প্রাচীনতম জখম চিহ্ন

সুদীপ চক্রবর্তী
কবিতা
Bengali
প্রাচীনতম জখম চিহ্ন

প্রাচীনতম জখম চিহ্ন

সেই কবে থেকে অপেক্ষায় আছি জখম চিহ্ন নিয়ে,
জরৎকারুর যজ্ঞ শেষ হওয়ার পর-
আরও তিন যুগ কাটিয়েছি জয়দ্বল রূপে।
ধনঞ্জয়ের গান্ডিবের ছিলা,
রোহিণীর আশৈশব,
পার হয়ে এসেছি মুষল খণ্ড,
তবু সে ক্ষতে র প্রলেপ নেই।

আদি সে জখম চিহ্ন অনন্তে বয়ে চলে-
কৌশল্যা থেকে দ্রৌপদীর বিস্রস্ত হৃদয়।

হয়তো বা এই চিহ্ন জনকের অভিশাপ,
বৈকুণ্ঠনাথ ও অসহায় সেখানে,
অনশ্বর কিছু সত্যের মতই অমোঘ,
সীতা কি তাই আজও পাতালচারিনী?

স্বরসখ পৃথ্বীর যন্ত্রনা ভার লাঘবার্থে
সে চিহ্ন দেহতে ধারণ করে প্রতি অমাবস্যায়,
অন্তর্হিত হয় এক রাজনী করে প্রতি পাক্ষিকে।
তবু শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে
আবার প্রতিদিন নতুন করে
মাতৃ কললেই দিই জখম চিহ্ন,
কর্ষণে-ধর্ষণে,
তাই জখম চিহ্ন রয়ে যায় আদি থেকে অনন্তে।

বেড়ে চলে পৃথিবীর ক্ষয়
মানুষ পালন করে ফসলের উৎসব।

সময় ঘড়ি

সময়ের গভীর চক্রান্তে লিপ্ত বেশিরভাগ স্মৃতিরা,
তাই তো ঘড়িতে ফুলের বদলে কাটার বাস,
হাতঘড়ি দেখে ভুল করা কেন?
অতীত সময় যন্ত্রনা বিদ্ধ সর্বনাশ।

সময়ের অন্তরালে কত ছোট বড় স্মৃতি, সাথে স্মৃতির চাষ করা দুই কাটা;
কখনো সখনো স্মৃতিতেই পারাপার করি,
সময়ের হাত ধরে…
ভাঙা সাঁকো, তালপাতার বাঁশি,
নারকেলি কুল গাছে দোয়েলের বাস,
শ্যাওলা ধরা পুরোনো দালান..
আর ঘড়ির তাড়া ছাড়া অনেক কিছু,
তবুও সেখানে ফিরতে গেলে অন্ধ হয়ে স্মৃতির সরণি ধরতে হয়, ধরি সময়েরই হাত।

শেষ রাতের মিথ্যা স্বপ্নেরাও তো ঘড়ির হাতেই বন্দি।
রাতের স্তাবক কোনো টিক টিক শব্দে,
বেলা শেষে পাখিরাও যে বাসায় ফেরে তাও তো সূর্য ঘড়ির হাত ধরেই,
আগামীতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পুব আকাশে যে ফোটে তাই বা সময়ের বাইরে কই !

স্থাবর জঙ্গম সহ সমস্ত জগৎ দুই কাটা আর ৭৮ঘন্টায় সীমাবদ্ধ,
এর বেশী তো কিছুই দেখি না।

বিরূপাক্ষ থেকে সেদিনের নরেন সবাই তো বিলীন এই সময়ের কাছে,
তাই সময়কে অগ্রাহ্য করবো?
কাটার বাস মানবো না !- এ ও কি সম্ভব !!

টার চেয়ে বরং,
সময়কে সাথে নিয়েই মিথ্যা স্বপ্নের চাষ করি ঘড়ি ছাড়া,
গরিবের সংসারে ভালোবাসা হল নিত্য দিনের কাড়াআকাড়া,
আর ভবিষ্যতে পরে থাকা সময়ের অনন্ত ইশারা।

 

ঝঞ্ঝা মারুত…

আনন্ত্য বেদনা জমেছে আকাশ জুড়ে,
আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বিশাল বনানীও স্থবির,
আত্মপরাধ প্রতিটা পাখির ডানায়,
আদিবরাহর ক্রুঢ় চোখে প্রতিশোধ স্পৃহা গভীর।

আদিশূরের মত এ কোন আদিম স্থির প্রজ্ঞ পুরুষ,
আততায়ী রূপে বিঁধবে আসমুদ্র-পর্বত কুদৃষ্টিতে,
আধিদৈবিক শক্তির আস্ফালনে যেন,
আত্মসাৎ করতে বদ্ধপরিকর অপার সৃষ্টিকে।

আত্মভূ এ মহাজাগতিক তমিস্র চলন,
আচ্ছন্ন করতে চায় তাবৎ চরাচর,
আত্মদ্রোহী মগ্ন আঘুর্ণন পাকে
আচম্বিৎ আঘাত হেনে মুহ্যমান করবে মেদিনীর স্বর।

আড়রি আচ্ছন্ন,পদানত ভয়ে প্রকম্পমান,
আকালিক এই দৃষ্টি খানিক মৃগাজীবির মত,
অতল ছেনে হানবে বিনাশ ধরায়,
আঁতকানে সব ছিন্নভিন্ন করে কোদন্ডে দেবে হাজার ক্ষত।

 

স্মৃতিরেখা

এক সমুদ্র হাহাকার নিয়ে নীরবে বসে আছি,
কলমে করছি তার আস্বাদন,
অপেক্ষা করছি বৈতরণী পার হওয়ার,
তবুও বিগত বিশ টা বছরের মত আরো ত্রিশ টা বছর বাকী।
নির্জনতায় বসে বসে ঢেউ গুনি,
পাড়ে এসে আছাড় খায় কত স্মৃতিরেখা,
তাদেরই কিছু ফিরে যায় অন্য স্মৃতিগুলোকে সাথে আনতে, যারা নিতান্তই দলছুট ;
ঐ দলছুট স্মৃতি গুলোই বড্ড নাড়ায়..
শ্রাবন আনে চোখে,ভিড় জমায় নুড়ি পাথরের মত কত স্মৃতিমেদুর রং চঙে দিনের।
স্মৃতিপথ ধরে অবগাহন করি স্মৃতিরই সমুদ্রে,
অবক্ষয়ের ভয়ে গভীরে যাই না বেশী,
পাড়ে ফিরি কিছুটা দূর গিয়েই
ফেরার চিহ্নও মুছে দেয় সেই স্মৃতিরাই.. বিস্মৃতির অতলে।

বাস্তবে নিঃস্ব আমি,রাজা স্মৃতির চড়ে।

সুদীপ চক্রবর্তী। কবি। জন্ম ভারত।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..