প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আশপাশটা খুব সতর্কভাবে দেখে নিল শরিফ। মেইন রোডের শরীর থেকে অপ্রশস্ত হাতের মতো সংকীর্ণ গলির মধ্যে কিছুদূর হেঁটে এসেই বাড়িটা। মাঝেমধ্যেই আসতে হয়, তাই সবকিছুই মোটামুটি পরিচিত। মানুষের তেমন একটা আনাগোনা এমনিতেই থাকে না; তার ওপর আবার মাঝরাত থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। থামার কোনো নামগন্ধ নেই। একটা ফুচকাওয়ালাকে দেখা যায়, সেও নেই আজ। সুতরাং দুশ্চিন্তার কোনোই কারণ নেই; নিঃসন্দেহে একটা সুন্দর দিন পাওয়া গেছে।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লো সে। একতলার টিনশেড বাড়ি। একটিমাত্র প্রাণীর বাস, তার সাথেই বিকিকিনি চলে শরিফের। আজ হাতে বেশ সময় নিয়ে সে এসেছে। বেতের সোফায় এসে বসলো শরিফ। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ডাক পড়ে যাবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না; দুই-তিন ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে।
প্রথম যেদিন শরিফ এখানে আসে, সেদিনের কথা সে ভাবতেই পারে না। কত রকম অনিশ্চয়তা, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যেই না ছিল। তার অফিসের নিম্নবর্গের এক কলিগ তাকে সন্ধানটি দিয়েছিল। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সে ঠিক করলো- না, ঠিকই আছে; এটাই সঠিক। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। কেউ নেই, ফাঁকা ঘর, সে একা। তেমন কোনো আসবাব নেই; তবে যা আছে, তা-ই খুব পরিপাটি করে সাজানো। ঘরের ঠিক মাঝখানটায় তিনটে বেতের চেয়ার, একটা বেতের ছোট টি টেবিল। চার কোনায় চারটে ফুলের টব, বিভিন্ন রঙের বড় বড় কয়েকটি ফুল ঝুলে আছে, গন্ধবিহীন ফুল। ঘরের দেয়ালে বড় জায়গা জুড়ে টাঙানো কয়েকটি নগ্নচিত্র, সবগুলোই ভিনদেশি নারী। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সে একটি বেতের চেয়ারে গিয়ে বসলো। তাকে সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। চুলগুলো উসকো-খুসকো, খোঁচা খোঁচা দাড়ি; এও এক ঝামেলা, দাড়িগুলো চোরাকাঁটার মতো হিঙ্ছে। গত কয়েক দিনে অনেক বড় রকমের পরিবর্তন তার মধ্যে ঘটেছে; চুল-দাড়ি কাটাটা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে ওঠেনি। অফিসের বস এর মধ্যে বেশ কয়েকবার করে বলেছেন যেন ক্লিন শেভ্ড হয়ে আসা হয়; কিন্তু শরিফ সেদিকে ভ্রƒক্ষেপই করেনি। তার এক কলিগ তো হাসিচ্ছলে রীতিমতো অপমানের চূড়ান্ত করে ফেললো। হাতে এক টাকার একটা কয়েন দিয়ে বললো, ‘নাও, আমি এই দিলাম; তুমি নিজে একটু চেষ্টা করলেই শেভ করার টাকাটা জোগাড় হয়ে যাবে।’ এত্ত বড় করুণ রসিকতা; অথচ সে মোটেই কান করলো না। চা দিতে এসে পিয়নটা এ কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো; সে দেখেও না দেখার ভান করলো। এসব এখন নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার, এগুলো ভাবনা-চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই এখন।
ভেতরের দরজা ঠেলে একটি অসম্ভব রূপবতী মেয়ে চা নিয়ে হাজির হলো। বৃক্ষশোভনীয় ফুল, সুন্দর ফুলদানীতে না সাজালেও দেখতে ভালো লাগে। হাতে চায়ের কাপ দেখে সে হকচকিয়ে গেল। সে যতদূর জানে, এ স্থানে তাকে এ রকম আতিথেয়তা দেখানোর কোনোই কারণ থাকার কথা নয়; বিশেষ কেউ হলে, মানে মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ের কেউ হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ না। শরিফ প্রথম যখন শুনলো যে এখানে এত বড় বড় পর্যায়ের মানুষেরাও আসেন, সে খুব অবাক হয়েছিল। তাহলে এখানে আসার প্রকৃত কারণটা কীÑ এ নিয়ে অনেক দিন ধরে সে ভাবছে, কোনো সমাধান পায়নি। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো, ‘তমিজ ভাই আপনার ব্যাপারে আমাকে বলেছে। চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে; একটু সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে সমাধান বের করার চেষ্টা করেন। আপনি তো অনেক শিক্ষিত, বৃদ্ধিমান মানুষ; আপনাকে মানায় না। এখানে শেয়াল-কুকুররা আসে, মানুষের স্থান এখানে না।’ শরিফ অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এই মেয়ে যে এত সুন্দর শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারে সেটা সে ভাবতেও পারেনি। সে বললো, ‘কিন্তু, আসলে…’ তাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটি বললো, ‘চা-টা শেষ করে চলে যাবেন। আর কোনো দিন আসবেন না। ভালো থাকবেন।’ এই বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে চলে গেল।
তারপরও শরিফ এসেছে, বহুবার এসেছে।
শরিফ জানে, এ সময় আর কেউ নেই এ বাসায়। সে চাইলেই ভেতরের ঘরে উঁকি দিতে পারে; ইচ্ছে হলে সরাসরি ঘরেও ঢুকে যেতে পারে; কারো কোনো অনুমতি নেবার প্রয়োজন তার নেই। কিন্তু সে কখনোই সে চেষ্টা করেনি; এখানে বসে থাকতে তার মধ্যে অন্য রকম এক ধরনের ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। আজ এত দেরি কেন হচ্ছে? খুব অস্থির লাগছে। অস্থিরতার কারণটা সম্পর্কেও ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
বৃষ্টি এখনও থামেনি; বরং বেড়েছে। একটু আগেও টুপটাপ করে পড়ছিল, এখন শুরু হয়েছে ঝমঝমানি। টিনের চালে মধুর সংগীত, গান শুনতে পারলে ভালো লাগতো বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান…। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরসুধার স্বাদ পাওয়া গেল, ‘স্যরি, একটু দেরি হয়ে গেল।’
মেয়েটির নাম নিপু। তার সবচেয়ে যে দিকটি বেশি ভালো লাগে তা হচ্ছে হাসি; শব্দহীন হাসি, ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একটুখানি শুধু দাঁত দেখা যায়। কী সুন্দর! কী সুন্দর!! হৃদয়ে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। এতদিনেও একটুও পুরোনো হয় না সে হাসি। এই কি এক রহস্য যার কারণে প্রথম দিকে শরিফের মধ্যে কিছুমাত্রও অপরাধবোধ জন্মেনি? উত্তরে সে মৃদুভাবে হাসলো। এ হাসির অর্থ নিপুর জানা।
সে বললো, ‘চলেন, বৃষ্টি দেখি।’
‘না, তুমি বরং আমার পাশটায় এসে একটু বসো; গল্প করি।’
‘আরে চলেন না, অনেক দিন বৃষ্টি দেখা হয় না।’
‘তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার।’
এর আগেও অনেকবার সে বলতে চেয়েছে, পারেনি। আজ অন্তত শুরুটা তো করা গেছে। যেভাবেই হোক, আজ একটা ফয়সালা করেই ফেলতে হবে। সবুরের মেওয়া বাসি হতে শুরু করেছে। তাছাড়া, আর সময়ও নেই; মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত আজ।
নিপু বললো, ’সেসব পরে শুনবো। এখন চলেন তো।’
কীভাবে অগ্রাহ্য করা যায় এ কণ্ঠস্বর!
বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে থাকতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। বৃষ্টি থেমে গেছে সেই কখন। নিঃশব্দ কথপোকথন বহমান। নীরবতা ভেঙে নিপু বললো, ‘খুব টায়ার্ড লাগছে। আজ থাক, আপনি বরং চলে যান।’
‘কিন্তু….’
‘আরেক দিন শুনবো শরিফ ভাই; আজ না, প্লিজ!’
শরিফ একটুও অবাক হলো না। সে নিপুকে খুব ভালো করে চিনে ফেলেছে এতদিনে। অন্য কোনো মেয়ে হলে ‘কিন্তু’-টার অন্য মানে করতো; মেয়েটি নিপু বলেই তা করেনি।
আকাশ পরিষ্কার, ঠাণ্ডা আবহাওয়া। সূর্যটাও লুকিয়েছে, আকাশে কার যেন রক্ত ভাসছে! রক্ত!! কার?
ফুচকাওয়ালার দেখা মিললো। আজকাল কী হয়েছে কে জানে, শরিফের কারো সাথে তেমন একটা কথা বলতে মন চায় না। শুধু নিম্নবর্গের মানুষগুলোকে দেখলে কথা বলতে ইচ্ছে করে। অর্থের অভাব ছাড়া আর কোনো অভাব নেই ওদের। সুখী মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে- সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর গল্প, সুবজ পাতার গল্প, নীল জলের গল্প, লাল কৃষ্ণচূড়ার গল্প।
‘ভাই, কী করেন?’
‘ফুটবল খেলি।’
একজন ফুচকাওয়ালার কাছে এ ধরনের কথা শুনতে ভালো লাগার কথা না, অপমানবোধ হবার কথা। কিন্তু, শরিফ কিছুমাত্রও অপমানবোধ করলো না। তার কেন জানি ভালো লাগছে কথা বলতে।
‘একা একা ফুটবল খেলেন কীভাবে? গোলপোস্ট কই?’
ফুচকাওয়ালা কোনো কথা বললো না। ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে চুপ করে গেল।
‘ভাইজান, ভীষণ বিপদে আছি। কথা বলতি ভাল্লাগছে না। কিছু মনে কইরেন না। খাইবেন কিছু?’
‘নাহ্। আপনার সাথে বরং কিছুক্ষণ গল্প করি।’
‘কামের সময় জ্বালাতন কইরেন না তো ভাইজান। যান গা।’
শরিফ চলে গেল। কোথায় যাবে কে জানে! যেখানে যাওয়া প্রয়োজন ছিল, সেখান থেকে খানিক আগেই সে বিদায় নিয়ে এসেছে।
গোধূলির এই সময়টা বড়ই উদাস করা। সেই প্রথম গোধূলি আর এই গোধূলি সময়ের সাথে সময়ের কতই না অমিল। এই ফুচকার দোকানটার সামনেই কত মধুর স্মৃতি তৈরি হয়েছে। রাস্তার ওপারের বড় কৃষ্ণচূড়ার নিচটায় সে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য ঠিক মাথার ওপর, যেন একটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। হঠাৎ কোত্থেকে উদয় হয়ে এসে বললো, ‘এক্সকিউজ মি! আপনার ফোনটা একটু দেয়া যাবে? একটা রিং করবো, আমার মোবাইলে।’
ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় শরিফ কিছুটা মোহগ্রস্ত।
‘আসলে আমার মোবাইলটা আমি কোথাও ফেলে এসেছি। কিন্তু কোথায়- তা মনে করতে পারছি না। ফোনটার চাইতেও ফোনবুকের নম্বরগুলো বেশি মূল্যবান।’
শরিফ ফোনটা এগিয়ে দিল। সূর্যের প্রখর আলো সরাসরি তার চোখে এসে পড়েছে, ঝাপসা অন্ধকার; সামনের মুখখানি ছাড়া আর কিছুই সে অন্ধকারে চোখে পড়ে না।
‘থ্যাংক ইউ।’ বলেই মেয়েটি চলে গেল।
এরপর আবারো দেখা, বাসস্টপে। প্রচণ্ড ভিড়ে গা ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে থাকতেও বড় ভালো লাগছিল। মেয়েটির গন্তব্যই যেন তার গন্তব্য। বাস থেকে নেমে পড়লো শরিফ। পেছন পেছন যায়, কোথায় যাচ্ছে তা তার অজানা। কিন্তু এ পথ হাঁটাতে কোনো ক্লান্তি নেই। গন্তব্য নির্দিষ্ট থাকলে হাঁটতে কষ্ট; এ তো গন্তব্যহীন যাত্রা।
এরপর আরও দুদিন। তারপর আরও।
এখন মেয়েটির সাথে তার নিত্য ওঠাবসা। বিয়ের দিনটা ছিল শরিফের জীবনের সবচেয়ে স্মরণযোগ্য ঘটনা। একটি ঘরে মেয়েকে কবুল পড়ানো হবে, অন্য আরেকটি ঘরে তাকে। হঠাৎ হৈচৈ পড়ে গেল। মেয়েপক্ষ দারুণ অসহায়, ছেলে কবুল বলছে না। কাজি সাহেব নিজে অন্তত পঞ্চাশ বার কবুল বলে ফেলেছেন, ‘বলুন, কবুল?’ ছেলে ‘কবুল’ বলে না। প্রায় আধা ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে। শরিফ কিছুটা সময় চেয়ে নিল। দশ মিনিট পর আবার ‘কবুল পর্ব’ শুরু হবে।
দশ মিনিট, পনেরো মিনিট, ত্রিশ মিনিট তার কোনো খোঁজ নেই। চারিদিকে হুলস্থুল পড়ে গেল- ‘বর নাই, বর পালিয়েছে’। বরযাত্রী যারা এসেছে, সবাই পড়ে গেল চরম বিপাকে। তুমুল অস্থিরতা। মেয়ের জীবন নিয়ে টানাটানি। বিয়েশাদির ব্যাপার; ছেলের জন্য তো কোনো বিষয় না। কিন্তু মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে বিরাট কেলেঙ্কারি।
ঘণ্টা দেড়েক পর সাত-আট বছর বয়সী একটি ছেলে এসে খবর দিল বর না-কি ফিরে এসেছে।
অতঃপর বিয়ে সুসম্পন্ন হলো। বিদায়বেলার করুণ মুহূর্ত, সবাই কান্নাকাটি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় শরিফের এক বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, ‘কি রে দোস্ত, সত্যি করে বল তো তোর কী হয়েছিল হঠাৎ করে? কোথায় গিয়েছিলি?’
শরিফ মোটামুটি সবাইকে শোনানোর মতো স্বরে বললো, ‘আরে বিয়ের পর তো আমাকে সারাজীবন ঝামেলার আর দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হবে। তাই বিয়ের আগ দিয়ে বাকিদের তার হাওয়া কিছুটা দিলাম।’
সাথে সাথে কান্নাকাটির বদলে হাসির রোল পড়ে গেল। কে জানতো, মুখের ‘পেরেশানি’ সিন্দাবাদের ভূতের মতো সারাজীবন বুকের মধ্যে আবাস গেড়ে বসবে!
ভালোবাসায় গড়া সংসারের চাইতে ‘মায়া’য় গড়া সংসারের সুখ বেশি স্থায়ী হয়। ভালোবাসার নদীতে জল বেশিদিন থাকে না, কোনো না কোনো সময় গ্রীষ্ম আসে; ‘মায়া’র নদীতে আপনা-আপনি জল ভরতে থাকে, গ্রীষ্মের খরতাপেও সে জল নিঃশেষিত হয় না। ধীরে ধীরে জল শুকোতে শুরু করলো, শত চেষ্টাতেও তা ধরে রাখা যায় না। গাছের ফুল চিরকাল সুগন্ধ ছড়ায়; হাতের ফুলের গন্ধ দ্রুতই ফিকে হয়ে যায়।
বিয়ের বছরখানেক পর।
সারাদিন অনেক কাজকর্মের চাপ চুকিয়ে বাসায় এসে কোনো রকমে রাতের খাবারটা সেরে একটু তাড়াতাড়িই গা এলিয়ে দিল শরিফ। প্রচণ্ড খাটনি গেছে আজ। টেলিভিশনের লম্বা সিডিউল শেষ করে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঘরে এসে সোমা বললো, ‘কি, ঘুমিয়ে পড়েছো না কি?’
কোনো উত্তর নেই। সোমা বললো, ‘কই, ওঠো না একটু!’
প্রচণ্ড ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ রেখেই কোনো রকমে করা উত্তর, ‘কেন, কী হলো?’
‘আহা, ওঠোই না! সারাদিন তো থাকো বাইরে। রাতে এসেও সাথে সাথেই ঘুম। তোমার সাথে তো একটু ভালো-মন্দ কথাও বলা যায় না আজকাল।’
‘আজকাল কই? প্রতিদিনই তো রাতে গল্প করি। এক-দুই দিনই তো! সারাদিন খুব ব্যস্ততা গেছে আজ। খুব ইম্পর্টেন্ট এসাইনমেন্ট ছিলো তো।’
‘হ্যাঁ, বুঝি। আমি ছাড়া আর সবকিছুই তোমার কাছে ইম্পর্টেন্ট।’
‘এভাবে কেন বলছো!’
‘তো কীভাবে বলবো! তুমি ঘুমাও। আমার প্রয়োজন তোমাকে দেখতে হবে না।’
‘কেন যে এ রকম করো তুমি মাঝে মাঝে!’
‘আমি তো এ রকমই। কেন, বিয়ের আগে মনে ছিলো না?’
এর কয়েক দিন পর।
‘কি, অসুস্থ না কি?’
‘না, ঘুম পাচ্ছে খুব। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। লাইটটা অফ করে দিও।’
আজ ‘প্রয়োজন’-এর কথা তার একটিবারের জন্যও মনে হলো না! তবু চাঁদখানি দেখেই শান্তি; তার আলোতে স্নান না হয় না-ই হলো।
এভাবে বালুকণাগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করলো। এক সময় তা হয়ে উঠলো সীমাহীন সাহারা।
শরিফ কৃষ্ণচূড়াটার নিচে গিয়ে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলো। ফিরে যাওয়া সম্ভব না। এতক্ষণে নিশ্চয়ই দারুণ রকম হৈচৈ পড়ে গেছে। দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সে পুনরায় টিনশেড বাড়িটার দিকে পা বাড়ালো।
‘কী ব্যাপার, বাসায় যাননি এখনো?’
‘একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে।’
‘বললাম তো পরের দিন শুনবো।’
‘না, আজকেই শুনতে হবে, প্লিজ!’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। ভেতরে আসেন।’
দরজা লাগানোর সাথে সাথেই নিপুর হাত ধরে টান দিলো শরিফ। এ হাত সে আগেও অনেকবার ধরেছে, নিপুর তাতে কিছুই যায় আসেনি। কিন্তু আজ বাধা পড়লো অন্তরে। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো সে। কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার আশঙ্কায় নয়; তেমনটা ভাবার কোনো কারণই অবশ্যি নেই, তার ক্ষেত্রে ওগুলো ‘ঢং’ ছাড়া আর কিছু না। হাত ছাড়িয়ে নিলো ভয়ে। অচেনা ভয়, এ ভয়কে জিততে পারার সাহস-শক্তি কোনোটাই তার নেই; কোনো নারীরই তা থাকে না। সে প্রায় দৌড়ে ভেতরের ঘরে ঢুকেই সশব্দে দরজা লাগিয়ে দিল। শরিফ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো, যেন পাথর-মূর্তি।
রাত আটটা নাগাদ সব জানাজানি হয়ে গেল। পুলিশ এলো সাড়ে আটটার দিকে। দুজন পুলিশ মিলে শরিফকে খুব সতর্কভাবে ধরে জিপে তুলে নিল। দুটো জোনাকি জ্বলতে-নিভতে জ্বলতে-নিভতে উড়ে গেল চোখের সামনে দিয়ে। মুক্তির ঘণ্টা আর বেশি দূরে নয়!
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..