প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
শিপলু আমার ভাই। ও অবশ্য তা-ই জানে। আমাদের দু’জনেরই পঁচিশ ছুঁই ছুঁই বয়স। এ বয়সে আমরা সারাক্ষণ খুনসুঁটি আর হুটোপুটি করে কাটাই। কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারি না। খেতে পারি না আবার ছেড়ে কথাও বলি না। আমরা দু’জনেই ভীষণভাবে জানি, নিজের জন্য নিজে আমরা যতটা না ভাবি, তারচেয়ে বেশি ভাবি আমরা একজন আরেকজনের জন্য। সে অনুভবটুকু অবশ্য অন্তরের গভীরতম প্রকোষ্ঠে দু’জনেরই বন্দি থাকে। তবে এসবের একমাত্র বোদ্ধা সাক্ষী আমাদের মা।
দৃশ্যত আমরা পরস্পর প্রতিটি ক্ষেত্রে পরস্পরের ঘোর প্রতিযোগী-প্রতিদ্বন্দ্বী। মাঝে মাঝে তা চরম শত্রুতার পর্যায়েও পৌঁছে যায়। একজনের খাবার আমরা এখনো আরেকজন খাবলে খেয়ে ফেলি। আবার নিজের নিজের ভাগের খাবারটি একজন আরেকজনের মুখে তুলেও খাওয়াই।
কেউ আমাকে চিঠি লেখে কিনা সন্দেহে আমার বই, খাতা, ডায়রি আজো তছনছ করে ফেলে ও। ও ঘরে থাকলে ফোনটি বেজে উঠলে ও দৌড়ে গিয়ে ধরে। সেরকম হলে আমাকে সন্দেহ করতেও অবকাশ রাখে না। আর আমার গলায় পা রেখে ও যে কতজনকে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়! তারপরও কপি করে তাও আবার সবটুকু নয়। বিশেষ বিশেষ জায়গাটুকু ও নিজে লেখে। খামাখা ফোনটি অবশ্য কাউকে ওর করার উপায় থাকে না। মা ফোন লক করে রেখে দেন এবং তা বিলের ভয়ের চেয়ে ছেলের চরিত্র টাইট দিতে।
লেখাপড়ায় শিপলু খারাপ ছিলো না। তবু কেন যে বিএ ফেল করলো! দু’জনে একই ক্লাসে পড়তাম। আমি এমএ পাস করে একটা কিন্ডার গার্টেনে পড়াই, আর পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন চাকরি খুঁজি। অথচ শিপলু দিব্যি দায়-দায়িত্ব এমনকি অনুতাপহীনভাবে টো টো কোম্পানির ম্যানেজারি করে বেড়াচ্ছে। বাবা নেই আমাদের। আমাদের মা একটি আধা-সরকারি ব্যাংকের মাঝারি গোছের অফিসার। বিরাট বিরাট কর্মকর্তা মামাদের সুনজরই ঢাকা শহরে আমাদের সচ্ছলভাবে চালিয়ে রাখে। ভালোই থাকি বলা চলে। মামাদের কাছে সেটা আমাদের নায্য পাওনা। কারণ আমার মা তাদের একটি মাত্র বোন। নানা যে সম্পত্তি রেখে গেছেন, আমার মা তা আলাদা করে কখনো চাননি। চাইলে সে নগদ প্রাপ্তি কম হবে না।
ব্যক্তিগত জীবনে মা এতটাই নিরীহ, ভাবলেশহীন এবং সহনশীল যে, আমি অন্তত তার এ স্বভাবগুলোকে গুণ হিসেবে মানতে পারি না। যেন তিনি রাবারের খেলনা। আছড়ালে ভাঙেন না। জীবনে মার বঞ্চনা যেমন আছে, প্রাপ্তিও আছে। তাই বলে তার অভিব্যক্তি কোনোদিন দুরকম হতে দেখেনি কেউ। আরো দুটি বড় রকমের সন্দেহ আছে আমার, আমার মাকে নিয়ে। আমরা দুজন যে একজন বাবার নামে পরিচিত সেই বাবাটি কার? আমার না শিপলুর? তাছাড়া তিনি শিপলুর থেকে আমাকে আলাদা করতে পারেন কিনা। নাকি তার পার্থক্যবোধটা কেউ নির্ণয় করে উঠতে পারে না বলে ওখানেই তিনি ভীষণ রকম স্বতন্ত্র।
রাত-দুপুরে শিপলু ঘরে ফেরে। মা তাকে কিছুই বলে না, ঘুমঘুম চোখে শুধু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে ‘ওর তরকারিটা গরম করে দিস।’ রাগে আমার শরীর জ্বলে যায়। তা শিপলুর ওপর নয়, মার ওপর। মাকে বলি, তুমি এ জীবনে কোনোদিনই কি কোনো ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে শিখবে না? নিজে ভুগছো, তবু আমাকেও আপোষকামী হতে শেখাচ্ছো!
-‘আর পারলাম কই? আমার জীবন তো শেষই হয়ে গেলো’ কথা বলতে বলতে মা জেগে ওঠেন।
-জীবন কেটে যাক কিন্তু মা হিসেবে সন্তানের জন্য একটা আদর্শ থাকবে না তোমার মধ্যে?
…কথা শেষ হতেই শিপলু, আমার নাকের কাছে বাঘের থাবার মতো ঘুষি ছুঁয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, ‘মাকে উস্কাবি যদি একেবারে মুখ থেঁতলে দেবো হারামজাদি।’
আমি ওকে এমন ধাক্কা মারি যে, ও পড়েই যায়। উঠতে উঠতে আবার বলে, ‘বাড়াবাড়ি করবি তো পাশের বাড়িতে একজনের বউ মরেছে। একগাদা ছেলেমেয়েও আছে। ওই লোকটিকে ডেকে বিয়ে দিয়ে দেবো।’ মা এবার সম্পূর্ণ জেগে ওঠেন। তিনজনের খুনসুঁটি হাসাহাসি, কথা কাটাকাটিতে প্রায়ই মধ্যরাত হয়ে ওঠে আমাদের সন্ধ্যার মতো। মা আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রায়ই বলেন, তোর বিয়েটা হলে আমি ওর জন্য একটা বউ এনে নিশ্চিন্ত হতে পারি।
-আমি বলি, ও বউকে খাওয়াবে কী? রাখবে কোথায়? বোঝার উপর শাঁকের আঁটি… যত্তোসব।
-আমি থাকতে ওর জন্য তোর এত চিন্তা করতে হবে না। আর যেন এ ধরনের কথা আর না শুনি, খবরদার!
ওর পাশে অন্য কাউকে ভাবতে আমার বুকের ভেতরে রিনরিন করে ওঠে। আর কেনই বা মা-ও আমার চেয়ে ওকে বেশি ভালোবাসে? ওতো আমার শত্রু প্রতিদ্বন্দ্বী। আর মা-তো কেবল আমারই মা! শিপলু আমার চেয়ে মাত্র বছর খানেকের বড়। অনেক দিন ধরে আমাকে বড় মনে হতো। শেষের দিকে এসে দু’জনেই সমান হয়ে গেছি, কিন্তু আমাদের স্বভাবটি নাকি বদলালো না।
রাত-দুপুরে হেঁটে হেঁটে ভাত খাচ্ছে শিপলু। একসময় আমার কাছে এসে জোর করে মার পাশে শোয়া আমাকে মুখে একদলা ভাত পুরে দিলো। পরে টের পেলাম ভাতের চেয়ে লবণই বেশি দিয়েছে এবং তা ইচ্ছে করেই দিয়েছে। ‘ওয়াক থু’ বলে আমি বেসিনের দিকে দৌড়াতে থাকি। আর ও আদেশের সুরে বলে, ‘উঠলিই যদি বিছানাটা ঝেড়ে ঠিক করে দিস।’ আমি বকাঝকা শুরু করলে ও এঁটো হাতে আমার মুখ বন্ধ করে ধরে থাকে।
ওর এত বড় অপরাধ মা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যান। আমাদের দু’জনের মধ্যে কে বড় সে সিদ্ধান্তটিও বোধহয় মার বানানো সিদ্ধান্ত।
ক’দিন আগে রাস্তার উপর দিনে দুপুরে একজন খুন হলো! গাড়ি থেকে নামিয়ে ব্রিফকেস ভর্তি টাকা নিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের টানাহেঁচড়া চলছিলো অনেকক্ষণ। একপর্যায়ে লোকটির বুকে ছুরি বসিয়ে দেয় ছেলেরা। ঘটনাটি ঘটার সময় সাক্ষী থাকার ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে বেঁচেছে সবাই। তবু এলাকার কেউ নিজের পরিচয় গোপন রেখে দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে শিপলুকে চিনেছে বলে মিথ্যে তথ্য দিয়েছে। শিপলুকে পালিয়ে থাকতে বাধ্য করা হলো। এর মধ্যে মা আর আমি টেনশনে খাওয়া-দাওয়া ভুলেছিলাম প্রায়। আর তার জন্য মামাদের ধমকে মেজাজ আমাদের আরো তিরিক্ষি হচ্ছিলো।
মা তো টাকাপয়সা যোগাড়ে নেমেছিলেন কোমর বেঁধে। যদি শিপলু দোষীও হয়ে থাকে তাহলেও তাকে নির্দোষ প্রমাণের মূল্য সংগ্রহের উৎসগুলোতে ধরনা দিতে লেগে গেলেন। এই প্রথমবারের মতো চেয়ে বসলেন পিতৃসম্পত্তিরও ভাগ। শিপলুর বাবারও ছিলো বেশ কিছু টাকা যা শিপলুর ভবিষ্যতের জন্য মা আলাদা করে রেখেছেন। এবার তাও তিনি হিসাবে আনলেন। কিন্তু পুলিশের হাতে যারা ধরা পড়েছে তারা কেউ শিপলুর নাম না বলায় ফাঁড়াটি কেটে গেলো। রক্ষা পেলো শিপলুর বাবার টাকা এবং আমার মায়ের পিতৃসম্পত্তি।
অনেকদিন পর যখন শিপলু বাসায় ফিরলো, ঘেন্নায় রাগে দুঃখে অভিমানে আমি ওর সঙ্গে কথাই বলতে পারছিলাম না। ছুটির দিন হওয়ায় মা সেদিন ঘরেই ছিলেন। তখনো দুপুরের খাওয়া হয়নি। ও এসেছে শুনে মার চোখ যেন মরা মাছের চোখের মতো নিশ্চল হয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। জানালা ঘেঁষে বিছানায় পিঠের ওপর চুল ছড়িয়ে বসে থাকা মায়ের এ মূর্তি এর আগে আমার আর কোনোদিন দেখা হয়নি। শিপলু গুটিগুটি পায়ে ঘরে এসে পাশে গিয়ে বসলো। মা কী হিমস্বরে বললেন, ‘কেমন ছিলি?’ কিন্তু শিপলু কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলো না। দেখলাম, ও পাথর হতেও জানে।
সারাদিন বাইরে থেকে, অসৎ সঙ্গে মিশে অবশেষে পুলিশের ধাওয়া? ফিরে আসার পর থেকে যদিও আর বাইরে বের হচ্ছে না ও। যেন থিতু হয়ে বসেছে। আর সারা বাড়িটা তাতেই কেমন পুরুষ পুরুষ গন্ধে ভরে গেছে। এই প্রথম ওকে সিগ্রেট টানতে দেখলাম। ও বাড়ি থাকায় আমি আর মা যে রুমে থাকি কদিন থেকে মা না আসা পর্যন্ত দরজা বন্ধ করে, স্কুল থেকে আসার পর বাকি সময়টা কাটিয়ে দেই। শুধু ওর মুখ দেখা বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা। ক্ষোভ আর ঘেন্না আমাকে একসঙ্গে শক্তি যোগাচ্ছে ওর থেকে দূরে থাকতে। আর তাই আমি অনন্তকাল ধরে চাইছি বহাল রাখতে। তবে ও কেন চুপসে গেলো? আসলে তো ও দোষ করেনি। ও দোষ করতে পারে না তা আমি অন্তত জানি। মা জানেন। পাড়াপড়শি, চেনাজানা সবাই জানেন।
ভেজানো দরজাটা প্রয়োজনের বেশি শক্তিতে ধাক্কা দিয়ে খোলায় শিপলু পড়ে যেতে যেতে সামলে নেয়। আমি উঠে বসতে না বসতে সে এসে হামলে পড়লো আমার ওপর। ঠিক ছোটবেলার মতো-‘তুই আমার সঙ্গে কথা বলছিস না কেন? আমার দিকে তাকিয়ে দেখ! চল আমরা একসঙ্গে ভাত খাই’ বলে। আমি উপুড় হয়ে প্রাণপণে বালিশ জাপটে আছি। একটি শব্দ ও যেন আমার মুখ ফসকে না বেরোয়।
কিন্তু ও প্রচণ্ড শক্তিতে ওর দিকে আমাকে ফেরানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে। ও আমার ভাই নয়। ওর এই সত্তাটিই আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে চায় তখন। শরীরের অনাবৃত অংশে ওর লোমশ হাতের স্পর্শে আমার অনাবিষ্কৃত সত্তাটিতে জেগে ওঠে ওর জন্য দুর্মর পিপাসা। আমি আঁচল টানার চেষ্টা করি না। যদিও প্রতিপক্ষের কবলে পড়া শত্রুর মতো ধস্তাধস্তি করতে থাকি। তবু ইচ্ছে করে অনন্তকাল চলতে থাকুক এ অবস্থা। মা-ওতো বাসায় নেই, কে এসে ঠেকায় ওর গোয়ার্তুমি?
হঠাৎই দেয়ালের সঙ্গে আমার মাথায় বাড়ি লাগে। ঝিমঝিম করতে থাকে মাথা। সম্বিৎ পেয়ে দেখি, শিপলু জাপটে ধরে আছে আমাকে। ও বুঝতে পেরেছে আমি ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু কতটা পেয়েছি তা বোঝেনি।তাই হঠাৎই ছেড়ে দেয়ায় বসা থেকে পড়ে গেলাম। ও আবার আমার কাছে এসে বসে বারবার ‘সরি’ বলতে লাগলো। ওকে আমার চেনা হয়ে গেছে, মনে মনে হৃদয়হীন, বেজন্মা পর্যন্ত বলে থাকি। ইচ্ছে করছে ওর বদ্ধমূল ধারণাটিকে খানখান করে দিই।
চিৎকার করে বলি-‘শিপলু তুই আমার ভাই না। তুই আমার মায়ের ছেলে না। আমাকে তিন বছরের রেখে আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়সী মা-মরা তোকে নিয়ে তোর বাবাও বিপাকে পড়েছিলেন। তখন সচ্ছল পরিবারের উচ্চশিক্ষিত বিধবা, যুবতী মেয়ে আমার মা দ্বিতীয়বার তোর বাবাকে বিয়ে করেছিলেন। তাকে আমার মায়ের স্বামী হিসেবে গ্রহণের কারণ, নিঃসন্দেহে তিনি নাকি ব্যক্তিত্বে অসাধারণ ছিলেন। দেখতেও ছিলেন সুপুরুষ! তোর অজ্ঞাত কুলশীল মাকে তিনি সবার অমতে একা বিয়ে করায় তার পিতামাতা তাকে ত্যাজ্য করেছিলেন। তাই অভিমানে তিনিও দূরে থেকে গেছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তোর মা মারা গেলে তিনি যখন সবকূল হারা তখনই আমার মায়ের সুনজরে পড়ে তিনি কৃতার্থ হয়েছিলেন। একই অফিসে পাশাপাশি দুজন একসঙ্গে কাজ করায় আমার মা বুঝেছিলেন প্রথম পছন্দটি তার ভুল হলেও এবারেরটা যথার্থ। আমার অবিশ্বস্ত, বদরাগী বাবা যা দিতে পারেননি আমার মাকে, তোর বাবার মধ্যে ছিলো তার সবই। কিন্তু কপালে সইলো না মার। বছর না ঘুরতেই রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলেন তিনিও। মাঝখানে থেকে মা একবুক আশাহতের বেদনার সাথে পেলেন তোকে।’
আমার মাথা তখনো ঘুরছে। বমি বমি লাগছে কিন্তু আমার ঘাড় ধরে মুখ উঁচু করিয়ে শিপলু বললো, ‘ওই দেখ তোর মাটির ব্যাংক।’ আমি দেখলাম আমার লালরঙা ঢাউস ব্যাংকটি। ওর মধ্যে পাঁচশ টাকার নোটও আছে অনেকগুলো। মামাদের দেয়া। বছর তিনেক ধরে ওতে আমি টাকা জমাই। মা কখনো একটা মুদ্রা রাখতে গেলে দিই না। ‘বলি এটা শুধু আমার।’ আর শিপলুর তো রাখার প্রশ্নই আসে না, নেয়া ছাড়া।
শিপলু আবার বললো ‘তোর ওই ব্যাংকটি নিয়ে একটি মজার গল্প হতে পারে, তুই জানিস? প্রচণ্ড হাসির হবে তা। শুনবি?’
‘শুনবো না’
আমি ভুলে ভুলে মাথা নাড়ি আর ও তাতেই হাততালি দিয়ে ওঠে। ‘এই তো তুই কথা বলেছিস! লক্ষী, চল আমরা দুই ভাইবোন ভাত খাইগে। ভীষণ ক্ষিদে লেগেছে। কদিন তো শুধু যা তা খেয়ে কাটিয়েছি। এখন এই ক্ষুধা সারতে হলে আমাকে ছয়মাস ডাবল করে খেতে হবে। শুধু পয়সাগুলো ফুরিয়ে গেলো বলে, না হলে আরো কতদিন অবশ্য ঘুরে আসতাম। ফেরারি হলে যে কী মজা!’ ফিকে হয়ে আসা গ্লানি আবার গাঢ় হয় আমার মনে। আবার রি রি করতে থাকে শরীর, মনে মনে বলি, ‘ও তুমি তাহলে আমাদের জন্য ফেরোনি! এখানে তোমার ঠাঁই নিশ্চিত জেনে ফেরোনি। মার দুশ্চিন্তার কথা ভাবোনি। কাকের বাসায় আমার মা তবে কোকিলের উড়ন্ত ছায়াটুকুই পুষেছে? এ প্রহসন মা সহ্য করে করুক, আমি নই!’
আমি যখন বড় হয়ে উঠেছি, সম্ভবত শিপলুর সঙ্গে হাতাহাতিতে সতর্ক হওয়ার জন্যই মা তার জীবনের নির্মম সব গোপন সত্যগুলো আমাকে বলে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, শুধু শিপলুকে কেন্দ্র করে আমার ভাইগুলোই আমার বড় শত্রু এ কথাগুলো কখন কীভবে কে তোমার কানে তোলে এজন্য আমি স্পষ্ট করে বলে রাখলাম। মা তার মাথা ছুঁইয়ে আমাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করালেন যেন কোনোদিনও এগুলো শিপলু না জানে।
এই সত্যটি শিপলু যদি জেনেই যায়-ওর বুকের মধ্যে আর লু হাওয়া থামবে না। কলহাস্যের সমস্ত পৃথিবীতে হঠাৎ তখন সে নিজেকে ভাসমান জানবে। এই আশঙ্কাটি বিচূর্ণ ঢেউয়ের মতো ধুয়ে নিতে থাকে আমার সমস্ত স্বস্তি, আস্বাদ। কিন্তু সব জেনে-শুনেই অবচেতনে আমিই যেন তাই চাই। সে কি আমাকে তার না বোঝার প্রতিশোধ? নাকি অন্যরকম ভালোবাসায় চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করে ওর বিশ্বাসের ভুল ভিত।
কদিন আগে দুজন সারাদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে ঘন ঝোপ দেখে পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে বসে ছিলাম অনেকক্ষণ। দুজনের জন্য দুটো আইসক্রিম কিনে ও আগেই আমার আইসক্রিমটি থেকে অর্ধেক কামড়ে নিলো। ঢোক গিলে বললো, চেখে দেখলাম কোনটা বেশি স্বাদ। আর আমি ওর কাছে ঠকে যাওয়ার ক্ষোভে ভুলে ভুলে আইসক্রিমটি মুখের কাছে নিয়েও সরিয়ে নিই। গলে গলে পড়তে থাকে। ও ওরটা খেয়ে আমার হাতেরটুকুও ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে থেকে চুষে চুষে খেতে থাকে।
শেষে আচমকা আমার দুটি ঠোঁট ওর ঠোঁটে পুরে চুষে বললো ‘আইসক্রিম লেগে ছিলো, মুছে দিলাম।’ আমি ভীষণভাবে চিৎকার করে বললাম ‘শুয়োর, কুত্তা তুই আমার ভাই না!’ ‘আমিই কি বলেছি তুই আমার বোন!’ ওর মুখে প্রথম এ কথা শুনে বজ্রপাত হলো যেন আমার বুকে। পরের মুহূর্তেই অবশ্য বুঝতে পারলাম ও আমাকে ঘায়েল করতেই ওই কথা বলেছে, যেরকম আমিও বলেছি। যাকে বলে বাদানুবাদ।
আমরা হাত ধরাধরি করে হাঁটছি, ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটলে আমার হাঁফ ধরে যায়। ও হেঁচকা টানে আমাকে টেনে নিয়ে এগোয় আর বলে, মানুষগুলো আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কেন জানিস?
-কেন?
-ওরা ভাবছে আমরা দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা। ভালোই হলো তোর তো আবার কোনো প্রেমিক নেই…।
-তোর আছে, কেউ?
-এতদিনে এই কথা… কতজন…
-কাউকে নিয়ে এভাবে ঘুরিস?
-মা আমাকে যে কটা টাকা দেন তাতে এভাবে ঘোরা? উল্টো ওরাই আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়। সবতো লাট সাহেবের বেটি…!
-কাপুরুষ। ফ্ল্যাটার!
-‘মুখ সামলে কথা বল’। হাত ছেড়ে আমার মুখে চড় মারতে আসার উপক্রম ওর। আর দুহাতে ঢেকে রোদপোড়া মুখখানা রক্ষা করি আমি। মুহূর্তে আবার শুরু হয় হেঁচকা টান। মারের ধকলটা বুঝি টানে এসে যোগ হয়।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখি আমাদের মাতৃদেবী অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। পাশের ঘরে বসে পায়ের ওপর পা তুলে চা খেতে খেতে গল্প করছেন পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলার সঙ্গে। ঘর তালাবদ্ধ তিনি ঢুকতে পারেননি। আমাদের দেখে প্রতিবেশী খালাম্মা বললেন, ভালোই হলো পাঁচ বছর ধরে পাশাপাশি আছি, তোমাদের মায়ের সঙ্গে এতটুকু কথা বলার সুযোগ হয় না। আজ ঘর বন্ধ থাকায়ই একটু বসলেন।
আমি আর শিপলু দরজা খুলে ঢুকলেও মা এলো অনেকক্ষণ পর। আমাদের মা সৌজন্যবোধে অতুলনীয়। মা ঘরে ঢোকামাত্র শিপলু মাকে তার পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য তখনই কাবুলিওয়ালা সেজে বসলো। আমাকে নিয়ে বেড়াতে তার যে খরচ হয়েছে সে হিসাবটা মার কাছে পেশ করছে বেশি বেশি করে। মা-ও তার দাবির চেয়ে বেশিই মিটিয়ে ঝামেলার নিষ্পত্তি করে ফেললেন তৎক্ষণাৎ। আমার কোনো অভিযোগ পরে আর ধোপে টেকার কথা নয় বুঝেও আমি বলছিলাম, আসলে কত গেছে? সারাদিনে আমি কিছু না খেলেও ও খেয়েছে দু-দুটো আইসক্রিম ও একটা শুয়োর, একটা শয়তান…।’ দুজনে লাগানো ফ্যাসাদ থেকে মার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। শিপলুকে আগলে সরিয়ে তার ও নিজের কান বাঁচালেন।
শিপলুর টানে উঠতেই হলো। কিন্তু ওকে খেতে দিতে গিয়ে দেখি রান্না করা কোনো খাবারই নেই। স্কুল আজ বন্ধ থাকায় আমি সারাদিন বাসায় থাকবো জেনে মা আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে রেখে যাননি তা আগে বুঝিনি। না হলে মা ওটা নিজের গরজেই করে রেখে যান। মার বাবার দেশ থেকে আনা বছর বারোর ছেলেটি হাবিল, রান্না ছাড়া সব কাজই করতে পারে। করেও। রান্নাটা মা ভালোবেসেই করেন। আমি করি গোছগাছ। আর শিপলু? ঘোরে খায়-দায়। বাজার করতে দিলে হাবিল চুরি করে বলে আমরা সন্দেহ করি, কিন্তু শিপলু নিঃসন্দেহে করে ডাকাতি। তাই ওটাও ছেলের স্বভাব ভালো রাখতে মাকেই করতে হয়। তাছাড়া বড়লোক মামারা যখন কেউ আসেন, বাজার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে আসেন যেন।
মা প্রায়ই একথাও বলেন, বাবা না থাকলে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন বোধহয়। না হলে তোর বিয়েটা হচ্ছে না কেন? তোর বিয়েটা হয়ে গেলে শিপলুর জন্য আমি একটা বউ এনে নিশ্চিন্ত হই। ও ঘরমুখো হোক!
-আমি আগের মতোই খেঁকিয়ে বলি, ও বউ পালতে পারবে?
-সে তোদের ভাবতে হবে না। আমার টুকুতেই ওর চলে যাবে।
-তো আমার চলবে না তোমার টুকুর ভাগে? প্রশ্রয় দিয়ে তুমিই ওকে অকর্মা করে রেখেছো। না করলো লেখাপড়া না কোনো কাজ!
-মা মৃদু ক্ষোভে বলেন, রাগের কথা বলিসনে তো। যা আছে তোদের দুজনেরই চলেবে। তাই বলে কি ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবো না?
পৌনে একঘণ্টার মধ্যে আমাদের তিনজনের খাবার রান্না হয়ে গেলো। খেতে লাগলো আর পনেরো মিনিট। একঘণ্টা পর শিপলু আবার লেগে পড়লো, তুই কিন্তু একটুও হাসিসনি। তখনো মাথা ঘুরছে তবু আমি খুব জোরে চিৎকার করে বললাম, ‘কুত্তা, আমি হাসবো না। তোকে আমি ঘেন্না করি। আই হেইট ইউ!’
তুই আমাকে ঘেন্না করিস? হাসবি না? আমি কুত্তা? -বলে আমার মাটির ব্যাংকটি ও আমার রুম থেকে নিয়ে এলো ডাইনিং রুমে। হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, এবার না হেসে পারবি না। ব্যাংকটি ভীষণ পাতলা ঠেকলো, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও বললো, পুলিশের ভয়ে পালানোর সময় হাতে টাকা ছিলো না। মার কাছেও বেশি চাই কীভাবে! আর পুলিশের স্বভাব যাকে পায় ধরে নিয়ে নিজেদের তৎপরতা প্রমাণ করা। তাই নতুন একটা ব্যাংক কিনে আগের ব্যাংকটির জায়গায় রেখে আগেরটি নিয়ে পালিয়েছিলাম। তুই কিছু মনে করিসনে। তোকে আমি…।
ওর অধঃপতনের শেষটুকু শুনে কণ্ঠ স্তব্ধ হয়েছিলো। বোঁজা কণ্ঠে খুব কষ্টে বললাম, আমার ব্যাংকটি কী করেছিস?
-ওটা ভেঙেই তো এ ক’দিন চললাম। বিশ্বাস কর আছাড় দিয়ে ভাঙিনি। দুটো আঙুল ঢোকানোর মতো একটু জায়গা শুধু ভেঙেছি। তোর কত ভালোবাসার ব্যাংক ভেবে। তবে কত টাকা জমেছিলো তা বলতে পারবো না। ভালোই হয়েছে, গুনলে টাকাগুলো শোধ করার একটা তাগিদ থাকত।
আম খালি ব্যাংকটি ভাঙতে চেয়ে দূরে ছুঁড়ে মারতেই শিপলু সেটা ধরতে এসে কপালে আঘাত পেলো। রক্ত গড়িয়ে এসে ওর চোখের পাপড়িতে লেগে কয়েকটি সরুধারায় বিভক্ত হয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে নিচে টাইলস বসানো ফ্লোরে পড়ে। ভয়ানক লালের অসংখ্য বিন্দুর সমাহার তৈরি করছে তাতে। আমি একবার তাকাচ্ছি মেঝের দিকে আর একবার শিপলুর চোখে, কপালে। আমার কাঠিন্য অবিকৃত রাখতে নিজেকে নিজে প্রবোধ দিই, আমার দোষ নেই। আমার ঘাবড়ানোর প্রশ্নই আসে না। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। ঠিক হয়েছে! ওর কিসের এত দাবি আমার ওপর!
শিপলুর চোখে পলক পড়ে না। আমার মুখে ওর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। এতক্ষণ পলক না ফেলে থাকতে পারে কেউ? ক্রমশ অস্বাভাবিক মনে হতে থাকে ওকে আমার। মনে হচ্ছিলো ও দৈবজ্ঞ হয়ে উঠেছে। একটু যেন কেঁপে উঠলাম। এখন কী হবে? আমি যে মায়ের মাথা ছুঁয়ে শপথ করেছি। শিপলু আমার ভেতরটা পড়তে পারছে। আমার ছুটে পালানো উচিত। ও আমার ভাই নয়, এ কথা ও জেনে গেছে। যা জানতে না পারার অপরাধে ওকে আমি তিরস্কার করেছি শুধু এতদিন। আর নিজের অবচেতনেই আমি যুক্তিহীন ফুঁসেছি।
আমি দৌড়ে পালাতে উঠে শিপলুর রক্তমাখা বুকে আটকে যাই। সংযত থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েও পারলাম না। হু হু করে কেঁদে উঠি। শিপলু দাঁড়িয়ে থাকে তেমনি নির্মোহ, নির্বিকার।
কান্নার বেগটা কমে আসতে যখন সরে আসবো, ঠিক এতদিন আমি যেভাবে চেয়েছি শিপলু সেভাবেই আমার মুখখানা তুলে ধরে গাঢ় থমথমে স্বরে বললো ‘এতখানি চাইনি আমি! আমি তোকে হাসাতে চেয়েছিলাম বীণা। কাঁদাতে নয়। আমিও জানি আমি তোর ভাই নই। আমার যখন বিএ পরীক্ষা চলছিলো তখন একদিন বড় মামা ইচ্ছে করে কথা কাটাকাটি করে আমার কাছে আমার, মানে আমাদের মায়ের সিন্ধুকে রাখা মোহরের মতো সব গোপন ফাঁস করে দিয়েছেন। তারপর আর কার পরীক্ষা ভালো হয় বল?
তারপর থেকে আমার আর কিছু ভালো লাগে না। কিন্তু আমি যে এসব জানি, তা তোদের কোনোদিন জানতে দিতে চাইনি! ভেবেছিলাম তোদের জন্যই আমার জীবনটা এভাবে কাটিয়ে দেবো। একজন মানুষ কখনো কী শুধু তার নিজের? নাই-বা হলাম তোর ভাই। মায়ের পেটেধরা ছেলে। আমি চলে গেলে তোদের কষ্ট হবে। যিনি পেটে না ধরেও বুকে তুলে নিয়েছিলেন, তিনি কি মায়ের চেয়ে মহৎ নন? শুধু এটুকু বুঝি বলেই যখন আর বাইরে থাকা যায় না, তখনি কেবল ফিরে আসি তোদের ভেতর। তবে আমি জেনেছিলাম, জেনেছিলাম! তুই কেন জানতে গেলি এসব? এর প্রতিশোধ আমি নেবোই, প্রস্তুত থাকিস।’
শিপলুর চোখের মণিতে সাপের জিহ্বার মতো কী যেন লকলক করতে থাকে। ওর রক্তে আমার পা পিছলে যায়। পা ধুতে ভুলে যাই। রক্তমাখা পায়ে আবার সেই ঘরে এসে দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দিই।
সন্ধ্যায় মা এসে ছেলের কপালে তুলো সাঁটা দেখে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। হাবিল মাটির ব্যাংকের ভাঙা চাড়া আর রক্ত পরিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু আমার হাঁটাহাঁটিতে রক্তের হালকা ছাপে অফ হোয়াইট ফ্লোরে বিক্ষিপ্ত দাগ পড়ে গেলো। ঘণ্টাখানেকের ভেতর মা শিপলুকে দুহাতে আগলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন। শিপলু মাকে বলেছে, বাথরুমে পড়ে দেয়ালে লেগেছে, আপাতত তাই আমার রক্ষে। মা ঘরে ফিরে শিপলুর সেবাযত্নে মেতে উঠলেন আর আমি ভাবছি মায়ের কথা।
হাত-পা চলছিলো না আমারও। বিপর্যস্ত মনে হচ্ছিলো নিজেকে। কুলহারা ঢেউয়ের মতো নিয়তি আমাদের তিনজনকেই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যিনি সব বলে শিপলুর জীবনটাকে ওলট-পালট করে দিলেন তার পরিণাম কী হবে জানি না। নিজেও ভুগছি ক্ষমাহীন অপরাধবোধে। সব লণ্ডভণ্ড করে শেষে বুঝলাম জীবনটা আসলে গঁৎবাধা ধারণার ওপর চলে। এর ব্যতিক্রম কেই-বা মানতে পেরেছি? যাকে আমার মা প্রাণের বিন্দু বিন্দু রসে মুক্তাসারে পরিণত করেছিলেন, তারই মেয়ে হয়ে তার অলক্ষে আমি সেই প্রাণে বর্শা নিক্ষেপ করেছি। বুকজুড়ে এখন শুধু খসে পড়ার বিচ্ছিন্নতা…।
সে রাতেই শিপলু আবার বেরিয়ে গেলো, মার নিষেধ শুনলো না। ঘণ্টাদুয়েক অর্থাৎ রাত দশটার দিকে ফোনে বললো-আজ রাতে ফিরবো না, চিন্তা করো না। মা কিছু বলার আগেই সে ফোন রেখে দিলো। কী বুঝে মা তখনি হা-হুতাশ শুরু করে দিলেন। এমন হলো কেন? ও কোন সাহসে বলতে পারলো রাতে ফিরবো না। মা-মেয়ে দুচোখের পাতা কেউই এক করতে পারলাম না।
সকাল নাগাদ খবর এলো শিপলু পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। সেদিনের সেই খুন ও ডাকাতির সঙ্গে সেও জড়িত ছিলো বলে এবং এলাকার ছেলেগুলো যত অপর্কীতি করেছে সেধে সে সবার সঙ্গে নিজের নামটিও জড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সবাই জানে এ সবই মিথ্যা।
মা গলদটা বুঝে উঠতে পারছে না। আমি শুধু জানি, ভীষণভাবে জানি, এ সেই প্রতিশোধ। যার হুমকি সে কাল সন্ধ্যায় আমার প্রাণে ছুরির মতো বসিয়ে দিয়ে গেছে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..