প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের মত উঠোনে শীতকালে বসে ওরা। নোটন নোটন পায়রার মত গল্প করে ঘন্টার পর ঘন্টা। কি এত গল্প ওদের। প্রতিবেশিরা হিংসে করে বলে, লোকদেখানি ঢলানি মাগি।আসলে ওরা নন্দনপুকুরের পাড়ে তেঁতুলগাছের নিচে ঘর বেঁধেছে পুতুলখেলার মত। কনকের স্বামী দাসপাড়ার মণি রূপচাঁদ।কিশোরির দল রূপকে দেখলেই গল্প করার ছলে একটু কাছে আসতে চায় একটু স্পর্শ চায় ভালবাসার। যদি বল কেন, কি কারণ। তা বলা মুস্কিল। এক একটা সুপুরুষ আসে, দেখে আর জয় করে মন। কারণ নাই বা কোন পাপ নাই। ফুলকে তো তোমার আমার সকলের ভাল লাগে কারণ ছাড়াই। রূপ বলে, ও আমার কনকচাঁপা।
কনক এর আসল নাম কিন্তু সবিতা। সবিতা দেবি বলেই সবাই জানতো কিন্তু স্বামী তাকে আদর করে ডাকে কনকচাঁপা বলে। কনকচাঁপা আবার সবিতা দেবি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি শিক্ষিত কিন্তু তার শিক্ষার কোনো বড়াই নেই সে মনেপ্রাণে তার আচরণের মাধ্যমে তাকে দেখলেই বোঝা যায় কত বড় শিক্ষিতা তিনি। কনক বলে, তোমার কাজ করার দরকার নাই। আমি বাবুদের বাড়ি কাজ করি। খেয়ে পড়ে চলে যাবে আমাদের। রূপ বলে, তাই আবার হয় গো। লোকে নিন্দে করবে। বলবে, গতর বাগাইছে বৌকে পাঠায় পরের বাড়ি। তোমাকে কাজ করতে হবে না গো। আমি রোজগার করব গতর খাটিয়ে।
কনকের গায়ের রঙ চাঁপা ফুলকে হার মানায়। মসৃণ পেলব তার মুখমণ্ডল। জোড়ায় যখন যায় বাবুপাড়ার লোকগুলো বলে, রূপ বটে দুজনার। না খেয়েও কি করে হয়?
কোন কোনদিন রূপের রোজগার ভাল না হলে উপোস যায়। ওদের জমি নাই। বাবুদের দুবিঘে জমি ওরা দুজনে দেখাশুনো করে আর খায়।আজ শ্রাবণমাসের সন্ধ্যাবেলা রাতের অন্ধকারে কে যেন কালি ঢেলে দিয়েছে। নিকষ অন্ধকারে কনক আর রূপ শুয়ে আছে মাটির মেঝেতে। ভীষণ এক মেঘগর্জনে বৃষ্টি দাপিয়ে বেড়াল কনকের শরীর জুড়ে। তারপর ফাগুন এল। ফুলে রঙে ভরে গেল প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে কনকের পেট। রূপ কনকের পেটে কান পেতে শোনে আগামীর ছটফটানি। জমির বাঁজা রূপে গ্রাম ছাড়ল রূপ। মুম্বাইয়ের এক হোটেলে কাজ পেল। কনক পোয়াতি হয়ে একা একা পাড়ার বুড়িমাসির কাছে থাকে। বুড়িমাসির ঘরদোর নাই। রূপ যাওয়ার আগে সুদে টাকা ধার করে ব্যবস্থা করে গিয়েছে দুজনের।
তারপর দেশজুড়ে প্লেগের প্রকোপে দিশেহারা হল মানুষ। স্বামীজীর ডাকে আমাদের ভারতবর্ষে এলেন ভগিনী নিবেদিতা তিনি রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে শুরু করলেন তার দেখাদেখি যুবকরা ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে শুরু করল। তবু প্লেগ এত বড় মহামারী যে হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিল নিমেষে। দেশ কে দেশ গ্রাম থেকে গ্রাম আজার হয়ে গেল মুহূর্তে। কনকের চিন্তা বাড়ল। রূপ কেমন আছে। বেঁচে আছে তো।
বুড়িমাসি বলে, চিন্তা করবি না। যার কেউ নাই তার….
মহামারীর প্রকোপে গ্রামে গ্রামে মড়ক লাগলো। আজাড় হয়ে গেল পৃথিবীর ভান্ডার। কত লোক যে ছটফটিয়ে মরে গেল তার হিসেব রাখে কে?
কনকের কোলজুড়ে এল আলো। রূপচাঁদের ভালবাসার আলো। কনক এখন কাজে যায়। কনকের রূপ দেখে পঞ্চায়েতের পার্টির লোক বলল, আমাদের দলে নাম লিখা। তোকে এবার জেতাব পঞ্চায়েতের ভোটে। বুড়িমাসি বলল, তু যা। আমি তোর ছেলেকে মানুষ করব।
ভোটে জিতে কনক আজ মেম্বার হয়েছে পঞ্চায়েতে। তবে তারজন্যে রূপের সম্পত্তি বাঁধা দিয়েছে কনক। দলের মোড়ল একরাতে তার নরম মনের কোণে লুকিয়ে থাকা রূপকে চুরি করেছে। ছ্যাঁচড়া চোর আর লম্পট একই কথা,বলে বুড়িমাসি। তোকে রূপের এই আলো কে জ্বলিয়ে রাখতে হবে জীবনজুড়ে। রূপের মত যেন বাইরে খাটতে যেতে না হয়।
কনক বুড়িমাসির কথা শুনে বুঝেছিল এই বাঁজা জমিগোলাতে প্রাণ আনতে হবে। সে মাইকে এখন ভাষণ দেয়, জমিগোলা বাঁজা ফেলে না রেখে ফসল ফলাও আমার রূপসোনারা। বাবুদের জমিতে তোমরা চাষ কর। বাইরে যেও না। বাঙালি হয়ে থেকে যাও নিজের গ্রামে। আমরা বাংলার লোক পথ দেখালে এগিয়ে আসবে হাজার হাজার গ্রাম।
কনকের কথায় কাজ হয়েছিল। শয়ে শয়ে গ্রামের ছেলেরা চাষকাজে নেমে পড়েছে উৎসাহে। পঞ্চায়েত থেকে প্রধান হয়ে কনক চাষিদের লোনের ব্যবস্থা করে দিল সবাইকে। সবুজে সবুজে ভরে গেল বাঁজা মাঠ।
কনক আজও খুঁজে বেড়ায় রূপকে। মাসিবুড়ি বলে, “অতিবড় সুন্দরী না পায় বর… ”
কনক সবুজ মাঠে যায়। ফাঁকা নীল আকাশে মাথা তুলে কনক বল, রূপ তুমি কোথায়। আমার কথা শুনছ। তুমি ফিরে এস বাংলার সবুজ বুকে।ধীরে ধীরে কাল কেড়ে নেয় রূপ হয়ত করোনা বা প্লেগের রূপে। কনক এখন মাঠে যায়। ছেলেকে চাষ করতে দে’খে মন ভরে যায় মায়ের। অতি সুক্ষ্ম তরঙ্গের স্পন্দন শোনার অপেক্ষায় মৌন হয়ে অপরূপ প্রকৃতির, কোলে আশ্রয় নিতে চায় কনক ।চাওয়া,পাওয়ার উর্ধ্ব জগতে ভাসতে ভাসতে ছাই হোক নশ্বর দেহের অহংকার। স্থূল পদার্থ নিয়ে পরমাণু বিজ্ঞানীরা অপেক্ষায় থাকেন না।অণু পরমাণু নিয়েই তাঁরা ব্যস্ত।তা না হলে হিমালয়ের চূড়া কিংবা জমি জায়গা নিয়েই তারা টানাটানি করতেন বেশি।
আকাশকে আমরা পৃথিবীর মানুষ, স্বার্থপরের মত খন্ড খন্ড করেছি।এটা কাটোয়ার আকাশ, ওটা দিল্লীর, ওটা রাশিয়ার আকাশ। অখন্ডতার বাণী আমরা ভুলে যাই।আকাশ চিরদিন অখন্ডই থাকে।তাকে খন্ডিত করার অকারণ অপচেষ্টা না করাই ভালো।তবু কাঁটাতার হয়,সীমানা ভাগ হয়। অদ্ভূত মূর্খতার অন্ধকারে ডুবে আছে প্রাণীকুল।
আলোর অন্তরে বাদ্য বাজে, ‘অনন্ত নাদ’ এর ভেরী।সূক্ষ্ম তরঙ্গে মিশে যায় তার অস্তিত্ব,ভুলে যায় তার অবস্থান। এ অনুভূতি ঝর্ণার মত,কবিতার মত,ভালোবাসার মত, নদীর প্রবাহের মত। জোর করে সে গতি পাল্টায় না। সৃষ্টির সবাই ভয়ে কাজ করি। অস্তিত্ব বিনাশের ভয়ে।পৃথিবী ঘোরে ভয়ে,তা না হলে সে ধ্বংস হবে। সূর্য তাপ দেয় ভয়ে, তা না হলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সৃষ্টি মানুষের প্রশ্বাস,স্থিতি মানুষের ক্ষণিক ধারণ ,প্রলয় মানুষের নিশ্বাস।
কনকের ছেলে শিক্ষিত। সে মাকে বলে, আলোর অনুসন্ধানীর ভয় নেই, তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই নেই। লোভ নেই, তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নেই।অকাল বার্ধক্য নেই। আছে শুধু আনন্দ,ছেলেমানুষি,বোকামি,সরলতা,সোজা পথে হাঁটার অখন্ডতার সোজা রাস্তা…
কনকের ছেলে আলো। সে বাবার খোঁজে মায়ের কথা না শুনে বেরিয়ে গেল গ্রামছেড়ে। কেরালা সে একটা চাকরি পেল এবার সে চাকরি করে মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে লাগল আর খোঁজ করতে লাগল বাবার কিন্তু কোথায় পাবে তার হদিশ তো কেউ জানে না তবু কোন সূত্র ধরে সে বাবাকে খুজবে সেই বুঝে উঠতে পারল না ধীরে ধীরে বয়স বাড়তে লাগলো আলো আজ 40 বছরের হল।
এদিকে গ্রামে মা অনেক বয়স হয়ে গেছে আর তার খাট বা ক্ষমতা নেই তার বুড়িমা কবে জানো মরে গেছে আর একা একা মা গ্রামে থাকে তার মন খারাপ করে কিন্তু উপায় নেই আর তো বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না সেভাবে এবার গ্রামে ফিরে যাব।
দুই
বিরাজুল মানুষ হয়েছে তার চেনা জগতে। ভোরের আজানের সঙ্গে সঙ্গেই আম্মির মুখ দেখে শুরু হতো তার দিন। সারাদিন স্কুলে কাটতো ছেলেবেলার জগত।
মনে পরে স্কুল থেকে এসেই ব্যাট হাতে বেরিয়ে পরতো ক্ষেত্রপালতলার মাঠে। জাহাঙ্গীর,মতিউল্লাহ,সিরাজ,ইজাজুর,সামিম, সুদীপ্ত,বাবু,ভম্বল,বিশ্বরূপ,মিলু,অধির সব বন্ধুরা জড়ো হতো ক্রিকেট খেলবে বলে। খেলার শেষে বসে গল্প করতো। প্যান্ট না পরে লুঙ্গি পরে মাঠে এলে তার মাথায় তুলে দিতো লুঙ্গি বন্ধুর দল। লুঙ্গি পরে খেলার অসুবিধা। বলতো,বিরাজুল। হোলে, বল লেগে একবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলো এক বন্ধু। ধীরে ধীরে সকলের প্যান্ট পরে আসার অভ্যাস হয়ে গেলো। ম্যাচ খেলতে যেতাম অনেক জায়গায়। একবার বিল্বেশ্বর গ্রামের টিমকে হারিয়ে জিতেছিলাম এক হাঁড়ি রসগোল্লা। সুধীনবাবু ধরিয়ে দিলেন বিরাজুলের হাতে ক্যাপটেন হিসেবে। সবাই ভাগ করে খেলো। পুরস্কারের এই অভিনবত্বে অধুনা কানাডা বাসী মিলুদা খুব খুশি হয়েছিলেন।
বিরাজুল আজ রূপাকে বলছে তার ছাত্র জীবনের কথা,
তখন ১৯৮০সাল। আমরা দশজন বিল্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। একটা রেকর্ড রেজাল্টে সবাই খুশি হয়েছিলেন সেবার। তারপর জীবন যুদ্ধে সবাই আলাদা হয়ে গেলো। কে যে কোথায় পড়তে গেলো কোনো খবর পেলাম না। কিন্তু পুরোনো অনেক ক্লাসমেটের সঙ্গে যখন দেখা হয়, মনে পরে যায় পুরোনো দিনের কথাগুলো।
বিরাজুল ববলে চচলেছে,একবার স্কুল থেকে ছাত্রদের নিয়ে বেড়াতে গেছিলেন স্কুলের শিক্ষক মহিমবাবু। ঘুরে এসে অজয় নদীর ধারে যখন এলাম, তখন রাত্রি দশটা বেজে গেছে। নদীতে বর্ষার উদ্দাম গতি। কানায় কানায় ভর্তি জল। মহিমবাবু চিন্তায় পরে গেছেন, কি করে চল্লিশটা ছেলে নদী পার হবে। হঠাৎ আমরা অবাক হয়ে চেয়ে দেখলাম পাঁচজন সাহসী ছেলে হাফ প্যান্ট পরে খালি গায়ে লাফিয়ে পরলো জলে। আমরা সবাই হায় হায় করে উঠলাম ভয়ে। কিন্তু আমরা ভুলে গেছিলাম এই বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো নিজের প্রাণের বিনিময়ে ওই লালমুখো বাঁদরদের কাছ থেকে। কিছেক্ষণের মধ্যেই দেখলাম, দুটো নৌকো নিয়ে তারা ছেলেদের নদী পার করছে। মহিমবাবু বললেন,মাঝিরা এলো না? শ্যাম বললো,স্যার চিন্তা করবেন না। ওদের ঘুমের ব্যাঘাত না করে আমরা নৌকো নিয়ে এসেছি। ওরাও জানে শ্যাম থাকলে কোনো ভয় নেই।
মহিমবাবুর চোখে জল এসে গিয়েছিলো। দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন দামাল পাঁচ ছাত্রকে।
আর ছোটোবেলা থেকে মুসলিম পাড়ার ছেলে মেয়ের সঙ্গে খেলতো রূপা। রূপে,গুণে অতুলনীয়া। সে বিরাজুলের সঙ্গে খেলতো বেশি। বিরাজুলকে না দেখলে ভালো লাগতো না রূপার। কেন ভালো লাগতো না, সেকথা বুঝেছিলো অনেক পরে। বালিকা বয়সের ভালোলাগা, ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিলো।
ধীরে ধীরে স্বর্ণলতার মতো বেড়ে উঠলো শরীর ও মন। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কে কোথায় ছিটকে গেলো কে জানে? শুধু বিরাজুল,আর রূপা কাকতালীয় ভাবে একই কলেজে রয়ে গেলো। দুজনেই সুরেন্দ্রনাথ ল কলেজে পড়ে। সল্টলেকে একটা কোয়ার্টারে তারা ভাড়া থাকে। ল পাশ করে তারা দুজনেই যাবে বিলাত। হায়ার স্টাডির জন্য।
হিন্দুর মেয়ে মুসলিম ছেলের সঙ্গে থাকে,শোয়,খায় একথা প্রচার হতে বেশি সময় লাগলো না। রূপা বললো,জীবনটা আমাদের। কে কি বললো যায় আসে না। বিরাজুল ও রূপার রেজেষ্ট্রী ম্যারেজ হয়ে গেলো। দুজনে এখন শোয় একসাথে। কন্ডম ব্যবহার করে। ছেলেপুলে এখন নেবে না। বিরাজুল বলে,প্রথমে দুজনে ভালো আয় করবো। তারপর ছেলেপুলে নেবো।
গ্রামে একটা রসের আলোচনা এই দুজনকে নিয়ে। ওরা জাত দেখে, মানুষ দেখে না। ওরা পোশাক দেখে হৃদয় দেখে না, বলে বিরাজুল। বিরাজুলও আর বাড়ি যায় না। ওদের বাড়ির অ নেকেই এই বিয়ে মন থেকে মানতে পারে নি।
রূপাও বিরাজুল একদিন বিদেশে পাড়ি দিলো
কানাডার টরেন্টো শহরে বাসা নিলো। দুজনেই কাজ পেয়ে গেলো। মাইনে মোটামুটি। তার সঙ্গে পড়াশোনা। রূপা দেখেছে, শরীর বেশিদিন ভালো লাগে না। ও বিরাজুলের মন দেখেছে। একটা সুরের সাধককে দেখেছে ওর মধ্যে, যে সুরের সাধনা না করেও মানুষের মনসুরের সন্ধানে ব্যস্ত। ওদের দুজনেরই এখন দেশের কথা মনে পরে।
বিরাজুল ভাবে,আব্বা তাদের নবাবের মতো মানুষ করেছে। তাকে দেখেই শিখেছে, মানুষের হৃদয়ধন খোঁজা। আব্বা বলতেন,মন বড় রাকবি। মন বড়ো থাকলেই দেকবি মানুষের হৃদয়ে আল্লার অধিষ্ঠান। হৃদয় হলো মসজিদ আর মানুষ হলো আল্লার দূত। কোনো মানুষই ছোটো নয়। যদি একটা মানুষের মনে জায়গা করতে পারিস, তাহলেই তোর জীবন ধন্য হয়ে যাবে।
আম্মির আদরে বিরাজুল মানুষ হয়েছিলো। সেই আম্মিকে ছেড়ে তার মন খারাপ করে। কিন্তু জীবনে সাধনার জন্য অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকলে পৃথিবীটা অচেনা হয়ে যাবে।
রূপা বাবার খুব আদরের একমাত্র মেয়ে। মা,বাবাকে রাজী করিয়ে সে বিরাজুলের সঙ্গে ঘর ছেড়েছে। মা,বাবাকে সে বলেছে,চিন্তা কোরো না, আমি ওর সঙ্গে সুখে থাকবো। আর ওর সঙ্গেই আমার সাধনার সুতো জড়িয়ে আছে।
যে বিষয়ে রূপার অসুবিধা হতো পড়ার সময়, বিরাজুল সেই অসুবিধাগুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতো রূপাকে। ফলে রূপাকে পড়ার সময় ঝামেলায় পরতে হতো না। দুজনের সুন্দর এক বোঝাপড়া ছিলো।
রূপার মনে পরছে পিউ তার বান্ধবী,আর সে ন্যাশানাল পাড়ায় একটা বাড়িতে ভূত দেখেছিলো।
পিউ স্কুটি চালিয়ে বাজারে গেছিলো। বাবাকে বাজার করতে দেয় না। বাবা পুজো নিয়ে ব্যসত থাকেন। আজ পিউ এর পায়ে একটা পাথর লেগেছে। ব্যাথা হচ্ছে। রাস্তার ঢালাই এর পাথরগুলো রাক্ষসের মতো দাঁত বের করে আছে। নামেই ঢালাই। আর হবে না কেন। যারা চেয়ার দখল করে বসে আছে তারা ঘুষ খাবে। তবে অনুমোদন দেবে রাস্তা তৈরি করার। তারপর যে তৈরি করবে সে খাবে। তারপর তলানি। এতে আর কি হবে।
ভিতরে ঢুকতেই পিউ এর বাবা বললো,কি হলো পায়ে। পিউ বললো,ও কিছু না,একটু লেগেছে। মা বললো,যা করবি একটু দেখে শুনে করবি।
পিউ ব্যাগ রেখে তার প্রিয় বান্ধবী রূপাকে ফোন করলো। ছোটোবেলা থেকে ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। একবার ওরা ভূত দেখেছিলো।
একবার ন্যাশানাল পাড়ার একটা বাড়িতে ভূত দেখেছিলো দুজনে। একটি বাচ্চা মেয়ে সামনে এসে বললো,একবার এসো আমাদের বাড়ি। আমার মা ডাকছে। রীতা বললো,তোর মা কে তো চিনি না।
মেয়েটি বললো,একবার এসো না।
ওরা ভিতরে গিয়েছিলো। তারপর দেখলো মেয়েটা আর ওর মা হাত বাড়িয়ে নারকোল গাছ থেকে নারকোল পেরে আনলো। তারপর এক কিল মারলো। নারকোল ভেঙ্গে গেলো। তারপর রক্ত হাতে বললো,খা, খা।
ভয়ে ওরা ছুটে বাইরে এলো। রীতা ও পিউ মামুদপুরের মেশোকে বলেছিলো ঘটনাটা। তিনিও ভয়ে পালিয়েছিলেন। মেশো তার আত্মীয় অমলকে ঘটনাটা বলেছিলো। অমল বন্ধুদের বলেছিলো। পিউ এর মনেআছে অমল ও তার বন্ধুরা সবাই আড্ডা মারছে। এমন সময় অমল বলে উঠলো, জানিস ন্যাশানাল পাড়ার বনের ধারে যে তিনতলা লাল বাড়িটা আছে সেখানে নাকি ভূত দেখা গেছে।
মিহির বললো, তাহলে তোএকদিন সবাই মিলে গিয়ে দেখে আসতে হবে।
পিউ আর রূপা দোকান গেছিলো। সে বললো,টোটোনদা সত্যি আমরা দেখেছি ভূত নিজের চোখে। যা করবে সাবধানে কোরো আর পারলে ঘনাদাকে সঙ্গে নিও। ওর সাহস আছে।
টোটোন বলে উঠলো, তোরা খুব আজগুবি কথা বলিস। আরে টোটোন থাকতে ভূতের বাপও বাড়ি ছেড়ে পালাবে। চল তাহলে একদিন দেখাই যাক। আমরা সামনের অমাবস্যায় ওই বাড়িতে যাবো। ফিষ্ট করবো। মাংস আর লাল জল। বুঝলি কিনা। জমবে ভালো।
অমল বললো, শোন আসল কথাটা বলি। আমার মামুদপুরের মেশো একদিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো। বিকালে ওই বাড়ির দিকে বেড়াতে গেছিলো। একট বাচ্চা ছেলে কাঁদতে কাঁদতে মেশোকে বললো, আমার খিদে পেয়েছে। মামা জিলাপি কিনে ছেলেটাকে বললো, যাও খেয়ে নাও।
ছেলেটি নাছোড়বান্দা। বললো, আমার বাবাকে দেখবে এসো। কতদিন খেতে পায়নি। এসো দেখে যাও।
মেশো সরল লোক। মায়া হলো। ভিতরে গিয়ে দেখলো বাবা নয়। এক ভয়ংকর স্কন্ধকাটা ভূত। বললো, আমার গলা কেটে সবাইকে মেরে আমার সংসার শেষ করেছে তোর মতো একটা পাষন্ড। আমি কাউকে ছড়বো না। কাটা মুন্ডুটা হাতে। সেই মুন্ডুই কথা বলছে।
মেশো ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে। এবার ভবলীলা সাঙ্গ ভাবছে মেশো। এমন সময় ছেলে্টি সামনে এসে বললো, বাবা এই লোকটি ভালো। জিলাপি কিনে দিয়েছে। এই বলে ছেলেটি উড়তে উড়তে জিলাপি খেতে লাগলো। উড়ন্ত অবস্থায় ছেলেটির মা বললো, এঁকে ছেঁড়ে দাঁও। যাঁও যাঁও। জিঁলাপি খাঁও।
তখন সুযোগ বুঝে মেশো পালিয়ে এসে বাঁচে।
টোটোন ভয় লুকিয়ে বাতেলা দিলো অনেক। বললো, ঠিক আছে আমরা কুড়িজন একসাথে যাবো ওই বাড়িতে। দেখা যাবে। কত ধানে কত চাল। তবে ঘনাকে সঙ্গে নিস বাবা।
চালাক টোটোন। তাই দল বাড়াচ্ছে। ঠিক হলো কুড়িজন বন্ধু একসাথে যাবে। অনেক ছেলের মাঝে নিশ্চয় ভূত আসবে না।
মাঝের কয়েকদিন যে যার কাজ নিয়ে থাকলো। তারপর এসে গেলো সেই অপেক্ষার অমাবস্যা। দিনের বেলায় সবকিছু কেনাকাটা সেরে সবাই দুরু দুরু বুকে রাতের প্রতিক্ষায়। কিন্তু কেউ ভয় প্রকাশ করছে না। বাড়িতে কেউ বলে নি। সবাই বলেছে, আজ একজন বন্ধুর জন্মদিন। রাতে বাড়ি আসবো না। ওখানেই সব ব্যবস্থা।
রাতের বেলা ন্যাশানাল সিনেমা হলের কাছে সবাই একত্র হলো। সবাই চললো এবার সেই অভিশপ্ত বাড়িতে। টোটন চুপ। কোনো কথা নেই। অমল বললো, কি রে টোটোন, চুপ মেরে গেলি কেন? কথা বল।
টোটোন বললো, এই দেখ আমার অস্ত্র। একটা মস্ত নেপালা বের করে দেখালো। তারপর বললো, ভূতের দফা রফা করবো আজই।
কথায় কথায় বাড়িটা চলে এসেছে কাছে। অমল বললো, চল ভিতরে ঢুকি। ঘনা বললো, তোরা যা, আমার কাজ আছে। তবে অই বাড়িতে ভূত আছে। পিউ আর রীতা আমাকে বলেছে। যাস না বাড়ি যা। ঘনাকে কেউ রাজী করাতে পারলো না। ঘনাকে পিউ আড়চোখে দেখলো। মনে মনে ভাবলো, কি সুন্দর চেহারা ছেলেটার।
দুজন লোক পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। বললো, মরতে যেচো কেনে ওই বাড়িতে? খবরদার ওই দিকে মাড়িয়ো না। গেলেই মজা টের পাবে।
এখন আর ফেরার কোনো ব্যাপার নেই। হুড়মুড় করে সবাই ঢুকে পড়লো বাড়ির ভিতরে। তারপর মাকড়সার জাল, ধুলো পরিষ্কার করে রান্না শুরু করলো। এখনও অবধি কোনো ভৌতিক কান্ড ঘটে নি। ভয়টা সকলের কমে গেছে।
টেটোন বললো, অমল তোর মেশোর গাঁজার অভ্যাস আছে নাকি?
সকলের সামনে অমল একটু লজ্জা পেলো। তারপর ভাবলো, বন্ধুরা একটু ইয়ারকি মারে। ওতে ইজ্জত যায় না।
টোটোন এক পিস কষা মাংস নিয়ে লাল জলে মন দিয়েছে। সে এই দলের নেতা। সবাই অলিখিত ভাবে তাকে মেনে নিয়েছে নেতা হিসাবে। নেতা কষা মাংসতে কামড় মারার সঙ্গে সঙ্গে কষ বেয়ে লাল রক্ত। বোতলে রক্ত ভরতি। সবাই দেখতে পাচ্ছে কিন্তু নেতা দেখতে পাচ্ছে না। নেতাকে রক্ত মাংস খাওয়া ভূতের মতো লাগছে।
অমল কায়দা করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। নেতা নিজের রূপ দেখে ভয়ে বু বু করতে লাগলো। সবার প্রশ্ন এত রক্ত কোথা থেকে এলো?নেতা অজ্ঞান হয়ে গেলো।
তাকে জল দিয়ে জোরে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে লাগলো বন্ধুরা। তারপর জ্ঞান ফেরার পরে আবার ভয়ের পালা। রাত তখন দশটা। দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। আর চার দেওয়ালের গা বেয়ে নেমে আসছে রক্তের ধারা। এত রক্ত যে মেঝে দিয়ে গড়িয়ে সকলের পা ভিজে যাচ্ছে। নেতা এবার জোড় হাত করে বলছে, আমাদের ছেড়ে দাও, এই কান মুলছি, নাক মুলছি আর কোনোদিন এই বাড়িতে ঢুকবো না। দয়া করো আমাদের দয়া করো।
তখন আড়াল থেকে কথা শোনা গেলো, তুই তো নেপালা এনেছিস। সবাই দেখলো নেপালা নিজে থেকেই শূণ্যে ভাসছে। তারপর ভূত হাজির। নেপালা একবার ভূতের মাথা কাটছে আর জোড়া লেগে যাচ্ছে। বলছে, আমাকে কাটবি। মাথা কাটবি। তোর মাথা কাটি। নেতা ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে।
তখন অমল বললো, আমরা তোমার সাহায্য করবো। কে তোমাকে মেরেছে বলো। আমরা পুলিশকে জানাবো। সে শাস্তি পেলে নিশ্চয় তোমার আত্মার শান্তি পাবে। কথায় কাজ হলো সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেলো। রক্ত মুছে গেলো। আর একটা ছবি হাওয়ায় উড়ে এলো।
টোটোন ছবি দেখে বললো, একে আমি চিনি। নিশ্চয় একে পুলিশে দেবো। আমরা কুড়িজন সাক্ষী দেবো। তারপরে পুলিশ সব দায়িত্ব পালন করেছিলো। সেই বাড়ি এখন পুলিশ থানা। চাকরি পেয়েছে কুড়িজন সাহসী ছেলে। যাদের চেষ্টায় খুনী ধরা গেছে। আর অতৃপ্ত তিনটি আত্মা মুক্তি পেয়েছে।
ঘনা ভূতে বিশ্বাস করে। ও সহজ সরল ছেলে। ঝামেলার মধ্যে ও নেই। আর ওর বাড়ি অনেক দূরে। সেদিন ঢোল সারাতে এসে ওদের সঙ্গে দেখা।
ঘনার সাথে এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের ছোটোবেলায় দু একবার কথা হয়েছে। কিন্তু খুব বেশি নয়। তারপর পরিচয় হওয়ার পর জানতে পেরেছে দুজনেই। প্রায় দশ বছর পরে ওদের দেখা। প্রথম দর্শনে কেউ বুঝতে পারে নি। পিউ হঠাৎ করে ঘনাকে ভালোবাসে নি। ভালোবাসার সুপ্ত বীজ পিউ এর অন্তরে গেঁথে গেছিলো ছোটোবেলা থেকেই। সে ঘনাকে চিনতে না পারার ভান করেছিলো।
ঘনা ভাবে চিনতে না পারাই ভালো। ওরা ধনী।তারপর আবার উঁচু জাত। ভালোবাসলে সমানে সমানেই ভালো। সমাজের নিয়ম আগে।
মাঝে মাঝে ঘনা জাল নিয়ে অজয় নদীতে মাছ ধরতে যায়।
আবার বিরাজুল ভাবে,দেশের বন্ধুদের কথা, তার আত্মীয় স্বজনের কথা।
এত কথা জেনেও কোনোদিন মুষড়ে পরেনি তার মন। ফুটবল খেলতে ভালোবাসতো সে। সারা বিকেল ছুটে ছুটে সে আনন্দ মাখতো সারা গায়ে। আলো নামের আলো মনের মেয়েটা জেনেশুনে তার সমস্তকিছু দিয়েছিলো দুদিনের আনন্দের দেবদূতকে।
তার সঙ্গে ঘুরতে গেছিলাম মুর্শিদাবাদের শালার। গঙ্গার ধারে গ্রামটি। ছোটো হলেও আমরা বন্ধুরা প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি। কারো বাড়ি স্নান করা, কারও বাড়িতে খাওয়া দাওয়া।কারওবাড়িতে গান বাজনা করেই দিন চলে যেতো। সন্ধ্যা নেমে এলো জীবনে। রাত হওয়ার আগেই পাড়ি দিলো মন ভাবসাগরে।
কি করে একটা সাজানো বাগান তছনছ হয়ে যায় কালের প্রবাহে। বন্ধু অমিত বললো। তবু মানুষের এত অহংকার। তারা মনে করে মৃত্যু বোধহয় তাদের ভুলে গেছে। সে ভোলে না। হঠাৎ চলে আসে। সময় থাকতে অন্তত বাড়ির কাছের মানুষের সেবা করা ভালো।
অতনুর মনে পরে, বিরাজুল, রাজু আর তার দশজন বন্ধু পুজো বাড়ির শ্যাওলা পড়া দেয়াল ঘেঁষে বসতো। পুরোনো কারুকার্যের মুগ্ধতা ছাড়িয়ে ভালোবাসার গান বিরাট বাড়িতে প্রতিধ্বনি শোনাতো। বন্ধুদের মধ্যে চারজন মেয়ে ছিলো। দেবীকা বলতো, বন্ধু শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ করিস না। ভালো শোনায় না। কোনোদিন রাজু বা বিরাজুল তাদের মেয়ে মনে করেনি। বন্ধু তো বন্ধুই। তার আবার ছেলে আর মেয়ে কি?বলতো রাজু। একই কাপে তারা কফি খেতো পুজো বাড়ির পাশের কফি হাউসে । ভাগে কম হলে রূপসী বলে বন্ধুটা রাস্তায় লোকের মাঝে দীনেশকে ফেলে মারতো খুব।তাদের বন্ধুদল বিপদে,আপদে কাজ করতো গ্রামে। তাই তাদের অনেকেই সম্মান দিতো। আর আদরের এই মার খেতেই দুষ্টুমি করে তার ভাগেরটা কম রাখতো। অভিভাবকরা কোনোদিন ছেলে মেয়েদের মেলামেশায় বাধা দিতেন না।
দরজা ঘাটের বাঁধানো ঘাটে পানকৌড়ি আর মাছরাঙার কলা কৌশল দেখে পার হয়ে যেতো অবাধ্য সময়। অন্ধকারে ফুটে উঠতো কালীতলার সার দেওয়া প্রদীপ। ঘরে ঘরে বেজে উঠতো শঙ্খধ্বনি। হাতগুলো অজান্তে চলে যেতো কপালে। তারপর হাত পা ধুয়ে ভাইবোন একসাথে বসে সরব পাঠের প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যেতো। কে কত জোরে পড়তে পারে। একবার বুলু কাকা বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি শুনতে পেলেন অতনু পড়ছে, ন্যাটিওনাল মানে জাতীয়, ন্যাটিওনাল মানে জাতীয়। ঘরে ঢুকে কাকা বললেন,ন্যাটিওনাল নয় ওটা ন্যাশনাল। ঠিক করে পড়। অতনু জোরে পড়ছে বলে উচ্চারণটা ঠিক হলো। তারপর পড়া হয়ে গেলে একান্নবর্তী পরিবারের সবাই উঠোনে খেতে বসতো। আলাদা করে কোনো শিশুকে খাওয়া শিখতে হতো না,জোর করতে হতো না। সবার খাওয়া দেখে ধীরে শিখে যেতো নিজে খাওয়ার কায়দা।
শোওয়ার পালা আরও মজাদার। বড় লেপে তিন ভাইয়ের ঢাকা। কেউ একটু বেশি টানলেই খেলা শুরু হয়ে যেতো রাতে। কোনো কোনো দিন ভোরে। বড়দা আরও ভোরে উঠে নিয়ে রাখতেন জিরেন কাঠের খেজুর রস। সকালে উঠেই খেজুর রস। সেই দিনগুলো আর কি ফিরবে? বড় মন খারাপ হয় বড়ো হয়ে যাওয়া অতনুর।
তারা একসাথে ঘুরতো। খেলতো নানারকমের খেলা। চু কিত,কিত,কবাডি,সাতগুটি,ঘুরি ওড়ানো,ক্রিকেট,ব্যাডমিন্টন ও আরও কত কি। বন্ধুরা জড়ো হলে,এলাটিং,বেলাটিয়ং সই লো,যদু মাষ্টার কইলো…, তারপর আইশ,বাইশ কত কি। হাততালি দিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে খেলতাম,কাটুরিস,চায়না প্লিজ,মেম সাব, মেইন আপ… । তারপরের কথা, খেলা ডুব দিয়েছে কোন অতলে জানিনা, অতনু বলতো, সব কথা পুরো মনে পরে না। ছেঁড়া, ছেঁড়া স্মৃতিগুলো হৃদয়ের পদ্মপুকুরে ভেসে উঠেই ডুব দেয়, আর হারিয়ে যায় ব্যস্ত সময় সংসারে। সেখানে আবেগ মানে ছেলেখেলা পাগলামি। তবু তার মনে হয়, এরকম পাগলের সংখ্যা আরও বাড়ুক। বাড়লে পাওনাটা মন্দ হয় না।
রূপার মনে পরে কাকীমা, মা,জেঠিমার হারিয়ে যাওয়া দিনের কথা। তাদের বাড়িতে,সব জা , একত্রে মিলিত হতো ননদ বা দেওরের বিয়েতে। একবার বাসু দেওরের বিয়েতে পুণ্যলক্ষী বৌদি ছেলে সেজেছিলো। প্যান্ট, জামা পরে চার্লি চ্যাপলিনের মতো একটা লাঠি নিয়ে অভিনয় করে চমকে দিয়েছিলে বিয়ে বাড়িতে। সব জা রা প্যান্ট পরা ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে যখন ভাশুরদের সামনে দাঁড়ালো,মাথা লজ্জায় নিচু করেছিলো পুরুষদল। তখনকার দিনে এটা একটা ভীষণ সাহসের ব্যাপার ছিলো। অভিনয়ের শেষে যখন জানতে পারলো প্রকৃত ঘটনা তখন সকলে হাসাহাসি আর চিৎকার শুরু করলো। নতুন বৌ বুঝতে পারতো একান্নবর্তী পরিবারের আনন্দ। বিয়ের শেষে যে যার চাকরীর জায়গায় চলে গেলে বাড়ি ফাঁকা লাগতো। নতুন বৌ এর ভালো লাগতো না। স্বামী চলে যেতো চাকরীর জায়গায়। বাড়িতে মা, বাবা আর বেকার দেওরের দল। তারপর জলের ধর্মে যে কোনো পাত্রের আকার ধারণ করতো নতুন বৌ। বাবা,মায়ের সেবা,দেওরের খাওয়া, রান্নাবান্না সব নজরে রাখতে হতো নতুন বৌকে। প্রাণমন ছটফট করতো বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য। শ্বশুর, শ্বাশুড়িকে রাজী করে শর্ত মেনে যেতে হতো বাবার বাড়ি। তখন পুরোনো মাটির গন্ধে নতুন বৌ ভুলে যেতো সব না পাওয়ার দুঃখ।রূপার মনে পরে তার মায়ের কথা। কতবার বিরাজুলকে বলেছে,আমার মা সাধনায় ছিলেন রামপ্রসাদ। মা রক্ষাকালীর পুজো দিতে দিতে গেয়ে উঠতেন রামপ্রসাদি। নিরামিষ মা কালীর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে ছেলেদের নিয়ে সংসার চালাতেন জীবনানন্দ ছন্দে। অভাব থাকলেও কোনোদিন তার ছাপ পরেনি মায়ের চোখেমুখে। আসল মূল্যবান রত্নের সন্ধান তিনি পেয়ে গেছিলেন পুজোর আসনে বসে। কোনোদিন তার কথায় প্রকাশ পেতো না সেসব কথা। তার চলনে, বলনে ফুটে উঠতো মাতৃরূপের জলছবি। মাকে দেখেই মাথা নত হয়ে যেতো সকলের। দাদু মাকে মা বলেই ডাকতেন। তিনি সময়ে অসময়ে মাকে রামপ্রসাদী শোনাতে বলতেন। মায়ের গান শুনতে শুনতে একদিন চলে গেলেন পরপারে তৃপ্ত মুখে। একবার বৈশাখি ঝড়ে আম গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লো। মা বললেন,তোদের দাদুর আত্মা মুক্তি পেলো। অই ডালে বাঁধা ছিলো দাদুর মুক্ত হবার লাল চেলি। অবশ্য এটা ছিলো এক সাধুবাবার তুকতাক। বুড়ি ঠাকুমা সেদিন কেঁদে উঠেছিলো জোরে। ঠাকুমা বলে উঠলেন,চলে গেলো,ও চলে গেলো। কোনো কিছুই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। তবু কিছু ঘটনা বার বার তার অস্ত্বিত্বের কথা স্বীকার করে নেয়। একটা দেশি কুকুর আমাদের বাড়িতে থাকতো ছোটে থেকে। তোমরা বিশ্বাস করবে কি না জানি না? সে অমাবস্যা,পূর্ণিমায় কিছু খেতো না। রক্ষাকালী পুজোয় উপবাস করতো। তার সামনে খাবার দিয়ে দেখা গেছে সে খাবারের ধারের কাছে যেতো না। শুধু কথা বলতে পারতো না। কিন্তু ভাবে, ভঙ্গিমায় সব বেঝাতে পারতো মানুষের মতো। মা বলতেন,পূর্বজন্মে তোর সঙ্গে কোনো আত্মীয়তা নিশ্চয় ছিলো। তাই তোর আমাদের বাড়িতে আগমণ। যেদিন জিম দেহ রেখেছিলো সেদিন ওকে মাটি চাপা দিয়ে ধূপ আর ফুলে শেষ বিদায় জানিয়েছিলো সারা পাড়ার বাসীন্দা। তাহলে কি বলবে তুমি এই ঘটনাকে। কোন যুক্তিতে অস্বীকার করবে তার সারা জীবন ধরে পালন করা ব্রত,উপবাস। বলবে,কাকতালীয়। সেসব তো এক আধবার হয়। সারাজীবন ধরে নিয়মিত হয় না।
বিজয়ার সময় আমার মা জিমকে প্রথম মিষ্টিমুখ করাতেন। ধান রাখার গোলার তলায় একবার গোখরো সাপ দেখে, ঘেউ ঘেউ শব্দ করে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিলো সাপটা। তারপর সাপুড়ে ডেকে সাপটি বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। বড়দার বিছানার মাথার কাছে সে শুয়ে থাকতো। কোনো বিপদ বুঝলে ঝাঁপিয়ে পরতো নিঃস্বার্থ ভাবে। প্রত্যেক প্রাণীর কাছে আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু।
বিদেশে থেকেও তাদের দুজনেরই দেশের কথা,বাড়ির কথা মনে পরে। বিদেশে সব যান্ত্রিক। আবেগ তাদের কাছে ছেলেখেলা। শরীর সর্বস্য ভাবনা তাদের। ভালো গুণ অবশ্য অনেক আছে। রূপা ভাবে, এরা পরিশ্রমী। কাজ যখন করে তখন তার মধ্যেই ডুব দেয়। নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসে। কুড়ি কিলো ওজনের ব্যাগ বিদেশের মেয়েরা সহজেই পিঠে নিয়ে বহন করে। তবু তাদের নগ্ন সভ্যতার রূপের মাঝে,
তারা দুজনে বেশ মানাতে পারলো না। বিদেশের অনেক নিয়মনীতি তাদের ভালো লাগলো না। তাই তারা হঠাৎ করেই কলকাতা চলে এলো। তারপর সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি। মাটিতে পা দিয়ে তাদের উল্লাস বেড়ে গেলো। মুঠো মুঠো মাটি তারা গায়ে, মাথায় মেখে তার ঘ্রাণে শুয়ে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো বনে। তারপর তেঁতুল তলার বন, ওদের পছন্দ হলো। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। গ্রাম ছাড়িয়ে তেঁতুল তলার বনে ওরা গড়ে তুললো এন,জি,ও।ওরা শুরু করলো সেবাকেন্দ্র।
বিরাজুল ও রূপা মানুষের সেবায় নেমে পরলো। তারা গড়ে তুললো হাসপাতাল,নর সেবা কেন্দ্র প্রভৃতি। গরীব মানুষেরা এখানে এলেই বিনা পয়সায় খাবার পায়,স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়। এই হলো তাদের সংসার,আনন্দের জায়গা।
আশেপাশের গ্রামের মানুষরা হলো তাদের মন-মসজিদ আর মন্দিরের দেবতা…
বিরাজুল আর রুপা ভারতবর্ষ ছাড়াও দেশে দেশে বেড়াতে ভালবাসে এবার তারা ঠিক করল তারা বেড়াতে যাবে তারপরে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল একদিন। মুম্বাইয়ের অনেক ঘোরাঘুরি করলাম প্রায় দিন 15 তারপরে সেই একটা ঘর ভাড়া করে তারা ছিল। তারপর ঘুরলো কেরালার দর্শনীয় স্থানে।এই বার ফিরবার পালা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো এক মহামারী। চলে এলো দেশজুড়ে করোনা রোগ।করোনার কারণে রোগে মানুষ ছটপট করে মরে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিরাজিল বলল এখন তো যাওয়া যাবে না দেশে ফেরা যাবে না কি করা যাবে তখন রুপা বলল তাহলে আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করি কিন্তু অপেক্ষা করব কতদিন 21 দিনের ঘটনা করেছেন তার পরে আবার যদি বাড়িয়ে দেয় কবে ফিরবো আমরা দেশে যা হোক দেখা যাবে পরে।
তিন
এদিকে আলো কেরালা এসে বিয়ে করেছে এক বাঙালি মেয়েকে তার নাম মিনতি। মায়ের কাছে যাবে বলে আলো সব গুছগাছ করেও যেতে পারল না কারণ কর্ণাটকে দেশজুড়ে এখন লকডাউন চলছে তারা যেতে পারল না তারা যাওয়া মনস্থ করে ও বলল লকডাউন নিতে গেলে তখন মায়ের কাছে যাব। ভালো শিক্ষিত ছেলে এবং মিনতি অশিক্ষিত সে তারা দুজনেই খবরের কাগজ পড়ে সংবাদমাধ্যমে সব খবর শুনে আর প্রতিদিন তাদের ডায়রিতে সেই অভিজ্ঞতা লিখে রাখে। আজকে আলো লিখছে তার প্রথম অভিজ্ঞতা সে লিখছে, করোনা আতঙ্কে ২০২০ সালের ২২ শে মার্চ রবিবার প্রথম লক ডাউন ঘোষণা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর কিছু সময় কেনাকাটি, বাজার করার পরে টানা একত্রিশে মার্চ অবধি টানা লকডাউন শুরু হয়ে গেল। বেশিরভাগ মানুষ সচেতন কিন্তু অনেকেই বাহাদুরি করে বাইরে যাচ্ছেন। চীনদেশ, ইতালি এরাও প্রথমে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে করোনা ভাইরাস কোভিড 19 ছড়িয়ে পরে সারা পৃথিবীতে। পুলিশ, প্রশাসন কড়া হয়েছেন। কিছু পাবলিক লাথখোড়। তার কিছুতেই নিয়ম মানতে চাইছে না। মুরগির মাংস কিনতে, মাছ কিনতে, মদ খেতে, জুয়া খেলতে বেরিয়ে পড়ছে বাড়ির বাইরে।
মিনতি বলল, সোম, মঙ্গল,বুধ পেরিয়ে গেল। এখনও লকডাউন চলছে। কতদিন চলবে কেউ জানে না। আজ একটা খবরের কাগজে পড়লাম বর্তমান পরিস্থিতি বাংলার।কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলাদা করে তৈরি করা হচ্ছে ‘করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র’। ৩ হাজার শয্যার করা হতে পারে এই চিকিৎসা কেন্দ্র। নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা আলাদা জায়গায় নয়, একই হাসপাতালে চিকিৎসা করা হবে। করোনা মোকাবিলায় নতুন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার। এখন সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে ৩০০ শয্যা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে করোনা–আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, গোটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেই করোনার চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে বিশেষভাবে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। তবে এদিন বিকেল পর্যন্ত লিখিত কোনও নির্দেশিকা আসেনি। নির্দেশিকা দ্রুত জারি হবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। সম্পূর্ণ একটি হাসপাতাল যদি শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য করার ভাবনা–চিন্তা সত্যিই হয় তাহলে রাজ্যে এটি নজিরবিহীন হবে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর থেকেই নতুন করে রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল। এখন ৩০০ শয্যা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে করোনা–আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা কেন্দ্র।
আজও আলো লিখে চলেছে তার ডায়েরি করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে। সে লিখছে, হাসপাতালের ৯ তলার যে সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লক রয়েছে সেখানে দুটি তলা রাখা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য। বাকি ৭টি তলায় করোনা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা করা হবে। নতুন হস্টেলও বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে। এদিন মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে জরুরি বিভাগ ডাকা হয়। এই সপ্তাহেই সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে এই পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। করোনা সংক্রান্ত সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যালের উপাধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘করোনা–আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা বাড়লে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। তাই নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া কমাতে হবে। না হলে করোনা–আক্রান্ত রোগীদের জায়গা দেওয়া মুশকিল হবে। আপাতত ৩০০ শয্যার সুপারস্পেশ্যালিটি ব্লকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে শুধুমাত্র করোনা রোগীর চিকিৎসা হবে বলে গোটা হাসপাতাল খালি করতে হবে এরকম কোনও লিখিত নির্দেশনামা আমাদের কাছে এখনও আসেনি। যদি নির্দেশ আসে তখন সেইভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’ এখন ২,২০০টি শয্যা রয়েছে মেডিক্যালে। সেটি বাড়িয়ে ৩,০০০ করার পরিকল্পনা। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী সব হাসপাতালেই পেডিয়াট্রিক, চেস্ট, কমিউনিটি ও জেনারেল মেডিসিন, ইএনটি এবং মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্টদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড করতে হবে। সেই অনুযায়ী এখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রয়েছেন। তবে এখন অন্য অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন যাঁদের চিকিৎসা চলছে এখানে। শয্যা খালি করার জন্য সেই চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজও অনেকে বাইরে বেরিয়েছে। কোন বিজ্ঞানসম্মত বারণ মানতে চাইছে না। যদি কাউকে মানা করা হচ্ছে সে তার উত্তরে খিল্লি করছে, হাসছে পাগলের মত। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাড়িতে বসে যতটা পারছি ফেসবুকে সাবধানতার পোষ্ট দিচ্ছি। কবিতা, গল্প পোষ্ট করছি। শীর্ষেন্দু বাবুর গল্পের লিঙ্ক পেয়েছি। গল্প পড়ছি। এখন পড়ছি, মনোজদের অদ্ভূত বাড়ি, গল্পটা। ছেলেটা মোবাইলে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বলছে, ভয়ঙ্কর অবস্থা, কি হবে বাবা? পাড়ার এক মা ছেলেকে বকছেন, টেনশন করবি না। সাবধানে থাকবি। হাত, মুখ সাবান দিয়ে ধুবি। চান করবে। তাহলে কিছুই হবে না। বাড়িতে বসে বসে পড়। বাইরে একদম বেরোবে না।ছেলে খুব সচেতন। সে মা কে বলে, মা তুমি কিন্তু হাত কম ধুচ্ছ। রান্না করার আগে হাত ধোও সাবান জলে।আমি জানি, আমাদের এইটুকুই জ্ঞান। আর বেশি কিছু জানি না। তবে বাবা বলতেন, সাবধানের মার নেই। ছেলেটির বাবা ও বাইরে কাজ করে তিনিও ফিরতে পারেননি এখন ওরা পাশেই আমাদের পাশেই আছে ছেলে আর মা তারা অনেক দিনের পরিচিত তাদের কথাবার্তা আমরা জানালা দিয়ে শুনতে পাচ্ছি।
আলো দেখলো পাশের বাড়িতে জমি জায়গা নিয়ে ঝগড়া চলছে এক চাষীর।
সে লিখছে, চাষী তার গরু উঠিয়ে আল ভেঙ্গে দেয়। আমি জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে থামতে বললাম,বেঁচে থাকলে অনেক বাড়ি হতে পারে। এখন ঝগড়া করার সময় নয়।একজন আমাকে মেসেঞ্জার বক্সে একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল। আমার কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে। তাই সে রেগে আমাকে ব্লক করে দিল। সব ঝগড়ার সূত্র সেই ভুল বোঝাবুঝি।যাইহোক মেসেঞ্জার কয়েকদিনের জন্য আনইন্সটল করে দিলাম। এখন একটাই চিন্তা পৃথিবীর এই কঠিন রোগ। ভাইরাস আ্যাটাকে সারা বিশ্ব রোগগ্রস্ত। এখন দূরে দূরে থাকার সময়। দূরে থাকলে বাঁচব আর একত্রে সমাবেশ করলে মরব। ভাইরাস মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাচ্ছে চেনের মত। এই চেনকে ভাঙ্গার জন্য লকডাউন।
প্রকৃতি শুদ্ধ হচ্ছে। লকডাউন করার ফলে দূষণ কমছে ব্যাপকহারে।এবার প্রধানমন্ত্রী একুশ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করলেন। সচেতনতা প্রয়োজন মানুষের। গ্রামেগঞ্জে কেরালা,মুম্বাই থেকে কাজ করে ফেরা লোকগুলো যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে সংক্রমণ ক্রমশ উর্ধ্বমুখি। আমলা থেকে সাধারণ মানুষের ছেলেপুলে সব একই অবস্থা। রাস্তায় বেরিয়ে সেলফি তুলছে। প্রশাসন কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। মানুষের চেতনা জাগ্রত না হলে ধ্বংস হবে সভ্যতা। এখন বাংলায় বসন্তকাল চলছে। পাখি ডাকছে, ফুল ফুটছে। পাখিরা পশুরা উন্মুক্ত আকাশের নিচে আর মানুষ ঘরবন্দি। মানুষ শক্তিশালী প্রাণী। কিন্তু প্রকৃতির বিচার নিরপেক্ষ। তাই আজ উল্টোচিত্র। প্রকৃতি কি হাসছে। জানি না তবু এটুকু বলতে পারি, ভাবার সময় এসেছে। কল কারখানা, ধোঁয়া আবর্জনায় পৃথিবী কলুষিত। তাই আজ এই প্রতিশোধ।চারিদিক নিস্তব্ধ। খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া কোন কাজ নেই। বাজার করা, মাছ কেনা, স্কুল যাওয়া সব বন্ধ। একটা কোকিল গান শুনিয়ে চলেছে। ফিঙেটা ইলেকট্রিক তারে বসে ডাকছে। ওরা মানুষের মত স্বার্থপর নয়। তাই হয়ত গান শুনিয়ে চলেছে এই দুর্দিনে। আজকের খবরে শুনলাম, করোনাভাইরাসের জেরে ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। লকডাউনের জেরে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ছোট থেকে বড় সংস্থায়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসে তহবিল ঘোষণা করল দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। এসবিআই সূত্রে খবর, চলতি ২০১৯–২০ আর্থিক বছরে মুনাফার ০.২৫ শতাংশ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে করোনা প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি বৃহত্তম সংস্থাকে নিজেদের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা খাত থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যয় করার পরামর্শ দেয় কিছুদিন আগে। এবার তা পালন করতে চলল এসবিআই।এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার জানান, ‘এই তহবিলটি মূলত স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জড়িত। দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত খাতে ব্যবহার করা হবে। এসবিআই ভারতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই তহবিলটি মূলত সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে।’
তিনি অন্যান্য কর্পোরেট সংস্থার কাছেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, গোটা দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছে। মানুষের চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। সতর্কতামূলক এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীকে উদারভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।ভরসা পেলাম। খাবারের জোগানও অব্যাহত থাকবে। রাজ্যসরকার থেকে দিন আনা দিন খাওয়া লোকেদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সরকার সবদিক ভাবছেন। মানুষই একমাত্র মানুষকে বাঁচাতে পারে। ডাক্তার, নার্স, আয়া, পুলিশ সকলে জীবনকে বাজি রেখে মানুষ তথা পৃথিবীকে বাঁচানোর কাজে লেগে পড়েছেন। এ এক আশার কথা। ভালো লাগছে এই কথা ভেবে যে সকলে রাজনৈতিক জীবনের উর্ধে উঠে মনেপ্রাণে এক হয়ে কাজ করছে। এই অপূর্ব মিলনের বার্তা একমাত্র ভারতবর্ষ দিতে পারে। সকলে তাকিয়ে আছে আমাদের দেশের দিকে। সারা পৃথিবী মিলিত হোক মানবতার মহান জগতে। পৃথিবী ভাল থেক। পৃথবী নিরোগ হও।আজ একটা সংবাদপত্রে পড়লাম, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে এবার সরাসরি চীনের দিকে আঙুল তুলল আমেরিকা। আর এই আঙুল তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগাম বিপদ সম্পর্কে চীন সতর্ক করলে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। বেজিংকে সরাসরি এই ভাষাতেই বিঁধলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকী তিনি এই বিষয়ে সামান্য বিরক্ত বলেও মন্তব্য করেছেন। আমেরিকার চিকিৎসকদের সেখানে পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন দেশের যে তিনটি জায়গাকে সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে, সেগুলো হল নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন। তালিকার প্রথমেই আছে নিউ ইয়র্ক। সেখানে ১৫ হাজার নিশ্চিত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৫৪১৮টি সংক্রমণ ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এখনও পর্যন্ত ১১৪ জন মারা গিয়েছেন। একদিনেই প্রাণ গেছে ৫৮ জনের। গোটা আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। মারা গিয়েছেন সাড়ে চারশো।আমি ভাবি দেশের কথা, পৃথিবীর কথা।এখন দোষারোপের কথা বাদ দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাই। সকলের সমবেত চেষ্টায় রোগমুক্তি ঘটুক পৃথিবীর। কারাবাসে যেমন বন্দি থাকা হয় এই গৃহাবাস কিন্তু ততটা বিরক্তিকর নয়। সংসারের মাঝে থেকে একটু একা একা থাকা। একটু রামকৃষ্ণ পড়ি, একটু রবীন্দ্রনাথ পড়ি, একটু জীবনানন্দ বা বিভূতিভূষণ পড়ি। সময় কেটে যাবে আরামসে। দেরাজে রাখা বইগুলো একটু পরিষ্কার করে রাখি। রান্নায় সাহায্য করি স্ত্রীকে। দূরে থেকে সকলকে বাঁচিয়ে চলতে পারলেই জীবনের খোঁজ পাওয়া যাবে।”অসদো মা সদগময়, ত্বমসো মা জ্যোতির্গময় ” এই মন্ত্রে এগিয়ে চলি নিশ্চিন্তে।আবার খবরের কাগজে দেখলাম কি মারাত্মক পরিস্থিতি সারা বিশ্বের। নাকানিচোবানি খাচ্ছে গোটা দুনিয়া। প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। মারণ ভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বে মৃত ১৭,২৩৫ জন। এ–পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩,৯৫,৮১২। ইতালি এখন মৃত্যুভূমি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৬০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতালিতে এখনও পর্যন্ত মৃত ৬,০৭৮। আক্রান্ত ৬৩, ৯২৭। ইতালির লম্বার্ডির অবস্থা ভয়াবহ। ইতালির মোট মৃতের প্রায় অর্ধেক লম্বার্ডির বাসিন্দা। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৩,৭৭৬ জনের, আক্রান্ত ২৮,৭৬১। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরির কারণেই ইতালির এই অবস্থা। শুধু প্রবীণদেরই নয়, ইতালিতে ৩০–৪০ বছরের কোঠায় যঁাদের বয়স, তঁাদেরও কাবু করছে করোনা। নাজেহাল গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন— সব দেশেই।স্পেনের অবস্থা এখন ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গেছেন ৫১৪ জন। মোট মৃত ২,৬৯৬। আক্রান্ত ৩৯,৬৩৭। মৃতদেহ রাখার জায়গা অমিল। অনেক জায়গায় বাড়িতেই পড়ে আছে মরদেহ। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, মৃতদেহ হিমঘরে রাখা যায়, কিন্তু করোনায় মৃত্যু শুনলে কেউ মৃতদেহ স্পর্শ করছে না। অন্ত্যেষ্টির কাজে নিযুক্ত কর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অবস্থা মোকাবিলায় নেমেছে সেনাবাহিনী।ওদিকে ফ্রান্সও নাজেহাল। সেখানে মৃত ৮৬০, আক্রান্ত ১৯,৮৫৬। রাজধানী প্যারিসের রাস্তা এখন খঁাখঁা করছে। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। কাফে, রেস্তোরঁার ঝঁাপ বন্ধ। লোকজনের দেখা নেই। নিঃশ্বাস ফেলতেও যেন ভয়। কে জানে কখন ভাইরাস ঢুকে পড়ে শরীরে! আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দি। ব্রিটেনেও ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। সেখানে মৃত ৩৩৫। আক্রান্ত ৬,৬৫০। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশে তিন সপ্তাহ লকডাউনের ঘোষণা করেছেন। দেশবাসীকে ঘরবন্দি থাকতে বলেছেন। দু’জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ। আমোদপ্রমোদের জন্য সপ্তাহ শেষে কেউ পার্ক বা অন্য কোথাও জড়ো হলে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা। ওষুধ আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান খোলা। বাকি সব বন্ধ। বিয়ে আর ব্যাপটাইজেশনও বন্ধ থাকবে।
এদিকে কানাডায় করোনায় মৃত ২০। আক্রান্ত ১,৪৭৪। সংক্রমণ মোকাবিলায় ৩৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে কানাডা সরকার। সংক্রমণ এড়াতে সকলকেই ঘরবন্দি থাকতে বলছেন। কিন্তু কেউ কেউ আইসোলেশনের তোয়াক্কা করছেন না। তাতেই চটেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বলেন, ‘অনলাইনে আমরা অনেক লোকজনের ছবি দেখছি। তঁারা ভাবছেন তঁাদের কেউ দেখতে পাচ্ছেন না। ভাল, তবে আপনাদের দেখা যাচ্ছে। যথেষ্ট হয়েছে। বাড়িতে যান, ঘরেই থাকুন। আমরা নিয়ম মানতে বাধ্য করব। তা লোকজনকে সচেতন করেই হোক বা জোর করেই হোক।’
আমেরিকায় উদ্বেগ তুঙ্গে। মৃত ৫৮২ জন।এ অবস্থায় লক ডাউনে থেকে করোনার চেন ভাঙ্গতে হবে। অন্য কোন উপায় নেই। গ্রাম থেকে শহরের প্রত্যেকটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে করোনা মোকাবিলায় কলকাতা পৌরসভার উদ্যোগে জোর কদমে চলছে শহর স্যানিটাইজ করার কাজ। কিভাবে গাড়ি করে সকলের বাড়ির সামনে এসে নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে সুন্দর।
বাড়িতে যথেষ্ট খাবার মজুত নেই। ছাড় দেওয়া আছে মুদিখানা, সব্জিবাজারকে। একজন করে পরিবার পিছু ভিড় না করে বাজার করা নিয়ম। কিন্তু এটা একশ চল্লিশ কোটির দেশ। ভিড় হয়ে যাচ্ছে যেখানে সেখানে। পুলিশের টহল চলছে। আমার স্ত্রী পাড়ার দোকান থেকে চাল, ডাল কিনে আনলেন। আমরা তিনজন। গ্রামের বাড়িতে অন্যান্য সদস্যরা আছেন। তাদের খবর রাখছি মোবাইল ফোনে, হোয়াটস আ্যপে। তাছাড়া উপায় নেই।এক একজন ধনীলোক প্রচুর খাবার মজুত করছেন বাড়িতে। এর ফলে খাবারের অভাব হতে পারে। এক সব্জীব্যবসায়ী বললেন, যার দরকার আড়াইশ আদা তিনি নিয়ে নিচ্ছেন আড়াই কেজি। চড়া দাম দিতে তারা প্রস্তুত। এ এক অদ্ভূত মানসিকতা। তারা বলছেন, নিজে বাঁচলে বাপের নাম থাকবে। তবু সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। জীবনের চরম মুহূর্তের কথা তারা ভুলে যায়। কত রাজার ধনে মরচে পরেছে ইয়ত্তা নেই। শিক্ষা নিতে হয় অতীতের কাছে। আমার পাশের বাড়ির সকলেই কিছু খাবার কিনলেন। একুশ দিন যাওয়ার মত। কম খেতে হবে। প্রকৃতি তার হারানো ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে জেনে আনন্দ হল। পাঁচশ বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু যেমন ছিলো সেরকম হতে চলেছে পৃথিবী। প্রকৃতি সব দিক দিয়ে মারেন না। একদিক ভাঙ্গলে আর একদিক গড়ে দেয়। আশার অনেক কিছু আছে। “আশায় বাঁচে চাষা। ”
আমার স্ত্রী বাজারে গেছিলেন আজ। দোকানে দড়ি দিয়ে মেপে এক মিটার দূরে ইঁট পাতা আছে।লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রাহকরা,।পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছেন বাজার, রাস্তা। জরুরি অবস্থায় সকলে চিন্তিত। কি করে একুশ দিন কাটবে। কাটবে ঠিকই। আবার ফুটবে ফুল। আবার হাসবে শিশু পৃথিবী।
আজ ঘুম থেকে একটু দেরি করে উঠলাম।এখন সকাল নয়টা বাজে ঘড়িতে। চা মুড়ি আর প্রেশারের ওষুধটা খেলাম। সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি অবশ্যই।খবরের কাগজ পেলাম।হেডিং -ভালবাসার দেশ কিউবা।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে ইতালিতে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল পাঠিয়েছে কিউবা। দেশটি জানিয়েছে, ইতালির অনুরোধে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের একটি ব্রিগেড রওনা হয়ে গেছে। করোনায় জর্জরিত ইতালির লমবার্দি অঞ্চলে কাজ করবে তারা।১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর দুর্যোগ মোকাবেলায় কমিউনিস্টশাসিত কিউবা প্রায়ই তাদের ‘সাদা পোশাকের বাহিনী’ পাঠিয়ে আসছে। এর আগে হাইতিতে কলেরা এবং পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও দেশটির চিকিৎসকরা সামনের কাতারে ছিলেন।এবারই প্রথম কিউবা বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ইতালিতে ৫২ সদস্যের শক্তিশালী একটি দল পাঠাচ্ছে; যার মাধ্যমে দেশটি তাদের ‘চিকিৎসা কূটনীতির’ বড় ধরনের নজিরও স্থাপন করতে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এ নিয়ে কিউবার ষষ্ঠ মেডিকেল ব্রিগেড অন্য কোনো দেশের উদ্দেশে রওনা হলো। দেশটি এর আগে তাদের সমাজতান্ত্রিক মিত্র ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়ার পাশাপাশি জ্যামাইকা, সুরিনাম ও গ্রেনাদাতেও চিকিৎসকদল পাঠিয়েছে। শনিবার ইতালির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে চিকিৎসকদলের সদস্য ৬৮ বছর বয়সী লিওনার্দো ফার্নান্দেজ বলেন, ‘আমরা সবাই বেশ ভীত, কিন্তু আমাদের বিপ্লবী দায়িত্ব আছে, তাই আমরা আমাদের ভয়কে একপাশে সরিয়ে রেখেছি।
চার
বিরাজুল ও খবরের কাগজে পড়ছে, এদিকে চিনের অবস্থাও ভাল নয়। আমার কাটোয়া শহরে করোনা আক্রান্ত রোগী এখনও অবধি একটাও পাওয়া যায়নি। পুলিশ তৎপর আছে। বাইরে বেরোলেই পিটুনি খাচ্ছে আনাড়ির দল। ঘরে বসে ছেলেটা বই পড়ছে। আরণ্যক।আমিও মাঝে মাঝে পুরোনো স্মৃতি ঝালিয়ে নিচ্ছি। শীতের পোশাকগুলো গুছিয়ে রাখলাম। বসন্ত কেমন ম্লান হয়ে রয়েছে। একটা সবুজ ছোট্ট পাখি শিউলি গাছে বসে আছে। স্ত্রী রুটি বেলছে। জলখাবারের জন্য। এতদিন তো ঘরে বসে থাকার সুযোগ পাই না। বেশ লাগছে সপরিবারে একসঙ্গে থেকে। দোকানপাট যা করার লকডাউনের আগেই করা হয়েছে। সরকার থেকে খাবার বিতরণের কাজ শুরু হবে। ভবঘুরের দল ব্লক অফিস আর স্কুলগুলোতে ঠাঁই পেয়েছে। দুদিনের ঘর। তারপর তাদের ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে হবে।
মিনতি বলছে, প্রতি বছর রথ যাত্রার ঠিক আগে ভগবান জগন্নাথ স্বয়ং অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর জ্বর এবং সর্দি কাশি হয়; অসুস্থতার এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে Quarantine করা হয় যেটাকে মন্দিরের ভাষায় অনাসর বলে। ভগবানকে ১৪ দিন পর্যন্ত একা বাস মানে isolation এ রাখা হয়। হ্যাঁ, ঠিক ১৪ দিন। এই সময় ভগবানের দর্শন বন্ধ থাকে এবং ভগবানকে জড়িবুটি আর জল খাবার দেওয়া হয় মানে Patients Diet, আর এই পরম্পরা হাজারাে বছর থেকে চলে আসছে।আর এখন ২০ শতাব্দীতেও বলা হলো isolation & Quarantine এর সময় ১৪ দিন! আগের সেই বিজ্ঞান ভিত্তিক জীবন কৌশল যা আজও বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে!..১৪ দিন জগতের প্রভু জগন্নাথ যদি মানেন Isolation / Quarantine / light diet আমাদের কেন তা মানায় অসুবিধা? ভগবানকে মেনে, চাহিদা কমিয়ে এই ক’দিন আমরা তাঁর দেখানো পথে একটু চলিইনা! কিন্তু কিছু লোক আড়ালে মশারি টাঙিয়ে তাস খেলছে। জুয়ো খেলছে। কোন আইন মানতে চাইছে না। একজন মহাপুরুষ বলেছিলেন, আমাদের দেশে কম করে দুবছর মিলিটারি শাসনের প্রয়োজন আছে। তার কথাই ঠিক। তবে যদি এরা কিছু নিয়ম শেখে তাহলে দেশের দশের উপকার। রাজ্যে করোনাভাইরাসের (Coronavirus) পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যে মোট আক্রান্তের মধ্যে ৫৫ জন এসেছেন মাত্র সাতটি পরিবার থেকে। ফলে ভাইরাস যে একটা সীমাবদ্ধই রয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে ই রাজ্যে ৯৯ শতাংশ করোনা রোগীর সঙ্গে বিদেশি-যোগ রয়েছে।
বিরাজুল বলছে, লকডাউনের বাজারে দিন হোক কি রাত বাঙালি মজে আছে নীল ছবিতে। আর তার জেরেই হু হু করে রাজ্যে বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। দেশের অনান্য রাজ্যেও নেট ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু বাংলায় কার্যত তার তিন-চার গুণ বেড়েছে। দিল্লি বা মহারাষ্ট্রে যেটা ৫ থেকে ৬ শতাংশ বেড়েছে, বাংলায় সেটাই বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এই তথ্য চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। দেশের মানুষ এখন দিনের একটা বড় সময়ই কাটান মোবাইলের সঙ্গে। দক্ষিণ ভারতের মানুষ খুবই সিনেমাপ্রেমী। কিন্তু তাঁরা সেই সিনেমা মোবাইলে দেখতে পছন্দ করেন না। দলবেঁধে তাঁরা তা দেখতে যান হল বা মাল্টিপ্লেক্সে। তাই দক্ষিণভারতে মোবাইলে সিনেমার দেখার চাহিদা নেই বললেই চলে। আবার সেখানে নেট ওয়েব সিরিজের চাহিদাও সেভাবে নেই। যে টুকু আছে তা শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই দক্ষিণ ভারতে নেটের চাহিদা অফিস কাজ, বাড়িতে বসে পড়াশোনার কাজ আর নীল সিনেমা দেখার জন্য। তুলনামূলক ভাবে বাংলায় শিক্ষিতের হার বেশি বলে বাড়িতে নেটের চাহিদাও বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও নেটের চাহিদা বাড়ছে বাংলায়। বাংলাতে অফিসে নেটের চাহিদা যেমন আছে তেমনি আছে বাড়িতে নেটের চাহিদা। আবার মোবাইলে সিনেমা দেখার পাশাপাশি, অয়েব সিরিজ দেখা বা নীল ছবি দেখার প্রবণতাও রয়েছে। বাংলার যে সব শ্রমিক, বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা ভিন রাজ্যে কাজ করেন তাঁরা লক ডাউনের এই বাজারে বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাই গ্রাম হোক কি শহর মোবাইলে নেটের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। আবার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের অনেকেই এখন বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করছেন। সব থেকে বড় কথা বাংলায় হিন্দি, ইংরাজি ও বাংলা ভাষার সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখার চাহিদাটা খুব বেড়ে গিয়েছে। হইচই, আমাজন প্রাইম, নেটফ্লিক্স, এলটি বালাজি, উল্লু, ভুট প্রভৃতি অনলাইন স্ট্রিমার সংস্থাগুলি এই লকন ডাউনের বাজারেও নিত্য নতুন শো বা সিনেমা হাজির করছে দর্শকদের কাছে। আর সব থেকে বেশি বেড়েছে নীল ছবি দেখার চাহিদা। তাতেই কার্যত বাজিমাত করেছে বাংলা।
মিনতি বলছে, আমাদের মনে রাখতে হবে , ভারতবর্ষ ত্যাগের দেশ। আজ খবরে জানলাম, শিক্ষকরা যে যেমন পারছেন দান করছেন। এক শিখ মহাজন কয়েকলক্ষ টাকা দান করেছেন পাঞ্জাবের পিড়িতদের জন্যে। বাংলায় এক গ্রামের ধনী কয়েকলক্ষ টাকা দান করলেন পিড়িতদের কল্যাণে। খবরে প্রকাশ, রাজ্যে আক্রান্ত বেড়ে ১০। কলকাতার নয়াবাদের এক প্রৌঢ়ের শরীরে মিলল করোনার নমুনা। আশঙ্কা, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের। বিরাজুল মিনতিকে শুনিয়ে খবরের কাগজ পড়ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে একটিও করোনা আক্রান্তের সংবাদ না আসায় একটু স্বস্তিতে ছিল বাংলার মানুষ। কিন্তু বুধবার রাতেই সেই স্বস্তিতে জল পড়ল। ৬৬ বছরের ওই বৃদ্ধ সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার রাতে রিপোর্ট মেলে। তাঁর বিদেশ ভ্রমণের কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁর পরিবারের কেউ সম্প্রতি দেশরে বাইরে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়নি। রাজ্যে আশঙ্কা বাড়ল। এটি তৃতীয় পর্যায়ের শুরু কিনা ভেবে। এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদ চলবে বলে সূত্রের খবর।একের পর এক বাড়তেই থাকবে নাকি রোগীর সংখ্যা। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি ঘরে থেকে।আমি কাটোয়া পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।পৌরসভা থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে।সবরকম সাহায্য করার পাশাপাশি সচেতনাতামূলক প্রচারও চলছে।কাটোয়া পৌরসভা, কাটোয়া হাসপাতাল, পুলিশ ও প্রশাসন সবাই নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে করোনা মহামারী রুখে দেওয়া যায়।মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, কাটোয়ার সর্বস্তরের জনসাধারন আমাদের যে ভাবে সাহায্য করছেন তাতে আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এতো দিন গৃহবন্দী থাকা যথেষ্ট কষ্টকর এটা আমরা বুঝি। কিন্তু এই মারনব্যাধি থেকে মানবসভ্যতা কে রক্ষা করার এটাই এক ও একমাত্র উপায়।আপনাদের প্রতি আমাদের বিনীত আবেদন – বাজার করা অথবা মুদি / রেশন / ওষুধের দোকানে কিছু কিনতে যাবার সময় প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে অন্তত ৬ (ছয়) ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন। খুব প্রয়োজন না থাকলে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। অন্যথায়, অন্যের থেকে সংক্রমন আপনার তথা আপনার প্রিয়জনের মধ্যে ছড়াতে বেশি সময় নেবে না।রাস্তায় একসাথে জড়ো হবেন না। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। সর্বোপরি, নিজে সুস্থ থাকুন, নিজের পরিবারকে ভালো রাখুন তাহলেই সমাজ ব্যাপকার্থে মানব সভ্যতা রক্ষা পাবে।কেউ শুনছে কেউবা শুনছে না। মাছ, মাংস খাওয়ার লোভে অনেকে বেরিয়ে পড়ছেন বাইরে। এটা সংযমের সময়। সংযত হয়ে চলার সময়। এটা ভাবতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়।আজ খবরে পড়লাম আবার একই বিষয়ে। করোনা। করোনা। করোনা। খবরের কাগজ আর ফেসবুকের খবর ছাড়া বাইরে বেরিয়ে খবর নেওয়া উচিত নয়। তাহলে এত পরিশ্রম বৃথা যাবে। আজকের খবরে প্রকাশ, ইতিমধ্যেই করোনা আতঙ্কে জেরবার দেশের মানুষ। করোনা আতঙ্ককে সাথে নিয়ে দেশের পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। সারা দেশবাসীর কাছে এখন একটাই লক্ষ্য, কিভাবে করোনার হাত থেকে পরিত্রাণ পাবেন তাঁরা? দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা একযোগে করোনার সংক্রমণকে মহামারী হওয়া থেকে আটকাতে শুরু করেছে লকডাউন। সরকারিভাবে নোটিশ জারি করা হয়েছে এই মুহূর্তে দেশের কেউ যেন কোন রকম জমায়েতে শামিল না হন।করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল চীন থেকে। সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। যার মধ্যে ভারত অন্যতম। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীরা আশার কথা শোনাচ্ছেন ভারতকে নিয়ে। এই মুহূর্তে একদিক দিয়ে যেমন ভারতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, সেরকম অন্যদিক দিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু জন। যদিও সে সংখ্যা আক্রান্তের তুলনায় অত্যন্ত কম। কিন্তু তা সত্বেও সুস্থ হওয়ার খবর নিঃসন্দেহে খুশির বলেই মনে করা হচ্ছে।এখনো পর্যন্ত ভারতে 37 জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে স্বাস্থ্যমহল সূত্রে জানা গেছে। ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন 492 জন। তার মধ্যে মারা গেছেন এখনো পর্যন্ত ন জন। করোনা সংক্রমণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া 37 জনের মধ্যে 11 জন ইতালীয় পর্যটক রয়েছেন। যাঁদের সুস্থ হওয়ার পর ইতালীয় দূতাবাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, চীনের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বলে খবর। তবে সাংবাদিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ এর মধ্য দিয়ে চিনে আসিম্পটোমেটিক রোগী ধরা পড়ছে। নাও ঠেলা। এক রোগে নিস্তার নেই আবার শঙ্করাকে ডাকে। অন্য আর একটি রোগ যেটি ইঁদুরবাহিত ক্রমশ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে জানালো চিন সরকার। আজকে একটা ভাল খবর শুনলাম, নবান্নে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শহরের একাকী থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে খেয়াল আমাদেরকেই রাখতে হবে। কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা খেতে পারছে না বা প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না জানতে পারলে সেই হাউসিং কম্প্লেক্সকে তিনি সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসক মহকুমা শাসক বা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার আবেদন জানান। প্রশাসন প্রয়োজনীয় চাল ডাল থেকে শুরু করে ওষুধ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেবেন। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে সকলকে মানবিক থাকার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, “কারোর জ্বর হলে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করবেন না। প্রয়োজনে স্থানীয় থানায় খবর দিন পুলিশ অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে”অন্যদিকে ভবঘুরেদের উদ্দেশ্যে নাইট শেল্টারে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ভবঘুরেদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন তারা যেন কর্পোরেশনের স্কুল এবং কমিউনিটি হল গুলোতে যেখানে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে থাকেন। খাবারের ব্যবস্থা পুলিশ এবং কর্পোরেশগুলি, করে দেবে। শুনে মনটা একটু হাল্কা হল। কত অসহায় ভবঘুরে পাগল মানুষ থাকে রাস্তায়। তারাও ভাল থাকুক। ভাল থাকুক ভালবাসা। রাস্তায় যখন যেতাম এই রোগ আসার আগে। তখন দেখতাম কত গোসাপ, সাপ, শেয়াল, কুকুর চাপা পড়ে মরে আছে মানুষের দাপাদাপিতে। এখন আর তারা চাপা পড়বে না একুশ দিন। শান্তিতে ঘুরতে পারবে। আমরা ভুলে যাই তারাও এ পৃথিবীর অংশিদার। তাদের ঠকিয়েছি আমরা। তার মাশুল গুণছে মানুষ। ক্রিকেটার সৌরভ থেকে আমজনতার অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করছেন অভুক্ত মানুষের কথা ভেবে। সব স্তরের মানুষ মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। জ্বালা যন্ত্রণা অত্যাচার বেড়ে গেলে ফিরে ফিরে আসে সমোচ্চশীলতার ধর্ম। সে যে রূপেই হোক। কখন রোগ মহামারী বা প্রলয়। তার বিচারের কাছে গরীব ধনী নেই। তার বিচারের কাছে শিক্ষিত অশিক্ষিত নেই। সব সমান করে নবরূপে তৈরি করেন প্রকৃতির প্রতিমা। আজকে একটা খবর পড়লাম, করোনা ভাইরাসের কারনে পৃথিবীর প্রায় ৭৫% ছোট বড় ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ হয়েছে। আকাশ পথে বিমান চলাচল বন্ধ হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ৮০% যানবহন চলাচল বন্ধ হয়েছে।ভারী অস্ত্রের মহড়া বন্ধ হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে লকডাউন আইনের কারনে মানব সৃষ্ট দূষণ বন্ধ হয়েছে।হাঁচি, কাশি ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে দুরে থাকতে সবাই এয়ার কন্ডিশন চালানো বন্ধ রেখেছে। করোনা থেকে বাচঁতে নিজের শরীর থেকে শুরু করে বাড়ির আশে পাশের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখছে। যত্রতত্র বিশেষ করে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে এসেছে।এ সব কিছুর ফলে নাসার দেয়া তথ্যমতে পৃথিবীজুড়ে নাইট্রোজেন গ্যাস ও কার্বন এমিশনের মাত্রা ২৫% কমে এসেছে।ফলে প্রকৃতি তার নতুনরূপে সাজতে বসেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা কমে এসেছে। গ্রীনল্যান্ড ও এন্টার্কটিকায় গলে যাওয়া বরফ আবার জমতে শুরু করেছে।যেখানে নিজের ঘরের মানুষকে আটকিয়ে রাখা যায় না। সেখানে ৭০০ কোটি মানুষকে কিভাবে সম্ভব? হয়তো সৃষ্টিকর্তা করোনার অছিলায় ৭০০ কোটি মানুষকে আবদ্ধ করে প্রকৃতি মেরামত করে দিচ্ছেন। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ পৃথিবী কে একটু একটু করে ধ্বংস করে যাচ্ছিলো।করোনায় সৃষ্ট মহামারীতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরবে বিশ্ব অর্থনীতিতে। কিছু কিছু দেশে দুর্ভিক্ষের ন্যায় আঘাত হানবে। আজ আমাদের প্রতিটি সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখানোর সময়। তারা আমাদের ভাল চাইছেন। বিশ্ববাসি প্রত্যের মঙ্গলের জন্য ঘরবন্দি থাকাটা কোন ব্যাপার নয়। এই ফাঁকে যে যার শখের কাজগুলি মন দিয়ে করতে পারবেন। ভাঙ্গা মচকা কুচটপড়া সম্পর্কগুলো মেরামত করে নিতে পারবেন। বিপদের বন্ধু প্রকৃতির সঙ্গে ভাব জমিয়ে ‘অমলের’ মত জানালা দিয়ে পাখি আর গাছের সঙ্গে মিত্রতা করলে দেখবেন কখন অজান্তে সময় উধাও হয়ে গেছে আনন্দে। এখন আর কান্নার সময় নয়। মন মিলিয়ে দূরত্বে থাকার সময়। মনের মিল থাক ফোনে, হোয়াটস আ্যপে আর মেসেঞ্জারে। দেহের দূরত্ব বজায় থাক। মশা মাছি থেকে নিজেকে বাঁচান। আর কত দিন বলে হা হুতাশ না করে ভাল থাকুন। রাজ্যে লকডাউনের তৃতীয় দিন এবং দেশে প্রথম দিনে পরিস্থিতি কলকাতাসহ গোটা রাজ্যে একইরকম। তবে, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় এবং লাগোয়া জেলাতে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু মানুষ লকডাউনের নিয়ম ভেঙেছেন। পুলিশ কঠোর হাতে তা দমন করেছে। অনেক জায়গাতেই বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরির জন্য পুলিশ তাড়া করেছে। এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৩০২ জনকে। এর মধ্যে ৬৪০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে মাতলামোর জন্য। এবং লকডাউন ভাঙার জন্য ৬৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, প্রত্যেককে অনুরোধ করা হচ্ছে বাড়িতে থাকুন। এবং প্রশাসনকে সাহায্য করুন।
কলকাতায় শৃঙ্খলার চিত্রও দেখা গেছে। বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা, গুরুদাশ দত্ত গার্ডেন লেনে বহু মানুষ রাস্তায় এঁকে দেওয়া বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। সহনাগরিকের থেকে দূরত্বে দাঁড়িয়ে ওষুধপত্র, বাজারহাট সবই করেছেন। ওষুধের দোকানগুলিতে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। বেশি টাকার ওষুধ কিনলে যে ছাড় পাওয়া যেত, এখন তা দেওয়া হচ্ছে না। অড়েক জায়গায় চাহিদামতো ওষুধও নেই। হাওড়া ব্রিজে এদিন অন্য চিত্র দেখা গেল। ব্রিজের একটা দিক দিয়েই গাড়ি যাতায়াত করবে। বাকি অংশ আটকে রাখা হয়েছে। ব্রিজের দুপারেই পুলিশ মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে। গাড়ি নিয়ে কেউ গেলেই, থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিটের ছবিও একইরকম। সমস্ত বড় বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে তালা। নিয়মশৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য কয়েক জায়গায় র্যাফ টহল দিচ্ছে। ধর্মতলা জনহীন। শিয়ালদা স্টেশনের ছবিও এক। তবে কয়েক জায়গায় দেখা গেল দু’একটি সরকারি বাস চলছে। সাইকেল চালিয়ে কাজে যোগ দিতে চলেছেন অনেকে। টিভি আর মোবাইলে চিত্রগুলি দেখতে পাচ্ছি।বাইরে না বেরিয়ে বাইরের খবর জানতে পারা এক সুন্দর ব্যাপার। বেশ লাগছে। অনেকে ফোন করে খবর নিচ্ছেন। এক দাদা বললেন, মানুষ এত পাপ করছে যে সবকিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।ধর্ষণ,খুন বেড়েই চলেছে। অথচ এই কয়েকদিনের গৃহবন্দি অবস্থায় সব পাপ কমে গেছে। পুলিশ, প্রশাসন রাস্তায় মাস্ক পড়ে টহল দেওয়ার সুফল মিলছে। এর ভাল দিক আছে অনেক।
মিনতি বলল,অন্যায়ের বিরুদ্ধে মহাভারতে আঠারোদিন যুুুদ্ধ চলেছিল আজ করোনা রোগের বিরুদ্ধে 21 দিনের যুদ্ধ চলবে। এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে। মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে 21 দিন কেন 21 মাস হলেেও প্রয়োজনে ঘরে থাকবে। তা না হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। অনেকেই চাল-ডাল মালমশলা সবজিতেে ঘর ভরে নিচ্ছেন কিন্তু এতটা স্টক করা একজনের পক্ষে ঠিক না।সবাইকে বাঁচতে হবে সকলের জন্য চিন্তা করতে হবে তবেই” ধন্য রাজার পূণ্য দেশ” ।
নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, অর্থনীতিকে এর মাসুল গুনতে হতে পারে। আর ব্রিটিশ ব্রোকারেজ সংস্থা বার্কলেজ় সমীক্ষায় জানাল, সম্ভাব্য সেই ক্ষতির অঙ্ক প্রায় বারো লক্ষ কোটি টাকা।
গরীব ভ্যানচালক, রিক্সাচালক সকলের কথা চিন্তা করছেন সরকার। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করছেন সরকার বাহাদুর। এ এমনএক সময় যখন সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। শুধু নজর রাখা আর অনুশাসন মান্য করাই ভারতবাসী তথা দেশবাসীর কর্তব্য। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-ভারতে আজ দুপুর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩। তাঁদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। দিল্লিতে সংক্রমিত ৬ জন, হরিয়ানায় ১৪ জন (প্রত্যেকেই বিদেশি নাগরিক), কেরলে ১৭ জন, রাজস্থানে ৩ জন (একজন ভারতীয় নাগরিক এবং দু’জন বিদেশি নাগরিক), তেলেঙ্গানায় আক্রান্ত একজন, উত্তর প্রদেশে ১১ জন (১০ জন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন বিদেশি নাগরিক), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে আক্রান্ত ৩ জন, তামিলনাড়ুতে একজন, জম্মু ও কাশ্মীরে একজন সংক্রমিত, পাঞ্জাবে আক্রান্ত একজন এবং কর্ণাটকে করোনায় সংক্রমিত ৪ জন। এইভাবে বাড়তে থাকলে তৃতীয় সপ্তাহে দ্বিগুণহারে বাড়তে থাকবে রোগীর সংখ্যা।অনেকে এটাকে আমল না দেওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইতালির কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত সকলের। ওরাও প্রথমে বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ করেনি।
সবথেকে আনন্দের খবর পশুপাখিরা আনন্দে বিচরণ করছে। দূষণের পরিমাণ কমে গিয়ে অনেক রকম পাখির আনাগোনা বেড়ে গেছে আশ্চর্যভাবে। আমরা যদি মাসে একদিন লকডাউন করে যাই নিয়মিত তাহলে হয়ত পৃথিবীর পরমায়ু বেড়ে যাবে। এ এক আশার বার্তা।
৫
আলোর এখন অফুরন্ত সময়। পড়ছি, পড়া আর শোনা ছাড়া কোন কাজ নেইন।ঘরবন্দি হয়ে শুনছি ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছি জনসচেতনতামূলক।খবরের কাগজ আছে। আমি আর কতটুকু জানি। তবু জানার ইচ্ছে, পিঠে কুঁজ নিয়ে চিত হয়ে শোওয়ার বাসনা। করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। ভারতেও তা মহামারির আকার নিচ্ছে। রাজ্যে যাতে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ না করতে পারে, তার জন্য জনগণকে প্রতিদিন সতর্ক করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্য সরকার করোনা ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে অনেকদিন। করোনা মোকাবিলায় জরুরী ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, প্যারাটিচার, পার্টটাইম টিচার সহ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ত্রাণ তহবিলে মুক্তহস্তে দান করার জন্য আবেদন করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি। তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা পরিস্থিতি তাতে আগামীদিনে আর্থিক অভাব ঘটবে। আমাদের এই আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা একজোট হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াব।’ পাশাপাশি তিনি দলের বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের যতটুকু সামর্থ্য, সেই অনুযায়ী এই ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করুন। বিধানসভা থেকে যে ভাতা পান, তার কিয়দংশ অনুদান ত্রাণ তহবিলে দিন। আপনারা যা ভাল বুঝবেন, তাই করুন। যেভাবেই হোক করোনার সঙ্গে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। মমতার পাশে দাঁড়ান।’ পাশাপাশি তৃণমূলের শিক্ষা সেল ও গণ সংগঠন এবং বামপন্থীদের কাছেও পার্থ চ্যাটার্জি সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় পৃথিবীর এই গভীরতম অসুখ সেরে যাবে একদিন।
“একদিন ঝড় থেমে যাবে
আবার পৃথিবী শান্ত হবে “।লকডাউনের সময় প্রকৃতি সেজে উঠছে টাটকা জলে রঙীন ফুলে আর আকাশের নানা রঙের ক্যাভাসে। সুপার মুনের কথা অনেকেই শুনেছেন, দেখেছেন কী? তবে সেই অভাব এবার পূরণ হতে চলেছে। আগামী ৮ এপ্রিল দেখা যাবে সুপার পিঙ্ক মুন বা বৃহত্তম গোলাপি চাঁদ। এতে নাকি করোনাভাইরাসের নিধন ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী গড় দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। চাঁদের গোলাপি আভা দেখা যাবে পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৭ কিলোমিটার দূর থেকে। অর্থাৎ ওইদিন পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কমে যাবে ২৭ হাজার ৪৯৩ কিলোমিটার এবং দেখা যাবে এই নান্দনিক দৃশ্য।
মিনতি বলে, এখন প্রশ্ন হল এই সুপার মুন বৃহত্তম গোলাপি চাঁদ কী? জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় এইদিন চাঁদের আকার ৩০ শতাংশ বড় হয়ে যায়। সুপার মুনের কক্ষপথ পৃথিবীর নিকটতম হয়। গ্রহ থেকে এই নিকটতম দূরত্বের কারণেই চাঁদকে অনেক বড় এবং উজ্জ্বল দেখায়। তবে পূর্ণিমা হলেই যে সুপার মুন হবে তা কিন্তু নয়। কারণ চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘোরে। পৃথিবী থেকে আরও অনেক দূরে থাকলেও পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ দেখা যেতে পারে।একে গোলাপি চাঁদ বলার কারণ হল–পূর্ণিমা’র চাঁদের নামকরণের বিষয়টি সাধারণত আমেরিকান অঞ্চল এবং ঋতুগুলির ওপর নির্ভর করে। ‘গোলাপি চাঁদ’ নামটি গোলাপি ফুলের নামের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া। এই ফুল উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিকে বসন্তকালে ফোটে এবং এটি মোটেও চাঁদের রঙ নয়। পুরো গোলাকার চাঁদকে স্প্রাউটিং গ্রাস মুন, এগ মুন এবং ফিশ মুন নামেও ডাকা হয়। তবে, লকডাউন পুরোপুরি তোলার ক্ষেত্রে কোভিড–১৯ সংক্রমণ কী অবস্থায় রয়েছে, সেটাই যে নির্ণায়ক হবে তা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গড়া টাস্ক ফোর্সের সদস্য রামন আর গঙ্গাখেড়করের কথায়। তিনি জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ছিন্ন করা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি জানিয়েছেন, এখন টেস্ট কিট ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের বিপুল ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে ভেন্টিলেটরেরও। এপ্রিলের শেষে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটগুলো তৈরি হয়ে যাবে। এই কিটে পরীক্ষা শেষ হবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে। ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ লক্ষ অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের বরাত দিয়েছে। অ্যান্টিবডি টেস্টেই সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাই দ্রুত পরীক্ষা হলে সংক্রমণের মাত্রাও তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।
আলো রেডিও শুনছে। খবরে পড়ছেন, আইসিএমআরএর সংক্রামক রোগ ও মহামারী বিভাগের প্রধান গঙ্গাখেড়কর বলেন, কত দিনে সংক্রামিতদের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, তার হার দেখেই বোঝা যাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না। তঁার মতে, পরবর্তী তিন সপ্তাহে কতজন কোভিড–১৯ পজিটিভ রোগীর খেঁাজ মিলছে, তার ওপরেই লকডাউন প্রত্যাহারের বিষয়টি নির্ভর করবে। লকডাউন কতটা শিথিল হবে, সেই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে সংক্রমণের হটস্পটগুলি। গঙ্গাখেড়কর বলেন, গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে এখনও পৌঁছোয়নি ভারত। তবলিগি জমায়েতের প্রভাব ২০০ জেলায় পড়লেও একে গোষ্ঠী সংক্রমণ বলা যাবে না।এর আগে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তারপর পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবনীশ অবস্থি এদিন বলেছেন, ‘লকডাউন তখনই পুরোপুরি খোলা হবে যখন রাজ্যে আর করোনার রোগী থাকবেন না। যতক্ষণ একজনও করোনা পজিটিভ মানুষ থেকে যাবেন, ততক্ষণ লকডাউন তোলা কঠিন। কাজেই এর জন্য সময় লাগতে পারে।’ এ সবের পাশাপাশি এখনকার মতো লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এর গেরোয় আটকে পড়েছেন অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। কাজ হারিয়ে দু’বেলা অন্নের সংস্থান নিয়ে চিন্তায় বহু মানুষ। সবচেয়ে বড় কথা, সার্বিক লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে দেশের অর্থনীতি গভীর থেকে গভীরতর সঙ্কটে চলে যাবে।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এদিন বিজেপি–র ৪০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতায় বলেছেন, ‘সামনে দীর্ঘ লড়াই। এজন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। করোনার বিরুদ্ধে জয় না–আসা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’ আরও বলেছেন, ‘এবার এমন এক সময়ে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হচ্ছে যখন শুধু ভারতই নয়, সমগ্র বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে। মানবতার এই সঙ্কটের সময় একনিষ্ঠভাবে দেশের সেবা করে যেতে হবে।’ করোনার সংক্রমণের জেরে ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনপণ করে যাঁরা কাজ করে চলেছেন, সেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষকে ধন্যবাদপত্র পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের প্রসিদ্ধ মিষ্টির একটা অংশ হাতে গড়া হয়। যখন সাধারণ নাগরিককে দিনে দশ বার রগড়ে রগড়ে সাবান, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে বলার উপদেশ দেওয়া হল, তখন স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে কোনরকম পরিদর্শন ছাড়া স্বাস্থ্যকর বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাত স্যানিটিজেড কিনা জানা-নেই, বানানো-মিষ্টি বাঙালিদের খেতে দেওয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করা প্রশাসনিক অর্বাচীনতার নামই বটে। আসলে Covid -১৯ শুধু একটা সাদামাটা, প্লেইন-ভ্যানিলা বায়োলজিক্যাল ভাইরাস-ই নয়, এটা মানব সভ্যতার বড়াই করা আর্থ-সামাজিক-চিকিৎসা-প্রশাসনিক উৎকৃষ্টতার লিটমাস টেস্ট আর অ্যাসিড টেস্ট, যেখানে আমরা অনুত্তীর্ণ। সেখানে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ঠান্ডা মাথায় কাজ করা উচিত যাতে নিরীহ আইনানুগ সর্বসাধারণের জনস্বাস্থ্যের কোনও ঝুঁকি না তৈরি হয় কারো ব্যক্তিগত অবিবেচকতার জন্য। সেখানে কিছু জনগণকে খুশি করার চেষ্টা বুমেরাং হয়ে, সর্বনাশী করাল ছোবল আনতে পারে অজ্ঞতার সামান্য ভুলে প্রথমে এক দিনের জনতা কার্ফু, তারপরে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তিন দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা এবং সেটি চলাকালীনই দেশজুড়ে লকডাউন। তার ফলে বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা। এই কারণে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়াতেও আটকে পড়েন বিহারের ভাগলপুর থেকে আসা অন্তত ১৫০ জন শ্রমিক। প্রতি বছরই এই সময় বিহারের ভাগলপুর থেকে মহিলা ও শিশু সহ প্রায় ১৫০ জনের একটি দল পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার লক্ষ্মীপুর গ্রামে চাষের কাজ করতে আসেন। এবছরও তাঁরা এসেছিলেন সেই কাজেই। তবে তাঁরা আসার পরেই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় লকডাউন। তার ফলে তাঁরা কাটোয়ায় আটকে পড়েন। কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন ও কাটোয়া পুরসভার তরফ থেকে স্থানীয় আরএমসি মার্কেটে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। শুধু থাকার ব্যবস্থা করাই নয় সেই সঙ্গে তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করে স্থানীয় প্রশাসন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ওই শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক দিন এভাবে কাটার পরে ওই শ্রমিকরা কাটোয়া থানায় যোগাযোগ করে তাঁদের পোশাকের সমস্যার কথা জানান। তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে একই জামাকাপড় পরে আছেন বলে জানান। এর ফলে তাঁদের যে সমস্যা হচ্ছে সেকথাও গোপন করেননি।এই সমস্যার কথা জানার পরে কাটোয়া থানার পক্ষ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের জন্য জামা-কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়। কাটোয়া থানার আইসি বিকাশ দত্ত বলেন, “শ্রমিকরা একই জামাকাপড় দীর্ঘদিন ধরে পরে আছেন একথা জেনে কাটোয়া থানার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দলে কত জন স্ত্রী, পুরুষ ও বাচ্চা আছে তা জেনে নেওয়া হয়। তারপরে মহিলাদের জন্য শাড়ি, সায়া ও ব্লাউজ, বাচ্চাদের জন্য জামা ও প্যান্ট, কম বয়সী মেয়েদের জন্য চুড়িদার এবং পুরুষদের জন্য লুঙ্গি ও বারমুডার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের হাতে ইতিমধ্যেই সেই পোশাক তুলে দেওয়া হয়েছে।”করোনাভাইরাস দূরে রাখতে যে সব উপায়ের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে একটি হল পরিচ্ছন্ন থাকা। এই শ্রমিকদের পক্ষে নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন ঠিকই তবে প্রশাসনের উদ্যোগে এখন তাঁরা অনেকটাই পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকতে পারবেন। নিয়মিত ভাবে পোশাক বদলও করতে পারবেন। লকডাউন উঠলে তাঁরা কাজ পেয়ে যাবেন। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী অজিত কুমার কুন্ডু, সভাপতি কালাচাঁন কুন্ডু, সাধারন সম্পাদক যুগল দেবনাথ এবং সনাতন যুব সেবা সংঘের সভাপতি শ্রী বিবেকানন্দ দেবনাথ এর উদ্যোগে হিন্দু মুসলিম জাত ধর্ম নির্বিশেষে মন্দিরের নিজস্ব তহবিল ও স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী তরুন যুবকদের নিজ নিজ ব্যক্তি দানের টাকায় এই ত্রানসামগ্রী বিতরণ করা হয়৷ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ৷ মন্দির কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী অজিত কুমার কুন্ডু বলেন, “মানবসেবার চেয়ে বড় ধর্ম অার কিছুই হয় না৷ আমাদের সনাতন ধর্মে মানবসেবা ও দানের কথা বলা আছে।”প্রায় তিনদিনের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ছিলো ৩ কেজি চাল, ২ কেজি অালু, ১ কেজি ডাল, হাফ লিটার তেল, ১ কেজি লবন এবং ১টি সাবান। উল্লেখ্য যে, এই উদ্যোমী তরুনরা নিজ এলাকায় সবসময় মানবসেবায় অতুলনীয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।কিছুই বড় নয় জীবনের থেকে। তাই বন্ধুত্বকে পাশে সরিয়ে রেখে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ভারত যদি অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ মার্কিন মুলুকে রপ্তানির অনুরোধ নাকচ করে, তাহলে তার ফল ভুগতে হবে ভারতকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অনুরোধ করেন যাতে হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইনের রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ের সময়ে ট্রাম্প জানান, ‘আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব ভাল। আমি বলেছি, আপনি যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তাহলে খুবই ভাল হবে। যদি তিনি একান্তই এদেশে ওই ওষুধ আসতে না দেন, তাহলেও আমি অবাক হব। আমার কিছু বলার থাকবে না। তবে তার ফল ভুগতে হতে পারে ভারতকে।সূত্রের খবর, হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইনের অর্ডার মার্চ মাসে দিয়েছিল আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি বার্তায় বলেন, ‘বহু বছর ধরে ভারত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকার সুবিধে নিয়েছে। তাই এখন যদি ভারত পিছিয়ে যায় আমি অবাকই হব। তবে যাই সিদ্ধান্ত হোক না কেন প্রধানমন্ত্রীকে আমায় তা জানাতে হবে।’ ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির পর নয়াদিল্লি থেকে কোনও জবাব এখনও দেওয়া হয় নি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে রবিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ডাউনিং স্ট্রিটের ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বলা হয় যে, বরিস জনসনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, কিছু পরীক্ষার জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। বরিস জনসন ছাড়াও তাঁর অফিসের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক এবং জুনিয়র স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডরিসও করোনায় আক্রান্ত।গত ২৬ মার্চ বরিস জনসন করোনায় আক্রান্ত হন। এরপরই আইসোলেশনে চলে যান তিনি। আগের থেকে তিনি অনেক সুস্থ রয়েছেন বলেও জানান তিনি। বিগত দিনগুলিতে ডাউনিং স্ট্রিটের বাসভবন থেকেই অফিসের কাজকর্ম করছিলেন বরিস জনসন।উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই সারা দেশে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ।লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হোক৷ কেন্দ্রর কাছে এমনই আর্জি রেখেছে বিভিন্ন রাজ্য৷ দেশজুড়ে করোনামোকাবিলার এর থেকে আর ভাল পথ নেই বলেই মনে করছে রাজ্যগুলি৷ সেই কারণেই এমন আর্জি করা হচ্ছে বল সূত্রের খবর৷ যদিও এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী৷ লকডাউন ওঠার ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা আগেই পরবর্তী পরিস্থিতির কথা স্থির করবেন তিনি৷ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অনেকের পক্ষ থেকেই দাবি করা হয় যে লকডাউন চললে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে অনেকটা সুবিধা মিলবে৷ যদিও বিভিন্ন করোনা স্পর্শকাতর জোনগুলিকে চিহ্নিত করে সেই জায়গায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে, এমনই ভাবনা চিন্তা চলছিল কেন্দ্রীয় স্তরে৷ কিন্তু রাজ্যগুলির আর্জির পর সেই ভাবনার বদল হতে পারে বলে সূত্রের খবর৷ তাই মনে করা হচ্ছে ২১ দিনের পর আবার লকডাউনের সয়মসীমা বাড়তে পারে৷ যদিও এই চিন্তা নিয়ে দুরকম মত উঠে আসছে৷ কারণ অনেকেই মনে করছেন যে লকডাউন না উঠলে রুটিরুজির টান পড়বে অনেকের৷ অন্যদিকে লকডাউন না থাকলে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে৷ এখন প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ৷
মিনতি বলল,জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসে জর্জরিত চিন (China)। দিনের পর দিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। কিন্তু মঙ্গলবার ছবিটা পুরোপুরি বদলে গেল। কারণ এই প্রথম কোভিড ১৯-এ (Covid 19) আক্রান্ত হয়ে নতুন করে কারও মৃত্যু হল না সেই দেশে।চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি চিনে। এমনিতে মার্চের শুরু থেকেই চিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে হুহু করে। কিন্তু তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ এখন বাড়াচ্ছে বিদেশ থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিনে আসা।প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত বাইরের দেশ থেকে আসা অন্তত হাজার জনের শরীরে করোনাভাইরাসের (Coronavirus) উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। ফলে এখনও চিন্তামুক্ত হয়নি প্রশাসন। বরং তাঁদের আশঙ্কা করোনাভাইরাসের এই দ্বিতীয় ভাগে বেজিংয়ে প্রভাব পড়তে পারে, কারণ বিদেশ থেকে বেশি মানুষ বেজিংয়েই আসছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ আটকাতে গোটা বিশ্ব এখন লকডাউনের (Lockdown) পথে হাঁটছে। এই বুদ্ধিটা প্রথম চিনই দিয়েছিল। হুবেই (Hubei) প্রদেশের উহান শহরে মাত্রাছাড়া ভাবে বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। তখনই গোটা শহরকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
আজ টিভির খবর শুনছে আলো।খবরে বলছে, লক ডাউন উঠবে ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে। ১৫ এপ্রিল সকাল থেকেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে দেশের জনজীবন। বাংলার ক্ষেত্রে সেই লক ডাউন উঠবে ১৫ এপ্রিল মধ্যরাত্রে। পরেরদিন থেকে স্বাভাবিক হওয়ার কথা বাংলার। কিন্তু সত্যিই কী সব কিছু আগের মতই স্বাভাবিক হয়ে যাবে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলা জুড়ে। তবে রাজ্যের অভিজ্ঞ মহলের ধারনা লক ডাউন উঠলেও কিছু বাধা নিষেধ থেকেই যাবে। চট করে স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি, সিনেমা হল, মল-মাল্টিপ্লেক্স, ফার্স্ট ফুডের দোকান, জামা কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রনিক্সের দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান, সেলুন, স্পা, খুলবে না। গণপরিবহণও খুব একটা সচল হবে না। তার মধ্যে থাকবে রেলও। আর এখানেই ঝুলছে গাদা গুচ্ছের প্রশ্ন। আদৌ কি রেল চলবে? রেলমন্ত্রক সুত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ এপ্রিল থেকে রেল চালাবার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সংশ্লীষ্ট মন্ত্রক। কিন্তু কোনও রাজ্যে লক ডাউন চললে সেখানে রেলের পরিষেবা চালু হবে না। আবার যে এলাকায় সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে সেখানেও রেল পরিষেবা দেবে না। তবে চেষ্টা করা হবে দেশের নানা প্রান্তে আটকে পড়া মানুষদের আগে নিজের নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ রাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ গুরুত্ব দিয়েই করা হবে।সেই সঙ্গে বাধ্যতামূলক করা হতে পারে মাস্ক পড়া। ট্রেনে ওঠার আগে যাত্রীদের ভালো করে শারীরিক পরীক্ষাও করা হবে। তবে সব ট্রেনই এক সঙ্গে চালু করে দেওয়া হবে না। শহরতলির ট্রেন যেখানে খুব ভিড় হয় সেই লাইনে আপাতত ট্রেন চালু করা হবে না। তবে এই সব কিছুর আগে কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ছাড়পত্র আসা।বাংলায় কি হবে? রাজ্য সরকার লক ডাউন দীর্ঘায়িত করতে চায় না। আবার সব কিছু বিধি নিষেধ একদম উঠে যাবে এমনও নয়। নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ মেট্রো রেল চালু না হলেও ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো রেল চালু হতে পারে। আবার দমদম স্টেশন থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত চক্ররেল চললেও চলতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কৃষ্ণনগর বা বনগাঁ থেকে সরাসরি লোকাল ট্রেন দমদম হয়ে মাঝেরহাট চলে আসবে। শিয়ালদা মেইন ও দক্ষিণ শাখায় এখনই কোনও লোকাল ট্রেন চালু হবে না। কারণ দিনে এই সব শাখায় যদি দুটি করেও ট্রেন চলে তাহলেও ভিড় হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। একই ছবি হাওড়া স্টেশনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য। সেখানেও পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের শহরতলির ট্রেন চট করে চালু হবে না। তবে শিয়ালদা ও হাওড়া দুই স্টেশন থেকেই ধাপে ধাপে দূরপাল্লার ট্রেন চালু করা হলেও হতে পারে। জোর দেওয়া হবে আন্তঃরাজ্য এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি চালু করার বিষয়ে। তবে এই সব কিছু এখনও পর্যন্ত ভাবনাচিন্তার স্তরেই রয়ে গিয়েছে। বাস্তবটা ১৫ এপ্রিলের পরেই বোঝা যাবে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, সর্বত্র লকডাউন না-তুলে সংক্রমণ ও হটস্পটের (Hotspot) নিরিখে গোটা দেশকে তিন বা তার বেশি জোনে ভাগ করা হোক। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিটি জোনের অবস্থা খতিয়ে দেখে লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক আলাদা আলাদা করে। গত বছরই অ্যামাজন অরণ্যে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। কয়েক মাস পর ভয়াবহ দাবানলের গ্রাসে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। শুশুনিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনই বেদনাদায়ক ছবি সামনে এল। করোনারি আতঙ্কের পরিবেশের লকডাউন এর আতঙ্কের পরিবেশে পুলিশ, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশংসা না করে উপায় নেই। দিনরাত তাদের সেবার মাধ্যমে জনগণ সুস্থ হয়ে উঠছে ।এক ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছেন জনগণকে ।ফুটপাতে অসংখ্য না খেতে পাওয়া মানুষকে খাওয়াচ্ছেন বৃদ্ধদের বাজার করে দিচ্ছেন কোন অসহায় মহিলাকে সাহায্য করছেন । একমাত্র কারো ক্ষতি করার জন্য বাহুবলের প্রয়োজন, তা না হলে ভালোবাসা যথেষ্ট। বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানার অন্তর্গত শুশুনিয়া পাহাড়ের ঢালে বিস্তৃত জঙ্গলে গতকাল দুপুরের পর আগুন লাগে। গোটা পাহাড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। অসৎ উদ্দেশে শুকনো পাতায় আগুন লাগানোর ফলেই এই বিপত্তি বলে ধারণা এলাকাবাসীর। বিকেলে দমকল বাহিনী সেখানে গেলেও বিপুল এলাকার কারণে, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। রাতে তা ভয়াবহ আকার নেয়। আজ সকাল থেকে দমকল ও বনকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে রেঞ্জার জানিয়েছেন। সারা রাত ধরে চলা দাবানলে পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্য অত্যন্ত সঙ্কটের মুখে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সবার প্রথম সাফল্য পেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ তারা বিপুল পরিমাণে পরীক্ষা করে সাধারণ সুস্থ মানুষকে রোগীদের থেকে আলাদা করতে পেরেছিল। তারা সেই সংক্রমণে রাশ টানতে পেরেছিল। ফলে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে মডেল হয়ে যায়।
ছয়
আজ বিরাজুল সকালে উঠেই টিভির সামনে বসল। তার মন ছটফট করছে গ্রামে ফেরার জন্য। সে শুনছে, এবার একই মডেল গ্রহণ করে নজির স্থাপন করল কেরল। ফলে বোঝা গেল বাংলার পর দেশের বাকি রাজ্যের থেকে তারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ধাঁচে কেরলে তৈরি হল করোনা কিয়স্ক। এখানেই করোনা সন্দেহভাজনদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। চারটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে এই কিয়স্কগুলি তৈরি করা হয়েছে। কিয়স্কগুলিতে আছে আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং সোয়াব পরীক্ষার ল্যাব। এই কিয়স্কগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়াক ইন স্যাম্পল কিয়স্ক’ বা উইস্ক। বেসরকারি জাতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, কাঁচ দিয়ে ঘেরা কিয়স্কগুলিতে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করার একটি করে আলাদা স্থানও রয়েছে। করোনা আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহের সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে সরাসরি সংস্পর্শে না আসেন সেই ব্যবস্থাও রয়েছে কিয়স্কে। লালার নমুনা সংগ্রহের পর স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতের দস্তানা কিয়স্কের বাইরে স্যানিটাইজ করিয়ে আনা হচ্ছে।কেরলের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক এস সুধাস জানান, এই পদ্ধতিতে গণ স্ক্রিনিং–এর ব্যবস্থা থাকবে। ফলে দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে করোনা আক্রান্তকে। এই ব্যবস্থার জেরে কমবে পিপিই কিটের চাহিদা। এভাবে অল্প সময়েই অনেক পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। প্রতিটি উইস্ক তৈরি করতে সরকারের ৪০ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ধরনের কিয়স্ক তৈরি করা হয় করোনায় গণসংক্রমণ পরীক্ষার জন্য। ফলে দেশে সংক্রমিতদের দ্রুত চিহ্নিত করার কাজে সফল হয়েছিল তারা। আমেরিকায় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা। গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল নিউইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে ৭৩১ জনের। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে, একদিনে কোনও একটি শহরে এতজনের মৃত্যু হয়নি। মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছেন নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো। সবমিলিয়ে নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৮৯ জন। যা কিনা গোটা দেশের অর্ধেক। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৩০ জন। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো জানিয়েছেন, নিউইয়র্ক প্রদেশে মৃতের সংখ্যা একদিনে বাড়লেও নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তাই এতে আতঙ্কের কিছু নেই। তিনি আরও দাবি করেছেন, এতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপগুলি সফল হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, তাতেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না শহরবাসী। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজারের কাছাকাছি এবং মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ হাজারবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী চীন ঘেঁষা? আসলে এমন অভিযোগ করেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এই অভিযোগ তুলে এবার ট্রাম্পের হুমকির মুখে পড়ল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। আসলে করোনা ভাইরাসে কাবু আমেরিকা। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা রোজ মাত্রা ছাড়িয়েছে। তারই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে হু। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই হুমকির পর আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এদিন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হু–কে পাঠানো ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ এই মন্তব্যে শোরগোল পড়তেই ১৮০ ডিগ্রি গুরে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও বলিনি ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমি বলেছি আমরা এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে দেখব।’ এই পরিস্থিতিতে অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, চীন থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এই মারণ রোগ। হু আগে থেকে ভাইরাস প্রতিরোধের কোনও পরামর্শও দেয়নি বলে অভিযোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যান্য দেশকে করোনা নিয়ে হু ঠিক তথ্য দেয়নি।করোনাভাইরাসের আগে বিশ্ববাসী যে স্বাভাবিক জীবনে ছিল সেটা ফিরে নাও পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শীর্ষ মার্কিন বিজ্ঞানী ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে এক বিবৃতিতে ফাউসি বলেন, করোনাভাইরাস সহজে বিলুপ্ত না হয়ে মৌসুমি ফ্লুর প্রকৃতি ধারণ করে বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।বিশ্ব মহামারি করোনা এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব অঞ্চল ও দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে লকডাউন। তিনশ’ কোটির বেশি মানুষ ঘরবন্দী।অর্থনীতি ধসে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে এক অস্বাভাবিক অবস্থা। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কোভিড-১৯ রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির ডাক্তার-নার্সরা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের হিসেবে মতে, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৮১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।এমন পরিস্থিতিতে করোনাবিষয়ক বিজ্ঞানী ফাউসি বলেন, দেশে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সেখান থেকে সমাজের প্রতি স্তরে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো করোনাভাইরাসের আগের জীবন ফিরে পাব না।ডা. ফাউসি আরো বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে আমাদেরকে করোনাভাইরাস মুক্ত হতে হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব কিনা জানি না। তবে একমাত্র ভ্যাকসিনই সেই সমাধান দিতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৭৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮২ হাজার ৯৬ জনের। দেশজুড়ে ২১ দিনের লকডাউনে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবন। করোনাকে দূরে রাখতে গৃহবন্দি দশাই এখন একমাত্র উপায়। এমন পরিস্থিতিতে কারও মৃত্যু হলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাড়ির লোকেদের। ঠিক যেমন বিপাকে পড়তে হল ইন্দোরের এক পরিবারকে। করোনা আতঙ্কে কেউই মৃতদেহ সৎকারে যেতে চাইছে না। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আবার অমিল গাড়ি। এমন অবস্থায় হিন্দু মহিলার সৎকারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রতিবেশী মুসলিম যুবকরা।
বিরাজুলের পাড়াতে সোমবার মৃত্যু হয় ৬৫ বছরের প্রৌঢ়ার। দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছিলেন তিনি। রেখে গেলেন দুই ছেলেকে। লকডাউনের জেরে মায়ের কাছে পৌঁছতেই অনেকটা সময় লেগে যায় তাঁদের। যাও বা পৌঁছলেন, গাড়ির অভাবে শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াই মুশকিল। অসহায় পরিবারকে দেখে এগিয়ে আসেন আশপাশের মুসলিম যুবকরা। মৃতাকে কাঁধে নিয়েই প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেন তাঁরা। মৃতার দুই ছেলের সুবিধার্থে সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থাও করলেন। সে রাজ্যের কংগ্রেসের মুখপাত্র নরেন্দ্র সালুজা খবরটি নিশ্চিত করে যুবাদের প্রশংসা করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথও সম্প্রীতির ছবি দেখে মুগ্ধ। টুইটারে লেখেন, ‘মৃতাকে কাঁধে তুলে সৎকারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন মুসলিম যুবকরা। সঙ্গে মৃতার দুই ছেলে। সত্যিই তাঁরা সমাজের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এটাই আমাদের সম্প্রীতির ছবি।বিরাজুলও সঙ্গেই ছিল। যুবকরা জানিয়েছেন, ওই প্রৌঢ়াকে ছোটবেলা থেকেই চিনতেন তাঁরা। তাঁর চোখের সামনেই বড় হয়েছেন। তাই এমন সঙ্কটের দিনে মৃতার ছেলেদের পাশে দাঁড়ানো নিজেদের দায়িত্ব ভেবেছেন।
দিন কয়েক আগে অনেকটা এমন ছবিই দেখা গিয়েছিল বুলন্দশহরে। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় প্রৌঢ় রবিশঙ্করের। প্রতিবেশীরা মনে করেছিলেন করোনা সংক্রমণের জেরেই হয়তো মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তাই শেষ দেখাটুকুও কেউ দেখতে আসেননি। শেষমেশ পাড়ার পাশের মুসলিম অধুষ্যিত এলাকার যুবকরাই সমস্যা মেটান। আজ জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে ৭০০ দুঃস্থ পরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন ওই সংস্থার সদস্যরা ।প্রতিটি পরিবারের হাতে তাঁরা ৩ কেজি চাল, ডাল ৫০০গ্রাম, আলু১ কেজি, পেঁয়াজ ৫০০ গ্রাম এবং সাবান ১টি দেন। সব জায়গায় মানুুষের পাশে মানুষই আছে। করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্বের ভরসা আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বেঙ্গল কেমিক্যাল। মানিকতলা বেঙ্গল কেমিক্যাল-এর দিকে তাকিয়ে এবার ভারত তথা গোটা বিশ্ব। এই মুহূর্তে শুধু ভারত কেন আমেরিকার মত দেশ ও প্রাচীন এই ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানের দিকেই তাকিয়ে। কারণ একটাই করোনা প্রতিরোধের আংশিক ওষুধ হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন তৈরি হয় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের হাতে গড়া বেঙ্গল কেমিক্যালে। এই ওষুধের কার্যকারিতা জানা মাত্রই বিদেশে রফতানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু খোদ মার্কিন রাষ্ট্রপতি এই ওষুধের দাবি জানায় ভারতের কাছে।
মিনতি পড়ছে কাগজে, বিশ্বকে যতই করোনা ভাইরাস গিলে ফেলছে, ততই অভিযোগের আঙুল উঠছে চিনের বিরুদ্ধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র দিকেও উঠেছে আঙুল। দাবি, তারা নাকি চিনের দোষ ঢাকছে। এবার এই বিষয়েই সরব হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের দাবি, করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পরেও চিনের একাধিক তথ্য গোপন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনই আক্রমণ শানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনকী হু-কে অর্থ সাহায্য বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হুয়ের প্রশংসা করেছে রাষ্ট্রসংঘ।করোনা সংক্রমণ আমেরিকায় মারাত্মক আকার নিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১১,০০০ ছড়িয়ে গিয়েছে আমেরিকায়। এই পরিস্থিতির জন্য চিনকই দায়ী করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও চিনের পক্ষ নিয়ে তথ্য গোপন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। চিনকে আড়াল করার সবরকম চেষ্টা করেছে হু। এমনই অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমেরিকার থেকে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেডকোয়ার্টারে বিপুল পরিমান আর্থিক সাহায্য যায় আমেরিকার পক্ষ থেকে। এই আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে চাপ বাড়বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর।
বিরাজুল বলল, করোনা ভাইরাসে আমেরিকায় ১১,০০০ মৃত্যু হয়েছে। সেই মৃত্যু আরও বাড়ছে। সংক্রামিত আরও কয়েক হাজার। মড়কের অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টা ১৫০০ জনেরও মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। প্রবল সংকট তৈরি হয়েছে গোটা দেশে। ভারতের কাছে ম্যালেরিয়ার ওষুধ চেয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে ট্রাম্প। দিশেহারা অবস্থা হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।এদিকে, মঙ্গলবারই করোনা সংক্রান্ত তথ্য স্বীকার করেছে চিন। মঙ্গলবার চিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ডিসেম্বরের শেষে উহান শহরে ধরা পড়েছিল এই ভাইরাস।
বিশ্ব জুড়ে যখন করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তখন চিন জানান যে ২০১৯-এর ডিসেম্বরে মাসের শেষে উহান শহ
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..