বন্ধু তোদের

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
কবিতা
Bengali
বন্ধু তোদের

নবিস

সতের বছর বলেছিল
শুধু এগিয়ে যাও। যেতে যেতে ভাবো।
সাতাশে পৌঁছে দেখবে অনেক ব্যর্থতা জমে গেছে,
কেউ এসে সেগুলো জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।

সাতাশ বছর বলেছিল
আজকাল কিছুতেই কথা রাখা যায়না হে,
কিন্তু পরের দশক তোমার অপেক্ষাতেই আছে
কি কি চাও এখনই ঠিক করে ফেল।

সাঁইত্রিশ বছর এসে মনে করিয়ে দিল
এখনও চাইতে শিখলেনা? ঠিক কি চাও
আগে তো সেটা স্পষ্ট কর। পাওয়ার আগে
ভালো করে চাইতে শিখতে হয়।

শিখতে শিখতে আরও একটি দশক,
তারপর সাতান্নতেও একই নবিসি।
একটার পর একটা দশকে এসেও শিখতে পারিনি
কেমন করে কি কি চাইতে হয়।

 

বন্ধু তোদের

এসব খুবই কমন বিষয়,
তোরাও জানিস আমিও জানি।
সেই বয়সের জড়িয়ে থাকা
কতরকম খামখেয়ালী
ফেলে আসা খেলার বিকেল,
যে ডাস্টারে বোর্ড মুছেছি
তার আঘাতেই কপাল ফোলা-
অঙ্ক ভুলের টাটকা মাশুল।

কোন পিরিয়ড বেশি ভয়ের
আর কে জানত তোদের চেয়ে
শব্দরূপের ধাতুরূপের
উচ্চারণের অজ্ঞানতা
তার জন্যে ছড়ির ছোবল
দুহাত পেতে গ্রহণ করা
ওদিকে তখন ফার্স্ট বেঞ্চের
সবুজ স্কার্টের মুচকি হাসি।

এসব খুবই কমন বিষয়
এগুলোই তো পথ দেখাত
বর্তমানের, ভবিষ্যতের।
কিশোর মনের দুঃখ যত
এমন করে আর কে তখন
বুঝতে পারত, তোরা ছাড়া
তোদের হাতে তোদের কথায়
বন্ধু তখন ম্যাজিক ছিল।

ইচ্ছে করে বন্ধু তোদের
বিকেল বেলায় ডাকতে যাব
দরজা থেকে ডেকে বলব
চল এখনই খেলতে যাবি?
ইচ্ছে করে জমিয়ে রাখা
খেলাধুলোর বিকেলগুলো
যেভাবে পারি ফিরিয়ে আনি
মাটি নয়তো হৃদয় খুঁড়ে।

ফের কোনদিন দারুণ শীতে
পুকুরে যখন কনকনে জল
শিরশিরানি ঠাণ্ডা হাওয়া
হঠাত করেই বাজি ধরবি
কে কতবার সাঁতার কেটে
এপার ওপার করতে পারে
এসব কি আর হবার মতো?
ইচ্ছে হলেই হয় কখনও?

একবার যা হারিয়ে গেছে
আবার কি তা ফিরতে পারে?
সবকিছুরই সময় থাকে
তোরাও জানিস আমিও জানি
এক ডুবে যার তল ছুঁয়েছি
সেই দীঘিতে নামতে বারণ
বন্ধু তোদের সঙ্গ পেলে
আবার ডুবে ভাসতে পারি।

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি ও গদ্যকার। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বাঁকুড়া জেলায়। এবং কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। লেখালেখি শুরু সত্তরের দশক থেকে। প্রকাশিত বই: ‘মার্কিন মুলুকে, মফস্বলে’(২০২০)। যৌথভাবে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘রক্তাক্ত চন্দনের বনে’(১৯৭৭) এবং ‘সপ্তর্ষির আলো’(২০১৫)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ