প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
এত অস্থির কেন লাগছে? অপরাধ করেছি আমি? শান্ত হতে পারছি না কেন ?
এই বোধের সাথে আমার পরিচয় নেই। জীবনের ৪০ টি বছর পার করেছি। কিন্তু এই অনুভূতি হয় নি কখনো। তবে কি যা করেছি তা ভুল ছিল?
আমার সামনে আমার সেক্রেটারি বসে আছে। তাঁকে যদি জিজ্ঞেস করি, তবে কি সে বলবে “স্যার আপনি ভুল করেছেন” সে কি আমাকে সত্যি কথাটা বলতে সাহস করবে?
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রাতে। তখন তো এমন মনে হয় নি। ভুল করছি অপরাধ করছি অন্যায় করছি; সেই সময়ে এই বোধ জাগে নি কেন? নাকি সেটি অপরাধ ছিল না? সময়ের পরিবর্তন কি অনুভূতিরও পরিবর্তন করে? যেটি কয়েক ঘণ্টা আগেও ভুল ছিল না এখন সেটি ভুল হয়ে গেলো?
“হাসান, আপনি বিয়ে করেছেন কয় বছর? আচানকই আমি প্রশ্ন করি।
“জী স্যার? ৩ বছর”
আমি দেখতে পাচ্ছি হাসান এই প্রশ্নে কিছুটা হতবাক হয়েছে। হাসানের বিয়ের বয়স কত আমার জানার কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু কেন এই প্রশ্ন করলাম বুঝতে পারছি না।
“আপনি শেষ কবে ছুটি নিয়েছিলেন?
“জী স্যার? গত বছর।
হাসান আবারো হতবাক । আমি বুঝতে পারছি বসের মুখ থেকে এমন প্রশ্ন সাধারণত কোন কর্মচারী আশা করে না। আমি নিজেও আশা করি না আমার মুখ থেকে এমন প্রশ্ন।
“তাহলে তো অনেক দিন হয়েছে ছুটি নিয়েছেন। এক কাজ করুন, তিন চার দিনের একটা ছুটি নিন, স্ত্রীর সাথে কোথাও ঘুরে আসুন”
“জী স্যার?
ছুটি নিন। আমি এপ্রুভ করে দিচ্ছি। এখন বাসায় চলে যান।
“জী স্যার? কিন্তু কাজ তো এখনো শেষ হয় নি স্যার!
হাসানের বিস্ময়ের পরিমাণ বাড়ছে। আমিও বিস্মিত হচ্ছি নিজের ব্যবহারে।
“আজ আর কিছু করবো না। কাল দেখা যাক। আপনি চলে যান। কাল একটি ছুটির এপ্লিকেশন নিয়ে আসবেন।
“স্যার, আমি কোন অন্যায় করেছি?” হাসানের গলায় কিছুটা ভীতি।
হাসান কোন অন্যায় করে নি। আমি নিজেও করেছি কিনা জানি না, বুঝি না।
“না কোন অন্যায় করেন নি। ইচ্ছে হল আপনাকে একটা ছুটি দেই। ধরে নিন আপনার পারফমেঞ্চের জন্য দিয়েছি”।
“কিন্তু স্যার! হঠাৎ?
“ভয় পাবেন না হাসান। ভয় পাবার মতো কিছু হয় নি”
হাসান আমার কথায় আশ্বস্ত না হয়ে চলে গেলো। আমি সিগারেট ধরালাম। ফোন বেজে চলছে। ধরার মতো রুচি নেই। আমি কিছু ভাবতে চাচ্ছি। এই বোধের ব্যাখ্যা দাড় করাতে চাচ্ছি। রাতের একটি ঘটনা কীভাবে দিনের আলোতে অপরাধবোধ সৃষ্টি করতে পারে। আমি সেই ঘটনার প্রতিটি মুহূর্ত চিন্তা করতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার শরীর কাঁপছে যখনই আমি সেই ঘটনা ভাবি কল্পনা করি অনুভব করি। সিগারেট পর্যন্ত ধরে রাখতে পারছি না। এসি ১৭ তে নামানো। কিন্তু আমি বিন্দু বিন্দু ঘামছি। কেন এই অস্থিরতা উত্তেজনা অপরাধবোধের প্রশ্ন? জীবনে কি আমি কোন অপরাধ করি নি? করেছি অসংখ্যবার। যেভাবে কোন মানষ অপরাধ ছাড়া থাকতে পারে না। তবে আজ এমন অজানা অনুভূতি কেন হচ্ছে? তবে কি আমি ধরে নিচ্ছি আমি অপরাধ করেছি?
অফিস থেকে বের হয়ে যাই। গাড়ি নেই না। ড্রাইভার অবাক হয়। আমি হাটতে থাকি উদ্দেশ্যহীন। রাস্তার অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। গাড়ি দোকান মানুষ আর কয়েকটি কুকুর। আমার সাথে একটি প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। আমি কি অপরাধ করেছি? একটি সিগারেটের দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনি। দোকানির চেহারা দেখে মনে হয় সে আমার উত্তরটি জানে। তাঁর দৃষ্টি আমাকে অপরাধী করে তোলে। ভাংতি টাকা ফেরত দেওয়ার সময় সে আমার দিকে তাকায়। আমার মনে হয় সে বলবে “আলোক, তুমি অপরাধ করেছো”
আমি আরও অস্থির হয়ে উঠি। পা কাঁপতে কাঁপতে আমি দোকানের পাশ থেকে সরে যাই। এই দোকানি কি আমাকে কাল রাতে দেখছে? সে কি জানে কি করেছি আমি গত রাতে? জানার কথা না। তবে তাঁর দৃষ্টি এমন লাগলো কেন?
হাটতে হাটতে আমি একটি সিগন্যালের সামনে গিয়ে থামি। ট্র্যাফিক পুলিশ তাঁর কাজ করে যাচ্ছে। গাড়ি থামাচ্ছে , চলতে দিচ্ছে। ক্লান্তিহীন অথবা আজন্ম ক্লান্ত ভাবে। রাস্তা পার হওয়ার সময় আমার মনে হল ট্র্যাফিক পুলিশ আমার দিকে তাকাচ্ছে। তাঁর দৃষ্টি আমাকে বলছে “আলোক, তুমি অপরাধ করেছো”
আমি তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে চাই। সে কী আমাকে ধরে নিয়ে যাবে? এই অপরাধের জন্য জেল হয়? জরিমানা? আমি জেলের কথা ভাবছি কেন? তবে কী ধরে নিয়েছি আমি অপরাধ করেছি?
কিছুটা ক্লান্ত লাগছে। শেষ কবে এত পথ হেঁটেছি মনে নেই। হয়তো ছাত্র অবস্থায়। একটি যাত্রী ছাউনিতে বসে পড়ি। পাশে নোংরা কাপড়ে একজন লোক শুয়ে আছে। হয়তো হিরোইন বা গাঁজার ধাক্কায় অবসন্ন। ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠে। আমার পরিচিত কেউ যদি দেখে তবে নির্ঘাত ধরে নিবে আমি অসুস্থ। বিখ্যাত একটি এনজিও এর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাঁর ৩০ লাখের গাড়ি বাদ দিয়ে এখানে যাত্রী ছাওনিতে একজন গাঁজাখোরের পাশে বসে আছে!
ছোট একটা বাচ্চা পপ কর্ণ বিক্রি করছে। সিগন্যালের গাড়ির আশে পাশে দৌড়চ্ছে। আমি হাত উঁচু করে ডাকি।
“১০ টাকা ২০ টাকা ৩০ টাকা কোনটা দিমু স্যার?”
এই পিচ্চিও আমাকে স্যার ডাকে? “৩০ টাকার দাও” ছেলেটি আমাকে প্যাকেট দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় মনে হল সে পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়েছে। তাঁর চোখেও আমি এক বিতৃষ্ণা দেখি। আমি আবার অস্থির হতে থাকি। প্যাকেটটি পাশে রেখে উঠে আবার হাঁটতে শুরু করি। কোথায় যাচ্ছি জানি না। বাসা আমার এই পথে না। আমি শুধু হাঁটছি, উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন। ইচ্ছে করে হাঁটছি নাকি একটি প্রশ্ন আমাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারি না । পথে চলতে আমি যতগুলো মুখ দেখি সবার দৃষ্টিতে আমার প্রতি একটি ক্ষুব্ধ দৃষ্টি দেখি। এই ক্ষুদ্ধতা আমাকে আরও অপরাধী করে তোলে। আমি যা করেছি তা কি সবাই জেনে গেছে? এই মহাজগতের সবাই জানে আমি অপরাধ করেছি? শুধু আমিই জানি না এ অপরাধ কিনা? এই প্রশ্ন আমাকে অস্থির করছে, উত্তেজিত করছে, আমার ভেতরটাকে পোড়াচ্ছে, আমাকে অসুস্থ করছে।
ফোনটি আবার বেজে উঠে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করি।
“স্যার, ফারিয়াদের টীম এসেছে অনেকক্ষণ। আপনাকে ফোন দিয়েছি কয়েকবার। আজ ওদের ফাইনাল রিপোর্টের কাজ ছিল। আপনি কি বাইরে কোন কাজে আছেন?
“ফারিয়া”
নামটি শুনার সাথে সাথে আমার ভেতরে কে যেন হাতুরি দিয়ে বাড়ি মারতে শুরু করলো। রক্তের সঞ্চালন বেড়ে গেলো বহুগুনে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। থেমে গিয়ে বলি,
‘ ওদের কাজ অন্য কাউকে বুঝিয়ে দিন। আমি আজ আর আসছি না”
বুকে কোথাও ব্যথা করছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। রাস্তার ধারে একটা ঠেলাগাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি । একটু রেস্ট দরকার।
২.
সেদিনটি খুব গতানুগতিক ছিল। আমি ব্যস্ত ছিলাম অফিসের কাজে। চিটাগং এর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টীম আসে আমার এনজিওতে ফেলোশিপ করার জন্য। তাদের সাথে আমি মিশেছি কাজের প্রয়োজনে। যেভাবে অন্যদের সাথে আমার প্রতিনিয়ত কথা হয়। সেই টীমে ফারিয়া ছিল। কথায় চাল চলনে এখনো ছেলেমানুষি যায় নি। তবে স্বাভাবিক ছিল তাঁর সাথে আমার ব্যবহার। স্বাভাবিক ছিল সবার সাথে আমার ব্যবহার। চিন্তায় বেশ মিল ছিল তাঁর সাথে আমার। দেশ সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি অনেক কিছু নিয়েই কথা হতো আমাদের। যেমনটা সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হয় না।
“আমরা দেশের জন্য এত প্রান দিয়েছি, ভাবতেই অবাক লাগে। ইটস রিয়েলি টাচিং ইয়ু নো। আই রিয়েলি লাভ মাই কান্ট্রি।
“আমার দেশ পছন্দ করার মতই একটি দেশ। তবে এখানে শকুনও থাকে। তারা তোমার মতো আরও অনেক নারীর স্বাধীনতা পছন্দ করে না”
“এবং এখানে আপনার মতো চমৎকার মানুষও থাকে। যারা সব মানুষের স্বাধীনতার বিশ্বাসী”
“আমি চমৎকার নই”
“স্যার আপনি সত্যি ওন্ডারফুল পারসন”
“তুমিও তবে চমৎকার”
“আপনার কথায় আমি খুব অনুপ্রাণিত হই”
আমি তাকাই ফারিয়ার দিকে। ফারিয়ার দৃষ্টি আমাকে দিকে নিবন্ধ থাকে।
আমার চেয়ে বয়সে কম করে হলেও ১৫ থেকে ১৬ বছরের পার্থক্য তাঁর সাথে। দেখতে আদুরে ছিল বলে মাঝে মাঝে তুই করেও ডাকতাম আড়ালে। এবং তখনও আমার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসে নি। অনুভূতিতে কখনো পরিবর্তন আসবে এ কল্পনাতীত ছিল। আমার কাছে সে একটা চড়ুই পাখির মতো ছিল। আদুরে আবেগি আহ্লাদি চঞ্চল দুষ্টু এবং স্বাধীন। তাঁর এবং তাঁর টীমের সাথে কাজ করতে আমার ভালো লাগতো। তিন মাসের ফেলশিপে তাদের টীম চমৎকার কাজ করেছিলো। আমি আগ্রহী হয়েছিলাম তাদের থেকে কয়েকজনকে জয়েন করানোর ব্যাপারে। তাঁর মধ্যে ফারিয়াও ছিল। তাঁর কাজ উদ্যমতা আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করতো। তাঁর প্রতি চিন্তায় কোন বিশেষ কিছু ছিল না। কোন ভিন্নতা ছিল না আমার প্রতি তাঁর ব্যবহারে। আমরা এক সাথে কাজ করতাম, গল্প করতাম ,মাঝে মাঝে সবাই মিলে খেতে যেতাম বাইরে, যুক্তি তর্কে একে অপরকে হারাতাম বা জিতাতাম। কিন্তু কোথাও কোন ‘কিন্তু’ ছিল না।
তাঁর উপস্থিতি আমার ভালো লাগতো। আমার গতানুগতিক ভাবলেশহীন জীবনে একটা নতুন চঞ্চলতার আগমন ঘটেছিল। আমরা কিছুটা বন্ধুতে রূপান্তরিত হই। এমন না যে আরও কারো সাথে বন্ধুত্ব হয় না। আরও কিছু ছেলে মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্বর মতো সম্পর্ক হয়। আমাদের সান্নিধ্য শুধুমাত্র অফিস সময়েই ছিল। এরপরে যে যার মতো বাসায় ফিরে যাই। এরপরে কেউ কাউকে স্মরন করি না। করার মতো কোন অনুভূতিই ছিল না।
সেদিন তাদের কাজের শেষ দিন ছিল। প্রজেক্ট শেষ। এখন শুধু ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়া বাকি। সবাই মিলে বাইরে খেতে যাই। আমি একটি ব্ল্যাক লেভেল নিয়ে যাই। সবারই অভ্যাস আছে পানের। আমরা আড্ডায় মেতে উঠি, উল্লাস করি, অট্টহাসিতে ফেটে পরি, যার যার জীবনের অতীত টেনে আনি, ভবিষ্যৎ নিয়ে বাণী ছুড়ি। আমরা যে কাজের জন্য কিছু দিন আগেই মাত্র পরিচিত হয়েছিলাম ভুলে যাই। একটা নির্মল স্বার্থহীন বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু থাকে না। সেই মুহূর্তেও আমি জানতাম না আমার জীবন পালটে যেতে যাচ্ছে।
সবাই খুব ভাবুক হয়ে উঠে। সবাই কিছুটা পানীয়তে মগ্ন হয়ে থাকে। জিমিয়ে আছে অনেকেই। শুধু আমি আর ফারিয়াই কথা বলছি। কথার চেয়ে বেশি তাকিয়ে আছি। এবং এক সময় আমাদের কথা শেষ হয়। কিন্তু আমাদের ঠোঁটের কথা শুরু হয় ।
আমি জানি না এই আকর্ষণে কী ছিল। এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি ফারিয়াকে নিয়ে বিশেষ কিছুই ভাবি নি। সে যে বিশেষ কেউ এ ভাবনা আমার চিন্তার ত্রিসীমানায়ও ছিল না।
কতক্ষণ আমাদের ঠোঁট একে অপরের সাথে কথা বলেছে আমার মনে নেই। কিছুটা ছিটকে পড়ে ফারিয়া। বধির কাঁতর নিস্তব্ধ বিধ্বস্ত। আমি সরে আসি তাঁর কাছ থেকে। খেয়াল করি কেউ লক্ষ্য করেছে কিনা। কারো খেয়াল নেই দেখে আমি খেয়াল করি ফারিয়াকে।
মুখ নিচু, হয়তো চোখে কিছু জলও থাকতে পারে। আমি নিজের অজান্তে কাতরতা অনুভব করি। কিছু একটা আমাকে টেনে নিয়ে যায় ফারিয়ার কাছে। আমি টেনে নিয়ে যাই ফারিয়াকে সবার আড়ালে। উন্মাদের মতো জড়িয়ে ধরি তাঁকে। তাঁকে যে আমি চড়ুই ভেবেছিলাম,সে আসলেই চড়ুই। কুঁকড়ে যায় আমার বাহুবন্ধনে, পিষ্ট হয় আমার বাহুর চাপে, কাঁপতে থাকে আমার বাহুর স্পর্শে। আমি কান না লাগিয়েও তাঁর বুকের উঠানামা বুঝতে পারি। ঠোঁট কাছে না নিয়ে গিয়েও তাঁর উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব করি।
অবশেষে আমার হাত শিথিল হয়। তাঁর চোখে আমি ব্যাকুলতা দেখি। আবেগের গভীরতা দেখি । সাথে এক অজানা ভয়ও দেখি। সে ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দেয়। সেদিন আমি নতুন এক অনুভূতির সম্মুখীন হয়েছিলাম।
সেদিনের পর এক সপ্তাহ আমি সুখ অনুভব করেছি প্রতিটি মুহূর্তে। আমার কাজে, গাড়িতে বাসায়, সিঁড়িতে লিফটে বারান্দায় ট্র্যাফিক জ্যামে, সিগারেটের ধোঁয়ায়, কলমের সিগনেচারে, ল্যাপটপের মনিটরে, চুলে জেল দিয়ে পরিপাটী করার ভঙ্গিতে, শার্টের ইনে, রাস্তায় ভিখিরির দিকে তাকানতে, অথবা স্কুল ফেরত হাস্য উজ্জ্বল বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে হাঁসিতে।
আমি সুখি ছিলাম রোদে, বৃষ্টিতে, সকালে দুপুরে বিকেলে সন্ধ্যায় এবং রাতে। এই সুখ ছাড়া আমার আর কোন অনুভূতি কাজ করতো না। আমি তন্দ্রায় ছিলাম না তীব্র জাগরনে ছিলাম জানি না। সেই সুখ কি বাস্তবে ছিল নাকি অকল্পনীয় কিছু ছিল জানি না। বাস্তব এত মধুর কোমল সুন্দর টলমল শুভ্র সতেজ হতে পারে না। তবে আমি কী বাস্তবের বাহিরে ছিলাম!
এরপর যখনই আমি ফারিয়াকে দেখেছি আমার চোখ স্থির হয়ে যেতো। আমার বুকের স্পন্দন কানে শুনতে পেতাম। আমার দিকে তাঁর দৃষ্টি আমাকে ধৈর্যহারা করতো। তাঁর চোখে আমি একই অকুলতা দেখেছি। একই অস্থিরতা একই আবেগ একই অনুভূতি। বেশিক্ষণ থাকতে পারতো না আমার সামনে। তাঁর অস্থিরতা তাঁকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিতো। এতে আমার ব্যাকুলতা আরও বেড়ে যেতো। এই ব্যাকুলতাও আমাকে সুখি করতো।
গতকাল রাতে আমি আর ব্যাকুল থাকতে পারি নি। অস্থিরতা আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছে তাঁর আরও কাছে। আমি শুধু তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি “যাবে?”
সে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। তাঁর কণ্ঠে নয় চোখে ছিল ভাষা। আমি বের হই তাঁকে নিয়ে। সবচেয়ে উঁচু ভবনের উঁচু তলায় আমি নিয়ে যাই তাঁকে।
সে আমার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমিও তাকিয়ে ছিলাম তাঁর দিকে। কত সময় ধরে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম জানি না। আমার ব্যাকুলতা বাড়তে থাকে অস্থিরতা বাড়তে থাকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। আমি হাত বাড়াই তাঁর দিকে। সে পিছনে ফিরে যায়। মুষড়ে পড়ে। ঢুকরে কেঁদে উঠে। আমি কাছে গিয়ে তাঁর মাথায় হাত রাখি। তাঁর কান্না বাঁধ ভেঙে যায়।
“এ ঠিক না আলোক স্যার, এ অন্যায়”
তাঁকে জড়িয়ে ধরি। কুঁকড়ে গিয়ে আমার বুকে মুখ লুকায় ফারিয়া।
“অন্যায় এত সুখকর হয় না”
“এ বিশ্বাসঘাতকতা”
“বিশ্বাসেও এত সুখ নেই”
“এর কোন পরিণাম নেই”
“পরিণাম মানেই শেষ, আমি শেষ চাই না। আমরা শেষ চাই না। আমরা মুহূর্ত চাই। সুখের , আনন্দের, হারিয়ে যাওয়ার”
ফারিয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে।
আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই।
ফারিয়া ঠোঁট এগিয়ে আসে আমার দিকে। তাঁর অগ্রসরতা আমার কাছে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মনে হয়। তাঁকে আমার বাস্তবের কোন নারী মনে হয় না। বশীকৃত অবয়ব মনে হয়। যে আবেগের মন্ত্রে বন্ধি। মায়ায় জালে আকৃষ্ট।
“ভালোবাসি অলোক স্যার”
“এখানে কেউ স্যার নয়”
তাঁকে আমি বুকে জড়িয়ে ধরি যেন আজন্ম আমি তাঁকে এভাবেই ধরে রেখেছি। তাঁর শরীরের স্পর্শ আমার কাছে কোমল ফুলের পাপড়ির মতো মনে হয়। তাঁর চুলের ঘ্রাণ আমার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়। তাঁর ঠোঁটের জল আমার তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাঁর কাঁতর দৃষ্টি আমার ভেতরকে ধ্বংস করে দেয়।
আমরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তাঁর বুকে মাথা রাখি। আমার চুলে তাঁর হাত। আমার পিঠে তাঁর বাঁধন। আমাদের দুজনের ভেতরেই আদিম উন্মাদনা জেগে উঠে। কিন্তু দৃষ্টির কাতরতা আর ঠোঁটের ভাষা ছাড়া আমরা আর কিছুই করতে পারি নি। পুরো একটি রাত আমরা একে অপরকে শুধু দেখেছি চোখ দিয়ে, ঠোঁট দিয়ে, স্পর্শ দিয়ে। একে অপরকে চেয়েছি ভেতরের সকল আবেগ দিয়ে। একে অপরের ভেতরে প্রবেশ করেছি তীব্র আকাঙ্ক্ষা দিয়ে। একে অপরকে পূর্ণ করেছি অব্যক্ত ভালোবাসা দিয়ে।
তীব্র সুখ নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। দরজা খুলতেই আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার ২ বছরের পুত্র। এবং আমার সুখ সেই মুহূর্ত থেকে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি মূর্তিমানের মতো পুত্রকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রী লিপি বলে “কি হল দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে ঢুকো!”
আমার নিশ্চলতা দেখে সে কাছে এসে জিজ্ঞেস করে “ক্লান্ত লাগছে ভীষণ?”
আমি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করি। তাঁকে পৃথিবীর সব চেয়ে নিস্পাপ মেয়ে মনে হয়। নিজেকে সবচেয়ে ঘৃনিত।
পুত্রকে লিপির কোলে দিয়ে আমি ভেতরে যাই। যাওয়ার পথে আমার ৮ বছরের মেয়ের ঘরে উঁকি দেই। সে ব্যস্ত স্কুলে যাওয়া নিয়ে। ভেতরে আমি আরেকটা ধাক্কা খাই। কিছু জ্বলে যাওয়ার যন্ত্রণা হয় ভেতরে। ছিটকে আমি বাথরুমে ঢুকি।
নিজেকে আমার অনুভূতি শুন্য মনে হয়। কোন বোধশক্তি আমার অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। আয়নায় নিজেকে দেখি। আমার চিরচেনা চেহারায় একটি প্রশ্ন দেখতে পাই।
এবং সেই থেকে প্রশ্নটি আমার সঙ্গ ছাড়ছে না। “আমি কি অপরাধ করেছি?” আইল্যান্ড থেকে উঠে বাসার দিকে হাটতে শুরু করি। মোবাইল বের করে দেখি ফারিয়ার ৯ টি মিসকল! মোবাইল বন্ধ করে বাসায় প্রবেশ করি। যেখানে অপেক্ষা করছে আমার পরিবার। আমার স্ত্রী যে আমাকে ভালোবাসে, আমার কন্যা এবং আমার পুত্র। যাদের আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। যেভাবে ফারিয়ার প্রেমিকও ফারিয়াকে ভালোবাসে। যেভাবে সেও অপেক্ষায় আছে ফারিয়ার।
মধ্যরাতে পর্যন্ত আমার ঘুম আসে না। অন্ধকারেই আমি লিপির চেহারা দেখতে পাই। প্রশান্ত ঘুমের ভঙ্গি। ওকে আমি ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। আমাদের জীবন সুখি ছিল। দুটি চমৎকার সন্তান উপহার দিয়েছে সে আমাকে।
“আমাদের জীবন সুখী ছিল?” আমি ছিল বললাম কেন? এখন কি আমরা সুখি না? নাকি সুখি জীবন যখন চিরাচরিত জীবনে রূপ নেয় তখন আর সুখ থাকে না? আমাদের মাঝে কি সুখ নেই? আমরা কি দুঃখী? কই দুঃখ কোথায়? আমি প্রতিদিন অফিস যাই, লিপি ঘর সামলায়, সন্তানদের দেখা শুনা আমার চেয়ে ওই বেশি করে, আমার যত্নের কোন ত্রুটি রাখে না, বছরে এক বার সবাই মিলে বাইরে বেড়াতে যাই, নিয়মিত শারীরিক সুখ বর্তমান। তবে “সুখি ছিল” এ কথা কেন বললাম? আমি মনে করতে চেষ্টা করলাম কখন লিপি আমাকে দুঃখ দিয়েছিল? বারান্দায় গিয়ে ভাবলাম সিগারেট ধরিয়ে। রাতের নিস্তব্ধতা ছাড়া আমি কোন উত্তর খুঁজে পাই নি। শুধু একটি “তবে” খুঁজে পাই।
লিপি আমাকে কখনো দুঃখ দেয় নি। আমি ভালোবাসি লিপিকে। তবে এখনও কি তাঁকে দেখলে আমার বুক উঠানামা করে? তাঁকে কাছে পাওয়ার জন্য হাহাকার জাগে? তাঁর কণ্ঠ শুনলে কি আমার রক্তে কাঁপুনি জাগে? তাঁকে অনেকক্ষণ বা অনেকদিন না দেখলে কি অস্থিরতা বোধ হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তর কখনো খুঁজি নি। এসব যে কখনো প্রশ্ন হয়ে উদয় হবে সে অজানা ছিল।
আরেকটি প্রশ্নের উদয় হয় ঠিক যখন আমি সিগারেটটি শেষ করি। “লিপি যদি না থাকে আমি কি চলতে পারবো? কষ্ট হবে না আমার?”
বিছানায় গিয়ে লিপিকে আবার দেখি। ওর কপালে আলত করে একটি চুমু খাই।
“লিপিকে ছাড়া আমি চলতে পারবো না”
প্রশ্নটিকে সাথে নিয়ে আবার অফিস যাই। অফিসে ঢুকতে কিছুটা সংকোচ করি। আমার চোখ কাউকে এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে খুঁজে পেলাম সামনে।
ফারিয়া ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুটা বিধ্বস্ত লাগছে তাঁকে। যতটা বাহিরে তাঁর চেয়ে বেশি বিধ্বস্ত ভেতরে। যেভাবে আমার ভেতরটা গুড়ে গেছে। প্রচণ্ড চেষ্টায় তাঁর সামনে থাকে সরে আসি।
“আলোক স্যার”
আমি থমকে যাই। এই ডাককে আমি অস্বীকার করবো এতোটা শক্তি আমার নেই। আমি ফিরে তাকাই তাঁর দিকে।
“রিপোর্ট এ আপনার সাইন লাগবে”
আমি সস্থির নিঃশ্বাস ফেলি। আমার ভয় ছিল হয়তো সে জিজ্ঞেস করবে কেন তাঁর প্রতি আমার এই অবহেলা।
“পাঠিয়ে দাও”
বলেই আমি আমার রুমের দিকে এগিয়ে যাই। পিছনে আবার ডাক পড়ে।
“আলোক স্যার”
পা যেন কেউ আমার মাটির সাথে গেঁথে দিয়েছে।
“আমি বলেছিলাম এ অন্যায়” ফারিয়া কাতর কণ্ঠে বলে উঠে।
ওর দৃষ্টিতে এবার আমি ঘৃণা দেখি। তাকিয়ে থাকতে পারি না। যেন সেখানেই আমি ভস্ম হয়ে যাবো। ছুটে চলে যায় ফারিয়া।
৩.
এরপর প্রায় প্রতিদিনই আমি দেখেছি ফারিয়াকে তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকাতে আমার দিকে। ওর দৃষ্টি আমাকে শতগুন অস্থির করে তুলত আগের চেয়ে। অনির্ণেয় যন্ত্রণায় আমি কাৎরাতাম। তাঁর চেয়ে বেশি হাহাকারে ভুগতাম সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য। আমি কি অপরাধ করেছি?
যদি এই অপরাধ হয় তবে তাঁর উপস্থিতিতে যন্ত্রণা হচ্ছে কেন ? তাঁর প্রতি আবেগে কোন খাদ পাচ্ছি না কেন? তাঁর প্রতি অনুভূতিতে বিশ্বাস ভঙ্গের কোন অনুশোচনা হচ্ছে না কেন? সেই রাতের স্মৃতিকে জীবনের অন্যতম অমূল্য স্মৃতি মনে হচ্ছে কেন? এত ‘কেন’ থাকা সত্ত্বেও আমি ফারিয়ার প্রতি অগ্রসর হচ্ছি না কেন? কেন তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছি?
ধীরে ধীরে ফারিয়া আমার থেকে দূরে সরে যায়। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আমার সামনে আসতো না। আমার বোধোদয় হয় হয়তো সে আমাকে ভুলতে পেরেছে বা চেষ্টা করছে। বা আমাকে বুঝার চেষ্টা করছে। আমি নিজেও এখনও নিজেকে বুঝে উঠতে পারি নি । এখনও উত্তর খুঁজে পাই নি। প্রতিদিন এই প্রশ্নের সাথে বসবাস আমাকে হাঁপিয়ে তুলছে। তবে আমি সস্থি পাচ্ছি এই ভেবে যে আমাকে ফারিয়ার ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি আর সহ্য করতে হবে না।
আজ ফারিয়ার যাওয়ার দিন। তাঁকে অফিস থেকে অফার দেওয়া হয়েছিলো জয়েন করতে। সে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুনে আমি স্বস্তি এবং দুঃখ দুই’ই পাই।
এবার সে চড়ুই পাখি না হয়ে হলুদ পাখি হয়ে আমার রুমে প্রবেশ করে। একটি হলুদ জামা পরেছে। ইচ্ছে করে তাকিয়ে থাকি মুগ্ধ দৃষ্টিতে। একটু ছুঁয়ে দেখি, পাখিটা কি এখনও কুঁকড়ে যায় নাকি আর চড়ুই পাখিটি নেই?
“স্যার যাচ্ছি। আপনার সাথে কাজ করে ভালো লেগেছে ভীষণ। সত্যি চমৎকার মানুষ আপনি। আর যা কিছু হয়েছে আমি ভুলে গেছি। একটা ভুল ছিল সেটা। এটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাই নি সেটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে” ফারিয়ার মুখে উজ্জ্বল হাসি।
আমার হাসতে কষ্ট হয়। কিন্তু তাঁকে বিদায় জানাতে হবে হাসি মুখে।
“আমাকে ক্ষমা কোরো ফারিয়া”
“ক্ষমার কিছু হয় নি স্যার। আমি ভুলে গেছি সব” ফারিয়ার মুখে আরও উজ্জ্বল হাঁসি।
“তুমি অসাধারন। তোমার সাথে চমৎকার সময় কেটেছে”
“আসি স্যার”
ফারিয়া রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমি নিশ্চল বসে থাকি।কিছুক্ষণ পর আমার জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। নিচে ফারিয়াকে দেখতে পেলাম। সবাই গাড়িতে উঠছে। নিচ থেকে ফারিয়া একবার উপরে তাকাল আমার জানালার দিকে। বাইরে থেকে দেখা যায় না জানালার ভেতরে। তবুও সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার ভেতরটা হিম হয়ে যায়। ফারিয়ার চোখে সেই কাতরতা দেখি। যেটা দেখেছিলাম সেই রাতে। আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে। প্রানপন চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে থাকি আমি। তবে ফারিয়া আমাকে ভুলে নি? যেভাবে আমিও তাঁকে ভুলি নি। ফারিয়া গাড়িতে উঠে। এবং দৃষ্টির সীমানার দূরে চলে যায়। তাঁর সাথে প্রশ্নটিকেও চলে যেতে দেখি। এবার সে রেখে যায় আমার জন্য উত্তর।
“এ অপরাধ নয়। আমি কোন অপরাধ করিনি। এ অন্যায় নয়। আমি কোন অন্যায় করি নি। এ বিশ্বাসঘাতকতা নয়। আমি কোন বিশ্বাসঘাতকতা করি নি। এ শুদ্ধ অনুভূতি। কাউকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, কাউকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা মহাজগতের সবচেয়ে বিশুদ্ধ অনুভূতি। ফারিয়া, তোমাকে ভালবেসেছি। কারণ ছাড়া উদ্দেশ্য ছাড়া ভবিষ্যৎ ছাড়া ভালবেসেছি। এবং অবশ্যই পরিনতি ছাড়া। তুমি চড়ুই পাখি হয়ে এসেছিলে আমার জীবনে। আমি আদর করেছি। এবার তোমার উড়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছে”
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..