প্রেমিকার নাম মেঘাগমপ্রিয়
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে।
স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে। যাও।
অমর চাকরী করে একটা বেসরকারি কারখানায়। লোহার রড তৈরি হয়। ছুটি বুধবার। আর এই একটা ছুটির দিনে সে আর বাইরে বেরোতে চায় না। নিজের পছন্দ গাছ লাগানো। তাছাড়া বাড়ির উঠোনে ঘাস, জঙ্গল পরিষ্কার করতেই তার দিন কেটে যায়। আর লতিকা এই সুযোগে বাজার করা, বিল দেওয়া সব বাইরের কাজ সেরে নেবে বলে বেড়িয়ে পরে বাজারে।
যখন অমর চাকরী পায় নি, তখন ছাত্র পড়িয়ে তার রোজগার হতো মোটা টাকা। সবটা খরচ না করে সে জমিয়ে রাখতো নিজের অ্যাকাউন্টে। বরাবর স্বাধীনচেতা ছেলে। কাউকে নিষেধের বেড়ায় রাখতে তার মন সায় দিতো না। গ্র্যাজুয়েট হবার আগে অবধি মেয়েদের সাথে কথা বলতে তার শরীর ভয়ে কাঁপতো।
হিরু বলেএকট ছেলে ভালোবাসে, লতিকাকে।লতিকা বলে,ভালোবাসা নাকি জানি না।আমার স্বামীটা নেঙা বাসুলে।শালা কিছু পারে না।তাই খিদে মেটাতে তোর কাছে আসি।হিরু বলে,আমিও তাই চাই।ভাই খেল খতম,পয়সা হজম।ওসব ভালোবাসা জানি না।তবে তুমি তো পরের বৌ।বেশ মিষ্টি লাগে।
লগিকার পোশাকে ছিলো খোলামেলা মেজাজের পরিচয়। হিরু কালো সাদাসিধা একজন শহরের ছেলে। আমাদের বন্ধু বান্ধব অনেকে আড়াল থেকে লতিকাকে দেখতো কিন্তু সামনে গিয়ে কথা বলতে পারতো না। কিন্তু হিরু পারতো। ওদের দুজনের কলেজে নাম হয়েছিলো, ওথেলো, দেসদিমোনা।জয়ের মনে পরছে, কলেজে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে
একদিন হিরু বললো, লতিকা চলো সিনেমা দেখতে যাই। লতিকা রাজি হলো। হিরু আমাদের সকলকে যেতে বললো। আমরা সবাই অবাক। মলয় বলছে, কার মুখ দেখে উঠেছিলা। অসীম বললো, লতিকার সাথে সিনেমা। এই সুযোগ মিস করা যাবে না। ওদের পাল্লায় পড়ে জয় গিয়েছিলো।হাওড়ার পুস্পশ্রী হলে। ভিতরে অন্ধকার, হিরু আর লতিকা সামনে এগিয়ে বসলো। জয়রা পিছনে।ওরা দেখলো ওরা সিনেমা দেখা বাদ দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে বসে। আলো আঁধারিতে এর বেশি কিছু দেখতে পাইনি জয়। এইভাবে বিয়ের আগে থেকেই লতিকা হিরুর সঙ্গে মিলিত হতো।বিয়ের পরেও তাকে ভুলতে পারে নি।লতিকা বলে,সাদাসিধা দেখতে। তোমার নাম দিলাম,ঢ্যামনা হিরু।হিরু রাগ করতো না।সে বন্ধুদের বলতো,শালা চা খাও,ভাঁড় ফেলে দাও।ভালোবাসার ইয়ে মারি।পরের বৌ,নিশ্চিন্ত আমি বস।
লতিকা বাজারে গেছে। জয় বাড়িতে একা। মেয়ে স্কুলে গেছে। জয় বিছানায় গা এলিয়ে কলেজ জীবনের কথা ভাবছে। ঘন্টা খানেক হয়ে গেলো। লতিকা বাজারে গেছে।
জয় ভাবছে,আমার
নিজের মনের আয়নায় হিরুর ছবি।
অসীম একদিন আমাকে নিয়ে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে গেছে। হিরুর সঙ্গে দেখা। অসীম বললো, কি ব্যাপার হিরু তোরা আর কলেজে যাস না। কেমন আছিস। এখানেই বা কি করছিস। হিরু নোংরা জামা প্যান্ট পরে কলেজের সামনে ফুটপাতে বসে আছে। আমরা তো নরসিংহ কলেজে পড়ি। আজকে কাজ আছে বলে এই কলেজে আসা।
আমি হিরুকে জিজ্ঞাসা করলাম, বল কিছু বল।
হিরু অন্ধকার মুখ তুলে বললো, জীবন শেষ। লতিকা বিয়ে করে অমরের কাছে চলে গেছে।জয় বললো,তুই তো ভালোবাসিস না।ভালো হয়েছে বল।হিরু বললো,মালটা সরেস ছিলো রে
। তারপর বাজারে লতিকা হিরুকে পেয়ে পাগল।ঘর ফাঁকা ছিলো।ঘরে নিয়ে গিয়ে হিরুকে জড়িয়ে ধরলো।হিরু হাসলো মনে মনে,শালা গাছেরও খাবো,তলারও কুড়োবো।হলও তাই।বাচ্চা হলো।সবাই জানলো এটা অমরের সন্তান।কিন্তু লতিকা জানে গোপন কর্মের কথা।
তারপর লতিকা ধীরে ধীরে হিরুকে হেরোইনের নেশা ধরালো।সে ভাবলো,এবার হিরুকে খুন করতে হবে।খানকির ছেলে অন্য মেয়েকে ধরেছে।এবার মজাটা দেখাবো।
তারপর অনেকদিন পরে জয় দেখলো,
হাতে হিরুর সাদা কাগজে মশলা পুড়ছে। ধোঁয়াটা নাক দিয়ে টেনে নিচ্ছে।
তুই হেরোইনের নেশায় জীবন শেষ করিস না হিরু। বললো, অসীম। আমি বললাম কি করে জানলি তুই,যে ওটা নেশার জিনিস।
—- আমি আমাদের পাড়ায়একজনকে ওই নেশায় মরতে দেখেছি। তখন সকলের আলোচনায় বুঝেছি নেশার মারাত্মক প্রভাব
হিরুকে নিষেধ করতে হবে।
মুখ ঘুরিয়ে দেখা গেলো হিরু পাগলের মতো ছুটছে। একটা দোতলা বাসে চেপে পড়লো হিরু। তারপর ওর দেখা আর কোনোদিন পাইনি। নাটক শুরুতেই শেষের বাজনা বাজিয়ে লতিকা মহাসুখে ঘর করছে দেশের গ্রামে।
জয় ভাবছে, আর নিজের মনের সঙ্গে কথা বলে চলেছে।
পরে শুনেছিলো জয় চিরকালের মতো হিরু তাদের ছেড়ে চলে গেছে অচিন দেশে।সেই থেকে জয় মেয়েদের একটু এড়িয়ে চলতো ভয়ে। ভালোবাসার ভয়ে…।
আবার অমর ভাবে, যার পাল্লায় পরেছে তার কবে যে পরিবর্তন হবে কে জানে। মনে মনে ভাবে অসীমের কথা, জানিস শতকরা আশি ভাগ মানুষ ভালো। তা না হলে পৃথিবী অচল হয়ে পরবে। সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। আশি শতাংশ মানুষ সৎ মানুষ।
লতিকা বাজারে গেছে দুঘন্টা হয়ে গেছে। এর মধ্যে মেয়ে রুমা চলে এসেছে। মেয়ে বলছে, বাবা, আমি আজ স্কুলে যাবো না।
— ঠিক আছে, তোর মা আসুক বলবি।
—- তুমি একটু বলে দিও
—-বেশ বলে দেবো।
সংসারে কে যে কখন কোন রোলে অভিনয় শুরু করে দেয় বোঝা মুস্কিল। লতিকা সব ব্যাপারে স্বাধীন। তবু সবাইকে বলে বেড়ায়, স্বামী তাকে সন্দেহ করে।
অমর সব জানে, শোনে। কিন্তু ঝগড়া এড়িয়ে যায়। সংসারে যার সাথে সব সময় থাকতে হবে তার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগতো না। তারপর মেয়ে বড়ো হয়েছে।
অমরের মনে পরছে,তখন বিয়ে হয়েছে এক বছরও হয়নি। লতিকা বাপের বাড়িতে গেছে।
অমর দেখা করতে গিয়ে দেখে, লতিকা ঘরে কার সঙ্গে কথা বলছে। অন্ধকার ঘর। শ্বশুর, শ্বাশুড়ি অন্য ঘরে। সে আর শ্বশুর বাড়িতে ঢোকে নি। লোকজন ডেকে এনে দেখে, দুজনে বিছানায় শুয়ে গল্প করছে। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে কিন্তু লতিকার স্বভাবের পরিবর্তন হয় নি। পরপুরুষের সঙ্গে বিছানায় গল্প করার অনুমোদন সেদিন গ্রামের লোকে দেয়নি। তার বেশি অসভ্য কথা ভাবতে অমরের রুচিতে বাধে।
লতিকা এখনও মেয়েকে বাড়িতে রেখে প্রতিবেশিদের বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে। পুরুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তার বেশি ভালোলাগে। অমর বাধা দিয়েছে অনেকবার। কিন্তু ও কাজে ব্যস্ত থাকে। বেশি কিছু বলতে পারে না।
মেয়ে বড়ো হয়েছে। এবার তারও শখ আছে, আহ্লাদ আছে। মেয়ে বলে, বাবা আমি কার্তিক লড়াই দেখতে কাটোয়া যাবো। জয় বলেছিলো, নিশ্চয় যাবে।কার্তিক লড়াই দেখতে মেয়েটা কাটোয়া মামার বাড়ি চলে গেলো।
জয় বলছে, মেয়েটা নেই বাড়িটা ফাঁকা লাগছে। লতিকা বলে, বড়ো হয়েছে। পঁচিশ বছরের হলো। এবার বিয়ে দিয়ে দাও।
জয় বললো, তোমার তো অনেক জানা শোনা। সবাইকে বলে দেখতে পারো..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..