প্রতিমা রায়বিশ্বাসের কবিতা

প্রতিমা রায়বিশ্বাস
কবিতা
Bengali
প্রতিমা রায়বিশ্বাসের কবিতা

পরশ পাথর

না না পিঠে নয়।
আমার মেরুদণ্ডের উপর হাত রাখো।
দেখো শিরদাঁড়া বেয়ে চলে যাচ্ছে এক শহরতলি পথ।
সে পথের দুপাশে ঘুপচি ঘর…
এখানে হরতাল করে পুরোনো মেঘ,
ছেড়া আলো, নোংরা বাতাস।
সামাজ ওড়ানো প্লাস্টিকের ফুটো ফুটো যৌবন কথায়
ব্যারিকেট ভেঙে ঢুকে পড়ে … একঘর রাত ,
এক মেঝে বৃষ্টির পেটে জীবন রান্না হয় এখানে ।
জল ঝাড় দিয়ে দিয়ে আমি ….নিঃস্ব মাখি সারাটি শীতকাল।

না না পিঠে নয়….
আমার মেরুদণ্ডে রাখো হাত ।
শুনতে পাবে শিরদাঁড়া বেয়ে বহে যাওয়া এক নদীর কুলকুল সংলাপ ।
ঢেউয়ে ঢেউয়ে চাঁদ স্নানে নামলে অমাবস্যা আসে।
এ নদী বয়ে আনে শীতল শব।
আমার শিরদাঁড়া সাগরে পৌঁছালে
একঝাঁক পাখি জলে ডুবে মাছ হয়।
এ বছর শেষ হলে নদীর সাথে জুড়ে …
এভাবেই সব ঢেউ পৃথিবীর হিসাব।

 

নকল সভ্যতা

সিন্ধু নদ অথবা তার সভ্যতা আমার কিনে নেওয়া কোনো জমি নয়।
তুমিও তুলে নাও সেই মরু ঝড়।
অথবা ভাষায় ভাষায় ঢেউ আনো অক্ষরে।
আদীমতা সেই,ঠোঁট সেই,শিহরন সেই অক্ষত শুধু ছুঁয়ে দাও নিশ্বাস।
মেসোপটেমিঞা থেকে রৌদ্র এলে …এক আদম হিংসা শুকাতে দিও শুধু।
নীল নদ থেকে ফিরে এলে ক্লিওপেট্রার যৌবন .
….আমাকে এক আবির রঙা মনের উত্তরণ দিও।
আমিও রেখে যেতে চাই ধার করা পৃথিবীতে আমার গল্পের ঈশ্বর।

 

অক্ষরীয় সন্ধ্যা

গতকাল মাসি আসেনি।আজও না।
কলপাড়ে অনেকগুলি কবিতা এঁঠো হয়ে পড়ে আছে।
ভোরের আওয়াজে তখনও ঘুমের ছিটছিটে অন্ধকার লাগিয়ে
মেয়েকে বললাম
এই মা আজ মহাত্মার জন্মদিন ভালো করে যা চা কর।
রান্নাঘর থেকে ঝাঁঝিয়ে এল
তুমি করে খাও এসব নোংরা গল্প আমি সাফ করতে পারবো না।
মেয়ে তো পাশেই শোয়া। তবে কার আওয়াজ?
চব্বিশ ঘণ্টা হাওয়া ঢালা পাখাটাকে দেখতে গিয়ে দেখি
ওই তিনটে পাতই আমি। অতীত আমি ,বর্তমান আমি ,ভবিষ্যৎ ।
অসহ্য! আমাকেই আমি হাওয়া দিচ্ছি?
তাহলে এই যে স্যাক্রিফাইজের হাই তুলে বলে আসছি এতদিন,
তোদের জন্যই সব কষ্ট করি।সেসব কি তালে ?
ধোর বড্ড গরম লাগছে এই মা এসিটা চালা তো।
ফ্যান বন্ধ করে দে ।
টিপ করে এক আওয়াজ তুলে এসি চালু হয়ে গেল
অনেক সময় কিন্তু এখনও ঠান্ডা হচ্ছে না কেন ঘরটা?
এত অন্ধকার কেন ঘর লাইটটা জ্বালা দেখি-
মেয়ে কটাস করে লাইট জ্বালতেই দেখি এসি থেকে বেড়িয়ে আসছে কখগঘঙচছজঝঞ
টঠডঢণতথদধনপফবভমরড়ঢ়লশষসহক্ষ।
একি পুরোটা ঘর জুড়ে উড়ছে অক্ষর।
আমি উড়ন্ত বেলুন সরানোর মত ওদের সরিয়ে সরিয়ে দরজা খুঁজছি ।
বড্ড সাফোকেশন
এ এই তো তবে খুলছে না কেন দরজা?
মাসিও একগাদা ধোয়া কবিতা হাতে নিয়ে সমানে দরজার কড়া নেড়ে বলছে ওই দরজা খোল।
হ্যাঁ হ্যাঁ খুলছি । দাঁড়াও।
মেয়ে হঠাৎ এক টান মেরে আমাকে সরিয়ে দিয়ে বললো
মাম্মা তুমি কি পাগল হয়েছো দেখছো না এটা ছাদের কার্ণিস্?

 

প্রতিমা রায়বিশ্বাস। কবি ও সরকারী চাকুরে। জন্ম- অশোকনগর, সুকান্তপল্লী। উত্তর ২৪ পরগনা, ভারত। আকাঙ্ক্ষা- মা হয়ে ওঠার পাশাপাশি এক কবিজন্ম।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..