কলকাতার
নামলেই এ শহর ছেঁকে ধরে বড়ো
বাণিজ্য-বিপণিগুলো রাজপথে জড়ো
হয়েছে সবাই এসে পাল্লা দিয়ে , দোকানিরা আর
দালাল হকার ফ’ড়ে সব একাকার
বনেদীয়ানার সাথে তুচ্ছ ফুটপাত
দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়ে মিলিয়ে দু’হাত—
দেউড়িতে ধর্ণা দ্যায় দাদাচক্র আর দলবাজি
খদ্দেরের গড্ডালিকা খায় ভোজবাজি
বকলমে , কর্ণেটের সাথে উড়ে তালপাতার বাঁশি
এলাহি রগড় করে কলকাতার হাসি।
বৌ-পাড়া বাজারসেরা ,মোড়ে মোড়ে বৌ
ফুল্ল অঙ্গরাগে ডাকে খুলে দিতে মৌ
খুব সস্তা দরে , ঠিক মোড়ের দোকানে এক কাপ
লাল চা কেনার মতো , পতিত পুরুষদের কামের উত্তাপ
দ্যায় মাঈ ঊরুতের উলঙ্গ সঙ্গমে
ক্ষুধার জঞ্জাল গিয়ে অন্তঃপুরে জমে ,
কেউ ফেলে দ্যায় ফুল বেওয়ারিশ শিশু
তাদের জন্য আসেন মাদারের যীশু—
সেবায় ফোটান তিনি ফেরেস্তার হাসি ,
এলাহি রগড় করে কলকাতার কাশি ।
ফল ফুল নারী
এখানে বাগান নাই বিষয়-ধূসর
শহরে ইটপাথর স্তূপের বহর
সবুজকে গ্রাস করে করাল ক্ষুধায়—
বাজার বিপণি তবু ফলের সুধায়
পরিপূর্ণ হয় নিত্য , রম্য ঝুড়ি ঝুড়ি
আপেল আঙুর কলা চেরীর মাধুরী
থরে থরে চোখ ঠারে মন চুরি করে
উবে যায় চড়া দরে ট্যাঁকের মোহরে ।
এ শহরে পার্ক নাই, যদিও-বা আছে
কিছু মিছু ইতস্ততঃ , নাই দূরে কাছে
নিশ্চয়তা যাতে সভ্য নাগরিক যেতে পারে
নির্ভয়ে দু’বেলা সুন্দরের অভিসারে
তার কোলে, লম্পট বখাটেদের ভিড়
অপগণ্ড উপদ্রব পার্কের নিবিড়
অনুগ্রহে বঞ্চিতই রাখে ; আর যত্নের আঙুল
উবে গেছে , ভাঙাচুরা লনে নাই ফুল ।
তবু ফুলের বাজার দেখি রমরমা
এত পসরা কোথ্থেকে এসে হয় জমা
উপচার হ’য়ে দ্রুত বলি হ’য়ে যায় ,
পার্ক নয় , এ নগরী ফুলের চালান শুধু চায় ।
আর আছে নারী
যাকে নিয়ে পুরুষরা করে কাড়াকাড়ি
আত্মশ্লাঘার সম্পদ কিংবা সম্ভোগের দেবী
ক’রে যাকে হ’য়ে উঠে লুদ্ধ বেহিসেবী ,
যাকে শুধু টুকটুকে ফল ও ফুলের
সাথেই তুলনা করে মানান-সইয়ের
অভিধায়, যাকে পুরুষের সকল প্রকার দ্রব্য
সামগ্রীর বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে নিত্য নব্য
অভব্য আঙ্গিকে , লজ্জাবোধ লুপ্ত হয়
উলঙ্গ অসভ্যতার গুপ্ত সমুদয়্
ছবিঘরে , যার অভিশপ্ত চোরাই চালান
সুন্দরী পল্লীতে আনে বহু-ভোগ্য মাংসের লোবান
সেই নারী শহরের সব নারী বড়ো
সুন্দরী হ’য়ে উঠে , আর সব শহরেই এসে হয় জড়ো
দেশের সুন্দরী যত , রূপের লোবানে
মোহরের উষ্ণতাও উবে যায় , যাকে ওই মোহরেই টানে
এই সব ফল ফুল নারীদের সাজানো সভায়
ডোমকানা মন দ্যাখে দায়হীন লগ্ন ভোগ্যতায়
তীব্র হুহু উষ্ণ সুখ লাস্যময়তার কাড়াকাড়ি ,
সবচে’ উপচে’ উঠে মেনকার ঘাই-ধরা সাতনরী নারী ।।
ট্রামে
ট্রামে চড়তে ভয় হয়
সংশয় ,কোথায় যে আঅঁটকে পড়বে চাকা
অকস্মাৎ ,হবে বেলাইন ,মাথার উপর ছিঁড়ে যাবে তার
কিংবা অঘোষিত যানজটে ঘড়ঘড় ঘটাং ঘটাং
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা দানো গিরগিটির গতি রুদ্ধ হবে ।
ব্যতিব্যস্ত সময় নষ্ট হবে , কর্মসূচীর
বরাদ্দ কেঁচিয়ে যাবে মাঝমাঠে,গাঁটকাটা
চোরের মতন দিনটা পিছলে যাবে মুঠো থেকে ,
মুখচোরা বিড়ালের মতো
ধুপধাপ নেমে যাওয়া যাত্রীকুল কাতর দেখতে হবে
ব’সে ব’সে কামরায় পরিত্যক্ত বেহদ্দ বোকার মতো
দ্রুত ধাবমান জনতার স্রোতের মিছিলে অচল পথিক —
অবিরাম ইতস্ততঃ খোঁড়াখুঁড়ি জোড়াজুড়ি হাতুড়ি কোদাল
লেগে আছে ,ইটপাথর ঢালাই লোহালক্কড়ের চাঁই বড়ো
বাধা দ্যায় পদে পদে ,শহরটাকে দ্যায় না এগোতে ইচ্ছামতো ,
তুচ্ছ হয় পৌর অভিযান বড়ো বেহায়া নাছোড় ।
তার সাথে ইদানীং কমিটি মিটিং ক’রে পাঁজিপুঁথি দিনক্ষণ দেখে
বিনষ্ট বিগত বনেদীয়ানার প্রতি যথার্থ সৌজন্য রেখে
মন্ত্রী মহোদয় বর্ণময়
ঘোড়ায় টানা ট্রামে চেপে ভেঁপু বাজাচ্ছেন তালপাতার
কলকাতার তিনশো বছর ,হেঁ হেঁ কলকাতার তিনশো বছর ।।