বন্ধ দরজার সামনে

জয়তী দাস
কবিতা
Bengali
বন্ধ দরজার সামনে

শেষ স্পন্দন

এভাবে কোনো আগুন খেলা হয়!
এসো ম্যাজিশিয়ানদের ঠোঁটে ঠোঁট রাখি

চুষে ফেলি একনিমেষে শেষ প্রান্তের নখ থেকে
মজ্জার শেষ আঠালো শব্দ,
আহহহহ- চিৎকার দিও না। জানলাটা খোলা আছে-

ভয়ঙ্কর আঁচড়গুলো ক্রমশঃ কেমন নরম হয়ে আসছে দেখো!
দেখো ওরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শহরে, খামারে-

গবাদি পশুর দল, ইতর শ্রেণীর মিষ্টি সুগন্ধে বায়বীয় আকাশ
এই সন্ধ্যায় তুমি হাত ছেড়োনা প্রেমিক, আরো ঘন হও

আমাদের কথা আরো ধীরে, যতক্ষণ না জিভ উপড়ে নেয়
তীব্রলিপ্সা;
গলিয়ে দাও মোমের জলন্ত নাভীর চারপাশ, স্থবির হোক
জীবনের সব পিপাসা-

মৃত গ্রহের গহ্বরে বিস্ফোরণের শব্দ আমরা জেনেছিলাম,
আগুনের খেলাঘর,আমাদের মৃত অস্তিত্বের খোঁজ

 

বন্ধ দরজার সামনে

মাঝেমাঝে ঝড় ওঠা দরকার খুব-
কিছু জলোচ্ছ্বাস – আমাদের খুব কাছাকাছি আসুক
সমস্ত দরজা খুলে রেখে, আমরা আটকে আছি ঘরে-
ব্যর্থ পুরাণ পড়ে পড়ে আমরা ঈশ্বরকে হাতড়াই –

পাখিরা আজকে কেমন চুপ –
বুকের ভেতর কেউ কেউ ডেকে যায়-
ফেলে রেখে গ্যাছে তার পোশাক, প্রিয় রঙ
স্মৃতি আলেখ্য জুড়ে একটু একটু করে বাড়ছে ঝুল-

আমি তারাদের চোখে দেখতে দেখতে –
কখন হলুদ বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
লক্ষ মাইল জুড়ে পায়ের শব্দ শুনতে শুনতে সকাল
হয়ে আসে-

আমি বোধহয় ফুল না চিনেই রঙের দিকে তাকাই-
আকাশটাকে দেখবো বলে, আরো অচেনাকে খুঁজে পাই
চোখের ভেতরে কাল্পনিক হয়ে উঠছি আজকাল বড়ো-

নীল লাল পাহাড় ফুঁড়ে আমার ভেতর গজাচ্ছে কাঁটা ঘাস,
উল্টানো পিরামিড আমার সব কবিতা লুকিয়ে ফেলছে
নোনা স্বাদের বর্ণগুলো ম্যানগ্রোভের বুক ফুঁড়ে উঠছে
নির্জন শিকড়ে-

এসবের কোনো বাস্তবতা নেই! অলীক চাষাবাদ –
রাতের পৃথিবী রেখে, ছুটে আসে আলোর দিকে মৌমাছিরা
ছড়িয়ে পড়ে মেঝের পরে, পাখার ফ্যানের ব্লেডে;
ধাক্কা খেতে খেতে- ফিরে যায় অন্য অন্ধকারের দিকে-

 

রঙতুলি ও কবি

যেখানে চোখ পড়লো’না কারো –
সেখানেই তো লুকিয়ে– ভাঁজ করা আলো!

তুমি কি অনেক রাতে কুয়োর ভেতরে বন্দি চাঁদ
দেখেছো? একদৃষ্টে…
আশ্চর্য কালো পাড় শাড়ি তাকে জড়িয়ে জড়িয়ে
নিয়ে চলেছে পাতালঘরে-

কলমের যন্ত্রে ডেকে নিয়েছে শেকলের ক্রিতদাসী মিহি
অন্ধকার-
তুমি লিখছো ভাঙনের শব্দ, সুঠাম নমনীয় চাবুকের
অক্ষরলিপি!
কালপুরুষের মিথ ভেঙে ভেঙে- চতুর্দশীর এককুঠুরিতে
জমছে বাস্পীয় জলজ বন্দর-

যখন যক্ষপুরীর তাল তাল সোনার ঘরে বন্দি রাজার বুকে
রক্তকরবীর খাম-
মোহময়ী সিম্ফনি গুড়িয়ে দিয়েছে পঞ্জরাস্থির শালবন –
সেই মুহুর্তে কল্পনায় তুমি মিসিসিপি, বিপাশার ভেজা
গোধুলী রঙীন-

অদৃশ্য জামার আড়ালে – এখনও কত শব্দ বাকী তোমার!
আরো কত আলোকবর্ষের ঋণ তোমার কাছে-
আমি নাক্ষত্রিক জলছবি রাতে সব জবাবী চিঠি তোমাকে
দেবো… তুমি তুলিরঙ দিও।

 

প্রথম আলো

আয়নার ভেতরে কোনো গোপন রহস্য ছিলোনা
তবুও গোপন হয়ে আছি আমি আজও-

আকাশের সব নক্ষত্রের নাম খুঁজিনি রাতে,
এক অজানা ঢেউয়ের পাটাতনে শুয়ে আছি যেন প্রতিদিন!
ঘড়ির মতো দ্রুতবেগী যান চক্রাকারে বেঁধেছে অসার
হাতের কব্জি;
এখানে ঠিকানা হয়ে পড়ে থাকা, দেওয়াল চুনকাম হীন।

তবুও সম্পর্ক আছে, সহবাসের বাতাসে আকাশের পরিচয়;
ওরা রোদ্দুর হতে চায়, লতিয়ে যায় বর্ষামহলে-
কানা থেকে তলানির আগামীকাল খুঁজে হয়রান!

কেউ পরিচয় দেয়নি গাছেদের সরু আঙুলে নতুন পাতাদের,
ডেকে কেউ জায়গা করে দেয়নি সদ্য জন্মানো চাপা পড়া
দুর্বা গুলোকে;
তবুও তারা রেলিঙ ধরে হাঁটে- হাজার প্রজন্ম –
সার বেঁধে চলেছে উটের দেশে- শুকনো তৃষ্ণার খোঁজে!

আমিও তেমন তারাদের কেউ নই
নদীর মতো কেউ নাম দেয়নি ডেকে-
ভ্রমণের কোনো নাম হয়না, দেশ থেকে পথ
অন্ধকার গুহার ভেতরে সকালের এক টুকরো আলোর জন্ম
পৃথিবীর প্রথম সকাল! আমি চোখ মেলেছিলাম…

জয়তী দাস। কবি। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বনগাঁঁয়।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..