মনিনিকার একদিন প্রতিদিন
সকাল সকাল ওঠা মনিনিকার বরাবরের অভ্যেস। সকালে এক বড় কাপে অর্গ্যানিক গ্রিন টি নিয়ে সোফায়…..
মুমু ইসলাম। সংসার আর জব নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটে। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। সচেতন ও সুশ্রী। বয়স তার কোন বাঁকে এখনো তেমন ভাবে উঁকি দেয় নি যদিও তবুও ক্লান্তি একটুতেই যেন তাকে দখল করে নিতে চায়। বই পড়া তার প্রধান সখ। তবে মুমু কবিতা লিখে। মাঝে মাঝে তা নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে। মুমুর এই দুটো সখ বেঁচে বর্তে আছে আজো।
আজ ১২ দিন হয়ে গেলো ২১শের বইমেলা শুরু হয়েছে। মুমু সময় করতে পারেনি। বান্ধবী বা কলিগদের সাথে গেলে তার অনেকখানি সময় বেহিসেবি খরচ হয়ে যায়। তাই ভাবছে একদিন সে এবার একাই যাবে। ইচ্ছে মত ঘুরে ঘুরে নতুন বই হাতে নিয়ে শুঁকে শুঁকে দেখবে। পছন্দের বইগুলো খুঁজে বের করে কিনবে। ফেসবুকে সমকালীন অনেক ভাল কবি আছে যারা এবার বই বের করছে তাদের বই কিনবে। সাথে কলিগ বা বন্ধুরা থাকলে চটপটি চা’তে অনেকখানি সময় পার হয়ে যায়। আসল কাজের কিছুই হয় না। এই করে প্রতিবছর তার বই কেনা হয় না তেমন মেলাতে। হা মজার সময় কাটে হয়তো ওদের সাথে কিন্তু নিজের ইচ্ছে মত কর পছন্দের স্টলগুলোতে গিয়ে পছন্দের বই খুঁজে দেখা হয় না। এই একমাসের মেলায় এত ব্যস্ত জীবনে দু”বার আসার মত সময়ও সে বের করতে পারে না কখনই। তাই আর হয়ে উঠে না কোন বছর নিজের মত করে ঘোরা। এবার তাই মুমু বদ্ধপরিকর। একাই যাবে মেলায়।
মুমু আজ সাদাকালো আর লাল ব্লকপ্রিন্টের রাজশাহি সিল্ক শাড়ি, সাথে কালো ব্লাউজ পরেছে। লেয়ারকাট চু্ল ছেড়ে দেয়া। বা হাতে ঘড়ি। ডানহাতে গোল্ডের চিকন ব্রেসলেট। সাজগোজ কখনই তেমন করে না মুমু। চোখে কাজল সব সময় পরে। আম্মা বলতেন মুমু তোর চোখদুটো খুব ফ্যেকাসে। সবসময় কাজল পরবি। সেজন্য সেই ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস কাজলের। এখন কাজল পরার সময় ওর আম্মার কথা মনে পড়ে মুমুর।
অফিস শেষ করে তারপর এসেছে আজ বইমেলায়। মুমুর হাসবেন্ড জানে ও আজ একাই আসবে মেলাতে। মুমুর হাসবেন্ড জাহিদের এক অভ্যাস, একা মুমু অফিস ছাড়া কোথাও গেলে একটু পর পর ফোন করে করে অস্থির করে দেবে। ঘুরে ঘুরে বই দেখছে মুমু। পছন্দের লিস্ট থেকে যতটা বহন করতে পারবে ততটা সে কিনে নিবে আজ। এরইমাঝে পাঁচবার ফোন করেছে জাহিদ। লাস্ট ফোন করে বলেছে সে ঠিক ৭টায় মুমুকে পিক করবে শাহবাগের মোড়ে। মুমু যেন একটা রিকশা করে ওই পর্যন্ত চলে আসে। ৭টা বাজতে আর ২০ মিনিট বাঁকী। মুমু তাড়াহুড়ো করে ব্যগ গুছিয়ে ফেরার পথ ধরেছে। অন্যপাশ থেকে একটা ছেলে এসে একটা খাম মুমুর হাঁতে ধরিয়ে দিয়ে ‘এটা আপনার জন্য’ বলেই ভীরের মধ্যে হারিয়ে গেলো। কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলো না মুমু। আর এই মুহূর্তে অবাক হওয়ার বা কিছু ভাববার সময়ও নেই তার।
জাহিদ অয়েট করবে ওর জন্য। দেরি হলে আকাশ পাতাল ভেবে অস্থির হবে। কিছু না ভেবেই মুমু খাম ছিড়ে এক নজর দেখে নিলো। তাতে লেখা –
“গত চারবছর আপনার প্রোফাইল পিক থেকে যে চোখ সরাতে পারিনি আজ সামনা-সামনি দেখে সেই দু’চোখ অন্ধ হোলো”।
সিক্তা আর অর্ণব বলে কয়ে তাদের শেষ বিদায় নিয়েছিল। সেটা ছিল জানুয়ারির ১৭ তারিখ।
তারপর –
অর্ণব আর থাকেনি দেশে। দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে ক্যানাডায়। অ্যাডমন্টন এ এ্যলবার্টো শহরে, কানাডায়। খুব কম দেশে আসে।
একদিন শীতের ভাপাপিঠা খাচ্ছিল তারা টিএসসি চত্বরে। অর্ণবের গলায় আটকে গেলো। তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে রক্ষা। অর্ণবের কমপ্লেইন ছিল পিঠাটা খুব ড্রাই। সিক্তা বলেছিল ভাপাপিঠা এমনই। অল্প করে মুখে নিয়ে বেশী করে চিবিয়ে খেলে দেখবে এটা আর ড্রাই থাকবে না। আর সব খাবারই এভাবে বেশী চিবিয়ে খাবে। এটা ভাল অভ্যাস। খাবার খেতে বসে অকারণেই অর্ণবের এসব মনে পড়ে। সেদিনের সেই গলায় আটকানোর মনে পড়ে। একা একাই হাসে অর্ণব।
প্রতিবার রিকশায় উঠার সময় ওড়না ঠিকমত দেখে নিয়ে সাবধানে উঠতে বলতো সিক্তাকে। আজো যখন সিক্তা গাড়ীতে উঠে ওর স্বামী শাড়ির আঁচল ভিতরে আগায়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করতে করতে বলে, আহা সিক্তা আঁচল ঠিক করে বসো। আর ঝট করে অর্ণবকে মনে পড়ে যায় সিক্তার।
এই যে তারা ‘আজ থেকে আমাদের যোগাযোগ শেষ’ বলে বিদায় নিয়েছিল সেটা ছিল আসলে একটা বিচ্ছিন্ন বাড়ি। আর এই যে তারা একে অপরকে কারণে-অকারণে মনে করে তা ওই বাড়ির ভিতরে নিভৃত ঘর। তা্রা দু’জনেই সেখানে যাতায়াত করছে। বসবাস করছে বছরের পর বছর ধরে, অজান্তেই।
সম্পাদনা: শাহানাজ ইয়াসমিন
সকাল সকাল ওঠা মনিনিকার বরাবরের অভ্যেস। সকালে এক বড় কাপে অর্গ্যানিক গ্রিন টি নিয়ে সোফায়…..
পরম প্রাপ্তি বাসস্টপেজেই অতনুর বাড়ি। রাত বাড়লে বাসস্টপেজ একটা আমোদের জায়গা হয়ে যায়। অন্ধকারে শুয়ে…..
জনৈক রবি মোবাইল অপারেটর গ্রাহক রবি কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিচ্ছে। পনেরো মিনিট পর অপরপ্রান্ত থেকে…..
ওই এক পাগলা আছিল। ঘুরে বেড়ায় খায় দায় তারপর কোথায় উড়ে যায়।পাগলার গল্প শুনে রঞ্জনের…..