ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। পর্ব-৪
ভোর পাঁচটার সময় কুয়াশা মোড়া দিনাজপুরে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে যখন বাসার সামনে এসে রায়না নামল তখন ওর বাবা আর মা দুজনেই ফজরের নামাজের পর কোরানশরিফ পড়ছেন, ভাইয়া গত সপ্তাহে বিয়ে করার জন্য জাপান থেকে ছুটিতে এসেছে, কান মাথা মাফলারে জড়িয়ে মার সব্জি বাগানে হেঁটে হেঁটে দাঁত ব্রাশ করছে আর ছোটু নতুন অফ হোয়াইট কাভার পরানো লাল লেপ মুড়ি দিয়ে শীত ঘুমে আচ্ছন্ন, আর তিন সপ্তাহ পরে কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এম এস করার জন্য চলে যাবে। পাশের বাসার টিউবয়েল চাপার আওয়াজ আসছে, ওদের মুরগীর খোয়াড়ের মোরগটা মাঝে মাঝে অস্থির ডাক ছাড়ছে বাইরে বের হওয়ার জন্য।
ওকে রিক্সা থেকে নামতে দেখেই ভাইয়া হইহই করে উঠল, মা দেখে যাও বুড়ি এসে গেছে বলতে বলতে এগিয়ে এসে রিক্সার পাদানি থেকে একহাতে ওর ব্যাগটা নামিয়ে অন্য হাতে ওকে জড়িয়ে ধরল। বাবা মা কোরানশরিফ বন্ধ করে উঠে আসতে আসতে ভাই বোন বারান্দায় উঠে এল। ভাইয়ার হইহই শব্দে ছোটু চোখ কচলাতে কচলাতে লেপর ওম ছেড়ে উঠে এল। মুহূর্তেই সারা বাসা চাঁদের হাট। সদা শান্তশিষ্ট শহীদ সাহেব ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানিয়ে সন্তানদের এতো সুন্দরভাবে বড় করার জন্য স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ হলেন।
মা রান্নাঘরে নাস্তা বানানোর জন্য ঢুকতেই ভাইয়া বলল, বুড়ি চল সাইকেল নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তিনজনকে সাইকেল নিয়ে বেরতে দেখে মা পইপই করে বলে দিলেন দেরি না করতে। তিনজনে চলল ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের দিকে, ভাইয়ার প্ল্যান মতো বাসস্ট্যান্ডের কাছে নজরুল ভাইয়ের দোকানে সাইকেল রেখে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভিকু দাদার বাসায় গিয়ে ভাইয়া হাঁক ছাড়ল, ভিকু দাদা বাইরে আসো, ভিকু দাদা চটের ব্যাগে কেটে বেছে পরিষ্কার করা দুই ডজন চা-পাখি আর ছয়টা বক নিয়ে বেরিয়ে এল। আনন্দে চিৎকার করে রায়না ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল। পাশে থেকে হিংসুক ছোটু বলে উঠল ভিকু দাদা কিন্তু আমার আবিস্কার। রায়না ছোটদাকেও জড়িয়ে ধরল।
পরের পুরো সপ্তাহটা রায়নারা ভাইয়ার বিয়ে বৌভাত নিয়ে হুড়োহুড়ির মধ্যে কাটালো, কবিরকে নিয়ে ভাবার কোন অবসরই পেল না। সব অনুষ্ঠান শেষ করে ভাইয়া ভাবী জাপান ফিরে যাবার জন্য ঢাকায় রওনা হতেই কবির ওর চিন্তার মাঝে ফিরে এল। কি সিদ্ধান্ত নিবে বুঝতে পারছে না, শেষে সময়ের হাতে সব ছেড়ে দেয়া ঠিক করল। থার্ড ইয়ারের ক্লাস শুরুর শিডিউল পেতেই হোস্টেলে ফিরে এল। সোনারগাঁয়ের সেই দিনের পর ইচ্ছা করেই কবিরকে এড়িয়ে চলছিল, কিন্তু ছুটিতে বাড়ি যাবার দিন মোহাম্মদপুরে বাসস্টপে পৌঁছে দেখে কবির ওর জন্য অপেক্ষা করছে, ও শুধু বলতে পেরেছিল ওর আরেকটু সময় দরকার। তিন সপ্তাহ পরে হোস্টেলে ফিরে রুম পরিষ্কার করে, গোসল সেরে দুপুরের খাবার একটু আগেভাগে খেয়েই রাজ্যের ক্লান্তিতে বিছানায় গড়িয়ে পড়তেই ঘুম। দারোয়ান মামার ডাকাডাকিতে ঘুম চোখ মেলে দেখে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পার হয়ে প্রায় সন্ধ্যা। গেস্ট অপেক্ষা করছে শুনে তাড়াতাড়ি চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে ওড়নাটা কাঁধের উপর ফেলে গেটে এসে দেখে চোখমুখ শুকনা করে কবির দাঁড়িয়ে আছে, মানুষটাকে দেখে মায়া লাগল। রায়না কাছে এসে দাঁড়াতেই বলল চল ফুটপাতে হাঁটি, ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল। মিনিট পনের নীরবে হাঁটার পর একটা টঙ দোকানের সামনে এসে কবির বলল চল চা খাই, ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে পরপর কয়েকটা চুমুক দিয়ে নিরবতা ভেঙ্গে কবির বলল –
-রায়না এ কদিন অনেক ভেবে দেখলাম, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না, তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই আমার মন বলেছিল আমার আর মুক্তি নেই, এ কটা দিন তোমাকে না দেখে কিভাবে গেছে আমি তোমাকে বুঝাতে পারব না।
-মাথা নিচু করে কিছুক্ষন বসে থেকে আধ খাওয়া চায়ের কাপটা ফুটপাতে নামিয়ে রেখে রায়না বলল সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমার ফিরতে হবে।
-গেটের ভিতর পা বাড়াতেই কবির বলে উঠল কিছু বললে না?
-আমার কাছে আমার বাবা মার স্বপ্ন পুরন নিজের চাওয়া পাওয়ার চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
– আমি তোমার ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যাও ভেতরে যাও।
রুমে এসে রায়না হাঁফ ছাড়ল, নিজের সিদ্ধান্তটা জানাতে পেরে অনেক হালকা লাগছে।
পরদিন থেকে ক্লাসের চাপে নিঃশ্বাস নেবারও সময় পেল না। শুক্রবার সকালে একটু দেরী করেই ঘুম থেকে উঠল, পড়া শেষ করতে গিয়ে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল ঘুমাতে যেতে। এক মগ চা আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে বিছানায় বসে “পার্থিব” এর পাতায় চোখ রাখতেই দারোয়ান মামার ডাক- আপনের বন্ধুরা আইছে। সারা ছুটিতে বাঁদরগুলোর কোন পাত্তা ছিল না, একসঙ্গে বেড়ে উঠা বন্ধুরা হঠাত করেই বড় হয়ে গেছে, ওরা সবাই রাঙ্গামাটি বান্দরবন ঘুরে এল, রায়নাও যেতে চেয়েছিল কিন্তু একসঙ্গে সবাই নাকচ করে দিয়েছে, বলেছে এবারের ট্যুরটা শুধু ছেলেদের, ওকে বলেছে ছুটিটা বাড়ীতে গিয়ে কাটা বিয়েশদি হয়ে গেলে চাইলেই আর বাড়ি যেতে পারবি না। রায়নার খুব মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু মার কথা শুনে ওদের উপর থেকে রাগ চলে গেছে, মা বলেছে ওরা তোমার ভালো বন্ধু, চাইলেই ওরা তোমাকে সঙ্গে নিতে পারত, পরে পথে কোন বিপদআপদ হলে সরেও পড়তে পারত, কিন্তু ওরা তোমার খারাপ চায় না বলেই তোমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, এরকম বন্ধুরা সারাজীবন তোমার পাশে থাকবে।
গেটে গিয়ে দেখে গত পনের দিন বনবাদাড়ে ঘুরে বাঁদরগুলোর চেহারা আসলেই বাঁদরের মতো হয়েছে, তারমধ্যে রনি আবার মুখে দাড়ির জঙ্গল নিয়ে এসেছে। ওদের উপর কপট রাগ দেখানোর প্ল্যান নিয়ে আসলেও দেখেই হাসি চলে এল। বরাবরের ফাজিল রনি আবার বলল
-দোস্ত দেখ আমাদের সঙ্গে গেলে তোরও এমন দাড়ি হয়ে যেত, তখন আমরা কেমন করে তোর বিয়ে দিতাম বল? দশটা টাকা দে তো জঙ্গলটা উজাড় করে আসি, মামুনকে তোর গেটে জমা রেখে গেলাম, রেডি হয়ে আয় আমাদের নাস্তা খাওয়াবি, ভুখা নাঙ্গা মানুষদের একবেলা পেটভরে খাওয়ালে সওয়াব পাবি, ফাইনাল পরীক্ষা আমাদের দোয়ায় ভালোভাবে উতরে যাবি।
-বুঝলাম তোরা ভুখা তোদের খাওয়াতে হবে কিন্তু কাউকেই তো নাঙ্গা দেখছি না, আর রনি তুই তো রীতিমতো জুলু হয়ে এসেছিস, বান্দরবনে কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি?
-কি যে বলিস, এইসব তো তোর রণরঙ্গিণী মূর্তি থেকে বাঁচার জন্য করা, চিন্তা করিস না আমরা তোকে নেইনি ঠিকই কিন্তু চাঁদা দিয়ে তোর জন্য গিফট আনতে ভুলিনি, এই নে তোর প্যাকেট, এখানে দেখিস না রুমে নিয়ে দেখ তোকে কোন বিশ্বাস নাই শেষে এখানেই থাপ্পড় মারবি।
– মামুন তুই এখানেই দাঁড়া আমি রেডি হয়ে আসি, আর শিম্পাঞ্জি তুই তোর জঙ্গল পরিষ্কার করে ক্যান্টিনে চলে আয় আমাদের ওই খানেই পাবি।
রুমে এসে প্যাকেট খুলে দেখে চাকমা তাঁতে তৈরি দারুন সুন্দর সবুজ বর্ডার দেয়া লাল রঙের একটা ওড়না। ঠিক করল ওড়নাটা এখনই পরবে, সাদা চুড়িদার সাদা কামিজ আর তাঁতের ওড়নাটা পরে চোখে হালকা কাজল বুলিয়ে বেরিয়ে এল। ছুটির দিনের সাড়ে এগারটায় ক্যান্টিন গিজগিজ করছে, ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও হসপিটালে থাকা রোগীদের স্বজনদের ভিড়ে সরগরম। ওরা কোনার দিকের ফাঁকা একটা টেবিল পেয়ে বসে পড়ল, মিনিট দশেক পরে কবির সহ রনি হাজির। এক সপ্তাহ পরে কবিরকে দেখে রায়না একটু অস্বস্তিতে পড়ল। কবির বলল তার এক বন্ধুর মার অপারেশন হয়েছে তাঁকে দেখেতে এসেছিল, বের হওয়ার মুখে রনির সঙ্গে দেখা, ওরা ক্যান্টিনে নাস্তা করবে শুনে ওদের সঙ্গে চা খেতে এসেছে। চা-নাস্তা শেষে কবির পরের শুক্রবার ওর কলাবাগানের চিলেকোঠার বাসায় পিকনিক করার প্রস্তাব দিল, রায়নার ছাগল বন্ধুরা হইহই করে সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত মেন্যু ঠিক করে ফেলল।
পরের সপ্তাহে রনি মামুন সকাল সকাল হাজির, উনারা পিকনিক করতে যাবেন, রায়না কিছুটা গাঁইগুই করে শেষ পর্যন্ত ওদের পীড়াপীড়িতে রওনা হলো। কবিরের ছয়তলার চিলেকোঠা বাসায় সিঁড়ি বেয়ে উঠে ওদের জিভ বের হয়ে যাওয়ায় দশা। কবির যে বাসাটায় থাকে সেটা আসলে ছাদের সঙ্গে লাগানো এক রুমের একটা ইউনিট, বড় একটা রুমে একদিকে পরিপাটী করে গুছানো বিছানা, দরজা দিয়ে ঢুকেই এক সেট সোফা পেতে রাখা, বিছানার একদিকে একটা মিউজিক সিস্টেম, অন্যদিকে রান্নাঘর আর বাথ্রুমে যাবার দরজা। বাসাটার কোন বারান্দা নেই তার বদলে পুরো ছাদটা ব্যাবহার করা যায়। ছাদের দিকের দরজায় দাঁড়িয়ে রায়না মুগ্ধ হয়ে গেল, পুরো রেলিং এর ধার দিয়ে টবে করে সাদা রঙের স্নোবল, মেরুন আর হলুদ চন্দ্রমল্লিকা আর নানা রঙের বড় বড় গোলাপের সমারোহ। ঘরের দেয়াল ঘেঁষে ছাদে বড় রঙ্গিন ছাতার নিচে একটা গোল টেবিল আর চারটা চেয়ার পাতা। পেছন থেকে কবির বলল আমার শখের বাগান, আমাদের বাগেরহাটের বাড়িতে আমার মায়ের অনেক সুন্দর ফুল বাগান আছে, সবচেয়ে সুন্দর বাসায় ঢুকার মুখে গেটের উপর বাগানবিলাসের গাছটা, মোটামুটি সারা বছর গাঢ় গোলাপী ফুল দিয়ে গাছটা ভরে থাকে।
রনি মামুন দুজনেই ছাদে বেরিয়ে এসেছে। রনি বলল, কবির ভাই ফুল দিয়া তো পেট ভরব না, আমি আবার খিদা সহ্য করতে পারি না, নাস্তার কি অবস্থা? যেহেতু পিকনিক, আমারা নাহয় আপনার ছাদ বাগানে বসেই খাব কি বলেন?
একটু লাজুক হেসে কবির বলল যে সে নিচে গিয়ে নাস্তার জন্য খাবার কিনে নিয়ে আসবে এক্ষুনি। রনি রান্নাঘরে গিয়ে চিৎকার, হায় আল্লাহ আপনার তো দেখি আলু ছাড়া আর কোন বাজার সদাই নাই, কেমনে পিকনিক হবে? চলেন আমরাও যাই, নাস্তার সঙ্গে একবারে বাজার করে আসি, বাসায় চা পাতা চিনি দুধ আছে না সেটাও কিনে আনতে হবে? কবির খুবই অপ্রস্তুত বোধ করে, কারন আসলেই ঘরে কিছুই নাই, ব্যাচেলর বলে সপ্তাহের দিনগুলো অফিসে যাওয়ার আগে নিচের হোটেলে নাস্তা সেরে অফিসে যায়, দুপুরে সুমনের ডিব্বা সার্ভিসের খাবার আর রাতে আরেকটা ডিব্বা সার্ভিস থেকে খাবার আসে, ছুটিছাটায় বাড়ী গেলে বাজারে যায়।
তিনজনে মিলে বাজার সেরে ফিরে এসে দেখে রায়না রান্নাঘরে থাকা আলুগুলো সুন্দর করে কেটে মচমচে আলুভাজি করে রেখেছে। সেদিন সবাই মিলে সারাদিন দারুন মজার পিকনিক করল, যদিও বেশিরভাগ কাজ রায়নাকেই করতে হয়েছে, বাকিরা ওকে সাহায্য করতে গিয়ে আরো ঝামেলা পাকিয়েছে, শেষ ভরসা হিসেবে কবিরের বুয়াখালা এসে ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে। দিন শেষে কবির পরের সপ্তাহেও ওর বাসায় সবাইকে আসতে বলেছে।
প্রথম প্রথম কয়েক সপ্তাহ সবাই খুব মজা পেলেও ধীরে ধীরে রনি আর মামুন পড়াশুনার চাপে ছুটির দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আসাতে আর আগ্রহ পেত না, রায়না না করতে পারে না কবিরকে তৃপ্তি করে খেতে দেখে, বেচারা সারা সপ্তাহ বাইরের খাবার খেয়ে ছুটির দিনটা মনে হয় অপেক্ষা করে ঘরের খাবারের জন্য। না বললেও আস্তে আস্তে সে যে কবিরের জন্য মায়া বোধ করছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে, কিন্তু কি করবে ইদানীং মনে হয় সে নিজেও সপ্তাহ শেষে এই রান্নাবাটি খেলাটার জন্য অপেক্ষা করে।
দেখতে দেখতে ওদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় হয়ে এলো, চোখ বন্ধ করলে মনে হয় এইতো সেদিন ওরা ঢাকায় পড়তে এলো। কবিরের বাড়ী থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, ওর ছোট ভাই আমেরিকা চলে যাবে এম এস করতে, যাওয়ায় আগে তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে যেতে চায়, কবির অপেক্ষা করছে রায়নার জন্য, রায়নার সাফ কথা ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে চাকরীতে ঢুকার আগে সে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। এদিকে কবির বাবা- মা কে এতোই ভয় পায় যে তাদের নিজের পছন্দের কথা এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি।
পরীক্ষার চাপে গত একমাস ওরা কেউ কবিরের বাসা তো দূরে ওর অফিসের ছায়া পর্যন্ত মাড়াতে সময় পায়নি। ইদানিং সরকারী ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের সেলারি প্যাকেজ বেশ আকর্ষণীয় হওয়াতে অনেকেই বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করছে, কবিরের ম্যানেজার গতমাসে মোটা অঙ্কের বেতন, গাড়ী, ফ্লাট কেনার লোন ইত্যাদি সহ এরকমই এক বেসরকারি ব্যাংকে জয়েন করেছেন, জয়েন করার পর জানিয়েছেন যে উনি উনার মুরুব্বী, ওই ব্যাংকের এক পাওয়ারফুল ডাইরেক্টরকে কবিরের কথা বলেছেন, কবির ওর রেজুউমি নিয়ে যেন উনার সঙ্গে দেখা করে। রায়নাদের পরীক্ষার সময়টাতে কবির বেসরকারি ব্যাংকে যোগাযোগ, ভাইবা, দুধাপ প্রোমোশন, মোটা অঙ্কের বেতন, গাড়ী সহ অফার লেটার পাওয়া, জনতা ব্যাংক থেকে চাকরি ছাড়া, নতুন জায়গায় জয়েন করা নিয়ে দম ফেলার সময় পায়নি। শেষ পরীক্ষা দিয়ে রায়না একটা রিক্সা নিয়ে টি এস সি তে এসে কবিরের অফিসে ওর টেবিলে অন্য একজনকে দেখে একটু অবাক হল, পিয়ন বশির ভাই ওকে দেখে এগিয়ে এসে বলল-
আরে আফা আপনি? কবির বস তো অন্য অফিসে, আপনি জানেন না?
রায়না একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ফাইনাল পরীক্ষার চাপে অনেকদিন যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি, মনে মনে রাগ লাগছে এই ভেবে যে সে নাহয় সময় পায়নি কবিরতো ওকে ব্যাপারটা জানাতে পারতো। বশির ভাই ওকে কবিরের নতুন অফিসের ঠিকানাটা লিখে দিলেও বের হয়ে নীলক্ষেতের দিকে হেঁটে রওনা দিল, মন খারাপ হলে ও সাধারণত এভাবে হাঁটতে শুরু করে তাতে সময়ের সঙ্গে মন শান্ত হয়ে যায়। নীলক্ষেতের কাছে আসতেই মনে হলো অনেকদিন কোন গল্পের বই কেনা হয়না, বই দেখার জন্য মোড়ের কাছের ফুটপাতের দোকানগুলো ওর সবচাইতে পছন্দ, অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে অখন্ড “লোটাকম্বল” কিনলো, পিছনের তেহারির দোকানের ঘ্রান ঐদিকে টানছে, কি করবে হলে গিয়ে খাবে না তেহারি খাবে ভাবতেই পিছন থেকে মাথায় চাঁটি, কিরে পেত্নী পড়তে পড়তে তো আসলেই পেত্নী হয়ে গেছিস, চল তেহারি খাই। রনি আর মামুন কখন পিছনে এসেছে টেরই পায়নি, কিন্তু ওদের দেখেই ওর মন ভালো হয়ে গেছে।
পড়াশুনার চাপে অনেকদিন ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি তাই বিকেলে পার্থিব বইটা শুরু করে দশটা নাগাদ ঘুমানোর জন্য বিছানায় গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঝুমকি আর হেমাঙ্গ ওর মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকল, শেষমেশ বিছানা ছেড়ে বইটা নিয়ে আবার বসল, ঝুমকি হেমাঙ্গের দারুন পরিমার্জিত প্রেম আর কৃষ্ণজীবনের ভেতরের শিশুটাকে পড়তে পড়তে প্রায় ভোর হয়ে গেল। ফজরের নামাজ পড়ে বিছানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রা দেবী প্রকট হলেন, গভীর ঘুমে রায়না স্বপ্নে দেখছে দারোয়ান মামা ওকে ডাকছে আর বলছে গেটে ওর গেস্ট এসেছে।
চলবে..
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..