ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
কদিন ধরে একটা মিষ্টি গন্ধ নাক থেকে যাচ্ছে না আমার। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না গন্ধটা ঠিক কোথা থেকে আসছে,আমার চোখ থেকে, কান থেকে,নাভি থেকে নাকি স্তনবৃন্ত থেকে। নাকি আমার শরীরের মধ্যাংশ যেখানে তিনকোনা ভাবে মিলিত হয়েছে শরীরের নিম্নাংশে ঠিক সেইখান থেকে। আমার কিছু ইচ্ছে করছে না।খেতে ইচ্ছে করছে না, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, এমনকি পড়াশোনা পর্যন্ত করতে ইচ্ছে করছে না আমার।
একটা বায়বীয় ফাঁক আমার চারপাশে আরও বড় একটি বৃত্ত তৈরি করে আমাকে ঘিরে রেখেছে অনুক্ষণ। জলভরা বেলুনের মতো সেই ফাঁক গলে আশপাশের কোনও শব্দতরঙ্গই এ কদিনে প্রবেশ করতে পারেনি আমার কর্ণকুহরে।
প্রায় তিনদিন হয়ে গেল কিচ্ছু খাইনি আমি। সারাক্ষণ মাথার খুলির ভেতরে তৈরি হচ্ছে বিবমিষা। দুপাশে ডানা ছড়িয়ে মৃত মথের মতো বিছানার মাঝখানে পড়ে আছি আমি।
খুব ভাল অঙ্ক করতাম আমি। অঙ্ক ছিল আমার প্রাণ। অঙ্ক ছাড়া কোনও কিছুই ইচ্ছা করত না আমার। বাংলা কবিতা পড়তে আমার জঘন্য লাগত। আর লোকে যে কেন এত সুর করে করে গান গায় তাও মাথায় ঢুকত না আমার। মা অবশ্য সে কথা শুনত না। জোর করে আমায় গানের স্কুলে ভর্তি করেছিল, আর তখন থেকে যত রাগ আমার গিয়ে পড়েছিল ওই রবি ঠাকুরের ওপরে। কি দরকার ছিল ওঁর অত গান লেখার? বরং আমার কাকুমণির কথাটা আমার অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হত্ত। কাকুমণি বলত, অঙ্ক ছাড়া আর কোন কিছু করা মানেই ওয়েষ্টেজ অব টাইম। অঙ্ক করাত বলেই মা-বাবার থেকে কাকুমণিই ছিল আমার কাছে বেশি প্রিয়।
অঙ্কের মাষ্টারমশায় ছিল আমার কাকুমণি। আমাকে পেটের ওপর বসিয়ে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হোয়ে মুখে মুখে করাত সুদ কষা কিংবা পিতাপুত্রের বয়সের অঙ্ক। মুখে মুখে হিসাব কষতে আমার জুড়ি মেলা ছিল ভার। কাকুমনি আমাকে চিনতে শিখিয়ে ছিল আমার চারপাশের প্রতিটি জিনিসের মধ্যে জ্যামিতিক বিন্যাস। কিন্তু হঠাৎই একদিন কাকুমনি সাইকেল করে ইস্কুল থেকে ফেরার পথে লরির ধাক্কায় ঠাস হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। মাথাটা থেঁতলে গিয়েছিল। বাবার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গিয়েছিলাম আমি। কাকুমনির কানের পাশ দিয়ে রক্ত বৃত্তের স্পর্শকের মতো হয়ে গড়িয়ে গিয়েছিল। কাকুমণি গতির অঙ্ক মেলাতে পারেনি। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, আমি মেলাব। আমি মেলাব কাকুমণি। আমি অঙ্ক মেলাব। আমি বড় হয়ে টাইম মেশিন বানাব। একশো থেকে গুনতে গুনতে ফিরে আসবো এক-এ। আমি তোমাকে আবার বাঁচিয়ে তুলব কাকুমণি।
কাকুমণি রয়ে গেল আমার অঙ্কের ভেতরে। অঙ্ক করলেই কাকুমণিকে দেখতে পেতাম আমি। আমার বন্ধুরা যখন লুকিয়ে লুকিয়ে বইয়ের ভাঁজে চিঠি লিখত, পাশের বাড়ীর দাদার সঙ্গে প্রেম করার গল্প করতো, আমার ওসব কিছু ভালো লাগতো না। আমার যখন কীসব একটা হল, মা বলল সব মেয়েরই নাকি এরকম হয়, মা বলল এখন থেকে কোণও ছেলেড় সঙ্গে বেশী মিশবি না। মায়ের কথা শুনে পিত্তি জ্বলে গেল, খামোকা আমি ছেলেদের সঙ্গে মিশতে যাবই বা কেন!
কিন্তু সেই কাণ্ডটাই ঘটে গেল। আর তার কারণ অঙ্কই।যে ভালো অঙ্ক করতে পারে সে আমার কাছে ঈশ্বর, তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি আচরণ, এমনকি তার হাই তোলাটা পর্যন্ত আমার পছন্দ। ক্লাসের অঙ্ক নিয়ে আমি কোনোদিন মাথাই ঘামাইনি। সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনার ধারই ধারিনি আমি। নতুন নতুন অঙ্ক কষাতেই ছিল আমার আনন্দ। ক্লাসে আমি সবসময় নিরানব্বই পেতাম। কোণও দিন তার এক কমও না, এক বেশীও না। ইচ্ছে করে এক নম্বর ছেড়ে দিতাম আমি। কাকুমণি যে আমাকে শিখিয়েছিল শতকরা একশো ভাগ অঙ্ক কখনো মেলানো যায়না, পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন পারেনি। অঙ্কে একশোয় একশো নম্বরটা ভূল।
মা, বাবা আমাকে আরও আরও জিনিয়াস বানানোর আশায় এরপরেও অঙ্কের জন্য বাড়ীতে মাষ্টারমশায় রাখলেন আমার, আমাকে নানান ধরণের অঙ্ক শেখাতেন সৌরভদা। সত্যিই দারুণ অঙ্ক করত সৌরভদা। যত কঠিনই অঙ্ক হোক না কেন ওর কাছে ছিল যেন তা অনায়াস প্রচেষ্টা। খুব মজা পেতাম আমিও। অঙ্ক কষার মজাটা যেন বজ্রগুণন পদ্ধতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। বেশ একটা খেলা শুরু হল আমাদের। কে কাকে কত কঠিন অঙ্ক দিয়ে জব্দ করতে পারে। কিছুতেই ও কাবু করতে পারত না আমাকে। আর আমার পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে উঠত ওর চোখ দুটো। একদিন আমার হাত দুটো চেপে ধরে ও বলল, নাঃ জাদু আছে তোর এই হাতটায়। তারপর আমার আঙুল গুলো একটা একটা করে মটকে দিতে দিতে বলল, সবগুলো পটপট করে ফুটছে দেখছি , বুদ্ধি আছে মেয়ের। তারপর অঙ্ক করতে করতে আমার হাত নিয়ে খেলা করাটা হয়ে উঠল ওর নিত্য দিনের কাজ।
ধীরে ধীরে ওর সাহস বাড়ছিল। আঙুল ছেড়ে ওর হাত ছুঁয়ে যাচ্ছিল ইতিউতি। প্রথম প্রথম আমার ভালই লাগত। আমারও যে মুগ্ধতা ছিল ওর প্রতি। কিন্তু ক্রমে দেখলাম অঙ্ক করার প্রতি আর মন নেই ওর। ঘরে এসে খাতা খোলার আগেই শুরু হয়ে যায় ওর উশখুশ। কত মজার অঙ্ক করে রাখি আমি খাতা ভরে, সেগুলো দেখার দিকে মনই নেই, বরং আমার চোখ কত সুন্দর, আমার হাসি কত সুন্দর, সেসব কথা আমার কানের কাছে বিনবিন করতে শুরু করল ও। আমার ওকে বিরক্ত লাগতে লাগল। একদিন যখন ও আমার ফ্রকের বোতামের কাছে ওর হাতটা নিয়ে গেল ওর হাত কামড়ে দিলাম আমি। তারপর চিৎকার করে ডাকলাম, মা, ও মা শুনে যাও। ও আমার সামনে বার বার হাতজোড় করতে লাগলো। আমি তাতে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে, মা এসে দরজার কাছে দাঁড়ালে মাকে বললাম, মা সৌরভদা আমাকে বিরক্ত করছে, আমি আর ওর কাছে অঙ্ক করব না। মাথা নিচু করে চলে গেল ও। অমন সুন্দর অঙ্ক শেখাত সৌরভদা, সৌরভদার কাছে অঙ্ক শেখা আমার আর হল না।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনার্সের ক্লাসে আমিই ছিলাম সেরা ছাত্রী। যদিও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে মোট নম্বরের ভিত্তিতে আমি ছিলাম অনেকটাই পিছিয়ে। কারণ হবেই তো, অঙ্ক ছাড়া অন্য সব বিষয়ে আমি বেশ কমা ছিলাম। আর বাংলা ইংরেজিতে তো ছিলাম একবারে ডাব্বা। আমার চেয়ে বেশী নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েগুলো বেশ একটু করুণার চোখে দেখত আমাকে, তবে কিছুদিনের মধ্যে ওরাও সমীহ করতে আরম্ভ করল। না করে উপায় ছিল না। সমীহ ওদের আদায় করে নিয়েছিলাম আমি। খুব দ্রুত সেই সহপাঠীর কেউ কেউ হয়ে উঠল আমার কৃপাপ্রার্থী। অনার্স ক্লাসের সবচেয়ে ফেলুয়া ছেলে ছিল রবীন। ওর যে কোন ওভাবেই অনার্স থাকবে না এ ব্যাপারে সকলেই ছিল নিশ্চিত। ও ছিল আমার গুনমুগ্ধ ক্রীতদাস। আমি হাত ধরলাম ওর।
সকাল-বিকেল অঙ্ক কষাতাম ওকে। তরতর করে উন্নতি হচ্ছিল ওর। আমার টার্গেট ছিল ওকে অন্য সব ছেলেদের থেকে বেশি নম্বর পাওয়ানো। ক্লাসের সকলেই কম বেশি অবাক হয়েছিল। অনেকর থেকেই বেশি নম্বর পেয়ে অনার্স পাশ করল ও এবং আমি যথারীতি হয়েছিলাম প্রথম শ্রেনীতে প্রথম। নিজের রেজাল্টের জন্য যত না খুশি হয়েছিলাম আমি, তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলাম রবীনের রেজাল্টের জন্য।
কিন্তু একদিন ও এসে জানালো স্নাতকোত্তরে ও আর ভর্তি হবে না। মানে? আঁতকে উঠলাম আমি, তুই এম এসসি করবি না? কেন? আমরা যে কত পরিকল্পনা করলাম এম এসসি করব তারপর দুজনা মিলে গবেষণা করব ভারতবর্ষের সবচেয়ে নামী প্রতিষ্ঠানে। কাঁধ ঝাকাল ও, বলল কর না, তোকে কে বারন করেছে। তোকে সবসময় আগলে রাখার জন্যও তো একটা লোক চাই। মোদ্দা কথা তোকে ছেড়ে আমি আর থাকতে পারছি না।
আমি ওর কথার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।
ও বলল, ব্যাঙ্কিং পরীক্ষাগুলো দেব, তুই আমাকে ম্যাথস-এর ফান্ডা যা স্ট্রং করে দিয়েছিস, ও আমি পারবই। তারপরেই বিয়ে করে ফেলব আমরা। এরপর তুই যেখানে পড়তে চাইবি, সেইখানেই পোস্টিং নেব আমি। আমার টার্গেট ফুলফিল। একটা চাকরি পাওয়া নিয়ে কথা, ব্যাস অত পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা আমার।
ভেতরে ভেতরে গুটিয়ে গেলাম আমি, অঙ্ককে ভালো না বেসে রবীন আমাকে ভালবেসেছে। ওর প্রতি উৎসাহ হারালাম আমি। আর একদিন নিষ্ঠুরের মতো মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলাম ওর।
এম এসসি শেষ করেই বিয়ে করলাম আমি এক ইতিহাসের অধ্যাপককে। যাতে তাঁর সঙ্গে আমার মেধার বিরোধ কখনওই না বাঁধে।
কোনও উচ্চাকাঙ্খা ছিলনা আমার স্বামীর। সে শুধু মুখ গুঁজে রোজগার করত আর পিঁপড়ের মতো একটু একটু করে সঞ্চয় করত ভবিষ্যতের জন্য। আমাদের বিয়ের শর্তই ছিল এই যে, আমি বিয়ের পরেই বছর তিনেকের জন্য গবেষণার কাজে চলে যাব প্রবাসে। আর আমার স্বামী ও বোনের বিয়ে, ভাইয়ের চাকরি, সংসারের দায়দায়িত্ব কিছু সামলে নেবেন সেই ফাঁকে।
আমি চলে গেলাম। ওখানে আমি ঘর ভাগ করে থাকতাম একটি দক্ষিনী মেয়ের সঙ্গে। নাম ভি ললিতা। ও ছিল বায়লজিক্যাল সায়েন্সের মেয়ে। রেশম মথের ওপর গবেষণা করছিল ও। স্ত্রী রেশম মথের শরীরের মধ্যাংশের শেষভাগে এক্কেবারে বিন্দুমত অংশ থেকে বের হয় এক ধরনের রাসায়নিক, যার তীব্র গন্ধে আকর্ষিত হয় তাঁর প্রার্থিত। ফোরোমন। এক ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা, মানুষের শরীর থেকেও কি নির্গত হয় এই ধরনের কোনও ফেরোমন যা উদ্দিপিত করে বিপরীত লিঙ্গের কোনও মানুষকে? সিদ্ধান্তে পৌছতে জেরবার হয়ে যাচ্ছে ললিতারা। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই নিয়ে গবেষণা করছেন বহু মানুষ।
মেয়েটির সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমার। প্রানবন্ত ছটফটে। মাঝে মাঝে কাজ থেকে ফিরে জিনস আর টি শার্ট পাল্টে রং-বেরঙ্গের শাড়ি পরে যেন উড়েই বেরিয়ে যেত ও। ফিরত বেশ রাত করে। জিজ্ঞাসা করলে হেসে বলত, রেশম মথের ওপর কাজ করি তো, তাই মাঝে মাঝে খোলস ছেড়ে ডানা মেলতে ইচ্ছে করে আমার।
আমার কাজ যেন এগচ্ছিল না। বারবার একটা না একটা টালবাহানা করে আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন আমার গাইড। আমি কিছুতেই আমার যুক্তি স্যারের কাছে প্রতিষ্ঠা করতে পারছিলাম না। স্যার কোনও কথাই শুনতে চাইছিলেন না। লড়াই করতে করতে ক্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম আমি। আমার স্বামী ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন আমার ফিরে যাবার অপেক্ষায়। অবসাদ গ্রাস করছিল আমায়। ধীরে ধীরে আমার শঙ্কা জন্মাচ্ছিল পিএইচডি বুঝি আর হল না আমার। আমার পরে শুরু করে থিসিস জমা দিয়ে ফেলল ললিতা। ভালো ভালো জার্নালে পেপারও ওর পাবলিস্ট হচ্ছিল ফার্স্ট অথবা সেকেন্ড অথার হিসাবে। যা আমাদের মত গবেষকদের কাছে স্বপ্ন। কারন অধিকাংশ সময়ই স্যার আর স্যারের অনুগামীদের দীর্ঘ ল্যাজের শেষে ঝুলতে থাকে আমাদের মত খুদে গবেষকদের নাম। আকাশে বাতাসে ভাসছিল খবর, ভারত সরকারের ক্ষুদে বৈজ্ঞানিকের শিরোপা এবার উঠবে ললিতার মাথায়। গবেষণাপত্রটি ফেরত এল আমার। আমার গাইড স্যার বললেন চিন্তা করো না, কিছু ঠিকঠাক করে তোমার থিসিস পাঠানো যাবে আবার। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব। আরে ভরসা রাখ আমার ওপর। আমার পিঠের খোলা অংশে হাত রাখলেন স্যার।
হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে ঘর অন্ধকার করে বসেছিলাম আমি। ঘরে ঢুকল ললিতা, বলল ওভাবে বসে থাকলে কোনোদিনই তোমার কিছু হবে না। ওপরে উঠতে গেলে সিঁড়ি তোমাকে ভাঙতেই হবে। শুধু মেয়েদেরই নয়, ছেলেদের নানা ভাবে ব্যবহৃত হতে হয়। ক্ষমতার ধর্মই তাই, সে তোমাকে আগ্রাসন করতে চাইবেই। বরং তাঁর আগে তুমিই তোমার ক্ষমতার ব্যবহার কর। আগ্রাসনটা তুমিই কর উল্টোদিক থেকে। টিকটিকি থেকে বাঘ সবাই কেমন নিঃশব্দে শিকারের ওপর ঝাপিয়ে পরে দেখেছো। ইগো, আত্মসম্মান ওসব ছাড়।
ললিতার বক্তৃতা শোনার পর বেশ কয়েকদিন ধরে বোঝালাম নিজেকে। কিছুটা আপসের পথ নিতেই হবে আমাকে। স্যারের কথায় সেদিন রাজি হয়ে গেলাম একটা সেমিনারে যেতে। ভাবলাম সামান্য কয়েক ঘণ্টা, ফিরে আসব সন্ধ্যের মধ্যেই, কি আর হবে।
স্যার সেমিনার শেষে সন্ধ্যেবেলা গাড়ি করে নামিয়ে দিতে এসেছিলেন আমাকে। গাড়ির সামনের সিটে ছিল ড্রাইভার ও তাঁর সহযোগী একটা ছেলে। তাদের অগ্রাহ্য করে স্যার আমাকে জাপটে ধরে আমার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন উষ্ণ তীব্র মুখমণ্ডল। ভকভক করে একটা মিষ্টি মাদকের গন্ধ ঢুকে গিয়েছিল আমার নাক দিয়ে মাথা পর্যন্ত। আমি দুহাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিলাম ওর ভারি শরীরটা।
ড্রাইভার ছেলেটি ফিরে তাকিয়েছিল আমার দিকে। আমার গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছিল রাস্তায়। আমি ড্রাইভার ছেলেটিকে বলেছিলাম, গাড়ি থামান, আমি নেমে যাব। কি কারনে জানিনা ড্রাইভার ছেলেটি আমার কথা শুনেছিলো। আমি নেমে গিয়েছিলাম। আর টলতে টলতে ফিরে এসেছিলাম হস্টেলের দিকে।
ললিতা ঘর ছেড়ে চলে গেছে ক’দিন আগে। ও কালাপানি পার হয়ে চলে যাবে আরও সুদূরে। বড় হাসিখুশি ছিল মেয়েটা, যখন ঘরে থাকত বকবকানিতে ভরে রাখত ঘরটা। শূন্য ঘর গিলে খেতে আসে আমায়, একটা তীব্র গন্ধ যেন আমায় পাগল করে দিচ্ছে অবিরত।
আমার বমি পাচ্ছে। হ্যাঁ এই গন্ধটা, এই গন্ধটার নামই নিশ্চয়ই ফেরোমন। উঁহু স্যারের মুখ থেকে নয় আমার শরীর থেকে বেরচ্ছে গন্ধটা। এই গন্ধটা হয়তো ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে সব পুরুষের। আর ঐ তীব্র গন্ধের আড়ালে চাপা আমার প্রানের গনিত।
ললিতাকে একটা চিঠি লিখব আমি। ললিতা আমার পিএইচডি আর হল না। স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল আমার। অনেক বড় হও তুমি আর এমন একটা কৃত্রিম ফেরোমন আবিষ্কার কর তুমি যে গন্ধে থাকে বিষ। তোমার, আমার, আমাদের সকলের জন্যে।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..