ফেরারী পথিক

সোহেল দ্বিরেফ
কবিতা
Bengali
ফেরারী পথিক

ভেসে যায়

বৃষ্টির জলে আজকাল কতকিছুই তো ভেসে যায়।
ভেসে যায় –
সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর বেঁচে থাকার স্বপ্ন,
বাড়ির কোনে জমাট বাঁধা পরিত্যাক্ত খড়কুটো,
বাহারি ঢঙে জড়িয়ে থাকা কলমিশাকের লতাগুলো!
রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা বোনের রক্তাক্ত জামাটিও একসময় ভেসে যায়;
এ অন্ধ সমাজের চোখের সামনে দিয়ে।
মুহূর্তেই গায়ের রঙিন রক্তও মিশে যায় মাটির সাথে;
শুধু অবহেলায় পড়ে রয় তার অবুঝ প্রলাপগুলো শীতে ঝরে পড়া শুকনো পাতার মত!

আমি কি মানুষ নই

মানবতার জুতো আজ পায়ে পরে
গায়ে জড়িয়েছি সাধু চাদর;
মিথ্যের জোরেও আজ ইচ্ছে কিনি
যখন খুশি তখন!

জনে জনের কাছে বাহবা পেয়ে
জাগছি আমি অসুর রুপে!
কে আর আমায় রুখিবে বলো
এই জানোয়ারের পেশির ভয়ে?

মাঝে মাঝে এখনো শুনতে পাই
দুনিয়ায় নাকি মানুষ নাই!
এই যে-
সকাল বিকাল ঘুষ খাচ্ছি
শিক্ষকের বুকে লাথি মারছি
দিনকে আবার রাত করছি!
তাবুও, আমি কি মানুষ নই?

 

অন্ধত্ব

স্বচ্ছ চোখেও আজ দেখিনা আলো
খুঁজি না কোন ইন্দ্রজাল।
চোখের সামনেই লুট হচ্ছে
তবুও বলছি, সব চলছে ঠিক ঠাক।

দেখেও আজকাল দেখছি না কিছু
নিজের অংশ খসার ভয়ে।
তাছাড়া হাত চলছেও যেন সমান তালে
টেবিলের উপরে কিংবা নিচে।

মুখটাও আজ থেমে নেই আর
অকাজের বেলায় এসে।
সময়ের গাড়ি ভাসছে তাই
কচুরিপানার বেশে।

দৃষ্টিহীনরা আজ দৃষ্টি দেখায়
চোরের বাবা শুনায় ধর্মের কাহিনি।
মন্দের মধ্যেও ভালো থাকতে হয়
নতুন রেসিপির স্বাদ পায় যদি!

স্বচ্ছ চোখেও আজ দেখিনা আলো
খুঁজি না কোন ইন্দ্রজাল।
চোখের সামনেই লুট হচ্ছে
তবুও বলছি, সব ঠিক ঠাক।

 

ফেরারী পথিক

আজও ভালবাসা ফেরি করি-
পথে-ঘাটে, নদীর জলে;
আগুনে পুুড়ে কয়লা হওয়া ঐ সফেদ দেহে!

আজও ভালবাসা ফেরি করি-
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে, সবুজ ঘাসে ;
তীব্র রোদে ঘাম ঝরা কৃষকের ঐ দু’চোখে!

আজও ভালবাসা ফেরি করি –
মায়ের আঁচলে, বোনের আদুরে শাসনে;
শতরাত নিদ্রাহীনতায় জেগে থাকা বাবার বুকে!
আজও ভালবাসা ফেরি করি-
লাল-সবুজের পতাকা হয়ে যাওয়া মায়ের আঁচলে!

সোহেল দ্বিরেফ। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জে। লেখাপড়া করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই: 'অমীমাংসিত দিনগুলি' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ