করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
কলকাতার লোকজনের কিছু ধারণা আমাকে পীড়া দেয়। যদিও সেখানে আমার প্রিয়জনদের অনেকেই আছেন। তারপরও বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা খুবই অনভিপ্রেত। তাদের ধারণা বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ভাবে একটি পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র। এখানে সাহিত্য-সংস্কৃতি’র চর্চা নেই বললেই চলে। এখানে মানুষেরা অসম্ভব রকম রক্ষণশীল। কারো কারো তো ধারণা এখানে তালেবান ধরণের ব্যবস্থা প্রচলিত। সেদিন কলকাতার একজন পণ্ডিত মানুষের কাছ থেকে যখন নতুন করে শুনলাম, তখনও তাই মনে হলো। বাংলাদেশের সাথে তার মোটামুটি যোগাযোগ আছে বলেই তিনি দুঃখ করে এগুলো বলছিলেন। তার কথাতে মনে হলো, কলকাতার মানুষের ধারণা বোধহয় অপরিবর্তনীয়।
এ রকম ধারণা নতুন করে হয়নি, পরম্পরা ধরেই প্রচলিত। আর প্রচলন করে গেছেন কলকাতার প্রয়াত বুদ্ধিজীবী মহল। উত্তর প্রজন্ম সেই ধারাবাহিকতাই ধরে রেখেছে। সম্ভবত এই প্রচলনের কারণ ছিলো তাদের দূরদর্শিতা। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন তাদের দম কমে আসছে, তারা বাংলাদেশের সাথে দৌড়ে হারতে চলেছেন। আর সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ বাংলা ভাষার নতুন রাজধানী হতে যাচ্ছে ঢাকা। সে কারণেই তারা এমন একটা ধারণা চালু করে গিয়েছিলেন নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে। কলকাতার নতুন প্রজন্মও অনেকটা সেই প্রচলনেই প্রচলিত।
নতুন প্রজন্মের কথাই বলি। কলকাতার নতুন প্রজন্মকে জানাই। এ দেশের প্রজন্মের প্রতিযোগিতা আপনাদের সাথে নয়। বাংলাদেশের নয়া প্রজন্মের প্রতিযোগিতার তালিকায় সর্বনিম্নে অবস্থান করছে বলিউড। অর্থাৎ প্রাক্তণ বোম্বে, হালের মুম্বই দেবীর নামে অলংকৃত মুম্বই। আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রতিযোগিতা ইউরোপ-অ্যামেরিকার সাথে। কলকাতার লাইফ স্টাইল নিয়ে বরং এখানের নতুন প্রজন্ম হাসি-ঠাট্টা করে। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি।
আর আমাদের সাহিত্যও এখন রবীন্দ্রনাথকে সীমানা মানে না। সংস্কৃতিও মিথ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক বাঁধন কেটেছে। আমাদের সাহিত্যের যাত্রাপথ এখন অবারিত। অবশ্য একটা ক্ষুদ্র অংশ রয়েছেন, যারা রবীন্দ্রনাথকেই স্কেল হিসেবে ধরে আছেন। এরা মূলত ধ্বংসপ্রাপ্ত জমিদার জমানার প্রজার মানসিকতা নিয়ে বাঁচেন। এদের না বলা যায় ঘাটকা, না ঘরকা। এরা ছাড়া আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি এখন মুক্তচিন্তার। সত্যিকার মুক্তচিন্তা যাকে বলে রবীন্দ্র রেসিজম পেরিয়ে সেই কালচারের যাত্রা। সব কালচারের সাথে নিজেদের মিলিয়ে দেখার চেষ্টা।
সেদিন ইউটিউবে পুরানো দিনের বাংলা গান শুনতে ও দেখতে গিয়ে নিচের মন্তব্য পড়ছিলাম। আমাদের দেশের কিছু তরুণ শিল্পী গেয়েছেন। আগেই বলেছি আমাদের এখানে রেসিজম নেই। কলকাতার পুরানো দিনের গান কিংবা রক এমনকি পাকিস্তানের ব্যান্ডগ্রুপ সব চলে এখানে। ওই তরুণ শিল্পীদের গানের নিচে মন্তব্যে কলকাতার একজন লিখলেন, ‘উচ্চারণ একেবারে আমাদের মতন’। এই যে উচ্চারণ বিষয়ে একটি ধারণাই কলকাতার পশ্চাৎপদতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাদের ধারণা ‘ঘটি’দের হালুম-হুলুম ভাষাই প্রমিত। মূলত প্রমিত বলে কি সত্যিই কোনো ভাষা আছে? নেই। আমরা সবার বোঝার জন্য যা গ্রহণযোগ্য মনে করি বা নির্ধারণ করি তাই প্রমিত। বলতে পারেন কমন ভাষা। এখন যদি পুরো পশ্চিমবঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের আঞ্চলিক ভাষাকে প্রমিত বলা হয়, রাষ্ট্র যদি বলে এই ভাষাতেই লিখতে হবে। তখন? তখন তো সেটাই প্রমিত। আঞ্চলিক ভাষার তবুও তো একটা অঞ্চল রয়েছে। হালুম-হুলুমের নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল নেই। বানানো একটা ভাষা। প্রাকৃতকে সংস্কারের নামে যে লবডঙ্কা প্রসব করা হয়েছিলো সংস্কৃত নামে, তেমনি আর-কী।
আমার কাছে ঢাকার আঞ্চলিক ভাষাকে অনেক প্রাণময় মনে হয়। কারণ এই ভাষায় যে নৈকট্য রয়েছে, হালুম-হুলুম প্রমিতে তা নেই। এই ভাষা এবং প্রতিটি উচ্চারণ আসে প্রাণের গভীর থেকে, মেকি কোনো ব্যাপার-স্যাপার নেই। হালুম-হুলুমে প্রচুর মেকি ব্যাপার রয়েছে, রয়েছে অভিনয় কলার প্রদর্শনী। না, বলছি না যে গান এবং সাহিত্যের সব জায়গাতেই আঞ্চলিক ভাষা-উচ্চারণ ব্যবহার করতে হবে কিংবা প্রমিতকে বাদ দিতে হবে। প্রমিতকে যেমন বাদ দেয়া যাবে না, বাদ দেয়া যাবে না আঞ্চলিকতাকেও। প্রতিটি ভাষারই আলাদা মাধুর্য রয়েছে, রয়েছে বৈচিত্র্য। যে বৈচিত্র্যই সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণ করে, সাহিত্যকে জোগায় প্রাণ।
শেষে আবারও বলছি, এ লেখা ভুলেও কলকাতাকে ছোট করার জন্য নয় বরং কলকাতার ভুল ভেঙে দেবার জন্য। কারণ কলকাতা আমার প্রতিবেশী। সেখানে আমার অনেক প্রিয়জনেরা থাকেন। খুব প্রিয়জনদেরও কেউ।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..