প্রেম-উন্মেষ

স্বাতী মুখার্জী 
অণুগল্প
Bengali
প্রেম-উন্মেষ
বিয়ে হয়ে গেলো মিতুলের। বাবা নেই ওর। মা একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছিলো বিয়ে দেওয়ার জন্যে। সত্যি, মায়ের চিন্তা নিরসনের জন্যেই বিয়ে করেছে মিতুল। নইলে ইচ্ছেই ছিলো না।
তাছাড়া সাগরের মধ্যে কেমন একটা গ্রামের ছেলে, গ্রামের ছেলে ভাব আছে। দেখতে আসার দিন অত বুঝতে পারে নি। বৌভাতের লোকজন পর্ব মিটে যাওয়ার পর থেকেই বুঝতে পারছে। বিশেষ করে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে বুঝলে তো মিতুল কাঠ হয়ে যায়। এই গেঁয়ো ছেলেটার সাথে,,,, ইস। কেমন নিবিড় করে বিনা বাক্যে জড়িয়ে ধরে ওকে সাগর। প্রথম দুদিন মিতুল একটু আধটু সাড়া দিয়েছিলো বাধ্য হয়ে। চূড়ান্ত কিছু হয় নি। কারণ মিতুলের জড়তা। সাগর একটা কিস করে বলেছিলো, “আচ্ছা পরে হানিমুনে গিয়ে,,,,,,।“
কিন্তু হানিমুনের তখনো দিন দশ দেরি।
একদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলো সাগর। মিতুল সেদিন বাড়িতে একা। সাগরের মা আর বাবা ,বাবার মামারবাড়িতে গেছেন কিছু প্রণামী শাড়ি নিয়ে। সাগর অফিসে ছুটি পাবে না। আবার বিয়ের পরের মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া আছে। নাহলে ছেলে বৌকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেই ছিলো।
যাইহোক সাগর বাড়িতে এসেই দেখলো মিতুলকে একটা হলুদ কমলা ডুরে শাড়িতে। সাগরের দৃষ্টি আজ খুব গভীর , আকণ্ঠ পিপাসা নিয়ে কাছে টেনে নিলো মিতুলকে। মিতুল ঠিক সেই মুহূর্তে বলে ফেলল, “আমার তোমাকে ভালো লাগে না।“ একটা প্রবল জলচ্ছ্বাস যেন থমকে গেল। হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দিলো মিতুলকে। বারান্দায় গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো সারা বিকেল।
মিতুলও চুপ করে বসে থাকলো খাটে। পরের দিন থেকে মিতুল অন্যমনস্ক। চোখে জল আসতে শুরু করলো মাঝে মাঝে। দেখলো সাগর কেমন গম্ভীর। সেই সহজ ভাবটা আর নেই। সেই গেঁয়ো লোকটার এত ব্যক্তিত্ব বুঝি? সংক্ষেপে যেটুকু দরকার সেটুকুই কথা বলে।
“আরেকটু ভাত দিই?” ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে মিতুল। হাত নেড়ে না করে দেয় সাগর। চোখে চোখ পড়ে না কথা বলার সময়। রাতে উল্টোমুখে শোয়। শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। মিতুলের চোখ ভিজে যায়। ছি ছি শেষ পর্যন্ত এই গেঁয়ো লোকটার প্রেমে পড়লো? এক হাত দূরেই বসে থাকে , শুয়ে থাকে অথচ মিতুলের মুখের দিকে একটু তাকায়ও না।
শ্বশুর শাশুড়ির সামনে অবশ্য স্বাভাবিক। তখন হেসে হেসে উত্তরও দেয় মিতুলের কথার। মিতুল তাই প্রতীক্ষা করে থাকে সন্ধ্যেবেলার চায়ের আসরের।
সেদিন আবার প্রণামীর শাড়ি দিতে মিতুলের শ্বশুর শাশুড়ি , শাশুড়ি মায়ের মামার বাড়িতে গেলেন। মিতুল ক্ষীণ আশা করেছিলো যদি আগে আগে আসে অফিস থেকে সাগর। এলো রাত দশটায়। এসে বলল কে এক বন্ধু খাইয়ে দিয়েছে, খাবে না রাতে।
মিতুলের আজ খুব অভিমান হলো। হাবে ভাবে কি মিতুল বোঝায় নি যে মিতুলের এখন ভালো লাগে? চোখের দিকেই তাকায় না যখন দুজনে একসাথে থাকে। আর এত গম্ভীর থাকে নিজে থেকে কথা শুরু করতে পারে না মিতুল। আজ মিতুল আর কথা বলার জন্যে উসখুস করলো না। জানলার সামনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো অন্ধকার বাগানের দিকে তাকিয়ে। মগ্ন হয়ে বাইরেটা দেখছে। সাগর উঠে এসে ওর পাশে দাঁড়ালো এক সপ্তাহ পরে আজ। “ভাবছি হানিমুনের টিকিটটা ক্যানসেল করে দেবো।“
মিতুলের গলার কাছে ব্যথা করছে। আওয়াজ বের হচ্ছে না। কিন্তু আর দেরি করলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে। তাই অতি কষ্টে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
মৃদু হাসলো সাগর, “অপছন্দের মানুষের সাথে মধুচন্দ্রিমা করবে?”
মিতুল লজ্জা সংকোচের বাঁধ ভেঙে জড়িয়ে ধরলো সাগরকে। পৃথিবীতে আজ সবচেয়ে নিজের লোক মনে হচ্ছে সাগরকে।
সাগর একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি?”
মিতুল তখন সর্বস্ব দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে সাগরকে। ও কথা বলতে পারছে না। ওর স্পর্শে সব ভাষা।
ওকে বুকে টেনে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোটাও নিভিয়ে দিলো সাগর। জানলার বাইরে তখন অন্ধকার আকাশের আলো।
সাগরের ঠোঁট স্পর্শ করল মিতুলের কান, “অন্ধকারে ভয় করছে না তো?” মিতুলের ঠোঁট স্পর্শ করলো সাগরের ঠোঁট, “অন্ধকার থেকেই একসময় আলোর বিচ্ছুরণ হয় না?”
তারপর আর কথা বলা হলো না কারুরই। প্রেমের বিচ্চুরণে সহজ হয়ে গেলো সমস্ত কাঠিন্য আর জটিলতা।

স্বাতী মুখার্জী। গল্পকার।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..