বাদল মেঘের আলোয় (পর্ব ১২)

শাহনাজ হোসেন
গল্প, ধারাবাহিক
Bengali
বাদল মেঘের আলোয় (পর্ব ১২)

আগের পর্ব পড়ুন এখানে >>>

স্মৃতির পাতা থেকে উঠে এসে রায়না বাসার ভেতরে ঢুকে দেখলো পুলিশ অফিসার চলে গেছে আর ক্লান্ত কবির সোফায় বসেই ঘুমিয়ে গেছে। রুম থেকে একটা পাতলা কম্বল এনে কবিরের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল। ছেলের পছন্দসই ফ্রায়েড রাইস, প্রন বল, ভেজিটেবল আর চিকেন কেসুঊ সালাদ তৈরি করে লম্বা একটা হট শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসতেই অর্ক কলিং বেল বাজালো।

অলস দূটো দিন রান্না, খাওয়া, মুভি দেখা, কবিরের সময়মত ওষুধ পত্র দিয়ে চোখের পলকে কেটে গেল। রবিবার রাতে ডিনারের পর কবিরকে তার কোন ওষুধ কখন খেতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেল, কাল থেকে টানা ছয় দিন ওর আর্লি মর্নিং ডিউটি, সেই ভোর ছয়টায় যাবে আর ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। সামার বলেই সন্ধ্যা মনে হয়, উইন্টারে তো মাঝরাত মনে হয়। এই এক সপ্তাহ ডিউটি করে ওর টানা এক মাস ছুটি। এবারের ছুটিটা ওরা আলবার্টার বিভিন্ন লোকেশনে কাটাবে বলে ঠিক করেছে, কবে কোথায় যাবে, কোন শহরে কয়দিন থাকবে সেই অনুযায়ী হোটেল বুকিং সব কিছু মামুন করে দিয়েছে। মামুনের খুব ইচ্ছা ছিল ওদের সঙ্গে পুরোটা সময় কাটানোর কিন্ত বেচারা অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করতে পারেনি। তবে প্রথম দুদিন জেসপারে থাকার সময় সে রায়নাদের সঙ্গে সময় দেবে বলে কথা দিয়েছে।

হাসপাতালে কাজের চাপে পাঁচ দিন রায়না ওদের বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে কবিরের সঙ্গে কোন কথা বলতে পারেনি, শেষপর্যন্ত যাওয়ার আগের দিন রাতে জিজ্ঞেস করল যে এই কদিন সে একা থাকতে পারবে কিনা। গত পাঁচ দিনে কবিরের শরীরের তাপমাত্রা নেমে নরমালে এসেছে, রায়না প্রতিদিনই মাথার ড্রেসিং পাল্টে দিয়েছে, ক্ষত অনেকটা শুকিয়ে এসেছে, তব্দা ধরা ভাব কেটে এখন অনেকটা স্বচ্ছ চোখে তাকায়। রায়না আর অর্ক পনের দিনের জন্য ওকে রেখে বেড়াতে যাচ্ছে শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল- আমাকে নিচ্ছ না?রায়না জানে সবগুলো হোটেলে রুম বুক করা হয়েছে দুটো করে কুইন বেড সহ, কবিরকে নিয়ে গেলে থাকার কোন সমস্যা হবে না, কিন্তু ও নিজে থেকে কবিরকে যাওয়ার কথা বলতে চাচ্ছিল না। যেতে হলে কবিরের টুকটাক কাপড়চোপড় কেনাকাটা করতে হবে অথবা ওর বাসা থেকে নিয়ে আসতে হবে, রায়নার কোনটার জন্যই সময় নেই, অগত্যা সমস্যাটা নিয়ে মামুনকে ফোন করল। শুনেই মামুনের মেজাজটা তেতো হয়ে গেল, কেন ওকে এই লোককে নিয়ে এতো ভাবতে হবে? কিন্তু নিজের মেজাজ সামলে নিয়ে বলল ঠিক আছে কাল বিকেলে আমি দেখব কি করা যায়, কিন্তু তুই কি তাকে সঙ্গে নেবার আগে আর একবার ভেবে দেখবি? লোকে কিন্তু নানান কথা বলতে পারে, বিশেষ করে আমাদের বাঙ্গালীরা।

রায়না খুব হতাশ গলায় বলল জানি রে, কিন্তু আর কোন সমাধান মাথায় আসছে না, প্রতিবারই এমন কেন হয়, যখনই ভাবি এই বুঝি গুছিয়ে নিয়েছি তখনই আবার সব এলোমেলো হয়ে যায়।

মামুন জানে কবিরের সঙ্গে আবার দেখা হবার পর থেকে রায়নার ভেতর ভাঙচুর চলছে, শক্ত মেয়ে কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না, নাহ ওদের দেখা হবার ব্যাপারটা রনির করা ঠিক হয়নি।

চকচকে রোদেলা সকালে রায়না, অর্ক আর কবির জেসপারের পথে বের হলো, মামুন সকালে এসে ওদের মালপত্র গাড়িতে তুলতে সাহায্য করেছে। প্লান অনুযায়ী ওরা হিন্টনে গিয়ে নাস্তা সারবে। কবির অবাক হয়ে লক্ষ্য করল কি দারুন ইস্পাত কঠিন একটা মেয়ে তার কিশোর ছেলেকে নিয়ে রওনা হলো। আলাদা গাড়িতে মামুন ওদের সঙ্গে হিন্টনে নাস্তার টেবিলে যোগ দিল। দুটো দিন রায়না, অর্ক আর মামুন হইহই করে বিভিন্ন ঝরনা, লেক, ট্রেইলে ঘুরে বেড়াল, কবির যেন ওদের সঙ্গে থেকেও নেই। রবিবার বিকেলে মামুন ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে গেল। রাতের খাবারের পর ফেয়ারমন্ট জেসপার পার্ক লজের সুইমিং পুলের পানিতে মা-ছেলে কিছুক্ষন দাপাদাপি করার পর অর্ক রুমে চলে গেলেও রায়না স্টিম রুমে গিয়ে বসল, সুইমিং না করলেও কবির ওর সঙ্গে স্টিম রুমে বসে জিজ্ঞেস করল- তুমি কি মামুনকে পছন্দ করো? রায়না খুব অবাক হয়ে বলল এসব কথা জিজ্ঞেস করে শুধু শুধু ছুটির আনন্দটা নস্ট না করলেই কি নয়? ফিরে গিয়ে তোমার আর গওহরের মামলার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে, আপাতত সেটা নিয়ে ভাব।

একযুগ পর কবির বিষাক্ত তরঙ্গহীন, আনন্দময় উচ্ছল পনের দিন কাটালো, প্রতিটাদিন সে রায়নাকে কাছ থেকে দেখেছে আর ভেবেছে এই সুন্দর দিনগুলো ওর জীবনে চিরস্থায়ী হতে পারত যদি সে আরেকটু সাহসী হয়ে বাবা-মা আর আবদুল্লাহ সাহেবের বিরুদ্ধে যেতে পারতো।

ফিরে এসে রায়না হাসপাতাল আর অর্ক স্কুল নিয়ে নিজেদের রুটিনে ফিরে গেল। কবির ডাক্তারের নোট নিয়ে অফিস থেকে আগেই তিন মাসের ছুটি নিয়েছিল তাই বাসায় শুয়ে বসে কাটাতে লাগলো। গওহরকে আদালত তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে একটা রিহাব শেল্টার হোমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনমাস পর কবির অফিসে যাওয়া শুরু করতেই রায়না বলল- এবার মনে হয় তোমার নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিত। আহত চোখে তাকিয়ে কবির জানতে চাইল সে কি ওদের সঙ্গে থেকে যেতে পারে না? জবাবে রায়না জানালো সে শুধু তার বিপদের দিনে সাহায্য করেছে।

লঙ উইকেন্ড এর সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানালার পর্দাটা সরিয়ে তুষার সাদা বাইরেটা দেখে রায়নার মনটা খারাপ হয়ে গেল। গতকাল সন্ধ্যায় যখন হাসপাতাল থেকে ফিরছিলো তখনই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল, এখানকার বৃষ্টি বাংলাদেশের বৃষ্টির মতো না, বিশেষ করে শীতের শুরুর টা তো একেবারেই না। শীতের শুরুর টা স্রেফ ঠাণ্ডা বরফ গলা পানি। এরা বলে স্নো শাওয়ার, ঝিরঝির করে তুষার পড়ে আর অল্প প্লাস তাপমাত্রার জন্য মাটি ছোঁয়ার আগে গলে পানি হয়ে যায়। মন খারাপ দিনটা ভালো করার জন্য ছেলেকে নিয়ে বাইরে নাস্তা খাবে বলে পুরো দস্তুর নিজের শরীরের ওজনের চাইতে ৫ কেজি বেশী ওজনের কাপড়চোপড়, হাত মোজা, উলের টুপি, মাফলার, উইন্টার বুট চাপিয়ে সামনের দরজা দিয়ে বের হতেই আরেক বিড়ম্বনা। গত রাতে আগামি চব্বিশ ঘন্টার ওয়েদার রিপোর্ট চেক না করে শুধু বৃষ্টি দেখে গাড়ীটা গ্যারেজে না করে বাইরেই পার্ক করে তাড়াতাড়ি বাসায় ঢুকে পড়েছিল। রাতে যে এই পরিমাণে তুষার পড়েছে সেটা কল্পনাতেও ছিল না তার। কি আর করা আজকান চাবকান সহ লেগে পড়ল যুদ্ধে। ১৫ মিনিটের ধস্তাধস্তির পর পারকিং লট থেকে বের হয়ে যখন রাস্তায় উঠল তখন আরেক যুদ্ধ। রাস্তা আর রাস্তা নেই, তুষার সমুদ্র হয়ে আছে। শীতের শুরুর কয়েকটা দিন খুব কষ্ট হয় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে। গত সপ্তাহেই উইন্টার টায়ার লাগিয়েছে, তারপরেও মনে হচ্ছে কাদার উপর দিয়ে সাঁতার কাটছে। তো সাঁতার কাটতে কাটতে আই-হোপ এ পৌঁছে লাইনে দাঁড়িয়ে টেবিল পেয়ে নাস্তার অর্ডার দিয়ে ফেসবুকের আপডেট দেখতে গিয়ে প্রথম আপডেটটা দেখেই হাসি থামাতে পারল না, একজন সাদা সকালের ছবি দিয়ে ক্যাপশন দিয়েছে “ডেডদ্মন্টন”, শহরের নাম এডমন্টন সেখান থেকে ডেডদ্মন্টন। কথাটা খুব একটা মিথ্যা না, প্রতিটি দিন এখন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে কাটবে, একেকটা দিন হবে পাহাড়সম লম্বা।

নাস্তা শেষ করে বের হবার মুখে রায়না যে মেন্টাল রিহাব শেল্টার হোমে ভলান্টিয়ারি কাজ করে সেখান থেকে ফোন, গত রাতে একজন নতুন হোমলেস মহিলাকে সোশ্যাল ওয়ার্কাররা  দিয়ে গেছে, সে কি কারনে যেন চেঁচামেচি করছে  রায়নাকে একবার যেতে হবে। শেল্টার হোম থেকে যা বলল তাতে জানা গেল ফাইল অনুযায়ী এই মহিলা বাংলাদেশী অরিজিন এই জন্যই ওরা রায়নাকে ডেকেছে, শেল্টার হোম এর ওয়ার্ডেন যা বলল তার মানে করলে যা দাঁড়ায় তা হলো সে শেল্টার হোম এর সকালের নাস্তা নিয়ে ঝামেলা করছে, আবার সে তার নিজস্ব ভাষায় চিৎকার করছে বলে ওরা বুঝতে পারছে না সমস্যাটা কি। কি আর করা সাঁতার কাটতে কাটতে ছেলেকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে অগত্যা শেল্টার হোম এর পথে সাঁতার।

শেল্টার হোম এ গিয়ে যা শুনল তার মানে দাঁড়ায় নতুন আসা এই মহিলা সকালে নাস্তায় দেয়া পরিজ খেতে চাইছে না, সে যা খেতে চাইছে সেটা ওরা বুঝতে পারছে না। ঠিক কি চাইছে জানার জন্য রায়না ওয়ার্ডেনের সঙ্গে মহিলার রুমে ঢুকে চমকে উঠল, বিছানার উপর বাবু হয়ে বসে আছে গওহর।

গহরের সমস্যাটা বেশ জটিল, ওকে নিয়মিত সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করতে হবে, কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে সেটা শুরু হবে। প্রথমে রায়নাকে দেখে গওহর উত্তেজিত হয়ে তেড়ে এলেও পরে  তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আজকের মতো বিদায় নিয়ে বাসার পথে রওনা হলো। ইউনিভার্সিটি এভিনিঊ দিয়ে আসার সময় চোখে পড়ল এক এব্রোজিনাল দম্পতি তাদের ৬/৭ বছর বয়সী বাচ্চাটাকে নৌকার মতো একটা জিনিসে বসিয়ে টেনে নিয়ে চলেছে। শীতের সময় এতো কাপড়চোপড় পরে বাচ্চা কোলে করে হাঁটা অসম্ভব একটা ব্যাপার, তাই এই নৌকা। নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলো থেকে মনে হয় ইউরোপীয় এই দেশগুলো মনে হয় স্বর্গরাজ্য, কিন্তু সত্যি কথা হল অনেক ধনী মানুষরা ছাড়া এদেশের ৯০ ভাগ মানুষই আমাদের উপকূলীয় এলাকার মতো প্রতিনিয়ত প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে। আজকের মতো আর ভাবতে চায় না, এখন বাসায় ফিরে লম্বা একটা উষ্ণ পানির গোসল, ডাল-আলু ভর্তা-ডিম ভাজি দিয়ে গরম-গরম ধোঁয়া উঠা এক প্লেট ভাত আর নেটফ্লেক্সে মুভি এটাই রায়নার আজকের কাম্য। গরম-গরম ধোঁয়া উঠা ভাতের চিন্তা তাকে বাসার দিকে সাঁতার কাটতে উৎসাহিত করে তুলল।

বিকেলের দিকে রায়না কবিরকে ফোন করে জানালো গওহরের হোমে পৌঁছানোর কথা। কবির জানালো সে তার ল-ইয়ারের সঙ্গে কথা বলছে তার আর গওহরের আইনগত ছাড়াছাড়ির ব্যাপারে। কবির জানতে চাইল অনেক দিন সে অর্ককে দেখে না, আজকের রাতটা সে রায়নার বাসায় ওদের সঙ্গে কাটাতে পারবে কিনা। রায়না বলল ওরা বাইরে যাচ্ছে ফিরতে অনেক রাত হবে। রায়না জানে এখন কবির একটা ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, ওর নিজেকে বুঝতে কিছুটা সময় দরকার, এই সময়টা কবিরের একা একা থাকা দরকার ওর আর গওহরের সম্পর্কের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য।

রায়না হোমের সঙ্গে কথা বলে গওহরের মেডিকেল ফাইল দেখতে চায়, জানতে চায় কবির যে বলছে গওহর পুরনাঙ্গ মেয়ে না সেটা আসলে কতটুকু সত্যি নাকি বাংলাদেশের আর ইন্ডিয়ার ডাক্তারদের ভুল হয়েছিল, কাউন্সিলিং করলে কবির আর গওহর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন পেতে পারে কিনা। পরের সপ্তাহে গওহরের মেডিকেল ফাইল দেখে রায়না বুঝতে পারে কানাডা আসার পর নিজের অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে গওহর কোন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেনি অথবা কোন ধরনের  টেস্টও করেনি। গওহরের সাইকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলে শুরুতেই রায়না প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো করতে দিলো। টেস্ট রিপোর্ট হাতে পেয়ে রায়না চমকে উঠল, গওহর সম্পর্কে দেশে ডাক্তারদের ধারনা খুব একটা ভুল ছিল না কিন্তু উনারা এটা কখনোই বলেননি যে সঠিক পদক্ষেপ নিলে সে শুধুমাত্র সন্তানধারণ ছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে।

গওহরের স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপনে অক্ষমতার জন্য দায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারন টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন সিন্ড্রোম, জেনেটিক মিউটেশনের কারনে পুরুষত্ব বৈশিষ্ট্য  রক্ষাকারী হরমোন টেস্টোস্টেরন কাজ করতে না পারলে পুরুষের বাহ্যিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে পরোক্ষভাবে নারী শরীরে রুপান্তরিত হয়। এদের ক্লাইটোরিস একটু এনলারজড হয়, এটা মুলত অগঠিত পুরুষাঙ্গের পরিবর্তিত রুপ, এদের অণ্ডকোষ থাকে কুঁচকির গোড়ায় অথবা তলপেটের ভেতরে।  দীর্ঘদিন ধরে গওহর তার এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঠীক কোন চিকিৎসা পায়নি, পরবর্তীতে যেন ক্যান্সার না হয় সেজন্য অবিলম্বে গওহরের ডিস্প্লেসড টেস্টিস যেটা তার তলপেটের ভেতরে আছে সেটা ফেলে দিতে হবে, হরমোন চিকিৎসা শুরু করতে হবে যেন অস্টিওপোরোসিস না হয়, সেক্সুয়াল ফাংশন মেইন্টেইন করার জন্য ভেজাইনোপ্লাস্টি অপারেশনের মাধ্যমে যোনিপথ তৈরি করে দেয়া যেতে পারে, শুধুমাত্র জরায়ু না থাকার কারনে কখনো পিরিয়ড বা বাচ্চা হবে না।

টেস্ট রিপোর্ট পেয়ে রায়না চিফ মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে গওহরের কেসটা ওকে ওর রিসার্চের অংশ হিসেবে ব্যাবহার করার অনুমতি চাইল একি সঙ্গে ওয়াল্টার মেকেঞ্জি রিসার্চ সেন্টারে গওহরের চিকিৎসার এরেঞ্জমেন্ট করে কবিরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করল।

গওহরের মতো মানুষরা সমাজে খুব একটা সমাদৃত হয় না, অথচ এরা সমাজেরই অংশ, এদের এই জেনেটিক ডিসঅর্ডারের জন্য এদের কোন হাত থাকে না, কেউ এদের কষ্ট বুঝে না। গওহরের বাবা-মা ছলনার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে না দিয়ে তাকে শিক্ষিত করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারত, কবির অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক না করে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারত।

দীর্ঘ এক বছর কাউন্সেলিং, অপারেশন, চিকিৎসার ফলে গওহর নিজের অবস্থান মেনে নিয়ে স্বাভাবিক মানসিক ভারসাম্য ফিরে পেয়েছে, যে মেন্টাল রিহাব শেল্টার হোমে এই এক বছর সে ছিল সেখানে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে, সেই সঙ্গে রায়না, তার সাইকোলজিস্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কার আর রিহাব হোমের যৌথ সহযোগিতায় একটা ডে-কেয়ার হোমে কাজ করছে। শুধুমাত্র অনেক চেস্টা করেও রায়না গওহরের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন কন্টিনিউ করার জন্য কবিরকে রাজি করাতে পারেনি।

চলবে…

শাহনাজ হোসেন (ঝিনুক)। গল্পকার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের দিনাজপুর শহরে। শিক্ষা জীবন ঢাকা শহরে, সেই সময় সংস্পর্শে আসেন দৈনিক বাংলার সাপ্তাহিক বিচিত্রার একঝাঁক মেধাবী মানুষের সঙ্গে; পরিচিত হতে শুরু করেন লেখালেখির সঙ্গে। এরপর শিক্ষাজীবন শেষ করে দীর্ঘ ১৫ বছর...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ