যিনি, তিনি মনুষ্য─ human being. যিনি নিজের কথা ব্যক্ত করতে পারেন, তিনি ব্যক্তি─ individual. সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে বোঝানো হয় নর(নারী) শব্দে─ man(woman)। যিনি আমাদের প্রত্যেকের ভেতর look through করতে পারেন তিনিই ‘লোক’─ person.

          উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা অর্জিত মননে প্রাপ্ত মনুকে বা সুনির্দিষ্ট জ্ঞানকে কর্মে প্রয়োগ করেন যিনি তাঁকে মনুষ্য বলা হলে, সুনির্দিষ্ট জ্ঞান প্রয়োগের যোগ্যতা হল মনুষ্যত্ব─ humanness. সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এই মনুষ্যত্ব অর্জন নিঃসন্দেহে মানুষের জীবত্ব পেরিয়ে, মানবত্ব পেরিয়ে, দেবত্ব পেরিয়ে, ব্রহ্মত্ব পর্যন্ত প্রসারিত। যথার্থই বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ব্রহ্ম লাভ নয়, ব্রহ্ম হয়ে ওঠা। কলিম খান বলছেন মনুষ্যত্ব শব্দের নিহিতার্থ হল─ মননশীল জীব রূপে জীবনের যে যে ক্ষণে যে যে কাজ করা দরকার, তার জন্য যে যে মনুকে (অর্জিত-প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট জ্ঞানকে)সেই প্রার্থিত দিশায় প্রয়োগ করা দরকার, তা করে ফেলার যোগ্যতা বা গুণ থাকে যাতে, তাকেই বলে মনুষ্যত্ব।

         মনুর সৃষ্ট বলে মানুষের নাম মানব। কিন্তু মানবতা (humanity), মানবতাবাদ (humanism), মানবিক(human), মানবিকতা(human quality)─ শব্দগুলো খুবই বিপজ্জনক। এগুলো প্রাচীন শব্দ নয়, বাংলার মানুষের মনের মাটি থেকে স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায়নি। এরা ইংরেজি শব্দের অনুবাদ মাত্র। বাংলার মন-ক্রিয়ামূলের পরিবারে উপনিবেশকারী বিদেশী। এই শব্দগুলোর অন্তরে আছে বাংলার মানব শব্দটি। উত্তরাধিকার সূত্রে যে সকল মান(পারিপার্শ্বিকের মানে)পাওয়া যায় কিংবা মনন করে করে বিভিন্ন বস্তুর ও নিজের যে মান পাওয়া যায়, তা সব জেনে বুঝে নিয়ে সেই মান যিনি বহন করেন তিনিই মানব। এই মানব স্বশিক্ষিত বা অ্যাকাডেমি শিক্ষিত অথবা উভয়ই হতে পারেন। এই স্বশিক্ষিত ও অ্যাকাডেমি-শিক্ষিত মানবের মধ্যে একটু তফাৎ আছে। স্বাভাবিক-প্রাকৃতিকভাবে লালিত পালিত ও স্বশিক্ষিত হয়েছেন, তথাকথিত অ্যাকাডেমিতে যাননি ও জ্ঞানবৃক্ষের ফলটি খাননি এবং সচেতন /অচেতন /অতিচেতন /অবচেতন ভাবে স্বভাবতই আত্মানুসন্ধান করেন, এমন মানবকে স্বশিক্ষিত বলা চলে। যেমন রবীন্দ্রনাথ। এঁরা যত না সভ্য হন, তার চেয়ে অনেক বেশি ভব্য হন। সভায় টিকে থাকতে গেলে যেমন কেবলমাত্র সদস্য হলেই হয় না, নিজেকেও ছেঁটে-ছুঁটে অন্যদের সঙ্গে একত্রে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়, তেমনি জগতে আবির্ভূত হলেই ভব হয় বটে, কিন্তু তাকে টিকে থাকতে গেলে, মানে ভব্য হতে গেলে, পারিপার্শ্বিক সত্তাসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে চলতে হয়, যেমন বলেছিলেন কবিগুরু─

 বিশ্বের সহিত স্বতন্ত্র বলিয়াই যে মানুষের গৌরব তাহা নহে। মানুষের মধ্যে বিশ্বের সকল বৈচিত্র্যই আছে বলিয়া মানুষ বড়ো। মানুষ জড়ের সহিত জড়, তরুলতার সঙ্গে তরুলতা, মৃগপক্ষীর সঙ্গে মৃগপক্ষী… পূরা মানুষ হইতে হইলে তাহাকে সবই হইতে হইবে, এ কথা না মনে করিয়া মানুষ মনুষ্যত্বকে বিশ্ববিদ্রোহের একটা সংকীর্ণ ধ্বজাস্বরূপ খাড়া করিয়া তুলিয়া রাখিয়াছে কেন? কেন সে দম্ভ করিয়া বার বার এ কথা বলিতেছে ‘আমি জড় নহি, উদ্ভিদ নহি, পশু নহি, আমি মানুষ─ আমি কেবল কাজ করি ও সমালোচনা করি, শাসন করি ও বিদ্রোহ করি’! কেন সে এ কথা বলে না ‘আমি সমস্তই, সকলের সঙ্গেই আমার অবারিত যোগ আছে, স্বাতন্ত্র্যের ধ্বজা আমার নহে’। (বিচিত্র প্রবন্ধ[4], পৃ-৯০)

          কিন্তু সভ্যতার বালাই এমন, যে, এই প্রকৃতিসংলগ্ন স্বশিক্ষিত মানুষেরা যথেষ্ট ভব্য হলেও আজকের তথাকথিত সভ্যসমাজে তাঁরা সভ্য হিসেবে গণ্য হন না। যার প্রতিধ্বনি শুনি বার্নস্টাইনের পিচ অফ পোয়েট্রি-তে : “জাতিগত বা বর্ণগত পার্থক্যের ভয় ছাড়িয়ে থাকে পাশব পার্থক্যের ভয়। অ্যানিম্যালাডির ভয় মানুষ হিসেবে (পরিশীলিত, পণ্ডিত, সভ্য আচরণ, ভদ্র পোষাক) পাস করার প্রয়োজনীয়তারূপে প্রতীয়মান হয়, যেমন “ডক্টর টার ও প্রফেসার ফেদার” গল্প, না-পাগল হিসেবে পাস করার প্রয়োজনীয়তার মূর্তিমান প্রকাশ”(৩৪২)। প্রাণী হয়ে প্রাণী হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার এই মনুষ্যব্যাধিকেই বার্নস্টাইন অ্যানিম্যালাডি বলেছেন(৩০৪)।

          বর্তমান সমাজ শান্ত-শিষ্ট মানুষকেই সভ্য-ভব্য মনে করলেও এই শব্দের নিহিতার্থ লুকিয়ে আছে বর্তমানের অধুনান্তিকতার সেই ধারণা যা বিশ্বময় পরিব্যাপ্তির কথা বলে, যা আধুনিকতার লোকোত্তর সত্তা থেকে উত্তরণের কথা বলে। মানুষের সেই সত্তা, যে পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধন করতে গিয়ে আপন শ্রেষ্ঠত্ব কমিয়ে নিতে দ্বিধা করে না; সত্তার সেই চেষ্টাই সুন্দরের মূল, সাম্যের ধর্ম। যা আধুনিক বৈপরীত্যবোধ থেকে উত্তরাধুনিক পরিপূরকতাবোধের কথা বলে। সে একদিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তিতে কবিকে ছুটিয়ে দেয় অপরিসীম বৈচিত্র্যের দিকে আর ডেকে আনে সম্ভাবনার পাখি, আবার অন্যদিকে এক পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যতা নিয়ে আসে উদ্দাম বৈচিত্র্যের উল্লাসে। এ যেন সেই কোটি কোটি গ্যালাক্সি নিয়ে এই প্রসারণমান ইউনিভার্সের জয়যাত্রা─ একদিকে আমাদের পরিচিত গ্র্যাভিটির অন্তর্মুখী টান আর অন্যদিকে অপরিচিত নেগেটিভ গ্র্যাভিটির বহির্মুখী ধাক্কার এক অসামান্য টিউনিং─ বস্তুপুঞ্জের প্রচলিত ছক ছাড়িয়ে, বস্তুর বাস্তববাদ পেরিয়ে কবির সম্প্রসারিত চেতনায় বহির্মুখী অসামঞ্জস্য ও অন্তর্মুখী সামঞ্জস্যের এক অভূতপূর্ব সমীকরণ।

        এই অধ্যায়ে বার্নস্টাইনের একটি গাথার নাম “অবাকপটুতার জয়গান”। বাকপটুতার উল্টোদিকে বলে একে বাক-অপটুতা বলাই সঙ্গত ছিল। কিন্তু ‘অ’ বর্ণটির সামান্য একটু স্থানান্তরে অপটুতাও অবাক করার আসনে বসে পড়ছে দেখে আমার মায়া হল। তাই না-বাচক ‘অ’ বর্ণটি জুড়ে দিলাম বাকপটুতার আগে। এই মায়ায় যতটা জড়িয়ে আছে আমার নিজস্ব বাক-অপটুতা ততটাই আছে এই অপটুতা নিয়ে বার্নস্টাইনের জয়গান, যেখানে অক্ষমতা কোনো রূপক নয় বরং বিকর্ষণ ও মুগ্ধতার মাধ্যমে ব্রেখটিয়ান আত্মচেতনার সৃষ্টি করে, যা আন্তঃক্রিয়া ও বাহ্য অভিব্যক্তির এক বিভ্রান্তিকর দ্বৈতচিত্রের মুখোমুখি হয়। আশা করি অনুবাদ সাহিত্য এটুকু স্বাধীনতা দিতে কার্পণ্য করবে না। বাকপটুতা বা বক্তৃতা শব্দ সংস্কৃত বাক্‌ শব্দপ্রসূত। ক্রিয়ামূল বচ্‌─ বাহীর চয়ন। মানুষের মনে যখন কোনো কিছু বিষয় প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়, তখন নানান আওয়াজের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় আওয়াজটিকে চয়ন করে নেওয়াকে বলে বচ্‌ করা। এখন এই চয়ন করা আওয়াজটিকে উচ্চারণ করে প্রকাশ করে দিলে তবেই বক্‌ করা হল, যা থেকে বক্তৃতা শব্দের উদ্ভব। ইংরেজিতে বক্তৃতা শব্দটি speech অর্থে এবং বক্তব্য worth saying অর্থে প্রচলিত।

         বক্তব্য─ যা ‘বলার যোগ্য’ এমনটাই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু মনুসংহিতা, রামায়ণ টীকা, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ইত্যাদি গ্রন্থে এই শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ─ বিহিত কর্মত্যাগ হেতু নিন্দনীয়। ‘বক্তব্য’র অভিধা-অর্থের কীভাবে এমন অর্থবদল ঘটল? মানুষের ওপর মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই কেবল বক্তব্য-শব্দের এমন অর্থবদল সম্ভব। শাসিত যাকে ‘বলার যোগ্য’ বলে মনে করেছিল, শাসকের চোখে তা হয়ে উঠেছিল কুৎসিত, হীন, নীচ। সামাজিক, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শব্দটির এমন অর্থবদল ঘটেছিল। এমনও হতে পারে, যতদিন মানুষ সুরের মাধ্যমে আপন সুখদুঃখ প্রকাশ করত, যা কিনা সকল জীব এমনকি জড়ও বুঝতে পারত, ততদিন তা ছিল সর্বজনীন ভাষা। কিন্তু যেই না শব্দ-সহযোগে কথা বলার সূত্রপাত হয়ে গেল, মানুষ অন্য মানুষের উদ্দেশ্যে ‘বক্তব্য’ রাখতে শুরু করল, মানুষের ভাষা হয়ে গেল কেবলমাত্র মানুষের জন্য। আদিম সুর-ব্যবহারকারী মানুষ এই শব্দ-ব্যবহারকারীদের ভাল চোখে দেখেনি। তারা নিশ্চয়ই এর নিন্দা করেছিল। তারই উত্তরাধিকার থেকে গেছে ‘বক্তব্য’ শব্দের ভেতর।

       চার্লস বার্নস্টাইন তাঁর টপসি-টারভি কাব্যগ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, “Poetry is not speech but speech sounds”(১১৪)। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাই সমকালীন কবিতার ভাষা। কিন্তু কবি যখন তাঁর নতুন অনুভব, আনকোরা রহস্য, বিস্ময়কর উজ্জ্বলতা ও ভিন্নধর্মী সংকেত প্রকাশ করতে চান তখন চালুভাষার সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন এবং সাঙ্কেতিক গূঢ়তায় তীক্ষ্ণ কবিতাটিকে যখন পাঠকের দরবারে পেশ করতে যান, অতি ব্যবহারে ক্লিশে ভোঁতা অনুজ্জ্বল শব্দমালা ও ক্রিয়াপদে এসে থমকে যান। বাস্তবের প্রকাশ ও প্রচলিত ভাষার মধ্যে এই ব্যবধান মনে পড়ায় ভিটগেনস্টাইনের কথা─ “The limits of my language mean the limits of my world.”[5] পাঠকের সাথে যোগাযোগের যে সেতু সেই ভাষাই হয়ে উঠে কবির প্রধান বাধা। মর্ডানিজমের বাককেন্দ্রিকতা পেরিয়ে তাই ভাষাকবিতার কবি বার্নস্টাইনের মন্ত্র হল─ “not voice, but voicings.” প্রচলিত লিরিক ভয়েস কেবল আবেগময় বিষয়টির বর্ণনা করে কিন্তু বার্ন্সটাইন সেই আবেগকে নাড়া দিয়ে সংবেদনশীল বিষয়বস্তুগুলোকে আপন মেজাজ ও মর্জি অনুযায়ী আপন অনুভবের রসে জারিত করে কার্যকরী করে তোলার কথা বলেন। আবেগের প্রকাশকে অস্বীকার করেন কবি, বরং তাকে সংবেদনশীলতায় উন্নীত করেন, যেখানে কবিতায় নিজেকে অনুমান করা নয়, বরং নিজেকে খোঁজা─ কবিতার ভাষা ও পাঠকের প্রতিক্রিয়ার সংশ্লেষ। এই প্রসেস এক অন্তর্নিবেশের কথা বলে যা ‘বক্তৃতা’র পরিবর্তে সাঙ্কেতিক গূঢ়তায় ভিন্নধর্মী কমিউনিকেশনের ইঙ্গিত দেয়।

————-Cock-a-doodle-de-dooooooh————–

@@@ এবারে শুরু করা যাক চার্লস বার্নস্টাইনের ফ্যান্টাসির শেষ পর্ব @@@

 

প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কল্পনা : মিডরাশিক নীতিশাস্ত্রবিরোধিতা এবং আনমিতলজির[6] প্রতিশ্রুতি
The Pataquerical Imagination:
Midrashic Antinomianism[7] and the Promise of Bent Studies
১৪০টি গাথার এক ফ্যান্টাসি

CV. অবাকপটুতার জয়গান

       পঙ্গু হওয়ার অর্থ প্রাতিষ্ঠানিক, নাবালক, বেকার, ব্রাত্য, ভীত, প্রান্তিক, ভক্তির পাত্র, অযৌন, মুগ্ধদৃষ্টিসম্পন্ন, বর্জিত, নির্বাক, বাতিল, বন্ধ্যা, আবদ্ধ, কদরহীন, বিদ্রূপের পাত্র, বোলশূন্য, অসম্মানিত, ধর্ষিত, বিচ্ছিন্ন, কম শিক্ষিত হওয়া, একটা রূপক বা উদাহরণে পরিণত হওয়া। পঙ্গু হওয়ার অর্থ হ’ল ব্যাহত, মিষ্টি, অসহায়, খুঁতেল, বদ্ধ, বেকুব, মাতাল, আহাম্মক, সমাজের বোঝা, অ/বৈধ হিসেবে উল্লেখিত। পঙ্গু হওয়ার অর্থ পণ্য হিসেবে ছাড় দেওয়া বা নিছক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়া।

   জেনিফার বারলেট, Autobiography/Anti-Autobiography[8]

        অবাকপটুতা ও অক্ষমতার কাব্যতত্ত্ব অদ্ভুত অবিন্যাসের কাব্যিক দিগন্ত। এই বিবাদপ্রিয় আহরণের জন্য আমি সামাজিক/সাংস্কৃতিক পরিচয় বা প্রতিবন্ধকতার বর্ণনায় আগ্রহী নই; তার  চেয়ে এই জাতীয় কাঠামোগুলো (আর তারা যে অভিজ্ঞতাগুলো মূর্ত করে) কীভাবে কবিতা লেখা ও পড়া দুটোকেই রূপান্তরিত করে তাতে বেশি আগ্রহী: পার্থক্যের জন্য পার্থক্য তৈরি করা, অভিন্নতার মাধ্যমে পার্থক্যের প্রকাশ নয়।

     আমান্দা ব্যাগ্‌সের In My Language[9] নামের ভিডিওতে এই থিমটি বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাগ্‌স ভিডিওটিকে দুটো অংশে ভাগ করেছেন। প্রথমটির লক্ষ্য আত্মসংবৃতি চেতনার একটা প্রাথমিক অভিজ্ঞতার উপস্থাপন; এটা মূলত বিশৃঙ্খল শিল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত, তবে তা ব্যাগ্‌সের মানসিক অবস্থা এবং বোধজাত দখল ও যোগাযোগের ধরণগুলোর কাঠামো প্রকাশ করে। ভিডিওটির দ্বিতীয় অংশ হ’ল প্রথম অংশটির প্যাটানুবাদ আরো বেশি মাননির্ণায়ক ভাষায়, যাতে প্রথম অংশটির কাঠামো নির্ণয়ের প্রভাব আছে কিন্তু দুর্বোধ্য নয়, বরং অন্যভাবে বোধগম্য। আপন আত্মসংবৃতির কথা নিজের ওয়েবসাইটে[10] জানিয়ে রাখা সত্ত্বেও ব্যাগ্‌সের ভিডিওটি একটা প্রতারণা বলে নালিশ জানিয়ে বলা হয় যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে আত্মসংবৃতিতে আক্রান্ত নন, এ শুধু রচনাটিতে একটা শয়তানি মোচড় যুক্ত করার জন্য করা; কারণ মানবতাবাদীর প্রয়োজন প্রমাণিত দুঃখভোগের জন্য করুণা করা, যা তাঁর বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল “টার ও ফেদারিং”-এ রূপান্তরিত করেছে অভিযোগকারীরা।

        যদি টড ব্রাউনিংয়ের Freaks (১৯৩২) প্যাটাক্যুয়সিক্যাল স্কোপোফিলিয়ার স্বাক্ষর বহন করে তবে আমাদের যুগ দাবি করে “মিল্টাউন দিয়ে আয়ত্ত” করার খেয়ালি উপস্থাপনা স্মৃতিকথায় তুলে রাখতে, যার বিশ্বাসযোগ্যতা জাঙ্ক বন্ডের সঙ্গে তুলনীয় (এবং প্রায়শই আর্থিকভাবে সুবিধেজনক)।[11] ব্রাউনিংয়ের সিনেমা দর্শকদের পক্ষে ব্রেখটিয়ান আত্মচেতনার সৃষ্টি করে বিকর্ষণ ও মুগ্ধতার মাধ্যমে; চ্যাপলিনের Little Tramp এর ঠিক উল্টো, সহানুভূতি ও শনাক্তকরণ প্রকাশ করে। বোদলেয়ারের “À une mendiante rousse” বস্তুবাদিতার বিমুখী দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে যায়। “Pastoral”-এ “খুব দরিদ্রদের/বাড়ি” কবিতায় উইলিয়ামসের অভিমুখ চমৎকার তির্যকতায় : “পোড় খাওয়া” এলোমেলো দৃশ্য “নীলাভ সবুজে চর্চিত” ঈক্ষণকামের ছিদ্র ভরাট করে তোলে।[12] সমসাময়িক কাব্যতত্ত্বে লেসলি স্ক্যালাপিনোর “Bum Series” (Way, ১৯৮৮) এই গতিশীল ঈক্ষণকাম ও স্থানচ্যুতি পুনরায় ফিরে দেখে, অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবার জন্য এক সত্তাতত্ত্বগত পরিসর নির্মাণ করে (বিমুখতার মুখ ঘুরিয়ে দেয়)।[13]

          ব্লেক ও এমারসনকে অনুসরণ করে ব্যাগ্‌স আপন যুক্তিতে অটল থেকে করুণাকে দর্শকদের দিকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। “In My Language” অপরিচিত কবিতা সম্পর্কে তাদের মাথায় থাকা বহু বিদ্রূপ ও বক্রোক্তিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন রূপকগুলোকে উৎসের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে─ অথবা বলা যায় উৎসটিকে তার রূপক ও মানদণ্ডের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে, যা ভিটগেনস্টাইনের ভাষায় : “বহির্মুখী বিচারের জন্যই ‘অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার’ প্রয়োজন”(§580)। ধাক্কাগুলো আন্তঃক্রিয়া ও বাহ্য অভিব্যক্তির এক বিভ্রান্তিকর দ্বৈতচিত্রের মুখোমুখি হয়; ধারণাটি হ’ল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় অর্জিত একটা অন্তস্তলের সত্য আছে ওইখানে, যা বাহ্য অভিব্যক্তিতে অনুবাদ করা প্রয়োজন।[14]

       ২০১১ সালে তোতলামি ও নির্যাতনের বিষয়ে আলোচনায় জর্ডন স্কট, গোপন সত্যের জন্য জেরাকারীর নির্দয় অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে ভাষাগত ছুরিটিকে প্রকৃত সত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর আলোচনায় জেরাকারীদের উদাহরণ দিয়ে স্কট দেখান কীভাবে তারা অবাকপটুতার বাহ্য অভিব্যক্তি ঈপ্সিত অভ্যন্তরীণ সত্যকে লুকিয়ে রাখার জন্য ব’লে ব্যাখ্যা করে। তবুও তোতলামির বিরুদ্ধে নির্যাতনের ধাক্কা বিষয়টির তোতলামিকেই তীব্র করে তোলে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় স্কটের নিজের তোতলামি অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রটিকে ধ্বসিয়ে দেয় তার নিজের ওপর : স্কট কেবল তোতলামি নিয়েই বলেননি, তাঁর ডিসকোর্সের ধারাবাহিকতাকে ছিন্ন করছিলেন তাঁর নিজস্ব মৌখিক বাধা দিয়ে, তবে এই বিস্ফোরণগুলো তাঁর বক্তৃতাতে হস্তক্ষেপও করে না বা সমঝোতাও করে না বরং তাকে আরো স্পর্শগ্রাহ্য করে তোলে।

        স্কট তাঁর কবিতা সংকলন, Blert এমনভাবে রচনা করেন যা তাঁর জিভকে নিজের কাজ পরিবেশন করতে পাঠায়। স্কটের কবিতাপাঠ শুনতে গেলে তোতলামি সম্পর্কে সেই সচেতনতার প্রয়োজন যা বোঝায়, এটা একটা সাহিত্যিক কৌশল যা অ্যানিম্যালাডি হিসেবে তোতলানোর ভেতর ধ্বসে পড়ে। স্কটের রচনা খোঁচা দিয়ে মনে করিয়ে দেয় যে অক্ষমতা কোনো (কেবল মাত্র)রূপক নয়। Blurt সিনেমা স্কটের কবিতার সঙ্গে যে পার্থক্য নির্মাণ করে তা হ’ল সিনেমাটিতে তোতলামির ব্যবহার করা হয়েছে ধ্বনিগত বা সামাজিক অথবা শব্দার্থগত প্রভাবের জন্য─ কিন্তু তা কখনই তাঁর বাস্তব অক্ষমতা বনাম অন্যের অক্ষমতার রূপকাশ্রিত ব্যবহারের ওপর জোর দেয়নি। ব্যাগের মতোই স্কটও পার্থক্যটি জটিল করে তোলেন তাঁর উপস্থাপনায়। কী হতে পারতো যদি তাঁর তোতলামি সেরে যেত? তাঁর কবিতার কেতাদুরস্ত গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যেত? নাকি তোতলামি বাড়িয়ে যাওয়াটাই বেশি আকাঙ্ক্ষিত, যেমন একজন পেশাদার ফরাসি নাগরিকের স্বরভঙ্গি প্রতিবছর তীব্র হয়ে ওঠে যখন তিনি নতুন জগতে বাস করেন। নাকি এটা আমাদের ফিরিয়ে আনে Freaks-এর কাছে?

     “The Human Abstract” সবুজ প্রতিধ্বনি করে : “দয়া আর থাকবে না।/ আমরা যদি কাউকে গরীব না করি”।

CVII. ভিনগ্রহী অশ্রু

যাঁরা আমাকে দেখেন তাঁরা উপহাস করেন। ঠোঁট বাঁকান, মাথা ঝাঁকান…

প্রার্থনাসংগীত 22, অনুবাদক- রবার্ট অ্যালটার

পিচ যে স্পর্শ করে, সে তাই দিয়েই কলুষিত হয়।

শিমোন বেন যিশুয়া বেন এলিয়েজার বেন সিরা

তার ঠোঁটঝরানো সত্য দুদিকে দোল খায়,
আর বোকারা, যারা উপহাস করতে এসেছিল তারা প্রার্থনা করতেই থাকে।

                                                                                              অলিভার গোল্ডস্মিথ

কিন্তু ছিটকে আসা টুকরোটাকে বিপথে যেতে দাও।

এমিলি ডিকিনসন

আর ভিনগ্রহী অশ্রু তার জন্য ভরে উঠবে
করুণা অনেক কালের ভাঙা কলসি,
কারণ তাঁর শোকার্তেরা ব্রাত্য হয়,
আর ব্রাত্যরা সবসময়েই শোক করে।

                                                                                      অস্কার ওয়াইল্ড

            আমি জানি যে এই পৃথিবীতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। গুটিকতক জিনিস যা আমার জীবনে শিখেছি এটা তাদের মধ্যে একটা।

                                                                                         ভিটগেনস্টাইন

CVIII.

রক্ষকদের রক্ষণকারী হবার কারণ আছে
ঝাড়ুদারেরা মিষ্টি বেশি
কিন্তু কো্থায় যেন একটা ফাঁক থাকে
যা হতে চায় কিন্তু কখনই হয়ে ওঠে না

CIX. Passing

আমার পাশব চিৎকার চেষ্টা করার পর/ আমি একজন মানুষের আর্তনাদ নিয়ে ভেঙে পড়ি।

ল্যারি এইগনার[15]

          উপেক্ষা করা এবং অতিক্রম করাকে প্রতিরোধ করা─ এই দুধরণের আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ মার্কিন সংস্কৃতি অর্থাৎ প্রভাবশালী সংস্কৃতি দ্বারা শোষিত হওয়া বা সেই সংস্কৃতিটির পুনর্নির্মাণ করার আকাঙ্ক্ষা। আত্তীকরণ যতটা না ভয়ে ততটাই এই আকাঙ্ক্ষায়।

        বিংশ শতাব্দীর মার্কিন জনপ্রিয় বিনোদনগুলোতে মজার নাটক থেকে জনপ্রিয় গানের খুব চল ছিল, যেখানে জাতিগত ও বর্ণগত এমন বহু অনুষ্ঠানের উদাহরণ আছে, যেখানে কলঙ্কে দেগে দেওয়ার শিকার যাঁরা, তাঁরা এই বিষয়টার খুব জাঁকাল প্রদর্শনী করতেন সেইসব শ্রোতাদের সামনে যাঁরা চিহ্নিতকরণের সঙ্গে নিজেদের শনাক্ত করতে পারতেন─ অথবা শনাক্তকারী শ্রোতাদের বর্ণবাদী ফ্যান্টাসিগুলোর পরিবেশনা হত। কিংবা দুটোই : কারণ ভিন্ন ও অভিন্নের খেলা সব সময়ই আকর্ষণীয়।

       ১৯১০ থেকে শুরু করে জিগফিল্ড তারকা ফ্যানি ব্রাইস (আসল নাম ফ্যানিয়া বোরাচ, জন্ম ১৮৭৯ সালে) ইহুদি উচ্চারণের গিমিক ব্যবহার করতেন (সবচেয়ে বিখ্যাত “Cohen at the Beach”), কিন্তু তিনি একজন মার্কিন প্রবাসী হিসেবে “I’m an Indian” গানটির রূপায়ণে নিদারুণ বেমানান কমিক এফেক্ট তৈরি করতে ইহুদি উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন (“আহা, আমার দিকে দেখো, আমি একজন ইন্ডিয়ান, এটা তাই যা আমি আগে কখনও ছিলাম না”): from shtetl to reservation, ইহুদিমুখ লালমুখের মতো[16]। চোখে পড়ার মতো বাঁকানো নাক দৃশ্যত ইহুদিমুখ উপস্থাপন করে : ১৯৯৩ সালে ব্রাইস এই তফাৎটা সরিয়ে দিতে প্লাস্টিক সার্জারি করান। ১৯৪০ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি হরবোলার বিদেশিয়ানায় দক্ষতা অর্জন ক’রে তার জিগফিল্ড স্টিক্সের অন্য আর একজনের সঙ্গে তা খুব দ্রুত গণ-সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন; যা অদ্ভুত হলেও “বেবি স্নুক”এর প্যাটাক্যুয়রিক্যাল রেডিও ভয়েসের মতো নৃতাত্ত্বিক চিহ্নযুক্ত নয়। বেশিরভাগ সময়েই ব্রাইস নীচু স্বরাঘাতে তাঁর ব্যর্থ প্রেমের গান গেয়ে গেছেন, যেমন, “যখন এক নারী ভালোবাসে এক পুরুষকে” গানটি- ১৯২৭ সালে “সেলাই মেশিনের গান”-এ সর্বজনীন সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন :

কোনো গান নেই, কোনো পাখি নেই
ঈশ্বর একটা শব্দ মাত্র
যদি তুমি সেলাই মেশিনের গান শোনো[17]

        মার্কিন “স্বাধীনতা”-র স্বপ্ন সোয়েটশপ পরীক্ষায় পাস করে না (“আমেরিকা কখনই আমার কাছে আমেরিকা ছিল না,”[18] যেমন ল্যাংস্টন হিউজের সেই বিখ্যাত উক্তি) : এটা কোনো নাকের কসমেটিক সার্জারি নয়, এ এক শ্রেণিচেতনা যা পার্থক্য মুছে ফেলে, অর্থনৈতিক হিসেবে বুঝতে হবে, বর্ণগত বা জাতিগত নয়।

         —জাতিগত বা বর্ণগত পার্থক্যের ভয় ছাড়িয়ে থাকে পাশব পার্থক্যের ভয়। অ্যানিম্যালাডির ভয় মানুষ হিসেবে (পরিশীলিত, পণ্ডিত, সভ্য আচরণ, ভদ্র পোষাক) পাস করার প্রয়োজনীয়তারূপে প্রতীয়মান হয়, যেমন “ডক্টর টার ও প্রফেসার ফেদার” গল্প, না-পাগল হিসেবে পাস করার প্রয়োজনীয়তার মূর্তিমান প্রকাশ।

         মাইকেল ম্যাকক্লিউর তাঁর “ঘোস্ট তন্ত্র”৪৯-তে মানুষ হিসেবে পাস না করতে পারার আতঙ্ককে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। যেখানে তিনি কেবল একজন যুয়ামিস্টের “পাশব ভাষা”ই আবিষ্কার করেননি, বরং সিংহের চরম মুহূর্তের আওয়াজে তাঁর নিজস্ব ভাববাদী ভাষাগত কসরত ছাড়িয়ে কবিতায় বাজিয়ে তোলেন বাঘের গর্জন যা কবিতাকে পেরিয়ে যায়, মানবত্বকে পশুত্বের ভেতর সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে নাট্যরূপ দেন।[19]

         এ এক বিস্ময়কর জাদুমন্ত্র, যেন মানুষের ভূতছাড়ানোর মতো বিদ্রূপাত্মক। ম্যাকক্লিউরের পরিবেশনার উদ্ভট খেয়াল হল মানুষ পশুকে বশে আনছে না, বরং পরিবেশনাটি সাহিত্যানুগ হয়ে ওঠে আমাদের অভ্যন্তরীণ পশুর সঙ্গে, যা আমাদের চেয়ে আরো উন্নত নয় বা আমরা যা তার থেকে আরো বেশি মানুষ নয় (à la Cocteau’s “où est ma bête?”)[20] বরং শরীরের মতোই কিছু যা প্রাণীকে মানুষের প্রাথমিক স্তর হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে এ জাতীয় সাহিত্যিক প্রচেষ্টা অপরিহার্যভাবে জড়িয়ে পড়ে রোমান্টিকতা বা স্টিগমায়─ জঙ্গি, আদিম, বর্বর করে তোলে।

        কার্ট ম্যাকডোয়েলের Thundercrack (1975)-এ, জর্জ কুচার (যিনি স্ক্রিপ্ট লিখেছেন) একজন সার্কাস ট্রাক চালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি তাঁর দায়িত্বে থাকা এক মেয়ে গরিলার প্রেমে পড়েন। শেষে সেই মর্মস্পর্শী দৃশ্য, যেখানে বিছানায় কেউ একজনের সঙ্গে আমরা ড্রাইভারকে দেখতে পাই মেয়েলি গরিলার পোশাকে। বোদলেয়ারের “À une mendiante rousse”-এর পর থেকে শিল্পীরা সমাজের ‘অপর’কে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন ঈক্ষণকাম, দয়া, অনুকম্পা বা রোমান্টিকতা ছাড়াই। একজন অভিনেতার সাথে বিছানায় গরিলার পোষাকে কুচার হ’ল প্যাটাক্যুয়রিক্যাল সম্ভাবনার যথার্থ উপলব্ধি, যাকে কুচার বলেছিলেন “অন্য জগতের মানবতা”। অন্য অনেক পর্নগ্র্যাফিক সিনেমার মতো Thundercrack শেষ দৃশ্যে এক জান্তব যৌনক্রিয়ায় অবতরণ আমাদের মাথার মধ্যে এঁকে দেন। পাশবিকতার প্যারোডিতে কুচার  আত্তীকরণের সহজ রাস্তা বানচাল করে দেন : তিনি পশু হিসাবেই পাস করতে চান।

         যেন খেই ধরানো সূত্র, ৩০ শে জুলাই, ২০০৯-এ, ফক্স নিউজ মেগিন কেলির সঙ্গে এমন একটি অংশ পরিবেশন করে, যা ন্যাশনাল এন্ডাউমেন্ট ফর আর্টসকে আক্রমণ করেছিল একটি ধারাবাহিক চলচ্চিত্রে Thundercrack সমর্থন করার জন্য, কেলির মতে, সিনেমাটি ন্যাক্কারজনক, কারণ এটি একজন মানুষের সঙ্গে একটি গরিলার যৌনতা দেখিয়েছিল।

        নৈতিক অসংগতি পাজিদের শেষ আশ্রয়।

CXX.

আমি আবেগ ও বক্তৃতা ঘৃণা করি, ও দুটোই আমার পোষায় না।

CXXXIII.

        এই রচনাটা আমি যখন ফিরে দেখছিলাম তখন বেশ কিছু মারাত্মক ত্রুটি চোখে পড়েছে: ব্যর্থতার মূল্যায়নে রোমান্টিকতা, দেগে দেওয়ার ঐতিহাসিকীকরণ রুখে দেওয়া, একবচন ও বহুবচনের এবং তাৎক্ষণিক ও সিরিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব। আমার পক্ষে ওই অধ্যায়গুলো বাতিল করার সময় পেরিয়ে গেছে আর আপনার দরবারে পেশ করার জন্য আমার আরো অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেছে। তাদের আমি এখানে রাখছি এটা দেখাতে যে বৈঠাহীন, স্থিতিহীন, লক্ষ্যহীন জীবনসমুদ্রে ছুঁড়ে দেওয়া আত্মার কীভাবে বিস্ময়জনক বদল ঘটে : বিভ্রান্ত, অর্থহীন ভাবনা নিয়ে হইচই করা এক মানুষ।

CXXXIV.

       আমাদের আখ্যানে আমরা কখনই প্রকৃত তথ্যগুলো সহজে পেরিয়ে যেতে পারি না। কিছু কিছু অনুমানের মতো খাঁটি উদ্ভাবনের কোনো উদাহরণ নেই। এমনকী কথাসাহিত্যের কোনো বাস্তবিক রচনা লেখাও হ’ল যেমন আছে ঠিক তেমনভাবেই বর্ণনা করার অবসর ও স্বাধীনতা নেওয়া। প্রকৃত জিনিসের সত্যিকারের বিবরণ একটা বিরল কবিতা, কারণ, মানুষের সহজবুদ্ধি সব সময়ই হঠকারী আর ভাসা-ভাসা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফেলে।… কারণ, যাঁরা তাঁদের নিজের জ্ঞানের সম্মান করে তাঁদের থেকে জ্ঞানীরা তত বেশি জ্ঞানী নয়। কিছু দুর্বলচিত্তের মানুষ খুবই দুঃখজনকভাবে কেবলমাত্র সেটাই লিখে রাখে তাদের সঙ্গে কী হয়েছে; কিন্তু অন্যরা লেখে কীভাবে তা মহাবিশ্বের সঙ্গে ঘটেছে।

                                                                                                          হেনরি ডেভিড থোরিও[21]

CXXXV.

          এ কেবল ঐতিহাসিকই করে তোলে না, এটা সব সময়ই ঐতিহাসিক।

CXXXVI.

এই প্রবন্ধটা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

প্রবন্ধটা কি আপনার সমস্যা সমাধান করল?

__ হ্যাঁ __ না __ আমি জানি না

প্রবন্ধটা কি প্রাসঙ্গিক ছিল?

__ হ্যাঁ __ না

প্রবন্ধটা আরো উৎকৃষ্ট করতে কী করা যায়?

CXXXVIII.

       কাউকে একটা কবিতা দিন, সেটা এক মুহূর্তেই পড়া হয়ে যাবে। কাউকে কবিতা লিখতে শেখান, সেটা রয়ে যাবে জীবনভোর।

      কাউকে একটা কবিতা লিখতে শেখান, সে নিজেকে বুঝতে শুরু করতে পারে। কাউকে একটা কবিতা পড়তে শেখান, সে বিশ্বকে বুঝতে শুরু করতে পারে।

      কাউকে একটা পাত্র দিন, সে তা ভরে তুলবে, কাউকে বল খেলতে শেখান, সে লীগে যোগ দিতে পারে।

CXL.

“Cock-a-doodle-de-dooooooh!”

“Cock-a-doodle-de-dooooooh!”


ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode)

অনুসৃজন প্রকল্প :

      এটি একটি ধারাবাহিক অনুসৃজন প্রকল্প। চার্লস বার্ন্সটাইনের “The Pataquerical Imagination: Midrashic Antinomianism and Promise of Bent Studies” প্রবন্ধটির অনুসৃজন। এই শেষ পর্বে এগারোটি পরিচ্ছেদ অনুসৃজন করা হল। CXXXIV অধ্যায়টি হেনরি ডেভিড থোরিও-র A Week on the Concord and Merrrimack Rivers বই থেকে উদ্ধৃতি, গদ্যের খসড়ায় থাকলেও ফাইনাল সংস্করণ, যা পিচ অফ পোয়েট্রিতে সংকলিত হয়েছিল সেখানে বাদ দেওয়া হয় পরিসরের অভাবে। এখানে অধ্যায়টি যুক্ত রাখা হল। ইংরেজি সংস্করণ অংশুমালীর ইংরেজি সেকশানে। এই প্রবন্ধটি ২০১৬ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বার্ন্সটাইনের কাব্যতত্ত্বের বই পিচ অফ পোয়েট্রি গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

১ম পর্ব পড়ুন এখানে >>>

২য় পর্ব পড়ুন এখানে >>>

৩য় পর্ব পড়ুন এখানে >>>

৪র্থ পর্ব পড়ুন এখানে >>>

৫ম পর্ব পড়ুন এখানে >>>

[1] কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী, বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থের অভিধান, ভাষাবিন্যাস, ২০০৯

[2] Pitch of Poetry by Charles Bernstein, Chicago: University of Chicago Press, 2016.

[3] Topsy-Turvy by Charles Bernstein, Chicago: University of Chicago Press, 2021.

[4] “বসন্তযাপন” গদ্য, বিচিত্র প্রবন্ধ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩১৪, পুনর্মুদ্রণ ১৪১১

[5]Logical Philosophical Treatise or Treatise on Logic and Philosophy (Latin: Tractatus Logico-Philosophicus) by Ludwig Wittgenstein, tr. Frank P. Ramsey and Charles Kay Ogden, Harcourt, Brace and Company, Newyork, 1922.

[6] আনমিতলজি – আনমিত+logy – Bent Studies

[7] Antinomianism- Etymology < Greek ἀντί against + νόμος law, an ism to believe that they are not bound by moral law, instead they require to break a moral (or religious or Biblical)law.

[8](Palmyra, NY: theenk Boooks, 2014), 11. See Bartlett’s preface to Beauty Is a Verb: The New Poetry of Disability (El Paso, TX: Cinco Puntos, 2011) and the interview with her at Jacket 2: jacket2.0rg/?q=commentary/jennifer-bartlett-conversation-jane-joritz-nakagawa.

[9] www.youtube.com/watch?v=JnylM1hI2jc. The video has received over one million views. See also David Wolman, “The Truth about Autism: Scientists Reconsider What They Think They Know,” Wired 16.03 (February 25, 2008),archive.wired.com/medtech/health/magazine/16-03/ff_autism?currentPage=all.

[10] abaggs.blogspot.com.

[11] “The age demanded an image / Of its accelerated grimace . . . / Not, not certainly, the obscure reveries / Of the inward gaze; / Better mendacities / Than the classics in paraphrase! . . . / A prose kinema.” Ezra Pound, “Hugh Selwyn Mauberly” (1920), EPC Digital Library, writing.upenn.edu/library/Pound_Ezra_Hugh_Selwyn_Mauberly.html. “Tamed by Miltown” is from Robert Lowell’s “Man and Wife,” in Collected Poems (New York: Farrar, Straus and Giroux, 2007).

[12] Collected Poems, vol. 1, 64.Williams ends the poem with the pataquerical imperative: “No one / will believe this / of vast import to the nation.”Only this and nothing more.He comes back to the ontology of voyeurism in “The Young Housewife.”

[13] Duchamp’s bachelor machine, “Étant donnés” turns the gaze back on the gaze. See also “Reznikoff’s Nearness” in My Way: Speeches and Poems.

[14] “‘But you surely cannot deny that, for example, in remembering, an inner process takes place.’–What gives the impression that we want to deny anything? When one says ‘Still, an inner process does take place here’—one wants to go on: ‘After all, you see it.’ And it is this inner process that one means by the word ‘remembering.’—The impression that we wanted to deny something arises from our setting our faces against the picture of the ‘inner process.’ What we deny is that the picture of the inner process gives us the correct idea of the use of the word ‘to remember.’ We say that this picture with its ramifications stands in the way of our seeing the use of the word as it is.” (§305, Anscombe trans.)

[15] Larry Eigner, Selected Poems (Tuscaloosa: University of Alabama Press, in press), no. f9, September 1954.

[16] The Library of Congress streams a 1921 recording of Brice performing “I’m an Indian,” www.loc.gov/jukebox/recordings/detail/id/8288/, lyrics by Blanche Merrill, music by Leo Edwards. This song is not to be confused with, but is worth comparing to, the later Irving Berlin song from Annie Get Your Gun (1946), “I’m an Indian Too,” which has been criticized as racist. For “Mrs. Cohen at the Beach,” go to archive.org/details/FannyBriceCollection1927-1930Complete. More discussion on this topic in “Objectivist Blues: Scoring Speech in Second Wave Modernist Poetry and Lyrics” in Attack of the Difficult Poems.

[17] Lyrics by Ballard MacDonald and Billy Rose (born William Rosenberg in 1899), who had also written “Mrs. Cohen at the Beach.” Full lyric and sound file at jacket2.0rg/commentary/song-sewing-machine.

[18] “Let America Be America to Me,” in The Collected Poems of Langton Hughes, ed. Arnold Rampersand (New York: Alfred A. Knopf, 1994), 189.

[19] jacket2.0rg/commentary/michael-mcclure-reads-lions.

[20] So says Beauty confronted with the loss of her beast in Jean Cocteau’s 1948 film La Belle et la Bête.

[21] Herny David Throeau, A Week on the Concord and Merrrimack Rivers (Boston: James R. Osgood, 1873), 344- 45.

ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode)

পূর্ববর্তী পর্ব পড়ুন এখানে >>>

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ