করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত একুশে বইমেলা ২০২৩ শেষ হলো গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর স্টল বরাদ্দে অব্যবস্থাপনা এবং সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গনে ধুলোবালির পরিমাণ ছিল বেশি। যেকোনো প্রকাশনীর স্টল নম্বর জানার পরও পাঠকদেরকে সেটা খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষের এলোপাথাড়িভাবে স্টল বরাদ্দের কারণে। লেখক, পাঠক, প্রকাশক সহ এ অভিযোগ পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী সব মহল থেকে।
তবে ধুলোবালি আর অব্যবস্থাপনাকে ছাপিয়ে এ বছর বাংলা একাডেমি আরও বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আদর্শ প্রকাশনী বিগত নয় বছর ধরে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়ে এলেও এ বছরই সরকার-বিরোধী বই প্রকাশের ‘অভিযোগে’ তাদেরকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আদর্শ এ পর্যন্ত দুই শতাধিক বই প্রকাশ করেছে এবং তার মধ্যে জনপ্রিয় ধারার বই ছাড়াও রয়েছে গবেষণাধর্মী সিরিয়াস প্রকাশনা। বর্তমানে আদর্শকে বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি প্রকাশনা সংস্থা বলা যায়। কিন্তু গত এক বছরে প্রকাশিত জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’, ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ এবং ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ বই তিনটিতে সরকারের বহুল প্রচারিত উন্নয়নের বেলুন ফুটো করে দেয়ার মতো তথ্য এবং উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীত বক্তব্য থাকায় বাংলা একাডেমি আদর্শ প্রকাশনীর বিরুদ্ধে এই অবস্থান নিয়েছে। আলোচ্য লেখকদের সব বক্তব্যের সাথে আমরা হয়তো একমত হবো না, হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মতামতের প্রতি সমালোচনাও আছে- তাই বলে পুলিশী ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে তারা যেভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনীকে স্টল পাওয়া হতে বঞ্চিত করল এর বিরুদ্ধে আমাদের জোরালো মতাদর্শিক অবস্থান সবসময়েই থাকবে। এই ঘটনা সরকারের সাংস্কৃতিক তল্পিবাহক হিসেবে বাংলা একাডেমির ভূমিকাকে আরও একবার স্পষ্ট করল। অতীতেও এভাবে তারা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ না দেয়া কিংবা স্টল হতে কোনো বিশেষ বই উঠিয়ে নেয়ার মতো সাংস্কৃতিক গুণ্ডামিতে রত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা একাডেমি প্রাঙ্গনে চটের ওপর বই সাজিয়ে বিক্রি করা শুরু করেছিলেন। পরে এটা বাংলা একাডেমি নিজের দখলে নিয়েছে এবং এখন কোন বই মেলায় থাকবে, কোন প্রকাশনী স্টল পাবে তা নির্ধারণের সাংস্কৃতিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে চলেছে।
অবশ্য আমাদের আজকের আলোচনার প্রসঙ্গটি একটু ভিন্ন। এ বছর একুশের বইমেলায় ছয়শ’র বেশি বইয়ের স্টল ছিল, প্যাভিলিয়নও ছিল বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রকাশনীর অংশগ্রহণে যদি একটামাত্র প্যাভিলিয়ন করা যেতো তাহলে কী খুব বেশি ক্ষতি হতো? এ দেশের বইয়ের ‘বাজার’ পশ্চিমবঙ্গের দখলে চলে যেতো? বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের একটা অংশ এই প্রচেষ্টাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবে দেখছেন এবং তাদের কাছে মনে হচ্ছে এতে পশ্চিমবঙ্গের বই দিয়ে আমাদের বইয়ের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে, তাদের নিজেদের বই মার খেয়ে যাবে। দেখা গেল এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কিনা মাত্রই কিছুদিন আগে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার বিরোধিতা করেছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে তাদের দুই ধরনের বিরোধিতার মূলে যেন একটা ‘ব্যাপার’ রয়েছে। বাস্তবতা হলো ওপার-বাংলার বাজার-কাটতি জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় সাইজের বইয়ে ঢাকা সহ অন্যান্য শহরের ফুটপাথ বহু আগে থেকেই ছেয়ে আছে। নীলক্ষেতের ফুটপাথে হাঁটতে গেলে এই বইগুলো পাঠকদের চোখে না পড়েই পারে না। নিম্নমানের কাগজে ফটোকপি করা এসব বই দামে বেশ সস্তা, ক্রেতাও প্রচুর।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের লেখক মাত্রেই সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশ-বুদ্ধদেব গুহ নন, যদিও এ দেশের পাঠকদের এই লেখকদের বৃত্তের বাইরে ওপারের লেখালিখির সাথে পরিচয় খুব সামান্যই আছে। অথচ শুধু সৃজনশীল সাহিত্যই নয়, মননশীল লেখায়ও পশ্চিমবঙ্গ বেশ অগ্রগামী। এমন প্রচারণা রয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় বড় পুঁজির আগ্রাসনের কারণে সেখানে বাংলা ভাষা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং দৈনন্দিন লেনদেন, কথোপকথন, দোকানদারি থেকে শুরু করে অনেক জায়গাতেই বাংলার ওপর হিন্দির প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করা যায় না কিন্তু একই সাথে এটাও সত্যি যে, সেখানে বিভিন্ন লেখক গোষ্ঠী আছেন যারা সাহিত্যটা খুব গুরুত্ব সহকারে করেন, লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনেও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে। এ দেশের শহরে ফুটপাথে যে বইগুলো মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয় তার বাইরে যে ভালো মানের বইপত্র পশ্চিমবঙ্গে অতীত থেকে শুরু করে এখনো প্রকাশিত হয়ে আসছে সেসবের সাথে এ দেশের পাঠকদের যোগাযোগ হওয়াটা তাদের মানসিক ঋদ্ধতার খাতিরেই প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন এবং তার কিছু ভালো উপন্যাসও আছে, তবে অধিকাংশই বাজারের চাহিদাকে মাথায় রেখে লেখা। এক সময় ‘কালবেলা’র মতো উপন্যাসের রচয়িতা সমরেশ মজুমদার এখন নকশালপন্থীদেরকে গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ‘মুদ্রাভঙ্গ’ লিখছেন, তার ‘অগ্নিরথ’ থেকে উদগ্র বাঙালি জাত্যাভিমান গলগল করে বেরোচ্ছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় উপন্যাসে আগে যা ছিলেন এখনো তা-ই আছেন, প্রগতি-বিরোধী ও অতি নিকৃষ্ট মানের বাঙালি হিন্দু প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতিনিধি। তবে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যকে শুধু সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশের সাথে সমীকৃত করার অসুবিধা আছে। একই সাথে ওখানকার প্রকাশকদের বাংলাদেশের বইমেলায় প্যাভিলিয়ন করতে দেয়ার যে দাবি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বইমেলা থেকে উচ্চকিত হয়ে উঠেছে, তার সাথে পাঠকদের ভালো মানের বইয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভের জন্য আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেটাকে গুলিয়ে ফেলাটাও সমস্যাজনক। বাংলাদেশের বইমেলায় পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশকরা প্রবেশের সুযোগ পেলে হয়তো লাভবান হবেন। কিন্তু যারা বইকে শুধুই পণ্য হিসেবে দেখে থাকেন এবং বইবিক্রির আর্থিক লাভালাভটাই যাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে, তারা পাঠকদের মানসিক উৎকর্ষের থোড়াই পরোয়া করেন। দেখা যাবে যে, যেসব লেখক বাংলাদেশের বইমেলায় পশ্চিমবঙ্গের বই ঢোকার বিরোধিতা করছেন তারা যে গুণেমানে এরচেয়ে উন্নত কিছু সৃষ্টি করে ফেলেছেন তা কিন্তু না। এরা যেসব গল্প-উপন্যাসের বই লিখছেন তার বিষয়বস্তু নির্বাচন থেকে শুরু করে উপযুক্ত শব্দচয়ন ক্ষমতা ও ভাষা বেশ দুর্বল, একটু জটিল বাক্য লিখতে গেলে খেই হারিয়ে ফ্যালেন, বানানের প্রসঙ্গ নাহয় আর না-ই তুললাম। রচনার প্রসাদগুণ বলে একটা ব্যাপার আছে, যাকে ঠিকমতো ব্যাখ্যা না করা গেলেও উপলব্ধি করা যায় যথাস্থানে- এর অভাব খুব নিষ্করুণভাবে পরিলক্ষিত তাদের লেখালিখির মধ্যে। ফলে পরা ও পড়া, কৃত ও ক্রীত, স্বীকার ও শিকার, স্মরণ ও শরণ এবং ইত্যাকার বহুবিধ শব্দের মধ্যে ব্যবহারগত পার্থক্য না-জানা এসব ‘সাহিত্যিক’ অশুদ্ধ বাক্যযোগে মহাউৎসাহে ‘সাহিত্য’ সৃষ্টি করে চলেছেন এবং ‘আমরাই শ্রেষ্ঠ’ এ ধরনের একটা ভাব নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। পশ্চিমবঙ্গের বই এ দেশে প্রবেশে তাদের মধ্যে যে হিস্টিরিয়াগ্রস্ততা দেখা যাচ্ছে সেটা তাদের স্বকৃত আত্মশ্লাঘার উত্তরীয়ে টান পড়বে এই সম্ভাবনা থেকে জাত হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ নয় তো অন্য কিছু?
এ ধরনেরই ‘সাহিত্য করা’ একজন ব্যক্তিকে দেখলাম অনলাইনে এমনটা ঘোষণা দিচ্ছেন, বাংলাদেশের মেলায় পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের ঢোকা প্রতিহত করতে হলে যদি ওখানকার মেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন বন্ধ করে দিতে হয় তাহলে সেটাও মেনে নিতে হবে। বলা বাহুল্য এই ধরনের মনোভঙ্গির মধ্যে একজন সাহিত্যিকের মনোবাসনার চাইতে দুই পাড়ার মাস্তান গোষ্ঠীর একে অপরের এলাকায় প্রবেশ করলে দেখে নেয়ার হুমকির সাথে অধিক সাদৃশ্য দেখা যায়। তবে এই মাস্তানিরূপের একটা কারণ হলো – যে কথা আগেই বলেছি, অর্থাৎ কিনা – বইকে নিছক পণ্য মনে করা এবং বই বিক্রি করে কোন প্রকাশকের কতোটা লাভ হলো সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো বিষয়টাকে দেখা; আরেকটা হলো, ওপারের ভালো বইগুলোর সাথে পাঠকদের পরিচয় ঘটার সুযোগ হলে বাংলাদেশের আত্মতুষ্ট সাহিত্যিকদের সম্পর্কে তাদের মনোভাব কী হতে পারে সেটা ভেবে মনের মধ্যে আতঙ্ক উপস্থিত হওয়া।
পশ্চিমবঙ্গীয় জনপ্রিয় লেখকদের বাজার-কাটতি পাইরেটেড বইয়ের ভিড়ে উন্নত মানের সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। বলতে গেলে এ ধরনের বই বাংলাদেশে পাওয়াই যায় না। যে গুটিকয় দোকান এ দেশে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতির ভালো বইগুলো নিয়ে আসে সেখানেও অগ্নিমূল্য। কিন্তু পাঠক কম থাকায় এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসার পাট উঠিয়ে দিচ্ছে, যারা এখনো আছে তারাও টিকে থাকছে কায়ক্লেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বইমেলায় পশ্চিমবঙ্গের ভালোমানের বইয়ের আমদানি হতে পারত একটা কার্যকর বিকল্প।
এদিকে বইমেলায় যারা পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের প্রবেশাধিকার চাইছেন তাদেরকে নির্বিচারে ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে- যা বিপজ্জনক। বর্তমান অবস্থায় যারা এ দেশে ভারতীয় বৃহৎ পুঁজির আগ্রাসনের পক্ষে সরকারি, প্রশাসনিক, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে কাজ করছে তাদেরকে ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কিন্তু যারা মনে করেন যে, এ দেশের পাঠকদের মনের উৎকর্ষের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের ভালো বইয়ের সাথে পরিচয় ঘটা প্রয়োজন এবং এই কারণে সেগুলো বইমেলায় সহজলভ্য করা উচিত, তাদের সাথে ভারতীয় পুঁজির পক্ষ সমর্থকদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই প্রবণতা বিপজ্জনক এ কারণে যে এতে সত্যিকারের ‘ভারতপন্থী’র সাথে এই দেগে দেয়া ‘ভারতপন্থী’ একাকার হয়ে বাংলাদেশে ‘ভারতপন্থা’র প্রকৃত চেহারাটা অস্পষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশি বই বলে একাট্টা অভিন্ন প্রকৃতির কোনো বই নেই, সেটা নেই পশ্চিমবঙ্গেও। এ দেশে যেমন সমাজ, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি নিয়ে উন্নত মানের বইয়ের পাশাপাশি আছে বস্তাপঁচা মোটিভেশনাল বইয়ের রাজত্ব, আছে সস্তা মানের ও দুর্বল অগভীর ভাষায় লেখা গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বই, পশ্চিমবঙ্গেও ভালো-খারাপ মিলিয়ে বিভিন্ন ধারার বই আছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশে ভালো বইয়ের অনুপাত কিছুটা কম। যারা অভিযোগ করছেন যে বাংলাদেশের বুকস্টলগুলোতে এ দেশের বই হটিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বই রাজত্ব করছে তারা এটা ভেবে দেখেন না যে, হয়তো সেই সস্তা মানের জনপ্রিয় ধারার একই বই পশ্চিমবঙ্গেও ভালো বইগুলোকে দোকানের তাক থেকে বহিষ্কার করছে। সুতরাং ভালোমন্দের দ্বন্দ্ব সীমান্তের এপার-ওপার দুই জায়গাতেই আছে।
যারা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের লেখক-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে ‘বাবু সমাজে’র লোকজন বাংলাদেশের সাহিত্যকে হেয় করছেন, এ দেশের বই সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং এর প্রতিবাদেই ওখানকার বইও যাতে এ দেশে ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে তাদেরকে বলা দরকার, ওপারে যারা এ কাজ করছেন তারা আসলে বাংলাদেশে ভারতীয় বই-বিরোধীদেরই কাউন্টারপার্ট, ভাইবেরাদর। আমাদের এ দেশের ভারতীয় বই-বিরোধী ভ্রাতৃগণ ওপারে গেলেও ঠিক তাদের মতোই বাংলাদেশ-বিদ্বেষী আচরণ করতেন, কেননা এটাই তাদের স্বভাবজাত প্রকৃতির অংশ। বিষয়টা স্রেফ তারা বেড়ার কোন পাশটাতে অবস্থান করছে সেই বিবেচনা। আমরা যারা বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের ভালোমানের সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের প্রবেশাধিকার চাই তাদের সাথে ঐ লোকগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে ঘৃণা-ছড়ানো এরা দুইটি গ্রুপ আসলে পরস্পরের ঘৃণায় জ্বালানি সরবরাহের কাজ করে উভয়ের গলার আওয়াজটাকেই শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে।
আরেকটা ভিন্ন প্রসঙ্গের কথা বলে শেষ করি। গত ৩ মার্চ শুক্রবার পঞ্চগড়ের আহমদনগরে আহমদদিয়া মুসলিম জামাত সম্প্রদায়ের বার্ষিক ধর্মীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের ওপর হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুর করে তাদের সমাবেশ পণ্ড করেছে একটা গ্রুপ। সহিংসতায় দু’জন মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে। এর দায় এখন পর্যন্ত কেউই স্বীকার করে নি। তবে বাংলাদেশে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বিরূপ প্রচারণা থেকে শুরু করে তাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা এবং তাদেরকে ‘কাদিয়ানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকার কর্তৃক অমুসলিম ঘোষণার দাবি অনেকদিন থেকেই জানিয়ে আসছে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাওয়া প্রতিক্রিয়াশীল কয়েকটি সংগঠন। অথচ কাউকে মুসলিম বা অমুসলিম ঘোষণা করা আধুনিক রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের খাওয়া-পরা সহ তাদের ইহজীবনের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং মানবিক বিকাশের সর্ববিধ ব্যবস্থা গ্রহণ, পারত্রিক বিষয়ে খবরদারি করা তার কাজের আওতায় পড়ে না। পাকিস্তান আমলে এই ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনীর রাজনৈতিক গুরু জামায়াতের মাওলানা আবুল আলা মওদুদী আহমদিয়াদের নিয়ে বিদ্বেষপ্রসূত বই লিখে ঐ সম্প্রদায়ের শত শত নিরীহ মানুষ হত্যার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন, যে জন্য সে দেশের আদালতে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় পর্যন্ত হয়েছিল; পরবর্তীতে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপে তা রহিত করা হয়। বাংলাদেশে মওদুদীর আদর্শিক উত্তরসূরী জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, খতমে নবুয়াত আন্দোলন সহ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বহু বছর ধরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ কামনা সহ তাদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর আক্রমণ পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে এখন অনেক সমস্যা। তার মধ্যে এই মুহূর্তে অন্যতম হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি, যা সীমিত আয়ের মানুষের জীবনের দফারফা করে ছেড়েছে। সামনে রমজান মাসকে উপলক্ষ করে পণ্যমূল্য রকেটের গতিতে বৃদ্ধি পাবে তা অতীতের রেকর্ড দেখে এখনই বলে দেয়া যায়। আরেকটা আলোচিত বিষয় হলো ভারতের বিজেপির দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত আদানি গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূল ও অসম শর্তে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি, যা কিনা বাস্তবায়িত হলে এ দেশের বিদ্যুৎখাত ভারতীয় পুঁজির করায়ত্তে তো চলে যাবেই, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্যের ফলে জনগণের জীবন আরেক দফা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী সংগঠন, বামপন্থী রাজনৈতিক দল সহ এ দেশের অধিকাংশ মহল এখন এই চুক্তির বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছেন, চুক্তি থেকে সরে আসার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ভারতীয় বড় পুঁজির কাছে নিজেদের স্থায়িত্বের জন্য দেশীয় স্বার্থ বর্গা দেয়া আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন সরকার খুব বড় কোনো চাপের সম্মুখীন না হলে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না। এই যখন অবস্থা তখন জনগণের দৃষ্টি ‘আদানি থেকে কাদিয়ানি’তে ঘোরানোর প্রচেষ্টায় যারা রত হয়ে নন-ইস্যুকে ইস্যুতে পরিণত করছে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর আক্রমণ সহ তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে ‘ভারতপন্থী’ বলা যায় কিনা? বাংলাদেশের মহান দেশপ্রেমিক ভারতীয় বই-বিরোধী বন্ধুগণ এ ব্যাপারে কী বলবেন?
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..