প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
তুই এটা কি করলি নাবিল। তুই আমার বোনকে খুন করে ফেললি। তুই কি আমার বন্ধু! তুই সালা বন্ধু নামের কলঙ্ক। আমি তোকে জেলে দিব। আমি তোকে ফাঁসিতে ঝুলাব।
আমি খুন করছি! কি বলিস কামিল? আমি তো খুন করিনি। আমি নাবিলাকে ভালোবেসেছি। আমি ওকে কেন খুন করব?
চুপ থাক নাবিল। আমি নিজে তোকে নাবিলাকে খুন করতে দেখেছি। তোর হাতের রক্তের দাগ ও তো এখন শুকায়নি, আমার চোখে দেখেছি। আমি আমার চোখ কে কীভাবে অস্বীকার করি। আর তুই বলছিস তুই খুন করিসনি?
শুন কামিল। আমি নাবিলাকে খুন করনি। আমি ওকে মুক্তি দিয়েছি। তুই আসল কাহিনী কিচ্ছু জানিস না। আসল কাহিনী কি শুনবি না? জানবি না?
কি আসল কাহিনী, বলে ফেল। তোর সব কাহিনী বলে ফেল, কিন্তু ফাঁসিতে আমি তোকে ঝুলাবই।
কামিল, তুই কি জানিস, নাবিলাকে আমি ভালোবাসতাম। কি অপরূপ সুন্দর, কি মিষ্টি, কি মায়াবী একটা মেয়ে ছিল তোর বোন। আমার নাবিলা। প্রায় দুই বছর আগে কথা। নাবিলার সাথে আমার প্রথম দেখা রবীন্দ্র সরোবর ধানমন্ডি লেকে। ওই দিন সে কয়েকটা পথশিশুর হাতে চিপস দিচ্ছিলো এবং ওদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠছিল। আর সেলফি তুলছিল। নাবিলাকে আমার সে দিন প্রথম দেখে মনে হলো- ‘আমি তাকে চিনি, জন্ম জন্ম আগে থেকে চিনি। তার ঐ মুখ, ভুরু, ললাট, চিবুক, নাকের নোলক, ঐ অপরূপ রূপ মায়াবী হাসি, সব কিছুই আমার চেনা, খুব পরিচিত। কিন্তু আমি তখন জানতাম না নাবিলা তোর বোন।
ওইদিন পর থেকে আমি প্রতিদিন ধানমন্ডি লেকে যেতাম নাবিলাকে একটু দেখার জন্য। আমি টানা ছয় দিন গেলাম কিন্তু নাবিলা দেখা পেলাম না। সপ্তম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমি ওইদিন লেকের পাশের পথশিশুগুলোকে চকলেট দিচ্ছিলাম আর ওদের সাথে মজা করছিল। হঠাৎ দেখি বাচ্চাগুলো কেমন দৌড়ে চলে গেল। তাকিয়ে দেখি নাবিলা এসে হাজির। বাচ্চাগুলো তার কাছে ভিড় জমিয়েছে। আমি নাবিলাকে একটা চকলেট দিতে চাইলে সে থ্যাংক্স বললো, আর চকলেটটা নিলো এবং প্রশ্ন করলো, আপনি কে? আপনি এখানে কি করছেন? আমি তো প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে আসি, ওদের সাথে খেলা করি, কিন্তু আপনাকে চিনলাম না।
আমি বললাম, আমি নাবিল। ঢাকা কলেজে পড়ালেখা করি। আমি ওদের সাথে খেলতে অনেক পছন্দ করি। তাই ফ্রী টাইম পেলে এখানে চলে আসি। ওদের সাথে খেলা করি।
নাবিলা বললো, আমার নাম নাবিলা। আমি ক্যাম্বিয়ান কলেজ পড়ালেখা করি। যাক, আপনার আর আমার পছন্দ তাহলে এক। তারপর নাবিলা বাচ্চাগুলো কে নিয়ে চলে যেতে লাগলো। একটু দূরে গিয়ে বললো, কোন কাজ না থাকলে আপনিও চলেন আমাদের সাথে।
আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। দৌড়ে তাদের কাছে আসলাম।
দুই.
ওইদিনটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন। ওইদিনের পর থেকে প্রতিদিন নাবিলা সাথে আমার কথা হয়, সময় পেলে দেখাও হয়। আস্তে আস্তে নাবিলার সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে, কিন্তু এই সম্পর্ক যে প্রেম পর্যন্ত গড়াবে সেটা বুঝতে পারিনি। একপর্যায়ে আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি। আমাদের মাঝে শুরু হলো ভালোবাসাবাসি।
কামিল, অনেক দিন পর একদিন নাবিলারা মুখে তোর কথা শুনে আমি জানতে পারলাম নাবিলা তোর বোন। বিশ্বাস কর, আমি আগে জানতাম না নাবিলা তোর বোন। জানার পর আমি অনেক দিন তোকে বলতে চেষ্টা করেছি নাবিলাকে আমি ভালোবাসি, কিন্তু তুই কি মনে করবি সেটা ভাবতে ভাবতে আর বলা হয়নি। আমি তোকে বলার সাহসটা পাচ্ছিলাম না।
নাবিল, আচ্ছা বুঝলাম তুই নাবিলাকে ভালোবাসি, তারপরেও তুই নাবিলাকে খুন করলি। তুই না আসলেও একটা পাষাণ্ড।
না না, আমি পাষণ্ড না। তোর বাবা একটা পাষণ্ড। তোর বাবা আমাদের সবকিছু শেষ করে দিল।
নাবিল, তুই কি বলতে চাইছিস। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসাপ্টা বল।
ওকে বলছি শুনো। প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, মোবাইলে আমার আর নাবিলার কথা হত। কিন্তু হঠাৎ করে ৩/৪ দিন হয়ে গেল নাবিলার সাথে আমার কোন যোগযোগ নেই। ওর মোবাইল বন্ধ, ফেসবুক আইডি ডিয়েক্টিভ। কোনভাবেই আমি ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আমার খুব খারাপ লাগছিল, আমি পাগলের মত এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি করতে লাগলাম, কিন্তু নাবিলার কোন খবর পেলাম না।
একদিন সকালে ঘুম ওঠে দেখি, অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে। এসএমএস পড়ে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এসএমএস এ লেখা ছিল, নাবিল। আমি নাবিলা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার আব্বু তোমার আর আমার রিলেশনশিপের কথা জেনে ফেলে হঠাৎ করে আমাকে তার বন্ধুর ছেলে সাথে বিয়ে দিয়ে দিছে। বিশ্বাস করো, আমি বিয়ে করতে চাইনি। আব্বু বলেছে, আমি বিয়ে না করলে সে গলায় ফাঁসি দিবে। তাই বাধ্য নিরুপায় হয়ে আমি ‘কবুল’ বলে ফেলি। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
এই এসএমএস টা পড়ার পরপরই আমি ওই নাম্বারে ফোন দেই, কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ পাই। তারপর আমি তোর আব্বুর সাথে দেখা করি। তোর আব্বু আমাকে বললো, তুমি তাহলে সেই ছেলে, যাকে নাবিলা ভালোবাসে। শুনো বাবা, আমার মেয়েটাকে আমি অনেক কষ্ট করে আদর ও ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। ওর নিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে আমি ওকে বিয়ে দিয়েছি। তোমার বন্ধু কামিলকে আমি নাবিলার বিয়ে কথা তোমাকে জানাতে নিষেধ করেছি। সে জন্যে তোমার বন্ধু তোমাকে নাবিলার বিয়ের দাওয়াতাও দেয়নি। তুমি তো এখনো ছাত্র, কবে প্রতিষ্ঠিত হবে, বাড়ি-গাড়ির মালিক হবে এসব চিন্তা করে আমি কোন সমাধান না পেয়ে আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে নাবিলার বিয়ে দিয়েছি। অনেক কষ্ট করে ওকে রাজি করে বিয়ে দিয়েছি। তুমি যদি সত্যি সত্যি নাবিলাকে ভালোবাস, নাবিলার ভালো চাও তাহলে আর নাবিলার সাথে কেন ধরণের যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। আমি তোমার বাবার মত। আশা করি তুমি আমার কথাটা রাখবে।
তিন.
নাবিল, আমার আব্বু আমার বোনের বিয়ে দিয়ে ফেলেছিল, তাই বলে তুই তোর প্রেমিকা, আমার বোনকে খুন করে ফেলবি? আমার বোনকে তুই কোন দিন সত্যি সত্যি ভালোবাসিসনি। তুই আসলে একটা খুনি? আমি তোকে ফাঁসিতে ঝুলাব।
কামিল, আসল কাহিনী তো এখন শুনলি না, মূল কাহিনীটা শুনবি না?
আচ্ছা বল।
নাবিলার তো বিয়ে হয়ে গেলো। আমি নাবিলার ভালোবাসা বুকে আগলে রেখে একাএকা জীবনযাপন শুরু করলাম। বেঁচে থাকাকেই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছিল। বেশি মন খারাপ হলে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে ওই পথশিশুগুলোর সাথে খেলা করতাম। রাতে আমার ঘুম আসতো না, চোখের জলে বালিশ ভেঁজ তো। আমি আমার কষ্টগুলো কাউকে বুঝতে দেয়নি, এমনকি তোকেও না। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে সুখে থাকার অভিনয় করতাম। এই ভাবে প্রায় ছয় মাস চলে গেলো।
তারপর আজ সকাল দশটার দিকে আমার রুমের কলিংবেলে কে জানি সুইচ দিলো। আমি কলিংবেলের শব্দ শুনে দারজা খুললাম। দরজা খুলে আমি অবাক। দেখি নাবিলা আমার দরজায় হাজির। সে আমাকে বললো, অবাক হয়ে দেখার কিচ্ছু নেই। আমি ভূত না, আমি নাবিলা। অনেক কষ্টে করে তোমার কাছে এসেছি। ভিতরে ডুকতে দাও।
আমি নাবিলাকে বললাম, তোমার এখানে আসা মোটেও উচিৎ হয়নি। নিয়তি আমাদের দু’জন উপরে যে জীবন চাপিয়ে দিয়েছে, তা আমাদের দু’জনের মেনে নিতে হবে।
নাবিলা বললো, বিশ্বাস করো, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমি বাসায় চলে যাবো। কেউ জানবে না। যেমন করে কেউ জানে না, আমি সুখে নেই। আমার জীবনে ভালোবাসা নেই। এখন কিছুটা সময় আমাকে ভালোবাসতে দাও। আমার ভিতরে প্রেমের যে ঝড় ওঠেছে, ওটাকে শান্ত করতে দাও, নাবিল প্লিজ।
তারপর আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমরা দু’জনে পুরানো প্রেমে একসাথে ডুব দিলাম। কিন্তু আসরের আজান দেয়ার সাথে সাথে আমার মাথায় ভূত চাপলো। সন্ধ্যা হলেই নাবিলা চলে যাবে, সে অন্য কারো হয়ে যাবে। আমি আবার আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলবো। আর আমার নাবিলা তো সুখীও না। টাকা পয়সা যদি নাবিলাকে সুখী করতে পারতো, তাহলে তো সে আমার কাছে আসতো না। আমি আর নাবিলাকে যেত দিব না। নাবিল আমার, নাবিলা আমার কাছে থাকবে। এসব ভেবে ভেবে কখন জানি আমি নাবিলাকে চুরি দিয়ে আঘাত করে ওর বুক ক্ষতবিক্ষত করে তাকে মেরে ফেলি। আমি নাবিলাকে খুন করি। আমি আমার আর নাবিলার ভালাবাসাকে ওমর করে দেই। আর আমি যখন ওকে মেরে ফেলি ঠিক তখনই তুই কিচ্ছু না জানিয়ে না বলে আমার রুমে এসে হাজির। দরজা খোলা থাকার কারণে আমার হাতে রক্ত ও নাবিলা খুন হয়ে আছে দেখতে পেলি।
শুন কামিল, আসলে আমি নাবিলাকে খুন করিনি। আমি নাবিলে মুক্তি দিয়েছি। আমি আমাদের ভালোবাসাকে ওমর করেছি। নাবিলা কোন কষ্ট পায়নি। আমি ওকে কষ্ট দেয়ার জন্যে খুন করিনি। আমার ভালোবাসাকে, আমার নাবিলাকে কি আমি কষ্ট দিতে পারি? তোর আব্বু বলেছিল, নাবিলা সুখে থাকবে। কই! নাবিলা কি সুখে ছিল? টাকাওয়ালা স্বামী ওকে সুখে রাখতে পেরেছে? নাবিলা একটা অসুখের খাঁচায় বন্দি ছিল। বিশ্বাস কর কামিল, আমি নাবিলাকে মুক্ত করে দিয়েছি। আমি আমার নাবিলে মুক্তি দিয়েছি।
নাবিল, বুঝলাম তুই আমার বোনের প্রেমের পাগল ছিল, কিন্তু যতই যা বলিস না কেন। তোকে তোর শাস্তি পেতেই হবে। তোকে আমি জেল দিব। তোকে ফাঁসিতে ঝুলাবো। ফাঁসির মঞ্চ থেকে কেউ তোকে মুক্তি দিতে পারবে না।
আমিও তো মুক্তি চাই না কামিল। তুই আমাকে জেলে দেয়। তাড়াতাড়ি আমার ফাঁসির রায় হওয়ার ব্যবস্থা কর। আমি মরতে চাই। আমি আমার নাবিলার কাছে যেতে চাই। নাবিলা আমার অপেক্ষা করছে ওপারে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..