বাজিকর

সুদেব চক্রবর্তী
কবিতা
Bengali
বাজিকর

বিভাজ্য দুরত্বের ভেনচিত্র

তুমি → আমি কিংবা আমি ≠ তুমি
এই দুই সত্ত্বা নদীর X ও Y অক্ষ,
দুরত্বের গুগলি কাটাতে কোণ বরাবর
ছুঁড়ে দিলাম সাইন থেটা।

আমরা এখন ভগ্নাংশহীন পূর্ণ সংখ্যা;
{তুমি, আমি ডট ডট ডট}™
এই আমাদের পরমাত্মীক সেট- ব্লাকবোর্ড যাকে
প্রকাশ করে হার্টস চিহ্ন দিয়ে।

এবার পৃথিবীটাকে
মনে করা যাক ভূমি,
আমি দণ্ডায়মান লম্ব,
তুমি অতিভুজ।

এখন আর দুরত্ব নেই;
তার গায়ে লাগিয়ে দিয়েছি
মাছরাঙ্গার কলঙ্ক।

বাজিকর

আমি তো চ্যাং পুং করা শাং বংশীয় নাগড়!
অন্তঃপুরে রমনীদের কাছে শিখেছিলাম
ক্যাসিনোর যাবতীয় ফাটুস ফুটুস…

লোডশেডিংয়ের বাংলায় কে বসে আছো
সলিটেয়ার খুলে? সেট হয়ে থাকো—
উপসেট হবার জন্য মগজে চলছে
গরিষ্ঠ সাধারণ গুনিতকের লাল দৌড়।

স্পেডের টিক্কা জুটলেই চলে আসব
গ্যাম্বলিং টেবিলে- এসো পাঞ্চালী,
মিটিয়ে দেবো কুরুক্ষেত্রের সব অপমান।

হারানো দন্ত্যন ন-এর শোক

জীবন থেকে উড়ে গেছে দন্ত্যন ন,
জীব পড়ে আছে নত্ব-বিধানে ফেল মারা
আকাশপালিত মেঘের সংসারে।

মেঘের আকৃতি অনুস্বরের মতন,
দিদিমনিরা এসব বর্নকে রোজ ব্যাঞ্জন করে
পীথাগোরাসকেও ভুলিয়ে দেয় ত্রিভুজ অংকন;
ব্যাক বেঞ্চারের পেন্সিলের আগায় জমে থাকা
মেঘ চিপে জল বের করে আনে
একজন মাতাল দুপুর।
সেই জলে অক্সিজেন নেই- হাইড্রোজেনের বুদ্বুদে
খাবি খেতে খেতে জীব ঢুকে পড়ে
আকাশের অদৃশ্য লাইনে।

আকাশ বলে কিছু নেই- একটা শুন্যস্থান,
জীবনও কিছু নয়- একটা শুন্য ছাড়া;
শুন্যের মধ্যেই আটকে গেছে দন্ত্যন ন।

এভাবে আর কত?

রামের ভেতর শ্যাম
শ্যামের ভেতর যদু
যদুর ভেতর মধু
এভাবে আর কত দিন?

জলের ভেতর জীবন
জীবনের ভেতর স্বপ্ন
স্বপ্নের ভেতর দোষ
এভাবে আর কত রাত?

নিঃশ্বাসের ভেতর বিশ্বাস
বিশ্বাসের ভেতর বিষ
বিষের ভেতর ধোঁকা
এভাবে আর কত ক্ষণ?

ঘরের ভেতর মানুষ
মানুষের ভেতর ঈশ্বর
ঈশ্বরের ভেতর ভূত
এভাবে আর কত যুগ?

আমার ভেতর তুমি
তোমার ভেতর প্রেম
প্রেমের ভেতর মৃত্যু
এভাবে আর কত কাল?

হার-জিত

ঘুমকে রেসলিংয়ে ডেকে প্রশান্তির পরাজয় চাওয়া বালক সেই রাতে জিতে গেছিলো- আড়মোড়া ভাঙা বৃক্ষের মত হাই তুলতে তুলতে সে স্বীকার করেছিলো-

জিতে যাওয়া মানেই
জিতে যাওয়া নয়।

কোনো একবার ঘুমকে বিয়ে করতে চাওয়া এক অভিমানী মুখে পুরেছিলো বিষাদের হীরকচূর্ণ- জীবন থেকে পালানো অষ্টাদশী শিখিয়ে গেছিলো-

হেরে যাওয়া মানেই
হেরে যাওয়া নয়।

তোমার ষষ্ট ইন্দ্রিয় রোজ খেলেছে রংমিলান্তি খেলা,
সবাইকে টপকে সেই খেলায় জিতে যাওয়া প্রেমিকের খাতায় জ্বল জ্বল করছে নক্ষত্রমান।

এখন যখন রোজ রাতে চাঁদকে ঢেকে দাও লম্বাশ্বাসের আভায়- টেনে হিঁচড়ে বের করে আনো চাওয়া-পাওয়ার উদ্বৃত্তপত্র,
সেই প্রেমিকও তখন চাঁদের রেওয়ামিলে স্বীকারোক্তি লেখে- জিতে গিয়েও হেরে গেছি!

সুদেব চক্রবর্তী। কবি। জন্ম ১৯৮৭, বাংলাদেশের মাগুরা জেলায়। তিনি একটি অসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি সম্পাদনা করেন ছোট কাগজ 'গেরিলা'। প্রকাশিত বই: 'সংশয়ী প্রার্থনা' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৬), 'ঈশ্বর, পুঁজি ও প্রেম' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

শঙখচিল

শঙখচিল   অসীম নীলাভ শূন্যতায় নির্ভার মেঘপুঞ্জের মত উড়ছে শঙখচিল, শিল্পিত ছন্দে পাখায় গেঁথে শূন্যতার…..