প্রেয়সীর চিঠি

তৌহিদ জামান
অণুগল্প
Bengali
প্রেয়সীর চিঠি

আজ তোমার চিঠিখানা হস্তগত হয়েছে।

খামটার উপরে প্রাপকের ঘরে মুক্তোদানার মতো চকচক করছে আমার নামখানি; কত দেখেছি, তবুও বর্ণগুলো খুব বেশি আগ্রহী করছে। প্রেরকের স্থানে ছোট্ট একটি শব্দ, আমি! পাশেই তারিখটা জ্বলজ্বল করছে।

পোস্টাপিসের এখন বুঝি অফুরন্ত সময়; তারা আগের মতো অপরিচ্ছন্ন নয়। তুমি যেভাবে পোস্ট করেছো, ঠিক তেমনই নিপাট পরিস্কার রয়েছে খামটা। শুধু দু’পাশে আবছা দেখছি

দুটো সিলমোহরের চিহ্ন!

খামটা নাকের কাছে নিতেই মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ গোটা শরীরে বয়ে গেছে… একটা ভালোলাগা অনুভূতি চারিদিকে।

খামটার কোনপাশে ছিড়লে ভেতরে থাকা প্রিয় অংশটুকু অক্ষত রবে- এ ভাবনায় সময় গড়িয়ে যায়। এখনই কি খোলা উচিৎ, না কি আর কিছু সময় থাকবে বুকপকেটে, একেবারে বামপাশটা ছুঁয়ে? দোলাচলে দুলতে থাকে শুভইচ্ছেগুলো!

আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে- যেখানে বন্ধুরা সবে আড্ডায় মিলিত হতাম; ওইযে পুকুরধারটায় বড় নিমগাছটার কোল ঘেঁষে।

আহা, তুমি বলতে- নিমগাছের নিচে নির্মলবায়ু, পুরোটাই সতেজতা…

সিদ্ধান্ত ফাইনাল, পত্রখানি ওখানে গিয়েই খুলবো।

পিচঢালা পথটা এই গরমেও কেমন মায়াময়, রোদ্রের তীব্রতায়ও স্পর্শ করছে না। মাথার উপরে সুয্যিমামা ৬৪ পাটি দাঁত বের করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে, তবুও তাতে কী দারুণ স্নিগ্ধতা!

পথের ধারে ঘাস লতাপাতা বৃক্ষ- সকলেই উচ্ছ্বসিত! তোমারে অনুভব করছে। তুমি ঠিক অবস্থান করছো বুকের বামপাশে!

আচ্ছা, এ পাশটা কেমন ছাইরঙা হলো যে। সুয্যিমামার হাসিটা ঝিকমিক করছে না তো। ও আচ্ছা, এক টুকরো মেঘ আমারে কাঙ্ক্ষিত পথ দেখায়। হা, কাছাকাছি চলে এসেছি তো। নিমগাছটা কি আগের মতই আছে? নাহ- একটু বেশি বিকশিত মনে হচ্ছে। নিচের দিকটা আমার কপালের মতোই ফাঁকা রয়েছে। শিরার মতো তার ডালপালা স্পষ্ট!

গাছের তলায় এখন ঘাসের বিছানা! কেউ বুঝি আর বসে না আগের মতো? না কি আসবো বলে পরিপাটি করে রেখেছে এই সবুজগালিচা!

গাছটাতে হেলান দিয়ে বসি, যেমন তুমি বসতে। তোমার স্পর্শ টের পাচ্ছি দু’স্থানে- বুকে আর পিঠে!

জানো খামটা ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে না। অন্য কোন কায়দায় খোলা যায় না? কী নিপুণ হাতে চিঠিখানি খামের ভেতরে রেখেছো, কত গোছালো তুমি!

নাহ, বেলা বয়ে যাচ্ছে! আকাশে বাতাসে বেশ উত্তেজনা! কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাসে তার আবেশ।

আহ হা পাগলী, একটুও বদলাওনি! প্রিয় পারফিউম আজও স্প্রে করেছো চিঠিতে! খামটা খুলতেই একগাদা মুগ্ধতা! টুপটাপ করে ঝরে পড়ে গোলাপ পাপড়ি!

প্রথমেই জানতে চেয়েছো আকুল হয়ে, কেমন আছি!! কেমন আছি- বলার আগে শুধোই, তুমি ভাল আছো তো?

আজ চিঠিটা এতো ছোট্ট কেন? তুমি কি দিনদিন অলস হয়ে যাচ্ছো? জানো না, বিষদ বর্ণনা না থাকলে বিমর্ষ হই!

নাহ, এটা তোমার মোটেও উচিৎ হয়নি। ধ্যাৎ, মুডটাই নষ্ট করে দিলে।

নিমের ডালে কিচমিচ করছে কতগুলো চড়ুই! চিঠি পড়তে পারে ওরা?

শান্তই তো ছিল পুকুরের জল! এতো ঢেউ উঠছে কেন? মাছেদের সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হলো না কি?

আকাশটা মুখগোমড়া করে ফেলেছে হঠাৎ! কী সর্বনাশ, চারিদিক অন্ধকার হয়ে অাসছে যে…

নাহ, আর দেরি নয়, ছোট্ট পত্রখানি দেখি, কী লিখেছো তুমি।

তোমার বর্ণমালা জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

আমার সামনে, মুখোমুখি তুমি। তোমার শরীর থেকে বেরুচ্ছে সোঁদা হলুদের গন্ধ! কী বিশ্রী, বমি উদ্গীরণ হয়ে যাবে। তোমার শরীর মুড়ে রাখা লালপাড় হলদে শাড়িটা কেমন বেমানান দেখাচ্ছে। খোঁপার গাঁদাফুলগুলো এতো কটকটে আর দুর্গন্ধময়… ইশশ মাথাটা ঘোরাচ্ছে, এক্ষুণি তীব্রবেগে বমি বেরিয়ে আসবে। মাথার ভেতরটাতে কিলবিল করছে অজস্ত্র পোকা-

ঝুমঝুম বৃষ্টি নেমেছে, নিমগাছটার মলিনপাতা চকচক করে ওঠে। পুরো শরীরে জলেরধারা, মাথা মুখ বেয়ে নেমে আসছে কুসুমগরম জল। সে জলে তোমার লেখাগুলো শ্যাওলার মতো ভেসে যাচ্ছে, এক একটা বর্ণ দ্রুতবেগে হারিয়ে যাচ্ছে, আমি কিছুতেই থামাতে পারি না।

হাতে রয়েছে কেবলই সাদা একটা কাগজ…

তৌহিদ জামান। লেখক ও সাংবাদিক। জন্ম, বাংলাদেশের যশোর জেলায় ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল। পড়াশুনো সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২০ বছর। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্পভিত্তিক কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থায় প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..