ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। একবার মা ও বাবা রিক্সায় লিলুয়ার পটুয়াপাড়ায় যাচ্ছিলেন।এক ওয়াগান ব্রেকার লাইনের ধারের রাস্তায় চাকু হাতে বাবার পথ অবরোধ করলো।বাবা রিক্সা থেকে লাফিয়ে তার উপর পড়লেন। তারপর চাকু হাতে বললেন,যেটা ঠিকমত ধরতে জানিস না সেটা সঙ্গে নিয়ে ঘোরার কি দরকার।লোকটি বললো,বাবু আজ রোজগার হয় নি,
তাই রাতের খাওয়া জোগার করার জন্য ভয় দেখাই।যদি কিছু পাওয়া যায়।বাবা নিজের পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে দিয়ে বললেন,চায়ের দোকান কর। চুরি করবি না। তারপর মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে চলে এলেন বাসায়।
ছোটোবেলায় দাদুর দোকান ছিলো।বাবা তখন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে।তারপর বন্যায় দাদুর দোকান ভেসে গেলো।ভেসে গেলো বাবার মত অনেক ছাত্রের ভবিষ্যৎ।বাবা সংসারের দায়ীত্ব কাঁধে নিয়ে গোমো চলে গেলেন।সেখানে একটি বিহারী হোটেলে হিসেব রক্ষকের দায়ীত্ব নিলেন।মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন দাদুকে।সেই টাকায় সংসার চলতো।জমি জায়গা বিক্রি করে দাদু দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন।কাকাবাবু বাবার কাছে চলে এলেন চাকরী করার উদ্দেশ্য নিয়ে।বাবা বললেন,তোর বুদ্ধি আছে।তুই পড়াশুনা কর। আমি আছি।
এইভাবে কষ্টের সংসারে বাবা ও কাকা কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।তারপর অানেক প্রতিক্ষার পরে কাকাবাবু পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরী পেলেন।আমরা গ্রামের বাড়িতে থাকতাম।গ্রামের বাড়ি থেকে লিলুয়া গেলাম। কাকাবাবু মারা গেলেন অল্প বয়সে।বাবা আবার চাকরী ছেড়ে আমাদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এলেন। যাওয়া আসার খেলায় সংসার নাচতে থাকলো।এগিয়ে গেলো পরবর্তী নাটকের অঙ্ক। বড়দা চাকরী করতে লিলুয়া গেলো মেজদাকে নিয়ে। তারপর আমি আর ছোটেভাই ভর্তি হলাম বিল্বেশ্বর স্কুলে। আমি হাঁটতাম চার মাইল দূরে স্কুলে যেতাম। মাঝে একটা কাঁদর ছিলো। সাঁতার না জেনেও পার হয়ে যেতাম বন্ধুদের পিঠে চেপে। ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে চুল ধরে টেনে তুলতো তারা।তার আগে বইয়ের ব্যাগ পার করে দিত বন্ধুরা।এমনি করেই আমার হাই স্কুলের পাঠ চুকলো।আবার চলে গেলাম দাদাদের কাছে লিলুয়ায়। সেখানে ভরতি হলাম নরসিংহ দত্ত কলেজে। শহুরে জীবনে আমার মনে পড়তো গ্রাম্য জীবনের কথা। তারপর সুখে দুখে শোকে পনেরো বছর পরে আবার ফিরলাম গ্রামে। এবার বিবাহিত জীবন শুরু হোলো। কঠিন জীবন সংগ্রাম। বেকার ছেলে। দু দশটা ছাত্র পড়িয়ে চলতো আমার জীবন। আমি কাটোয়া শহরে এসে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। স্ত্রী,পুত্র থাকতো গ্রামের বাড়িতে। তারপর নন্দনপাড়ায় জায়গা কিনে বাড়ি করে নিয়ে এলাম স্ত্রী,পুত্রকে। বাবা নেই। মা কে বললাম আমরা কাটোয়া যাচ্ছি।তুমিও চলো।মা বললেন,এটা আমার স্বামীর ভিটে। তোর বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে উঠোনজুড়ে। আমি তোর বড়দাআর ছোটো ভাইয়ের কাছেই থাকি। তুমি মাঝে মাঝে এসো। তারপর নীলুদার কালিবাড়িতে ছিলাম একমাস।তাঁর করুণায় আমার চাকরী হলো মায়ের কাছেই গ্রামের স্কুলে। আমি কোনোদিন চিন্তা করতে পারি নি মা কে আবার প্রতিদিন দেখতে পাবো।স্কুলে মাষ্টারি করতাম। আর টিফিনে ভাত খেতাম মায়ের কাছে এসে। আমাদের পিতৃপুরুষের সম্পত্তি আছে।সেগুলো দেখাশুনা বড়দা করেন। আমরা সবাই মায়ের কাছে ভালো থাকতাম।তার কোনো অসুবিধা হয় নি। নাতি নাতনিদের নিয়ে মা আমার পরম সুখে আছেন। এখন অসুস্থ তিনি বয়সের ভারে। জানি না কি হবে।
আমার সরলতা আমাকে রূপকথার গল্প শোনায়। মায়ের কথা মনে পড়লেই মনে ভেসে ওঠে কলমি শাকের গন্ধ,লেবুতলার আলপনা,তুলসী তলার তাঁতের কাপড় আর শঙ্খধ্বনি।মায়ের কথা মনে পড়লেই বাবার উঠোনজোড়া শান্তি, শীতের রোদ আর সুর করা গানের কথা মনে পড়ে। পিসি এলেই বাড়িতে একটা ভালোলাগার গন্ধ ভেসে বেড়াত।মাসি নিজের হাতে হ্যারিকেনের আলো হাতে রাঁধতেন পোস্তর তরকারি আর বড় মাছের টক। ঝোল ঝোল আলুপোস্ত আর মাছের টক দিয়ে মাখিয়ে ভাত খাওয়াতেন মাসি।
তারপর আদরের ঘুমবিলাস।সকালে উঠেই দাদুর বাগানে রোদ পিঠে নিয়ে দেহ দুলিয়ে লোক দেখানো পড়ার ঢং।তারপর দাদুর দৃষ্টির আড়ালে দৌড়ে নদীর ধারের মাঠে খেলা।
দুপুরবেলা কলতলার মুখ বন্ধ করে জল ভরতি করে সাঁতার কাটতাম স্নানের সময়। হত না ঠিক তবু ভাই বোনেরা একসাথে শুরু করতাম লাফালাফি।প্রায় এক ঘন্টা পরে লাল চোখ নিয়ে মায়ের বকুনি খাওয়া।নদীতে মাঝে মাঝে মা কে লুকিয়ে চলে যেতাম চান করতে।তখন সাঁতার জানতাম না। তবু নদীকে ভয় লাগতো না।নদীকেও মায়ের মত মনে হতো।ভাবতাম নদী আমাদের ক্ষতি করবে না। মা বলতেন,নদীতে যাস না রে,কোনোদিন ডুবে মরবি। তবু আমরা লুকিয়ে চলে যেতাম মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে।
ট্রেন থেকে নেমে পাহাড়ের কাছে যেতে চাইতাম।যত এগোতাম পাহাড় ততই পিছিয়ে যেতো।অহঙ্কারী নারীর মত।হবে না কেন?ওর বুকে রাজ্যের সবুজ।কত প্রাণীর জীবন নিয়ে আদরে সোহাগে ভিজিয়ে চলেছে রাতদিন। উঁচু মাথা নিয়ে আকাশের সঙ্গে মিশতে চাইছে।আমি ক্ষুদ্র এক জোনাক। আমার কিছুই নেই।শুধু এক সমুদ্র কান্না আছে।আমার কাছে কান্না ভিজে বিকেল চাইলে একশোটা দিতে পারি।আমার তো সবুজ নেই।অত উঁচু মাথাও নেই।তাই হয়তো পাহাড় আমাকে পাত্তা দিতে চায় না।
নদীর কাছে গেলাম কাঁদতে কাঁদতে।সে বয়ে চলেছে আপন তালে। তার থামার সময় নেই।তারও প্রবহমান বুকে কত জীবের বাস।সাঁতার কেটে তারা নদীর কাছে প্রিয়তম হয়ে রয়েছে। আমি তো সাঁতার জানি না।নদীতে ভিজতে জানি না। নদীর গভীরতা বুঝতে পারি না। আমার দ্বারা কিস্যু হবে না। তবে আমি যাই কোথায়। যাবো অরণ্যের গহীনে। সেখানেও সে সম্রাট। তবু আমি ধীরে পাতার মর্মর শুনলাম। ছায়া দোলানো আদরমাখা শীতল হাওয়া গায়ে মেখে অনেকক্ষণ বসে রইলাম।আমার অভিমান সব কেড়ে নিয়ে অরণ্য আমাকে স্নেহশীতল ছায়া দিলো।কানে কানে বললো,আমরা তোমাদের জন্য।আমাদের বাঁচিয়ে রাখলে তোমাদের লাভ। তুমি তোমার সমাজে গিয়ে আমার বার্তা পৌঁছে দিও।তোমার মঙ্গল হোক।
ট্রেনে যাওয়া আসা করার সময় কিছু লোক দেখতাম ট্রেনের মেঝেতে বসে থাকতেন স্বছন্দে।তাদের মত আমারও সিটে না বসে মেঝেতে বসার ইচ্ছে হতো।কিন্তু পারতাম না লোকলজ্জার ভয়ে।কি সুন্দর ওরা মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে ঘুগনি খায়।ট্রেনে হরেক রকম খাবার বিক্রি হয়।ওরা দেখতাম টুকটাক মুখ চালিয়ে যেতো।আমি জিভে জল নিয়ে বসে থাকতাম ভদ্র বাবুদের সিটে।তারা হাসতেন না।অপ্রয়োজনে কিছু খেতেন না বা কোনো কথা বলতেন না। ওদের মাঝে গোমড়া মুখে বসে মুখে দুর্গন্ধ হতো।
তারপর গানের এক বিকেলে আমি বেপরোয়া হয়ে ট্রেনের মেঝেতে ওদের মাঝে বসলাম। লুঙ্গি পরা লোকটা গায়ে মাটির গন্ধ।বেশ হাল্কা হয়ে গেলো মনটা। লোকটা বললো,ভালো করে বসেন। কত আন্তরিক তার ব্যবহার।তারপর ট্রেনের খাবার খেতে শুরু করলাম।প্রথমেই ঝালমুড়ি।পাশের লোকটাও ঝালমুড়ি কিনলেন।খেতে লাগলাম মজা করে। তারপর এলো ঘুগনি,পেয়ারা,গজা,পাঁপড়,লজেন্স ও আরও কত কি। মনে হলো এ যেন কোনো ভোজবাড়ি।খাওয়ার শেষ নাই।যত পারো খাও। মেঝেতে বসার অনেক সুবিধা আছে।আমাদের দেশে গরীবের সংখ্যা বেশি।তাই গরীব লোকের বন্ধুও হয় অনেক।পথেঘাটে ওরা পরস্পরকে চিনে নেয় চোখের পানে চেয়ে।তাই ওদের মাঝে গরীবের দলে নাম লিখিয়ে আমি ভালো থাকি,জ্যোৎস্নায় ভিজি…
কবরের পোকাগুলো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।মরা পোড়ানোর ঝিলগুলো কোনো সময় খালি নেই। পা টা ঝিলের বাইরে থাকলে বাঁশ দিয়ে গুটিয়ে আগুনে দেবে। আত্মীয় স্বজনরা বলবে, আর কতক্ষণ লাগবে,একটু তাড়াতাড়ি করো না ভাই। তবে কার জন্য এত মারামারি,কাটাকাটি,জাতিবিদ্বেষ।এত টাকা টাকা করে আমরা মরার আগে মরি কেন? যারা খেতে পায় না, কোটি টাকার মালিক হলেও তাদের খেতে দিতে পারি না কেন? কোটিপতি, আপনাকে বলছি,কত টাকা নিয়ে আপনি কবরে প্রবেশ করবেন? কত টাকা নিয়ে আপনি ঝিলে চাপবেন। এই পোষ্টের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলবেন জানি। কিন্তু একটু ভাবুন তো, কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়, কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত। আপনার দোষ, অকৃতকার্যতা, আপনার সংসার নিয়ে অনর্থক টেনশন সব বৃথা। মরণ যখন চলে আসবে আরও কিছুক্ষণ বাঁচার জন্য আপনি ছটফট করবেন। আপনি ভুলে যাবেন আপনার অহংকার,সংসার,স্ত্রী,কন্যা,পুত্র সকলের কথা। জীবন একবার চলে গেলে আর ফিরবে না। যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ আসুন আনন্দে থাকি।ভুলে যাই ঝগড়া,খুনোখুনি,চিটিংবাজি।টাকার পাহাড় গড়ছে যারা তার ভাবুন তো, কত টাকা আপনি সঙ্গে নেবেন। কত টাকা আপনাকে পোড়াতে লাগবে?
একজন গরীব রোগীর বিনা পয়সায় চিকিৎসা করেছেন তো?একজন ছাত্রকে বিনা পয়সায় সত্যিকারের মানুষ করেছেন তো?একজন শ্রমিককে শান্তিতে খেতে দিয়েছেন তো? শুধু পয়সা পয়সা করে সারাজীবন অসার হয়ে যায় নি তো?বিবেককে প্রশ্ন করুন। ওর থেকে বড় আদালত আর নেই।
তবে কেন এত লোভ,হিংস্রতা,বর্বরতার নিষ্ঠুর পরিহাস। এগুলো তো রক্তমাংসের মানুষরাই করে। তারা তো সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা তো সব জানে। আমার ফালতু বোকামি। বক বক করে জ্ঞান দেওয়ার পাগলামি। তবু যদি এই পাগলের লেখা পড়ে একটা মানুষেরও উপকার হয় তাহলে দুঃখ থাকবে না। যারা পুত্র,কন্যা, তোমরা বাবা মাকে দুঃখ দিও না। স্বামী,স্ত্রী অকারণে সম্পর্ক ভেঙ্গো না। বন্ধু তুমি বন্ধুকে ঠকিও না।নিশ্চিত মরণ কে মনে রেখে সমাজে সকলে মিলে শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলি। জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানব ধর্মের। জয় হোক মনুষ্যত্বের।
সময়টা ১৯৭৮সাল।তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।আমাদের মাটির দোতলা বাড়ি ছিলো।লক্ষীঘর ছিলো।ছিলো ভাঁড়ার ঘর।ওপরে দুটো ঘর ছিলো।মাঝখানে সুন্দর সিঁড়ি।গরমের সময় অই মাটির সিঁড়িতে বসে খুব আরাম পেতাম। চাল ছিলো খড়ের। গরম বুঝতেই পারতাম না। মায়ের স্নেহের মত জড়িয়ে ছিলো নিবিড় মায়ায় এই মাটির ঘর।
তারপর এলো ভয়ংকর বন্যা। অজয় নদীতে জল বাড়তে থাকলো হু হু করে।রাক্ষসের মত নিমেষে গ্রাস করে নিলো ধানজমি,পুকুর,রাস্তা,বাড়ি ঘর সব। আমাদের বড় মায়ার মাটির বাড়ি জলের স্রোতে ভেঙ্গে পড়লো নিমেষে।মা কাঁদতে শুরু করলেন। প্রতিবেশীরা মাকে বললেন,কেঁদো না বৌমা। আবার বাড়ি হবে। বড় বাড়ি হবে। এখন ছেলে মেয়েদের নিয়ে দোতলা ইঁটের বাড়িতে চলে যাও।বন্যা মনে হচ্ছে একতলা ডুবিয়ে দেবে। হলও তাই।বারো ঘন্টার মধ্যে ডুবে গেলো দশ ফুট এৃতলা বাড়ি জলের তলায়। যারা দোতলা,তিনতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মনে হলো তারা জলের উপরে বাড়ি তৈরী করে বসে আছে।জ্যেঠু বললেন,সবাই সাবধানে থাকবে। জল আরও বাড়বে। রাত নেমে এলো। বন্যার ঢেউ এর আওয়াজে মনে হলো সমুদ্রের জাহাজে আছি।চারদিকে জল। শুধু জল, জল আর জল।বড় বড় দুটো জালা(মাটির বড় হাঁড়ি) ভরতি গুড়।ভেসে যাবে বলে ধরে আছেন বাবা। শেষে লোকগুলো বললো,খুব খিদে পেয়েছে কাকা।গুড় খাবো। লোক প্রায় তিরিশজন। বাবার মায়া হলো। বললেন,যাও খেয়ে নাও। সেদিন গুড় খেয়ে আমাদের তিরিশজনের রাত কাটলো। সকালে নিচে বাবুলি মামা দেখলেন,তিনি একটা বড় শাঁখামুটি সাপের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা বললেন,ভয় নেই।ওরাও বাঁচার জন্য এখানে আশ্রয় নিয়েছে।মেরো না। কামড়াবে না। তারপর দুপুর থেকে জল কমতে শুরু করলো। কত গরু, ছাগল,ভেঁড়া, হাঁস যে জলে ভেসে গেলো তার ইয়ত্তা নেই। বড় লাইন উল্টে গিয়ে বেড়ার মত দাঁড়িয়ে আছে। আর গরু মোষগুলো লাইনে গিয়ে আটকে যাচ্ছে।মৃত প্রাণীর মিছিল অই বড় লাইনের কাছে আটকে গিয়ে মৃতের স্তুপ বানিয়ে ফেললো।বন্যা শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলো দুর্ধর্ষ ডাকাতদলের মত।
তারপর হেলিকপ্টার থেকে পড়তে থাকলো চিড়ে গুড়ের বস্তা। এই চিড়ে গুড় আর গাছের পেঁপে খেয়ে মানুষ প্রাণ বাঁচালো কোনোরকমে।
হাওড়া যাবো।তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শান্তিনিকেতনি ব্যাগ কাঁধে করে।দুপুর একটা পনেরোতে ট্রেন। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম টোটো সেন্টারে।সেখানে যাত্রী নেই।তাই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে কাটোয়া স্টেশনে এলাম।এসেই চলে এলাম টিকিট কাউন্টারে।সেখানে পঁয়ত্রিশ টাকা দিয়ে হাওড়ার একটা টিকিট কাটলাম।ডাবওয়ালার কাছে গিয়ে একটা ডাব খেলাম।বাথরুমে মাইনাস করেএসে বসলাম ট্রেনে।বেশ ভিড়।জানালার ধারে একটাও সিট নেই।ফলে বসলাম দুজনের মাঝে।আশ্বিন মাসের দুপুর।বেশ গরম। ঘামে জামা ভিজে গেছে।হাওয়া গায়ে লাগছে না। তবু মোবাইলে মন দিয়ে মজে আছি।যদি গরমের অনুভূতি একটু কম হয়।
পাশের স্মার্ট ছেলেটা একরা স্মার্ট ফোনে প্রেমালাপ করছে।বাঁ পাশের ছেলেটি একটি পেয়ারা কিনে নুন দিয়ে মাখিয়ে খাচ্ছে।অদূরে কতকগুলি যুবক তাস খেলছে।এবার ট্রেন জোরে ছুটছে।হাওয়া ঢুকছে।ভালো লাগছে।
ছোটোবেলার মত ট্রেনের সঙ্গে আর মাঠগুলো ঘুরে ঘুরে সার্কাস দেখায় না।
স্কুল যাওয়ার বয়সটা হারিয়ে যাওয়া সোনার হারের মত অনুশোচনার আগুনে পোড়ে। সেই মনে পড়ে অনিলের দুলে দুলে পড়া। যত নাম্বার কমত অনিলের পড়ার হার শতাংশ হিসেবে বেড়ে যেত। সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকত দীপক। আজও তার পড়ার নেশা মনে হিংসা ধরায়।
কারও প্রতি কোনো রাগ হলে আলের পথে পড়ে থাকা ধানের শিষে গিঁট বেঁধে রাখা হত আড়ালে। তারপর সেই পথে যেতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ত শত্রুর দল।
সাঁতারকেটে পার হত বিচ্ছুর দল,ভরা নদী। কোনো ভয়ডর ছিলো না তাদের। এক অজানা আনন্দের স্রোতে ভেসে যেত জীবননদী।
ক্রিকেট খেলার সময় সব শত্রুতা ভুলে মেতে উঠতাম জয়ের নেশায়। গ্রাম থেকে নানা শহরে খেলে বেড়াতাম মনের সুখে।
একবার বাবারআবন্ধু,দেবেশবাবু দোকান থেকে লোন নিয়ে একটা শ্যালো মেশিন কিনেছেন।চাষি মানুষ।জমিতে জল দিয়ে ধান চাষ করলেন পাঁচ বিঘে জমিতে।বাড়িতে এসে স্ত্রীকে বললেন,এবার ধান উঠলে মেশিনের সমস্ত লেন সুদসমেত শোধ করে দেবো।ছেলে মনোজ কাজ করে একটা বেসরকারী কারখানায়। ছোটো ছেলে ল পড়ে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে নাইট সেকশনে।দিনের বেলা টিউশানি করে প্রচুর।বেশ চলে যাচ্ছিলো সুখে দেবেশবাবুর। কিন্তু বিধি বাম।শিলা বৃষ্টিতে সব ধান গাছের শিস ভেঙ্গে গেলো।ধান পেলেন সামান্য। ফলে দেনা বেড়ে সুদে আসলে ডবল হয়ে গেলো।দোকানের মালিক কোনো কথায় কর্ণপাত না করে মামলা ঠুকে দিলেন। দেবেশবাবুকে কোর্ট ছয় মাস সময় দিলেন। পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও টাকা জোগাড় করতে পারলেন না। চিঠি লিখে বড় ছেলেকে সব জানালেন।বড় ছেলে বললো,আমি টাকা শোধ করে দেবো।তারপর ছোটো ভাইকে দিয়ে টাকা পাঠালো বড় ছেলে।ছোটো ছেলে একজন মুহুরিকে সব কথা খুলে বললো।মুহুরি বললেন,আজকেই আপনাদের কেস কোর্টে উঠবে। আপনি তার আগেই নগদ পেমেন্ট করে দিন। যান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে।বকলে ঘাবড়ে যাবেন না।
তারপর দেবেশবাবুর ছোটো ছেলে বাবার কাছে টাকা আর অনুমতি নিয়ে সাহেবের ঘরে ঢুকলেন। সাহেব বললেন,গেট আউট। কি চাই?
—-স্যার দেবেশবাবুর লোনের সুদ সমেত সমস্ত টাকা আমি আজ দিয়ে দেবো।
—– এতদিন নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন।যান পাশের কাউন্টারে জমা দিন।
তারপর পাশের কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে দেবেশবাবুর লোন পরিশোধ হলো।
দেবেশবাবু আমার বাবাকে অনেক আশীর্বাদ করলেন। এরকম কত ঘটনা জীবনচক্রে যে দাগ কেটে বসে আছে তার ইয়ত্তা নেই। বাবার কাছ থেকেই শিখেছিলাম শত অভাবের মাঝেও লড়ে যাওয়ার জেদ। তার কাছেই পড়েছিলাম সততার পাঠ। তাই আজও বারবার তাঁকে মনে পড়ে আর বলি মনে মনে, বাবা তুমি ফিরে এসো। তিনি কি আমার ডাক শুনতে পান…
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..